উপনিষদ্‌

হিন্দু ধর্মের প্রাচীন সংস্কৃত ধর্মীয় ও দার্শনিক গ্রন্থাবলী
(Upanishad থেকে পুনর্নির্দেশিত)

উপনিষদ্ (সংস্কৃত: उपनिषद्) হচ্ছে হিন্দুধর্মের এক বিশেষ ধরনের ধর্মগ্রন্থের সমষ্টি। এই গ্রন্থসমূহে হিন্দুধর্মের তাত্ত্বিক ভিত্তিটি আলোচিত হয়েছে। উপনিষদের অপর নাম বেদান্ত। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, উপনিষদ্‌গুলোতে সর্বোচ্চ সত্য স্রষ্টা বা ব্রহ্মের প্রকৃতি এবং মানুষের মোক্ষ বা আধ্যাত্মিক মুক্তি লাভের উপায় বর্ণিত হয়েছে। উপনিষদ্‌গুলো মূলত বেদ- পরবর্তী ব্রাহ্মণআরণ্যক[১] অংশের শেষ অংশে পাওয়া যায়। এগুলো প্রাচীনকালে গুরু-শিষ্য পরম্পরায় মুখে মুখে প্রচলিত ছিল।

উপনিষদ্‌
in the
উপরে বাম থেকে ঘড়ির কাঁটার দিকে:
তথ্য
ধর্মহিন্দুধর্ম
ভাষাসংস্কৃত

উপনিষদ্‌ সাধারণভাবে "বেদান্ত" নামে অভিহিত হয়ে থাকে। এই শব্দটির অর্থ ব্যাখ্যাত হয় "বেদের শেষ অধ্যায়সমূহ বা শেষাংশ" হিসেবে। আবার বিকল্প অর্থও করা হয়ে থাকে। সেটি হল "বেদের বিধেয় বা সর্বোচ্চ উদ্দেশ্য" এছাড়া উপনিষদ সংখ্যা হল ১০৮টি তার মধ্যে বৈদিকভাবে প্রামাণিক উপনিষদ ১১টি এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ঐতরেয়, কঠ, কেন, ছান্দোগ্য, ঈশ, বৃহদারণ্যক, শ্বেতাশ্বতর, তৈত্তিরীয়, প্রশ্ন, মুণ্ডক, মাণ্ডূক্য উপনিষদ।[২] ব্রহ্ম (পরম সত্য) ও আত্মা (ব্যক্তির অন্তর্নিহিত সত্ত্বা) উপনিষদের মূল উপজীব্য বিষয়[৩][৪] এবং "তুমিই যে সেই আত্মা, তা জানাই" হল গ্রন্থাবলির মূল বক্তব্য।[৪][৫] ভগবদ্গীতাব্রহ্মসূত্রের সঙ্গে মুখ্য উপনিষদ্‌গুলো (এই তিন শাস্ত্র একত্রে প্রস্থানত্রয়ী নামে পরিচিত)[৬] যার উপর পরবর্তীকালের একাধিক বৈদান্তিক দার্শনিক গোষ্ঠীর ভিত্তি স্থাপন করে। এগুলোর মধ্যে হিন্দুধর্মের দু’টি প্রভাবশালী অদ্বয়বাদী ধারা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।[টীকা ১][টীকা ২][টীকা ৩]

ঐতিহাসিকদের মতে, মুখ্য উপনিষদ্‌গুলো প্রাক্‌-বৌদ্ধ যুগ থেকে[৯][১০] শুরু করে খ্রিস্টীয় প্রথম সহস্রাব্দের প্রথমার্ধ্ব পর্যন্ত[১০] সুদীর্ঘ সময়কালের বিভিন্ন পর্বে রচিত হয়। অপর দিকে অপ্রধান উপনিষদগুলো মধ্যযুগ ও প্রাক্‌-আধুনিক যুগের রচনা।[১১] অবশ্য প্রতিটি উপনিষদের সঠিক রচনাকাল নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। ব্রিটিশ কবি মার্টিন সেমোর-স্মিথ উপনিষদ্‌গুলোকে "সর্বকালের ১০০টি সবচেয়ে প্রভাবশালী বই"-এর তালিকাভুক্ত করেছিলেন।[১২] আর্থার শোপেনহাওয়ার, রালফ ওয়াল্ডো এমারসনহেনরি ডেভিড থোরো সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি উপনিষদ্‌গুলোর গুরুত্ব স্বীকার করে বলেছেন উপনিষদ্‌ হচ্ছে “মানবজ্ঞানের সর্বোচ্চ উৎকর্ষের বহিঃপ্রকাশ”। গবেষকেরা উপনিষদের দর্শনের সঙ্গে প্লেটোকান্টের দর্শনের মিল খুঁজে পান।[১৩][১৪]

ব্যুৎপত্তি সম্পাদনা

সংস্কৃত উপনিষদ্‌ শব্দটি উপ- (কাছে) তথা নি- (সঠিক জায়গায়, নিচে) উপসর্গপূর্বক ক্বিপ প্রত্যয়ান্ত সদ্ ধাতু দ্বারা নিষ্পন্ন হয়েছে। সদ্ ধাতুর তিনটি অর্থ- বিসরণ(নাশ), গতি(প্রাপ্তি) এবং অবসাদন(অন্ত)। এজন্য উপনিষদকে বলা হয় অবিদ্যার নাশকারক, আত্মজ্ঞানের প্রাপ্তি এবং দুঃখের অন্তের জন্য জ্ঞান। এই শব্দের অর্থ কাছে নিচু আসনে বসা বা শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে গুরু বা শিক্ষকের কাছে নিচু আসনে এসে বসা।[১৫] অন্যমতে, এই শব্দের অর্থ (গুরুর) পদতলে বসা বা গুরুর শরণাগত হওয়া[১৬] মনিয়ার-উইলিয়ামসের উনিশ শতকের শেষভাগে লেখা অভিধানে পাওয়া যায়, "দেশীয় পণ্ডিতদের মতে উপনিষদ্‌ শব্দের অর্থ 'সর্বোচ্চ আত্মার জ্ঞানলাভের দ্বারা অজ্ঞান দূরীকরণের জন্য বসা"।[১৭] আদি শঙ্করাচার্যের কঠ্‌বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ ভাষ্যে উপনিষদ্‌ শব্দের যে সংজ্ঞা পাওয়া যায়, তাতে একে আত্মবিদ্যা বা ব্রহ্মবিদ্যা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যান্য অভিধানে "গুহ্য তত্ত্ব" বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।[১৮]

কি ছুবি দ্বানদে র মত অনসুার 'সদ্' ধাতুর সাথে 'নি ' উপসর্গ য োগে 'নি ষীদতি ' আদি প্রয় োগে র আধারে জি জ্ঞাসুদে র ব্রহ্মবি ৎ গুরুর নি কটে (উপ) বসে ব্রহ্মজ্ঞান প্রাপ্তি করাও উপনি ষদ্ শব্দ দ্বারা অভি প্রে ত ।

শ্রেণিবিভাগ সম্পাদনা

দুশোটিরও বেশি উপনিষদের কথা জানা যায়। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হল মুক্তিকা উপনিষদ্‌। এই উপনিষদে ১০৮টি উপনিষদের নাম পাওয়া যায়। উল্লেখ্য ১০৮ সংখ্যাটিকে হিন্দুরা পবিত্র বলে মানেন। হিন্দুদের জপের মালায় ১০৮টি দানা থাকে। আধুনিক গবেষকেরা তার মধ্যে ১০, ১১, ১২ বা ১৩টি উপনিষদ্‌কে প্রধান বা মুখ্য উপনিষদ বলেন। তাদের মতে, অন্যান্য উপনিষদ্‌গুলো এই মুখ্য উপনিষদ্‌ থেকেই উদ্ভূত। আদি শঙ্কর প্রমুখ বিশিষ্ট দার্শনিক ধর্মগুরুরা যে সব উপনিষদের ভাষ্য রচনা করেছেন, সেগুলোই মুখ্য উপনিষদ্‌। হিন্দুরা সেগুলোকেই শ্রুতিশাস্ত্র হিসেবে গ্রহণ করেন।

মুক্তিকা উপনিষদ্‌-এ যে নতুনতর উপনিষদ্‌গুলো অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, সেগুলো সম্ভবত দক্ষিণ ভারতে রচিত হয়েছিল।[১৯] বিষয় অনুযায়ী এগুলোকে "(সাধারণ) বেদান্ত" (দার্শনিক), "যোগ", "সন্ন্যাস" (মুক্তিবাদী), "বৈষ্ণব" (যাতে হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর উপাসনার কথা আছে), "শৈব" (শিব বিষয়ক) ও "শাক্ত" (দেবী বিষয়ক)―এই কয়েকটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়।[২০] নতুন উপনিষদ্‌গুলো প্রধানত সম্প্রদায়কেন্দ্রিক। কারণ, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে শ্রুতিশাস্ত্রের দোহাই দিয়ে নিজেদের মতকে ধর্মসঙ্গত করার প্রবণতা ছিল।[২১]

উপনিষদ্‌গুলোর সঙ্গে সংহিতা বা ব্রাহ্মণ বইগুলোর সম্পর্কের নিরিখেও এদের শ্রেণিবিভাগ করা যায়। ঐতরেয়, কৌশিতকি ও তৈত্তিরীয় উপনিষদ্‌ প্রায় সমসাময়িক কালে লেখা। তবে কিছু অংশ বৈদিক ও ধ্রুপদি সংস্কৃত যুগের সন্ধিক্ষণের রচনা।[২২]

মুখ্য উপনিষদ্‌ সম্পাদনা

মুখ্য উপনিষদ্‌গুলোকে তাদের রচনাকাল অনুযায়ী সাজানো গিয়েছে। প্রাচীন উপনিষদ্‌গুলোর মধ্যে বৃহদারণ্যকছান্দোগ্য উপনিষদ্‌দুটি সবচেয়ে পুরনো ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।[২৩] বৃহদারণ্যক প্রথমে লেখা। তবে এর কিছু কিছু অংশ ছান্দোগ্য-এর পরে রচিত হয়েছে।[টীকা ৪]

ঐতরেয়[২৫], কৌষীতকি, মুণ্ডক, প্রশ্নকঠ উপনিষদ গুলোর রচনাকাল খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর পরে হওয়াই স্বাভাবিক। একইভাবে কেন, মাণ্ডুক্যঈশ উপনিষদ্‌ সম্পর্কেও একই কথা বলা হয়। এগুলো অবশ্য খ্রিস্টীয় প্রথম-দ্বিতীয় শতাব্দীর রচনা।[২৬] উপনিষদ্‌গুলোতে রচয়িতার নাম উল্লেখ করা হয়নি। শুধু যাজ্ঞবল্ক্য, উদ্দালক প্রমুখ ঋষির নাম আছে।[১] কয়েক জন মহিলা ঋষি(ঋষিকা)র নামও আছে। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গার্গী ও যাজ্ঞবল্ক্যের স্ত্রী মৈত্রেয়ী।[২৭]

মুখ্য উপনিষদ্‌গুলো চার বেদের কোনো না কোনো শাখার সঙ্গে যুক্ত।[২৮] বেদের বহু শাখা ছিল বলে জানা যায়। কিন্তু তার মধ্যে অল্প কয়েকটিই আজ টিকে আছে। নতুন উপনিষদ্‌গুলোর সঙ্গে বৈদিক সাহিত্যের যোগ বিশেষ নেই বললেই চলে। বেদান্তের কোনো অগ্রণী টীকাকার বা দার্শনিক এগুলোর উপর কোনো টীকা বা ভাষ্য লেখেননি। ভাষার দিক থেকে মুখ্য উপনিষদ্‌গুলোর থেকে এগুলো অনেক আলাদা। নতুন উপনিষদ্‌গুলোতে ভাবের সূক্ষ্মতা কম। এগুলো অনেক বেশি প্রথানুগ। ফলে পাঠকের কাছেও তা সহজবোধ্য।[২৯]

 
উনিশ শতকের প্রথমভাগে লেখা ঋগ্বেদ পুথি
বৈদিক শাখা ও উপনিষদ্‌গুলোর যোগসূত্র
বেদ শাখা মুখ্য উপনিষদ্‌
ঋগ্বেদ শকল ঐতরেয়কৌষীতকি
সামবেদ কৌথুম ছান্দোগ্য
জৈমিনীয় কেন
রণয়নীয়
যজুর্বেদ কৃষ্ণযজুর্বেদ কঠ কঠ
তৈত্তিরীয় তৈত্তিরীয়শ্বেতাশ্বেতর[৩০]
মৈত্রায়নী মৈত্রায়ণী
হিরণ্যকেশী (কপিষ্ঠল)
কথক
শুক্লযজুর্বেদ বাজসনেয়ী মধ্যন্দিনা ঈশবৃহদারণ্যক
কান্ব শাখা
অথর্ববেদ শৌনক মাণ্ডুক্যমুণ্ডক
পৈপ্পলাদ প্রশ্ন

নতুন উপনিষদ্‌ সম্পাদনা

নতুন উপনিষদ্‌গুলো একের পর এক রচিত হয়েছে। তাই এই উপনিষদ্‌গুলোর কোনো নির্দিষ্ট তালিকা নেই।[৩১] কোনো কারণে পুরনো উপনিষদ্‌গুলো নবীন সম্প্রদায়ের প্রবর্তকদের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলে, তারা তাদের মতো করে নতুন উপনিষদ্‌ রচনা করতেন।[৩২] ফ্রেডেরিক স্ক্র্যাডার ১৯০৮ সালে চারটি নতুন উপনিষদ্‌ আবিষ্কার করেছিলেন―বাষ্কল, ছগলেয়, আর্ষেয়শৌনক[৩৩] তিনি এগুলোকে প্রথম গদ্যে রচিত উপনিষদ্‌গুলোর সমসাময়িক বলে দাবি করেছিলেন।[৩৪] ছগলেয়, আর্ষেয়শৌনক উপনিষদের পুথি খণ্ডিত ও অবহেলিত। তবে এগুলোর ফার্সি-লাতিন অনুবাদের সাহায্যে এগুলোকে উদ্ধার করা সম্ভব। ব্রিটিশ শাসনের শেষভাগ পর্যন্ত উপনিষদ্‌ নামধারী বই লেখা হয়েছে।

শাক্ত উপনিষদ্‌গুলোতে মূলত তান্ত্রিক শাক্তবাদের শ্রীবিদ্যা উপাসনা শাখার দুটি প্রধান সম্প্রদায়ের মতবাদগত ও ব্যাখ্যাগত পার্থক্য আলোচিত হয়েছে। প্রামাণ্য শাক্ত উপনিষদের সংখ্যাও অনেক। এগুলো রচয়িতার সম্প্রদায়ের দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা। তাই এগুলোর ব্যাখ্যা সঠিক কিনা, বা তান্ত্রিক ঐতিহ্যে এদের কী স্থান ছিল, তা জানা যায় না। তাছাড়া এগুলোর মধ্যে যে তান্ত্রিক উপাদান রয়েছে, তা তন্ত্র-বহির্ভূত ক্ষেত্রে উপনিষদ্‌ হিসেবে এগুলোর পরিচিতিকেই শুধু খর্ব করেনি, বরং শ্রুতিশাস্ত্র হিসেবে এগুলোর প্রামাণ্যতাকেও হ্রাস করেছে।[৩৫]

দর্শন সম্পাদনা

 
জলবিন্দু পতনের অভিঘাত, এটি ব্রহ্মআত্মা একটি পরিচিত তুলনা।

"ব্রহ্ম" ও "আত্মা" শব্দদুটি উপনিষদে ব্যবহৃত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ।[৩] ব্রহ্ম হলেন বিশ্বের সত্ত্বা আর আত্মা হলেন ব্যক্তিগত সত্ত্বা।[৩৬] এই শব্দদুটির ব্যুৎপত্তি নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতান্তর আছে। ব্রহ্ম শব্দটি সম্ভবত "ব্র" শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ "বৃহত্তম"। ব্রহ্ম হলেন "স্থান, কাল ও কার্য-কারণের অতীত এক অখণ্ড সত্ত্বা। তিনি অব্যয়, অনন্ত, চিরমুক্ত, শাশ্বত, অতীন্দ্রিয়।"[৩৭] আত্মা বলতে বোঝায়, জীবের অন্তর্নিহিত অমর সত্ত্বাটিকে। উপনিষদের মন্ত্রদ্রষ্টাদের মতে, আত্মা ও ব্রহ্ম এক এবং অভিন্ন। এটিই উপনিষদের সর্বশ্রেষ্ঠ মতবাদ।[৩৮][৩৯][৪০][৪১]

বৃহদারণ্যকছান্দোগ্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুখ্য উপনিষদ্‌। এই দুটি উপনিষদ্‌ ঔপনিষদ দর্শনের দুটি প্রধান শাখার প্রতিনিধি। বৃহদারণ্যক-এ "নিষ্প্রপঞ্চ" বা জগতের অতীত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ছান্দগ্যো-এ "সপ্রপঞ্চ" বা জাগতিক বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে।[১] এদুটির মধ্যে বৃহদারণ্যক প্রাচীনতর।[৪২]হিন্দুদের কাছে যে প্রতীকটি পবিত্রতম, সেই নাদব্রহ্মরূপী ওঁ-এর প্রথম বিস্তারিত ব্যাখ্যা পাওয়া যায় উপনিষদে। ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ (অর্থাৎ, "ওঁ ত্রিবিধ বিঘ্নের শান্তি হউক"। "ত্রিবিধ বিঘ্ন" বলতে আধ্যাত্মিক বা রোগ ইত্যাদি শারীরিক ও মানসিক বিপদ, আধিদৈবিক বা আকস্মিক দুর্ঘটনা ইত্যাদি দৈব বিপদ এবং আধিভৌতিক অর্থাৎ হিংস্র প্রাণীদের দ্বারা কৃত অনিষ্টকে বোঝায়)[৪৩] মন্ত্রটি উপনিষদে বারবার দেখা যায়। উপনিষদে ভক্তিযোগের পথটির উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। পরবর্তীকালের শিবগীতা ঈশ্বরগীতা ভগবদ্গীতা ইত্যাদি ধর্মগ্রন্থে অবশ্য এই পথটি ঈশ্বর উপাসনার অন্যতম প্রধান পথ হয়ে উঠেছে।[৪৪]

উপনিষদের চার মহাবাক্য
সংস্কৃত উদ্ধৃতি বাংলা অর্থ উপনিষদ্‌
প্রজ্ঞানং ব্রহ্ম "প্রজ্ঞানই হলেন ব্রহ্ম" ঐতরেয় উপনিষদ্‌[৪৫]
অহং ব্রহ্মাস্মি "আমিই ব্রহ্ম" বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌[৪৬]
তত্ত্বমসি "তুমিই সেই" ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌[৪৭]
অয়মাত্মা ব্রহ্ম "এই আত্মাই ব্রহ্ম" মাণ্ডুক্য উপনিষদ্‌[৪৮]

সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন বলেন, উপনিষদ্‌গুলো দুইজন ব্যক্তি বা প্রাণীর কথোপকথনের আকারে লেখা। এগুলো দর্শনশাস্ত্রের আকারে লেখা হয়নি। তার মতে, মাণ্ডুক্য উপনিষদ্‌-এ একটি ব্যাঙের (সংস্কৃত ভাষায় মণ্ডুক শব্দের মানে ব্যাঙ) রূপকাশ্রিত উক্তিগুলো ভ্রান্তির সাধারণ উৎস।[৪৯]

বেদান্তের শাখাসম্প্রদায় সম্পাদনা

 
অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের প্রবক্তা আদি শঙ্কর

বেদান্তের সকল শাখাসম্প্রদায়েরই উৎস তিনটি ধর্মগ্রন্থ–উপনিষদ্‌, ভগবদ্গীতাব্রহ্মসূত্র[৫০] উপনিষদে অদ্বৈত ব্রহ্ম-আত্মার দুটি ধরনের কথা পাওয়া যায়:[৫১]

  • একটি যাতে অদ্বৈত ব্রহ্ম-আত্মা বিশ্বের সব কিছুর মধ্যে পরিব্যপ্ত।
  • অপরটি যাতে জগতের সব কিছুই আসলে মায়া।

বেদান্তের পরবর্তীকালের ভক্তিপন্থী দ্বৈতবাদ ও বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ এবং ব্রহ্মবাদী অদ্বৈত বেদান্তের জন্ম এই দুটি ধারণার পার্থক্যের জন্যই সম্ভব হয়েছে। বেদান্তের তিনটি প্রধান শাখা সম্প্রদায় হল অদ্বৈত, দ্বৈতবিশিষ্টাদ্বৈত। বেদান্তের অন্যান্য উপনিষদ্‌-কেন্দ্রিক শাখাসম্প্রদায়গুলো হল নিম্বার্কের দ্বৈতাদ্বৈত, বল্লভের শুদ্ধাদ্বৈত, চৈতন্যের অচিন্ত্যভেদাভেদ।[৫২] আদি শঙ্কর ১১টি মুখ্য উপনিষদের ভাষ্য রচনা করেন।

হিন্দু দর্শনের সবচেয়ে প্রভাবশালী শাখাসম্প্রদায় হল অদ্বৈত বেদান্ত শাখা।[৫৩] যদিও মূলধারার হিন্দুধর্মে এই শাখার প্রভাব ঠিক কতটা তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।[৫৪] উপনিষদের আপাতবিরোধী বক্তব্যগুলোর ভাষ্যরচনা মাধ্যমে প্রথম অদ্বৈতবাদ প্রচার করেন গৌড়পাদ।[৫৫] অদ্বৈত বেদান্ত একটি একেশ্বরবাদী মতবাদ।[৫৩] অদ্বৈতবাদ ব্রহ্ম ও আত্মার অভিন্নতার কথা বলে। গৌড়পাদ অদ্বৈতবাদের প্রথম ঐতিহাসিক প্রবক্তা হলেও এই মত বিস্তারলাভ করে আদি শঙ্করের মাধ্যমে। তিনি ছিলেন গৌড়পাদের জনৈক শিষ্যের শিষ্য। রাধাকৃষ্ণন মনে করেন, শঙ্করের অদ্বৈতবাদ উপনিষদ্ ও ব্রহ্মসূত্র-এর প্রত্যক্ষ বিকাশের ফলস্রুতি। তিনি নতুন কিছুই বলেননি।[৫৬] যদিও অন্যান্য গবেষকেরা শঙ্করের রচনা ব্রহ্মসূত্র-এর বক্তব্যের মধ্যে বিস্তর ফারাক খুঁজে পান।[৫৭][৫৮] তারা বলেন, উপনিষদের অনেক বক্তব্যের সঙ্গে শঙ্করের বক্তব্য মেলে না।[৫৯] গৌড়পাদের জীবদ্দশাতেও ভারতে বৌদ্ধধর্মের যথেষ্ট প্রভাব ছিল। তিনি নিজেও তার মতবাদ ও বৌদ্ধ মতবাদের মধ্যে কিছু কিছু সাদৃশ্যের ব্যাপারে সচেতন ছিলেন।[৫৫] তার রচনায় বৌদ্ধধর্মের বহু পারিভাষিক শব্দ গৃহীত হয়েছিল। তিনি বৌদ্ধদের মত ও উপমা ইত্যাদি ব্যবহারও করেছিলেন।[৬০] তবে ভাষ্যের শেষে তিনি স্পষ্ট বলেছিলেন, "বুদ্ধ একথা বলেননি।" উপনিষদ্ ভিত্তি করে একাধিক দার্শনিক মতবাদ গড়ে উঠেছে। তবে আদি শঙ্কর-পরবর্তী ভাষ্যকারেরা শঙ্করের মতকে আদর্শ অদ্বৈতবাদী মতবাদ মনে করে সেই মতের অনুসরণ করে এসেছেন।[টীকা ৫][টীকা ৬][টীকা ৭][টীকা ৮][টীকা ৯]

বেদান্তের অপর প্রধান শাখা বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ প্রবর্তন করেন রামানুজ। তিনি একাদশ-দ্বাদশ শতাব্দীর মানুষ ছিলেন। আধুনিক গবেষকদের মতে, রামানুজের বেদান্তভাষ্য শঙ্করের ভাষ্যের তুলনায় অনেক বেশি মূলানুগ। তাছাড়া রামানুজের মত হিন্দুদের সাধারণ ধর্মবিশ্বাসের অনেক কাছাকাছি। রামানুজ শঙ্করের মত অস্বীকার করেছিলেন।[৫৪] বেদান্তের এই শাখায় অপর দুটি শাখাকে ভক্তি ও প্রেমের পথে এক করার প্রচেষ্টা দেখা যায়।[৬৫] এটিকে বলে শ্রী বৈষ্ণবধর্ম। এই মতে, জীব ও ব্রহ্ম দুটি পৃথক সত্ত্বা নয়। বরং ঈশ্বর জীবের অন্তর্নিহিত সত্ত্বা।[৬৫]

উপনিষদের দ্বৈতবাদী শাখার প্রবর্তক হলেন মধ্ব। তিনি ১১৩৮ সালে উডিপির কাছে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।[৬৬] অনেকে দ্বৈতবাদকে আস্তিক্যবাদী শাখাগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ মনে করেন। দ্বৈতবাদে ব্রহ্ম ও আত্মার পৃথক সত্ত্বা স্বীকৃত।[৬৭]

ক্রমবিকাশ সম্পাদনা

সংখ্যা ও রচয়িতা সম্পাদনা

নতুন উপনিষদের অনেকগুলো মধ্য ও প্রাক-আধুনিক যুগে রচিত। ১৯২৬ সাল পর্যন্ত নতুন উপনিষদ্গুলো আবিষ্কৃত হয়েছে।[১১] ১৬৫৬ সালে রচিত[৬৮] মুক্তিকা উপনিষদে ১০৮টি প্রধান উপনিষদের নাম আছে।[৬৯] এই উপনিষদটি নিজেকেও প্রধান উপনিষদের তালিকাভুক্ত করেছে। যদিও উপনিষদ্ নামধারী একাধিক বইয়ের রচনাকাল বিংশ শতাব্দী। এগুলোর মধ্যে অনেকগুলোর সঙ্গে আবার বৈদিক দর্শনের কোনো যোগই নেই।[৭০] নতুন উপনিষদ্গুলো মুখ্য উপনিষদ্গুলোকে অনুকরণ করে লেখা।

১৬৫৭ সালে মুঘল সম্রাট শাহজাহানের পুত্র দারা শিকোহ পঞ্চাশটি উপনিষদ্ ফার্সি ভাষায় অনুবাদ করান। ১৮০৫ সালে উপনিষদের প্রথম ইংরেজি অনুবাদ করেন হেনরি টমাস কোলব্রুক[৭১] তিনি ১৭০টি উপনিষদের অস্তিত্ব সম্পর্কে অবগত ছিলেন। ১৯৮৫ সালে স্যাডহ্যালের ক্যাটালগ উপনিষদ্-বাক্য-মহাকোষ-এ ২২৩টি উপনিষদের তালিকা আছে।[৭২]

উপনিষদ্ রচয়িতা হিসেবে একাধিক ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়। প্রাচীন উপনিষদ্গুলোতে যাজ্ঞবল্ক্য ও উদ্দালক আরুণির কথা পাওয়া যায়।[৭৩] অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ লেখকেরা হলেন শ্বেতকেতু, শাণ্ডিল্য, ঐতরেয়, পিপ্পলাদ ও সনৎকুমার। মহিলাদের মধ্যে যাজ্ঞবল্ক্যের স্ত্রী মৈত্রেয়ী ও গার্গীর নাম উল্লেখযোগ্য।

সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের মতে, রচয়িতার নাম নিয়ে এমন কোনো দাবি তথ্যনিষ্ঠ নয়। তিনি এই নামগুলোকে কাল্পনিক চরিত্র মনে করতেন। যেমন ছান্দোগ্য উপনিষদের রচয়িতা শ্বেতকেতুর নাম কোনো বইতেই পাওয়া যায় না। তার অপর কোনো বইও নেই।[৪৯]

কালপঞ্জি ও রচনার স্থান সম্পাদনা

উপনিষদ্‌ রচনার সঠিক তারিখ নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। এক এক জন গবেষক বেদ ও উপনিষদের রচনাকাল সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। কোনো কোনো গবেষকের মতে, বৃহদারণ্যকছান্দোগ্য সবচেয়ে পুরনো উপনিষদ্‌। এদুটি প্রাক্‌-বৌদ্ধ যুগে রচিত।[৯][১০][টীকা ১০] অন্যদিকে তৈত্তিরীয়, ঐতরেয়কৌষিতকী উপনিষদে বৌদ্ধ প্রভাব রয়েছে। তাই এগুলো খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর পরবর্তীকালের রচনা বলেই অনুমান করা হয়।[১০] অন্যান্য মুখ্য উপনিষদ্‌গুলো খ্রিস্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দের শেষ ভাগে লেখা।[১০]

ডুসেনের মতে প্রাচীনতম উপনিষদ্‌গুলো গদ্য রচনা। কিন্তু তার এই মত অস্বীকার করেন রাণাডে। তার মতে, প্রাচীন উপনিষদ্‌গুলো পদ্যে রচিত। কয়েকটি মাত্র শেষদিকে গদ্যে লেখা হয়েছিল। তিনি ছয় ধরনের পরীক্ষার পর একটি পৃথক কালপঞ্জি প্রস্তাব করেছিলেন।[৭৬] এই সারণিতে কয়েকটি প্রধান রচনার সংক্ষিপ্তসার পাওয়া যাবে:[৭৭]

বৈদিক ও/অথবা ঔপনিষদ্‌ যুগের তারিখ নিয়ে বিভিন্ন গবেষকদের মত
লেখক সূচনা (খ্রিস্টপূর্ব) সমাপ্তি (খ্রিস্টপূর্ব) কালনির্ণয়ের পদ্ধতি
তিলক (উইন্টারনিটজ তার সঙ্গে একমত)
৬০০০
২০০
জ্যোতিষ
বি. ভি. কামেশ্বর আইয়ার
২৩০০
২০০০
জ্যোতিষ
ম্যাক্স মুলার
১০০০
৮০০
ভাষাতাত্ত্বিক
রাণাডে
১২০০
৬০০
ভাষাতাত্ত্বিক ও দর্শন ধারণার বিকাশ ইত্যাদি
রাধাকৃষ্ণন
৮০০
৬০০
দর্শন ধারণার বিকাশ
মুখ্য উপনিষদ্‌গুলোর তারিখ ও কালপঞ্জি
ডুসেন (১০০০ বা ৮০০ – ৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) রাণাডে (১২০০ – ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) রাধাকৃষ্ণন (৮০০ – ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)
প্রাচীন গদ্য উপনিষদ্‌: বৃহদারণ্যক, ছান্দোগ্য, তৈত্তিরীয়, ঐতরেয়, কৌশিতকী, কেন
পদ্য উপনিষদ্‌: কেন, কঠ, ঈশ, শ্বেতাশ্বেতর, মুণ্ডক
পরবর্তীকালের গদ্য উপনিষদ্‌: প্রশ্ন, মৈত্রী, মাণ্ডুক্য
প্রথম গোষ্ঠী: বৃহদারণ্যক, ছান্দোগ্য
দ্বিতীয় গোষ্ঠী: ঈশ, কেন
তৃতীয় গোষ্ঠী: ঐতরেয়, তৈত্তিরীয়, কৌশিতকী
চতুর্থ গোষ্ঠী: কঠ, মুণ্ডক, শ্বেতাশ্বেতর
পঞ্চম গোষ্ঠী: প্রশ্ন, মাণ্ডুক্য, মৈত্রিয়ানী
প্রাক-বুদ্ধ, গদ্য: ঐতরেয়, কৌশিতকী, তৈত্তিরীয়, ছান্দোগ্য, বৃহদারণ্যক, কেন
রূপান্তরের যুগ: কেন (১–৩), বৃহদারণ্যক (চার ৮–২১), কঠ, মাণ্ডুক্য
সাংখ্য ও যোগ দর্শনের প্রভাব: মৈত্রী, শ্বেতাশ্বেতর।

আদি উপনিষদ্‌গুলোর রচনাস্থল উত্তর ভারত। মোটামুটিভাবে আন্দাজ করা হয়, এই অঞ্চলের পশ্চিম সীমায় ছিল সিন্ধু নদ, পূর্বে নিম্ন গাঙ্গেয় উপত্যকা, উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা এবং দক্ষিণে বিন্ধ্য পর্বতমালা। কুরু-পাঞ্চাল, কোশল-বিদেহ এবং তার পূর্ব ও দক্ষিণের সন্নিহিত অঞ্চল ছিল ব্রাহ্মণ্য হিন্দুধর্মের মূল কেন্দ্র। এইখানেই উপনিষদ্‌ রচিত হয়েছিল।[৭৮]

সাম্প্রতিক কালে, প্রতিটি উপনিষদের সঠিক রচনাস্থল নিয়ে অনুসন্ধান চালানো হয়েছে। কিন্তু সেই কাজ এখনও শেষ হয়নি। উইটজেল মনে করেন, বৃহদারণ্যক উপনিষদের রচনাস্থল বিদেহ। কারণ এখানকার রাজা জনক এই উপনিষদের একজন মুখ্য চরিত্র। তাছাড়া এই উপনিষদের অন্যতম মুখ্য চরিত্র যাজ্ঞবল্ক্য ছিলেন জনকের রাজপণ্ডিত।[৭৯] কুরু-পাঞ্চাল রাজ্যের কেন্দ্রস্থলের ব্রাহ্মণরা এই অঞ্চলটিকে শ্রেষ্ঠ ধর্মতত্ত্ববিদ ও সাহিত্যিকদের বাসস্থান বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ, এই অঞ্চলই ছিল উত্তর-বৈদিক যুগের ব্রাহ্মণ্য হিন্দুধর্মের প্রাণকেন্দ্র। বৃহদারণ্যক উপনিষদের তৃতীয় ও চতুর্থ অধ্যায়ের পটভূমি সম্ভবত এটাই প্রমাণ করতে চেয়েছে যে বিদেহর যাজ্ঞবল্ক্য কুরু-পাঞ্চালের শ্রেষ্ঠ তাত্ত্বিকদের তর্কে পরাস্ত করেছিলেন। হয়ত, এখানে শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে বিদেহের উত্থানের একটি ইঙ্গিতও রয়েছে। ছান্দোগ্য উপনিষদের রচনাস্থল সম্ভবত আরও পশ্চিমের কোনো অঞ্চলে। সম্ভবত কুরু-পাঞ্চালের পশ্চিম অঞ্চলে।[৮০] কুরু-পাঞ্চালের বিশিষ্ট তাত্ত্বিক উদ্দালক আরুণির সম্পর্কে নেতিবাচক কিছু কথা পাওয়া যায় বৃহদারণ্যকে। কিন্তু ছান্দোগ্যে তিনিই প্রধান চরিত্র। মুখ্য উপনিষদ্‌গুলোর সঙ্গে তুলনা করলে, মুক্তিকা উপনিষদে যে সব নতুন উপনিষদের নাম পাওয়া যায়, সেগুলো সম্পূর্ণ নতুন এলাকায় লেখা। সম্ভবত দক্ষিণ ভারতে। আর এগুলো তুলনামূলকভাবে অনেক পরবর্তীকালের।[১৯]

সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন দাবি করেন, প্রায় প্রতিটি উপনিষদ্‌ই বহু বছর ধরে গুপ্ত অবস্থায় সংরক্ষিত হয়। এগুলো শ্লোকের আকারে মুখে মুখে প্রচলিত ছিল। তাই মূল রচনা থেকে বর্তমানে প্রাপ্ত পাঠ কতটা ভিন্ন, তা আর ধরার উপায় নেই।[৪৯]

দর্শন ধারণার ক্রমবিকাশ সম্পাদনা

বৈদিক সংহিতার স্তোত্রগুলো ক্রিয়াকাণ্ডের উপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করে। ব্রাহ্মণগুলোতে এই ক্রিয়াকাণ্ডের পদ্ধতি লিপিবদ্ধ আছে। কিন্তু উপনিষদ্‌ ক্রিয়াকাণ্ডের সম্পূর্ণ বিরোধী।[৮১] প্রাচীনতর উপনিষদ্‌গুলোতে ক্রিয়াকাণ্ডের আড়ম্বর বৃদ্ধির সরাসরি বিরোধিতা করা হয়েছে। বৃহদারণ্যক উপনিষদে বলা হয়েছে, যিনি আত্মা ছাড়া অন্য কোনো দেবতার পূজা করেন, তিনি দেবতাদের গৃহপালিত পশু মাত্র। ছান্দোগ্য উপনিষদে দেবতার উদ্দেশ্যে বলিদান প্রথাটিকে উপহাস করে বলা হয়েছে, এ যেন "ওঁ চলো খাই! ওঁ চলো পান করি!" আউড়ে কুকুরদের শোভাযাত্রা। মুণ্ডক উপনিষদে বলা হয়েছে যিনি ক্রিয়াকাণ্ডকে মূল্য দেন তিনি এক পলকা নৌকার মতো। বার্ধক্য ও মৃত্যু শেষ পর্যন্ত তাকে গ্রাস করবে।[৮১]

তবে ক্রিয়াকাণ্ডের বিরোধিতা সব যুগে প্রত্যক্ষভাবে করা হয়নি। কখনও কখনও উপনিষদ্‌গুলো আরণ্যকের বিধিগুলোকে পরিবর্ধিত করে ক্রিয়াকাণ্ডকে রূপকে পরিণত করেছে এবং তার একটি দার্শনিক ব্যাখ্যাও দিয়েছে। যেমন, বৃহদারণ্যকে অশ্বমেধ যজ্ঞের একটি রূপক ব্যাখ্যা আছে। এখানে বলা হয়েছে, অশ্বমেধ যজ্ঞের মাধ্যমে বিশ্বের অধীশ্বর হওয়া যায়। তেমনি আধ্যাত্মিক জগতের অধীশ্বর হতে গেলে সংসার-রূপ অশ্বকে বলি দিতে হয়। উল্লেখ্য, অশ্বমেধ যজ্ঞের শেষে যজ্ঞের ঘোড়াটিকে বলি দেওয়া হত।[৮১]

একই ভাবে বেদে উল্লিখিত দেবতাদের সংখ্যা কমিয়ে আনার একটি প্রবণতাও উপনিষদের মধ্যে দেখা যায়। যাজ্ঞবল্ক্যকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, মোট কতজন দেবতা আছেন, তিনি উত্তরে সংখ্যা কমাতে কমাতে বলেন, তেত্রিশ, ছয়, তিন, দুই, দেড় এবং শেষে এক। রুদ্র, বিষ্ণু, ব্রহ্মা প্রভৃতি বৈদিক দেবতারা উপনিষদের সর্বোচ্চ, অমর ও গুণাতীত ব্রহ্মের অধীনস্থ। এমনকি ইন্দ্র ও ব্রাহ্মণের সর্বোচ্চ দেবতা প্রজাপতিকে কৌশিতকী উপনিষদে ব্রহ্মের দারোয়ান বলা হয়েছে।[৮১]

সংক্ষেপে বললে, বেদের একেশ্বর "একং সৎ" উপনিষদের একেশ্বর "একমেবাদ্বিতীয়ম্‌"-এ পরিণত হয়েছেন।[৮১]

পাশ্চাত্যের প্রতিক্রিয়া সম্পাদনা

সম্ভাব্য প্রাথমিক যোগাযোগ সম্পাদনা

ভারতীয় দার্শনিকেদের গ্রিক ভ্রমণের ফলেই সম্ভবত ঔপনিষদ্‌ ধ্যানধারণার প্রভাব প্রাচীন গ্রিক দর্শনে পড়েছিল।[৮২] বিশেষত, প্লেটোর ডায়ালগের নানা জায়গায় ভারতীয় প্রভাব স্পষ্ট। প্লেটোর যুক্তি মনস্তত্ত্বের সঙ্গে ভারতীয় দর্শনের তিন গুণ ধারণার কিছু কিছু মিল পাওয়া যায়। অধ্যাপক এডওয়ার্ড জনস উরউইক অনুমান করেন যে, প্লেটোর দ্য রিপাবলিক বইয়ের বিভিন্ন প্রধান বক্তব্যের মধ্যে ভারতীয় প্রভাব রয়েছে।[৮২][৮৩]গার্ব ও ওয়েস্টও উরউইকের সঙ্গে একমত।[৮৪][৮৫]

এ. আর. ওয়াদিয়া মনে করেন, প্লেটোর মতবাদে ধর্মীয় কোনো যোগ নেই।[৮২] তার বক্তব্যের প্রধান লক্ষ্য ছিল আদর্শ রাষ্ট্র স্থাপন। পরে তিনি রাষ্ট্রহীন ব্যবস্থার প্রস্তাব দিয়েছেন বটে, কিন্তু সেটাও মানুষের সুখসুবিধার কথা ভেবে। ঔপনিষদ্‌ দার্শনিকদের লক্ষ্য কখনই আদর্শ রাষ্ট্র বা সমাজ গঠন ছিল না। তারা জন্ম ও মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি লাভের জন্য মোক্ষের চিন্তাই করতেন। ওয়াদিয়ার মতে, ভারতীয় ও গ্রিক দার্শনিকদের মধ্যে মতের আদানপ্রদান কখনই ঘটেনি। প্লেটোর দর্শন গ্রিক দর্শন ও ঔপনিষদ্‌ দর্শন ভারতীয় দর্শন।[৮২]

আধুনিক অনুবাদ সম্পাদনা

ফার্সি, ইতালীয়, উর্দু, ফরাসি, লাতিন, জার্মান, ইংরেজি, ডাচ, পোলিশ, জাপানি, স্প্যানিশ ও রাশিয়ান সহ বিভিন্ন ভাষায় উপনিষদ্‌ অনূদিত হয়েছে।[৮৬] মুঘল সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে (১৫৫৬-১৫৮৬) উপনিষদ্‌ ফার্সিতে অনূদিত হয়। এটিই উপনিষদের প্রথম অনুবাদ।[৮৭][৮৮] আকবরের প্রপৌত্র দারা শিকোহ বারাণসীর পণ্ডিতদের সাহায্যে সির্‌-এ-আকবর নামে একটি সংকলন প্রকাশ করেন। এই গ্রন্থের ভূমিকা থেকে জানা যায় যে, উপনিষদ্‌ কোরানের কিতাব আল-মাকনুন বা গুপ্তগ্রন্থের তালিকার অন্তর্ভুক্ত।[৮৯] যদিও আকবর বা দারা শিকোর সময়ের অনুবাদগুলো ১৭৭৫ সালের আগে পাশ্চাত্য জগতে পরিচিত হয়নি।[৮৭]

ফরাসি প্রাচ্যবিদ আব্রাহাম হায়াসিন্থ অ্যানকুটিন-দুপেরন ১৭৫৫ থেকে ১৭৬১ সাল পর্যন্ত ভারতে বাস করেছিলেন। ১৭৭৫ সালে তিনি ম জেন্টিলের কাছ থেকে উপনিষদের একটি পাণ্ডুলিপি পান এবং এটিকে ফরাসি ও লাতিনে অনুবাদ করেন। লাতিন অনুবাদখানি ১৮০২-০৪ সালে Oupneck'hat নামে দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়।[৯০] ফরাসি অনুবাদটি প্রকাশিত হয়নি।[৯১] ১৮৩২ সালে উপনিষদ্‌ প্রথম জার্মান ভাষায় অনূদিত হয় এবং ১৮৫৩ সালে রোরের ইংরেজি সংস্করণটি প্রকাশিত হয়। তবে ম্যাক্সমুলারের ১৮৭৯ ও ১৮৮৪ সালের সংস্করণ দুটিই উপনিষদের প্রথম প্রথামাফিক ইংরেজি অনুবাদ। এই সংস্করণদুটিতে মোট বারোটি মুখ্য উপনিষদ্‌ অনূদিত হয়।[৮৬] এরপর উপনিষদ্‌ দ্রুত ডাচ, পোলিশ, জাপানি ও রাশিয়ান ভাষায় অনূদিত হয়।[৯২]

আরও দেখুন সম্পাদনা

পাদটীকা সম্পাদনা

  1. "Advaita Vedanta, summarized by Shankara (788–820), advances a non-dualistic (a-dvaita) interpretation of the Upanishads."; অনুবাদ: "আদি শঙ্কর (৭৮৮-৮২০) কর্তৃক সার-সংগৃহীত অদ্বৈত বেদান্ত দর্শন উপনিষদের অদ্বয়বাদী ("অ-দ্বৈত") ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে।[৭]
  2. "These Upanishadic ideas are developed into Advaita monism. Brahman's unity comes to be taken to mean that appearances of individualities."; অনুবাদ: "ঔপনিষদ্‌ ধারণাগুলি ক্রমে ক্রমে বিকাশ লাভ করে অদ্বৈতবাদে পরিণত হয়। ব্রহ্মের একত্ব ব্যক্তির আত্মপ্রকাশের উপায় হিসেবে গৃহীত হয়।"[৮]
  3. "The doctrine of advaita (non dualism) has its origin in the Upanishads."; অনুবাদ: "অদ্বৈতবাদের উৎস উপনিষদে নিহিত রয়েছে।"
  4. These are believed to pre-date Gautam Buddha (c. 500 BCE)[২৪]
  5. The breakdown of the Vedic cults is more obscured by retrospective ideology than any other period in Indian history. It is commonly assumed that the dominant philosophy now became an idealist monism, the identification of atman (self) and Brahman (Spirit), and that this mysticism was believed to provide a way to transcend rebirths on the wheel of karma. This is far from an accurate picture of what we read in the Upanishads. It has become traditional to view the Upanishads through the lens of Shankara's Advaita interpretation. This imposes the philosophical revolution of about 700 C.E. upon a very different situation 1,000 to 1,500 years earlier. Shankara picked out monist and idealist themes from a much wider philosophical lineup.[৫৯]
  6. In this Introduction I have avoided speaking of 'the philosophy of the upanishads', a common feature of most introductions to their translations. These documents were composed over several centuries and in various regions, and it is futile to try to discover a single doctrine or philosophy in them.[৬১]
  7. The Upanishadic age was also characterized by a pluralism of worldviews. While some Upanishads have been deemed 'monistic', others, including the Katha Upanishad, are dualistic.[৬২]
  8. The Maitri is one of the Upanishads that inclines more toward dualism, thus grounding classical Samkhya and Yoga, in contrast to the non-dualistic Upanishads eventuating in Vedanta.[৬৩]
  9. For instances of Platonic pluralism in the early Upanishads see Randall.[৬৪]
  10. The date of the Buddha's birth and death are uncertain: most early 20th-century historians dated his lifetime as c. 563 BCE to 483 BCE,[৭৪] but more recent opinion dates his death to between to between 486 and 483 BCE or, according to some, between 411 and 400 BCE.[৭৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Mahadevan 1956, পৃ. 56।
  2. Max Müller, The Upanishads, Part 1, Oxford University Press, page LXXXVI footnote 1; Quote: "last chapters, parts of the Veda" & "object, the highest purpose of the Veda".
  3. Mahadevan 1956, পৃ. 59।
  4. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; ptraju নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  5. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; wdstrappini নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  6. Ranade 1926, পৃ. 205।
  7. Cornille 1992, পৃ. 12।
  8. Phillips 1995, পৃ. 10।
  9. Olivelle 1998, পৃ. xxxvi।
  10. King ও Ācārya 1995, পৃ. 52।
  11. Ranade 1926, পৃ. 12।
  12. Seymour-Smith, Martin (1998). The 100 Most Influential Books Ever Written: The History of Thought from Ancient Times to Today, Citadel Press, Secaucus, NJ, 1998, আইএসবিএন ০-৮০৬৫-২০০০-০
  13. Deussen, P., Geden, A. (2010). The Philosophy of the Upanishads. p. 42. Cosimo, Inc. আইএসবিএন ১-৬১৬৪০-২৩৯-৩, আইএসবিএন ৯৭৮-১-৬১৬৪০-২৩৯-৬.
  14. Hebbar, N. Influence of Upanishads in the West ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১২ মে ২০১২ তারিখে. Boloji.com. Retrieved on: 2012-03-02.
  15. Macdonell 2004, পৃ. 53।
  16. Schayer 1925, পৃ. 57–67।
  17. Monier-Williams, পৃ. 201।
  18. Müller 1900, পৃ. lxxxiiijj।
  19. Deussen 1908, পৃ. 35–36।
  20. Varghese 2008, পৃ. 131।
  21. Holdrege 1995, পৃ. 426।
  22. Sharma 1985, পৃ. 3, 10–22, 145।
  23. M. Fujii, On the formation and transmission of the JUB, Harvard Oriental Series, Opera Minora 2, 1997
  24. Olivelle 1998, পৃ. 3–4।
  25. Granö, Kari; Harju, Jarmo; Järvinen, Tapani; Karttunen, Tapani; Larikka, Tapani; Paakki, Jukka (১৯৯৫)। গোপাল তাপনী। Boston, MA: Springer US। পৃষ্ঠা 77–96। আইএসবিএন 9781475755411 
  26. King 1995, পৃ. 52।
  27. Ranade 1926, পৃ. 61।
  28. Joshi 1994, পৃ. 90–92।
  29. Heehs 2002, পৃ. 85।
  30. Lal 1992, পৃ. 4090।
  31. Rinehart 2004, পৃ. 17।
  32. Mueller 1859, পৃ. 317।
  33. Singh 2002, পৃ. 3–4।
  34. Schrader ও Adyar Library 1908, পৃ. v।
  35. Brooks 1990, পৃ. 13–14।
  36. Smith 1995, পৃ. 10।
  37. হিন্দুধর্ম, স্বামী নির্বেদানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ২০০৮ মুদ্রণ, পৃ. ১১১
  38. Lanman 1897, পৃ. 790।
  39. Brown 1922, পৃ. 266।
  40. Slater 1897, পৃ. 32।
  41. Varghese 2008, পৃ. 132।
  42. Parmeshwaranand 2000, পৃ. 458।
  43. উপনিষদ্‌ গ্রন্থাবলী, প্রথম খণ্ড, স্বামী গম্ভীরানন্দ সম্পাদিত, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ২০১২ মুদ্রণ, পৃ. ২
  44. Robinson 1992, পৃ. 51.।
  45. Panikkar 2001, পৃ. 669।
  46. Panikkar 2001, পৃ. 725–727।
  47. Panikkar 2001, পৃ. 747–750।
  48. Panikkar 2001, পৃ. 697–701।
  49. Radhakrishnan, Sarvepalli। The Principal Upanishads। Indus / Harper Collins India; 5th edition (1994)। আইএসবিএন 81-7223-124-5, 978-8172231248 |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য) 
  50. Radhakrishnan 1956, পৃ. 272।
  51. Mahadevan 1956, পৃ. 62।
  52. Ranade 1926, পৃ. 179–182।
  53. Encyclopædia Britannica
  54. Klostermaier 2007, পৃ. 361–363।
  55. Radhakrishnan 1956, পৃ. 273।
  56. Radhakrishnan 1956, পৃ. 284।
  57. King 1999, পৃ. 221।
  58. Nakamura 2004, পৃ. 31।
  59. Collins 2000, পৃ. 195।
  60. King 1999, পৃ. 219।
  61. Olivelle 1998, পৃ. 4।
  62. Glucklich 2008, পৃ. 70।
  63. Fields 2001, পৃ. 26।
  64. Collins 2000, পৃ. 197–198।
  65. Chari 1956, পৃ. 305।
  66. Raghavendrachar 1956, পৃ. 322।
  67. Sharma 2000, পৃ. 1–2।
  68. Tripathy 2010, পৃ. 84।
  69. Sen 1937, পৃ. 19।
  70. Varghese 2008, পৃ. 101।
  71. See Henry Thomas Colebrooke (1858), Essays on the religion and philosophy of the Hindus. London: Williams and Norgate. In this volume, see chapter 1 (pp. 1–69), On the Vedas, or Sacred Writings of the Hindus, reprinted from Colebrooke's Asiatic Researches, Calcutta: 1805, Vol 8, pp. 369–476. A translation of the Aitareya Upanishad appears in pages 26–30 of this chapter.
  72. Sadhale 1987
  73. Mahadevan 1956, পৃ. 59-60।
  74. Cousins 1996, পৃ. 57–63।
  75. Narain 2003
  76. Ranade 1926, পৃ. 13–14।
  77. Sharma 1985, পৃ. 17–19।
  78. Olivelle 1998, পৃ. xxxvii।
  79. Olivelle 1998, পৃ. xxxviii।
  80. Olivelle 1998, পৃ. xxxix।
  81. Mahadevan 1956, পৃ. 57।
  82. Wadia 1956, পৃ. 64-65।
  83. Ranade 1925, পৃ. xix।
  84. Chousalkar, পৃ. 130।
  85. Urwick 1920, পৃ. 14।
  86. Sharma 1985, পৃ. 20।
  87. Müller 1900, পৃ. lvii।
  88. Muller 1899, পৃ. 204।
  89. Mohammada 2007, পৃ. 54।
  90. Encyclopædia Britannica 1911
  91. Müller 1900, পৃ. lviii।
  92. Sharma 1985, পৃ. 19-20।

উৎস সম্পাদনা

  • Ambedkar, Bhimrao (১৯৮৭), Dr Babasaheb Ambedkar Writings and Speeches, Vol. 3", Government of Mahararasshtra, Bombay, সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ৮, ২০১০ 
  • Anquetil Duperron, Abraham Hyacinthe, Encyclopædia Britannica, ১৯১১ 
  • Brodd, Jefferey (২০০৩), World Religions, Winona, MN: Saint Mary's Press, আইএসবিএন 978-0-88489-725-5 
  • Brooks, Douglas Renfrew (১৯৯০), The Secret of the Three Cities: An Introduction to Hindu Shakta Tantrism, The University of Chicago Press 
  • Brown, Rev. George William (১৯২২), Missionary review of the world, Volume 45, Funk & Wagnalls 
  • Causality: The Central Philosophy of Buddhism, The University Press of Hawaii, ১৯৭৫, আইএসবিএন 0-8248-0298-5 
  • Chari, P. N. Srinivasa (১৯৫৬), Sarvepalli Radhakrishnan, সম্পাদক, History of Philosophy Eastern and Western 
  • Chousalkar, Ashok (১৯৮৬), Social and Political Implications of Concepts Of Justice And Dharma, Mittal Publications 
  • Chowdhry, Tarapada (১৯৫৬), Sarvepalli Radhakrishnan, সম্পাদক, History of Philosophy Eastern and Western, George Allen and Unwin Limited, পৃষ্ঠা 46 
  • Collins, Randall (২০০০), The Sociology of Philosophies: A Global Theory of Intellectual Change, Harvard University Press, আইএসবিএন 0-674-00187-7 
  • Cornille, Catherine (১৯৯২), The Guru in Indian Catholicism: Ambiguity Or Opportunity of Inculturation, Wm. B. Eerdmans Publishing, আইএসবিএন 978-0-8028-0566-9 
  • Cousins, L. S. (১৯৯৬), The dating of the historical Buddha: a review article, 3 (6(1)), Journal of the Royal Asiatic Society, পৃষ্ঠা 57–63, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ২৩ এপ্রিল ২০১৩ 
  • Deussen, Paul (১৯০৮), The philosophy of the Upanishads, Alfred Shenington Geden, T. & T. Clark, আইএসবিএন 0-7661-5470-X 
  • A.G.Krishna Warrier (translator), Muktika Upanishad, The Theosophical Publishing House, Chennai, ২৬ মার্চ ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ Ausust 10, 2010  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  • Easwaran, Eknath (২০০৭), The Upanishads, Nilgiri Press, আইএসবিএন 978-1-58638-021-2 
  • Eliot, T. S. (১৯৬৩), Collected Poems, 1909-1962, New York: Harcourt, Brace & World, আইএসবিএন 0-15-118978-1 
  • Encyclopædia Britannica, Advaita, সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ১০, ২০১০ 
  • Farquhar, John Nicol (১৯২০), An outline of the religious literature of India, H. Milford, Oxford university press, আইএসবিএন 81-208-2086-X 
  • Fields, Gregory P (২০০১), Religious Therapeutics: Body and Health in Yoga, Āyurveda, and Tantra, SUNY Press, আইএসবিএন 0-7914-4916-5 
  • Glucklich, Ariel (২০০৮), The Strides of Vishnu: Hindu Culture in Historical Perspective, Oxford University Press, আইএসবিএন 0-19-531405-0 
  • Heehs, Peter (২০০২), Indian religions: a historical reader of spiritual expression and experience, NYU Press, আইএসবিএন 978-0-8147-3650-0 
  • Holdrege, Barbara A. (১৯৯৫), Veda and Torah, Albany: SUNY Press, আইএসবিএন 0-7914-1639-9 
  • Joshi, Kireet (১৯৯৪), The Veda and Indian culture: an introductory essay, Motilal Banarsidass Publ., আইএসবিএন 978-81-208-0889-8 
  • Kalupahana (১৯৭৫), Causality: The Central Philosophy of Buddhism, The University Press of Hawaii, আইএসবিএন 0-8248-0298-5 
  • King, Richard (১৯৯৯), Indian philosophy: an introduction to Hindu and Buddhist thought, Edinburgh University Press, আইএসবিএন 0-87840-756-1 
  • King, Richard; Ācārya, Gauḍapāda (১৯৯৫), Early Advaita Vedānta and Buddhism: the Mahāyāna context of the Gauḍapādīya-kārikā, SUNY Press, আইএসবিএন 978-0-7914-2513-8 
  • Klostermaier, Klaus K. (২০০৭), A survey of Hinduism, SUNY Press, আইএসবিএন 0-585-04507-0 
  • Lanman, Charles R (১৮৯৭), The Outlook, Volume 56, Outlook Co. 
  • Lal, Mohan (১৯৯২), Encyclopaedia of Indian Literature: sasay to zorgot, Sahitya Akademi, আইএসবিএন 978-81-260-1221-3 
  • Müller, Friedrich Max (১৯০০), The Upanishads Sacred books of the East The Upanishads, Friedrich Max Müller, Oxford University Press 
  • Macdonell, Arthur Anthony (২০০৪), A practical Sanskrit dictionary with transliteration, accentuation, and etymological analysis throughout, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন 978-81-208-2000-5 
  • Mahadevan, T. M. P (১৯৫৬), Sarvepalli Radhakrishnan, সম্পাদক, History of Philosophy Eastern and Western, George Allen & Unwin Ltd 
  • Marbaniang, Domenic (২০১১), Epistemics of Divine Reality, Domenic Marbaniang, আইএসবিএন 978-1-105-16077-6 
  • Mohammada, Malika (২০০৭), The foundations of the composite culture in India, Aakar Books, আইএসবিএন 978-81-89833-18-3 
  • Monier-Williams, A Sanskrit-English Dictionary, আইএসবিএন 0-8426-0286-0, সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ১০, ২০১০ 
  • Mueller, Friedrich Max (১৮৫৯), A history of ancient Sanskrit literature so far as it illustrates the primitive religion of the Brahmans, Williams & Norgate 
  • Muller, F. Max (১৮৯৯), The science of language founded on lectures delivered at the royal institution in 1861 AND 1863, আইএসবিএন 0-404-11441-5 
  • Nakamura, Hajime (২০০৪), A history of early Vedānta philosophy, Volume 2, Trevor Leggett, Motilal Banarsidass Publ. 
  • Narain, A. K (২০০৩), Narain, A. K, সম্পাদক, The Date of the Historical Śākyamuni Buddha', B. R. Publishing Corporation, New Delhi, আইএসবিএন 81-7646-353-1 
  • Olivelle, Patrick (১৯৯৮), Upaniṣads, Oxford University Press, আইএসবিএন 0-19-282292-6 
  • Panikkar, Raimundo (২০০১), The Vedic experience: Mantramañjarī : an anthology of the Vedas for modern man and contemporary celebration, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন 978-81-208-1280-2 
  • Parmeshwaranand, Swami (২০০০), Encyclopaedic Dictionary of Upanisads, Sarup & Sons, আইএসবিএন 978-81-7625-148-8 
  • Parmeshwaranand, Swami (২০০০), Encyclopaedic Dictionary of Upanisads, Sarup & Sons, আইএসবিএন 978-81-7625-148-8 
  • Phillips, Stephen H. (১৯৯৫), Classical Indian metaphysics: refutations of realism and the emergence of "new logic", Open Court Publishing, আইএসবিএন 978-81-208-1489-9, সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১০-২৪ 
  • Radhakrishnan, Sarvepalli (১৯৫৬), Sarvepalli Radhakrishnan, সম্পাদক, History of Philosophy Eastern and Western, George Allen & Unwin Ltd 
  • Raghavendrachar, Vidvan H. N (১৯৫৬), Sarvepalli Radhakrishnan, সম্পাদক, History of Philosophy Eastern and Western 
  • Ranade, R. D. (১৯২৬), A constructive survey of Upanishadic philosophy, Bharatiya Vidya Bhavan 
  • Rinehart, Robin (২০০৪), Robin Rinehart, সম্পাদক, Contemporary Hinduism: ritual, culture, and practice, ABC-CLIO, আইএসবিএন 978-1-57607-905-8 
  • Robinson, Catherine (১৯৯২), Interpretations of the Bhagavad-Gītā and Images of the Hindu Tradition: The Song of the Lord, Routledge Press 
  • Sadhale, S. Gajanan Shambhu (১৯৮৭), Sri Garibdass Oriental Series (44), Delhi: Sri Satguru Publications 
  • Schayer, Stanislaw (১৯২৫), Die Bedeutung des Wortes Upanisad, 3, Rocznik Orientalistyczny 
  • Schopenhauer, Arthur; Payne, E. F.J (২০০০), E. F. J. Payne, সম্পাদক, Parerga and paralipomena: short philosophical essays, Volume 2 of Parerga and Paralipomena, E. F. J. Payne, Oxford University Press, আইএসবিএন 978-0-19-924221-4 
  • Schrödinger, Erwin (১৯৯২), What is life?, Cambridge University Press, আইএসবিএন 978-0-521-42708-1 
  • Schrader, Friedrich Otto; Adyar Library (১৯০৮), A descriptive catalogue of the Sanskrit manuscripts in the Adyar Library, Oriental Pub. Co 
  • Sen, Sris Chandra (১৯৩৭), "Vedic literature and Upanishads", The Mystic Philosophy of the Upanishads, General Printers & Publishers 
  • Sharma, B. N. Krishnamurti (২০০০), A history of the Dvaita school of Vedānta and its literature: from the earliest beginnings to our own times, Motilal Banarsidass Publishers, আইএসবিএন 978-81-208-1575-9 
  • Sharma, Shubhra (১৯৮৫), Life in the Upanishads, Abhinav Publications, আইএসবিএন 978-81-7017-202-4 
  • Singh, N.K (২০০২), Encyclopaedia of Hinduism, Anmol Publications PVT. LTD, আইএসবিএন 978-81-7488-168-7 
  • Singh, Nagendra Kr (২০০০), Ambedkar on religion, Anmol Publications, আইএসবিএন 978-81-261-0503-8 
  • Slater, Thomas Ebenezer (১৮৯৭), Studies in the Upanishads ATLA monograph preservation program, Christian Literature Society for India 
  • Smith, Huston (১৯৯৫), The Illustrated World’s Religions: A Guide to Our Wisdom Traditions, New York: Labrynth Publishing, আইএসবিএন 0-06-067453-9  একের অধিক |author= এবং |last= উল্লেখ করা হয়েছে (সাহায্য)
  • Sri Aurbindo Kapali Sastr Institute of Vedic Culture, SAKSIVC: Vedic Literature: Upanishads: 108 Upanishads:, www.vedah.com, ২৭ আগস্ট ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ Ausust 10, 2010  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  • Tripathy, Preeti (২০১০), Indian religions: tradition, history and culture, Axis Publications, আইএসবিএন 978-93-80376-17-2 
  • Urwick, Edward Johns (১৯২০), The message of Plato: a re-interpretation of the "Republic", Methuen & co. ltd 
  • Varghese, Alexander P (২০০৮), India : History, Religion, Vision And Contribution To The World, Volume 1, Atlantic Publishers & Distributors, আইএসবিএন 978-81-269-0903-2 
  • Versluis, Arthur (১৯৯৩), American transcendentalism and Asian religions, Oxford University Press US, আইএসবিএন 978-0-19-507658-5 
  • Wadia, A. R (১৯৫৬), Sarvepalli Radhakrishnan, সম্পাদক, History of Philosophy Eastern and Western, George Allen & Unwin Ltd 
  • Walker, Benjamin (১৯৬৮), The Hindu world: an encyclopedic survey of Hinduism, volume 2, Praeger 

আরও পড়ুন সম্পাদনা

  • Edmonds, I.G (১৯৭৯), Hinduism, New York: Franklin Watts, আইএসবিএন 0-531-02943-3 
  • Embree, Ainslie T (১৯৬৬), The Hindu Tradition, New York: Random House, আইএসবিএন 0-394-71702-3 
  • Frances Merrett, সম্পাদক (১৯৮৫), The Hindu World, London: MacDonald and Co 
  • Pandit, Bansi; Glen, Ellyn (১৯৯৮), The Hindu Mind, B&V Enterprises, আইএসবিএন 81-7822-007-5 
  • Radhakrishnan, Sarvapalli (১৯৯৪) [1953], The Principal Upanishads, New Delhi: HarperCollins Publishers India, আইএসবিএন 81-7223-124-5 
  • Wangu, Madhu Bazaz (১৯৯১), Hinduism: World Religions, New York: Facts on File, আইএসবিএন 0-8160-4400-7 
  • Max Müller, translator, The Upaniṣads, Part I, New York: Dover Publications, Inc., 1962, আইএসবিএন ০-৪৮৬-২০৯৯২-X.
  • Max Müller, translator, The Upaniṣads, Part II, New York: Dover Publications, Inc., 1962, আইএসবিএন ০-৪৮৬-২০৯৯৩-৮.

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা