মঙ্গোল সাম্রাজ্য
মঙ্গোল সাম্রাজ্য ১২শ শতকের শুরুতে মঙ্গোল সেনাপতি চেঙ্গিস খান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি বিশালাকার সাম্রাজ্য। ১২শ শতকের শেষে এসে প্রায় সমস্ত পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া এবং মধ্য ইউরোপ পর্যন্ত এটি বিস্তৃত ছিল। এটি ইতিহাসের সর্ববৃহৎ অবিচ্ছিন্ন স্থলসাম্রাজ্য হিসাবে বিবেচিত হয়।
মঙ্গোল সাম্রাজ্য | |
---|---|
১২০৬–১৩৬৮ | |
মঙ্গোল সাম্রাজ্যের বিস্তার | |
অবস্থা | যাযাবর সাম্রাজ্য |
রাজধানী | |
প্রচলিত ভাষা | |
ধর্ম |
|
সরকার | নির্বাচনী রাজতন্ত্র পরবর্তীতে hereditary |
মহান খান | |
• ১২০৬–১২২৭ | চেঙ্গিজ খান |
• ১২২৯–১২৪১ | ওগেদাই খান |
• ১২৪৬–১২৪৮ | গুয়ুক খান |
• ১২৫১–১২৫৯ | মোংকে খান |
• ১২৬০–১২৯৪ | কুবলাই খান (nominal) |
• ১৩৩৩–১৩৩৮ | তোগোহান তেমুর খান (nominal) |
আইন-সভা | কুরুলতাই |
ইতিহাস | |
• চেঙ্গিস খান এর সাম্রাজ্য ঘোষণা | ১২০৬ |
• চেঙ্গিস খানের মৃত্যু | ১২২৭ |
1250–1350 | |
১২৬০–১২৯৪ | |
• ইউয়ান রাজবংশের পতন | ১৩৬৮ |
• চাগতাই খানাত এর পতন | ১৬৮৭ |
আয়তন | |
১২০৬ (মঙ্গোলিয়া একীভূতকরণ)[১] | ৪০,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার (১৫,০০,০০০ বর্গমাইল) |
১২২৭ (চেঙ্গিস খানের মৃত্যুর সময়)[১] | ১,৩৫,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার (৫২,০০,০০০ বর্গমাইল) |
১২৯৪ (কুবলাই খানের মৃত্যু)[১] | ২,৩৫,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার (৯১,০০,০০০ বর্গমাইল) |
১৩০৯ (সর্বশেষ একীভূতকরণ)[১] | ২,৪০,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার (৯৩,০০,০০০ বর্গমাইল) |
মুদ্রা | বহুমুদ্রা[গ] |
|
মঙ্গোলদের উদ্ভব ও বিকাশ
সম্পাদনামঙ্গোল জাতির ইতিহাস লিখিত আকারে না থাকায় তার উৎসসন্ধান সহজ নয়। তবে মঙ্গোল জাতি মৌখিকভাবে প্রজন্মান্তরে তাদের ইতিহাস সংরক্ষণ করেছে। চেঙ্গিস খানের আগে মঙ্গোলরা একক জাতি ছিল না। তারা ছিল যাযাবর এবং সম্পদ কম থাকায় তারা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে ছোটখাটো হামলা করে থাকত। আধুনিক মঙ্গোলিয়ার এলাকা ইতিহাসজুড়ে বিভিন্ন চিনা সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল।তারা প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ঘোড়ার দৌড়ের শব্দ শুনতে পায় এবং ১০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত দেখতে পায়।
মঙ্গোল বংশের প্রতিষ্ঠাতা চেঙ্গিস খান
সম্পাদনাচেঙ্গিস খান মঙ্গোল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। মঙ্গোলরা তাকে জাতির জনক হিসেবে মান্য করে। তার সম্বন্ধে সবথেকে প্রামাণ্য তথ্য পাওয়া যায় “ মঙ্গোল জাতির গোপন ইতিহাস” বইতে। বইটি ১২৩০ এর দিকে রচিত হয়।
চেঙ্গিস খানের আদিনাম তিমুজিন।' Secret history of Mongols' অনুসারে তিনি ছিলেন বর্তে চিনোর উত্তরপুরুষ। তার পিতার নাম ইয়েসুকাই ও মাতার নাম হয়লুন। তার পিতার গোত্র ছিল বরজিগিন ও মাতার গোত্র ছিল অলখুনুত। বরজিগিন গোত্রই পরবর্তীতে মঙ্গোলদের রাজকীয় গোত্রে পরিণত হয়। তার জীবন শুরু থেকেই ছিল ঘটনা বহুল। এর বিবরন মঙ্গোল জাতির গোপন ইতিহাস বইতে বিস্তারিত রয়েছে।
১১৯০ সালের দিকে চেঙ্গিস খান মঙ্গোল জাতীর একমাত্র নেতা (খান) হবার সংকল্পে যুদ্ধ শুরু করেন। তার সমরকুশলতা ও উপযুক্ত নীতির কারণে তিনি সব গোত্রকেই ধ্বংস অথবা বশিভুত করতে সক্ষম হন। অনেকবার তিনি তার কাছের সহযোগীদেরও ছাড়েননি। যেমন তিনি তার সবচে কাছের বন্ধু জামুখাকেও পরাজিত করে হত্যা করেন। এভাবে তিনি মঙ্গোল জাতীর প্রধান খান হন ও চেঙ্গিস খান উপাধি গ্রহণ করেন। তার অভিষেক হয় ১২০৬ সালে। তখন থেকেই মঙ্গোল সাম্রাজ্যের শুরু ধরা হয়।
মঙ্গোল সাম্রাজ্য বিস্তার
সম্পাদনামঙ্গোল জাতির বিজয় অভিযান শুরু হয় চেঙ্গিস খানের আমলেই। তিনি চীনা সাম্রাজ্যসমুহ, খওয়ারিজমার শাহ, পশ্চিম এশিয়ার তুর্কি গোত্রসমূহের বিরুদ্ধে অভিযান করেন ও জয়লাভ করেন। তার বিজয়াভিযান ইউরোপ পর্যন্ত পৌঁছেছিল। ১২২৭ সালে মৃত্যুর আগপর্যন্ত ২১ বছর তিনি ইউরোপ ও এশিয়ার বিস্তীর্ণ অংশে ধ্বংসযজ্ঞ চালান ও নিজের জাতিকে সমৃদ্ধ করেন।
চেঙ্গিস খানের মৃত্যুর পরও অভিযান থেমে থাকেনি। তার উত্তরাধিকারিরা কোরিয়া থেকে পোল্যান্ড পর্যন্ত ভূভাগ নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে আসেন। তবে ১২৬০ এর দশক থেকেই তাদের ভাঙ্গন শুরু হয় এবং ১২৯০ সালের মধ্যে এই বিশাল সাম্রাজ্য ৪ ভাগে বিভক্ত হয়ে পরে।
মঙ্গোল বংশের পতন
সম্পাদনা১২৫৯ সালে মঙ্গু খানের মৃত্যু হয়। মঙ্গোলদের উত্তরাধিকারের কোন নীতিমালা ছিল না। চেঙ্গিস খানের উত্তরাধিকারীদের যে কেউ সিংহাসন দাবি করতে পারত। ফলে পরবর্তী দুই দশকে তাদের মধ্যে অনেকগুলো গৃহযুদ্ধ হয়। ১২৯৪ সালের মধ্যে তাদের সাম্রাজ্য চারভাগে বিভক্ত হয়- ১. ইউয়ান সাম্রাজ্য ২। চাগতাই খানাত ৩. সোনালি সাম্রাজ্য, ৪। ইলখানদের এলাকা।
জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে
সম্পাদনামঙ্গল সম্রাজ্য নিয়ে নির্মিত সিনেমাসমূহঃ
1. By the will of Genghis khan(2009)
2. Mongol: The Rise Of Genghis Khan (2007)
3. Genghis khan (1965)
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ Rein Taagepera (সেপ্টেম্বর ১৯৯৭)। "Expansion and Contraction Patterns of Large Polities: Context for Russia"। International Studies Quarterly। 41 (3): 499। জেস্টোর 2600793। ডিওআই:10.1111/0020-8833.00053।