দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০১৪
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০১৪ বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারি ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনটি নবম জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ দলই বর্জন করে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্রসহ ১৭টি দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এছাড়াও নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা বিজয়ী হওয়ায় নির্বাচনটি নিয়ে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার জন্য প্রয়োজন ১৫১টি আসন | ||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||
|
৫ জানুয়ারি রোববার বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বাকী ১৪৭টি[১] আসনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য ১৫৪ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ার ফলে এবারের নির্বাচনে সারা দেশের মোট ৯,১৯,৬৫,৯৭৭ ভোটারের মধ্যে ভোট দেওয়ার সুযোগ পান ৪,৩৯,৩৮,৯৩৮ জন।
প্রেক্ষাপট
সম্পাদনা৩০শে জুন ২০১১ সালে তত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাশ হয়। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তার শরিক জোটগুলো এর পর থেকেই নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা পুনরায় চালু করার জন্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে।[২] সরকারী দল আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচনের ঘোষণা দেন[৩] এবং তখনই বিরোধী দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না বলে ঘোষণা দেন।
ফলাফল
সম্পাদনাএই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২৩৪টি আসনে জয়লাভ করে নিরাপদ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করে। তবে বিরোধী জোট নির্বাচন বর্জন করায় এই নির্বাচনটি বেশ বিতর্কিত ছিল।
বর্জনের ফলে ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনের সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়। [৪][৫]বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ ১২৭টি আসনে জয়লাভ করে, রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ২০টি, জেএসডি ৩টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ২টি এবং জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) একটিতে জয়লাভ করে।[৬]
বাকি ১৪৭টি আসনের মধ্যে ১৩৯টি আসনের (যেগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল) ফলাফল প্রকাশ করা হয়, যার মধ্যে আওয়ামী লীগ ১০৫টি, জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ১৩টি, ওয়ার্কার্স পার্টি চারটি, জেএসডি দুটি এবং তরিকত ফেডারেশন ও বিএনএফ একটি করে আসনে জয়লাভ করে। বাকি ৮টি নির্বাচনী এলাকার নির্বাচন সহিংসতার কারণে স্থগিত করা হয় এবং পরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।[৬] নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা ৯ জানুয়ারি শপথ গ্রহণ করেন।[৭]
বর্জন ও সহিংসতার ফলে ভোটার উপস্থিতি আগের কয়েকটি নির্বাচনের তুলনায় এই নির্বাচনে বেশ কম ছিল। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল এমন ১৪৭ টি আসনে ভোটার উপস্থিতি মাত্র ৪০% এবং রাজধানী ঢাকায় ২২% এর মতো ছিল।[৫][৮][৯]
দল | ভোট | % | আসন | +/– | |
---|---|---|---|---|---|
আওয়ামী লীগ | ১,২৩,৫৭,৩৭৪ | ৭২.১৪ | ২৩৪ | +৪ | |
জাতীয় পার্টি | ১১,৯৯,৭২৭ | ৭ | ৩৪ | +৭ | |
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি | ৩,৫৯,৬২০ | ২.১ | ৬ | +৪ | |
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) | ২,০৩,৭৯৯ | ১.১৯ | ৫ | +২ | |
বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন | ১,৭৭,৪৪৯ | ১.০৪ | ২ | +২ | |
জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) | ১,২৪,৩৮৯ | ০.৭৩ | ২ | +২ | |
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট | ১,০৭,৯৯০ | ০.৬৩ | ১ | +১ | |
বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি | ৭,১২০ | ০.০৪ | ০ | ০ | |
খেলাফত মজলিস | ৫,৭২৫ | ০.০৩ | ০ | ০ | |
জাতীয় গণ ফ্রন্ট | ২,৭১৭ | ০.০২ | ০ | নতুন | |
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট | ২,৫৮৫ | ০.০২ | ০ | ০ | |
গণতন্ত্রী পার্টি | ২,০৩১ | ০.০১ | ০ | ০ | |
স্বতন্ত্র | ২৫,৭৯,৩২৪ | ১৫.০৬ | ১৬ | +১৪ | |
মোট | ১,৭১,২৯,৮৫০ | ১০০ | ৩০০ | ০ | |
বৈধ ভোট | ১,৭১,২৯,৮৫০ | ৯৮.৪৯ | |||
অবৈধ/ফাঁকা ভোট | ২,৬৩,০৩৭ | ১.৫১ | |||
মোট ভোট | ১,৭৩,৯২,৮৮৭ | ১০০ | |||
নিবন্ধিত ভোটার/ভোটদান | ৪,৩৯,৪৩,১৮৪ | ৩৯.৫৮ | |||
উৎস: বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন |
নির্বাচনপূর্ব ও নির্বাচন পরবর্তী হত্যা
সম্পাদনানির্বাচনের দিন সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ১৯ জন। নির্বাচনপূর্ব সহিংসতার দিক থেকেও এবারের নির্বাচন অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটের আগের দিন পর্যন্ত ৪১ দিনে মারা গেছেন ১২৩ জন। ভোটের দিন এতসংখ্যক মানুষের প্রাণহানি এর আগে দেখা যায়নি।[১]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ প্রতিবেদক, নিজস্ব। "জাল ভোট, কলঙ্কিত নির্বাচন"। Prothomalo। ২০২১-১১-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-১০।
- ↑ "তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাস"। কালের কণ্ঠ। ২০১১-০৬-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-১০।
- ↑ "বাংলাদেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বর্তমান রাজনৈতিক সংকট"। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
- ↑ Last elections IPU
- ↑ ক খ Election Commission Bangladesh (২০১৫)। "Statistics Report. 10th Jatiya Sangsad Elections (in Bengali)" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মে ২০২২।
- ↑ ক খ "Repolls ordered in 8 constituencies"। bdnews24.com। ২০১৩-০৯-১৪। ২০১৮-১২-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৬।
- ↑ "Newly elected Bangladesh MPs sworn in"। Al Jazeera। ৯ জানুয়ারি ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০২২।
- ↑ Barry, Ellen (২০১৪-০১-০৫)। "Low Turnout in Bangladesh Elections Amid Boycott and Violence"। The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৫-২৭।
- ↑ Barry, Ellen (২০১৪-০১-০৬)। "Bangladesh ruling party wins after boycotted vote"। The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৫।