ইন্দিরা গান্ধী

ভারতের তৃতীয় ও একমাত্র নারী প্রধানমন্ত্রী

ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী গান্ধী (হিন্দুস্তানি: [ˈɪnd̪ɪɾɑː ˈɡɑːnd̪ʰi] (শুনুন); বিবাহের পূর্বে: নেহেরু; ১৯ নভেম্বর, ১৯১৭ – ৩১ অক্টোবর, ১৯৮৪) ছিলেন একজন ভারতীয় রাজনীতিবিদ, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রাক্তন সভানেত্রী[২] এবং ভারতের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী। ইন্দিরা গান্ধীই হলেন একমাত্র মহিলা যিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। পারিবারিক পরিচয়ে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর কন্যা ইন্দিরা ১৯৬৬ সালের জানুয়ারি থেকে ১৯৭৭ সালের মার্চ এবং পুনরায় ১৯৮০ সালের জানুয়ারি থেকে ১৯৮৪ সালের অক্টোবরে নিহত হওয়ার দিন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন ছিলেন। তিনিই ভারতে দ্বিতীয় দীর্ঘতম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন (জওহরলাল নেহেরুর পরে)।[৩]

[[]]
ইন্দিরা গান্ধী
১৯৭৭ সালে ইন্দিরা গান্ধী
উত্তরসূরীরাজীব গান্ধী
কাজের মেয়াদ
২৪ জানুয়ারি, ১৯৬৬ – ২৪ মার্চ, ১৯৭৭
রাষ্ট্রপতিসর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন
জাকির হুসেইন
ভি. ভি. গিরি
ফকরুদ্দিন আলি আহমেদ
ডেপুটিমোরারজী দেসাই
পূর্বসূরীগুলজারিলাল নন্দা (অস্থায়ী)
উত্তরসূরীমোরারজী দেসাই
বিদেশমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
৯ মার্চ, ১৯৮৪ – ৩১ অক্টোবর, ১৯৮৪
পূর্বসূরীপি. ভি. নরসিংহ রাও
উত্তরসূরীরাজীব গান্ধী
কাজের মেয়াদ
২২ অগস্ট, ১৯৬৭ – ১৪ মার্চ, ১৯৬৯
পূর্বসূরীএম. সি. চাগলা
উত্তরসূরীদীনেশ সিং
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১৪ জানুয়ারি, ১৯৮০ – ১৫ জানুয়ারি, ১৯৮২
পূর্বসূরীচিদম্বরম সুব্রহ্মণ্যম
উত্তরসূরীআর. বেঙ্কটরমণ
কাজের মেয়াদ
৩০ নভেম্বর, ১৯৭৫ – ২০ ডিসেম্বর, ১৯৭৫
পূর্বসূরীস্বর্ণ সিং
উত্তরসূরীবংশী লাল
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
২৭ জুন, ১৯৭০ – ৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৩
পূর্বসূরীযশবন্তরাও চবন
উত্তরসূরীউমাশঙ্কর দীক্ষিত
অর্থমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১৭ জুলাই, ১৯৬৯ – ২৭ জুন, ১৯৭০
পূর্বসূরীমোরারজী দেসাই
উত্তরসূরীযশবন্তরাও চবন
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
৯ জুন, ১৯৬৪ – ২৪ জানুয়ারি, ১৯৬৬
প্রধানমন্ত্রীলাল বাহাদুর শাস্ত্রী
পূর্বসূরীসত্যনারায়ণ সিনহা
উত্তরসূরীকোদারদাস কালিদাস শাহ
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী নেহেরু
(১৯১৭-১১-১৯)১৯ নভেম্বর ১৯১৭
এলাহাবাদ, আগ্রা ও অবধের যুক্তপ্রদেশ, ব্রিটিশ ভারত
(অধুনা প্রয়াগরাজ, উত্তরপ্রদেশ, ভারত)
মৃত্যু৩১ অক্টোবর ১৯৮৪(1984-10-31) (বয়স ৬৬)
নতুন দিল্লি, ভারত
স্মারক স্থল
মৃত্যুর কারণনিহত (ব্যালিস্টিক ট্রমা)
রাজনৈতিক দলভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস
দাম্পত্য সঙ্গীফিরোজ গান্ধী (বি. ১৯৪২; মৃ. ১৯৬০)
সন্তানরাজীব গান্ধী
সঞ্জয় গান্ধী
পিতামাতাজওহরলাল নেহেরু (পিতা)
কমলা নেহেরু (মাতা)
আত্মীয়স্বজননেহেরু–গান্ধী পরিবার দেখুন
প্রাক্তন শিক্ষার্থীবিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় (পড়াশোনা অসম্পূর্ণ)[১]
সমারভিল কলেজ, অক্সফোর্ড (পড়াশোনা অসম্পূর্ণ)[১]
পুরস্কারভারতরত্ন (১৯৭১)
বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা (২০১১)
স্বাক্ষর
ডাকনামনিবন্ধ দেখুন

১৯৪৭ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত জওহরলাল নেহেরুর প্রধানমন্ত্রিত্বের সময়কালে ইন্দিরা গান্ধীকে তার প্রধান সহকারী মনে করা হত। তিনি নেহেরুর সঙ্গে বহুবার বিদেশ সফরেও যান।[৪] ১৯৫৯ সালে তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভানেত্রী নির্বাচিত হন। ১৯৬৪ সালে নেহেরুর মৃত্যুর পর তাঁকে ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার সদস্যপদ প্রদান করা হয় এবং তিনি লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর ক্যাবিনেটে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীর পদে শপথ গ্রহণ করেন।[৫] লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যুর পরে ১৯৬৬ সালের গোড়ার দিকে কংগ্রেসের সংসদীয় নেতা নির্বাচনে ইন্দিরা তার প্রতিদ্বন্দ্বী মোরারজী দেসাইকে পরাজিত করেন এবং ভারতের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইন্দিরা গান্ধী পরিচিত ছিলেন রাজনীতির ক্ষেত্রে তার আপোসহীন মনোভাব এবং ক্ষমতার অভূতপূর্ব কেন্দ্রীকরণের জন্য। পূর্ব পাকিস্তানে স্বাধীনতা আন্দোলনস্বাধীনতার যুদ্ধের সমর্থনে তিনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বাংলাদেশকে সহয়তা করেন। এই যুদ্ধে বাংলাদেশ জয়লাভ করে, সেই সঙ্গে ভারতের প্রভাব এতটাই বৃদ্ধি পায় যে এই দেশটি দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র আঞ্চলিক শক্তি হয়ে ওঠে। বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ ও বিপ্লবের প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন। এই সময় মৌলিক নাগরিক স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছিল। জরুরি অবস্থার সময় বহু স্থানে গণহত্যারও ঘটনা ঘটে।[৬] ১৯৮০ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি আবার ক্ষমতায় ফিরে আসেন। স্বর্ণমন্দিরে অপারেশন ব্লু স্টার সামরিক অভিযানের নির্দেশ দেওয়ার পরে ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর ইন্দিরা গান্ধী তার নিজের শিখ জাতীয়তাবাদী দেহরক্ষীদের গুলিতে নিহত হন।

১৯৯৯ সালে বিবিসি আয়োজিত একটি অনলাইন সমীক্ষায় ইন্দিরা গান্ধীকে ‘সহস্রাব্দের নারী’ আখ্যা প্রদান করা হয়।[৭] ২০২০ সালে ইন্দিরা গান্ধীকে টাইম পত্রিকা কর্তৃক বিগত শতাব্দীর সংজ্ঞা-নির্ধারণকারী ১০০ শক্তিশালী নারীর তালিকাভুক্ত করা হয়।[৮][৯]

প্রাথমিক জীবন ও কর্মজীবন সম্পাদনা

১৯১৭ সালের ১৯ নভেম্বর এলাহাবাদে এক কাশ্মীরী পণ্ডিত পরিবারে ইন্দিরা গান্ধীর জন্ম।[১০][১১] তার পিতা জওহরলাল নেহেরু ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক অগ্রণী ব্যক্তি , যিনি পরবর্তীকালে ভারতীয় অধিরাজ্য (ও পরে প্রজাতন্ত্রের) প্রথম প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।[১২] ইন্দিরা ছিলেন জওহরলালের একমাত্র সন্তান (ইন্দিরার একমাত্র ছোটো ভাই অত্যন্ত অল্প বয়সে মারা যায়)।[১৩] এলাহাবাদের বৃহৎ পারিবারিক এস্টেট আনন্দ ভবনে মা কমলা নেহেরুর সঙ্গে তার শৈশব অতিবাহিত হয়।[১৪] তার শৈশব ছিল একাকীত্বে ভরা ও নিরানন্দময়।[১৫] জওহরলাল রাজনৈতিক কর্মসূচির পরিচালনায় বাইরে থাকতেন অথবা কারারুদ্ধ থাকতেন, অন্যদিকে কমলা নেহেরুও প্রায়শই অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী অবস্থায় থাকতেন। পরবর্তীকালে তিনি যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে প্রয়াত হন।[১৬] পিতার সঙ্গে তার যোগাযোগ রক্ষিত হত প্রধানত চিঠিপত্রের মাধ্যমেই।[১৭]

 
১৯২৪ সালে অনশনরত মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে বালিকা ইন্দিরা। খাদিবস্ত্র-পরিহিত ইন্দিরাকে এখানে দেখা যায় মহাত্মা গান্ধী কর্তৃক ভারতীয়দের ব্রিটিশ-উৎপাদিত বস্ত্রের পরিবর্তে খাদি পরিধানের উপদেশ অনুসরণ করতে।

ইন্দিরা প্রধানত বাড়িতেই গৃহশিক্ষকদের নিকট শিক্ষালাভ করেছিলেন এবং ১৯৩৪ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পূর্বে মাঝে মাঝে বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তিনি পড়াশোনা করেন দিল্লির মডার্ন স্কুল, এলাহাবাদের সেন্ট সিসিলিয়া’জ ও সেন্ট মেরি’জ ক্রিস্টিয়ান কনভেন্ট স্কুল,[১৮] জেনেভার ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, বেক্সের একোল নউভেল এবং অধুনা মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত পুণাবোম্বাইয়ের পিউপিল’স অন স্কুলে।[১৯] তিনি ও তার মা কমলা নেহেরু কিছুকাল রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান কার্যালয় বেলুড় মঠে বাস করেন। সেখানে ইন্দিরার অভিভাবক ছিলেন স্বামী রঙ্গনাথানন্দ[২০] এছাড়া তিনি কিছুকাল শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীতেও পড়াশোনা করেছিলেন, যা ১৯৫১ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়।[২১] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে আলাপচারিতার সময় রবীন্দ্রনাথই তার নাম ‘প্রিয়দর্শনী’ (সংস্কৃত ভাষায় যার অর্থ ‘যিনি দয়াপূর্ণ দৃষ্টিতে সব কিছু দেখেন’) রাখেন এবং ইন্দিরা পরিচিত হন ‘ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী নেহেরু’ নামে।[২২] যদিও এক বছর পরেই ইন্দিরাকে শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখে ইউরোপে তার মুমূর্ষু মায়ের পরিচর্যা করতে যেতে হয়।[২৩] সেখানে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে ইন্দিরা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাবেন।[২৪][২১] মায়ের মৃত্যুর পর ইন্দিরা অল্পকাল ব্যাডমিন্টন স্কুলে পড়াশোনা করেন, তারপর ১৯৩৭ সালে ইতিহাস অধ্যয়নের জন্য সমারভিল কলেজে ভর্তি হন।[২৫] ইন্দিরাকে দুই বার প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে হয়েছিল। কারণ প্রথম পরীক্ষায় লাতিনে তার ফল খারাপ হয়েছিল।[২৫] অক্সফোর্ডে তিনি ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতিতে ফল ভালো করলেও আবশ্যিক বিষয় লাতিনে তার গ্রেড কমই থাকে।[২৬][২৭] যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জীবনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করতেন, যেমন তিনি অক্সফোর্ড মজলিস এশিয়ান সোসাইটির সদস্যপদ গ্রহণ করেছিলেন।[২৮]

 
ইন্দিরা নেহেরু, আনুমানিক ১৯৩০-এর দশকের গোড়ার দিকে

ইউরোপে অবস্থানের সময় ইন্দিরার স্বাস্থ্যভঙ্গ হয়েছিল। সেই সময় তাঁকে ঘন ঘন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হত। স্বাস্থ্যোদ্ধারের জন্য তাঁকে বারবার সুইজারল্যান্ড যেতে হয়। যার ফলে তার পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটে। ১৯৪০ সালে জার্মানি যখন দ্রুত গতিতে ইউরোপ দখল করতে শুরু করে তখন ইন্দিরা সুইজারল্যান্ডেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি পর্তুগালের পথ ধরে ইংল্যান্ডে প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রায় দুই মাস আটকে থাকেন। অবশেষে ১৯৪১ সালের গোড়ার দিকে তিনি ইংল্যান্ডে প্রবেশ করতে সক্ষম হন এবং তারপর অক্সফোর্ডে পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখেই ভারতে ফিরে আসেন। পরবর্তীকালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে একটি সাম্মানিক ডিগ্রি প্রদান করেছিল। ২০১০ সালে অক্সফোর্ড তাঁকে আরও সম্মানিত করে দশ জন অক্সেশিয়ানের (অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকারী বিশিষ্ট এশীয়) তালিকাভুক্ত করে।[১][২৯] ব্রিটেনে থাকাকালীন ইন্দিরার সঙ্গে তার ভাবী স্বামী ফিরোজ গান্ধীর প্রায়শই দেখা হত। ফিরোজকে ইন্দিরা এলাহাবাদ থেকেই চিনতেন। সেই সময় ফিরোজ লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিকসে পাঠরত ছিলেন। এলাহাবাদে দুই জনে ব্রাহ্ম মতে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হয়েছিলেন। যদিও ফিরোজ ছিলেন গুজরাতের এক জরথুস্ট্রবাদী পার্সি পরিবারের সন্তান।[৩০] ফিরোজ ও ইন্দিরা গান্ধীর দুই পুত্রের জন্ম হয়: রাজীব গান্ধী (জন্ম: ১৯৪৪) ও সঞ্জয় গান্ধী (জন্ম: ১৯৪৬)।[৩১][৩২]

১৯৫০-এর দশকে ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কার্যভার সম্পাদনারত পিতার অঘোষিত ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করেন।[৩৩] ১৯৫০-এর দশকের শেষভাগে ইন্দিরা ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভানেত্রী নির্বাচিত হন। সেই সূত্রে ১৯৫৯ সালে কেরলের কমিউনিস্ট নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারকে বরখাস্ত করায় তিনি প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। এই সরকার ছিল ভারতের প্রথম নির্বাচিত কমিউনিস্ট সরকার।[৩৪] ১৯৬৪ সালে জওহরলাল নেহেরুর মৃত্যুর পরে তাঁকে রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে নিয়োগ করা হয় এবং তিনি প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর ক্যাবিনেটে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।[৩৫] ১৯৬৬ সালের জানুয়ারি মাসে কংগ্রেস পরিষদীয় দলের নেতা নির্বাচনে তিনি মোরারজী দেসাইকে পরাজিত করে প্রধানমন্ত্রী হন। প্রবীণ কংগ্রেস নেতা কে. কামরাজ ছিলেন তার জয়ের প্রধান রূপকার।[৩৬] অন্যান্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মনে করেছিলেন, ইন্দিরা গান্ধী একজন দুর্বল নারী মাত্র এবং তাঁকে নির্বাচিত করলে তাঁকে ক্রীড়ানক করে রাখা যাবে:

কংগ্রেস সভাপতি কামরাজ প্রধানমন্ত্রী পদে শ্রীমতী গান্ধীর নির্বাচনকে মসৃণ করে দিয়েছিলেন, কারণ তিনি ভেবেছিলেন যে শ্রীমতী গান্ধী একাধারে এতটাই দুর্বল যে তাঁকে কামরাজ ও অন্যান্য আঞ্চলিক দলীয় নেতারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন, এবং সেই সঙ্গে শ্রীমতী গান্ধীর পিতা অত্যন্ত সম্মানীয় ব্যক্তি হওয়ায় তিনি এতটাই শক্তিশালী যে [তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী] দেসাইকে পরাজিত করতে পারবেন ... সিন্ডিকেটের কাছে এক নারী ছিলেন আদর্শ যন্ত্র।[৩৭]

প্রধানমন্ত্রী রূপে প্রথম শাসনকাল (১৯৬৬-১৯৭৭) সম্পাদনা

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইন্দিরা গান্ধীর প্রথম এগারো বছরের শাসনকালে দেখা যায় কীভাবে তিনি কংগ্রেস নেতাদের ধারণায় তাঁদের ক্রীড়ানক থেকে এক শক্তিশালী নেত্রীতে উন্নীত হয়েছিলেন। তার নীতিগত অবস্থানের জন্য কংগ্রেস বিভক্ত হয়। তাছাড়া পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে তিনি জয়ী হন এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৭ সালের শেষে তিনি ভারতীয় রাজনীতিতে এমন এক প্রাধান্যবিস্তারকারী নেত্রী হয়ে উঠেছিলেন যে কংগ্রেস সভাপতি ডি. কে. বড়ুয়া “ইন্দিরাই ভারত ও ভারতই ইন্দিরা” কথাটির প্রবর্তন ঘটান।[৩৮]

প্রথম বর্ষ সম্পাদনা

ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন প্রথম সরকারে মোরারজী দেসাই ছিলেন উপপ্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইন্দিরা গান্ধীর প্রথম শাসনকালে গণমাধ্যম ও বিরোধী দল তাঁকে প্রায়শই যে কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ তাঁকে নির্বাচিত করেছিল এবং পরবর্তীকালে তার কণ্ঠরোধ করে রেখেছিলেন তাঁদের ‘গুঙ্গি গুড়িয়া’ (হিন্দিতে যার অর্থ ‘নির্বাক পুতুল’ বা ‘ক্রীড়ানক’) বলে সমালোচনা করত।[৩৯][৪০]

১৯৬৭–১৯৭১ সম্পাদনা

 
অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী জন গর্টনের সঙ্গে ইন্দিরা গান্ধী, ১৯৬৮

প্রধানমন্ত্রিত্ব অর্জনের পর লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভাগুলিতে ইন্দিরা গান্ধীর প্রথম নির্বাচনী পরীক্ষাটি ছিল ১৯৬৭ সালের সাধারণ নির্বাচন। এই নির্বাচনে কংগ্রেস লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও দলটির আসনসংখ্যা পূর্বের তুলনায় হ্রাস পায়। কারণ, এই সময় সারা দেশে দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও একটি খাদ্যসংকটের কারণে দেশ জুড়ে সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। ইন্দিরা নিজে রায়বরেলি লোকসভা কেন্দ্র থেকে সংসদে নির্বাচিত হন। মেয়াদের গোড়ার দিকেই টাকার মূল্যহ্রাসের সিদ্ধান্তে সম্মতি দিয়ে তিনি ভারতে ব্যবসায়ী ও উপভোক্তা উভয় পক্ষকেই সমস্যায় ফেলে দেন। রাজনৈতিক বিতর্কের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানিও ব্যর্থ হয়।[৪১]

স্বাধীনতার পর এই প্রথম কংগ্রেস সারা দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্য ক্ষমতা অথবা সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়। ১৯৬৭ সালের নির্বাচনের পরে ইন্দিরা গান্ধী ধীরে ধীরে সমাজতান্ত্রিক নীতির দিকে ঝুঁকে পড়েন। ১৯৬৯ সালে বেশ কয়েকটি বিষয়কে কেন্দ্র করে তিনি প্রবীণ কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। এই বিষয়গুলির মধ্যে প্রধান ছিল ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে কংগ্রেস প্রার্থী নীলম সঞ্জীব রেড্ডিকে সমর্থনের পরিবর্তে নির্দল প্রার্থী ভি. ভি. গিরিকে সমর্থন। অপর একটি বিষয় ছিল অর্থমন্ত্রী মোরারজী দেসাইয়ের সঙ্গে পরামর্শ না করেই প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ব্যাংক জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তগুলি গ্রহণের জন্য কংগ্রেস সভাপতি এস. নিজলিঙ্গাপ্পা শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে ইন্দিরা গান্ধীকে কংগ্রেস থেকে বহিষ্কার করেন।[৪২][৪৩][৪৪] ইন্দিরাও অপর দিকে তার অনুগত কংগ্রেস নেতাদের নিয়ে নিজস্ব কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন এবং অধিকাংশ কংগ্রেস সাংসদকে তার দিকে ধরে রাখতে সক্ষম হন। ইন্দিরা গান্ধীর কংগ্রেস গোষ্ঠীটি পরিচিত হয় কংগ্রেস (আর) নামে। তার বিরুদ্ধে কংগ্রেস (সংগঠন) গোষ্ঠীর পক্ষে মাত্র ৬৫ জন সাংসদ থাকলেও ইন্দিরা সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারান। তবে দ্রাবিড় মুন্নেত্র কড়গম (ডিএমকে) প্রভৃতি আঞ্চলিক দলের সমর্থনে তিনি ক্ষমতা ধরে রাখতেও সক্ষম হন।[৪৫] ১৯৭১ সালের নির্বাচনের পূর্বে ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস যে প্রধান নীতিগুলি গ্রহণ করেছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল দেশীয় রাজ্যগুলির প্রাক্তন রাজাদের রাজন্য ভাতার বিলোপ সাধন এবং ১৯৬৯ সালে ভারতের চোদ্দটি বৃহত্তম ব্যাংকের জাতীয়করণ।[৪৬]

১৯৭১–১৯৭৭ সম্পাদনা

১৯৭১ সালের সাধারণ নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধীর রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ছিল ‘গরিবি হটাও’ (দারিদ্র্য দূর করো)। বিরোধীদের সম্মিলিত জোটের দুই শব্দের ইস্তাহার ‘ইন্দিরা হটাও’-এর (ইন্দিরাকে অপসারিত করো) প্রতিক্রিয়ায় এই শ্লোগানটি প্রচার করা হয়।[৪৭][৪৮][৪৯] এই ‘গরিবি হটাও’ শ্লোগান এবং এই শ্লোগানের অনুষঙ্গে প্রস্তাবিত দারিদ্র দূরীকরণ কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলীয় দরিদ্র জনসাধারণের মধ্যে থেকে ইন্দিরা গান্ধীর জন্য স্বাধীনভাবে জাতীয় সমর্থন অর্জন। এই কর্মসূচি তাঁকে প্রভাবশালী গ্রামীণ জাতিভেদ প্রথা, রাজ্য ও স্থানীয় সরকার এবং সেই সঙ্গে শহরাঞ্চলীয় বণিক শ্রেণির থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতে সাহায্য করেছিল। এই শ্লোগানের ফলে ইতিপূর্বে অবহেলিত দরিদ্র সমাজ রাজনৈতিক গুরুত্ব অর্জনে সক্ষম হয়।[৪৯] দারিদ্র্য দূরীকরণের কর্মসূচিগুলি স্থানীয়ভাবে সম্পাদিত হলেও এগুলির জন্য অর্থসাহায্য ও এগুলিকে পরিচালনা করত কেন্দ্রীয় সরকার। কর্মসূচিগুলি তত্ত্বাবধান ও এগুলিকে কর্মী সরবরাহ করত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। নীলকণ্ঠ রথের মতে, টএই কর্মসূচিগুলি কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক নেতৃবর্গকে নতুন ও বৃহৎ পৃষ্ঠপোষকের জোগান দেয় এবং সারা দেশ জুড়ে সম্পদ বণ্টিত হয়।[৫০]

১৯৭১ সালের নির্বাচনের পর সেই বছরই ডিসেম্বর মাসে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে ভারতের চূড়ান্ত বিজয় ছিল ইন্দিরা গান্ধীর সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য কীর্তি। এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ দুই সপ্তাহে এবং এই যুদ্ধের পরই স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠিত হয়। কথিত আছে, সেই সময় বিরোধী দলনেতা অটল বিহারী বাজপেয়ী তাঁকে দেবী দুর্গার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন।[৫১][৫২][৫৩][৫৪][note ১] ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে সারা দেশ জুড়ে বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে কংগ্রেস (আর) অধিকাংশ রাজ্যেই যুদ্ধোত্তরকালীন ‘ইন্দিরা ঝড়ে’র ভিত্তিতে ক্ষমতা দখলে সক্ষম হয়।[৫৬]

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয়লাভ সত্ত্বেও কংগ্রেস সরকার এই মেয়াদে অসংখ্য সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। যুদ্ধকালীন ব্যায়, দেশের কিছু অঞ্চলে খরা, এবং অধিকতর গুরুত্বপূর্ণভাবে ১৯৭৩-এর তৈল সংকটের ফলে উদ্ভূত অত্যধিক মূদ্রাস্ফীতি ছিল এই সকল সমস্যার কয়েকটির কারণ। ১৯৭৩-৭৫ সাল নাগাদ ‘ইন্দিরা ঢেউ’ স্তিমিত হয়ে পড়লে বিহারগুজরাত রাজ্যে বিরোধী দল সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। সংসদের প্রবীণ নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণ বিহারে প্রতিবাদ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।[৫৬]

নির্বাচনকালীন অসদাচরণ-সংক্রান্ত রায় সম্পাদনা

 
মার্কিন রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সনের সঙ্গে ইন্দিরা গান্ধী, ১৯৭১

১৯৭৫ সালের ১২ জুন এলাহাবাদ হাইকোর্ট ১৯৭১ সালে ইন্দিরা গান্ধীর লোকসভায় নির্বাচনটিকে নির্বাচনকালীন অসদাচরণের প্রেক্ষিতে বাতিল বলে রায় দেয়। ১৯৭১ সালে তার বিরোধী প্রার্থী রাজ নারায়ণ (যিনি ১৯৭৭ সালে রায়বরেলি লোকসভা কেন্দ্র থেকে সংসদীয় নির্বাচনে তাঁকে পরাজিত করেন) একটি নির্বাচনী পিটিশন দাখিল করেন। তিনি ইন্দিরা গান্ধী কর্তৃক নির্বাচনী প্রচারের সময় সরকারি সম্পদ ব্যবহারের বেশ কয়েকটি প্রধান ও কয়েকটি অপ্রধান ঘটনার অভিযোগ উত্থাপন করেন।[৫৭][৫৮] ইন্দিরা গান্ধী সরকারে তার সহকর্মী অশোক কুমার সেনকে তার হয়ে মামলা লড়তে অনুরোধ করেন।[৫৯] বিচার চলাকালীন ইন্দিরা আত্মপক্ষ সমর্থনে প্রমাণও দাখিল করেন। প্রায় চার বছর পরে আদালত ইন্দিরাকে নির্বাচনী অসদাচরণ, মাত্রাতিরিক্ত নির্বাচনী ব্যয় এবং প্রশাসন-যন্ত্র ও সরকারি আধিকারিকদের দলীয় উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে।[৫৭][৬০] যদিও বিচারক ইন্দিরার বিরুদ্ধে আনীত ঘুষ দেওয়ার অধিকতর গুরুতর অভিযোগটিকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।[৫৭]

আদালত ইন্দিরার নির্বাচনী আসনটি কেড়ে নেয় এবং পরবর্তী ছয় বছরের জন্য তাঁকে সরকারি পদে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সংবিধান মোতাবেক, যেহেতু প্রধানমন্ত্রীকে ভারতীয় সংসদের দুই কক্ষ লোকসভা বা রাজ্যসভা কোনও একটির সদস্য হতে হয়, সেই হেতু তিনি কার্যকরভাবে পদ হতে অপসারিত হন। যদিও ইন্দিরা পদত্যাগ করতে অস্বীকার করেন। তিনি সুপ্রিম কোর্টে আপিলের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন এবং বলেন যে এই দোষীসাব্যস্তকরণের দলে তার অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়েনি। তিনি বলেন: “আমাদের সরকার স্বচ্ছ নয় বলে অনেক কথা উঠেছে, কিন্তু আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারছি [বিরোধী] দলগুলি যখন সরকার গঠন করছিল, তখন পরিস্থিতি আরও অনেক খারাপ ছিল।”[৫৭] কংগ্রেস যেভাবে নির্বাচনী প্রচারের খরচ তুলেছে তার বিরুদ্ধে সমালোচনাকে উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন যে, সব দলই একই পদ্ধতি অবলম্বন করে। কংগ্রেসও একটি বিবৃতি প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীকেই সমর্থন জানায়।

আদালতের রায়ের খবর ছড়িয়ে পড়লে শতাধিক সমর্থক ইন্দিরা গান্ধীর বাসভবনের সামনে সমবেত হয়ে নিজেদের আনুগত্য ব্যক্ত করতে থাকে। যুক্তরাজ্যে ভারতীয় হাই কমিশনার ব্রজ কুমার নেহেরু বলেন যে, দোষীসাব্যস্ত হলেও ইন্দিরা গান্ধীর রাজনৈতিক কর্মজীবন ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি। তিনি বলেছিলেন: “শ্রীমতী গান্ধী আজও দেশে প্রবল সমর্থন ধরে রেখেছেন। আমি বিশ্বাস করি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ততদিন ক্ষমতায় আসীন থাকবেন যতদিন না ভারতীয় নির্বাচকেরা অন্যপ্রকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।”[৬১]

জরুরি অবস্থা (১৯৭৫–১৯৭৭) সম্পাদনা

আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ বিরোধী নেতাকে গ্রেফতারের আদেশ দিয়ে ইন্দিরা গান্ধী আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর তার ক্যাবিনেট ও সরকার রাষ্ট্রপতি ফকরুদ্দিন আলি আহমেদকে এলাহাবাদ হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের ফলে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা ও আইনশৃঙ্খলার অবনতির প্রেক্ষিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য সুপারিশ জানায়। সেই অনুসারে, ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন সংবিধানের ৩৫২(১) ধারা অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলার অবনতির জন্য রাষ্ট্রপতি আহমেদ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন।[৬২]

অধ্যাদেশের শাসন সম্পাদনা

কয়েক মাসের মধ্যে বিরোধী রাজনৈতিক দল শাসিত গুজরাত ও তামিলনাড়ু রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয় এবং এর ফলে সমগ্র দেশই প্রত্যক্ষভাবে কেন্দ্রীয় শাসনাধীনে অথবা শাসক কংগ্রেস পরিচালিত সরকারের অধীনে আসে।[৬৩] পুলিশকে কার্ফ্যু জারি ও নাগরিকদের অনির্দিষ্টকালের জন্য আটক করার অধিকার দেওয়া হয়; সকল প্রকাশনাকেই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের সুদৃঢ় সেন্সরশিপের অধীনে আনা হয়। শেষ পর্যন্ত আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনগুলিকেও অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়। রাজ্যের রাজ্যপালের সুপারিশক্রমে রাজ্য সরকারকে বরখাস্ত করার যে সাংবিধানিক ধারা রয়েছে, তার বলে সকল বিরোধী-শাসিত রাজ্য সরকারগুলিকে বরখাস্ত করা হয়।[৬৪]

জরুরি অবস্থাটিকে ব্যবহার করে ইন্দিরা গান্ধী সকল বিরুদ্ধ মনোভাবাপন্ন দলীয় সদস্যদেরও অপসারিত করেন:

তার পিতা জওহরলাল নেহেরু চাইতেন শক্তিশালী মুখ্যমন্ত্রীরা নিজ নিজ পরিষদীয় দল এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্যের দলীয় সংগঠন পরিচালনা করুন, কিন্তু শ্রীমতী গান্ধী স্বাধীনচেতা সকল কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রীকে অপসারিত করে পরিবর্তে ব্যক্তিগতভাবে তার অনুগত মন্ত্রীদের সেই পদে বসান… তবুও রাজ্যগুলিতে সুস্থিরতা বজায় রাখা সম্ভব হয়নি…[৬৫]

রাষ্ট্রপতি আহমেদ যে অধ্যাদেশগুলি জারি করেছিলেন সেগুলির জন্য সংসদে বিতর্কের প্রয়োজন হত না। এর ফলে ইন্দিরা গান্ধী অধ্যাদেশ কর্তৃক দেশ শাসনের সুযোগ পেয়ে যান।[৬৬]

সঞ্জয় গান্ধীর উত্থান সম্পাদনা

জরুরি অবস্থার সময়ই ইন্দিরা গান্ধীর কনিষ্ঠ পুত্র সঞ্জয় গান্ধী ভারতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। কোনও সরকারি পদে আসীন না হয়েও তিনি প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী হয়েছিলেন। মার্ক টুলির মতে, “তার অনভিজ্ঞতা তাকে তার মা ইন্দিরা গান্ধীর অতিশয় কঠোর ও নির্মম ক্ষমতাগুলি ব্যবহার করা থেকে বিরত করতে পারেনি। এই ক্ষমতাগুলি ইন্দিরা ব্যবহার করতে প্রশাসনকে আতঙ্কিত করে তোলার জন্য এবং তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কার্যত যা একটি পুলিশ-শাসিত রাষ্ট্র।”[৬৭]

কথিত আছে যে, জরুরি অবস্থার সময় প্রকৃত প্রস্তাবে সঞ্জয় গান্ধী নিজের বন্ধুদের (বিশেষত বংশী লাল) সঙ্গে ভারতকে পরিচালনা করেছিলেন।[৬৮] এমন কথাও বলা হয় যে, ইন্দিরা গান্ধীর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল সঞ্জয় গান্ধীর হাতে এবং সরকারও সেই সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয়ের পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে চলত।[৬৯][৭০][৭১]

১৯৭৭ সালের সাধারণ নির্বাচন সম্পাদনা

জরুরি অবস্থার মেয়াদ দুই বার বৃদ্ধি করার পর ১৯৭৭ সালে ইন্দিরা গান্ধী নির্বাচকদের নিজের শাসনের যথার্থতা প্রতিপাদনের সুযোগ দেওয়ার জন্য সাধারণ নির্বাচনের কথা ঘোষণা করেন। সম্ভবত অত্যধিক সেন্সরকৃত গণমাধ্যমের লেখা পড়ে নিজের জনপ্রিয়তা সম্পর্কে তার ভুল ধারণা জন্মেছিল।[৭২] এই নির্বাচনে বিরোধী দলগুলির জনতা জোট ছিল তার প্রধান প্রতিপক্ষ। এই জোট গঠিত হয়েছিল ভারতীয় জন সংঘ, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (সংগঠন), সমাজতান্ত্রিক দলসমূহ ও উত্তর ভারতের কৃষকদের প্রতিনিধিত্বকারী চরণ সিং-এর ভারতীয় ক্রান্তি দল নিয়ে। জয়প্রকাশ নারায়ণ ছিলেন জনতা জোটের পথপ্রদর্শক। এই জোট দাবি করেছিল যে, ১৯৭৭ সালের সাধারণ নির্বাচনই ভারতের কাছে “গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্র”-এর মধ্যে যে কোনও একটিকে বেছে নেওয়ার শেষ সুযোগ। এই নির্বাচনের প্রচার চলাকালীন কংগ্রেসও বিভাজিত হয়ে গিয়েছিল: জগজীবন রাম, হেমবতী মণ্ডন বহুগুণানন্দিনী শতপথী বাধ্য হয়েছিলেন দলত্যাগ করে কংগ্রস ফর ডেমোক্রেসি নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে। এর কারণ ছিল প্রধানত দলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং সঞ্জয় গান্ধী কর্তৃক সৃষ্ট পরিস্থিতি। গুজব রটে গিয়েছিল যে সঞ্জয় গান্ধী ইন্দিরা গান্ধীকে উৎখাত করতে চান। সেই গুজব শুনে উক্ত তিন নেতা তা প্রতিরোধ করতে এগিয়ে আসেন। ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের নির্বাচনী ফল খুবই খারাপ হয়। জনতা পার্টির গণতন্ত্র অথবা একনায়কতন্ত্রের দাবি জনসাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছিল বলেই মনে করা হয়। ইন্দিরা গান্ধী ও সঞ্জয় গান্ধী উভয়েই নিজ নিজ কেন্দ্র থেকে পরাজিত হন এবং কংগ্রেসের আসন সংখ্যা কমে হয় ১৫৩ (উল্লেখ্য,পূর্ববর্তী লোকসভায় কংগ্রেসের বিজিত আসন সংখ্যা ছিল ৩৫০), যার মধ্যে ৯২টি আসনই ছিল দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে। জরুরি অবস্থা ওঠার পর মোরারজী দেসাইয়ের নেতৃত্বে জনতা জোট সরকারে আসে। গান্ধীবাদী নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণের নির্দেশনায় শরিক দলগুলি একত্রীভূত হয়ে জনতা পার্টি গঠিত হয়। সেই সময় জনতা পার্টির অন্যান্য নেতারা ছিলেন চরণ সিং, রাজ নারায়ণ, জর্জ ফার্নান্ডেজ ও অটল বিহারী বাজপেয়ী।[৭৩]

বিরোধী নেত্রী রূপে এবং ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন সম্পাদনা

 
সোভিয়েত স্মারক ডাকটিকিট, ১৯৮৪

ইন্দিরা গান্ধী ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচনে পরাজিত হওয়ায় কংগ্রেস যশবন্তরাও চবনকে লোকসভায় পরিষদীয় দলনেতা নিযুক্ত করে। অনতিবিলম্বেই কংগ্রেস আবার বিভাজিত হয় এবং ইন্দিরা কংগ্রেসের নিজস্ব দল প্রতিষ্ঠা করেন। চিকমাগালুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে উপনির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেন এবং ১৯৭৮ সালের নভেম্বর মাসে লোকসভায় পুনরায় শপথ গ্রহণ করেন।[৭৪][৭৫] জনতা পার্টি কন্নড় ম্যাটিনি আইডল রাজকুমারকে তার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে রাজি করানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু রাজকুমার সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে জানিয়েছিলেন যে তিনি অরাজনৈতিক ব্যক্তিই থাকতে চান।[৭৬] যদিও জনতা সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী চরণ সিং একাধিক অভিযোগে ইন্দিরা গান্ধী ও সঞ্জয় গান্ধীকে গ্রেফতার করার আদেশ দিয়েছিলেন। এই অভিযোগগুলি ভারতীয় আদালতে প্রমাণ করা সহজ ছিল না। তবে এই গ্রেফতারের ফলে ইন্দিরা গান্ধীকে সংসদ থেকে বহিষ্কৃত করার সুযোগ পাওয়া যায়। অভিযোগগুলির একটি ছিল, ইন্দিরা “জরুরি অবস্থার সময় কারাগারে সকল বিরোধী নেতাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিলেন অথবা হত্যার কথা চিন্তা করেছিলেন”।[৭৭] যদিও এই কৌশলটি বিপজ্জনকভাবে সরকারকেই আঘাত করে। ইন্দিরা গান্ধীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে তার দুই সমর্থক ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসের একটি জেট ছিনতাই করে অবিলম্বে ইন্দিরাকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানাতে থাকে।[৭৮] গ্রেফতার ও তার দীর্ঘ বিচার ইন্দিরাকে অনেকের থেকে সহানুভূতি অর্জন করতে সাহায্য করে। জনতা জোটটি একজোট হয়েছিল শুধুমাত্র ইন্দিরার প্রতি ঘৃণা থেকে (যাঁকে তাঁদের কেউ কেউ “সেই মহিলা” বলে সম্বোধন করতেন)। এই দলের সদস্যেরা ছিলেন দক্ষিণপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদী, সমাজতন্ত্রী ও পূর্বতন কংগ্রেস সদস্যেরা। তাঁদের মধ্যে মতৈক্য খুব কম ক্ষেত্রে থাকায় অভ্যন্তরীণ বিবাদে মোরারজী দেসাইয়ের সরকার জেরবার হয়ে যায়। ১৯৭৯ সালে জনতা ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) কোনও কোনও সদস্যের দ্বৈত আনুগত্যের বিষয়ে সরকারে জটিলতা সৃষ্টি হয়। উল্লেখ্য আরএসএস একটি হিন্দু জাতীয়তাবাদী[৭৯][৮০] আধা-সামরিক[৮১] সংগঠন। উচ্চাকাঙ্ক্ষী কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী চরণ সিং (যিনি পূর্ববর্তী বছরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন এবং ইন্দিরা গান্ধীকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছিলেন) এই পরিস্থিতির সুযোগ গ্রহণ করে কংগ্রেসের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন। চরণ সিং-এর অনুগামীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ দলত্যাগ করার পর ১৯৭৯ সালের জুলাই মাসে মোরারজী দেসাই পদত্যাগ করেন। ইন্দিরা গান্ধী ও সঞ্জয় গান্ধী নির্দিষ্ট শর্তে চরণ সিংকে বাইরে থেকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর রাষ্ট্রপতি রেড্ডি চরণ সিংকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন।[৮২][৮৩] এই শর্তগুলির অন্যতম ছিল ইন্দিরা ও সঞ্জয়ের উপর থেকে সকল অভিযোগ প্রত্যাহার। চরণ সিং তা করতে অসম্মত হলে কংগ্রেস সমর্থন তুলে নেয় এবং ১৯৭৯ সালের অগস্ট মাসে রাষ্ট্রপতি রেড্ডি সংসদ ভেঙে দেন।

১৯৮০ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে ইন্দিরা গান্ধী জামা মসজিদের তৎকালীন শাহি ইমাম সৈয়দ আবদুল্লাহ্ বুখারির কাছে গিয়ে মুসলমান ভোট নিশ্চিত করতে দশ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে একটি চুক্তি করেন।[৮৪] জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কংগ্রেস বিপুল ভোটে জয়লাভ করে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করে।[৮৫]

১৯৮০ সালের সাধারণ নির্বাচন এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয় মেয়াদ সম্পাদনা

 
ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কির জাতীয় জাদুঘরের সিঁড়িতে ইন্দিরা গান্ধী, ১০ জুন, ১৯৮৩

১৯৮০ সালের জানুয়ারি মাসে ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস বিপুল ভোটে জয়লাভ করে ক্ষমতায় ফিরে আসে।[৮৬] এই নির্বাচনে মেদক লোকসভা কেন্দ্র থেকে সংসদে নির্বাচিত হয়।[৮৭] ২৩ জুন নতুন দিল্লিতে একটি এরোবেটিক ম্যানুভার প্রদর্শন করতে গিয়ে একটি বিমান দুর্ঘটনায় সঞ্জয় নিহত হন।[৮৮] ১৯৮০ সালে সঞ্জয় গান্ধীর স্বদেশে উৎপাদিত গাড়ি বাজারে আনার স্বপ্নের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ইন্দিরা গান্ধী সঞ্জয়ের দেনা-জর্জরিত সংস্থা মারুতি উদ্যোগকে ৪৩,০০০,০০০ টাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং সারা বিশ্বের অটোমোবাইল কোম্পানিগুলির কাছে যৌথ উদ্যোগের দরপত্র ঘোষণা করেন। জাপানের সুজুকিকে সহকারী হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। ১৯৮৪ সালে এই সংস্থা এটির প্রথম ভারতে উৎপাদিত গাড়ি বাজারজাত করে।[৮৯]

সঞ্জয় গান্ধীর মৃত্যুর সময় ইন্দিরা গান্ধী কেবলমাত্র পরিবারের সদস্যদেরই বিশ্বাস করতেন এবং সেই কারণে সঞ্জয়ের মৃত্যুর পরে তিনি রাজীব গান্ধীকে রাজনীতিতে যোগ দিতে রাজি করান। উল্লেখ্য, রাজীব রাজনীতিতে যোগ দিতে ইচ্ছুক ছিলেন না।[৩২][৯০]

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার কর্মচারীদের মধ্যে ছিলেন এইচ. ওয়াই. শারদা প্রসাদ। তিনি ছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর তথ্য উপদেষ্টা ও বক্তৃতালেখক।[৯১][৯২]

অপারেশন ব্লু স্টার সম্পাদনা

১৯৭৭ সালের নির্বাচনের পর শিখ-প্রধান অকালি দলের নেতৃত্বাধীন একটি জোট উত্তর ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যে ক্ষমতায় আসে। অকালি দলে ভাঙন ধরাতে ও শিখদের মধ্যে থেকে জনসমর্থন আদায় করতে ইন্দিরা গান্ধীর কংগ্রেস রক্ষণশীল ধর্মীয় নেতা জার্নাইল সিং ভিন্দ্রানওয়ালেকে পাঞ্জাবের রাজনীতিতে গুরুত্ব অর্জনে সহায়তা করে।[৯৩][৯৪] পরবর্তীকালে ভিন্দ্রানওয়ালের সংগঠন দমদমি টাকসাল সন্ত নিরংকরি মিশন নামে অপর এক ধর্মীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে হিংসাত্মক ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে এবং ভিন্দ্রানওয়ালের বিরুদ্ধে পাঞ্জাব কেশরী সংবাদপত্রের মালিক জগৎ নারায়ণকে হত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।[৯৫] এই অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ার পর ভিন্দ্রানওয়ালে নিজেকে কংগ্রেসের থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন ও অকালি দলে যোগ দেন।[৯৬] ১৯৮২ সালের জুলাই মাসে তিনি আনন্দপুর প্রস্তাব রূপায়নের দাবিতে প্রচার চালান। এই প্রস্তাবে শিখ-সংখ্যাগরিষ্ঠ পাঞ্জাবের জন্য বৃহত্তর স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবি জানানো হয়েছিল। আনন্দপুর প্রস্তাবের সমর্থকদের সরকারি আধিকারিক ও পুলিশ হেনস্থা শুরু করলে ভিন্দ্রানওয়েলের সমর্থকের একটি অংশ সহ শিখদের একটি ছোটো গোষ্ঠী উগ্রপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়ে।[৯৭] ১৯৮২ সালেই ভিন্দ্রানওয়ালে ও প্রায় ২০০ জন সশস্ত্র অনুগামী স্বর্ণমন্দিরের কাছে গুরু নানক নিবাস নামে একটি অতিথিশালায় একত্রিত হন।[৯৮]

১৯৮৩ সালের মধ্যেই স্বর্ণমন্দির চত্বর অনেক জঙ্গির কাছে একটি দুর্গে পরিণত হয়।[৯৯] দ্য স্টেটসম্যান পরবর্তীকালে জানিয়েছিল যে, মন্দির চত্বরে লাইট মেশিন গানসেমি-অটোমেটিক রাইফেল নিয়ে আসা হয়েছিল বলে জানা যায়।[১০০] ১৯৮৩ সালের ২৩ এপ্রিল পাঞ্জাব পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল এ. এস. অটওয়াল মন্দির চত্বর থেকে বের হওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। পরদিন শিরোমণি অকালি দলের তদনীন্তন সভাপতি হরচন্দ সিং লঙ্গোওয়াল এই হত্যাকাণ্ডে ভিন্দ্রানওয়ালের জড়িয়ে থাকার কথা সুনিশ্চিত করেন।[১০১]

বেশ কয়েকবার আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ১৯৮৪ সালের জুন মাসে ইন্দিরা গান্ধী ভারতীয় সেনাবাহিনীকে আদেশ করেন স্বর্ণমন্দিরে প্রবেশ করে চত্বর থেকে ভিন্দ্রানওয়ালে ও তার অনুগামীদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য। সেনাবাহিনী ট্যাংক সহ ভারী কামান ব্যবহার করে। এই অভিযানের কোড নাম দেওয়া হয়েছিল অপারেশন ব্লু স্টার। মন্দির চত্বরে অবস্থিত অকাল তখত বেদী ও শিখ গ্রন্থাগার সহ কিছু অংশ এই অপারেশনের ফলে অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ অথবা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। সেই সঙ্গে অনেক শিখ জঙ্গি ও নিরপরাধ তীর্থযাত্রীরও মৃত্যু ঘটে। হতাহতের সংখ্যা অনুমান করা হয় কয়েকশো থেকে কয়েক হাজারের মধ্যে।[১০২]

ইন্দিরার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কারণে এই অভিযানকে ব্যবহার করার অভিযোগ ওঠে। হরজিন্দর সিং লিলগির বলেছিলেন যে, ১৯৮৪ সালের শেষ দিকে অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভের জন্য নিজেকে এক মহান নায়িকা রূপে তুলে ধরতে ইন্দিরা স্বর্ণমন্দিরে সামরিক অভিযানের নির্দেশ দিয়েছিলেন।[১০৩] ভারতে ও বিদেশে শিখরা এই অভিযানের তীব্র নিন্দা করেন।[১০৪] ভারতীয় সামরিক বাহিনীতেই এই অভিযানের পর শিখ জওয়ানদের বিদ্রোহের কয়েকটি ঘটনা ঘটেছিল।[১০২]

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ বছর ভারত শাসন করেছেন ইন্দিরা গান্ধী৷ তুখোর রাজনীতিবিদ ইন্দিরা গান্ধী প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন ভারতে৷ ২৫ বছর পর ভারত তথা বিশ্বের রাজনৈতিক অঙ্গন স্মরণ করছে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে৷ ইন্দিরা গান্ধীর পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আর কোন নারী এখনো আসেননি৷ ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে ইন্দিরা সবুজ বিপ্লব, পাকিস্তান এর বিরুদ্ধে ও বাংলাদেশের পক্ষে যুদ্ধে জয়লাভ (১৯৭১),অভ্যন্তরীণ পুনর্গঠন,সুস্পষ্ট বিদেশনীতি নির্ধারণ এবং একাধিক প্রকল্পর রূপায়ণ করেন। তার পুত্র সঞ্জয় গান্ধী বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান এবং আরেক পুত্র রাজীব গান্ধী এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় মারা যান। দুই পুত্র বধূমানেকা গান্ধীসোনিয়া গান্ধী বেঁচে আছেন। ব্যক্তিগত জীবনে ইন্দিরা গান্ধী অত্যন্ত শৌখিন মানুষ ছিলেন।

ফিরোজ জাহাঙ্গীরের সঙ্গে বিয়ে সম্পাদনা

ইন্দিরা গান্ধী ফিরোজ জাহাঙ্গীরকে ভালবাসতেন। তিনি ছিলেন জরাথুস্ট্রবাদী, ইন্দিরা তার পিতাকে ফিরোজের ব্যাপারে জানালে তার পিতা জওহরলাল নেহরু ফিরোজকে ধর্ম বদলে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার অনুরোধ করেন, কিন্তু ফিরোজ ধর্ম পরিবর্তন করার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। তখন ইন্দিরা তার বাবাকে বোঝান, হিন্দুধর্ম ও জরাথুস্ট্রবাদের মূল উৎস একই, এই দুটো আসলে একই ধর্ম, প্রমাণ হিসেবে তিনি যুক্তি দেখান, জরাথুস্ট্রবাদের জেন্দ আবেস্তায় বর্ণিত প্রধান দেবতা আহুরা মাজদা আর ঋগ্বেদে বর্ণিত প্রধান দেবতা "অসুর মেধা" মূলত একই দেবতা। পরিস্থিতি বিবেচনায় মহাত্মা গান্ধী ফিরোজকে দত্তক সন্তান হিসেবে গ্রহণ করেন, ফলে ফিরোজের নাম হয় ফিরোজ গান্ধী, এরপর ইন্দিরার সঙ্গে তার বিয়ে হয়, এবং ইন্দিরার নাম হয় ইন্দিরা গান্ধী। এভাবে রক্ত সম্পর্কে নয়, বরঞ্চ রাজনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমে ইন্দিরা গান্ধী পরিবারের সদস্য হয়ে ওঠেন।[১০৫]

মৃত্যু সম্পাদনা

১৯৮৪ সালের জুন মাসে ইন্দিরা গান্ধীর আদেশে শিখদের পবিত্র ধর্মাশালা স্বর্ণ মন্দিরে ভারতীয় সেনা হানা দেয়৷ তার খেসারত ইন্দিরা গান্ধী দেন সে বছরই ৩১ অক্টোবর৷ তার নিজের দেহরক্ষীরাই তার জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেয়৷

বিদেশী সম্মাননা সম্পাদনা

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশের সরকার ইন্দিরা গান্ধীকে ২০১১ সালে ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা’ প্রদান করে। ২০১১ সালে ঢাকায় এক রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধীর পুত্রবধূ সোনিয়া গান্ধীর হাতে এই সম্মাননা পুরস্কার তুলে দেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি।[১০৬]

আরও দেখুন সম্পাদনা

সূত্রনির্দেশ সম্পাদনা

পাদটীকা সম্পাদনা

  1. Atal Bihari Vajpayee though categorically denied ever having said that when he made an appearance on Rajat Sharma's show Aap ki Adalat.[৫৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Rahul first in three generations with a world university degree"The Tribune। ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০১৫ 
  2. Ghose, Sagarika (১৮ নভেম্বর ২০১৭)। "19th November 2017: 100 years of Indira Gandhi. She was the mother of every Indian supremo"The Times of India। ২২ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১৯ 
  3. Tandon, P.D. (২১ মে ২০০১)। "The truth about Indira"Outlook India। ১২ জুন ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জুন ২০১৮ 
  4. "Indira Gandhi – India's democrat with an authoritarian bent"DW। ১৯ নভেম্বর ২০১৭। 
  5. "Smt. Indira Gandhi"Indian National Congress। ৭ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০২০ 
  6. "The darkest phase in Indira's tenure as PM – Emergency!"The Economic Times 
  7. "BBC Indira Gandhi 'greatest woman'"BBC News। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুলাই ২০১৭ 
  8. "Indira Gandhi, Amrit Kaur named by TIME among '100 Women of the Year'"The Economic Times। ৫ মার্চ ২০২০। 
  9. "1976: Indira Gandhi"Time। ৫ মার্চ ২০২০। 
  10. Frank 2010, পৃ. 13।
  11. Pupul Jayakar (২৭ নভেম্বর ১৯৯২)। Indira Gandhi: A BiographyPenguin Books India। পৃষ্ঠা 10। আইএসবিএন 978-0-14-011462-1 
  12. Gupte 2012, পৃ. 3।
  13. Frank 2010, পৃ. 31।
  14. Frank 2010, পৃ. 16।
  15. Frank 2010, পৃ. 25।
  16. Frank 2010, পৃ. 32।
  17. Frank 2010, পৃ. 55।
  18. Gupte, Pranay (২০১১)। Mother India : a political biography of Indira Gandhi / Pranay Gupte. (Rev. সংস্করণ)। New York: Penguin Books। পৃষ্ঠা 151–152। আইএসবিএন 978-0-14-306826-6। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০১৬ 
  19. Frank 2010, পৃ. 29,75,83।
  20. Indira Gandhi: Daughter of India 2002, পৃ. 42,43,45।
  21. "Overview of Indira Gandhi"Encyclopædia Britannica। ২ জুলাই ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ নভেম্বর ২০১৯ 
  22. Frank 2010, পৃ. 90।
  23. Gupte 2012, পৃ. 170।
  24. Gupte 2012, পৃ. 181।
  25. Frank 2010, পৃ. 116।
  26. Somervill 2007, পৃ. 36।
  27. Gupte 2012, পৃ. 184।
  28. "Majlis Asian Society"oxfordmajilis.wix। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ এপ্রিল ২০২০ 
  29. "Exhibit celebrates 120 years of South Asians at Oxford"University of Oxford। ২২ এপ্রিল ২০১০। ২ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ডিসেম্বর ২০১২ 
  30. "Sonia assures help for father-in-law's grave"archive.indianexpress.com। ২১ নভেম্বর ২০০৫। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুলাই ২০১৭ 
  31. Iwanek, Krzysztof। "The End of India's Nehru-Gandhi Dynasty?"thediplomat.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০২০ 
  32. Auerbach, Stuart (১ নভেম্বর ১৯৮৪)। "Indira Is India"The Washington Post (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0190-8286। ৩ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০২০ 
  33. Steinberg, Blema S. (২০০৮)। Women in power : the personalities and leadership styles of Indira Gandhi, Golda Meir, and Margaret Thatcher। Montreal: McGill-Queen's University Press। পৃষ্ঠা 20। আইএসবিএন 978-0-7735-3356-1। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  34. Upadhyaya, Prakash Chandra (১৯৮৯)। "Review of Marxist State Governments in India, Politics, Economics and Society by T. J. Nossiter"। Social Scientist17 (1/2 January – February 1989): 84–91। জেস্টোর 3520112ডিওআই:10.2307/3520112 
  35. Gandhi, Indira. (1982) My Truth
  36. Kochanek, Stanley A. (মে ১৯৬৬)। "Post Nehru India: The Emergence of the New Leadership"। Asian Survey6 (5): 298। জেস্টোর 2642538ডিওআই:10.2307/2642538 
  37. Genovese, Michael A., ed. Women As National Leaders. Newbury Park, CA: Sage Publications, 1993. Print. 110.
  38. Ghosh, P.S., 1999. Whither Indian Polity?. Economic and Political Weekly, pp.3340–3342.
  39. Thompson, Mark R. (২০১৩)। Derichs, Claudia, সম্পাদক। Dynasties and female political leaders in Asia : gender, power and pedigree। London: LIT Verlag। পৃষ্ঠা 32, 50। আইএসবিএন 978-3-643-90320-4 
  40. Shankar, Kalyani (২০১৩)। Pandora's daughters। London: Bloomsbury Publishing India। আইএসবিএন 978-93-82951-04-9 
  41. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Kapila1 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  42. "March to socialism under Prime Minister Indira Gandhi offers an interesting parallel"The Economic Times। ২৪ আগস্ট ২০১১। ১০ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুলাই ২০১৭ 
  43. "1969: S. Nijalingappa expelled Indira Gandhi from the party"indiatoday.com। ১৪ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুলাই ২০১৭ 
  44. Singh, Mahendra Prasad (১৯৮১)। Split in a Predominant Party: The Indian National Congress in 1969। New Delhi: Sakti Malik, Abhinav Prakashan। আইএসবিএন 978-81-7017-140-9 
  45. Rosser, J. Barkley; Rosser, Marina V. (২০০৪)। Comparative Economics in Transforming the World EconomyMIT Press। পৃষ্ঠা 468–470। আইএসবিএন 978-0-262-18234-8 
  46. "Indira Gandhi—the iron-willed stateswoman"theweek.in। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০২০ 
  47. "General Elections, India, 1971: Statistical report" (পিডিএফ)eci.nic.in। Commission of India। ১৮ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুন ২০১৪ 
  48. Masani, Zareer (২০১২)। "The Indira Wave"The Hindu (3 March 2012)। ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০১৫ 
  49. "The Garibi Hatao Programme"indiragandhi.in। ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০২০ 
  50. Rath, Nilakantha (১৯৮৫)। "'Garibi Hatao': Can IRDP Do It?"। Economic and Political Weekly20 (6): 238–246। জেস্টোর 4374060 
  51. Hellmann-Rajanayagam, D (২০১৩)। Dynasties and Female Political Leaders in Asia: Gender, Power and Pedigree। Vienna, Zurich: LIT Verlag GMBH। পৃষ্ঠা 27। আইএসবিএন 978-3-643-90320-4 
  52. Puri, Balraj (১৯৯৩)। "Indian Muslims since Partition"। Economic and Political Weekly28 (40): 2144। জেস্টোর 4400229 
  53. Sanghavi, Nagindas. "From Navnirman to the anti-Mandal riots: the political trajectory of Gujarat (1974–1985)." South Asian History and Culture 1.4 (2010): 480–493.
  54. Jaffrelot, Christophe (২০১২)। Copeman, Jacob; Ikegame, Aya, সম্পাদকগণ। The Guru in South Asia: New Interdisciplinary Perspectives Chapter 4 The political guru.। London, New York: Routledge। পৃষ্ঠা 85। আইএসবিএন 978-0-415-51019-6। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৫ 
  55. Jain, Atishay (২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫)। "Did Atal bihari Vajpayee call Indira Gandhi 'Durga' ?"YouTube। YouTube। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মার্চ ২০১৬ 
  56. Rudolph, Lloyd; Rudolph, Susanne (জুলাই ১৯৭৭)। "India's Election: Backing into the future"Foreign Affairs55 (4): 836–853। জেস্টোর 20039739ডিওআই:10.2307/20039739 
  57. "BBC On This Day | 12 | 1975: Gandhi found guilty of corruption"news.bbc.co.uk। ১২ জুন ১৯৭৫। ২৩ জুন ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুলাই ২০১৭ 
  58. Priyadarshi, D., 1975. Case Study: Smt. Indira Nehru Gandhi vs. Shri Raj Narain and Anr. on 7 November 1975. Indira Nehru Gandhi vs. Shri Raj Narain and Anr. on, 7.
  59. "Indira Gandhi Biography: Birth, Family, Education, Political Career, Posthumus Awards, Legacy and more"Jagranjosh.com। ২০২০-০৬-২৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-১৬ 
  60. Chandra, Bipan (২০০৩)। In the name of democracy : JP movement and the emergency, Chapter 4, Emergency imposed। New Delhi: Penguin Booksআইএসবিএন 978-0-14-302967-0 
  61. 1975: Gandhi found guilty of corruption, BBC, ১২ জুন ১৯৭৫, ১৭ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ১১ ডিসেম্বর ২০০৮ 
  62. "A Page From The Past: All You Need To Know About Emergency Imposed By Indira Gandhi Government"। ২৫ জুন ২০১৮। ১৪ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০২০ 
  63. Kochanek, Stanely, Mrs. Gandhi's Pyramid: The New Congress, (Westview Press, Boulder, CO 1976) p. 98
  64. Malhotra, Inder (১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪)। Indira Gandhi: A Personal and Political Biography (ইংরেজি ভাষায়)। Hay House, Inc.। আইএসবিএন 978-93-84544-16-4 
  65. Brass, Paul R., The Politics of India Since Independence, (Cambridge University Press, England 1995) p. 40
  66. Joseph, P.T. (২০০৭)। Eq And Leadership। Tata McGraw-Hill Educational। পৃষ্ঠা 225। আইএসবিএন 978-0-07-061794-0। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০২০ 
  67. Tully, Mark (১৯৮৫)। Amritsar: Mrs. Gandhi's Last Battle। New Delhi: Rupa & Co.। পৃষ্ঠা 55আইএসবিএন 81-291-0917-4 
  68. Subodh Ghildiyal (২৯ ডিসেম্বর ২০১০)। "Cong blames Sanjay Gandhi for Emergency 'excesses'"The Times of India। ৮ জুলাই ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জানুয়ারি ২০১৩ 
  69. "Mystery Called Sanjay Gandhi"। Scribd। ২১ নভেম্বর ২০০৭। ২৫ আগস্ট ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জানুয়ারি ২০১৩ 
  70. Express News Service (১১ জুন ২০১৩)। "Emergency 'propagandist' who banned Kishore Kumar songs"Indian Express। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৪ 
  71. Dasgupta, Swapan (জুলাই ১৯৮৫)। "Sanjay Gandhi"। Third World Quarterly7 (3): 731–778। ডিওআই:10.1080/01436598508419863 
  72. Derfler, Leslie (২০১১)। The fall and rise of political leaders Olof Palme, Olusegun Obasanjo, and Indira Gandhi (1st সংস্করণ)। New York: Palgrave Macmillan। পৃষ্ঠা 186–187। আইএসবিএন 978-0-230-11724-2। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  73. Rudolph, Lloyd I.; Hoeber, Susanne (১৯৮৯)। In pursuit of Lakshmi: The political economy of the Indian state ([Nachdr.] সংস্করণ)। Chicago: University of Chicago Press। পৃষ্ঠা 159–178। আইএসবিএন 978-0-226-73139-1 
  74. Maramkal, M-B (২০১৩)। "Chikmagalur remembers Indira Gandhi"Times of India (20 November)। ৩০ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ জানুয়ারি ২০১৫ 
  75. "Mrs. Gandhi is Jeered"The Spokesman-Review। ২১ নভেম্বর ১৯৭৮। সংগ্রহের তারিখ ৯ এপ্রিল ২০১৭ 
  76. "How Fernandes ran a high-voltage campaign for Chikkamagaluru bypoll"Times of India। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  77. Malhotra, Inder. Indira Gandhi. New York: Coronet Books, 1991.
  78. "Tale of two hijackers: One is Congress candidate, other most wanted"Times of India। ১০ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০১৭ 
  79. Horowitz, Donald L. (২০০১)। The Deadly Ethnic RiotUniversity of California Press। পৃষ্ঠা 244আইএসবিএন 978-0-520-22447-6 
  80. Jeff Haynes (২ সেপ্টেম্বর ২০০৩)। Democracy and Political Change in the Third WorldRoutledge। পৃষ্ঠা 168–। আইএসবিএন 978-1-134-54184-3। ২৩ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ 
  81. McLeod, John (২০০২)। The history of IndiaGreenwood Publishing Group। পৃষ্ঠা 209–। আইএসবিএন 978-0-313-31459-9। ২৪ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুন ২০১০ 
  82. de Mesquita, Bruce Bueno (২০১০)। The Predictioneer's Game: Using the Logic of Brazen Self-Interest to See and shapte the future। New York: Random House। পৃষ্ঠা xxiii। আইএসবিএন 978-0-8129-7977-0 
  83. Sanghvi, Vijay (২০০৬)। The Congress, Indira to Sonia Gandhi By। Delhi: Kalpaz। পৃষ্ঠা 114–122। আইএসবিএন 978-81-7835-340-1 
  84. S. K. Agnihotri; B. Datta Ray (২০০২)। Perspective Of Security And Development In North East India। Concept Publishing Company। পৃষ্ঠা 106–। আইএসবিএন 978-81-8069-165-2। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুন ২০১৩ 
  85. "1980: Gandhi returned by landslide vote"bbc.co.uk (ইংরেজি ভাষায়)। ৭ জানুয়ারি ১৯৮০। ২৩ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০২০ 
  86. "Indira Gandhi becomes Indian prime minister – Jan 19, 1966 – History.com"History.com। ১৯ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  87. Apr 2, Sribala Vadlapatla / TNN /; 2019; Ist, 08:20। "Congress loses hold on Medak, once won by Indira Gandhi - Times of India"The Times of India (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-১৬ 
  88. Auerbach, Stuart (২৩ জুন ১৯৮০)। "Sanjay Gandhi Killed in Plane Crash"The Washington Post (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0190-8286। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুলাই ২০১৭ [অকার্যকর সংযোগ]
  89. Chikermane, Gautam (২০১৮)। 70 Policies That Shaped India 1947 to 2017, Independence to $2.5 Trillion (পিডিএফ)Observer Research Foundation। পৃষ্ঠা 69–70। আইএসবিএন 978-81-937564-8-5। ২৫ আগস্ট ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ আগস্ট ২০১৮ 
  90. "Rajiv Gandhi | prime minister of India"Encyclopedia Britannica (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১ জুন ২০২০ 
  91. Baru, Sanjay (১১ এপ্রিল ২০১৪)। The Accidental Prime Minister: The Making and Unmaking of Manmohan SinghPenguin India 
  92. Prasad, Sharada (১ জানুয়ারি ২০০৩)। The Book I Won't Be Writing and Other EssaysChronicle Books 
  93. Gus Martin (১৫ জুন ২০১১)। The SAGE Encyclopedia of Terrorism (Second সংস্করণ)। SAGE Publishing। পৃষ্ঠা 543–545। আইএসবিএন 978-1-4129-8016-6। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০১২ 
  94. C. Christine Fair; Sumit Ganguly (২৯ সেপ্টেম্বর ২০০৮)। Treading on Hallowed Ground: Counterinsurgency Operations in Sacred SpacesOxford University Press। পৃষ্ঠা 39–40। আইএসবিএন 978-0-19-534204-8। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০১২ 
  95. William Gould (৩০ নভেম্বর ২০১১)। Religion and Conflict in Modern South AsiaCambridge University Press। পৃষ্ঠা 237। আইএসবিএন 978-0-521-87949-1। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০১২ 
  96. Harnik Deol (২ অক্টোবর ২০১২)। Religion and Nationalism in India: The Case of the PunjabPsychology Press। পৃষ্ঠা 105। আইএসবিএন 978-0-415-20108-7। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০১২ 
  97. Martin E. Marty; R. Scott Appleby (১ মে ২০০৪)। Fundamentalisms ComprehendedUniversity of Chicago Press। পৃষ্ঠা 454। আইএসবিএন 978-0-226-50888-7। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০১২ 
  98. Singh, Tavleen। "Prophet of Hate:J S Bhindranwale"India Today। ২০ জুন ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ ডিসেম্বর ২০০৯ 
  99. Mark Tully and Satish Jacob, Amritsar – Mrs. Gandhi's Last Battle (Calcutta: Rupa & Co. by arrangement with Pan Books, London, 1985)
  100. Kuldip Nayar and Khushwant Singh, Tragedy of Punjab, Vision Books, New Delhi, 1984, page 79.
  101. Longowal said "Whenever the situation becomes ripe for settlement, some violent incident takes place. I know Bhindranwale is behind the murder of the DIG", "(The person behind the murder is) The one who is afraid of losing his seat of power"Indian Express। ২৭ এপ্রিল ১৯৮৩। interview with Longowal। 
  102. Guidry, John; Kennedy, Michael D.; Zald, Mayer N., সম্পাদকগণ (২০০০)। Globalizations and social movements : culture, power, and the transnational public sphere (Reprint সংস্করণ)। Ann Arbor, Michigan: Univ. of Michigan Press। পৃষ্ঠা 319। আইএসবিএন 978-0-472-06721-3। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  103. "Indira Gandhi had since long been planning for an attack on Darbar Sahib..." Harjinder Singh Dilgeer (2012). Sikh History in 10 Volumes. Vol 7, p. 168; 196–197.
  104. Mandair, Arvind-pal Singh; Shackle, Christopher; Singh, Gurharpal, সম্পাদকগণ (২০০১)। Sikh religion, culture and ethnicityRoutledge। পৃষ্ঠা 169–171। আইএসবিএন 978-1-136-84634-2 
  105. Pande, B. N.। Indira Gandhi (ইংরেজি ভাষায়)। Publications Division, Ministry of Information and Broadcasting, Government of India। পৃষ্ঠা 80। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ 
  106. "সর্বোচ্চ সম্মাননায় ইন্দিরা গান্ধী"বিবিসি নিউজ বাংলা। ২৫ জুলাই ২০১১। 

উল্লেখপঞ্জি সম্পাদনা

আরও পড়ুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

টেমপ্লেট:External Affairs Ministers of India টেমপ্লেট:Ministry of Finance (India) টেমপ্লেট:Home Ministry (India) টেমপ্লেট:Energy Ministries and Departments of India টেমপ্লেট:Ministry of Commerce and Industry (India) টেমপ্লেট:Ministry of Communications (India) টেমপ্লেট:Ministers of Information and Broadcasting