ফুন-ত্শোগ্স-র্নাম-র্গ্যাল

ফুন-ত্শোগ্স-র্নাম-র্গ্যাল (তিব্বতি: ཕུན་ཚོགས་རྣམ་རྒྱལওয়াইলি: Phun-tshogs Rnam-rgyal) (১৫৮৭-১৬২০) তিব্বতের গ্ত্সাং-পা রাজবংশের পঞ্চম রাজা ছিলেন।

পরিবার

সম্পাদনা

ফুন-ত্শোগ্স-র্নাম-র্গ্যালের পারিবারিক ইতিহাস সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না। গ্ত্সাং-পা রাজবংশের ঝিগ-শাগ-পা-ত্শে-ব্র্তান-র্দো-র্জে, ম্থু-স্তোব্স-র্নাম-র্গ্যালব্স্তান-স্রুং-দ্বাং-পোর মধ্যে কে ফুন-ত্শোগ্স-র্নাম-র্গ্যালের পিতা সেই বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে।[]:২৮৩ ফুন-ত্শোগ্স-র্নাম-র্গ্যালের পুত্র ব্স্তান-স্ক্যোং-দ্বাং-পো দ্বারা প্রচলিত একটি আইনে ম্থু-স্তোব্স-র্নাম-র্গ্যাল ও তার ভ্রাতাদের পুত্র হিসেবে ফুন-ত্শোগ্স-র্নাম-র্গ্যালের উল্লেখ রয়েছে। ঐ একই আইন থেকে জানা যায় যে, ১৬১১ খ্রিষ্টাব্দে ফুন-ত্শোগ্স-র্নাম-র্গ্যালের বয়স ছিল পঁচিশ বছর, সেই হিসেবে ফুন-ত্শোগ্স-র্নাম-র্গ্যালের জন্ম ১৫৮৭ খ্রিষ্টাব্দে হয়েছিল বলে মনে করা হয়।[]:৬৯৭ যদিও অপর একটি তথ্য থেকে জানা যায়, ১৬১৪ খ্রিষ্টাব্দে ফুন-ত্শোগ্স-র্নাম-র্গ্যালের বয়স ছিল ষোল বছর[], কিন্তু সম্ববতঃ এই তথ্য সঠিক নয়।

সমরাভিযান

সম্পাদনা

কোন কোন সূত্র মতে, তার পূর্বসূরী ব্স্তান-স্রুং-দ্বাং-পো ১৬১১ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন, কিন্তু অন্য কিছু সূত্র মতে ১৬০৩ খ্রিষ্টাব্দে ফুন-ত্শোগ্স-র্নাম-র্গ্যাল গ্ত্সাং-পা রাজবংশের রাজা হিসেবে সিংহাসনে বসেন।[] সেই হিসেবে ১৬০৫ খ্রিষ্টাব্দে গ্ত্সাং-পা রাজবংশের দ্বারা দ্বুস অঞ্চলের সামরিক আক্রমণ তার নেতৃত্বে হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়। ১৬০৭ খ্রিষ্টাব্দে তার সেনাবাহিনী লাসা শহরের নিকটবর্তী ক্যিশোদ নগরে মঙ্গোল সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে বলে ঐতিহাসিকেরা মনে করেন।[]:৬৯৮ এরফলে পশ্চিম তিব্বতের তোহ, পূর্ব মধ্য তিব্বতের কিছু অংশ এবং পশ্চিম মধ্য তিব্বতের সমগ্র অংশ গ্ত্সাং-পা রাজবংশের অধীনে আসে।[] ১৬১২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পশ্চিম তিব্বতের ঙ্গারি অঞ্চলে আভিযান চালান, যারফলে গুংথাং রাজ্য, ছাং, লাতোদ লো প্রভৃতি অঞ্চল তার অধীনস্থ হয়।[] কইন্তু এই সমস্ত অঞ্চলগুলিকে বশবর্তী করে রাখতে তাকে বেশ কয়েকবার অভিযান চালাতে হয়।[]:৬৯৮

দ্গে-লুগ্স ধর্মসম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক

সম্পাদনা

পূর্বসূররীদের মতোই ফুন-ত্শোগ্স-র্নাম-র্গ্যাল কার্মা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এবং সেই হিসেবে চতুর্থ দলাই লামা য়োন-তান-র্গ্যা-ম্ত্শোচতুর্থ পাঞ্চেন লামা ব্লো-ব্জাং-ছোস-ক্যি-র্গ্যাল-ম্ত্শানের নেতৃত্বাধীন দ্গে-লুগ্স বৌদ্ধধর্মসম্প্রদায়ের বিরোধী ছিলেন। ১৬১৪ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে তিনি গ্ত্সাং অঞ্চলের সমস্ত ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে এক সভায় আহ্বান করে কার্মা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের দশম র্গ্যাল-বা-কার্মা-পা ছোস-দ্ব্যিংস-র্দো-র্জেকে রাজ্যের ধর্মীয় শাসক হিসেবে মেনে নিতে তাদের বাধ্য করেন।[]:৩০ চতুর্থ দলাই লামা মৃত্যুবরণ করার পরে ১৬১৮ খ্রিষ্টাব্দে ছোখুর মঙ্গোলদের একটি দল দ্বুস অঞ্চলে তীর্থযাত্রায় এসে গ্ত্সাং-পা রাজবংশের অধীনস্থ এলাকায় লুঠপাট চালালে ফুন-ত্শোগ্স-র্নাম-র্গ্যাল দ্বুস অঞ্চলে আক্রমণ করে দ্গে-লুগ্স বৌদ্ধধর্মসম্প্রদায়ের বহু বৌদ্ধবিহারকে কার্মা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের বৌদ্ধবিহারে পরিণত করেন।[]:৩২৭,৩২৮ শেষ জীবনে চতুর্থ পাঞ্চেন লামা ব্লো-ব্জাং-ছোস-ক্যি-র্গ্যাল-ম্ত্শানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হলে ফুন-ত্শোগ্স-র্নাম-র্গ্যাল দলাই লামার পরবর্তী অবতার খোঁজার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন এবং ১৬১৯ খ্রিষ্টাব্দে পঞ্চম দলাই লামা হিসেবে ঙ্গাগ-দ্বাং-ব্লো-ব্জাং-র্গ্যা-ম্ত্শোকে চিহ্নিত করা হয়।[]:৩৩

ঙ্গাগ-দ্বাং-র্নাম-র্গ্যালের সঙ্গে সম্পর্ক

সম্পাদনা

১৫৯২ খ্রিষ্টাব্দে 'ব্রুগ-পা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মীয় গোষ্ঠীর চতুর্থ প্রধান বা র্গ্যাল-দ্বাং-'ব্রুগ-পা কুন-ম্খ্যেন-পে-মা-দ্কার-পোর মৃত্যু হলে ছোংয়ে অঞ্চলের রাজপুত্রের পুত্র দ্পাগ-ব্সাম-দ্বাং-পো এবং রালুং বৌদ্ধবিহারের অষ্টাদশ প্রধান ঙ্গাগ-দ্বাং-র্নাম-র্গ্যালের মধ্যে কে পরবর্তী অবতার সেই নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। এই দ্বন্দ্বে তিব্বতের তৎকালীন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অধিকাংশ জড়িয়ে পড়েন। একদিকে যেমন কুন-ম্খ্যেন-পে-মা-দ্কার-পোর ঘনিষ্ঠ বৌদ্ধভিক্ষু ল্হা-র্ত্সে-বা-ঙ্গাগ-দ্বাং-ব্জাং-পো (ওয়াইলি: lha rtse ba ngag dbang bzang po) এবং দ্রুক সাঙ্গাগ ছোলিং বৌদ্ধবিহারের ভিক্ষুরা দ্পাগ-ব্সাম-দ্বাং-পোকে সমর্থন করেন, অন্যদিকে র্গ্যা পরিবারগোষ্ঠীর রালুং বৌদ্ধবিহারের ভিক্ষুরা ঙ্গাগ-দ্বাং-র্নাম-র্গ্যালকে পরবর্তী র্গ্যাল-দ্বাং-'ব্রুগ-পা হিসেবে নির্বাচন করেন। এই বিতর্ক নতুন মাত্রা নেয় যখন ফুন-ত্শোগ্স-র্নাম-র্গ্যাল দ্পাগ-ব্সাম-দ্বাং-পোকে সমর্থন করেন। এই ঘটনায় কার্মা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের সঙ্গে ঙ্গাগ-দ্বাং-র্নাম-র্গ্যালের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়, 'ব্রুগ-পা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মীয় গোষ্ঠী উত্তর ও দক্ষিণ এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং ১৬১৬ খ্রিষ্টাব্দে ঙ্গাগ-দ্বাং-র্নাম-র্গ্যাল হিমালয়ের দক্ষিণে এক নতুন রাজ্যের স্থাপন করেন, যা বর্তমানে ভুটান নামে পরিচিত। কিছুদিন পরে গ্ত্সাং-পা রাজবংশ ঙ্গাগ-দ্বাং-র্নাম-র্গ্যালের বিরুদ্ধে এক সৈন্যবাহিনী পাঠান কিন্তু তারা পরাজিত হন।[][][১০][১১]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Tsepon W.D. Shakabpa, One Hundred Thousand Moons, Leiden 2010.
  2. Giuseppe Tucci, Tibetan Painted Scrolls, Rome 1949
  3. Michael Aris, Bhutan. The Early History of a Himalayan Kingdom, Warminster 1979, p. 208.
  4. Hugh E. Richardson, Tibet and its History, Boston & London 1984, Appendix, chronological table, p. 307.
  5. Tsepon W.D. Shakabpa, Tibet. A Political History, Yale 1967, pp. 90, 98.
  6. Karl-Heinz Everding & Dawa Dargyay Dzongphugpa, Das tibetische Fürstentum La stod lHo (um 1265-1642), Wiesbaden 2006, p. 113.
  7. Ya Hanzhang, Biographies of the Tibetan Spiritual Leaders Panchen Erdenis, Beijing 1994
  8. Sangay Dorji (২০০৮)। The Biography of Shabdrung Ngawang Namgyal: Pal Drukpa Rinpoche। Sonam Kinga (translator)। Thimphu, Bhutan: KMT Publications। আইএসবিএন 99936-22-40-0 
  9. Yoshiro Imaeda (২০১৩)। The Successors of Zhabdung Ngawang Namgyel। Thimphu: Riyang Books। পৃষ্ঠা 8–10। আইএসবিএন 978-99936-899-3-5 
  10. Yonten Dargye (২০০১)। History of the Drukpa Kagyud School in Bhutan (12th to 17th Century A.D.)। Thimphu, Bhutan। পৃষ্ঠা 119–123। আইএসবিএন 99936-616-0-0 
  11. Karma Phuntsho (২০১৩)। The History of Bhutan। Nodia: Random House India। পৃষ্ঠা 213–217। আইএসবিএন 9788184003116 
পূর্বসূরী
ব্স্তান-স্রুং-দ্বাং-পো
ফুন-ত্শোগ্স-র্নাম-র্গ্যাল
পঞ্চম গ্ত্সাং-পা শাসক
উত্তরসূরী
স্তান-স্ক্যোং-দ্বাং-পো