বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে অবস্থিত একটি জাদুঘর। এটি ২০ মার্চ, ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং ৭ আগস্ট, ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ নভেম্বর তারিখে এটিকে জাতীয় জাদুঘরের মর্যাদা দেয়া হয়।
স্থাপিত | ২০ মার্চ ১৯১৩ |
---|---|
অবস্থান | শাহবাগ, ঢাকা, বাংলাদেশ |
ধরন | জাতীয় ইতিহাস জাদুঘর |
সংগ্রহ |
|
পরিদর্শক | ৫১১৭৫ (জুন ২০১৫) |
প্রতিষ্ঠাতা | লর্ড কারমাইকেল |
মালিক | গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার |
নিকটবর্তী গাড়ি পার্কিং | জাদুঘর প্রাঙ্গণ (পার্কিং চার্জ প্রযোজ্য) |
ওয়েবসাইট | www |
জাদুঘরটি শাহবাগ মোড়ের সন্নিকটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, রমনা পার্ক ও চারুকলা ইন্সটিটিউটের পাশে অবস্থিত। এখানে নৃতত্ত্ব, চারুকলা, ইতিহাস, প্রকৃতি এবং আধুনিক ও প্রাচীন বিশ্ব-সভ্যতা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদি বিষয়ে আলাদা ৪৫টি প্রদর্শনশালা (গ্যালারি) রয়েছে। এছাড়া এখানে একটি সংরক্ষণাগার, গ্রন্থাগার, মিলনায়তন, সিনেপ্লেক্স এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শনালয় রয়েছে।
ইতিহাস
সম্পাদনাইতিহাস
সম্পাদনা১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১ নভেম্বর "দ্য ঢাকা নিউজ" পত্রিকায় প্রথম এদেশে জাদুঘর প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ২০ মার্চ তৎকালীন সচিবালয়ে (বর্তমান ঢাকা মেডিক্যাল)-এ দুই হাজার রুপি তহবিল নিয়ে জাদুঘরের কার্যক্রম শুরু। বাংলার তৎকালীন গভর্নর লর্ড কারমাইকেল তৎকালীন সচিবালয়ের একটি কক্ষে এই ঢাকা জাদুঘর উদ্বোধন করেন। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ৭ আগস্ট ঢাকা জাদুঘরের যাত্রা শুরু হয়। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৫ আগস্ট সর্বসাধারণের জন্য জাদুঘর উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। ঢাকা জাদুঘরের প্রথম অস্থায়ী তথা সূচনাকালীন কিউরেটর বা তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন এন গুপ্ত। প্রথম কিউরেটর নলিনীকান্ত ভট্টশালী ১৯১৪ থেকে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ব্রিটিশ সরকার এদেশে জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করে বঙ্গভঙ্গ রদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে। শাহবাগ এলাকায় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের জন্য একটি অত্যাধুনিক বৃহদায়তন ভবনের উদ্বোধন করা হয় ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দের ১৭ নভেম্বর।[১] আট একর জমির ওপর নির্মিত চারতলা ভবনটির তিনটি তলা জুড়ে রয়েছে ৪৪টি গ্যালারি। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর স্থাপনার নকশা করেছেন দেশের প্রখ্যাত স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন।
কাঠামো
সম্পাদনাজাতীয় জাদুঘরের নিদর্শনাদির বিভাগগুলো হচ্ছে:
- ইতিহাস ও ধ্রুপদী শিল্পকলা
- জাতিতত্ত্ব ও অলঙ্করণ শিল্পকলা
- সমকালীন শিল্পকলা ও বিশ্বসভ্যতা
- প্রাকৃতিক ইতিহাস বিভাগ
- সংরক্ষণ গবেষণাগার
এছাড়া রয়েছে জনশিক্ষা বিভাগ।
সংগৃহীত নিদর্শন
সম্পাদনাবাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংগৃহীত নিদর্শনের সংখ্যা প্রায় ৯৪ হাজার। প্রতিটি নিদর্শনের একটি একসেশন নম্বর আছে। নিদর্শনের নাম, সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও ফটো নিয়ে কম্পিউটার ডেটাবেইস প্রণয়ন করা হয়েছে। এবং ৭৫০০ নিদর্শনের বর্ণনামূলক ক্যাটালগ প্রণয়ন ও প্রকাশ করা হয়েছে।
সংগৃহীত নিদর্শনসমূহের প্রায় ৫ হাজার নিদর্শন ৪৫টি প্রদর্শন কক্ষে জনসাধারণের দর্শনের জন্য সাজিয়ে রাখা আছে। ৩৮ নম্বর প্রদর্শন কক্ষে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রদর্শনী প্রকোষ্ঠ করা হয়েছে। এছাড়া আইএফআইসি ব্যাংক ও দৃকের সহায়তায় ৩৫ নম্বর গ্যালারিতে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন চিত্রশালা স্থাপন করা হয়েছে। ২৬ নম্বর কক্ষটি “সাহিত্য গ্যালারী” হলেও এতে দর্শনার্থীদের জন্য বিভিন্ন নাগরিক সেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
দর্শনার্থী
সম্পাদনাবাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে প্রতিদিন গড়ে ২০০০-এর বেশি দর্শনার্থী পরিদর্শন করতে আসেন। এদের মধ্যে বিদেশীরাও আছেন। দর্শনীর পরিমাণ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা। বিদেশীদের জন্য ৫০০ টাকা এবং সার্কভুক্ত দেশের দর্শনার্থীরা ৩০০ টাকার টিকেটে প্রবেশাধিকার পান।[২] তবে ০৩ বছরের কম বয়সের শিশু ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের জন্য টিকিট প্রয়োজন নেই।
ব্যবস্থাপনা কাঠামো
সম্পাদনাবাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান যা আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ও একটি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের নিয়ন্ত্রণাধীন। তবে সরকার কর্তৃক নিযুক্ত একজন মহাপরিচালক এই জাদুঘরের প্রধান নির্বাহী হিসেবে সামগ্রিক দায়িত্ব পালন করে থাকেন। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে বর্তমানে ৩৩০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত আছেন।[৩] সাংবৎসরিক ব্যয়ের পরিমাণ প্রায় ২৯ কোটি টাকা।
নিয়ন্ত্রণাধীন জাদুঘর
সম্পাদনাবাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের নিয়ন্ত্রণে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের জাদুঘরগুলো পরিচালিত হচ্ছে।[৪] সেগুলো হলো:
- আহসান মঞ্জিল জাদুঘর, ঢাকা।
- শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা, ময়মনসিংহ।
- ওসমানী জাদুঘর, সিলেট।
- জিয়া স্মৃতি জাদুঘর, চট্টগ্রাম।
- স্বাধীনতা জাদুঘর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা।
- পল্লী কবি জসীম উদ্দীন সংগ্রহশালা ফরিদপুর, ফরিদপুর।
- সাংবাদিক কাঙ্গাল হরিনাথ স্মৃতি জাদুঘর, কুষ্টিয়া।
- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর, গণভবন, ঢাকা।
- জাতীয় চার নেতা স্মৃতি জাদুঘর, কেন্দ্রীয় কারাগার, ঢাকা।
এছাড়া সেগুনবাগিচায় প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘর নির্মাণের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে।
চিত্রশালা
সম্পাদনা-
কম্পোজিশন
-
রিক্লাইনিং ফিগার
-
সিটেড ওমেন
-
চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগীতা ২০১০ এর ব্যানার
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "দৈনিক প্রথম আলো"। ২১ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জানুয়ারি ২০১৪।
- ↑ "বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর | পরিদর্শনের সময়সূচি ও প্রবেশ মূল্য"। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। ২ নভেম্বর ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-১৫।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১০ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০১৩।
- ↑ দ্য ডেইলী স্টার, ৪ জানুয়ারী, ২০১২ইং, মুদ্রিত সংস্করণ, পৃষ্ঠা-২৩