তেলরঙ
তেলরঙ বা তৈলচিত্র (ইংরেজি: Oil painting) হলো এমন একটি শিল্প মাধ্যম যেখানে রঞ্জক পদার্থের সাথে বাইন্ডার বা বন্ধনী হিসেবে শোষক তেল ব্যবহার করা হয়। সাধারণত ব্যব্যহৃত শোষক তেলের মধ্যে রয়েছে তিসির তেল, পোস্তদানা তেল, আখরোট তেল ও কুসুম ফুলের তেল। তেলের সঠিক নির্বাচন তৈলচিত্রে অনেক ভূমিকা পালন করে, যেমন চিত্রকর্মটি কতোটা হলদে হবে বা কতো দ্রুত শুকিয়ে যাবে তা তেলের উপরই নির্ভরশীল। রঙের উজ্জ্বলতার দিকে লক্ষ করলে কিছু পার্থক্য দেখা যায় যা তেলের প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। একজন শিল্পী নির্দিষ্ট রঞ্জক এবং আকাঙ্ক্ষিত কর্মফল পেতে একই চিত্রকর্মে বিভিন্ন তেল ব্যবহার করতে পারেন। মাধ্যমের উপর নির্ভর করে রঙসমূহ এক বিশেষ সামঞ্জস্য লাভ করে। চিত্রকর্মের উজ্জ্বল বার্নিশ ও পালিশের জন্য তেলকে এক প্রকার রজনের সাথে ফোটানো হয়ে থাকে। রজন হিসেবে পাইন বা দেবদারু গাছের রজন অথবা লবান ব্যবহৃত হয়।
যদিও পঞ্চম ও দশম শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে পশ্চিম আফগানিস্তানে ভারতীয় এবং চীনা চিত্রশিল্পীরা বৌদ্ধ ধর্মের চিত্রকর্মে তেল রঙের ব্যবহার করে থাকলেও,[১] এটি ১৫ শতকের আগে প্রসার লাভ করেনি। তেল রঙের অনুশীলন মধ্যযুগের দিকে পশ্চিমাভিমুখ হয়। অবশেষে তেল রঙের সুবিধাগুলো ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়ে ওঠায় এটি শিল্পকর্ম তৈরির প্রধান মাধ্যমে পরিণত হয়। এ পরিবর্তন শুরু হয় উত্তর ইউরোপে নেদ্যারল্যান্ডীয় চিত্রকর্মের মাধ্যমে, এবং রেনেসাঁর প্রসারের সাথে সাথে তৈলচিত্র কৌশল প্রায় সম্পূর্ণরূপে ইউরোপের বেশিরভাগ দেশেই টেম্পেরার স্থান গ্রহণ করে।
সাম্প্রতিককালে, নতুন এক প্রকার তেল রঙ প্রাধান্য পাচ্ছে, যা পানিতে মিশ্রনীয়। এটি গতানুগতিক তেলরঙকে কিছু্ পরিমাণে প্রতিস্থাপিতও করেছে। পানিতে দ্রবণীয় রঙে এক প্রকার তরল থাকে, যা রঙটিকে থিনার ছাড়া পানির সাহায্যে পাতলা করতে সক্ষম। এর ফলে রঙটি সাধারণ তেলরঙের চেয়ে দ্রুত শুকায়। সাধারণত তেলরঙ যেখানে ১ থেকে ৩ সপ্তাহে শুকায় সেখানে পানিতে দ্রবণীয় এই তেলরঙ ১ থেকে ৩ দিনেই শুকিয়ে যায়।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Barry, Carolyn। "Earliest Oil Paintings Found in Famed Afghan Caves"। National Geographic Society। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০১৩।
আরো পড়ুন
সম্পাদনা- Chieffo, Clifford T.:Contemporary Oil Painter's Handbook, Prentice Hall, 1976.
- The Artist's Handbook of Materials and Techniques, comprehensive reference book by Ralph Mayer (1940)