উত্তরবঙ্গ (বাংলাদেশ)
উত্তরবঙ্গ বাংলাদেশের উত্তর দিকে অবস্থিত একটি ভৌগোলিক অঞ্চল। উত্তরাঞ্চলের দুই বিভাগ রাজশাহী বিভাগ ও রংপুর বিভাগকে একত্রে বলা হয় উত্তরবঙ্গ। প্রাচীন বঙ্গ রাজ্যের ভৌগোলিক নাম উত্তরবঙ্গ থেকেই এই নামের ব্যবহার করা হয়। রংপুর বিভাগ গঠন করার পূর্বে, পুরো উত্তরবঙ্গই রাজশাহী বিভাগের মধ্যে ছিলো। রাজশাহী বিভাগ ও রংপুর বিভাগ নিয়ে উত্তরবঙ্গ গঠিত। নাটোরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় প্রশাসনিক বাসভবন অবস্থিত। যা উত্তরা গণভবন নামে পরিচিত। পাকিস্তান আমলে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান বাংলাদেশের দ্বিতীয় সদরদপ্তর ছিল এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজবাড়ী তথা উত্তরা গর্ভামেন্ট হাউজকে উত্তরা গণভবন হিসেবে ঘোষণা করেন।

ভূগোল
সম্পাদনাউত্তরবঙ্গের পশ্চিম ও উত্তর দিকে ভারত, দক্ষিণ দিকে খুলনা বিভাগ (দক্ষিণবঙ্গ), পূর্ব দিকে ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগ অবস্থিত। উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে উন্নত শহর হচ্ছে রাজশাহী, এছাড়াও বৃহত্তম শহরের মধ্যে রয়েছে রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর, পাবনা ও দিনাজপুর শহর। আয়তনে উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ জেলা দিনাজপুর এবং ক্ষুদ্রতম জেলা জয়পুরহাট।
ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি
সম্পাদনারাজশাহী বিভাগ ও রংপুর বিভাগ এর মোট ১৬ টি জেলা আছে। তার মধ্যে অন্যতম প্রধান শহর রাজশাহী। তাছাড়া প্রধান বাণিজ্যিক নগর বলা হয় বগুড়া কে। রংপুর ও পাবনা জেলা এই অঞ্চলের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র। দুই বিভাগের পাঁচটি বাণিজ্য কেন্দ্রই প্রধানত উত্তরবঙ্গ এর ব্যবসা-বাণিজ্যের সিংহভাগ দখলে রেখেছে। বগুড়ায় বাংলাদেশ এর প্রায় সকল বাণিজ্যিক ব্যাংক সমূহের একটি করে হলেও শাখা ও বিভাগীয় কার্যালয় আছে। যা এই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে মূখ্য ভূমিকা পালন করছে। উত্তরবঙ্গের মূল অর্থনীতি কৃষি নির্ভর। সারা বছর বিভিন্ন কৃষি ফসল উৎপন্ন হয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো ধান, আলু, মরিচ, গম, ভুট্টা, তেল বীজ, আম, রেশম ইত্যাদি।দেশের গো সমগ্র উত্তরবঙ্গ প্রচুর গবাদিপশু পালন করা হয়। ফলে এখানে সর্বৎকৃষ্ঠ মানের গরুর দুধ পাওয়া যায়। তা থেকে বিভিন্ন মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরী হয়। বগুড়ার দই, বাঘাবাড়ির,ঘি তার মধ্যে প্রধান। তাছাড়া নাটরের কাঁচা গোল্লাও অন্যতম। বগুড়ার দই ও নাটরের কাঁচাগোল্লা এখন জি.আই পণ্য হিসেবে মর্যদা লাভ করেছে। ফলে মিষ্টি ২ টির বাণিজ্যিক প্রসার এখন বিশ্বজুড়ে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা
সম্পাদনাসড়কপথ
সম্পাদনাঢাকা - বগুড়া - রংপুর - বাংলাবান্ধা মহাসড়কটি (এন৫) বগুড়া জেলার একেবারে মধ্যভাগ দিয়ে শেরপুর, শাহজাহানপুর, বগুড়া সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলা দিয়ে চলে গেছে। ভারী এবং দূর পাল্লার যানবাহন চলাচলের জন্য মূল সড়কের পাশাপাশি রয়েছে প্রশস্ত দুটি বাইপাস সড়ক। প্রথমটি ১ম বাইপাস নামে পরিচিত শহরের পশ্চিম দিকে মাটিডালি থেকে শুরু হয়ে বারপুর, চারমাথা, তিনমাথা রেলগেট, ফুলতলা হয়ে বনানীতে গিয়ে শেষ হয়েছে। দ্বিতীয়টি ২য় বাইপাস নামে পরিচিত যা ২০০০ সালের পরবর্তীকালে নির্মিত হয়। দ্বিতীয় বাইপাসটি মাটিডালি থেকে শুরু হয়ে শহরের পূর্ব পাশদিয়ে জয়বাংলা বাজার, সাবগ্রাম হয়ে বনানীতে গিয়ে মুল সড়কের সাথে মিলিত হয়েছে। এছাড়া নাটোর, পাবনা, রাজশাহী সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলা গুলোর সাথে যোগাযোগের জন্য একটি আলাদা মহাসড়ক রয়েছে যা নন্দীগ্রাম উপজেলার মধ্যদিয়ে নাটোরের সাথে সংযুক্ত। নওগাঁ জেলার সাথে যোগাযোগের জন্য চারমাথা থেকে আরেকটি সংযোগ সড়ক কাহালু, দুপচাঁচিয়া, সান্তাহারের মধ্য দিয়ে নওগাঁয় গিয়ে শেষ হয়েছে। এছাড়া বগুড়া জয়পুরহাট জেলাকে সংযুক্ত করার জন্য রয়েছে মোকামতলা হতে আলাদা সড়ক। ঢাকা-বগুড়া-রংপুর মহাসড়ক টি ৪ লেনে উন্নত করা হয়েছে। সাথে দুই পাশে সার্ভস লেনও আছে। ফলে যানজট অনেকটা মুক্তির পথে। সিরাজগঞ্জ জেলার হাটিকুমরুলে দেশের সবচেয়ে বড় আধুনিক বিশ্বমানের ইন্টারচেঞ্জ তৈরী করা হচ্ছে। যার ফলে ঢাকার সাথে উত্তরবঙ্গের সড়ক যোগাযোগ আরো উন্নত হবে।
রেলপথ
সম্পাদনারেলপথে উত্তরবঙ্গের সাথে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে।
বিমানপথ
সম্পাদনাউত্তরবঙ্গে বর্তমানে দুইটি সচল অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর রয়েছে, তা হলো-
- শাহ মখদুম বিমানবন্দর, রাজশাহী
- সৈয়দপুর বিমানবন্দর
- বগুড়া বিমানবন্দর, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
এছাড়াও ঈশ্বরদী, লালমনিরহাট ও ঠাকুরগাঁওয়ে বিমানবন্দর রয়েছে, যা বর্তমানে বন্ধ আছে।
জেলাসমূহ
সম্পাদনাজনপরিসংখ্যান
সম্পাদনা- ইসলাম (৮৯.৬%)
- হিন্দুধর্ম (৯.৫৭%)
- অন্যান্য (০.৮৩%)
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী উত্তরবঙ্গের জনসংখ্যা ৩,০২,০১,৮৭৩। ইসলাম ধর্ম এই অঞ্চলের প্রধান ধর্ম।
ক্রীড়া
সম্পাদনাউত্তরাঞ্চল ক্রিকেট দল বাংলাদেশের একটি প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট দল যা বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগে উত্তর বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে।