খ্রি-গ্ত্সুগ-ল্দে-ব্র্ত্সান
খ্রি-গ্ত্সুগ-ল্দে-ব্র্ত্সান (ওয়াইলি: Khri-gtsug-lde-brtsan) (রাজত্বকাল ৮১৫ - ৮৩৮) খ্রি-ল্দে-স্রোং-ব্ত্সানের পরবর্তী তিব্বত সম্রাট ছিলেন।
খ্রি-গ্ত্সুগ-ল্দে-ব্র্ত্সান | |||||
---|---|---|---|---|---|
তিব্বত সম্রাট | |||||
পূর্বসূরি | খ্রি-ল্দে-স্রোং-ব্ত্সান | ||||
উত্তরসূরি | গ্লাং-দার-মা | ||||
| |||||
ওয়াইলি | Khri-gtsug-lde-brtsan | ||||
পিতা | খ্রি-ল্দে-স্রোং-ব্ত্সান |
রাজ্যাভিষেক
সম্পাদনা৮১৫ খ্রিষ্টাব্দে তিব্বত সম্রাট খ্রি-ল্দে-স্রোং-ব্ত্সানের মৃত্যু হয়। তার পাঁচ পুত্রের মধ্যে বড় পুত্র ল্হাস-রাস-গ্ত্সাংমা বৌদ্ধ ভিক্ষুতে পরিণত হন। পরের দুই পুত্রের বাল্যকালেই মৃত্যু হয়। তার পরবর্তী পুত্র গ্লাং-দার-মা বৌদ্ধ ধর্ম বিরোধী হওয়ায় কনিষ্ঠ পুত্র খ্রি-গ্ত্সুগ-ল্দে-ব্র্ত্সানকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী করা হয়।[১]:৪৮
রাজনৈতিক ও সামরিক অভিযান
সম্পাদনাতিব্বত সাম্রাজ্য খ্রি-গ্ত্সুগ-ল্দে-ব্র্ত্সানের শাসনকালে সর্বাধিক বিস্তারলাভ করে। এই সময় তিব্বতী সেনাবাহিনী চীন ও নেপালের কিছু অংশ ছাড়াও খোটান, বালটিস্তান, ব্রুঝা, হুঞ্জা, ঝাংঝুং, ইয়ুগুর, কামিলং[২]:১৭, জিনজিয়াং ও গানসু অধিকারে আনে।[৩]
খ্রি-গ্ত্সুগ-ল্দে-ব্র্ত্সানের সেনাপতি ঝাং-'ব্রো-স্তাগের সামরিক নেতৃত্বে তিব্বত সাম্রাজ্য বিস্তার লাভ করতে থাকে। ৮১৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি উইঘুর খাগানাতের রাজধানী ওর্দু বালিক এবং ৮১৯ খ্রিষ্টাব্দে চীনা শহর ইয়ানঝৌ আক্রমণ করেন।[৪][৫] ৮২১ খ্রিষ্টাব্দে ঝাং-'ব্রো-স্তাগ চীনাদের প্রচন্ডভাবে আক্রমণ করে তাদের শান্তিস্থাপনে বাধ্য করেন।[২]:১৮ তিব্বতীরা উইঘুর খাগানাত ও নানঝাও রাজ্যের সাথেও শান্তি স্থাপন করেন।[৬]
ট্যাং সাম্রাজ্যের সাথে তিব্বত সাম্রাজ্য সীমান্ত বিষয়ক যে চুক্তি স্থাপন করে, তা চীনা ও তিব্বতী উভয় ভাষাতেই ৮২৩ খ্রিষ্টাব্দে লাসা শহরের জোখাং মন্দিরের সামনে প্রস্তরস্তম্ভে লিপিবদ্ধ রয়েছে।[১]:৪৯[৭]
বৌদ্ধ ধর্ম প্রসার
সম্পাদনাখ্রি-গ্ত্সুগ-ল্দে-ব্র্ত্সান তিব্বতে বৌদ্ধধর্ম প্রচারকারী তিনজন ধর্মরাজার মধ্যে একজন ছিলেন। তিনি নেপাল, চীন, কাশ্মীর ও খোটান থেকে বহু কারিগর, পণ্ডিত ও অনুবাদককে তিব্বতে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে আসেন। তিনি বহু সংস্কৃত শব্দের তিব্বতী ভাষায় অনুবাদ করার কাজে উৎসাহ প্রদান করে বহু তিব্বতী সাহিত্য ও অনুবাদকর্মের সৃষ্টিতে সহায়তা করেন।[১]:৪৯ [৮] সমস্ত অনুবাদ সংস্কৃত থেকে করার জন্য তিনি নির্দেশ জারী করেন।[৯]
তিনি 'উ-শাং-র্দো নামক স্থানে নয়তল বিশিষ্ট মন্দির নির্মাণ করেন। এই মন্দিরের নিচের তিনটি তল পাথরের, মাঝের তিনটি তল ইটের ও ওপরের তিনটি তল কাঠ দিয়ে তৈরী হয়েছিল। এর ছাদটি ছিল সোনা দিয়ে তৈরী। এর ওপরের তিনটি তলায় বৌদ্ধ পুঁথি, চোর্তেন ও চিত্রকলা দ্বারা সমৃদ্ধ ছিল।[৮][১০]
মৃত্যু ও উত্তরাধিকার
সম্পাদনাতিব্বতী প্রবাদানুসারে দুই বোন ধর্মাবলম্বী মন্ত্রী খ্রি-গ্ত্সুগ-ল্দে-ব্র্ত্সানকে হত্যা করে তার বৌদ্ধ ধর্ম বিরোধী ভাই গ্লাং-দার-মাকে সিংহাসনে বসান।[১]:৫১ আবার কোন কোন মতে, মালদ্রো মন্দিরের সিঁড়ি থেকে দুর্ঘটনাবশতঃ পড়ে গিয়ে তার মৃত্যু হয়। অন্যদিকে জিন ট্যাংশু গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, রোগগ্রস্ত অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে।[১১] দুনহুয়াং থেকে প্রাপ্ত একটি পুঁথিতে সম্রাট খ্রি-গ্ত্সুগ-ল্দে-ব্র্ত্সানের আরোগ্য কামনার একটি প্রার্থনা লিপিবদ্ধ থাকায় সর্বশেষ তত্ত্বটি সম্বন্ধে প্রমাণ পাওয়া যায়।[১২] ঝু জি (১১৩০-১২০০) দ্বারা রচিত টোংকিয়ানকাংমু নামক গ্রন্থে উল্লিখিত আছে যে, সম্রাট তার রাজত্বকালের বেশিরভাগ সময়েই অসুস্থ থাকতেন এবং ৮৩৮ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।[১৩]:৪৭১ টোংকিয়ানকাংমু[১৩]:৪৭২ ও জিন ট্যাংশু গ্রন্থে ৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দের উইঘুর খাগানাতের[১৪] এক মহামারীর কথারও উল্লেখ রয়েছে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ Shakabpa, Tsepon W. D. Tibet: A Political History (1967), Yale University Press, New Haven and London.
- ↑ ক খ Vitali, Roberto (1990) Early Temples of Central Tibet, p. 17. Serindia Publications. London. আইএসবিএন ০-৯০৬০২৬-২৫-৩.
- ↑ Kolmaš, Josef. Tibet and Imperial China: A Survey of Sino-Tibetan Relations up to the end of the Manchu Dynasty in 1912 (1967), p. 8. Centre of Oriental Sudies, Australian National University, Canberra.
- ↑ Beckwith, Christopher I. The Tibetan Empire in Central Asia. (1987), pp. 165-167. Princeton University Press. আইএসবিএন ০-৬৯১-০২৪৬৯-৩.
- ↑ Lee, Don Y. The History of Early Relations between China and Tibet: From Chiu t'ang-shu, a documentary survey, p. 150. (1981). Eastern Press, Bloomington, Indiana. আইএসবিএন ০-৯৩৯৭৫৮-০০-৮.
- ↑ Beckwith, Christopher I. The Tibetan Empire in Central Asia. (1987), pp. 150-151. Princeton University Press. আইএসবিএন ০-৬৯১-০২৪৬৯-৩.
- ↑ A Corpus of Early Tibetan Inscriptions. H. E. Richardson. Royal Asiatic Society (1985), pp. 106-143. ISBN 0-94759300/4.
- ↑ ক খ Ancient Tibet: Research Materials from the Yeshe De Project (1986), pp. 296-297. Dharma Publishing, California. আইএসবিএন ০-৮৯৮০০-১৪৬-৩.
- ↑ Yoshinori Takeuchi, Jan van Bragt. Buddhist Spirituality. Crossroad, 1993. p. 225.
- ↑ Dás, Sarat Chandra. Contributions on the Religion and History of Tibet, p. 40. Manjushri Publishing House, Delhi (1970). First published in The Journal of the Asiatic Society of Bengal, Vol. L (1881)
- ↑ Pelliot, Paul. Histoire Ancienne du Tibet. Paris. Libraire d'amérique et d'orient. 1961, p. 133.
- ↑ Richardson, H. E. "Khri Gtsug-lde-brtsan's Illness." Bulletin of the School of Oriental and African Studies, 44 (1981), p. 351-352.
- ↑ ক খ Grosier, Jean-Baptiste. Histoire Général de la Chine ou Annales de cet empire: traduites du Tong-kien-kang-mu. (1778) Paris. Reprint: Ch'en-wen publishing company, Taipei, Taiwan. 1969. XIII
- ↑ Mackerras, Colin. The Uighur Empire According to the T'ang Dynastic Histories: A Study in Sino-Uighur Relations 744-840, p 125. University of South Carolina Press, Columbia, South Carolina. 1972. আইএসবিএন ০-৮৭২৪৯-২৭৯-৬.
রাজত্বকাল শিরোনাম | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী খ্রি-ল্দে-স্রোং-ব্ত্সান |
খ্রি-গ্ত্সুগ-ল্দে-ব্র্ত্সান রাজত্বকাল ৮১৫ - ৮৩৮ |
উত্তরসূরী গ্লাং-দার-মা |