আবদুর রাজ্জাক (চিত্রশিল্পী)

আবদুর রাজ্জাক (১৯৩২ - ২৩ অক্টোবর, ২০০৫) ছিলেন একজন বাংলাদেশী চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর। তিনি তৎকালীন ঢাকা আর্ট কলেজের (বর্তমান চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী। তার নেতৃত্বেই চারুকলা ইনস্টিটিউটে ভাস্কর্য বিভাগ চালু হয়। তার আঁকা উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্ম হল 'টেকনাফ', 'সুন্দরবন-১', 'রিভার-১'। তিনি জাগ্রত চৌরঙ্গীর ভাস্কর। চারুকলায় অবদানের জন্য তিনি ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভূষিত হন।[১]

আবদুর রাজ্জাক
জন্ম১৯৩২
মৃত্যু২৩ অক্টোবর ২০০৫
যশোর জেলা, বাংলাদেশ
মৃত্যুর কারণহৃদরোগ
জাতীয়তাবাংলাদেশ
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
শিক্ষাচারুকলা
মাতৃশিক্ষায়তনআইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি
ঢাকা আর্ট কলেজ
পেশাচিত্রশিল্পী, ভাস্কর
কর্মজীবন১৯৫৮-২০০৫
উল্লেখযোগ্য কর্ম
জাগ্রত চৌরঙ্গী
দাম্পত্য সঙ্গীমুস্তারী বেগম (১৯৬২-২০০৫)
পুরস্কারএকুশে পদক (১৯৮৯)

প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

রাজ্জাক ১৯৩২ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) বৃহত্তর ফরিদপুরের (বর্তমান শরীয়তপুর জেলা) ভেদরগঞ্জ উপজেলার মহিশখালি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সাদর আলী আমিন ঢাকার তৎকালীন আহসানউল্লাহ সার্ভে ও ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল (বর্তমান সলিমুল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল) থেকে ড্রাফটসম্যান হিসেবে ডিগ্রি নেন। এই স্কুলে সাদর আলীর সহপাঠী ছিলেন রাজ্জাকের এক মামাও। তারা সেখান ড্রইং শিখেন।[২] সাদর আলী কোনো চাকরিতে যোগদান না করে পারিবারিক জমিজমার ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। রাজ্জাকের মায়ের নাম রিজিয়া বেগম। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক সর্বকনিষ্ঠ।[৩] পিতার অনুপ্রেরণায় রাজ্জাক ড্রইংচর্চা করেন শৈশব থেকেই। তার পিতার দেওয়া প্যালেট ও তুলি তিনি আজীবন যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন।[২]

শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদনা

রাজ্জাকের শিক্ষাজীবন শুরু হয় কার্তিকপুরের একটি স্কুলে। পরে তিনি ফরিদপুর জেলা স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে কোনো ড্রইং শিক্ষক না থাকায় তার প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ছবি আঁকার কোনো চর্চা হয় নি। তিনি তাদের বাড়ির কাছে অবস্থিত কুমোরপাড়ায় নিয়মিত গিয়ে তাদের কাজ দেখতেন এবং পুতুল সংগ্রহ করতেন। ফরিদপুরে থাকাকালীন বিভিন্ন ম্যাগাজিনে প্রকাশিত জয়নুল আবেদীন, আনোয়ারুল হক, শফিকুল আমিনসহ পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত শিল্পীদের অঙ্কিত ছবি তিনি কেটে রাখতেন। ১৯৪৭ সালে ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার পর তিনি খ্রিস্টান স্কুলের একজন শিক্ষকের কাছে কিছুদিন অঙ্কন শিখেন। তার ছবি আঁকার হাতেখড়ি হয় সফট পেইন্টিং দিয়ে। সফট পেইন্টিং হল পিগমেন্ট ঘসে ঘসে যে ছবি আঁকা হয়।[২] ১৯৪৯ সালে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা আর্ট কলেজে ভর্তি হলে জয়নুল আবেদীনের সংস্পর্শে আসেন। তিনি আর্ট ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী। আর্ট ইনস্টিটিউটে তার সহপাঠী ছিলেন শিল্পী রশিদ চৌধুরী, কাইয়ুম চৌধুরী, মুর্তজা বশীর, জুনাবুল ইসলাম, একরামুল হক, ইমদাদ হোসেন প্রমুখ। এদের মধ্যে রশীদ তার পূর্বপরিচিত ছিলেন। আর্ট ইনস্টিটিউটে ভর্তির পর তিনি ছবি আঁকার কৌশলগুলো রপ্ত করেন। তখন স্টিল লাইফ ও ড্রইং বেশি করানো হতো, পাঠ্যসূচিতে তাত্ত্বিক বিষয়গুলো ছিল না।[৪] প্রথম বছর থেকেই রাজ্জাক প্রথম হয়েছেন। ১৯৫৪ সালে তিনি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।[৫]

স্নাতক ডিগ্রি লাভ করার পর কিছুদিন তিনি ঢাকার সরকারি গবেষণা সংস্থা ম্যালেরিয়া ইনস্টিটিউটে আর্টিস্ট ও মিউজিয়াম কিউরেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৫ সালে প্রতিযোগিতামূলক ফুলব্রাইট বৃত্তি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়তে যান। ১৯৫৭ সালে তিনি মাস্টার অব ফাইন আর্টস (এমএফএ) ডিগ্রি লাভ করেন। এসময় রাজ্জাক কোর্স ও ষ্টুডিওর কাজের পাশাপাশি একটি থিসিসও লিখেছেন। রাজ্জাক বাংলাদেশীদের মধ্যে বিদেশ থেকে চারুকলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারী প্রথম ব্যক্তি।[৫]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

  • শিল্পকলায় অবদানের জন্য ১৯৮৯ সালে একুশে পদক
  • ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মান

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "আবদুর রাজ্জাক"টুনস ম্যাগ। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১৪ 
  2. আতিক-উজ-জামান, শরীফ (২৭ মার্চ ২০১৫)। "শিল্পী আবদুর রাজ্জাক : প্রকৃতির নৈকট্যই তার সৃষ্টিশীলতার বড় প্রেরণা"ভোরের কাগজ। ৩ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০১৭ 
  3. মাহফুজ মাসউদ (সম্পাদক)। "ভাষ্কর্য শিল্পী আব্দুর রাজ্জাক (১৯৩২-২০০৫)"GreaterFaridpur.Info। ২৭ আগস্ট ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০১৭ 
  4. "আব্দুর রাজ্জাকের সাক্ষাৎকার"। কালি ও কলম। সেপ্টেম্বর, ২০০৪।
  5. "আবদুর রাজ্জাক"দ্য রিপোর্ট। ২৩ অক্টোবর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

আরও পড়ুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা