ফেরদৌসী মজুমদার
ফেরদৌসী মজুমদার (১৮ জুন ১৯৪৩) একজন বাংলাদেশী অভিনেত্রী। স্বাধীনতা উত্তরকালে টিভি ও মঞ্চে সমান সফলতার সাথে অভিনয় করে আসছেন। ধারাবাহিক নাটক সংশপ্তকে 'হুরমতি চরিত্রে অভিনয় করে তিনি বিপুল প্রশংসা লাভ করেন। তিনি ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক এবং ২০২০ সালে সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন। আত্মজীবনী সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০২১ সালে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন।[১][২][৩]
ফেরদৌসী মজুমদার | |
---|---|
জন্ম | ফেরদৌসী মজুমদার ১৮ জুন ১৯৪৩ |
মাতৃশিক্ষায়তন | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | অভিনেত্রী, শিক্ষিকা |
দাম্পত্য সঙ্গী | রামেন্দু মজুমদার |
সন্তান | ত্রপা মজুমদার |
পুরস্কার | নিচে দেখুন |
প্রাথমিক জীবন
সম্পাদনাফেরদৌসী মজুমদারের জন্ম বরিশালে হলেও তিনি বেড়ে উঠেছেন ঢাকাতে। তার বাবা খান বাহাদুর আব্দুল হালিম চৌধুরী ছিলেন ডিস্ট্রিক ম্যাজিস্ট্রেট। তার ভাইবোন ছিল মোট ১৪ জন যাদের মধ্যে ৮ জন ভাই এবং ৬ জন বোন। সবচেয়ে বড় ভাই কবীর চৌধুরী এবং মেজ ভাই মুনীর চৌধুরী। ‘দারুল আফিয়া’ নামের বাড়িতে তার শৈশব কেটেছে। তাদের পৈতৃক নিবাস ছিল নোয়াখালীতে। ফেরদৌসী মজুমদারের পরিবার ছিল খুব রক্ষণশীল। বাড়িতে সাংস্কৃতিক চর্চা ছিল নিষিদ্ধ। তার লেখাপড়া শুরু হয় নারী শিক্ষা মন্দির স্কুল থেকে। এই স্কুলে ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়ার পর তিনি ভর্তি হন মুসলিম গার্লস স্কুলে যেখান থেকে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন। তারপর ইডেন কলেজে ভর্তি হন। তিনি ছোটবেলায় খেলাধুলা করতে পছন্দ করতেন এবং একবার ৯৬৬ বার স্কিপিং করে ক্রিস্টালের বাটি পেয়েছিলেন যদিও ফিট হয়ে গিয়েছিলেন তখন। তিনি ছোটবেলা থেকেই মানুষকে অনুকরণ করতে পারতেন। [৪]
অভিনয়ের শুরু
সম্পাদনাইডেন কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময় তিনি তার বড় ভাই মুনীর চৌধুরী থেকে প্রস্তাব পান একটা নাটকে রোবটের চরিত্রে অভিনয় করার যার নাম ছিল ‘ডাক্তার আবদুল্লাহর কারখানা’।এটি লিখেছিলেন শওকত ওসমান এবং মঞ্চস্থ হয়েছিল ইকবাল হলে যা এখন জহুরুল হক হল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর তিনি পাবলিক লাইব্রেরিতে ‘দন্ড ও দন্ডধর’ নাটকে অভিনয় করেন তার শিক্ষক রফিকুল ইসলামের বিপরীতে।তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা নাটকের ফোরামে তিনি জড়িয়ে পড়েন এবং সন্মানী হিসেবে ৭৫ টাকা পান।এই টাকা দিয়ে তিনি দামী নেটের মশারি কিনলেন । বাসায় তার 'হারামের' পয়সায় কেনা মশারি দেখে তাকে অনেক বকাঝকা করেন ।পরে অবশ্য কন্যার কান্না দেখে পরের দিন আবার নিজেই সেই মশারি কন্যাকে খাটিয়ে দেন।[৪] তিনি ১৯৭০ সালে মারা যান।তারপর ফেরদৌসী মজুমদার নীলিমা ইব্রাহিমের লেখা ‘তামসি’ নামক নাটকে অভিনয় করেন। তিনি ১৯৭০ সালের ১৩ই জুন রামেন্দু মজুমদারকে বিয়ে করেন।[৫] ১৯৭১ সালের শুরুতে তিনি পাকিস্তানের করাচীতে চলে যান একটা অ্যাডভার্টাইজিং ফার্মে কাজ করতে।পরে ১১ই মার্চ ঢাকায় ফিরে আসেন এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মে মাসে তার পরিবারের সবাই মুনীর চৌধুরী ছাড়া দাউদকান্দি, চান্দিনা হয়ে কলকাতা চলে যান।
স্বাধীনতার পর
সম্পাদনা১৯৭২ সালে ‘থিয়েটার’ গঠন করা হয়, যেখানে ছিল আবদুল্লাহ আল মামুন, রামেন্দু মজুমদার প্রমুখ। ফেরদৌসী মজুমদার সেই দলে যোগ দেন। তিনি মোট ২টি সিনেমায় অভিনয় করেন 'মায়ের অধিকার’ এবং ‘দমকা’।বাংলাদেশ টেলিভিশনের তিনি প্রায় তিনশ’র মতো নাটক করেন।তার অভিনয় জীবন প্রায় তিন দশকের মতো দীর্ঘ।[৪] আবদুল্লাহ আল মামুন ফেরদৌসী মজুমদারকে নিয়ে একটি ৮৬ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন যার নাম ‘জীবন ও অভিনয়’ ।[৬] তিনি ঢাকার উইল্স্ লিট্ল্ ফ্লাওয়ার স্কুলের শিক্ষয়িত্রী ছিলেন। খ্যাতিমান অভিনেতা রামেন্দু মজুমদার তার স্বামী।
চলচ্চিত্রের তালিকা
সম্পাদনাচলচ্চিত্র
সম্পাদনা"আমি অনেকগুলো ভালো ভালো ছবি মিস করেছি। আবদুল্লাহ আল-মামুন আমাকে “সারেং বউ” করতে বলেছিলেন। তখন সংসার, স্বামী, সন্তান নিয়ে এত ব্যস্ত ছিলাম, করতে পারিনি। আমার কাছে সংসার আগে। “সূর্য দিঘল বাড়ী” করা হয়নি। পরে সেই চরিত্রটি করেছেন ডলি আনোয়ার। কারণ তখন ত্রপার বয়স ছিল ৫-৬ বছর।"
—প্রথম আলোকে দেয়া ফেরদৌসী মজুমদারের সাক্ষাৎকার[৭]
বছর | চলচ্চিত্রের নাম | পরিচালক | তথ্যসূত্র |
---|---|---|---|
১৯৯৬ | মায়ের অধিকার | শিবলি সাদিক | [৮] |
২০০১ | মেঘলা আকাশ | নারগিস আক্তার | |
২০০৯ | দরিয়া পাড়ের দৌলতি | আব্দুল্লাহ আল মামুন | |
২০২৩ | আগন্তুক | বিল্পব সরকার | |
নির্মানাধীন | ফ্রম বাংলাদেশ | শাহনেওয়াজ কাকলী |
টেলিভিশন ও মঞ্চনাটক
সম্পাদনা- কোকিলারা(একক অভিনয়)
- এখনো ক্রীতদাস
- বরফ গলা নদী
- জীবিত ও মৃত
- বাঁচা
- অকুল দরিয়া
- যোগাযোগ
- সংশপ্তক
- চোখের বালি
- নিভৃত যতনে
- শংখনীল কারাগার
- এখনও দুঃসময়
- পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনা- ১৯৯৮: শিল্পকলায় একুশে পদক
- ২০১৮: শহিদ আলতাফ মাহমুদ স্মৃতি পদক[৯]
- ২০২০: সংস্কৃতিতে স্বাধীনতা পুরস্কার[১০]
- ২০২১: আত্মজীবনীতে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার[১১]
- আরটিভি স্টার অ্যাওয়ার্ড
বছর | মনোনীত কর্ম | বিভাগ | ফলাফল | সূত্র |
---|---|---|---|---|
২০১৯ | ১ ঘণ্টার নাটক ও টেলিফিল্মে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী - পার্শ্ব চরিত্র | মেঘ বালিকার রঙ | বিজয়ী | [১২] |
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পাচ্ছেন ১০ জন"। দ্য ডেইলি স্টার। ২৫ জানুয়ারি ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০২১।
- ↑ "বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেলেন ১০ জন"। দৈনিক ইত্তেফাক। ২৫ জানুয়ারি ২০২১। ৫ মার্চ ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০২১।
- ↑ "বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার"। বাংলা একাডেমি ওয়েবসাইট।
- ↑ ক খ গ শাহাবুদ্দীন, আহমেদ। "আপন আলয়ে ফেরদৌসী মজুমদার"। অন্যদিন ঈদ সংখ্যা ১৯৯৮, পৃষ্ঠা ১৩৭।
- ↑ রেজা, জামাল (১৯৯৭)। "সুখে আছি সখা আপন মনে"। অন্যদিন ঈদ সংখ্যা: ৩৬৫।
- ↑ "অনন্যা এক ফেরদৌসী"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ১২ জানুয়ারি ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১।
- ↑ "মুক্তিযুদ্ধ, কাননবালা ও 'ফ্রম বাংলাদেশ'"। প্রথম আলো। ২০১৯-১০-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-২৭।
- ↑ "আবারও চলচ্চিত্রে ফেরদৌসী মজুমদার"। দৈনিক সমকাল। ২০১৯-১০-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-২৭।
- ↑ "আলতাফ মাহমুদ পদক পাচ্ছেন হাসান ইমাম-ফেরদৌসী"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ১৪ আগস্ট ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ আগস্ট ২০১৮।
- ↑ "স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন ৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান | বাংলাদেশ প্রতিদিন"। বাংলাদেশ প্রতিদিন (ইংরেজি ভাষায়)। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জানুয়ারি ২০২১।
- ↑ "বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেলেন ১০ জন"। বাংলা ট্রিবিউন। ২৫ জানুয়ারি ২০২১। ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০২১।
- ↑ "'আরটিভি স্টার অ্যাওয়ার্ড-২০১৯' পেলেন যারা"। আরটিভি অনলাইন। ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯।