সাংস্কৃতিক বিপ্লব

মহান শ্রমিক সাংস্কৃতিক বিপ্লব (সরলীকৃত চীনা: 无产阶级文化大革命, ঐতিহ্যবাহী চীনা: 無產階級文化大革命, পিনইন: Wúchǎn Jiējí Wénhuà Dà Gémìng, সাহিত্যে: Proletarian Cultural Great Revolution; সংক্ষিপ্ত চীনা ভাষায় 文化大革命 বা 文革) যা সচরাচর গণচীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লব নামে বৈশ্বিক অঙ্গনে পরিচিত। মাও সেতুংয়ের নেতৃত্বে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনে বৃহৎরূপে সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে এ বিপ্লব সংঘটিত হয়। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৬ সময়কালে সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে এটি হয়েছিল।[১] চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মাও সেতুংয়ের প্রস্তাবে পুঁজিবাদী ও প্রাচীনকালের ধ্যান-ধারণা থেকে দূরে রাখতে এবং প্রকৃত সমাজতান্ত্রিক চিন্তা-ভাবনা সংরক্ষণের লক্ষ্যেই এ বিপ্লবের সূচনা ঘটে। এছাড়াও, মাওবাদ দলে প্রভাব বিস্তারের জন্য এর সূত্রপাত হয়।

সাংস্কৃতিক বিপ্লব
চীনা 文化大革命
আক্ষরিক অর্থ"মহান সাংস্কৃতিক বিপ্লব"
Formal name
ঐতিহ্যবাহী চীনা 無產階級文化大革命
সরলীকৃত চীনা 无产阶级文化大革命
আক্ষরিক অর্থ"মহান শ্রমিক সাংস্কৃতিক বিপ্লব"
সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রচারণী পোস্টার।

প্রেক্ষাপটসম্পাদনা

খুব দ্রুত পরিবর্তন সম্পর্কীয় কার্যক্রম ব্যর্থ হওয়ায় সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সূচনা ঘটে। চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি থেকে ধনীক শ্রেণীর সদস্যদের বিতাড়নে মাও চেষ্টা চালান। দল থেকে তাদেরকে বিতাড়িত করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে তিনি সাম্যবাদী শিক্ষা আন্দোলনের সূত্রপাত করেন। এ আন্দোলনটি ১৯৬২ থেকে শুরু হয়ে ১৯৬৫ সালে শেষ হয়। একই সময়ে বিদ্যালয়ের পদ্ধতিতে পরিবর্তন করা হয় ও ছাত্রদের শিক্ষার পাশাপাশি কারখানা ও দলে কাজ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। ধীরেধীরে ১৯৬৫ সালে লিন বিয়াও, জিয়াং কিংচেন বোদা’র সমর্থন নিয়ে মাও ক্ষমতার দিকে যাত্রা করেন।[১]

ইতিহাসসম্পাদনা

মাওয়ের সমর্থক ও দেং জিয়াওপিংয়ের সমর্থকের কারণে কমিউনিস্ট পার্টি বিভক্ত হয়ে যায়। চীনের তরুণদের সমর্থন লাভের উদ্দেশ্যে ‘লিটল রেড বুক’ নামে মাওয়ের বক্তব্যমালা প্রকাশ করেন।[১] তরুণদেরকে নিয়ে গঠিত রেড গার্ডও জনপ্রিয়তা পায়। তারা মাওয়ের বক্তব্যগুলোকে সর্বত্র প্রচার করতে থাকেন। এছাড়াও তারা মাওয়ের বিরুদ্ধবাদীদের মারধর করতে থাকে ও বাড়ী-ঘর, যাদুঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়।[২] অনেক জায়গাতেই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে ও চীনে অরাজক পরিবেশের সৃষ্টি হয়।[১] বিপ্লবকালীন সময়ে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি চীনে জোরপূর্বক অবস্থান করতে বাধ্য হন। তন্মধ্যে রাষ্ট্রপ্রধান লিও শাওকি, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মহাসচিব দেং জিয়াওপিং অন্যতম।[৩]

উদ্দেশ্যসম্পাদনা

সাংস্কৃতিক বিপ্লবের উদ্দেশ্য হল একটি সমাজতান্ত্রিক ও সাম্যবাদী সংস্কৃতির জন্ম দেওয়া, প্রাচীন পুঁজিবাদী ও সামন্তীয় সংস্কৃতির বিলোপ সাধন করে সমগ্র সমাজে জ্ঞান ভিত্তিক বুদ্ধিবৃত্তির জাগরণ সৃষ্টি করা।[৪] টেকসই সমাজতান্ত্রিক সাম্যবাদী সমাজ বিনির্মাণে সাংস্কৃতিক বিপ্লব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই তত্ত্বটি ভি আই লেনিনের, এটিকে সমাজতন্ত্র বিনির্মাণে এক আবশ্যিক অঙ্গ হিসেবে মূল্যায়ন করেন। সোভিয়েতে সাংস্কৃতিক বিপ্লব তেমন অগ্রসর না হলেও পরবর্তীকালে চীনে বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়।

প্রভাবসম্পাদনা

সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ফলে চীনে অনেক ধরনের সমস্যার তৈরী হয়। কল-কারখানায় নিযুক্ত কর্মীরা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ায় উৎপাদন বেশ কমতে থাকে। এছাড়াও কর্মরত ব্যক্তিরা জানতো না যে কি কারণে তারা বিপ্লবে সামিল হয়েছে। পরিবহন ব্যবস্থায়ও এর প্রভাব পড়ে। অনেক রেলগাড়ী দেশের সর্বত্র রেড গার্ডদের জন্য ব্যবহার করা হয়। বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশলীদেরকে কারাগারে প্রেরণ করা হয় কিংবা খামারের কাজে নিযুক্ত করা হয়। এরফলে তাদের জ্ঞান বিফলে যায়। এধরনের পরিবর্তনের কারণে চীনের শিল্পজাত দ্রব্য উৎপাদন ১৪ শতাংশে নেমে যায়।[৫]

অনেক চীনাদের শিক্ষাজীবন দ্রুততম সময়ে শেষ হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানের তুলনায় শহরগুলোতেই শিক্ষা পদ্ধতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও, ‘তরুণদেরকে প্রেরণ করো’ শিরোনামে পরিকল্পনা গ্রহণ করায় শিক্ষাজীবন বাঁধাগ্রস্ত হয়। ঐ পরিকল্পনায় শিক্ষার্থীদেরকে শহর থেকে দেশের সর্বত্র প্রেরণ করা হয়েছিল।[৬]

মূল্যায়নসম্পাদনা

মে, ১৯৬৬ সালে ধীরে ধীরে শুরু হওয়া এ বিপ্লবটি ১৯৬৯ সালে শেষ হয়। নবম জাতীয় পার্টি কংগ্রেসের এক সভায় সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। তা স্বত্ত্বেও ১৯৭১ সালে সামরিক কর্মকর্তা লিন বিয়াওয়ের দেহাবসান পর্যন্ত এর প্রভাব সক্রিয় ছিল। মাওয়ের দেহাবসানের পর চার সংঘবদ্ধ ব্যক্তিকে ১৯৭৬ সালে গ্রেফতার করা হয়। সংস্কারপন্থী দেং জিয়াওপিংয়ের নেতৃত্বে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সাথে সম্পৃক্ত মাওয়ের নীতিগুলো অপসারণ কার্যের সূচনা ঘটে। ১৯৮১ সালে পার্টি ঘোষণা করে যে, সাংস্কৃতিক বিপ্লব চীন প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর দল, দেশ ও ব্যক্তিকে অনেক পিছিয়ে নিয়েছে ও গুরুতর ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।[৭]

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. People's Republic of China: III. Retrieved on 2009-9-12.
  2. Red Guards. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৬ এপ্রিল ২০০৯ তারিখে ThinkQuest. Retrieved on 2009-9-12
  3. Butterfield, Fox (1976-9-10), Mao Tse-Tung: Father of Chinese Revolution, সংগ্রহের তারিখ 2009-9-12  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  4. সাদি, অনুপ (ফেব্রুয়ারি, ২০১৫)। "সাংস্কৃতিক বিপ্লব"। সমাজতন্ত্রঢাকা: ভাষাপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ৬১–৬৪। আইএসবিএন 978-9849101383  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য);
  5. /r-2713.html China: Events During the Cultural Revolution Decade, 1966-76 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১২ এপ্রিল ২০০৬ তারিখে. Retrieved on 2009-9-12.
  6. Giles, John; Park, Albert; Wang, Meiyan (April 2007), সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি (পিডিএফ), ২০১০-০৬-০৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ 2009-9-12  অজানা প্যারামিটার |Title= উপেক্ষা করা হয়েছে (|title= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  7. "Resolution on Certain Questions in the History of Our Party Since the Founding of the People's Republic of China," adopted by the Sixth Plenary Session of the Eleventh Central Committee of the Communist Party of China on June 27, 1981 Resolution on CPC History (1949-81). (Beijing: Foreign Languages Press, 1981). p. 32.

গ্রন্থপঞ্জি

আরও পড়ুনসম্পাদনা

সাধারণসম্পাদনা

নির্দিষ্টসম্পাদনা

অন্যান্যসম্পাদনা

বহিঃসংযোগসম্পাদনা