সাদেক হোসেন খোকা
সাদেক হোসেন খোকা (১২ মে ১৯৫২ - ৪ নভেম্বর ২০১৯) ছিলেন বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা। তিনি খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় মন্ত্রীসভায় মন্ত্রী ও প্রথম মন্ত্রীসভায় প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। এবং অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সর্বশেষ মেয়র ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এবং অবিভক্ত ঢাকা মহানগর বিএনপির সভাপতি ছিলেন। তিনি পরপর চারবার ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
সাদেক হোসেন খোকা | |
---|---|
অবিভক্ত ঢাকার মেয়র | |
কাজের মেয়াদ ২৫ এপ্রিল ২০০২ – ২৯ নভেম্বর ২০১১ | |
প্রধানমন্ত্রী | শেখ হাসিনা খালেদা জিয়া |
পূর্বসূরী | মোহাম্মদ হানিফ |
উত্তরসূরী | বিলুপ্ত |
বাংলাদেশের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ১০ অক্টোবর ২০০১ – ২২ মে ২০০৩ | |
প্রধানমন্ত্রী | খালেদা জিয়া |
পূর্বসূরী | সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী |
উত্তরসূরী | আবদুল্লাহ আল নোমান |
ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য | |
কাজের মেয়াদ ২০ মার্চ ১৯৯১ – ২৯ অক্টোবর ২০০৬ | |
পূর্বসূরী | জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ আদেল |
উত্তরসূরী | মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন |
বাংলাদেশের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ১৭ মে ১৯৯১ – ৩০ মার্চ ১৯৯৬ | |
পূর্বসূরী | মির্জা আব্বাস |
উত্তরসূরী | শামসুল হক |
ব্রাদার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক | |
কাজের মেয়াদ ১৯৭২ – ১৯৭৭ | |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ১২ মে ১৯৫২, বাংলাদেশ |
মৃত্যু | ৪ নভেম্বর ২০১৯ স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যানসার সেন্টার, ম্যানহাটন, নিউইয়র্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র | (বয়স ৬৭),
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশি |
রাজনৈতিক দল | বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল |
দাম্পত্য সঙ্গী | ইসমত হোসেন |
সন্তান |
|
শিক্ষা | মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ কলেজ |
পুরস্কার | জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার (২০০৪) |
সামরিক পরিষেবা | |
শাখা | মুক্তি বাহিনী |
যুদ্ধ | বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ |
প্রাথমিক জীবন
সম্পাদনাবীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা ১৯৫২ সালের ১২ মে তারিখ ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। পৈত্রিক বাড়ি মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুরের সৈয়দপুরে। তার পিতা প্রকৌশলী এম এ করিম সেনাবাহিনীতে চাকুরি করতেন, পরে ব্যবসা শুরু করেন।[১] খোকা বাবা-মায়ের সঙ্গে পুরান ঢাকার গোপীবাগে থাকতেন।
তিনি গোপীবাগ রামকৃষ্ণ মিশন স্কুল, কলতাবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জয়দেবপুর রানী বিলাস মনি উচ্চ বালক বিদ্যালয়, জগন্নাথ কলেজ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন ও মনোবিজ্ঞানে এম.এ. সম্পন্ন করেন। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।[২]
কর্মজীবন
সম্পাদনাবীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এবং অবিভক্ত ঢাকা মহানগর বিএনপির সভাপতি ছিলেন। জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতিও ছিলেন তিনি।
ছাত্র ইউনিয়নের ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন তিনি। পরে যোগ দেন বাম আন্দোলনে; রুশ-চীন দ্বন্দ্বে কমিউনিস্ট পার্টির ভাঙন দেখা দিলে তিনি নাম লেখান চিনপন্থি শিবিরে।
তিনি ১৯৭২ সালে ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত এই ক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে ব্রাদার্স ক্লাবের চেয়ারম্যানও হয়েছিলেন। এছাড়া ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, ফরাশগঞ্জ ক্লাব এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের চেয়ারম্যানের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। তিনি ঢাকা মহানগর ফুটবল সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদে পদোন্নতি লাভ করেছিলেন।
ছাত্র আন্দোলনের পর কাজী জাফর আহমেদ নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস লীগে (ইউপিপি) যোগ দিয়েছিলেন খোকা। পরে যোগ ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে (ন্যাপ)।
জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরে যখন দলের হাল ধরেন খালেদা জিয়া, চিনপন্থি অনেক বাম নেতাকে অনুসরণ করে তখন ১৯৮৪ সালে বিএনপিতে যোগ দেন খোকা।
প্রথমে ওয়ার্ড কমিশনার হন ঢাকা সিটি করপোরেশনের।
১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও স্বৈরাচার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কে পরাজিত করে প্রথম সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং তার দল সরকার গঠন করলে তিনি ১৭ মে ১৯৯১ থেকে ৩০ মার্চ ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন।[৩]
পরবর্তীতে ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ, ১২ জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম এবং ২০০১ সালেও তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ২০০১ সালে তার দল সরকার গঠন করলে তিনি মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন।[৪][৫][৬]
তিনি অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয় লাভের মাধ্যমে ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০৪ সালে তিনি মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন, এর আগে তিনি একই সাথে মেয়র ও মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ক্রীড়া ক্ষেত্রে অবদানের জন্য তাকে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার ২০০৪ দেয়া হয়।[৭]
২০১১ সালে, সরকার সংসদে একটি বিলের মাধ্যমে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন গঠন করে। তিনি সেই বছরের ২৯ নভেম্বর মেয়রের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
পারিবারিক জীবন
সম্পাদনাসাদেক হোসেন খোকার স্ত্রী ইসমত হোসেন, একমাত্র মেয়ে সারিকা সাদেক, বড় ছেলে ইশরাক হোসেন ও ছোট ছেলে ইশফাক হোসেন।[১][৮]
সম্মাননা
সম্পাদনামৃত্যু
সম্পাদনাসাদেক হোসেন খোকা ৪ নভেম্বর ২০১৯ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যানসার সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ৭ নভেম্বর তাকে জুরাইন কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।[৯][১০]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা আর নেই"।
- ↑ মাহবুব, মমতাজী (১৬ মে ২০১৫)। "ঐতিহ্যের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়"। বাংলাদেশ প্রতিদিন। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ "৫ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)। জাতীয় সংসদ। বাংলাদেশ সরকার। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)। জাতীয় সংসদ। বাংলাদেশ সরকার। ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "৭ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)। জাতীয় সংসদ। বাংলাদেশ সরকার। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "৮ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)। জাতীয় সংসদ। বাংলাদেশ সরকার। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ PM distributes Nat'l Sports Awards ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে, ডেইলি স্টার
- ↑ "সাদেক হোসেন খোকা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-০৪।
- ↑ "সাদেক হোসেন খোকা আর নেই"। jagonews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-০৪।
- ↑ "সাদেক হোসেন খোকা চিরনিদ্রায় শায়িত"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-০৮।