ওবায়দুল কাদের
ওবায়দুল কাদের (জন্ম ১ জানুয়ারি ১৯৫২) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী। নোয়াখালী-৫ আসন থেকে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সপ্তম, নবম, দশম, একাদশ এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় লাভ করেন। শেখ হাসিনার প্রথম মন্ত্রিসভায় তিনি যুব, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ২০১১ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট পর্যন্ত তিনি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।[১] ২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনে তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ২১তম সম্মেলনেও তিনি পুনরায় নির্বাচিত হন। ২০২২ সালের ২৪ ডিসেম্বর ২২তম সম্মেলনেও তিনি টানা তৃতীয় বারের মতো নির্বাচিত হন। তিনি রাজনীতির পাশাপাশি তিনি দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকার সহকারী সম্পাদক ছিলেন। ২০২৪ সালে অসহযোগ আন্দোলনের পর রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করলে তিনি সংসদ সদস্য পদ হারান।[২]
ওবায়দুল কাদের | |
---|---|
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক | |
দায়িত্বাধীন | |
অধিকৃত কার্যালয় ২৩ অক্টোবর ২০১৬ | |
নেতা | শেখ হাসিনা |
পূর্বসূরী | সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম |
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ৫ ডিসেম্বর ২০১১ – ৬ আগস্ট ২০২৪ | |
প্রধানমন্ত্রী | শেখ হাসিনা |
পূর্বসূরী | সৈয়দ আবুল হোসেন |
উত্তরসূরী | মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান (উপদেষ্টা) |
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ২৩ জুন ১৯৯৬ – ১৫ জুলাই ২০০১ | |
পূর্বসূরী | সাদেক হোসেন খোকা |
উত্তরসূরী | ফজলুর রহমান পটল |
নোয়াখালী-৫ আসনের সংসদ সদস্য | |
কাজের মেয়াদ ৬ জানুয়ারি ২০০৯ – ৬ আগস্ট ২০২৪ | |
পূর্বসূরী | মওদুদ আহমেদ |
কাজের মেয়াদ ২৩ জুন ১৯৯৬ – ১৩ জুলাই ২০০১ | |
পূর্বসূরী | এ এস এম এনামুল হক |
উত্তরসূরী | মওদুদ আহমেদ |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | নোয়াখালী, পূর্ব পাকিস্তান | ১ জানুয়ারি ১৯৫২
নাগরিকত্ব | পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
রাজনৈতিক দল | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
দাম্পত্য সঙ্গী | ইসরাতুন্নেছা কাদের |
আত্মীয়স্বজন | শাহাদাত কাদের (ভাই) |
শিক্ষা | বিএ (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নোয়াখালী সরকারি কলেজ বসুরহাট এ এইচ সি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় |
পেশা | রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, লেখক |
প্রারম্ভিক জীবন
ওবায়দুল কাদের ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ থানার বড় রাজাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[৩] তার পিতার নাম মোশাররফ হোসেন এবং মাতা ফজিলাতুন্নেছা।[৪] মোশাররফ প্রথমে সরকারি চাকরি করলে পরবর্তীতে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করেন। মোশাররফ কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহপাঠী ছিলেন।[৫] কাদের স্থানীয় বসুরহাট এ এইচ সি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। তার বাবা সেই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। কাদের নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।[৪]
রাজনৈতিক জীবন
ছাত্র রাজনীতি
নোয়াখালী কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় তিনি ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত হন।[৬] তিনি ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালে গণআন্দোলন ও ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।[৬] ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তিনি মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) কোম্পানীগঞ্জ থানা শাখার অধিনায়ক হিসেবে যুদ্ধে অংশ নেন।[৬] ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর তিনি ৫ বছর কারাবন্দী ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি (১৯৭৭-৮১) নির্বাচিত হন এবং দুই মেয়াদে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।[৭] তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন।
১৯৯১ - ২০০৮
ওবায়দুল কাদের ১৯৯১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ছয়বার নোয়াখালী-৫ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। প্রতিবারই তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মওদুদ আহমদ। ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। কিন্তু নির্বাচনে তৎকালীন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মওদুদ আহমদের কাছে পরাজিত হন। ১৯৯৬ সালের জুনে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করে প্রথমবারেরমত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনে জয়লাভ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে সরকার গঠন করে। এ সময় সপ্তম জাতীয় সংসদে শেখ হাসিনার প্রথম মন্ত্রিসভায় তিনি যুব, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যদের সাথে ২৩ জুন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ২০০১ সালের ১৫ জুলাই এ মন্ত্রিসভা বিলুপ্তির পূর্ব পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করেন।
২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। এ সময় মওদুদ আহমদ বিএনপির প্রার্থী হিসেবে এ নির্বাচনে জয়লাভ করেন। ২০০২ সালের ২৬ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে তিনি দলের প্রথম যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ সালের ২৬ জুলাই পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৬-০৮ বাংলাদেশী রাজনৈতিক সংকটের সময় ফখরুদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের জরুরি বিধিতে গ্রেফতার করা হয়। ২০০৭ সালের ৯ মার্চ তিনিও গ্রেফতার হন এবং ১৭ মাস ২৬ দিন কারাগারে থাকার পর ২০০৮ সালের ৫ জানুয়ারি জামিনে মুক্তি পান। কারাগারে থাকাকালে কারাজীবনের বর্ণনা দিয়ে “অনুস্মৃতি : যে কথা বলা হয়নি” নাম একটি গ্রন্থ রচনা করেন।
২০০৮ - বর্তমান
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে সরকার গঠন করে এবং তিনি একই আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে নবম সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন। নবম সংসদে তিনি তথ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে তিনি দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম ‘সভাপতিমন্ডলীর সদস্য’ নির্বাচিত হন।[৭] ২০১১ সালের ৫ ডিসেম্বর তিনি শেখ হাসিনার দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের (বর্তমান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়) মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১২ সালের এপ্রিলে তৎকালীন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সহকারী একান্ত সচিবের (এপিএস) অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় সুরঞ্জিত পদত্যাগ করার পর তিনি কিছুকাল রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও পালন করেন।[৮]
২০১৪ সালের দশম এবং ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি জয়লাভ করেন এবং শেখ হাসিনার তৃতীয় ও চতুর্থ মন্ত্রিসভায়ও তিনি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে ২০১৬-২০১৯ মেয়াদে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর ২১তম জাতীয় সম্মেলনেও তিনি দ্বিতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক পদে পুন:নির্বাচিত হন।[৯] ২০২২ সালের ২৪ ডিসেম্বর ২২তম সম্মেলনেও তিনি টানা তৃতীয় বারের মতো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।[১০] ২০২২ সালের ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২২তম জতীয় সম্মেলনে টানা তৃতীয়বারের মত সাধারণ সম্পাদক পদে পুনঃনিবার্চিত হন তিনি। যা আওয়ামী লীগের ইতিহাসে প্রথম।
সাংবাদিকতা ও লেখালেখি
ওবায়দুল কাদের রাজনীতি ছাড়াও বেশ কিছুদিন সাংবাদিকতা করেছেন এবং বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেছেন।[৭] তিনি দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকার সহকারী সম্পাদক ছিলেন। তিনি মোট ৯টি গ্রন্থ রচনা করেছেন।[১১]
- Bangladesh: A Revolution Betrayed
- বাংলাদেশের হৃদয় হতে
- পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধু
- এই বিজয়ের মুকুট কোথায়
- তিন সমুদ্রের দেশে
- মেঘে মেঘে অনেক বেলা
- রচনা সমগ্র
- কারাগারে লেখা অনুস্মৃতি: যে কথা বলা হয়নি।
- নির্বাচিত কলাম
তথ্যসূত্র
- ↑ "জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত, খালেদা জিয়া মুক্ত – DW – 06.08.2024"। dw.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-০৬।
- ↑ "দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত"। যমুনা টিভি। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-০৭।
- ↑ "ওবায়দুল কাদের-এর সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত" (পিডিএফ)। ৩ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
- ↑ ক খ "জীবনী"। ২১ জুন ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০১৩।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব। "ক্ষমা চাইলেন নোয়াখালীর একরামুল, ক্ষমা করলেন ওবায়দুল কাদের"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-০৩।
- ↑ ক খ গ "Obaidul Quader: At a glance"। The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২৩ অক্টোবর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০২০।
- ↑ ক খ গ "Companiganj"।
- ↑ "রেলের অতিরিক্ত দায়িত্ব পেলেন ওবায়দুল কাদের"। দৈনিক প্রথম আলো। ২০১৯-০৩-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ অক্টোবর ২০১৬।
- ↑ "শেখ হাসিনা সভাপতি, ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক"। দৈনিক প্রথম আলো। ১০ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ অক্টোবর ২০১৬।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব। "আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে শেখ হাসিনার সঙ্গে এবারও ওবায়দুল কাদের"। bdnews24। ২০২২-১২-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২৪।
- ↑ "মাননীয় মন্ত্রীর জীবনী"। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। ২৬ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০২০।