তিব্বতের ইতিহাস

ইতিহাসের বিভিন্ন দিক

তিব্বতের ইতিহাস মূলত তিব্বতী বৌদ্ধধর্মের ইতিহাস ও বিবর্তনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। এই ধর্ম শুধুমাত্র তিব্বতী সংস্কৃতি নয়, মঙ্গোল ও মাঞ্চু জাতির গৌরবোজ্জ্বল সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সহায়ক হয়ে ওঠে। ভারত ও চীনের মতো দুইটি সুপ্রাচীন সভ্যতার মধ্যবর্তী স্থানে তিব্বতী সভ্যতার বিস্তার ঘটে। তিব্বত মালভূমির পূর্বে অবস্থিত পর্বতশ্রেণী তিব্বত ও চীনের মধ্যেকার সীমান্ত হিসেবে দীর্ঘকাল অবস্থান করেছ, অপরদিকে হিমালয়ের সুউচ্চ পর্বতশ্রেণী ভারতনেপালের রাজ্যগুলি থেকে তিব্বতকে পৃথক করে রেখেছে। এই দুই সভ্যতার মধ্যে মূলতঃ ভারত থেকে শান্তরক্ষিত, কমলশীল, বিমলমিত্র, অতীশ দীপঙ্করের মতো বহু বিখ্যাত মহাযানী বৌদ্ধ পণ্ডিত এবং পদ্মসম্ভবের মতো বিখ্যাত তান্ত্রিক তিব্বতের দুর্গম পথে যাত্রা করে তিব্বতী শাসককদের পৃষ্ঠপোষকতায় তন্ত্রসমৃদ্ধ তিব্বতী বৌদ্ধধর্মের সূচনা ও প্রসার করলে তিব্বতে একটি ধর্ম ও তন্ত্রকেন্দ্রিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠে।

তিব্বত সাম্রাজ্য সম্পাদনা

 
৭৮০ হতে ৭৯০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে সাম্রাজ্যের বিস্তার

তিব্বত একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য হিসেবে গড়ে ওঠে যখন গ্নাম-রি-স্রোং-ব্ত্সন[১]:২৯৮ নামক ইয়ার্লুং উপত্যকার একজন গোষ্ঠীইপতি আনুমানিক ৬০০ খ্রিষ্টাব্দে ঐ উপত্যকা এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের সমস্ত গোষ্ঠীদের একের পর এক যুদ্ধে পরাজিত করে সমগ্র মধ্য তিব্বত নিজের অধিকারে নিয়ে আসেন এবং এক শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা গঠন করতে সক্ষম হন, যার ফলে তিব্বত মালভূমির বিভিন্ন গোষ্ঠী একত্রিত হয়।[২]: ৬১৮ অথবা ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্রোহীদের দ্বারা বিষক্রিয়ার মাধ্যমে হত্যা গ্নাম-রি-স্রোং-ব্ত্সনকে হত্যা করা হলে, তার পুত্র স্রোং-ব্ত্সন-স্গাম-পো এই বিদ্রোহ দমন করে একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য হিসেবে দেশকে গড়ে তোলেন। [৩]:১৯ [৪]:৪৪৩ তিনি সুমপা জাতি[৫]:১৩০,১৪৭, ঝাংঝুং রাজ্য[১]:৫৯[৬]:৩০[৭]:১২৭,১২৮, তুয়ুহুন রাজ্য এবং ট্যাং সাম্রাজ্যের সীমান্তপ্রদেশ সোংঝৌ আক্রমণ করেন[৮]:১৬৮,১৬৯ তার রাজত্বে তিব্বতে প্রথম বৌদ্ধ ধর্ম প্রবেশ করে। তিনি লাসা শহরে জোখাং সহ বহু বৌদ্ধমন্দির স্থাপন করেন।[৯][১০]লাসা শহরকে তিনি সুসজ্জিত করে রাজধানীর মর্যাদা দেন।[১১][১২] তার মন্ত্রী থু-মি-সাম-ভো-তাকে তিব্বতী ভাষার জন্য লিপি প্রস্তুত করলে তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলি সংস্কৃত থেকে তিব্বতী ভাষায় অনুবাদিত[১৩] ও সংবিধান রচনা শুরু হয়।[১৪] তার পৌত্র সম্রাট খ্রি-মাং-স্লোন-র্ত্সান পশ্চিম তুর্কী খাগানাতের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করে এই দুই শক্তি ৬৬৩ খ্রিষ্টাব্দে কাশগর ও ৬৬৫ খ্রিষ্টাব্দে খোটান দখল করে ও ৬৬৭ খ্রিষ্টাব্দে তিব্বতের নিকট তুর্কী নুশিবাই পরাজয় স্বীকার করে,[৩]:৩২ যার ফলে ওয়াখান উপত্যকা দখলে চলে আসে।[১৫]:২৩২ ৬৭০ খ্রিষ্টাব্দে তিব্বতী বাহিনী ট্যাং সাম্রাজ্যের অধিকারে থাকা তারিম নদীর পশ্চিম উপত্যকা ও আকসু দখল করে নেয়।[৩]:৩৪-৩৬ ৬৭৬ খ্রিষ্টাব্দে তিব্বতী সৈন্যবাহিনী গানসু প্রদেশের সানঝৌ, কুওঝৌ, হেঝৌ, দিয়েঝৌ, মিগং ও ডানলিং আক্রমণ করে পরাজিত করে।[১৬]:৩১ ৬৭৭ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে তিব্বতীদের দখলে সমগ্র তারিম নদী উপত্যকা চলে আসে।[৩]:৪৩ইর হ্রদ অঞ্চলে বসবাসকারী ইরহে জাতি[১৭]:১৩৬ ট্যাং সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হওয়ার জন্য তিব্বতের অধীনে চলে আসে। [১৫]:২৩৩ এই সময় তিব্বতীরা পূর্বে সংঝু ও লিয়াংঝৌ, দক্ষিণে ভারত, পশ্চিমে কাশগর ও উত্তরে তুর্কীদের এলাকা পর্যন্ত তাদের সাম্রাজ্য বিস্তার করেন।[n ১] খ্রি-ল্দে-গ্ত্সুগ-ব্ত্সান, খ্রি-ল্দে-স্রোং-ব্ত্সান প্রভৃতি পরবর্তী উল্লেখযোগ্য সম্রাটরা ট্যাং সাম্রাজ্যের সঙ্গে বৈরীতা বজায় রাখেন এবং বিভিন্ন যুদ্ধ বিগ্রহের ফলে সাম্রাজ্যের সীমান্ত পর্যায়ক্রমে হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে।}[১৫]:২৫০[১৫]:২৪৮[১৯]:৩৫৪[২০] ৭৫১ খ্রিষ্টাব্দে সির দরিয়ার উত্তরে তিব্বতী সৈন্যরা আরবকার্লুক জাতিদের ট্যাং সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে টালাসের যুদ্ধে সহায়তা করে। এই নির্ণায়ক যুদ্ধের ফলে ট্যাং সাম্রাজ্যের পশ্চিমে সম্প্রসারণ বন্ধ হয়ে যায়।[১৫]:২৪৯ তিব্বত সাম্রাজ্য খ্রি-গ্ত্সুগ-ল্দে-ব্র্ত্সানের শাসনকালে সর্বাধিক বিস্তারলাভ করে। এই সময় তিব্বতী সেনাবাহিনী চীননেপালের কিছু অংশ ছাড়াও খোটান, বালটিস্তান, ব্রুঝা, হুঞ্জা, ঝাংঝুং, ইয়ুগুর, কামিলং[২১]:১৭, জিনজিয়াংগানসু অধিকারে আনে।[২]: খ্রি-স্রোং-ল্দে-ব্ত্সানের আমন্ত্রণে ভারত থেকে শান্তরক্ষিত, পদ্মসম্ভববিমলমিত্র তিব্বত গমন করে সেখানে বৌদ্ধ ধর্ম প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। শান্তরক্ষিতপদ্মসম্ভব সম-য়ে বৌদ্ধবিহার স্থাপন করেন, শান্তরক্ষিতবিমলমিত্র সংস্কৃত থেকে তিব্বতী ভাষায় বৌদ্ধ ধর্মগুলি অনুবাদ করেন।[১]:৫৯:৬৬ সম্রাট খ্রি-স্রোং-ল্দে-ব্ত্সান সম-য়ে বৌদ্ধবিহারে ৭৯২ থেকে ৭৯৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত দুই বছর ব্যাপী লাসা পরিষদ নামে এক ধর্মীয় বিতর্কসভার আয়োজন করেন। এই বিতর্ক চৈনিক বৌদ্ধধর্মের প্রতিভূ হিসেবে চান গুরু হেশাং মোহেয়ান এবং ভারতীয় বৌদ্ধধর্মের প্রতিভূ হিসেবে শান্তরক্ষিতের শিষ্য কমলশীলের মধ্যে সংগঠিত হয়। বিতর্কের শেষে কমলশীল বিজয়ী ঘোষিত হলে তিব্বতে চীনা বৌদ্ধ ধর্মের পরিবর্তে ভারতীয় বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব বিস্তার হয়।[১]:৬৬ খ্রি-গ্ত্সুগ-ল্দে-ব্র্ত্সান তিব্বতে বৌদ্ধধর্ম প্রচারকারী তিনজন ধর্মরাজার মধ্যে একজন ছিলেন। তিনি নেপাল, চীন, কাশ্মীরখোটান থেকে বহু কারিগর, পণ্ডিত ও অনুবাদককে তিব্বতে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে আসেন। তিনি বহু সংস্কৃত শব্দের তিব্বতী ভাষায় অনুবাদ করার কাজে উৎসাহ প্রদান করে বহু তিব্বতী সাহিত্য ও অনুবাদকর্মের সৃষ্টিতে সহায়তা করেন।[১৬]:৪৯[২২][২৩][২৪] তিব্বত সাম্রাজ্যের অন্তিম সম্রাট গ্লাং-দার-মা বহু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের হত্যা করেছিলেন, কিন্তু এই ঘটনার ঐতিহাসিকতা সম্বন্ধে দ্বিমত রয়েছে।[২৫][২৬] পদ্মসম্ভবের পঁচিশজন শিষ্যের মধ্যে একজন ল্হা-লুং-দ্পাল-গ্যি-র্দো-র্জে বৌদ্ধ ধর্ম রক্ষার উদ্দেশ্যে গ্লাং-দার-মাকে হত্যা করেন। [১]:৭১[৩]:১৬৮ গ্লাং-দার-মার মৃত্যুর পর দুই স্ত্রীর দুই পুত্র য়ুম-ব্র্তান এবং ওদ-স্রুং সাম্রাজ্যের অধিকারের জন্য লড়াই শুরু করলে তিব্বত সাম্রাজ্য ভেঙ্গে পড়ে[১]:৭১ এই গৃহযুদ্ধের ফলে তিব্বতী রাজতন্ত্রের রাজনৈতিক প্রভাব হ্রাস পায়[২৭]:৫৭ এবং তিব্বত অনেকগুলি পৃথক রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই রাজ্যগুলি একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত থাকায় ১২৪৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিব্বতে কোন কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থার অস্তিত্ব ছিল না।[২৮]:১১৭

বিভক্তির যুগ সম্পাদনা

গ্লাং-দার-মার মৃত্যুর পর দুই পুত্র য়ুম-ব্র্তান মধ্য তিব্বতের দ্বুস অঞ্চল এবং ওদ-স্রুং গুজ অঞ্চলে শাসন করেন।[২৮]:১১৭ ওদ-স্রুংয়ের পুত্র দ্পাল-'খোর-ব্র্ত্সানের (ওয়াইলি: Dpal 'khor brtsan) ব্ক্রা-শিস-ব্র্ত্সেন-ব্র্ত্সান (ওয়াইলি: Bkra shis brtsen brtsan) এবং স্ক্যিদ-ল্দে-ন্যিমা-গোন (ওয়াইলি: Skyid lde nyima mgon) নামক দুই পুত্র ছিল। স্ক্যিদ-ল্দে-ন্যিমা-গোন পশ্চিম তিব্বত অঞ্চলের স্তোদ-ম্ঙ্গা-রিস অঞ্চলে রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।[২৯] তিনি লাদাখকে নিজের রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন এবং লাদাখি রাজবংশের সুত্রপাত করেন। সপ্তদশ শতাব্দীতে সম্পাদিত লা-দ্ভাগ্স-র্গ্যাল-রাব্স বা লাদাখের রাজাদের ধারাবিবরণীতে বলা হয় যে রাজা স্ক্যিদ-ল্দে-ন্যিমা-গোন তার তিন পুত্রের মধ্য তার সাম্রাজ্য ভাগ করে দেন। এই বিবরণীতে বলা হয় তিনি তার তার জ্যৈষ্ঠ পুত্র দ্পাল-গ্যি-ঙ্গোনকে মার‍্যুল বা লাদাখ, হ্গোগের স্বর্ন খনি, রু-থোগ বা রুদোক, ল্দে-ম্চোগ-দ্কার-পো বা দেমচোক ও রা-বা-দ্মার-পো প্রদান করেন।[n ২] স্ক্যিদ-ল্দে-ন্যিমা-গোনের অপর পুত্র ব্ক্রা-শিস-ম্গোন (ওয়াইলি: bKra shis mgon) পশ্চিম তিব্বত অঞ্চলে রাজত্ব করে গুজ এবং পু-হ্রাং নামক রাজ্য স্থাপন করেন। বিভক্তির যুগে তিব্বতী বৌদ্ধধর্মের প্রগতি স্তব্ধ হয়। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের হত্যা, কারাবাস ও নির্বাসন দেওয়া হয়। এই সময় তিব্বতের সীমান্ত অঞ্চল আমদোতেই একমাত্র অতিব্বতী গোষ্ঠীদের মধ্যে তিব্বতী বৌদ্ধধর্ম টিকে থাকে। এই সময় দ্মার-বান-শাক্য-সেং-গে (ওয়াইলি: dmar ban shakya seng ge), গ্ত্সাং-রাব-গ্সাল (ওয়াইলি: gtsang rab gsal) এবং গ্যো-দ্গে-ছুং (ওয়াইলি: g.yo dge chung) এবং ব্লা-ছেন-দ্গোংস-পা-রাব-গ্সাল (ওয়াইলি: bla chen dgongs pa rab gsal) নামক চার বৌদ্ধ ভিক্ষু উত্তর পূর্ব তিব্বত অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মের পুনরুজ্জীবন ঘটান।[৩১]

গুজ রাজ্য সম্পাদনা

 
গুজ রাজ্যের রাজধানী সাপারাংয়ের ধ্বংসাবশেষ

স্ক্যিদ-ল্দে-ন্যিমা-গোনের অপর পুত্র ও জাংস্কার রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ল্দে-গ্ত্সুগ-ম্গোনের পুত্রহীন অবস্থায় মৃত্যু হলে ৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে ব্যাং-ছুব-য়ে-শেস'-ওদ গুজ, পু-হ্রাং, জাংস্কার, স্পিতি, লাহুল এবং উত্তর কিন্নর অঞ্চলকে একত্র করে এক সংগঠিত রাজ্যের অধীশ্বর হন।[৩২][৩৩] তিনি রাজত্বকালের শুরুতে ব্কা'-শোগ-ছেন-মো (ওয়াইলি: bka’ shog chen mo) নামক একটি আদেশ জারি করে তার রাজত্বকে ধর্মীয় ভিত্তিতে চালনা করবেন বলে স্থির করেন। সেই কারণে তিনি একাধারে রাজা ও লামা উভয় হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।[৩৩][৩৪] তিনি তিব্বতে দ্বিতীয়বার বৌদ্ধধর্ম প্রসারের জন্যও বিখ্যাত। তিনি কাশ্মীরে বৌদ্ধধর্ম শিক্ষার উদ্দেশ্যে তিব্বত থেকে একুশ জন শিক্ষার্থীকে পাঠান। সংস্কৃত থেকে তিব্বতী ভাষায় বৌদ্ধ ধর্ম গ্রন্থগুলির অনুবাদ করা তাদের এই শিক্ষালাভের উদ্দেশ্য ছিল। এঁদের মধ্যে রিন-ছেন-ব্জাং-পো এবং লেগ্স-পা'ই-শেস-রাব (ওয়াইলি: legs pa'i shes rab) নামক দুইজন শিক্ষার্থী পরবর্তীকালে তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্ম প্রসারে সহায়ক হন। রিন-ছেন-ব্জাং-পো বহু সংস্কৃত গ্রন্থের তিব্বতী ভাষায় অনুবাদ করেন এবং লাদাখ অঞ্চলে বহু বৌদ্ধবিহার নির্মাণ করেন।[৩৫] ৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে ব্যাং-ছুব-য়ে-শেস'-ওদ থোলিং বৌদ্ধবিহার নির্মাণ করেন।[৩৫] ব্যাং-ছুব-য়ে-শেস'-ওদ কয়েক জন দূতের হাতে প্রচুর স্বর্ণ উপঢৌকন দিয়ে অতীশ দীপঙ্করকে তিব্বত ভ্রমণের আমন্ত্রন জানালে দীপঙ্কর সবিনয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেন। এই সময় তিনি সীমান্ত অঞ্চলে সোনা সংগ্রহের জন্য গেলে কারাখানী খানাতের শাসক তাকে বন্দী করেন ও প্রচুর সোনা মুক্তিপণ হিসেবে দাবী করেন। তিনি তার পুত্র ল্হা-লামা-ব্যাং-ছুব-ওদকে মুক্তিপণ দিতে বারণ করেন এবং ঐ অর্থ অতীশ দীপঙ্করকে তিব্বতে আনানোর জন্য ব্যয় করতে বলেন। বন্দীদশায় তার মৃত্যু হয়। ল্হা-লামা-ব্যাং-ছুব-ওদ গুজ রাজ্যের রাজা হয়ে গুং-থং-পা নামে এক বৌদ্ধ উপাসককে ও আরো কয়েক জন অনুগামীকে অতীশ দীপঙ্করকে তিব্বতে আনানোর দায়িত্ব দেন। এরা নেপালের পথে বিক্রমশীলা বিহারে উপস্থিত হন এবং দীপঙ্করের সাথে সাক্ষাৎ করে সমস্ত সোনা নিবেদন করে ভূতপূর্ব রাজা ব্যাং-ছুব-য়ে-শেস'-ওদের বন্দী হওয়ার কাহিনী ও তার শেষ ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করলে অতীশ দীপঙ্কর অভিভূত হয়ে তিব্বত যাত্রা করেন।[৩৬] এর ফলে পশ্চিম তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব বিস্তার ঘটে।[৩২][৩৭]:৩৮৮, ৩৯৪[৩৮] ১০৭৩ খ্রিষ্টাব্দে সা-স্ক্যা বৌদ্ধবিহার এবং ১১৫৫ খ্রিষ্টাব্দে ম্ত্শুর-ফু বৌদ্ধবিহার স্থাপিত হয়। [৩৯]:৩৭ এই সময় রাজধানী থোলিং বৌদ্ধধর্মের এক গুরুত্বপূর্ণ পীঠস্থানে পরিণত হয়।[৩২] ১০৮৮ খ্রিষ্টাব্দে ল্হা-লামা-ব্যাং-ছুব-ওদের পুত্র র্ত্সে-ল্দেকে (ওয়াইলি: rTse lde) দ্বাং-ল্দে (ওয়াইলি: dBang lde) নামক তার ভ্রাতুষ্পুত্র হত্যা করলে গুজ ও পু-হ্রাং নামে দুইটি পৃথক রাজ্যে তাদের রাজ্য ভেঙ্গে যায়। দ্বাং-ল্দে গুজ রাজ্য নিজের অধিকারে রাখেন।[৩৭]:৫৩-৬৬ ১১৩৭ খ্রিষ্টাব্দে কারাখানী খানাতের আক্রমণে গুজ রাজ্যের রাজা ব্ক্রা-শিস-র্ত্সে (ওয়াইলি: bKra shis rtse) মৃত্যুবরণ করলে রাজ্য কয়েক বছরের জন্য বিভক্ত হয়ে পড়ে। ১২৪০ খ্রিষ্টাব্দে মঙ্গোল সম্রাটেরা এই অঞ্চলের প্রশাসনিক অধিকার দ্রিগুং বৌদ্ধবিহারকে দান করেন। কিন্তু ১২৬৫ খ্রিষ্টাব্দে গ্রাগ্স-পা-ল্দে (ওয়াইলি: grags pa lde) নামক এক শক্তিশালী রাজার অধীনে গুজ পুনরায় এক রাজ্যে পরিণত হয় এবং প্রতিবেশী য়া-র্ত্সে (ওয়াইলি: ya rtse) রাজ্যকেও নিজেদের অধীনে নিয়ে আসে। ১২৭৭ খ্রিষ্টাব্দে তার মৃত্যু হলে এই অঞ্চলটি সা-স্ক্যা বৌদ্ধসম্প্রদায়ের কর্তৃত্বে চলে আসে। কিন্তু ১৩৬৩ খ্রিষ্টাব্দে সা-স্ক্যা বৌদ্ধসম্প্রদায়ের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পরিচিত মঙ্গোল ইউয়ান রাজবংশের পতন ঘটলে গুজের রাজারা আবার শক্তিশালী হয় এবং ১৩৭৮ খ্রিষ্টাব্দে পু-হ্রাং অধিকারে আনতে সমর্থ হয়। পরবর্তী সময়ে গুজ ও মুস্তাং রাজ্যের মধ্যে পু-হ্রাং অঞ্চলের মধ্যে বহু বছর বিবাদ চালু থাকলেও শেষ পর্যন্ত পু-হ্রাং গুজের অন্তর্ভুক্ত হয়। চতুর্দশ শতকের শেষ দিকে গুজের শাসকেরা লাদাখ অঞ্চল কিছু বছরের জন্য অধিকারে আনতে সমর্থ হয়। ১৪৯৯ খ্রিষ্টাব্দে গুজের শাসকেরা পশ্চিম মধ্য তিব্বতের নবনির্মিত রিন-স্পুংস-পা রাজ্যকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীতে গুজের রাজারা তিব্বতে শক্তিশালী হয়ে ওঠা দ্গে-লুগ্স ধর্মসম্প্রদায়ের প্রতি আনুগত্য দেখাতে শুরু করেন। ১৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে আন্তোনিও দে আন্দ্রাদে ও তার ভ্রাতা ম্যানুয়েল মারকুইস নামক দুই পর্তুগীজ যাজক ১৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে গুজ রাজ্যে পৌঁছন। আন্তোনিও রাজ্যের সেচ ও কৃষিব্যবস্থার উন্নতিতে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন এবং একটি গীর্জা নির্মাণ করে স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে খ্রিষ্টধর্ম প্রচার করেন।[৪০] আন্তোনিওর লেখা একটি চিঠি থেকে জানা যায় যে, এই সময়ে গুজের কিছু সামরিক অধিকর্তা গুজের রাজাকে সিংহাসনচ্যূত করতে লাদাখীদের আমন্ত্রণ জানান। ১৬৩০ খ্রিষ্টাব্দে লাদাখী সেনাবাহিনী গুজ রাজ্যের রাজধানী অবরোধ করেন। গুজের রাজা খ্রি-ব্ক্রা-শিস-গ্রাগ্স-পা-ল্দে (ওয়াইলি: khri bkra shis grags pa lde) তার বৌদ্ধধর্মাবলম্বী ভ্রাতার উপদেশে সমর্পণ করে গুজ রাজ্যকে লাদাখ রাজ্যের অধীনে করদ রাজ্যে পরিণত করেন।[৪১] এই সিদ্ধান্তের পর গুজের শেষ রাজা খ্রি-ব্ক্রা-শিস-গ্রাগ্স-পা-ল্দেকে লাদাখে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়। এই অভিযানের গুজে নির্মিত সমস্ত গীর্জাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়[৩৮] কথিত আছে, এই অভিযানে লাদাখী সেনাবাহিনী গুজের অধিকাংশ জনগণকেই হত্যা করে, মাত্র দুইশত জন প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।[৪২] ১৬৭৯ খ্রিষ্টাব্দে পঞ্চম দলাই লামা গুজ তিব্বতের অধিকারে নিয়ে আসেন। এই যুদ্ধের পর রাজধানী প্রচন্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়।[৪৩] সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় বহু মূর্তি ও চিত্রকলাকে ধ্বংস করে দেওয়া হলেও[৪৩] বেশ কিছু অসাধারণ শিল্পকলা কোন ভাবে এই ধ্বংসলীলা থেকে বেঁচে গেছে।[৪৩]

ইউয়ান সাম্রাজ্যের শাসন সম্পাদনা

 
ইউয়ান রাজবংশের অধীনে তিব্বত, ১২৯৪ খিষ্টাব্দ

১২৪০ খ্রিষ্টাব্দে মঙ্গোল সম্রাট ওগেদেই খানের পুত্র খোদান খান প্রথম তিব্বত আক্রমণ করেন। পরবর্তীকালে ১২৫১ খ্রিষ্টাব্দে মোংকে খান দ্বিতীয়বার তিব্বত আক্রমণ করে সমগ্র তিব্বত মোঙ্গল শাসনাধীনে নিয়ে আসেন। কুবলাই খান সমগ্র অঞ্চলটিকে নিজের ইউয়ান রাজবংশের অধীনে নিয়ে আসলে[৪৪] সা-স্ক্যা ধর্মসম্প্রদায়ের সপ্তম সা-স্ক্যা-খ্রি-'দ্জিনকুবলাই খানের আধ্যাত্মিক শিক্ষক 'গ্রো-ম্গোন-ছোস-র্গ্যাল-'ফাগ্স-পা তিব্বতের শাসক হিসেবে কুবলাই খানের নাম ঘোষণা করেন। মঙ্গোল সাম্রাজ্যের আধ্যাত্মিক প্রধান এবং তিব্বতের কার্যনির্বাহী প্রশাসক হিসেবে সা-স্ক্যা লামাদের অধীনে থেকে তিব্বত এই সময় যথেষ্ট ধর্মীয় ও রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন উপভোগ করে। যদিও তিব্বতের প্রশাসনিক ও সামরিক শাসন শুধুমাত্র তিব্বতের জন্যই দায়িত্বপ্রাপ্ত জুয়ানঝেং ইউয়ান (চীনা: 宣政院) নামক এক উচ্চ পর্যায়ের ক্ষমতাসম্পন্ন মঙ্গোল মন্ত্রিত্বের অধীনে ছিল। সা-স্ক্যা লামাদের ক্ষমতাকে সংযত করতে কুবলাই খান সা-স্ক্যা বৌদ্ধবিহারে একজন প্রশাসনিক আধিকারিককে নিযুক্ত করেন।[৪৫]:১০৪ এরফলে তিব্বতে এক দ্ব্যর্থ শাসন প্রচলিত ছিল, যেখানে মূল ক্ষমতা ছিল প্রধানত মঙ্গোলদের হাতেই,[৪৬] দুই পক্ষই একে অপরের ওপর নির্ভরশীল থাকলেও[৪৭] সম্রাটের ইচ্ছেই, এক্ষেত্রে ছিল অন্তিম ও সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত হওয়ায় মঙ্গোলরা সবসময়ই সা-স্ক্যা লামাদের চেয়ে অধিক ক্ষমতাশালী ছিল।[৪৬] কিন্তু মঙ্গোল সম্রাটদের ওপর প্রভাবের জন্য সা-স্ক্যা লামারা মঙ্গোলদের রাজসভায় যথেষ্ট প্রতিপত্তি ও ক্ষমতার অধিকারী ছিল। 'গ্রো-ম্গোন-ছোস-র্গ্যাল-'ফাগ্স-পা ইউয়ান সাম্রাজ্যে বসবাসকারী সমস্ত বৌদ্ধ ভিক্ষুর প্রধান হিসেবে বিবেচিত হতেন।[৪৮] ১২৬০ খ্রিষ্টাব্দে কুবলাই খান মোঙ্গল সম্রাট হিসেবে সিংহাসনে বসলে তিনি 'গ্রো-ম্গোন-ছোস-র্গ্যাল-'ফাগ্স-পাকে গুওশি (চীনা: 國師) বা জাতীয় ধর্মশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করলেন। তিব্বতের ইতিহাসে 'গ্রো-ম্গোন-ছোস-র্গ্যাল-'ফাগ্স-পা ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি তিব্বতী ও মঙ্গোল বৌদ্ধ সমাজে রাষ্ট্র ও ধর্মের পারস্পরিক সম্পর্কের এক রাজনৈতিক সূচনা করেন।[৪৯]:১১৫[৫০] কুবলাই খানের সমর্থনে তিনি নিজেকে ও তার সা-স্ক্যা ধর্মসম্প্রদায়কে তিব্বতমঙ্গোল সাম্রাজ্যের সর্বাপেক্ষা ক্ষমতাশালী ধর্মীয় নেতৃত্বে পরিণত করেন। ১২৬৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি তিব্বত ফিরে গিয়ে শাক্য-ব্জাং-পো নামক সা-স্ক্যা ধর্মসম্প্রদায়ের এক অনুগতকে প্রশাসনিক কাজে নিযুক্ত করে তিব্বতে সা-স্ক্যা ধর্মসম্প্রদায়ের শাসন নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করেন। 'গ্রো-ম্গোন-ছোস-র্গ্যাল-'ফাগ্স-পা একজন সম্রাট ও ধর্মীয় নেতার মধ্যেকার সম্পর্কের ধরন নিয়ে মৌলিক রচনা করে মঙ্গোলদের কর্তৃত্বকে সুদৃঢ় করতে সহায়তা করেন।[৪৯] তার পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের সঙ্গে মঙ্গোল রাজকুমারীদের বিবাহের মাধ্যমে সম্রাট ও 'গ্রো-ম্গোন-ছোস-র্গ্যাল-'ফাগ্স-পার মধ্যে সম্পর্ক আরো মজবুত হয়। ১২৭০ খ্রিষ্টাব্দে তাকে সমগ্র সাম্রাজ্যের ধর্মশিক্ষক বা দিশি (চীনা: 帝師) হিসেবে নিযুক্ত করা কুবলাই খানের নির্দেশে সা-স্ক্যা ধর্মসম্প্রদায়ের প্রধানেরা গুওশি এবং দিশি নামক পদাধিধাকারী হয়ে চীনে বসবাস করে সাম্রাজ্যের সমস্ত বৌদ্ধদের ওপর কর্তৃত্ব করতে পারতেন।[৫১] তাদের প্রতিনিধি হিসেবে দ্পোন-ছেন ওয়াইলি: dpon chen) নামক একজন তিব্বতী আধিকারিক তিব্বতে প্রশাসনিক কাজকর্ম দেখাশোনা করতেন।[৫২]:১৪৪ এই ধরনের ব্যবস্থার ফলে সা-স্ক্যা ধর্মসম্প্রদায়ের প্রধানদের সঙ্গে দ্পোন-ছেন আধিকারকদের মাঝেমধ্যেই বিরোধের সৃষ্টি হত।[৫২]:২২১ কুবলাই খান মঙ্গোল সাম্রাজ্যের বহু ভাষা সমৃদ্ধ লিখন পদ্ধতিগুলিকে একত্র করে একটিমাত্র লিপি উদ্ভাবনের জন্য 'গ্রো-ম্গোন-ছোস-র্গ্যাল-'ফাগ্স-পাকে নির্দেশ দেন। ১২৬৮ খ্রিষ্টাব্দে 'গ্রো-ম্গোন-ছোস-র্গ্যাল-'ফাগ্স-পা তিব্বতী লিপি থেকে 'ফাগ্স-পা লিপি নামে এক নতুন ধরনের লিপির উদ্ভব করেন। কুবলাই এই লিপিকে সাম্রাজ্যের সরকারি লিপি বলে ঘোষণা করেন। এমনকি তিনি সাম্রাজ্যে বহুল প্রচলিত চীনাউইঘুর লিপির পরিবর্তে এই নতুন লিপি প্রচলনের ঘোষণা করলেও[৪৯] 'ফাগ্স-পা লিপি সাম্রাজ্যে খুব একটা প্রচলিত হয়নি।[৫২]:১৫৮ ১৩৬৮ খ্রিষ্টাব্দে ইউয়ান রাজবংশের পতনের সাথে সাথে এই লিপির ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়।[৪৯]:১১৪-১১৭[৫০] তিব্বতে সা-স্ক্যা ধর্মসম্প্রদায়ের শাসন ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের 'ব্রি-কুং-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মীয় গোষ্ঠীর ভিক্ষুরা মেনে নিতে পারেননি। চাগতাই খানাতের শাসনকর্তা দুওয়ার সহযোগিতায় ১২৮৫ খ্রিষ্টাব্দে তারা বিদ্রোহ ঘোষণা করলে কুবলাই খানের পৌত্র তেমুর বুকা মঙ্গোল সৈন্য নিয়ে 'ব্রি-কুং বৌদ্ধবিহার ধ্বংস করে ও প্রায় দশ হাজার মানুষকে হত্যা করে এই বিদ্রোহ দমন করেন।[৪৫] ১৩৪৬ থেকে ১৩৫৪ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে চীনে বিভিন্ন অংশে বিদ্রোহের ফলে ইউয়ান রাজবংশ দুর্বল হয়ে পড়ে। এর সুযোগ নিয়ে সা-স্ক্যা ধর্মসম্প্রদায়কে সরিয়ে দিয়ে ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের তা'ই-সি-তু-ব্যাং-ছুব-র্গ্যাল-ম্ত্শান ফাগ-মো-গ্রু-পা রাজবংশ স্থাপন করেন। ১৩৫৮ খ্রিষ্টাব্দে সমগ্র তিব্বত থেকে সা-স্ক্যা ধর্মসম্প্রদায়ের প্রভাব বিলুপ্ত হয়ে এই নতুন রাজবংশের অধীনে চলে আসে।[৫২]:১৯৪ কিন্তু ১৩৬৮ খ্রিষ্টাব্দে ইউয়ান সাম্রাজ্যের পতন না হওয়া পর্যন্ত ফাগ-মো-গ্রু-পা রাজবংশ তাদের সঙ্গে বিরোধিতার পথে যাননি।[৫৩]:৪২

মধ্য তিব্বতের তিন রাজবংশ সম্পাদনা

ফাগ-মো-গ্রু-পা রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা তা'ই-সি-তু-ব্যাং-ছুব-র্গ্যাল-ম্ত্শানের উদ্দেশ্য ছিল ট্যাং রাজবংশের আমলে তিব্বত সাম্রাজ্যের অতীত গৌরব ফিরিয়ে এনে তিব্বতীদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী মনোভাব সৃষ্টি করা এবং তিব্বতে মঙ্গোল শাসনের অবসান ঘটানো।[৫৪]:২৬২ তিনি তিব্বত সাম্রাজ্যের মহান সম্রাট স্রোং-ব্ত্সন-স্গাম-পোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও বিচারব্যবস্থার নীতি গ্রহণ করেন।[৫৫]:৫০৪ তিনি ইউয়ান সাম্রাজ্যের দ্বারা প্রচলিত তিব্বতের তেরোটি প্রশাসনিক বিভাগকে বাতিল করে মধ্য তিব্বতকে বিভিন্ন র্দ্জোং (ওয়াইলি: rdzong) বা জেলায় বিভক্ত করেন।[৫৫]:৫০৪র্দ্জোং-দ্পোন (ওয়াইলি: rdzong dpon) জেলার প্রধানদের প্রাচীন তিব্বত সাম্রাজ্যের সময়ের রীতিনীতি ও আচার অনুষ্ঠান পালন করতে হত এবং প্রাচীন পোশাক রীতি মেনে চলতে হত।[৫৫]:৫০৪ তা'ই-সি-তু-ব্যাং-ছুব-র্গ্যাল-ম্ত্শান দ্বারা প্রচলিত আইন ব্যবস্থা বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত তিব্বতে প্রচলিত ছিল।[৫৬]: ১৩৬৪ খ্রিষ্টাব্দে তা'ই-সি-তু-ব্যাং-ছুব-র্গ্যাল-ম্ত্শানের মৃত্যু হলে তার ভ্রাতুষ্পুত্র 'জাম-দ্ব্যাংস-শা-ক্যা-র্গ্যাল-ম্ত্শান মধ্য তিব্বতের পরবর্তী রাজা হন। তিনি যখন সিংহাসনে বসেন তখন মঙ্গোল ইউয়ান সাম্রাজ্য এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে, যে তিব্বতের রাজনীতিতে তাদের প্রভাব ছিল না বললেই চলে। ১৩৬৫ খ্রিষ্টাব্দে ইউয়ান সম্রাট তোঘোন তেমুর তাকে গুশি উপাধি এবং নেদোং অঞ্চলের শাসনভার দান করেন। ১৩৬৮ খ্রিষ্টাব্দে মিং রাজবংশ চীন অধিকার করলে হেঝৌ অঞ্চলের সেনাপতির উপদেশে মিং সম্রাট তাকে পুনরায় উপাধি প্রদান করে তার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখেন।[n ৩][৫৮] এরফলে 'জাম-দ্ব্যাংস-শা-ক্যা-র্গ্যাল-ম্ত্শান চীনের হস্তক্ষেপ ব্যতীত নিজের পৃথক শাসনব্যবস্থার অস্তিত্ব বজায় রাখতে সক্ষম হন।[৫৯]:৪৮,৪৯ এই রাজ্যের অপর একজন উল্লেখযোগ্য শাসক গোং-মা-গ্রাগ্স-পা-র্গ্যাল-ম্ত্শানের রাজত্বকালে তিব্বতে সমৃদ্ধি আসে।[৬০] ঐ বংশের পূর্ববর্তী রাজারা যেরকম স্দে-স্রিদ উপাধি ধারণ করতেন, তিনি গোং-মা উপাধি ধারণ করেন।[৬১]:৮৫,৮৬ ১৩৮৮ খ্রিষ্টাব্দে হোংঊ তাকে গুশি উপাধি দান করেন এবং দুই রাজবংশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। গোং-মা-গ্রাগ্স-পা-র্গ্যাল-ম্ত্শানের রাজত্বকালে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক আদান প্রদানও বৃদ্ধি পায়। বিখ্যাত তিব্বতী বৌদ্ধ পণ্ডিত ত্সোং-খা-পা-ব্লো-ব্জাং-গ্রাগ্স-পার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তার অনুদানেই ত্সোং-খা-পা-ব্লো-ব্জাং-গ্রাগ্স-পা ও তার অনুগামীরা দ্গা'-ল্দান বৌদ্ধবিহার নির্মাণ করতে সক্ষম হন।[৬২] ১৪০৯ খ্রিষ্টাব্দে রাজা লাসা শহরে ত্সোং-খা-পা-ব্লো-ব্জাং-গ্রাগ্স-পাকে লো-গ্সার বা তিব্বতী নববর্ষের দিনে উদ্‌যাপন করার জন্য স্মোন-লাম-ছেন-মো নামক উৎসবের সূচনা করতে সহায়তা করেন।[৬১]:৮৫,৮৬ গোং-মা-গ্রাগ্স-পা-র্গ্যাল-ম্ত্শানের ভ্রাতা সাংস-র্গ্যাস-র্গ্যাল-ম্ত্শান রিং-স্পুংস-পা নামক গ্ত্সাং অঞ্চলের রিং-স্পুংস এলাকার এক আঞ্চলিক জমিদার পরিবারের দুইজন মহিলাকে বিবাহ করেন এবং তাদের গ্রাগ্স-পা-'ব্যুং-গ্নাস এবং কুন-দ্গা'-লেগ্স-পা নামক দুই পুত্রের জন্ম হয়। গোং-মা-গ্রাগ্স-পা-র্গ্যাল-ম্ত্শানের মৃত্যুর পর যখন মন্ত্রীরা পরবর্তী উত্তরাধিকারী মনোয়নের জন্য ঐকমত্য্যে পৌঁছতে পারছিলেন না, রিং-স্পুংস-পা পরিবারের প্রধান নোর-বু-ব্জাং-পো এই সুযোগে ফাগ-মো-গ্রু-পা রাজবংশের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে গ্দান-সা-থেল বৌদ্ধবিহারের প্রধানকে সিংহাসনের উত্তরাধিকার নির্বাচনের উপদেশ দেন। প্রধান লামা গ্রাগ্স-পা-'ব্যুং-গ্নাসকে নির্বাচন করেন। যদিও সাংস-র্গ্যাস-র্গ্যাল-ম্ত্শানের সিংহাসনের প্রতি নজর ছিল, কিন্তু তিনি প্রধান লামার নির্বাচন মেনে নেন।[৬৩]:১০৪,১০৫দুই বছর পরে ১৪৩৪ খ্রিষ্টাব্দে গ্দান-সা-থেল বৌদ্ধবিহারের প্রধান লামার মৃত্যু ঘটলে সাংস-র্গ্যাস-র্গ্যাল-ম্ত্শান সিংহাসনের দাবী জানাতে শুরু করেন। এরফলে এক বছর ব্যাপী এক গৃহযুদ্ধের সূচনা হয় ও সাংস-র্গ্যাস-র্গ্যাল-ম্ত্শানকে পালিয়ে যেতে হয় এবং নোর-বু-ব্জাং-পো বিজয়ী হিসেবে উঠে আসেন।[৬৩]:১০৪,১০৫ এবং ১৪৩৫ খ্রিষ্টাব্দে সাম-দ্রুব-ত্সে নামক গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল অধিকার করেন। এরফলে রিং-স্পুংস-পা গ্ত্সাং অঞ্চলটি নিজেদের অধিকারে নিয়ে এসে মধ্য তিব্বতের নতুন রাজবংশরূপে উঠে আসে।[৬১]:৮৬,৮৭ রিং-স্পুংস-পা রাজবংশ নতুন শক্তিরূপে উঠে এলেও তারা গ্রাগ্স-পা-'ব্যুং-গ্নাসকে ক্ষমতাচ্যূত করেননি, কিন্তু ফাগ-মো-গ্রু-পা রাজবংশের অধিকার শুধু পূর্ব মধ্য তিব্বতের দ্বুস অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ রয়ে যায়। উভয় রাজবংশের পরবর্তী রাজারা নিজেদের মধ্যে বৈরীতা বজায় রাখেন। রিং-স্পুংস-পা রাজবংশের রাজা দোন-য়োদ-র্দো-র্জের রাজত্বে এই বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। তিনি কার্মা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের সপ্তম র্গ্যাল-বা-কার্মা-পা ছোস-গ্রাগ্স-র্গ্যা-ম্ত্শোর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। ছোস-গ্রাগ্স-র্গ্যা-ম্ত্শোর অনুরোধে লাসা শহরের অদূরে দ্গে-লুগ্স ধর্মসম্প্রদায়ের প্রভাবাধীন এলাকায় বৌদ্ধবিহার নির্মাণের চেষ্টা করলে সেরাদ্রেপুং বৌদ্ধবিহারের দ্গে-লুগ্স ধর্মসম্প্রদায়ের বৌদ্ধরা এই নির্মাণ ভেঙ্গে দেন।[২৮]:২৭৭ এরফলে মধ্য তিব্বতে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক একটি সংকট সৃষ্টি হয়।[৬৪]:২২২-২২৫ ১৪৮০ খ্রিষ্টাব্দে দোন-য়োদ-র্দো-র্জে একটি বিশাল সৈন্যবাহিনীর সাহায্যে দ্বুস অঞ্চল আক্রমণ করেন। তিনি লাসা শহরের নিকটবর্তী ক্যিশোদ অঞ্চল আক্রমণ করে ফাগ-মো-গ্রু-পা রাজবংশের অষ্টম রাজা কুন-দ্গা'-লেগ্স-পার প্রভাবশালী মন্ত্রী কাঝিপা পরিবারের কোনছোক রিনছেনকে বিতাড়িত করেন। যদিও তিনি বেশ কিছু অঞ্চলকে রিং-স্পুংস-পা রাজবংশের অধীনে নিয়ে আসেন, তবুও দ্গা'-ল্দান বৌদ্ধবিহার লুঠ করার তার প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করা সম্ভব হয়।[১৬]:৮৭[২৮]:২৭৭[৬৫]:৫০০ এই আক্রমণের পর ফাগ-মো-গ্রু-পা রাজ্যের মন্ত্রীরা পরামর্শ করে তাদের রাজা কুন-দ্গা'-লেগ্স-পাকে নির্বাসনে পাঠিয়ে ঙ্গাগ-গি-দ্বাং-পোকে পরবর্তী রাজা নির্বাচিত করেন। ঙ্গাগ-গি-দ্বাং-পোর রাজত্বকালে ১৪৮৫ খ্রিষ্টাব্দে দোন-য়োদ-র্দো-র্জে র্গ্যাল-র্ত্সে শহর আক্রমণ করে অধিকার করে নেন।[১৬]:৮৭[৬৪]:২২৬ ১৪৯১ খ্রিষ্টাব্দেঙ্গাগ-গি-দ্বাং-পোর মৃত্যু হলে রিং-স্পুংস-পা রাজবংশের দ্বিতীয় রাজা কুন-তু-ব্জাং-পোর ভ্রাতা গ্ত্সো-স্ক্যেস-র্দো-র্জে ফাগ-মো-গ্রু-পা রাজ্যের উত্তরাধিকারী ঙ্গাগ-দ্বাং-ব্ক্রা-শিস-গ্রাগ্স-পার নাবালকত্বের সুযোগে রাজ্যের অভিভাবক হয়ে যান।[৫৭]:৬৯৩ ১৪৯৮ খ্রিষ্টাব্দে লাসা শহরে বসবাসকারী কার্মা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের এক উচ্চপদস্থ বৌদ্ধকে হত্যা করা হলে দোন-য়োদ-র্দো-র্জে লাসা অবরোধ করেন। এই বছর থেকে প্রায় কুড়ি বছর কার্মা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের বৌদ্ধরা দ্গে-লুগস সম্প্রদায়ের বৌদ্ধদের লো-গ্সার বা তিব্বতী নববর্ষের দিনে উদ্‌যাপন করার জন্য স্মোন-লাম-ছেন-মো নামক উৎসব পালনে বাধা সৃষ্টি করে।[৬৫]:৫০২ ১৪৯৯ খ্রিষ্টাব্দে দোন-য়োদ-র্দো-র্জের অনুমতিক্রমে ঙ্গাগ-দ্বাং-ব্ক্রা-শিস-গ্রাগ্স-পা ফাগ-মো-গ্রু-পা রাজবংশের পরবর্তী রাজা হিসেবে সিংহাসনে বসলে গ্ত্সো-স্ক্যেস-র্দো-র্জে অভিভাবকত্ব থেকে সরে আসেন। ১৫১০ খ্রিষ্টাব্দে গ্ত্সো-স্ক্যেস-র্দো-র্জের মৃত্যু হলে দোন-য়োদ-র্দো-র্জের সঙ্গে ঙ্গাগ-দ্বাং-ব্ক্রা-শিস-গ্রাগ্স-পার মধ্যে একটি সামরিক লড়াই শুরু হলেও দ্রুত তাদের মধ্যে মধ্যস্থতা হয়ে যায়। ১৫১২ খ্রিষ্টাব্দে দোন-য়োদ-র্দো-র্জের মৃত্যুর পর রিং-স্পুংস-পা রাজ্যের সামরিক ও রাজনৈতিক প্রভাব হ্রাস পেতে থাকে। ১৫১৫ খ্রিষ্টাব্দে ফাগ-মো-গ্রু-পা রাজবংশের সাথে পুনরায় বিরোধ শুরু হয়। রিং-স্পুংস-পা রাজবংশের অধীনে থাকা গ্যাখার্ত্সে তাদের আনুগত্য পাল্টে ফাগ-মো-গ্রু-পা রাজবংশের অধীনে চলে যায়।[৬৪]:২৩১ লাসা থেকে রিং-স্পুংস-পার সৈন্যদল বিতাড়িত হয় এবং কুড়ি বছর পরে দ্গে-লুগস সম্প্রদায়ের বৌদ্ধদের স্মোন-লাম-ছেন-মো নামক উৎসব পালনের সুযোগ পান।[১৬]:৮৮[৬৬]:৮৫ ঝিগ-শাগ-পা-ত্শে-ব্র্তান-র্দো-র্জে নামক রিং-স্পুংস-পা রাজবংশের এক আত্মীয় ও সাম-গ্রুব-ত্সে দুর্গের অধিপতি ১৫৫৭ খ্রিষ্টাব্দে রিং-স্পুংস-পা রাজবংশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। ১৫৬৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পানাম ল্হুনদ্রুপ ক্যুংত্সে অবরোধ করলে কুন-ম্খ্যেন-পাদ-মা-দ্কার-পো নামক 'ব্রুগ-পা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের চতুর্থ র্গ্যাল-দ্বাং-'ব্রুগ-পা উভয় পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করেন। কিন্তু ১৫৬৬ খ্রিষ্টাব্দে ন্যাংতোদ অঞ্চলে এক নতুন যুদ্ধের সূচনা হলে কুন-ম্খ্যেন-পাদ-মা-দ্কার-পোর মধ্যস্থতায় ঙ্গাগ-দ্বাং-'জিগ্স-মেদ-গ্রাগ্স-পা সমগ্র পানাম অঞ্চলটি ঝিগ-শাগ-পা-ত্শে-ব্র্তান-র্দো-র্জেকে সমর্পণ করে দিতে সম্মত হন। এরফলে রিং-স্পুংস-পা রাজবংশের প্রভাব মধ্য তিব্বত থেকে অন্তর্হিত হয় এবং ঝিগ-শাগ-পা-ত্শে-ব্র্তান-র্দো-র্জে গ্ত্সাং-পা রাজবংশ স্থাপন করে মধ্য তিব্বতের নতুন শক্তি হিসেবে উঠে আসেন।[২৮]:২৮০

দ্গে-লুগ্স ধর্মসম্প্রদায়ের রাজনৈতিক উত্থান সম্পাদনা

গ্ত্সাং-পা রাজবংশের চতুর্থ রাজা ব্স্তান-স্রুং-দ্বাং-পো কার্মা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের পৃষ্ঠপোষক ও দ্গে-লুগ্স বৌদ্ধধর্মসম্প্রদায়ের বিরোধী ছিলেন।[১৬]:৯০ ১৬০২ খ্রিষ্টাব্দে মঙ্গোলিয়া থেকে চতুর্থ দলাই লামা তিব্বত পৌঁছনোর কিছু সময় পর থেকে দ্গে-লুগ্স বৌদ্ধধর্মসম্প্রদায়ের সঙ্গে কার্মা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের বিরোধ শুরু হয়। কার্মা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের রক্ষাকর্তা হিসেবে ব্স্তান-স্রুং-দ্বাং-পো ১৬০৪ খ্রিষ্টাব্দে দ্বুস অঞ্চল আক্রমণ করে ফান্যুল অবরোধ করেন। ১৬০৫ খ্রিষ্টাব্দে তার সৈন্যদল ক্যিশোদ অধিকার করে। এই লড়াইয়ে প্রায় ৫০০০ বৌদ্ধ ভিক্ষু ও সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়।[৬৭]:২৬ এর ফলে পশ্চিম তিব্বতের তোহ, পূর্ব মধ্য তিব্বতের কিছু অংশ এবং পশ্চিম মধ্য তিব্বতের সমগ্র অংশ গ্ত্সাং-পা রাজবংশের অধীনে আসে।[১৬]:৯০,৯৮ ১৬১২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পশ্চিম তিব্বতের ঙ্গারি অঞ্চলে আভিযান চালান, যারফলে গুংথাং রাজ্য, ছাং, লাতোদ লো প্রভৃতি অঞ্চল তার অধীনস্থ হয়।[৬৮] পরবর্তী রাজা ফুন-ত্শোগ্স-র্নাম-র্গ্যাল পূর্বসূরীদের মতোই কার্মা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এবং সেই হিসেবে চতুর্থ দলাই লামা য়োন-তান-র্গ্যা-ম্ত্শোচতুর্থ পাঞ্চেন লামা ব্লো-ব্জাং-ছোস-ক্যি-র্গ্যাল-ম্ত্শানের নেতৃত্বাধীন দ্গে-লুগ্স বৌদ্ধধর্মসম্প্রদায়ের বিরোধী ছিলেন। ১৬১৪ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে তিনি গ্ত্সাং অঞ্চলের সমস্ত ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে এক সভায় আহ্বান করে কার্মা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের দশম র্গ্যাল-বা-কার্মা-পা ছোস-দ্ব্যিংস-র্দো-র্জেকে রাজ্যের ধর্মীয় শাসক হিসেবে মেনে নিতে তাদের বাধ্য করেন।[৬৭]:৩০ চতুর্থ দলাই লামা মৃত্যুবরণ করার পরে ১৬১৮ খ্রিষ্টাব্দে ছোখুর মঙ্গোলদের একটি দল দ্বুস অঞ্চলে তীর্থযাত্রায় এসে গ্ত্সাং-পা রাজবংশের অধীনস্থ এলাকায় লুঠপাট চালালে ফুন-ত্শোগ্স-র্নাম-র্গ্যাল দ্বুস অঞ্চলে আক্রমণ করে দ্গে-লুগ্স বৌদ্ধধর্মসম্প্রদায়ের বহু বৌদ্ধবিহারকে কার্মা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের বৌদ্ধবিহারে পরিণত করেন।[২৮]:৩২৭,৩২৮ শেষ জীবনে চতুর্থ পাঞ্চেন লামা ব্লো-ব্জাং-ছোস-ক্যি-র্গ্যাল-ম্ত্শানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হলে ফুন-ত্শোগ্স-র্নাম-র্গ্যাল দলাই লামার পরবর্তী অবতার খোঁজার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন এবং ১৬১৯ খ্রিষ্টাব্দে পঞ্চম দলাই লামা হিসেবে ঙ্গাগ-দ্বাং-ব্লো-ব্জাং-র্গ্যা-ম্ত্শোকে চিহ্নিত করা হয়।[৬৭]:৩৩ ১৬২০ খ্রিষ্টাব্দে ফুন-ত্শোগ্স-র্নাম-র্গ্যালের মৃত্যু হলে তার পুত্র ব্স্তান-স্ক্যোং-দ্বাং-পো মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহণ করেন।[১৬]:৯৯-১০২[২৮]:২৮৪ তার কম বয়সের কারণে রাজ্যের দুই মন্ত্রী দ্রোন্যের বোঙ্গোং এবং গাংজুকপা রাজ্যভার হাতে নেন। কিংহাই মঙ্গোলদের সঙ্গে দ্গে-লুগ্স ধর্মসম্প্রদায়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরী হওয়ার কারণে এই দুই মন্ত্রী সদ্য চিহ্নিত পঞ্চম দলাই লামার নিকট প্রতিনিধিদল পাঠাতে ইচ্ছুক ছিলেন না। ১৬২১ খ্রিষ্টাব্দে ল্হাত্সুন এবং হুংতাইজির নেতৃত্বে মঙ্গোলরা দ্গে-লুগ্স ধর্মসম্প্রদায়ের সমর্থনে দ্বুস অঞ্চল আক্রমণ করলেব্স্তান-স্ক্যোং-দ্বাং-পো গ্যাথাংগাং নামক স্থানে তাদের সম্মুখীন হন কিন্তু তিনি ও তার সৈন্যদল মুঙ্গোলদের কাছে পরাজিত ও বন্দী হন।[৫৭]:৬৯৭ এই সময় পাঞ্চেন লামা সহ দ্গে-লুগ্স ধর্মসম্প্রদায়ের প্রধান লামারা তাদের মুক্তির জন্য মঙ্গোলদের অনুরোধ করলে তারা মুক্তি পান। কিন্তু এর পরিবর্তে দ্গে-লুগ্স ধর্মসম্প্রদায় তাদের পূর্বেকার সমস্ত বৌদ্ধবিহার পুনরায় অধিকার করে এবং দ্বুস অঞ্চলে গ্ত্সাং-পা রাজবংশের সমস্ত সামরিক ছাউনিগুলিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। ১৬৩১ খ্রিষ্টাব্দে ব্স্তান-স্ক্যোং-দ্বাং-পো দ্গে-লুগ্স ধর্মসম্প্রদায়কে পিছু হঠিয়ে দিতে সক্ষম হন, যার ফলশ্রুতিতে পঞ্চম দলাই লামা শক্তিহীন ফাগ-মো-গ্রু-পা রাজবংশের অধীনস্থ নেদং অঞ্চলে আশ্রয় নিত বাধ্য হন।[৫৭]:৫৯ এই সময় ব্স্তান-স্ক্যোং-দ্বাং-পো লিগদান খান নামক এক বরিষ্ঠ মঙ্গোল নেতার সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করেন। ১৬৩৩ খ্রিষ্টাব্দে লিগদান খান কোকোনর এলাকা নিজের অধিকারে নিয়ে আসে কিন্তু পরের বছর গুটিবসন্ত রোগে তার মৃত্যু হলে তার রাজ্য ভেঙ্গে পড়ে।[৬৭]:৩৪ ১৬৩৫ খ্রিষ্টাব্দে চোগথু মোঙ্গোলদের নেতা আর্সলান তিব্বত আক্রমণ করলে ব্স্তান-স্ক্যোং-দ্বাং-পো তার সঙ্গেও সন্ধি স্থাপন করেন। এই জোট তৈরী হওয়ার পর আর্সলান দ্গে-লুগ্স ধর্মসম্প্রদায়ের বৌদ্ধবিহার ধ্বংসের উদ্দেশ্যে লাসার দিকে যাত্রা করেন, কিন্তু অকস্মাৎ তিনি দলাই লামার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে ব্স্তান-স্ক্যোং-দ্বাং-পোর বাহিনীকে আক্রমণ করেন এবং গ্যাংত্সে ও রাজধানী শিগাত্সে অধিকার করে নেন। ব্স্তান-স্ক্যোং-দ্বাং-পো এরপর আর্সলানের পিতার নিকট দূত পাঠিয়ে আর্সলানের বিশ্বাসঘাতকতার খবর পাঠালে তার পিতার দূত আর্সলান ও তার সমর্থকদের হত্যা করেন।[১৬]:১০৩,১০৪[৫৭]:৬০,৬১ আর্সলানের মৃত্যুর পর ১৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দে দলাই লামাপন্থী খোসুত মঙ্গোল নেতা গুশ্রী খান দ্জুঙ্গার নেতা এর্দেনি বাতুরের সঙ্গে কোকোনর অঞ্চলে চোগথু মোঙ্গোলদের পরাজিত করেন। এই সমুয় ব্স্তান-স্ক্যোং-দ্বাং-পো খাম্স অঞ্চলের বোন ধর্মাবলম্বী ও দ্গে-লুগ্স ধর্মসম্প্রদায় বিরোধী রাজা দোন-য়োদ-র্দো-র্জের সাথে সন্ধি স্থাপন করলে ১৬৪০ খ্রিষ্টাব্দে গুশ্রী খান আমদো অঞ্চলের পারিক জনজাতির সাথে মিলিতভাবে খাম্স অঞ্চল আক্রমণ করে দোন-য়োদ-র্দো-র্জেকে হত্যা করেন। এরফলে খাম্স অঞ্চল দ্গে-লুগ্স ধর্মসম্প্রদায়ের প্রভাবাধীন হয়ে পড়ে।[১৬]:১০৪-১০৭[৫৭]:৬১-৬৩ এরপর গুশ্রী খান ব্স্তান-স্ক্যোং-দ্বাং-পোর বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেন। পঞ্চম দলাই লামা ঙ্গাগ-দ্বাং-ব্লো-ব্জাং-র্গ্যা-ম্ত্শো এই ব্যাপারে কোন ধরনের রক্তপাতের পক্ষপাতী না হলেও তার অন্যতম প্রধান সহায়ক ব্সোদ-নাম্স-ছোস-'ফেল এই যুদ্ধের ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেন। গুশ্রী খান ও তার সেনাবাহিনী খুব সহজে গ্ত্সাং-পা রাজ্যের তেরোটি জেলা অধিকার করে নেন এবং রাজধানী শিগাত্সে অবরোধ করেন কিন্তু ব্স্তান-স্ক্যোং-দ্বাং-পোর তীরন্দাজেরা তাদের মাসের পর মাস ঠেকিয়ে রাখেন। এই সময় ব্সোদ-নাম্স-ছোস-'ফেল দ্বুস অঞ্চলে গ্ত্সাং-পা রাজবংশের প্রভাধীন এলাকাগুলিকে বলপূর্বক নিজের অধিকারে আনেন। এরপর তিনি গুশ্রী খানের সমর্থনে বহু সংখ্যক সৈন্য নিয়ে শিগাত্সে অবরোধে সামিল হন।[১৬]:১১০ ১৬৪২ খ্রিষ্টাব্দে শিগাত্সের পতন হয় এবং ব্স্তান-স্ক্যোং-দ্বাং-পো তার পরিবারসহ লাসা শহরের নিকট নেউ দুর্গে বন্দী হন। কয়েকদিন পরে গুশ্রী খান ব্স্তান-স্ক্যোং-দ্বাং-পো এবং তার দুই মন্ত্রী দ্রোন্যের বোঙ্গোং ঙ্গো গাংজুকপাকে কো-থুমগ্যাব-পা পদ্ধতিতে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন। ব্স্তান-স্ক্যোং-দ্বাং-পোকে একটি বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে নেউ দুর্গের নিকটস্থ নদী ডুবিয়ে হত্যা করা হয়। এরফলে সমগ্র মধ্য তিব্বত অঞ্চল দ্গে-লুগ্স ধর্মসম্প্রদায়ের প্রভাবাধীন হয়ে পড়ে।[১৬]:১১১,১১২[৬৯]

কোশোত মঙ্গোল শাসন সম্পাদনা

১৬৮২ খ্রিষ্টাব্দে পঞ্চম দলাই লামা ঙ্গাগ-দ্বাং-ব্লো-ব্জাং-র্গ্যা-ম্ত্শো মৃত্যুবরণ করেন, কিন্তু তার প্রধান মন্ত্রী সাংস-র্গ্যাস-র্গ্যা-ম্ত্শো (ওয়াইলি: sangs rgyas rgya mtsho) এই ঘটনার কথা প্রায় পনেরো বছর ধরে সকলের নিকট লুকিয়ে রাখেন। কারণ এই সময় তিনি পোতালা প্রাসাদের নির্মাণ সম্পূর্ণ করে নিতে এবং তিব্বতের শাসনব্যবস্থা সুদৃঢ় করে নিতে চেয়েছিলেন।[৪৯]:১৭৫তিনি এই সময় পঞ্চম দলাই লামার নতুন পুনর্জন্ম খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে যান। ১৬৮৮ খ্রিষ্টাব্দে পরবর্তী দলাই লামা হিসেবে ত্শাংস-দ্ব্যাংস-র্গ্যা-ম্ত্শোকে চিহ্নিত করা হলেও লাসা শহর থেকে দূরে ম্ত্শো-না (ওয়াইলি: mtsho na) নামক স্থানে সপরিবারে ত্শাংস-দ্ব্যাংস-র্গ্যা-ম্ত্শোকে ঘরবন্দী করে রাখা হয়। সাংস-র্গ্যাস-র্গ্যা-ম্ত্শোর পক্ষে পঞ্চম দলাই লামার মৃত্যুর খবর গোপণ রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ায় ১৬৯৭ খ্রিষ্টাব্দে ত্শাংস-দ্ব্যাংস-র্গ্যা-ম্ত্শোকে ষষ্ঠ দলাই লামা রূপে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।[n ৪] ১৭০৫ খ্রিষ্টাব্দে কোশোত মঙ্গোল নেতা ল্হাজাং খান তিব্বতের রাজপ্রতিনিধি সাংস-র্গ্যাস-র্গ্যা-ম্ত্শোকে হত্যা করে লাসা শহরকে নিজের অধিকারে নিয়ে আসেন। ১৭০৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৮শে জুন ল্হাজাং খান তার নিজের পুত্র মোনপা পেকার দ্জিনপাকে ষষ্ঠ দলাই লামা রূপে তুলে ধরেন। পঞ্চম পাঞ্চেন লামা মোনপা পেকার দ্জিনপাকে ষষ্ঠ দলাই লামা রূপে মেনে নেন ও তার নতুন নাম রাখেন ঙ্গাগ-দ্বাং-য়ে-শেস-র্গ্যা-ম্ত্শোদ্গে-লুগ্স সম্প্রদায়ের অধিকাংশ ভিক্ষু এই বিতর্কে মঙ্গোল বংশীয় এই নতুন দলাই লামাকে স্বীকৃতি দান করেননি।[৭১] এই দিন ল্হাজাং খান ত্শাংস-দ্ব্যাংস-র্গ্যা-ম্ত্শোকে গ্রেপ্তার করেন।[৭২] গ্রেপ্তার বরণের পর ত্শাংস-দ্ব্যাংস-র্গ্যা-ম্ত্শোকে চীনের বেইজিং শহরে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তিব্বতীদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও তাকে সৈন্যদের তত্ত্বাবধানে চীন পাঠানো হয়। এই দল আমদো অঞ্চলের কোকোনরে শিবির করে বলে জানা যায়। এরপরের ঘটনা সম্বন্ধে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। কোন কোন মতে ১৭০৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই নভেম্বর জ্বরাক্রান্ত হয়ে কোকোনর অঞ্চলে তার মৃত্যু ঘটে।[৭৩] ১৭১৪ খ্রিষ্টাব্দে ল্হাজাং খানের রোষ থেকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে অত্যন্ত গোপণে সপ্তম দলাই লামা হিসেবে ব্স্কাল-ব্জাং-র্গ্যা-ম্ত্শোকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ১৭১৬ খ্রিষ্টাব্দে কাংজি সম্রাট একটি চীনা-তিব্বতী-মঙ্গোল অশ্বারোহী বাহিনীর তত্ত্বাবধানে সপ্তম দলাই লামাকে স্কু-'বুম বৌদ্ধবিহার নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজপ্রতিনিধি পাঠান এবং এই বিহারেই তাকে সর্বসমক্ষে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়[৭৪]:২৭৬-২৮২ ১৭১৭ খ্রিষ্টাব্দে দ্জুঙ্গার মোঙ্গল সেনাবাহিনী মধ্য তিব্বত আক্রমণ করে ল্হাজাং খানকে হত্যা করে এবং তার পুত্র ঙ্গাগ-দ্বাং-য়ে-শেস-র্গ্যা-ম্ত্শোকে দলাই লামার পদ থেকে সরিয়ে দেয়। সালুঈন নদীর যুদ্ধে চিং সাম্রাজ্যের একটি সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করে।[৭৪]:২৭৬-২৮২[৭৫]:৪৮ ১৭২০ খ্রিষ্টাব্দে কাংজি সম্রাট দ্বারা প্রেরিত চীনা-তিব্বতী সেনাবাহিনী একটি বড় সামরিক অভিযানে দ্জুঙ্গার মোঙ্গলদের তিব্বত থেকে হঠিয়ে দিতে সক্ষম হয়।[৭৪]:২৯০ চিং রাজপুত্র ইয়িন্তি (胤禵) এবং তিব্বতী বৌদ্ধধর্মের প্রতিনিধিদের নেতৃত্বে এই বাহিনী ১৭২১ খ্রিষ্টাব্দে ব্স্কাল-ব্জাং-র্গ্যা-ম্ত্শোকে স্কু-'বুম বৌদ্ধবিহার থেকে লাসা শহরে নিয়ে আসেন।

গৃহযুদ্ধ সম্পাদনা

 
2010 তিব্বতে, পোতালা প্রাসাদ, লাল প্রাসাদ

তিব্বত শাসনের উদ্দেশ্যে চিং সম্রাট সাম্রাজ্যের প্রতিনিধি হিসেবে একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিক নিয়োগ করেন। তিব্বত শাসনের উদ্দেশ্যে খাং-ছেন-নাস-ব্সোদ-নাম্স-র্গ্যাল-পো (ওয়াইলি: khang chen nas bsod nams rgyal po), ঙ্গা-ফোদ-র্দো-র্জে-র্গ্যাল-পো (ওয়াইলি: nga phod rdo rje rgyal po), লুম-পা-বা-ব্ক্রা-শিস-র্গ্যাল-পো (ওয়াইলি: lum pa ba bkra shis rgyal po), স্ব্যার-রা-বা-ব্লো-গ্রোস-র্গ্যাল-পো (ওয়াইলি: sbyar ra ba blo gros rgyal po,) এবং ফো-ল্হা-নাস-ব্সোদ-নাম্স-স্তোব্স-র্গ্যাস এই পাঁচজন তিব্বতী অভিজাতের ওপর সমস্ত ক্ষমতা অর্পণ করা হয়। সপ্তম দলাই লামার পিতা ব্সোদ-নাম্স-দার-র্গ্যাস (ওয়াইলি: bsod nams dar rgyas) এই ক্ষমতার কেন্দ্রে সামিল হয়ে পড়েন। ১৭২৭ খ্রিষ্টাব্দে ঙ্গা-ফোদ-র্দো-র্জে-র্গ্যাল-পো, লুম-পা-বা-ব্ক্রা-শিস-র্গ্যাল-পো, স্ব্যার-রা-বা-ব্লো-গ্রোস-র্গ্যাল-পো এই তিন অভিজাত ব্সোদ-নাম্স-দার-র্গ্যাসের সাথে মিলিত ভাবে ষড়যন্ত্র করে খাং-ছেন-নাস-ব্সোদ-নাম্স-র্গ্যাল-পোকে সপরিবারে হত্যা করেন।[৭৬] এই সময় ফো-ল্হা-নাস-ব্সোদ-নাম্স-স্তোব্স-র্গ্যাস লাসা শহরে না থাকায় তারা তার বিরুদ্ধে তিনশত সৈন্যের এক সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন, কিন্তু এই অভিযান ব্যর্থ হয়। ফো-ল্হা-নাস-ব্সোদ-নাম্স-স্তোব্স-র্গ্যাস চিং সাম্রাজ্যের সাহায্য চেয়ে পাঠান। ছয় মাস ধরে যুদ্ধের পর ঙ্গা-ফোদ-র্দো-র্জে-র্গ্যাল-পো পরাজিত হন। ফো-ল্হা-নাস-ব্সোদ-নাম্স-স্তোব্স-র্গ্যাস এরপর ৯০০০ সৈন্যের নেতৃত্ব দিয়ে লাসা অধিকার করেন ও পোতালা প্রাসাদ অবরোধ করেন। ১৭২৮ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই জুলাই তিনি তার বিপক্ষদের বন্দী করেন ও ৪ঠা সেপ্টেম্বর চিং সাম্রাজ্যের সেনাবাহিনী লাসা প্রবেশ করলে গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটে।[৭৭] গৃহযুদ্ধের অবসান হলে চিং সম্রাট ফো-ল্হা-নাস-ব্সোদ-নাম্স-স্তোব্স-র্গ্যাসকে মধ্য তিব্বতের শাসনভারের দায়িত্ব প্রদান করেন। তার অধীনে স্রিদ-গ্চোদ-ত্শে-ব্রতান (ওয়াইলি: srid gcod tshe brtan) এবং ত্শে-রিং-দ্বাং-র্গ্যাল (ওয়াইলি: tshe ring dbang rgyal) নামক দুই মন্ত্রী প্রশাসনিক কাজে তাকে সাহায্য করতেন। এছাড়াও চিং সম্রাট সাম্রাজ্যের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন দুইজন উচ্চপদস্থ আধিকারিক বা আম্বান। গৃহযুদ্ধে সপ্তম দলাই লামার পিতা ব্সোদ-নাম্স-দার-র্গ্যাস চিং বিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকার কারণে ক্ষমতা লাভের পর ফো-ল্হা-নাস-ব্সোদ-নাম্স-স্তোব্স-র্গ্যাস সপ্তম দলাই লামাকে লাসা থেকে নির্বাসিত করে খাম্স অঞ্চলের পূর্বপ্রান্তে ম্গার-থার (ওয়াইলি: mgar thar) নামক এক নব্য প্রতিষ্ঠিত বৌদ্ধবিহারে পাঠিয়ে দেন। ১৭৩৫ খ্রিষ্টাব্দে চিং সম্রাট ইয়োংঝেংয়ের সিদ্ধান্তে সপ্তম দলাই লামাকে লাসা প্রত্যাবর্তনের নির্দেশ দেওয়া হয়। সপ্তম দলাই লামা শুধুমাত্র ধর্মীয় কার্যকলাপেই সীমাবদ্ধ থাকবেন, এই শর্তে ফো-ল্হা-নাস-ব্সোদ-নাম্স-স্তোব্স-র্গ্যাস এই নির্দেশ মেনে নেন।[৭৬] ১৭৩৯ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে ফো-ল্হা-নাস-ব্সোদ-নাম্স-স্তোব্স-র্গ্যাস বস্তুতপক্ষে একজন স্বাধীন শাসক হিসেবে রাজত্ব করেন। তার শাসনকাল ছিল শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ ও স্থিতিশীল। তার পনেরো হাজার পদাতিক সৈন্য ও দশ হাজার অশ্বারোহী বাহিনী তিব্বতের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করেছিল। তার শাসনকালে অশ্চিম থেকে পূর্ব তিব্বত পর্যন্ত বিস্তৃত একটি সংগঠিত ডাকব্যবস্থা গড়ে ওঠে।[৭৭]

লাসার দাঙ্গা সম্পাদনা

১৭৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই মার্চ ফো-ল্হা-নাস-ব্সোদ-নাম্স-স্তোব্স-র্গ্যাস মৃত্যুবরণ করলে তিব্বতের শাসনক্ষমতা তার দ্বিতীয় পুত্র 'গ্যুর-মেদ-র্নাম-র্গ্যালের অধীনে আসে। তিনি তিব্বতে চীনা শাসনের অবসানের জন্য বদ্ধপরিকর ছিলেন। তিনি চিং সম্রাটকে অনুরোধ করে লাসা শহরে অবস্থিত চীনা সৈন্যের সংখ্যা পাঁচশো থেকে একশোতে নামিয়ে আনেন। এর বিপরীতে তিব্বতী সৈনিকের সংখ্যা পঁচিশ হাজার পর্যন্ত বাড়িয়ে তোলেন। ১৭৪৮ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে চিং সম্রাটের অনুমতিক্রমে দ্জুঙ্গার মঙ্গোলদের একটি প্রতিনিধিদল তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এই সাক্ষাতের পরে তার সমর্থনে দ্জুঙ্গার মঙ্গোলদের সেনাবাহিনীর লাদাখ হয়ে তিব্বতে আসার সম্ভাবনা তৈরী হয়।[৭৮]:১২৯ ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে 'গ্যুর-মেদ-র্নাম-র্গ্যাল দুই হাজার সৈন্য ও প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র লাসা শহরে নিয়ে চলে আসেন। ১৭৫০ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে তিনি চীনাদের তিব্বতী ডাকব্যবস্থা ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারী করেন। এই ভাবে তিনি ধীরে ধীরে লাসা শহরে অবস্থিত চীনা উচ্চপদস্থ আধিকারিক বা আম্বানদের বিচ্ছিন্ন করে দেন।[৭৭] এই সমস্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ফুসিনলাব্দোন নামক দুই আম্বান তাকে হত্যা করলে লাসায় দাঙ্গার সূত্রপাত ঘটে। উত্তেজিত জনতা আম্বানদের বাসস্থান জ্বালিয়ে দেয়। লাব্দোন উত্তেজিত জনতার সাথে লড়তে গিয়ে মারা যান ও বহু অস্ত্রের আঘাতে আহত ফুসিন আত্মহত্যা করেন। আম্বানদের বাঁচাতে গিয়ে উনপঞ্চাশজন মাঞ্চু সৈনিক ও দুইজন অফিসারের মৃত্যু ঘটে। জনতা এরপর এই সৈন্যদের সম্পত্তি লুঠ করে। এই দাঙ্গায় সাতাত্তর জন চীনা নাগরিক মারা যান ও প্রায় ২০০ জন চীনা নাগরিক পোতালা প্রাসাদে আশ্রয় গ্রহণ করেন।। তিব্বতের প্রশাসনিক উচ্চপদস্থরা এই দাঙ্গাকে সমর্থন না করায় এই দাঙ্গা খুব তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যায় ও শীঘ্রই দাঙ্গাকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়। চিং সম্রাট চিয়ানলোংয়ের (乾隆) একটি প্রতিনিধিদল লাসা পৌছলে চীনা প্রতিনিধিদের হাতে বন্দীদের তুলে দেওয়া হয়। এরপর সামান্য জিজ্ঞাসাবাদের পর বন্দীদের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়।[n ৫] চিয়ানলোং সিদ্ধান্ত নেন যে, তিব্বতের শাসনভার তিব্বতীদের হাতে না রেখে দুইজন আম্বানের দায়িত্বে রাখা হবে। কিন্তু মাঞ্চুদের সরাসরি অধীনে না রেখে তিব্বতীদের দলাই লামার রাজনৈতিক ক্ষমতাধীনে রাখার ব্যাপারে এই সময় সপ্তম দলাই লামার শিষ্য রোল-পা'ই-র্দো-র্জে সম্রাটকে বোঝাতে সক্ষম হন। এরফলে 'গ্যুর-মেদ-র্নাম-র্গ্যালের প্রভাবাধীন গোষ্ঠীর হাত থেকে ক্ষমতা সপ্তম দলাই লামামাঞ্চু আম্বানদের হাতে অর্পিত হয়।[৭৬][n ৬] ১৭৫১ খ্রিষ্টাব্দে ব্কা'-শাগ (ওয়াইলি: bka' shag) বা মন্ত্রী পরিষদ নামক পদের সৃষ্টি করে সপ্তম দলাই লামা ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটান।[৭৯]

ব্রিটিশ অভিযান সম্পাদনা

 
১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে লাসার পথে ফ্রান্সিস ইয়ংহাজব্যান্ডের নেতৃত্বে ব্রিটিশ সৈন্য অফিসার

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে ব্রিটিশ ভারত তিব্বত সম্বন্ধে আগ্রহ প্রকাশ করতে শুরু করে। এই সময় বেশ কয়েকজন ভারতীয় প্রথমে অভিযাত্রী রূপে ও পরে বণিক রূপে তিব্বতে প্রবেশ করে। ১৮৮৬,[৮০] ১৮৯০,[৮১] এবং ১৮৯৩[৮২] খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটেন ও চীনের মধ্যে তিব্বত সংক্রান্ত চুক্তি সম্পাদিত হলেও তিব্বত সরকার এই চুক্তিগুলির বৈধতা অস্বীকার করে ব্রিটিশ প্রতিনিধিদের তিব্বতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারী করে।

বিংশ শতাব্দীর শুরুতে রাশিয়া তিব্বতে ও মধ্য এশিয়ায় প্রভাব বিস্তার করতে চায়, এই আশঙ্কায় ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রান্সিস ইয়ংহাজব্যান্ডের নেতৃত্বে তিব্বতে একটি ব্রিটিশ সামরিক অভিযান সংগঠিত হয়।[৮৩] ব্রিটিশ সৈন্য লাসা পৌছনোর আগেই ত্রয়োদশ দলাই লামা মঙ্গোলিয়া পলায়ন করেন। ৪ঠা সেপ্টেম্বর তিব্বতের রাজপ্রতিনিধি ব্লো-ব্জাং-র্গ্যাল-ম্ত্শান (ওয়াইলি: blo bzang rgyal mtshan) ও জাতীয় পরিষদ ব্রিটিশদের সঙ্গে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন।[৮৩]:২৮৪ এই চুক্তি অনুসারে ব্রিটিশরা ইয়াদং, গ্যানৎসে ও গার্তোক অঞ্চলে বাণিজ্য করার অনুমতি লাভ করে, তিব্বতসিক্কিমের সীমান্ত নির্দিষ্ট হয়, তিব্বত সরকার প্রায় ৭,৫০০,০০০ টাকার সমপরিমাণ অর্থ দিতে বাধ্য থাকে এবং তিব্বতের সঙ্গে অন্যান্য বৈদেশিক শক্তির সম্পর্ক নিষিদ্ধ হয়।[৮৪] ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশদের সঙ্গে চিং রাজবংশের চুক্তির দ্বারা ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে তিব্বতীদের সঙ্গে চুক্তির শর্তপূরণ নিশ্চিত করা হয়। এই চুক্তি অনুসারে চিং রাজসভা থেকে অর্থলাভের বিনিময়ে তিব্বতের প্রশাসনে হস্তক্ষেপ না করা ও তিব্বতের অংশ অধিকার না করার প্রতিশ্রুতি দেয়। অপরদিকে চিং সাম্রাজ্য তিব্বতের অভ্যন্তরীণ প্রশাসনে অন্য বৈদেশিক শক্তিকে হস্তক্ষেপ করার অনুমতি না দেওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়।[৭]:২৮৮[৮৫] ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে রাশিয়া ও ব্রিটেন তিব্বতের ওপর চীনের আধিপত্য স্বীকার করে নেয় এবং চীন সরকারকে মধ্যস্থতা করে তবেই তিব্বতের ব্যাপারে হস্তক্ষেপের ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করে।[৮৬]

কার্যতঃ স্বাধীনতা ঘোষণা সম্পাদনা

 
থুব-ব্স্তান-র্গ্যা-ম্ত্শো, তিব্বতের ১৩তম দালাই লামার ১৯১০ সালে কলকাতায় ছবি তোলা একটি ছবি।

১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে চিং রাজবংশের পতন হলে চীনের নতুন সরকার তিব্বতের দিকে নজর দিতে ব্যর্থ হন।[৮৭] এই সময় তিব্বতীরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে পুনরায় তিব্বতের অধিকার কেড়ে নিতে সক্ষম হন। ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে ত্রয়োদশ দলাই লামা ভারত থেকে যাত্রা করে লাসা শহরে প্রবেশ করে ১২ই ফেব্রুয়ারি চীনের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে তিব্বতকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন।[৮৮] এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে তিব্বতে অবস্থিত সমস্ত চীনা সৈন্যদের তিব্বত ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে ত্রয়োদশ দলাই লামার ঘনিষ্ঠ আগভান দোর্জিয়েভ ও দুইজন তিব্বতী প্রতিনিধি[৮৯] উর্গা শহরে মঙ্গোলিয়া ও তিব্বত সরকারের মধ্যে মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির মাধ্যমে তিব্বতমঙ্গোলিয়া উভয় রাষ্ট্র একে অপরকে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং চীনের শাসনাধীনে না থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে তিব্বত ব্রিটিশ ভারতের সঙ্গে সিমলা চুক্তি স্বাক্ষর করেন।[৯০][৯১] ব্রিটিশ প্রতিনিধি স্যার হেনরি ম্যাকমহোন তিব্বতকে বহিঃ তিব্বত এবং অন্তঃ তিব্বতে ভাগ করার পরামর্শ দেন।[৯০] তার পরামর্শ অনুযায়ী দ্বুস-গ্ত্সাং এবং পশ্চিম খাম্স অঞ্চল নিয়ে গঠিত বহিঃ তিব্বতের প্রশাসন লাসা শহরে অবস্থিত তিব্বত সরকারের স্বায়ত্ত্বশাসনে এবং আমদো এবং পূর্ব খাম্স অঞ্চল নিয়ে গঠিত অন্তঃ তিব্বত সরাসরি চীনা প্রশাসনের অধীনে থাকে। চুক্তিতে স্থির হয় যে, বহিঃ তিব্বতের প্রশাসনিক কাজকর্মে তিব্বত সরকার সমস্ত আধিকারিক নিযুক্ত করবে এবং তাতে চীন সরকার হস্তক্ষেপ করবে না।[৯২]:৭৫ বহিঃ তিব্বতের প্রশাসনে চীন সরকার হস্তক্ষেপ না করলেও এই চুক্তির ফলে স্থির হয় যে সমগ্র তিব্বতই চীনের অংশ বিশেষ। কিন্তু চীন এই চুক্তিকে অবৈধ বলে দাবী করে।[৯৩][৯৪]

পাদটীকা সম্পাদনা

  1. At that time, Tufan obtained Yangtong, Dangxiang as well as other Chiang people tribal territories. To the east it extended to Liangzhou, Songzhu, and so forth, and to the south it extended to India. On the west they attacked and took over four military governments such as Guici (Kucha), Sule (Kashgar), and so forth, while to the north they extended as far as over 10,000 li to the Tujue (Turks) area. Since the Han and the Wei dynasties, the western barbarians had seen no prosperity comparable to these days' prosperity."[১৮]:১৯
  2. He gave to each of his sons a separate kingdom, viz., to the eldest Dpal-gyi-ngon, Maryul of Mnah-ris, the inhabitants using black bows; ru-thogs of the east and the Gold-mine of Hgog; nearer this way Lde-mchog-dkar-po; at the frontier ra-ba-dmar-po; Wam-le, to the top of the pass of the Yi-mig rock ...[৩০]
  3. In the beginning of the fifth year Hongwu [1372] the [commander of the] garrison of Hezhou said that in the country of Pamuzhuba [Phagmodrupa] in Ü and Tsang there was a monk who was called Zhangyang Shajia Jiancang [Jamyang Shakya Gyaltsen], to whom in the Yuan's times, had been given the title of Guanding Guoshi, and to whom the barbarians had been entrusted. Now Shangzhu Jiancang [Changchub Gyaltsen, another person than the regent's predecessor], the chief of Dogan [Do Kham], fought against Guan Wuer. If that monk of Pamuzhuba had been sent to persuade him, Dogan would certainly have become a subject of the Chinese Empire. The Emperor accepted this advice, and again appointed that monk Guanding Guoshi, and sent envoys to him to give him the jade seal and coloured silk.[৫৭]:৬৯২
  4. "In order to complete the Potala Palace, Desi Sangye Gyatso carried out the wishes of the Fifth Dalai Lama and kept his death a secret for fifteen years. People were told that the Great Fifth was continuing his long retreat. Meals were taken to his chamber and on important occasions the Dalai Lama's ceremonial gown was placed on the throne. However, when Mongol princes insisted on having an audience, an old monk called Depa Deyab of Namgyal monastery, who resembled the Dalai Lama, was hired to pose in his place. He wore a hat and an eye shade to conceal the fact that he lacked the Dalai Lama's piercing eyes. The Desi managed to maintain this charade till he heard that a boy in Mon exhibited remarkable abilities. He sent his trusted attendants to the area and, in 1688, the boy [the future 6th Dalai Lama] was brought to Nankartse, a place near Lhasa. There he was educated by teachers appointed by the Desi until 1697...."[৭০]
  5. "On January 23, 1751 Lhasa was similar to 1728, again witnessed another horrible example of Chinese justice. Lobsang Trashi and six other leaders of the rebellion were by executed by cutting them into pieces. Other people were beheaded or strangled. The heads of the executed were punctured and bars the public display. The other leaders were exiled and their property taken away. "[৭৭]:২২৫
  6. "The 'king' or governor of Tibet was no longer appointed by the Chinese after 1750, and the Dalai Lama was tacitly recognized as sovereign of Tibet, with the exception of Kham and Amdo on the one hand and, on the other, Ladakh — which was at first under Moghul suzerainty before being annexed by Kashmir after the Dogra war (1834–1842)."[১]:৮৫-৮৮

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Stein, R. A. (1972). Tibetan Civilization. Faber and Faber, London; Stanford University Press, Stanford, California. আইএসবিএন ০-৮০৪৭-০৮০৬-১ (cloth); আইএসবিএন ০-৮০৪৭-০৯০১-৭ . উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "Stein" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে
  2. Josef Kolmaš, Tibet and Imperial China, A Survey of Sino-Tibetan Relations up to the End of the Madchu Dynasty in 1912. Occasional paper No. 7, The Australian National University, Centre of Oriental Studies, Canberra, 1967. (lire en ligne ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৯ মে ২০১১ তারিখে, appuyer sur F11 pour l'affichage plein écran)
  3. Beckwith, Christopher I. (1987). The Tibetan Empire in Central Asia: A History of the Struggle for Great Power among Tibetans, Turks, Arabs, and Chinese during the Early Middle Ages. Princeton University Press. Princeton, New Jersey. আইএসবিএন ০-৬৯১-০২৪৬৯-৩.
  4. Bushell, S. W. "The Early History of Tibet. From Chinese Sources." Journal of the Royal Asiatic Society, Vol. XII, 1880
  5. Documents de Touen-houang relatifs a l'histoire du Tibet. J. Bacot, F. W. Thomas and Ch. Toussaint. Libraire Orienaliste Paul Geunther. Paris, 1940 (ফরাসি)
  6. Norbu, Namkhai. (1981). The Necklace of Gzi, A Cultural History of Tibet, Information Office of His Holiness The Dalai Lama, Dharamsala, H.P., India.
  7. Allen, Charles. The Search for Shangri-La: A Journey into Tibetan History, pp. 127-128. (1999). Reprint: (2000). Abacus, London. আইএসবিএন ০-৩৪৯-১১১৪২-১.
  8. Powers, John. History as Propaganda: Tibetan Exiles versus the People's Republic of China (2004) Oxford University Press. আইএসবিএন ৯৭৮-০-১৯-৫১৭৪২৬-৭
  9. Richardson, Hugh E. A Corpus of Early Tibetan Inscriptions (1981), p. 75. Royal Asiatic Society, London. ISBN 0-94759300/4.
  10. Beckwith, C. I. "The Revolt of 755 in Tibet", p. 3 note 7. In: Weiner Studien zur Tibetologie und Buddhismuskunde. Nos. 10-11. [Ernst Steinkellner and Helmut Tauscher, eds. Proceedings of the Csoma de Kőrös Symposium Held at Velm-Vienna, Austria, 13–19 September 1981. Vols. 1-2.] Vienna, 1983.
  11. Anne-Marie Blondeau, Yonten Gyatso, 'Lhasa, Legend and History,' in Françoise Pommaret(ed.) Lhasa in the seventeenth century: the capital of the Dalai Lamas, Brill Tibetan Studies Library, 3, Brill 2003, pp.15-38, pp15ff.
  12. Amund Sinding-Larsen, The Lhasa atlas: : traditional Tibetan architecture and townscape, Serindia Publications, Inc., 2001 p.14
  13. "Buddhism - Kagyu Office"। ২০০৯-০১-১০। ২০১০-০২-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৯-০১ 
  14. Dudjom Rinpoche and Jikdrel Yeshe Dorje. The Nyingma School of Tibetan Buddhism: its Fundamentals and History. Two Volumes. 1991. Translated and edited by Gyurme Dorje with Matthew Kapstein. Wisdom Publications, Boston. আইএসবিএন ০-৮৬১৭১-০৮৭-৮
  15. Ancient Tibet: Research materials from the Yeshe De Project. 1986. Dharma Publishing, California. আইএসবিএন ০-৮৯৮০০-১৪৬-৩
  16. Shakabpa, Tsepon W. D. Tibet: A Political History (1967), Yale University Press, New Haven and London.
  17. Richardson, Hugh. "Bal-po and Lho-bal." Bulletin of the School of Oriental and African Studies, No. 46 (1983)
  18. Lee, Don Y. (1981). The History of Early Relations between China and Tibet: From Chiu t'ang-shu, a documentary survey. Bloomington, IN: Eastern Press. আইএসবিএন ৯৭৮-০-৯৩৯৭৫৮-০০-৫
  19. Snellgrove, David. 1987. Indo-Tibetan Buddhism: Indian Buddhists and Their Tibetan Successors. 2 Vols. Shambhala, Boston, Vol. II
  20. 吳恒 (১৯৯২). "南詔":中國大百科全書, 中國歷史, vol. 2, pp. 731-732. Beijing/Shanghai: Zhongguo da baike quanshu chubanshe. (চীনা)
  21. Vitali, Roberto (1990) Early Temples of Central Tibet, p. 17. Serindia Publications. London. আইএসবিএন ০-৯০৬০২৬-২৫-৩.
  22. Ancient Tibet: Research Materials from the Yeshe De Project (1986), pp. 296-297. Dharma Publishing, California. আইএসবিএন ০-৮৯৮০০-১৪৬-৩.
  23. Dás, Sarat Chandra. Contributions on the Religion and History of Tibet, p. 40. Manjushri Publishing House, Delhi (1970). First published in The Journal of the Asiatic Society of Bengal, Vol. L (1881)
  24. Yoshinori Takeuchi, Jan van Bragt. Buddhist Spirituality. Crossroad, 1993. p. 225.
  25. Jens Schlieter। "Compassionate Killing or Conflict Resolution? The Murder of King Langdarma according to Tibetan Buddhist Sources"। University of Berne। 
  26. Yamaguchi, Zuiho. “The Fiction of King Dar ma's Persecution of Buddhism.” In Du Dunhuang au Japon: études chinoises et bouddhiques offertes à Michel Soymié, edited by Jean-Pierre Drège, 231–58. Geneva: Droz, 1996.
  27. McKay, Alex (২০০৩)। Tibet and Her Neighbors: A History। Walther Konig। আইএসবিএন 3-88375-718-7 
  28. Shakabpa, W. D. (২০১০)। One Hundred Thousand Moons: An Advanced Political History of Tibet1। Brill Publishers। আইএসবিএন 9789004177888 
  29. Petech, L. The Kingdom of Ladakh, (Serie Orientale Roma 51) Rome: Instituto Italiano per il Medio ed Estremo Oriente, 1977: 14-16
  30. Francke, A. H. (1914), 1920, 1926. Antiquities of Indian Tibet. Vol. 1: Personal Narrative; Vol. 2: The Chronicles of Ladak and Minor Chronicles, texts and translations, with Notes and Maps. Reprint: 1972. S. Chand & Co., New Delhi. (Google Books)
  31. van Schaik, Sam; Galambos, Imre (২০১১)। Manuscripts and Travellers: The Sino-Tibetan Documents of a Tenth-Century Buddhist Pilgrim। Walter de Gruyter। আইএসবিএন 9783110225655 
  32. Handa, O.C. (২০০৪)। Buddhist Monasteries of Himachal। Indus Publishing। পৃষ্ঠা 93। আইএসবিএন 978-81-7387-170-2। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০১৩ 
  33. Phuoc, Le Huu (মার্চ ২০১০)। Buddhist Architecture। Grafikol। পৃষ্ঠা 88। আইএসবিএন 978-0-9844043-0-8। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০১৩ 
  34. Thakur, Laxman S. (নভেম্বর ১৯৯৪)। "A Tibetan Inscription by lHa Bla-ma Ye-shes-'od from dKor (sPu) Rediscovered"Journal of the Royal Asiatic Society। JSTOR: Cambridge University Press। Third Series, Vol. 4, (3): 369–375। 
  35. Powers, John; Templeman, David (১৮ মে ২০১২)। Historical Dictionary of Tibet। Scarecrow Press। পৃষ্ঠা 673। আইএসবিএন 978-0-8108-7984-3। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০১৩ 
  36. তিব্বতে সওয়া বছর - রাহুল সাংকৃত্যায়ন, অনুবাদ - মলয় চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক - চিরায়ত প্রকাশন প্রাইভেট লিমিটেড, ১২ বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০৭৩, আইএসবিএন ৮১-৮৫৬৯৬-২৭-৬
  37. Hoffman, Helmut, "Early and Medieval Tibet", in Sinor, David, ed., Cambridge History of Early Inner Asia, Cambridge: Cambridge University Press, 1990)
  38. Swenson, Karen (১৯ মার্চ ২০০০)। "Echoes of a Fallen Kingdom"। New York Times। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জানুয়ারি ২০১৩ 
  39. Grunfeld, A. Tom. The Making of Modern Tibet (1996) East Gate Book. আইএসবিএন ৯৭৮-১-৫৬৩২৪-৭১৩-২
  40. http://www.greenkiwi.co.nz/footprints/frames/gu.htm
  41. L. Petech (1977), The Kingdom of Ladakh, c. 950-1842 A.D. Rome: IsMEO, pp. 44-45.
  42. Guge, a lost kingdom in Tibet
  43. Charles, Allen (১৯৯৯)। The Search for Shangri-La: A Journey into Tibetan History। Little, Brown and Company. Reprint: 2000 Abacus Books, London.। পৃষ্ঠা 243–245। আইএসবিএন 0-349-11142-1 
  44. Schirokauer, Conrad. A Brief History of Chinese Civilization. Thomson Wadsworth, (c)2006, p 174
  45. Wylie, Turnell V. (1977) "The First Mongol Conquest of Tibet Reinterpreted," Harvard Journal of Asiatic Studies 37.1: 103-133.
  46. Dawa Norbu. China's Tibet Policy, pp. 139. Psychology Press.
  47. Franke, H. 1981. Tibetans in Yuan China. - In: China Under Mongol Rule. Princeton.
  48. Dieter Schuh, Tibet unter der Mongolenherrschaft, in: Michael Weiers (editor), Die Mongolen. Beiträge zu ihrer Geschichte und Kultur, Darmstadt 1986, p. 283-289
  49. Laird, Thomas. The Story of Tibet: Conversations with the Dalai Lama (2006) Grove Press. আইএসবিএন ০-৮০২১-১৮২৭-৫ উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "Laird" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে
  50. F. W. Mote. Imperial China 900-1800. Harvard University Press, 1999. p.501.
  51. Uspensky, V.L. 1996. Lamaist Beijing: from Shun-Chi to the Tao-Kuang. –Oriens (Moscow), no. 4
  52. Rossabi, Morris. China Among Equals: The Middle Kingdom and Its Neighbors, 10th-14th Centuries (1983) Univ. of California Press. আইএসবিএন ০-৫২০-০৪৩৮৩-৯
  53. Wang, Jiawei and Nyima Gyaincain. (1997). The Historical Status of China's Tibet. Beijing: China Intercontinental Press. আইএসবিএন ৭-৮০১১৩-৩০৪-৮.
  54. Chan, Hok-Lam. (1988). "The Chien-wen, Yung-lo, Hung-shi, and Hsuan-te reigns", in The Cambridge History of China: Volume 7, The Ming Dynasty, 1368–1644, Part 1, 182–384, edited by Denis Twitchett and John K. Fairbank. Cambridge: Cambridge University Press. আইএসবিএন ০-৫২১-২৪৩৩২-৭.
  55. Dreyfus, Georges. (2003). "Cherished memories, cherished communities: proto-nationalism in Tibet", in The History of Tibet: Volume 2, The Medieval Period: c. AD 850–1895, the Development of Buddhist Paramountcy, 492–522, ed. Alex McKay. New York: Routledge. আইএসবিএন ০-৪১৫-৩০৮৪২-৯.
  56. Van Praag, Michael C. van Walt. (1987). The Status of Tibet: History, Rights, and Prospects in International Law. Boulder: Westview Press. আইএসবিএন ০-৮১৩৩-০৩৯৪-X.
  57. Giuseppe Tucci, Tibetan Painted Scrolls. Rome 1949. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "Tucci49" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে
  58. Chen, Qingying. (2003). Tibetan History. Beijing: China Intercontinental Press. আইএসবিএন ৭-৫০১০-১৬৬০-৭.
  59. Wang Furen & Suo Wenqing, Highlights of Tibetan History. Beijing 1984.
  60. Sarat Chandra Das, 'A short history of the House of Phagdu'. Journal of the Asiatic Society of Bengal 1905, p. 205.
  61. Tsepon W.D. Shakabpa, Tibet. A Political History. Yale 1967
  62. Laurent Deshayes, Histoire du Tibet. Paris 1997, p. 120.
  63. Ariane Macdonald, 'Préambule à la lecture d'un Rgya-Bod yig-chan'. Journal asiatique 1963
  64. Giuseppe Tucci, Deb t'er dMar po gSar ma', Rome 1971
  65. Per K. Sorensen & Guntram Hazod, Rulers on the Celestial Plain, Wien 2007
  66. Wang Furen & Suo Wenqing, Highlights of Tibetan History, Beijing 1984, p. 85.
  67. Ya Hanzhang, Biographies of the Tibetan Spiritual Leaders Panchen Erdenis, Beijing 1994.
  68. Karl-Heinz Everding & Dawa Dargyay Dzongphugpa, Das tibetische Fürstentum La stod lHo (um 1265-1642), Wiesbaden 2006, p. 113.
  69. Sarat Chandra Das, 'Tibet, a Dependency of Mongolia', Journal of the Asiatic Society of Bengal I:5 1905, p. 153-54.
  70. The Dalai Lamas of Tibet, pp. 93-94. Thubten Samphel and Tendar. Roli & Janssen, New Delhi. (2004). আইএসবিএন ৮১-৭৪৩৬-০৮৫-৯.
  71. Chapman, F. Spencer. (1940). Lhasa: The Holy City, p. 127. Readers Union Ltd. London.
  72. Wickham-Smith, Simon (2012-03)। "The Sixth Dalai Lama, Tsangyang Gyatso"The Treasury of Lives: Biographies of Himalayan Religious Masters। সংগ্রহের তারিখ 2014-01-07  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  73. Buckley, Michael and Strauss, Robert. (1986). Tibet: a travel survival kit, p. 45. Lonely Planet Publications. South Yarra, Vic., Australia. আইএসবিএন ০-৯০৮০৮৬-৮৮-১.
  74. Mullin, Glenn H. (2001). The Fourteen Dalai Lamas: A Sacred Legacy of Reincarnation. Clear Light Publishers. Santa Fe, New Mexico. আইএসবিএন ১-৫৭৪১৬-০৯২-৩
  75. Richardson, Hugh E., Tibet and its History, Shambhala, Boston & London (1984). আইএসবিএন ০-৮৭৭৭৩-৩৭৬-৭.
  76. Kapstein, Matthew (2013-06)। "The Seventh Dalai Lama, Kelzang Gyatso"The Treasury of Lives: Biographies of Himalayan Religious Masters। সংগ্রহের তারিখ 2014-02-07  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  77. Petech, Luciano (১৯৭২)। China and Tibet in the early XVIIIth century: history of the establishment of Chinese protectorate in Tibet। BRILL। আইএসবিএন 978-90-04-03442-6আইএসবিএন ৯০-০৪-০৩৪৪২-০ 
  78. Yingcong, Dai (২০০৯)। The Sichuan frontier and Tibet: imperial strategy in the early Qing: imperial strategy in the early Qing। University of Washington Press। আইএসবিএন 978-0-295-98952-5আইএসবিএন ০-২৯৫-৯৮৯৫২-১ 
  79. "Seventh Dalai Lama Kelsang Gyatso"। ১ জুলাই ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  80. Tibet Justice Center - Legal Materials on Tibet - Treaties and Conventions Relating to Tibet - Convention Relating to Burmah and Thibet (1886)
  81. Tibet Justice Center - Legal Materials on Tibet - Treaties and Conventions Relating to Tibet - Convention Between Great Britain and China Relating to Sikkim and Tibet (1890)
  82. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২২ নভেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ ডিসেম্বর ২০১৪ 
  83. Charles Allen (2004) Duel in the Snows:The True Story of the Younghusband Mission to Lhasa ; J.Murray
  84. Convention Between Great Britain and Thibet (1904)
  85. Convention Between Great Britain and China Respecting Tibet (1906)
  86. Convention Between Great Britain and Russia (1907)
  87. Mayhew, Bradley and Michael Kohn. (2005). Tibet, p. 32. Lonely Planet Publications. আইএসবিএন ১-৭৪০৫৯-৫২৩-৮.
  88. "Proclamation Issued by His Holiness the Dalai Lama XIII (1913)", Tibet Justice Center ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে. Retrieved 20 March 2009
  89. Udo B. Barkmann, Geschichte der Mongolei, Bonn 1999, p380ff
  90. "Convention Between Great Britain, China, and Tibet, Simla (1914)", Tibet Justice Center. Retrieved 20 March 2009
  91. Maxwell, Neville. India's China War ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে (1970) Jonathan Cape. আইএসবিএন ০-২২৪-৬১৮৮৭-৩
  92. Goldstein, Melvyn C. (১৯৯৭), The Snow Lion and the Dragon: China, Tibet, and the Dalai Lama, University of California Press., আইএসবিএন 0-520-21951-1 
  93. Neville Maxwell (ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১১)। "The Pre-history of the Sino-Indian Border Dispute: A Note"। Mainstream Weekly। 
  94. Calvin, James Barnard (এপ্রিল ১৯৮৪)। "The China-India Border War"। Marine Corps Command and Staff College। 

আরো পড়ুন সম্পাদনা

  • Tuttle, Gray, and Kurtis R. Schaeffer, eds. The Tibetan History Reader (Columbia University Press, 2013), reprints major articles by scholars
  • Bell, Charles: Tibet Past & Present. Reprint, New Delhi, 1990 (originally published in Oxford, 1924).
  • Bell, Charles: Portrait of the Dalai Lama, Collins, London, 1946.
  • Carrington, Michael. Officers Gentlemen and Thieves: The Looting of Monasteries during the 1903/4 Younghusband Mission to Tibet, Modern Asian Studies 37, 1 (2003), PP 81–109.
  • Desideri (1932). An Account of Tibet: The Travels of Ippolito Desideri 1712-1727. Ippolito Desideri. Edited by Filippo De Filippi. Introduction by C. Wessels. Reproduced by Rupa & Co, New Delhi. 2005
  • Rabgey, Tashi; Sharlho, Tseten Wangchuk (২০০৪)। Sino-Tibetan Dialogue in the Post-Mao Era: Lessons and Prospects (পিডিএফ)। Washington: East-West Center। আইএসবিএন 1-932728-22-8। ১৬ জুলাই ২০০৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  • Petech, Luciano (১৯৯৭)। China and Tibet in the Early XVIIIth Century: History of the Establishment of Chinese Protectorate in Tibet.। Brill Academic Publishers। আইএসবিএন 90-04-03442-0 
  • Samuel, Geoffrey (১৯৯৩)। Civilized Shamans: Buddhism in Tibetan Societies। Smithsonian Institution। আইএসবিএন 1-56098-231-4 
  • Shakabpa, Tsepon W.D [Wangchuk Deden (dbang phyug bde ldan)]: Tibet. A Political History, Potala Publications, New York, 1984.
  • Shakabpa, Tsepon Wangchuk Deden (Dbang-phyug-bde-ldan, Zhwa-sgab-pa) (1907/08-1989): One Hundred Thousand Moons: an advanced political history of Tibet. Translated and annotated by Derek F. Maher. 2 Vol.,Brill, 2010 (Brill's Tibetan studies library; 23). Leiden, 2010.
  • Smith, Warren W. (১৯৯৬)। History of Tibet: Nationalism and Self-determination। Westview Press। আইএসবিএন 0-8133-3155-2 
  • Smith, Warren W. (২০০৪)। China's Policy on Tibetan Autonomy - EWC Working Papers No. 2 (পিডিএফ)। Washington: East-West Center। ১৯ আগস্ট ২০০৮ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  • Smith, Warren W. (২০০৮)। China's Tibet?: Autonomy or Assimilation। Rowman & Littlefield Publishers। আইএসবিএন 978-0-7425-3989-1 
  • McGranahan, C. "Truth, Fear, and Lies: Exile Politics and Arrested Histories of the Tibetan Resistance," Cultural Anthropology, Vol. 20, Issue 4 (2005) 570-600.
  • Knaus, J.K. Orphans of the Cold War: America and the Tibetan Struggle for Survival (New York: Public Affairs, 1999).
  • Bageant, J. "War at the Top of the World," Military History, Vol. 20, Issue 6 (2004) 34-80.
  • Bellezza, John Vincent: Zhang Zhung. Foundations of Civilization in Tibet. A Historical and Ethnoarchaeological Study of the Monuments, Rock Art, Texts, and Oral Tradition of the Ancient Tibetan Upland. Denkschriften der phil.-hist. Klasse 368. Beitraege zur Kultur- und Geistesgeschichte Asiens 61, Verlag der Oesterreichischen Akademie der Wissenschaften, Wien 2008.
  • Zeisler, Bettina. (2010). "East of the Moon and West of the Sun? Approaches to a Land with Many Names, North of Ancient India and South of Khotan." In: The Tibet Journal, Special issue. Autumn 2009 vol XXXIV n. 3-Summer 2010 vol XXXV n. 2. "The Earth Ox Papers", edited by Roberto Vitali, pp. 371–463.