ভারতের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭৭
১৯৭৭-এর ভারতের সাধারণ নির্বাচনএ বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমবার ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দল স্বাধীনতা-পরবর্তী ভারতের শাসন ক্ষমতা হারিয়েছিল। ২১ মাসের অন্তর্বর্তী জরুরীকালীন অবস্থার শেষে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ষষ্ঠ লোকসভা গঠনের উদ্দেশ্যে সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা করেছিলেন। জয়প্রকাশ নারায়ণের প্রচেস্টায় ভারতীয় লোকদলের নেতৃত্বে ইন্দিরা বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মিলে গঠন করা জনতা মোর্চা ২৯৮টি আসন লাভ করেছিল। মোরারজী দেসাইকে মোর্চার নেতা নির্বাচন করা হয়েছিল এবং তখন থেকে তিনি ভারতের প্রথম অকংগ্রেসী প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। নির্বাচনের পরবর্তী পর্যায়ে জনতা মোর্চার দলগুলি বিলুপ্তি ঘটিয়ে জনতা পার্টি গঠন করা হয়েছিল। কংগ্রেস পেয়েছিল মাত্র ১৫৩টি ও হারাতে হয়েছিল ১৯৭টি আসন। ইন্দিরা গান্ধী ও তাঁর পুত্র সঞ্জয় গান্ধী উভয়েই পরাজয় বরণ করেছিলেন।[২]
| ||||||||||||||||||||||||||||
লোকসভার ৫৪২টি আসন সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ২৭২টি | ||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
| ||||||||||||||||||||||||||||
|
প্রেক্ষাপট
সম্পাদনাজরুরীকালীন অবস্থা
সম্পাদনা২৫ জুন ১৯৭৫র দিন মাঝরাতে ইন্দিরা গান্ধী নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার অন্তর্বর্তী জরুরীকালীন অবস্থা ঘোষণা করে। জরুরীকালীন অবস্থার সময়কালে সকল বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদেরকে জেলে ভরা হয়। খবরের কাগজ সেন্সরশিপ করা হয়। বেতার ও দূরদর্শন সরকারের বিরুদ্ধে যাতে কোনো খবর প্রকাশ না করতে পারে, তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ন্যায়পালকরা যাতে জরুরীকালীন অবস্থার বিষয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে তারজন্য গান্ধী সদনের সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুবিধা নিয়ে সংবিধানের ৩৮তম সংশোধন করেন। ১৯৭৬ সালে ষষ্ঠ লোকসভা গঠনের জন্য হওয়া সাধারণ নির্বাচন বন্ধ হয়। ১৯৭৭-এর ২৩ জানুয়ারী লোকসভায় ইন্দিরা গান্ধী নির্বাচনের ঘোষণা করেন ও ২১ মার্চে জরুরীকালীন অবস্থা উঠিয়ে নেন। [৩]
জনতা মোর্চা গঠন
সম্পাদনানির্বাচন ঘোষণা করার সময়ে সকল বিরোধী দলের নেতা কারাবন্দী ছিলেন। নির্বাচন ঘোষণা করার পর তাদের মুক্ত করে দেওয়া হয়। চারটি মুখ্য রাজনৈতিক দল- কংগ্রেস (ও), ভারতীয় জনসংঘ, ভারতীয় লোকদল ও সোসালিস্ট পার্টি মিলিতভাবে জনতা মোর্চা গঠন করে এবং 'চক্র হলধর'এর প্রতীক চিহ্ন নিয়ে নির্বাচনে অবতীর্ণ হয়। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর এই কয়টি দল ও কয়েকটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল মিলে জনতা পার্টি গঠন করে।[৪] জরুরীকালীন অবস্থায় বলপূর্বক বন্ধ্যাকরণ, বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকে বিনা বিচারে কারাগারে পাঠানো ইত্যাদি মানবাধিকার ভঙ্গের যেসব ঘটনা ঘটেছিল, জনতা মোর্চা সেইগুলি ভোটারদের মনে করিয়ে দেয়। জনতা মোর্চার নির্বাচনী প্রচারে বলা হয়েছিল যে ভোটাররা নিশ্চিত করবেন, ভারতের ভবিষ্যৎ - গণতন্ত্র না একনায়কত্ববাদ। কংগ্রেস দলকে হতাশ হয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছিল। কৃষি ও জলসিঞ্চন মন্ত্রী বাবু জগজীবন রাম ১৯৭৭র ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দলত্যাগ করেন।
নির্বাচনে ৫৪২টি আসনের মধ্যে জনতা মোর্চা একাই ২৯৮টি ও তাঁদের সহযোগী দলগুলি ৪৭টি আসন (মোট ৩৪৫টি) লাভ করে। ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস ১৫৩টি ও সহযোগী দলগুলি ৩৬টি আসনে (মোট ১৮৯টি) জয়লাভ করতে সক্ষম হয়।[৪]
ভোটারদের আচরণ
সম্পাদনাঐতিহাসিকভাবে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের শক্তিশালী মাটি থাকা ভারতের সর্ববৃহৎ রাজ্য উত্তর প্রদেশএ শোচনীয় পরাজয় হয়। লেখক ধনগরে লেখেন যে এভাবে পরাজয়ের সংরচনাত্মক কারণ ছিল- শক্তিশালী ও একত্রিত বিরোধীদলের সৃস্টি হওয়া, কংগ্রেস দলের মধ্যে দেখা দেয়া অনৈক্য ও অবসাদ, কার্যকরী বিরোধীদলের প্রভাববিস্তার ও প্রচারমাধ্যমের ওপর ইন্দিরা গান্ধীর নিয়ন্ত্রণ চালানো, যার ফলে প্রচারমাধ্যম জরুরীকালীন অবস্থায় সেন্সরশিপের কবলে পড়েছিল। নির্বাচনটিতে ভোটারদের প্রতিশোধ নিতে তথা জরুরীকালীন অবস্থা ও এর কর্তৃপক্ষ ও দমনকারী নীতিগুলির প্রতি থাকা ক্ষোভ উগরে দিতে সুবিধা করে দিয়েছিল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, একটা প্রতিশোধ ছিল গ্রামীণ এলাকায় চালানো বন্ধ্যাকরণ (नसबंदी) অভিযানের। মধ্যবিত্ত শ্রেণী জরুরীকালীন অবস্থায় গান্ধীর বাকস্বাধীনতার টুটি চেপে ধরার বিষয়টির উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিল।[৫] উত্তর ভারতে তাঁরা মাত্র ২টি আসন লাভ করে। ইন্দিরা গান্ধী ও তাঁর পুত্র সঞ্জয় গান্ধী উভয়ে যথাক্রমে রায়বেরেলী ও আমেথি লোকসভা কেন্দ্র থেকে পরাজয় বরণ করেন।[৪]
পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস সর্বকালের নিকৃস্ট ফল প্রদর্শন করেছিল। এর কারণ ছিল কংগ্রেস কার্যকর্তাদের নিজেদের মধ্যে বিভেদ ও বিশৃংখলতা। তারোপরে, অনেক নেতাই দলত্যাগ করায় কংগ্রেস নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল। বিরোধীরা কংগ্রেসের দুর্নীতি ভোটারদের মধ্যে প্রকাশ করে দিয়েছিল এবং নতুন নেতৃত্বকে স্বাগতম জানাতে আহ্বান জানিয়েছিল।[৬]
কংগ্রেস দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্য — তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, কেরালা ও অন্ধ্রপ্রদেশে ভাল ফল দেখিয়েছিল। পশ্চিম ভারতের রাজ্য মহারাস্ট্র ও গুজরাটে দলটি মধ্যম ফল প্রদর্শন করেছিল। অবশ্য, মুম্বাইর সবকটি আসন জনতা মোর্চাই লাভ করেছিল।
ফলাফল
সম্পাদনামোর্চাভিত্তিক ফলাফল
সম্পাদনাউৎস: Keesings[৭] টেমপ্লেট:Indian general elections results by alliance 1977
দলভিত্তিক ফলাফল
সম্পাদনাদল | ভোট | % | আসন | +/– | |
---|---|---|---|---|---|
Janata Party | ৭,৮০,৬২,৮২৮ | ৪১.৩২ | ২৯৫ | New | |
Indian National Congress | ৬,৫২,১১,৫৮৯ | ৩৪.৫২ | ১৫৪ | –198 | |
Communist Party of India (Marxist) | ৮১,১৩,৬৫৯ | ৪.২৯ | ২২ | –3 | |
All India Anna Dravida Munnetra Kazhagam | ৫৪,৮০,৩৭৮ | ২.৯ | ১৮ | New | |
Communist Party of India | ৫৩,২২,০৮৮ | ২.৮২ | ৭ | –16 | |
Dravida Munnetra Kazhagam | ৩৩,২৩,৩২০ | ১.৭৬ | ২ | –21 | |
Indian National Congress (Organisation) | ৩২,৫২,২১৭ | ১.৭২ | ৩ | –13 | |
Shiromani Akali Dal | ২৩,৭৩,৩৩১ | ১.২৬ | ৯ | +8 | |
Peasants and Workers Party of India | ১০,৩০,২৩২ | ০.৫৫ | ৫ | +5 | |
Republican Party of India (Khobragade) | ৯,৫৬,০৭২ | ০.৫১ | ২ | +2 | |
Revolutionary Socialist Party | ৮,৫১,১৬৪ | ০.৪৫ | ৪ | +1 | |
All India Forward Bloc | ৬,৩৩,৬৪৪ | ০.৩৪ | ৩ | +1 | |
Indian Union Muslim League | ৫,৬৫,০০৭ | ০.৩ | ২ | 0 | |
Kerala Congress (Pillai Group) | ৫,২৬,৯৩৭ | ০.২৮ | ০ | New | |
Kerala Congress | ৪,৯১,৬৭৪ | ০.২৬ | ২ | –1 | |
Jammu & Kashmir National Conference | ৪,৮৩,১৯২ | ০.২৬ | ২ | New | |
Muslim League (Opposition) | ৩,১৮,৯৭৯ | ০.১৭ | ০ | New | |
Socialist Unity Centre of India | ২,৮০,৯৯৫ | ০.১৫ | ০ | 0 | |
Vishal Haryana Party | ১,৯২,৮৬৭ | ০.১ | ০ | –1 | |
Republican Party of India | ১,৫৫,৯৭২ | ০.০৮ | ০ | –1 | |
All India Jharkhand Party | ১,২৬,২৮৮ | ০.০৭ | ১ | 0 | |
United Democratic Front | ১,২৪,৬২৭ | ০.০৭ | ১ | New | |
Maharashtrawadi Gomantak Party | ১,১৮,৭৪৮ | ০.০৬ | ১ | +1 | |
Jharkhand Party | ১,১৬,৯৬১ | ০.০৬ | ০ | New | |
Manipur Peoples Party | ১,০৯,১৩০ | ০.০৬ | ০ | 0 | |
Shoshit Samaj Dal (Akhil Baharatiya) | ৯৬,৭৫৩ | ০.০৫ | ০ | New | |
Revolutionary Communist Party of India | ৪৫,০৪৭ | ০.০২ | ০ | 0 | |
Tripura Upajati Juba Samiti | ৩৫,৯১৬ | ০.০২ | ০ | New | |
Hindu Mahasabha | ৩৫,৪১৯ | ০.০২ | ০ | 0 | |
Bihar Prant Hul Jharkhand | ২৭,১১৬ | ০.০১ | ০ | 0 | |
Akhil Bharatiya Ram Rajya Parishad | ২৬,১৬৯ | ০.০১ | ০ | 0 | |
All India Labour Party | ১৭,১৯১ | ০.০১ | ০ | New | |
Akhil Bharatiya Gorkha League | ১২,৫০৯ | ০.০১ | ০ | 0 | |
All India Shiromani Baba Jivan Singh Mazabhi Dal | ৫,৮৬৮ | ০ | ০ | New | |
Independents | ১,০৩,৯৩,৬১৭ | ৫.৫ | ৯ | –5 | |
Appointed Anglo-Indians | ২ | 0 | |||
মোট | ১৮,৮৯,১৭,৫০৪ | ১০০ | ৫৪৪ | +23 | |
বৈধ ভোট | ১৮,৮৯,১৭,৫০৪ | ৯৭.২৫ | |||
অবৈধ/ফাঁকা ভোট | ৫৩,৪৬,৪১১ | ২.৭৫ | |||
মোট ভোট | ১৯,৪২,৬৩,৯১৫ | ১০০ | |||
নিবন্ধিত ভোটার/ভোটদান | ৩২,১১,৭৪,৩২৭ | ৬০.৪৯ | |||
উৎস: ECI |
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ http://www.ipu.org/parline-e/reports/arc/INDIA_1977_E.PDF
- ↑ M.R. Masani, "India's Second Revolution," Asian Affairs (1977) 5#1 pp 19–38.
- ↑ "What happened after emergency was imposed"। ১ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ আগস্ট ২০১৪।
- ↑ ক খ গ "Formation of Janata Party"। সংগ্রহের তারিখ ২৭ আগস্ট ২০১৪।
- ↑ D.N. Dhanagare, "Sixth Lok Sabha Election in Uttar Pradesh – 1977: The End of the Congress Hegemony," Political Science Review (1979) 18#1 pp 28–51
- ↑ Mira Ganguly and Bangendu Ganguly, "Lok Sabha Election, 1977: The West Bengal Scene," Political Science Review (1979) 18#3 pp 28–53
- ↑ "Janata Party Victory in Lok Sabha Elections - Emergency lifted - Cabinet formed by Mr Desai - Dissolution of Nine State Assemblies - Merger of Janata Party and Congress for Democracy - Developments in States - Relations with Soviet Union and China | Keesing's World News Archives"। Keesings.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৮-১৮।
আরও পড়ুন
সম্পাদনা- Guha, Ramachandra. India After Gandhi: The History of the World's Largest Democracy (2008) pp 491–518
- Klieman, Aaron S. "Indira's India: Democracy and Crisis Government," Political Science Quarterly (1981) 96#2 pp. 241–259 in JSTOR
- Roy, Ramashray; Sheth, D. L. "The 1977 Lok Sabha Election Outcome: The Salience of Changing Voter Alignments Since 1969," Political Science Review (1978), Vol. 17 Issue 3/4, pp 51–63