ব্রহ্ম

হিন্দুধর্মে চূড়ান্ত ও অখণ্ড সত্যের ধারণা

হিন্দুধর্মে, ব্রহ্ম (সংস্কৃতब्रह्म) বা ব্রহ্মন্ (সংস্কৃত: ब्रह्मन्) হলো মহাবিশ্বে বিদ্যমান চূড়ান্ত ও অখণ্ড সত্যের ধারণা।[১][২][৩] হিন্দু দর্শনে এর অর্থ সৃষ্টির বস্তুগত, গুণগত, প্রামাণ্য ও অন্তিম কারণ।[২][৪][৫] ব্রহ্ম সর্বব্যাপী, অনাদি ও অনন্ত, চিরসত্য ও পরমানন্দ যা নিজে অপরিবর্তনীয় হয়েও সকল পরিবর্তনের কারণ।[১][৩][৬] ব্রহ্ম আধিভৌতিক ধারণা হিসেবে  বৈচিত্র্যের পিছনে একক আবদ্ধ ঐক্যকে বোঝায় যা মহাবিশ্বে বিদ্যমান।

ওঁ, ব্রহ্মের সারমর্মকে বোঝায়, চূড়ান্ত বাস্তবতা
সমুদ্রের একটি ফোঁটা: আত্মার ব্রহ্মে মিশে যাওয়ার উপমা।

ব্রহ্ম হল বৈদিক সংস্কৃত শব্দ, এবং এটি হিন্দুধর্মে ধারণা করা হয়, পল ডিউসেন বলেন, "সৃজনশীল নীতি যা সমগ্র বিশ্বে উপলব্ধি করা হয়েছে"।[৭] ব্রহ্ম হল মূল ধারণা যা বেদের মধ্যে পাওয়া যায় এবং এটি প্রাথমিক উপনিষদে ব্যাপকভাবে আলোচনা করা হয়েছে।[৮] বেদ ব্রহ্মকে মহাজাগতিক নীতি হিসেবে ধারণা করে।[৯] উপনিষদে, একে বিভিন্নভাবে সত-চিৎ-আনন্দ (সত্য-চেতনা-আনন্দ)[১০][১১] এবং অপরিবর্তনীয়, স্থায়ী, সর্বোচ্চ বাস্তবতা হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।[১২][১৩][টীকা ১][টীকা ২]

হিন্দুশাস্ত্রে ব্রহ্ম আত্মা,[৮][১৬] ব্যক্তিগত,[টীকা ৩] নৈর্ব্যক্তিক[টীকা ৪] বা পরম ব্রহ্ম,[টীকা ৫]  অথবা দার্শনিক দর্শনের উপর নির্ভর করে এই গুণগুলির বিভিন্ন সংমিশ্রণে আলোচনা করা হয়েছে।[১৭] আস্তিক দ্বৈত বেদান্তের মতো হিন্দুধর্মের দ্বৈতবাদী দর্শনে, ব্রহ্ম প্রতিটি সত্তায় আত্মার থেকে আলাদা।[৫][১৮][১৯] অদ্বৈত দর্শনে যেমন অদ্বৈত বেদান্ত, ব্রহ্ম আত্মার অনুরূপ, সর্বত্র ও প্রতিটি জীবের ভিতরে রয়েছে, এবং সমস্ত অস্তিত্বের মধ্যে সংযুক্ত আধ্যাত্মিক একতা বিদ্যমান।[৬][২০][২১]

ব্যুৎপত্তি ও সম্পর্কিত শব্দ সম্পাদনা

সংস্কৃত ব্রহ্মন্‌ শব্দের মূল "বৃঃ", যার অর্থ স্ফীত হওয়া বা বিস্তারলাভ করা। এটি লিঙ্গ নিরপেক্ষ শব্দ, তাই পুংলিঙ্গবাচক "ব্রহ্মণ" ও হিন্দু ত্রিমূর্তির অন্তর্গত দেবতা ব্রহ্মার থেকে একে আলাদা করে বোঝা কাম্য। ফলে ভগবানের পুরুষ অথবা স্ত্রীমূর্তি কল্পনার চেয়ে ব্রহ্মের ধারণা অধিকতর ব্যক্তি-নিরপেক্ষ। ব্রহ্মকে চূড়ান্ত সত্তা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। জনৈক দার্শনিকের মতে ব্রহ্মের অর্থ "জগতের মাঝে ও জগৎ ছাড়িয়ে বিস্তৃত সত্যের অব্যয় রূপ"।[২২] দার্শনিক সাইনারের মতে ব্রহ্মের "যথাযথ সংজ্ঞা দেওয়া যায় না।"[২৩]

বৈদিক সংস্কৃতে:

  • ব্রহ্ম (ब्रह्म) (নামপদ, একবচন), ব্রহ্মন্‌ (ब्रह्मन्) (মূল) (ক্লীবলিঙ্গ[২৪])-এর মূল ধাতু বৃঃ, যার অর্থ হতে পারে দৃঢ় করা বা হওয়া, কঠিন, পরিবর্ধন।[২৫]
  • ব্রহ্মন (ब्रह्मन) (নামপদ, একবচন ও বহুবচন নেই)-এর মূল ধাতু "বৃহ" (দৃঢ়, পরিবর্ধন) + "মন্‌" (প্রকাশ) অর্থাৎ কোনও নির্দিষ্ট শক্তি, অন্তর্নিহিত দৃঢ়তা অথবা মৌলিক নীতির প্রকাশকে বোঝায়।[২৫]

পরবর্তী সংস্কৃতে ব্যবহার:

  • ব্রহ্ম (ब्रह्म) (নামপদ একবচন), ব্রহ্মন্‌ (ब्रह्मन्) (মূল) (ক্লীবলিঙ্গ[২৪]) বলতে হিন্দুধর্মে বোঝায় অতিলৌকিক ও সর্বব্যাপী চূড়ান্ত সত্য তথা চেতনা। বিভিন্ন হিন্দু দর্শন বিশেষত বেদান্তে এই ধারণাটি কেন্দ্রীয়, যা নিয়ে পরে আলোচনা করা হয়েছে।
  • ব্রহ্মা (ब्रह्मा) (নামপদ একবচন), ব্রহ্মন্‌ (ब्रह्मन्) (মূল) (পুংলিঙ্গ) অর্থাৎ দেবতা প্রজাপতি ব্রহ্মা। ইনি হিন্দু ত্রিমূর্তির প্রথম জন এবং জগতের সৃষ্টিকর্তা, কিন্তু বর্তমান ভারতে এঁর অর্চনা সীমিত। এর সম্ভাব্য কারণ ব্রহ্মা দীর্ঘায়ু হলেও অনন্ত নন; কল্পান্তে তিনি পুরুষে লীন হয়ে যান এবং পরবর্তী কল্পে পুনরায় জন্মগ্রহণ করেন/ প্রকট হন।

এগুলি থেকে আলাদা:

  • ব্রাহ্মণ (ब्राह्मण, পুংলিঙ্গ, যার আক্ষরিক অর্থ "প্রার্থনা সংক্রান্ত") হল বৈদিক মন্ত্রগুলির গদ্য ভাষ্য - বৈদিক সাহিত্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ৷
  • ব্রাহ্মণ (ब्राह्मण, পুংলিঙ্গ), মানে পুরোহিত; এই ব্যবহারে শব্দটিকে সাধারণত ইংরেজিতে "ব্রাহ্মণ" হিসাবে উপস্থাপিত করা হয়। এই ব্যবহারটি অথর্ববেদেও পাওয়া যায়। নিরপেক্ষ বহুবচনে, ব্রাহ্মণী।
  • ঈশ্বর, অদ্বৈতে ঈশ্বর, (সাহিত্যিক, পরমেশ্বর ভগবান), চূড়ান্ত বাস্তবতা, গুণহীন ব্রহ্মের আংশিক জাগতিক প্রকাশ (সীমিত বৈশিষ্ট্য সহ) হিসাবে চিহ্নিত। বিশিষ্টাদ্বৈত ও দ্বৈতে, তবে, ঈশ্বরের (সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক) অসীম গুণাবলী রয়েছে এবং নৈর্ব্যক্তিক ব্রহ্মের উৎস।
  • দেবগণ, ব্রহ্ম/ঈশ্বরের বিভিন্ন রূপে বিস্তৃতি, প্রতিটি একটি নির্দিষ্ট গুণের সাথে। বৈদিক ধর্মে, ৩৩ দেবতা ছিল, যা পরবর্তীতে ৩৩ কোটি দেবতায় অতিরঞ্জিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, দেবগণকে এক এবং পরম ব্রহ্মের আরও জাগতিক প্রকাশ হিসেবে বিবেচনা করা হয় (পরম ব্রহ্ম)। কোটি এর সংস্কৃত শব্দের অর্থও গোষ্ঠী, এবং ৩৩ কোটি দেবের অর্থ মূলত ৩৩ প্রকারের ঐশ্বরিক প্রকাশ।

ইতিহাস ও সাহিত্য সম্পাদনা

বেদে সম্পাদনা

খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দে রচিত বেদের সংহিতা অংশে ব্রহ্মের ধারণার উল্লেখ আছে, যথা:[২৬]

ঋক্‌ পরিমিত,
সমন্‌ পরিমিত,
এবং যজুর্গণও পরিমিত,
কিন্তু "ব্রহ্মন্‌ শব্দের শেষ নেই।

— তৈত্তিরীয় সংহিতা ৭.৩.১.৪, অনুবাদ: বার্বারা হোল্ড্রেজ[২৬]

বেদের শত শত স্তোত্রে ব্রহ্মনের ধারণার উল্লেখ আছে।[২৭] যেমন, ঋগ্বেদের ২.২.১০ নং স্তোত্র[২৮], ৬.২১.৮ নং স্তোত্র[২৯] ও ১০.৭২.২ নং স্তোত্রে[৩০] এবং অথর্ববেদের ৬.১২২.৫, ১০.১.১২ ও ১৪.১.১৩১ নং স্তোত্রে[২৭] এর উল্লেখ পাওয়া যায়। বৈদিক সাহিত্যের নানা পর্যায়ে ব্রহ্মের সম্পর্কে বলা আছে, যেমন ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ১.১৮.৩, কৌশিতকী ব্রাহ্মণ ৬.১২, শতপথ ব্রাহ্মণ ১৩.৫.২.৫, তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ ২.৮.৮.১০, জৈমিনীয় ব্রাহ্মণ ১.১২৯, তৈত্তিরীয় আরণ্যক ৪.৪.১ থেকে ৫.৪.১, বাজসনেয়ী সংহিতা ২২.৪ থেকে ২৩.২৫ এবং মৈত্রয়নী সংহিতা ৩.১২.১: ১৬.২ থেকে ৪.৯.২: ১২২.১৫। এছাড়া বেদাঙ্গের শ্রৌত সূত্র ১.১২.১২ এবং পরস্কার গৃহসূত্রের ৩.২.১০ থেকে ৩.৪.৫ অবধি ব্রহ্মের বর্ণনার চেষ্টা আছে।[২৭]

জাঁ হোন্দার মতে, ঋগ্বেদ সংহিতা থেকে শুরু করে বৈদিক সাহিত্যের নানা শাখায় ব্রহ্মের ধারণার বিভিন্ন ব্যাখ্যা থেকে শব্দটির বহুমাত্রিক তাৎপর্যের আন্দাজ পাওয়া যায়।[৩১] তিনি আরও বলেন, আধুনিক পাশ্চাত্যের কোনও ভাষাতেই একটি শব্দের দ্বারা ব্রহ্ম শব্দের অর্থের ব্যাপকতা ধরা যায় না।[৩১] বেদের প্রাচীনতম শ্লোকগুলিতে ব্রহ্মের ব্যাখ্যা দেওয়া আছে "বেদের ধ্বনি, শব্দ, শ্লোক ও সূত্রসমূহের অন্তর্নিহিত শক্তি" হিসেবে। অবশ্য জাঁ হোন্দা এও বলেন যে এই অর্থটি কখনওই একমাত্র অর্থ ছিল না, এবং প্রাচীন ভারতে কালে কালে এই অর্থের প্রসার ও সমৃদ্ধকরণ ঘটেছে।[৩২]

বার্বারা হোল্ড্রেজ বলেন, বেদে মূলত চারটি অভিমুখে ব্রহ্মের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে: শব্দ তথা শ্লোক হিসেবে (শব্দব্রহ্ম)[৩৩], সৃষ্টিতত্ত্বে বিধৃত জ্ঞান হিসেবে, সৃষ্টির নিজেরই প্রকাশ বা সৃষ্টির অভেদ হিসেবে এবং বহু ঐতিহ্যের সমন্বয় হিসেবে[৩৪]। হ্যানা গুডম্যান বলেন, বেদে বর্ণিত ব্রহ্ম চরাচরে নিহিত পরম নীতিবিশেষ[৯]। গেভিন ফ্লাড বলেন, বৈদিক যুগে ক্রমশ ব্রহ্ম শব্দের বিমূর্ত থেকে বিমূর্ততর ব্যাখ্যা হতে থাকে এবং এভাবেই প্রাথমিক শব্দ ও শ্লোকগত অর্থ বিস্তৃত হয়ে পরবর্তী "সর্বব্যাপী", "অখণ্ড", "অব্যয়" ও "সত্তার আধার (আত্মন্‌)" অর্থগুলির প্রচলন হয়েছে।[৩৫]

উপনিষদে সম্পাদনা

 
হিন্দু সংকেতব্যবস্থায় হাঁস বা হংস হল ব্রহ্ম ও আত্মনের প্রতীক।[৩৬][৩৭]

উপনিষদের মূল আলোচ্য হল ব্রহ্মবিদ্যা ও আত্মবিদ্যা (আত্মন্‌ বা স্ব-সত্তাকে জানার বিদ্যা); এই দুই ধারণার সংজ্ঞা ও তৎসম্পর্কিত চর্চার প্রকৃতি।[৩৮] উপনিষদগুলি এই বিষয়ে কোনও একক ও সুসংহত তত্ত্বের অবতারণা করে না, বরং বহুভাবে অনুধাবন করার যোগ্য অনেকগুলি সম্ভাব্য দিকনির্দেশ দেয়, যেগুলি থেকে পরবর্তী বৈদিক যুগে হিন্দুধর্মের বিভিন্ন শাস্ত্রীয় শাখার উদ্ভব হয়েছে।[৮]

পল ডয়সনের মতে পরাবিদ্যা, তত্ত্ববিদ্যা ও মুক্তিতত্ত্বের বিভিন্ন আঙ্গিক থেকে উপনিষদে প্রাপ্ত ব্রহ্মের ধারণার ব্যাখ্যা করা যায়। এর সমর্থনে তিনি একাধিক উদ্ধৃতি তুলে ধরেছেন, যেমন "সৃষ্টিকে জন্মদান, রক্ষা ও লয়কারী আদিম সত্য"[৩৯], "সৃষ্টির নীতিস্বরূপ"[৩৯], "পরম সত্য"[৪০], "সীমিত অথচ অসীম"[৪১], "মহাজাগতিক নীতিস্বরূপ"[৪২], "সমস্ত দেবতাসহ সমগ্র বিশ্বের পরম কারণ"[৪৩], "দৈব সত্তা, ঈশ্বর, পরমেশ্বর, বা আত্মস্থিত ঈশ্বর"[৪৪], "পরম জ্ঞানস্বরূপ"[৪৫], "সর্বমানবের অভ্যন্তরস্থ নির্ভীক, জ্যোতিস্বরূপ, শুদ্ধ ও মুক্ত আত্মজ্ঞান"[৪৬], "আধ্যাত্মিক মুক্তি ও স্বনির্ভরতার সার"[৪৭], "সর্বজীবের অন্তর্বিশ্ব ও বহির্বিশ্ব"[৪৬] "চরাচরের অন্তরে, বাইরে ও সর্বত্র বিরাজমান সবকিছুর সারবত্তা"[৪৮]

গেভিন ফ্লাড উপনিষদে বিবৃত ব্রহ্মের ধারণার সারসংক্ষেপ করে বলেছেন - "অনন্ত বিশ্ব ও মহাজগতের ক্ষুদ্রতম কণা তথা অন্তঃসার", "বোধগম্য কিন্তু অদৃশ্য সব কিছুর সার", "সর্বমানব ও সর্বজীবের আত্মা", "সত্য", "বাস্তব", "পরম" ও "আনন্দ"।[৩৫]

সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের মতে, উপনিষদের ঋষিরা ব্রহ্মকে ব্যাখ্যা করেছেন চক্ষুকর্ণের অগোচর সেই সমস্ত ঘটনাবলীর পরম সার হিসেবে যাদের শুধুমাত্র আত্মজ্ঞান লাভের মাধ্যমেই অনুধাবন করা সম্ভব।[৪৯]

ব্রহ্মের ধারণার ব্যাখ্যার্থে বিভিন্ন উপনিষদে একাধিক "মহাবাক্য" রয়েছে[৫০], যথা:

বাক্য উৎস উপনিষদ অনুবাদ সূত্র
अहं ब्रह्म अस्मि
অহং ব্রহ্ম অস্মি
বৃহদারণ্যক উপনিষদ ১.৪.১০ "আমি ব্রহ্ম" [৫১]
अयम् आत्मा ब्रह्म
অয়ং আত্মা ব্রহ্ম
মুণ্ডক উপনিষদ, দ্বিতীয় মুণ্ডক "এই আত্মা ব্রহ্ম" [৫২][৫৩]
सर्वं खल्विदं ब्रह्म
সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম
ছান্দোগ্য উপনিষদ ৩.১৪.১ "এই সবকিছুই তো ব্রহ্ম" [৫৪]
एकमेवाद्वितीयम्
একমেবাদ্বিতীয়ম্‌
ছান্দোগ্য উপনিষদ ৬.২.১ "এক[ব্রহ্ম]-ই অদ্বিতীয়" [৫৫]
तत्त्वमसि
তত্ত্বমসি
ছান্দোগ্য উপনিষদ ৬.৪.৭ "তুমিই সেই" ("তুমিই ব্রহ্ম") [৫৬][৫৭]
प्रज्ञानं ब्रह्म
প্রজ্ঞানং ব্রহ্ম
ঐতরেয় উপনিষদ ৩.৩ "জ্ঞান ব্রহ্ম" [৫৮]

উপনিষদে ব্রহ্মের পরাবিদ্যাভিত্তিক বিস্তৃত আলোচনা আছে। অন্যতম প্রাচীনতম উপনিষদ ছান্দোগ্য উপনিষদের তৃতীয় অধ্যায়ের শাণ্ডিল্য সূত্র এই ক্ষেত্রে উল্লেখ্য।[৫৯] শতপথ ব্রাহ্মণে বলা আছে আত্মনের অস্তিত্ব আছে, ব্রহ্ম ও আত্মন্‌ পরস্পর অভিন্ন, সুতরাং মানবের অন্তরেও ব্রহ্মের অধিষ্ঠান। এই উদ্ধৃতিগুলি হিন্দুধর্মের বহু অর্বাচীন শাস্ত্র ও আধুনিক দর্শনের আলোচনায় বহুল ব্যবহৃত।[৫৯][৬০][৬১]

এই চরাচর ব্রহ্ম। একে নিভৃতে তজ্জলন হসেবে অর্চনা করতে হয়। (যা থেকে উৎপত্তি, যা তার প্রাণ এবং যাতে তার লয়)

— ছান্দোগ্য উপনিষদ ৩.১৪.১[৫৯][৬২]

মানব তার ক্রতুময়ের (क्रतुमयः ইচ্ছাশক্তি) জীব। অতঃপর এই ইচ্ছাশক্তিকে তার গোচরে আসতে দাও। যিনি জ্ঞানী, যাঁর শরীর জীবন-সূত্রের দ্বারা সম্পৃক্ত, যাঁর অবয়ব জ্যোতির্ময়, যাঁর চিন্তা সত্যচালিত, যাঁর আত্মা ব্যোম-সদৃশ (অদৃশ্য অথচ বর্তমান), যাঁর থেকে সর্বকর্ম, সর্ববাসনা, সর্ব ইন্দ্রিয় উৎপন্ন হয়ে চরাচরকে বেষ্টন করে রাখে, যিনি মৌন ও নির্বিকার, তিনিই আমি, আমার আত্মা, আমার অন্তরের সত্তা।

— ছান্দোগ্য উপনিষদ ৩.১৪.১ থেকে ৩.১৪.৩[৫৯][৬৩]

এই আমার অন্তরতম আত্মা, এই পৃথিবীর চেয়ে বড়, এই আকাশের চেয়ে বড়, এই ব্রহ্মাণ্ডের চেয়ে বড়। এই আত্মা, এই আত্মসত্তাই হল সেই ব্রহ্ম।

— ছান্দোগ্য উপনিষদ ৩.১৪.৩ থেকে ৩.১৪.৪[৬২][৬৩]

পল ডয়সন দেখিয়েছেন যে উপরে উদ্ধৃত আত্মা সম্পর্কিত মতবাদ বহু শতাব্দী পরে খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতকে নব্য প্লেটোবাদী দার্শনিক প্লটিনাসের এনিয়াডেস গ্রন্থে পুনরাবৃত্ত হয়েছিল (এনিয়াডেস ৫.১.২)।[৬২]

মহাবাক্যে ধারণাটির সমালোচনা সম্পাদনা

আদি ৭.১২৮[৬৪]-এর উদ্দেশ্যের নির্বাচিত অংশ থেকে এ সি ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের বাণী নিম্নে দেওয়া হল:

মায়াবাদী দার্শনিকরা অনেক বৈদিক মন্ত্রকে মহাবাক্য বা প্রধান বৈদিক মন্ত্র বলে মনে করেন, যেমন তৎ ত্বাম অসি (ছান্দোগ্য উপনিষদ ৬.৮.৭),  ইদম সর্বম ইয়াদ অয়ম আত্মা এবং  ব্রহ্মেদম সার। আত্মাইবেদম সর্বম।(ছান্দোগ্য উপনিষদ ৭.২৫.৩) এবং নেহা নানাস্তি কিন্কানা ( কঠ উপনিষদ ৩.১.১১)। এটি মহান ভুল। শুধুমাত্র ওঙ্কার হল মহাবাক্য। এই সমস্ত অন্যান্য মন্ত্র যা মায়াবাদীরা মহাবাক্য হিসাবে গ্রহণ করে শুধুমাত্র ঘটনাগত। এগুলিকে মহাবাক্য বা মহামন্ত্র হিসাবে নেওয়া যায় না। মন্ত্র তৎ ত্বাম অসি শুধুমাত্র বেদের আংশিক বোঝার ইঙ্গিত দেয়, ওঙ্কারের বিপরীতে, যা বেদের সম্পূর্ণ বোঝার প্রতিনিধিত্ব করে। তাই অতীন্দ্রিয় ধ্বনি যা সমস্ত বৈদিক জ্ঞানকে অন্তর্ভুক্ত করে ওঙ্কার (প্রণব)। ওঙ্কার বাদে, শঙ্করাচার্যের অনুসারীদের দ্বারা উচ্চারিত কোনো শব্দই মহাবাক্য বলে বিবেচিত হতে পারে না। তারা নিছক মন্তব্য করছে।

আলোচনা সম্পাদনা

ব্রহ্ম ধারণাটির অর্থের অনেক প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে ও বোঝা কঠিন। এটি অধিবিদ্যা, সত্তাতত্ত্ব, তত্ত্ববিজ্ঞান (নৈতিকতা ও নন্দনতত্ত্ব), উদ্দেশ্যবাদপরিত্রাণ তত্ত্বে প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে।

আধিভৌতিক ধারণা হিসাবে ব্রহ্ম সম্পাদনা

হিন্দু দর্শনের বিভিন্ন দর্শনে ব্রহ্ম হল মূল আধিভৌতিক ধারণা। অধিবিদ্যার দুটি কেন্দ্রীয় প্রশ্নে এটি বিভিন্ন আলোচনার বিষয়: শেষ পর্যন্ত বাস্তব কি, এবং বাস্তব যা কিছুতে প্রযোজ্য নীতি আছে?[৬৫] ব্রহ্ম হল চূড়ান্ত "চিরন্তন, ধ্রুবক" বাস্তবতা, যেখানে পর্যবেক্ষিত মহাবিশ্ব ভিন্ন ধরনের বাস্তবতা কিন্তু যা বিভিন্ন গোঁড়া হিন্দু দর্শনে "অস্থায়ী, পরিবর্তনশীল"  মায়া। মায়া প্রাক-অস্তিত্ব আছে এবং ব্রহ্মের সাথে সহ-অস্তিত্ব আছে—অন্তিম বাস্তবতা, সর্বোচ্চ সার্বজনীন, মহাজাগতিক নীতি।[৬৬]

আত্মা: চূড়ান্ত বাস্তবতা সম্পাদনা

ব্রহ্মের ধারণা ছাড়াও, হিন্দু অধিবিদ্যায় আত্মা-বা আত্ম-এর ধারণা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা চূড়ান্তভাবে বাস্তব বলেও বিবেচিত হয়।[৬৬] হিন্দুধর্মের বিভিন্ন দর্শন, বিশেষ করে দ্বৈতঅদ্বৈত দর্শন, আত্মার প্রকৃতির উপর ভিন্ন, তা ব্রহ্ম থেকে আলাদা, বা ব্রহ্মের মতই। যারা ব্রহ্ম ও আত্মকে স্বতন্ত্র হিসেবে বিবেচনা করে তারা হল ঈশ্বরবাদী, এবং দ্বৈত বেদান্ত এবং পরবর্তী ন্যায় দর্শন এই ভিত্তিকে ব্যাখ্যা করে।[৬৭] যারা ব্রহ্ম ও আত্মকে একই বলে মনে করে তারা অদ্বৈত বা ধর্মবাদী, এবং অদ্বৈত বেদান্ত, পরবর্তীতে সাংখ্য[৬৮] ও যোগ দর্শন এই আধিভৌতিক ভিত্তিকে ব্যাখ্যা করে।[৬৯][৭০][৭১] যে সমস্ত দর্শনে ব্রহ্মকে আত্মানের সাথে সমান করে, ব্রহ্মই একমাত্র, চূড়ান্ত বাস্তবতা।[৭২] উপনিষদের প্রধান শিক্ষা হল প্রতিটি মানুষের মধ্যে নিজের আত্মিক পরিচয়, অন্য প্রতিটি মানুষ ও জীবিত সত্তার সাথে, সেইসাথে পরম, চূড়ান্ত বাস্তব ব্রহ্মের সাথে।[৭৩][৭৪]

মায়া: অনুভূত বাস্তবতা সম্পাদনা

হিন্দুধর্মের প্রধান দর্শনগুলির অধিবিদ্যায়, মায়াকে বাস্তবতা হিসেবে ধরা হয়, যা লুকানো নীতিগুলিকে প্রকাশ করে না, প্রকৃত বাস্তবতা—ব্রহ্ম। মায়া অচেতন, ব্রহ্ম-আত্ম চেতন। মায়া হল আক্ষরিক ও প্রভাব, ব্রহ্ম হল রূপক উপদান-নীতি ও কারণ। প্রকৃতির অদৃশ্য নীতির কারণে মায়ার জন্ম হয়, পরিবর্তিত হয়, বিবর্তিত হয়, সময়ের সাথে সাথে মৃত্যু ঘটে। আত্ম-ব্রহ্ম হল শাশ্বত, অপরিবর্তনীয়, অদৃশ্য নীতি, অপ্রভাবিত পরম ও উজ্জ্বল চেতনা।[৬৬] মায়া ধারণা, আর্কিবল্ড গফ বলেছেন, "ব্রহ্মের সাথে প্রাক-বিদ্যমান, উদ্ভূত বা উদ্ভূত অস্তিত্বের সমস্ত সম্ভাবনার উদাসীন সমষ্টি", ঠিক যেমন ভবিষ্যত গাছের সম্ভাবনা গাছের বীজের মধ্যেই বিদ্যমান।[৬৬]

নির্গুণ ও সগুণ ব্রহ্ম সম্পাদনা

ব্রহ্ম, চূড়ান্ত বাস্তবতা, উভয় বৈশিষ্ট্য সহ এবং ছাড়াই। এই প্রসঙ্গে, পরম ব্রহ্ম নিরাকার ও সর্বজ্ঞ ঈশ্বর - দেবতা বা  পরমাত্মা এবং ওম (ওঁ), যেখানে সগুণ ব্রহ্ম হল মূর্তিরূপে ঈশ্বরের প্রকাশ বা অবতার

যদিও হিন্দুধর্মের উপ-দর্শন যেমন অদ্বৈত বেদান্ত ব্রহ্ম ও আত্মার সম্পূর্ণ সমতাকে জোর দেয়, এছাড়াও তারা ব্রহ্মকে সগুণ ব্রহ্ম হিসেবে ব্যাখ্যা করে—গুণ সহ ব্রহ্ম, এবং নির্গুণ ব্রহ্ম—বৈশিষ্ট্যবিহীন ব্রহ্ম।[৭৫] নির্গুণ ব্রহ্ম হল ব্রহ্ম যেমন এটি আসলেই, তবে, সগুণ ব্রহ্মকে নির্গুণ ব্রহ্ম উপলব্ধি করার উপায় হিসাবে স্থাপন করা হয়েছে, কিন্তু হিন্দুধর্মের দর্শনগুলি সগুণ ব্রহ্মকে চূড়ান্ত নির্গুণ ব্রহ্মের অংশ হিসেবে ঘোষণা করে।[৭৬] সগুণ ব্রহ্মের ধারণা, যেমন অবতারের আকারে, হিন্দুধর্মের এই দর্শনগুলিতে তাদের আধ্যাত্মিক যাত্রায় যারা এখনও তাদের জন্য দরকারি প্রতীক, পথ ও হাতিয়ার হিসাবে বিবেচিত হয়, কিন্তু ধারণাটি পরিশেষে সম্পূর্ণরূপে আলোকিতদের দ্বারা বাদ দেওয়া হয়।[৭৬]

সত্তাতত্ত্বীয় ধারণা হিসাবে ব্রহ্ম সম্পাদনা

স্বয়ং (আত্ম) সহ ব্রহ্ম ভারতীয় দর্শনের সত্তাতত্ত্বীয়[৭৭] প্রাঙ্গণের অংশ।[৭৮][৭৯] ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন দর্শনে ব্যাপকভাবে ভিন্নতা রয়েছে। হিন্দুধর্মের বৌদ্ধধর্মচার্বাক দর্শন অস্বীকার করে যে "স্ব" (মহাজাগতিক অর্থে ব্যক্তি আত্মা বা ব্রহ্ম) বলে কিছু আছে। যদিও হিন্দুধর্ম, জৈনধর্ম ও আজীবিকের গোঁড়া দর্শনগুলি মনে করে যে "স্বয়ং" আছে।[৮০][৮১]

অদ্বৈত বেদান্ত ও যোগের মত হিন্দুধর্মের দর্শনগুলিতে ব্রহ্ম পাশাপাশি প্রতিটি মানুষের (এবং জীবন্ত প্রাণীর) মধ্যে আত্মাকে সমতুল্য এবং একমাত্র বাস্তবতা হিসাবে বিবেচনা করা হয়, চিরন্তন, স্ব-জন্ম, সীমাহীন, জন্মগতভাবে মুক্ত, আনন্দময় পরম।।[৮২][৮৩][৮৪] নিজের নিজেকে জানা মানে নিজের ভিতরের ভগবানকে জানা, এবং এটিকে ব্রহ্ম (সর্বজনীন স্ব) এর সত্তাতত্ত্বীয় প্রকৃতি জানার পথ হিসাবে ধরা হয় কারণ এটি আত্মার (ব্যক্তিগত স্ব) অনুরূপ। আত্মা-ব্রহ্মের প্রকৃতি এই দর্শনগুলিতে অনুষ্ঠিত হয়, বারবারা হোল্ড্রেজ বলেন, বিশুদ্ধ সত্তা (সত), চেতনা (চিত্ত) ও আনন্দে পূর্ণ (আনন্দ) হিসাবে এবং এটি নিরাকার, স্বতন্ত্র, অপরিবর্তনীয় ও সীমাহীন।[৮২]

দ্বৈত বেদান্তের মত আস্তিক বিদ্যালয়ে এর বিপরীতে, ব্রাহ্মণের প্রকৃতিকে শাশ্বত, সীমাহীন, সহজাতভাবে মুক্ত, আনন্দময় পরম হিসাবে ধরা হয়, যখন প্রতিটি ব্যক্তির আত্মকে স্বতন্ত্র এবং সীমিত হিসাবে ধরা হয় যা সর্বোত্তমভাবে অনন্তকালের কাছাকাছি আসতে পরম ব্রহ্মের আনন্দময় প্রেম। [৮৫]

ব্রহ্ম, বাস্তবতা ও অস্তিত্বের প্রকৃতি সম্পর্কিত হিন্দু ধর্মের অন্যান্য দর্শনগুলির নিজস্ব সত্তাতত্ত্বীয় প্রাঙ্গণ রয়েছে। হিন্দুধর্মের বৈশেষিক দর্শন, উদাহরণস্বরূপ, উল্লেখযোগ্য, বাস্তববাদী তত্ত্ববিদ্যা ধারণ করে।[৮৬] চার্বাক দর্শন ব্রহ্ম ও  আত্মকে  অস্বীকার করেছে এবং বস্তুবাদী তত্ত্ববিদ্যা ধারণ করেছে।[৮৭]

তত্ত্বীয় ধারণা হিসাবে ব্রহ্ম সম্পাদনা

ব্রহ্ম ও আত্মন হল হিন্দু তত্ত্বের তত্ত্ববিজ্ঞানের মূল ধারণা: নীতিশাস্ত্র ও নন্দনতত্ত্ব।[৮৮][৮৯] মাইকেল মায়ার্স ও অন্যান্য পণ্ডিতদের মতে, আনন্দ সার্বজনীন অভ্যন্তরীণ সম্প্রীতি হিসাবে ব্রহ্মের ধারণার অক্ষীয় গুরুত্ব রয়েছে।[৯০][৯১] কিছু পণ্ডিত ব্রহ্মকে তত্ত্বীয় অর্থে সর্বোচ্চ মূল্যের সাথে সমতুল্য করেন।[৯২]

ব্রহ্ম ও আত্মনের তত্ত্বীয় ধারণা হিন্দু মূল্যবোধের কেন্দ্রবিন্দু।[৯৩] বিবৃতি যেমন শ বলেন, 'আমি ব্রহ্ম', মানে 'আমি সবকিছুর সাথে সম্পর্কিত', এবং এটি হিন্দুধর্মে অন্যদের প্রতি করুণার অন্তর্নিহিত ভিত্তি, প্রতিটি ব্যক্তির কল্যাণ, শান্তি বা সুখ অন্যের উপর নির্ভর করে, বৃহৎ আকারে অন্যান্য প্রাণী এবং প্রকৃতি সহ, এবং তদ্বিপরীত।[৯৪] তিএতগে বলেছেন যে এমনকি হিন্দুধর্মের অ-দ্বৈত দর্শনে, যেখানে ব্রহ্ম ও  আত্মন কে সত্ত্বাতত্বীয়ভাবে সমতুল্য বিবেচনা করা হয়, মূল্যবোধের তত্ত্বটি পৃথক প্রতিনিধি ও নৈতিকতার উপর জোর দেয়। হিন্দুধর্মের এই দর্শনগুলিতে, তিএতগে বলেছে, কর্মের তত্ত্বটি অন্যের প্রতি সমবেদনা থেকে উদ্ভূত ও কেন্দ্রীভূত হয়, এবং নিজের জন্য অহংকারী উদ্বেগ নয়।[৯৫]

বাউয়ার বলেন, মূল্যের তত্ত্বীয় তত্ত্বটি ব্রহ্ম ও 'আত্মনের ধারণা থেকে নিহিতভাবে উদ্ভূত হয়েছে।[৯৬] মানুষের অভিজ্ঞতা ও নীতিশাস্ত্রের নন্দনতত্ত্ব হল হিন্দুধর্মে আত্ম-জ্ঞানের ফলাফল, যা ব্রহ্ম, প্রত্যেকের স্বয়ং, সমস্ত কিছু এবং সমস্ত অনন্তকালের সাথে নিজের আত্মের নিখুঁত, নিরবধি একীকরণের ফলেমানুষের অভিজ্ঞতার শিখর পরকালের উপর নির্ভরশীল নয়, বরং বর্তমান জীবনেই বিশুদ্ধ চেতনা।[৯৬] এটি অনুমান করে না যে ব্যক্তি দুর্বল এবং এটি অনুমান করে না যে সে সহজাতভাবে মন্দ, কিন্তু বিপরীত: মানুষের স্ব এবং তার প্রকৃতিকে মৌলিকভাবে অযোগ্য, ত্রুটিহীন, সুন্দর, সুখী, নৈতিক, সহানুভূতিশীল ও ভাল হিসাবে ধরা হয়।[৯৬][৯৭] অজ্ঞতা হল এটাকে মন্দ মনে করা, মুক্তি হল তার চিরন্তন, বিস্তৃত, আদিম, সুখী ও ভাল প্রকৃতিকে জানা।[৯৬] নিকম বলেন, হিন্দু চিন্তাধারা ও সাধারণভাবে ভারতীয় দর্শনের অক্ষীয় প্রাঙ্গণ হল ব্যক্তিকে উন্নীত করা, মানুষের সহজাত সম্ভাবনাকে উন্নত করা, যেখানে তার সত্তার বাস্তবতা হল মহাবিশ্বের বস্তুনিষ্ঠ বাস্তবতা।[৯৮] হিন্দুধর্মের উপনিষদ, নিকমকে সংক্ষিপ্ত করে, মনে করে যে ব্যক্তির বস্তুনিষ্ঠ মহাবিশ্বের মতো একই সারমর্ম এবং বাস্তবতা রয়েছে এবং এই সারমর্মটি সর্বোত্তম সারাংশ; স্বতন্ত্র স্ব হল সর্বজনীন স্ব, এবং আত্মা একই বাস্তবতা এবং ব্রহ্মের মতোই নান্দনিকতা।[৯৮]

উদ্দেশ্যবাদী ধারণা হিসাবে ব্রহ্ম সম্পাদনা

ব্রহ্ম ও আত্মন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যবাদী ধারণা। উদ্দেশ্যবাদ কোনো কিছুর আপাত উদ্দেশ্য, নীতি বা লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে। শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের প্রথম অধ্যায়ে, এই প্রশ্নগুলি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এটা বলে :

যারা ব্রহ্ম সম্পর্কে অনুসন্ধান করে তারা বলে:

ব্রহ্মের কারণ কি? কেন আমাদের জন্ম হয়েছিল? আমরা কিসের দ্বারা বাঁচি? আমরা কিসের উপর প্রতিষ্ঠিত? কার দ্বারা শাসিত, হে ব্রহ্ম জানো, আমরা কি সুখে-দুঃখে বাস করি, প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থায় থাকি?

— শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ, স্তোত্র ১.১

ব্রহ্মের মূল উদ্দেশ্য এবং কেন এটি বিদ্যমান তা উপনিষদের মতে বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন। কেউ তার আসল উদ্দেশ্য তখনই খুঁজে পেতে পারে যখন কেউ ব্রহ্ম হয়ে ওঠে কারণ ব্রহ্ম হল সমস্ত জ্ঞান যা নিজেই জানতে পারে। তাই, জীবনের যেকোনো কিছুর সম্পূর্ণ উত্তর তখনই নির্ধারণ করা যায় বা পাওয়া যায় যখন ব্রহ্মকে উপলব্ধি করা হয় কারণ ব্রহ্ম হল সম্পূর্ণ জ্ঞান। এটি ঐতরেয় উপনিষদ ৩.৩ ও বৃহদারণ্যক উপনিষদ ৪.৫.১৭ এবং অন্যান্য অনেক উপনিষদে বলা হয়েছে।

জ্ঞান হল সব কিছুর চোখ, এবং জ্ঞানের উপর এটি প্রতিষ্ঠিত। জ্ঞান হল বিশ্বের চোখ, এবং জ্ঞান হল ভিত্তি। ব্রহ্ম জানেন।

— ঐতরেয় উপনিষদ, স্তোত্র ৩.৩[৯৯][১০০]

উপনিষদ অনুসারে কেন ব্রহ্মকে উপলব্ধি করা উচিত তার কারণ হল এটি ব্যক্তির জীবন থেকে দুঃখ দূর করে। কারণ ব্যক্তিটির অপরিবর্তনীয় (পুরুষ; আত্মা-ব্রহ্ম) এবং চির-পরিবর্তনশীল (প্রকৃতি; মায়া) মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা ও জ্ঞান রয়েছে এবং তাই ব্যক্তি ক্ষণস্থায়ী ব্যক্তির সাথে সংযুক্ত থাকে না। অত:পর, ব্যক্তি শুধুমাত্র স্ব নিয়েই সন্তুষ্ট এবং তার শরীর বা স্ব ছাড়া অন্য কিছুতে নয়।

বৃহদারণ্যক উপনিষদে ৩.৯.২৬-এ এটি উল্লেখ করে যে আত্মা 'ভয়ে কাঁপতে পারে না বা আঘাত পায় না' এবং ঈশ উপনিষদে ৬-৭-এ এটিও যন্ত্রণাকে অস্তিত্বহীন বলে কথা বলে যখন কেউ ব্রহ্ম হয়ে ওঠে কারণ তারা সমস্ত প্রাণীর মধ্যে আত্মকে দেখতে পায়। এবং সমস্ত প্রাণীর মধ্যে রয়েছে।তাই, ব্রহ্মের আপাত উদ্দেশ্যটি উপনিষদে আলোচনায় আছে কিন্তু উপনিষদ অনুসারে ব্রহ্ম নিজেই একমাত্র স্বয়ংসম্পূর্ণ উদ্দেশ্য এবং সত্য লক্ষ্য, তাই প্রশ্নটি করা অপ্রয়োজনীয়। উপনিষদগুলি ব্রহ্মকেই জীবনের একমাত্র প্রকৃত সার্থক লক্ষ্য বলে মনে করে এবং শেষ পর্যন্ত এটি হয়ে ওঠার লক্ষ্য রাখা উচিত কারণ এটি চূড়ান্ত জ্ঞান, অমরত্ব ইত্যাদির উপায় এবং শেষ। সুতরাং ব্রহ্ম সহ সমস্ত কিছুর চূড়ান্ত উদ্দেশ্য কী এই প্রশ্নের উত্তর ব্রহ্মকে উপলব্ধি করা বা অর্জন করার মাধ্যমে পাওয়া যায় কারণ ব্রহ্ম নিজেই চূড়ান্ত জ্ঞান। তাই, ব্রহ্ম হল উদ্দেশ্যবাদী ধারণা কারণ এটি সম্ভাব্য সবকিছুর চূড়ান্ত উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য এবং সবকিছুর মধ্যে রয়েছে।

পরিত্রাণ তত্ত্বীয় ধারণা হিসাবে ব্রহ্ম: মোক্ষ সম্পাদনা

হিন্দুধর্মের গোঁড়া দর্শন, বিশেষ করে বেদান্ত, সাংখ্যযোগ দর্শনগুলি তাদের মোক্ষের আলোচনায় ব্রহ্ম এবং আত্মার ধারণার উপর ফোকাস করে। অদ্বৈত বেদান্ত মনে করে যে আত্মা ও ব্রহ্মের মধ্যে কোন সত্তা/অ-সত্তার পার্থক্য নেই। আত্মজ্ঞান (আত্ম-জ্ঞান) ব্যক্তির ভিতরে ও ব্যক্তির বাইরে ব্রহ্মের জ্ঞানের সমার্থক। অধিকন্তু, ব্রহ্মের জ্ঞান সমস্ত অস্তিত্ব, আত্ম-উপলব্ধি, অবর্ণনীয় আনন্দমোক্ষ (স্বাধীনতা, পরমানন্দ) সহ একত্বের বোধের দিকে পরিচালিত করে,[১০১] কারণ ব্রহ্ম-আত্মা হল সমস্ত কিছুর উৎপত্তি এবং শেষ, সর্বজনীন নীতি যা আছে সব কিছুর পিছনে এবং উৎসে, চেতনা যা সবকিছু এবং সকলকে পরিব্যাপ্ত করে।[১০২]

হিন্দুধর্মের দ্বৈত বেদান্তের মতো আস্তিক উপ-দর্শন একই প্রাঙ্গণ দিয়ে শুরু হয়, কিন্তু স্বতন্ত্র স্ব এবং ব্রহ্ম আলাদা, এমন ভিত্তি যোগ করে, এবং এর ফলে সম্পূর্ণ ভিন্ন সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যেখানে বিশ্বের অন্যান্য প্রধান ধর্মে ব্রহ্মকে ঈশ্বরের অনুরূপভাবে ধারণা করা হয়।[১৮] আস্তিক দর্শনগুলি দাবি করে যে মোক্ষ হল স্বতন্ত্র ও পৃথক ব্রহ্মের (বিষ্ণুশিব বা সমতুল্য বৈষম্যবাদ) এর সাথে প্রেমময়, চিরন্তন মিলন বা নৈকট্য। ব্রহ্ম, হিন্দুধর্মের এই উপ-দর্শনগুলিতে অস্তিত্বের সর্বোচ্চ পরিপূর্ণতা হিসাবে বিবেচিত হয়, যা প্রতিটি স্বয়ং তার নিজস্ব উপায়ে মোক্ষের জন্য যাত্রা করে।[১০৩]

দার্শনিক চিন্তাধারা সম্পাদনা

বেদান্ত সম্পাদনা

ব্রহ্মের ধারণা, এর প্রকৃতিআত্মা এবং পর্যবেক্ষণ করা মহাবিশ্বের সাথে এর সম্পর্ক, হিন্দুধর্মের বেদান্ত দর্শনের বিভিন্ন উপ-দর্শনের মধ্যে পার্থক্যের প্রধান বিষয়।

অদ্বৈত বেদান্ত সম্পাদনা

অদ্বৈত বেদান্ত অনন্দ্যবাদকে সমর্থন করে। ব্রহ্ম হল একমাত্র অপরিবর্তনীয় বাস্তবতা,[৭২] সেখানে কোনো দ্বৈততা নেই, কোনো সীমিত স্বতন্ত্র স্ব বা পৃথক সীমাহীন মহাজাগতিক আত্ম নেই, বরং সমস্ত স্ব, সমস্ত অস্তিত্ব, সমস্ত স্থান ও সময় জুড়ে, এক এবং অভিন্ন।[৬][৮২][১০৪] অদ্বৈত বেদান্ত অনুসারে প্রতিটি সত্তার ভিতরের ব্রহ্মাণ্ডআত্মা হল ব্রহ্ম, এবং প্রতিটি সত্তার বাইরের ব্রহ্মাণ্ড ও আত্মা হল ব্রহ্ম। ব্রহ্ম হল বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক সব কিছুর আদি ও শেষ। ব্রহ্ম হল সমস্ত কিছুর মূল উৎস। ব্রহ্মকে শেখানো বা উপলব্ধি করা যায় না (বৌদ্ধিক জ্ঞানের বস্তু হিসাবে), কিন্তু এটা সব মানুষের দ্বারা শেখা ও উপলব্ধি করা যায়।[২০] অদ্বৈত বেদান্তের লক্ষ্য হল উপলব্ধি করা যে একজনের আত্ম (আত্মা) অজ্ঞতা এবং মিথ্যা-পরিচয় (অবিদ্যা) দ্বারা অস্পষ্ট হয়ে যায়। যখন অবিদ্যা অপসারিত হয়, তখন আত্মা (ব্যক্তির অভ্যন্তরে) ব্রহ্মের সাথে অভিন্নরূপে উপলব্ধি করা হয়।[৭৫] ব্রহ্ম বাইরের, পৃথক, দ্বৈত সত্তা নয়, ব্রহ্ম প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যে রয়েছে, হিন্দুধর্মের অদ্বৈত বেদান্ত দর্শন বলে। ব্রহ্ম হল সবই যা চিরন্তন, অপরিবর্তনীয় এবং যা সত্যই বিদ্যমান।[৭২] এই দৃষ্টিভঙ্গি এই দর্শনে বিভিন্ন রূপে বিবৃত হয়েছে, যেমন "একম সত" ("সত্য এক"), এবং সবই ব্রহ্ম।

মহাবিশ্ব কেবল ব্রহ্ম থেকে আসে না, এটি ব্রহ্ম। অদ্বৈত বেদান্তের একজন প্রবক্তা আদি শঙ্করের মতে, শ্রুতি যে ব্রহ্মের জ্ঞান প্রদান করে তা আত্ম অনুসন্ধান ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে পাওয়া যায় না।[১০৫]

অদ্বৈত বেদান্তে, নির্গুণ ব্রহ্ম, যা গুণবিহীন ব্রহ্ম, তাকে চূড়ান্ত এবং একমাত্র বাস্তবতা বলে ধরে নেওয়া হয়েছে।[৭২][৭৬] চেতনা ব্রহ্মের সম্পত্তি নয় বরং এর স্বভাব। এই ক্ষেত্রে, অদ্বৈত বেদান্ত অন্যান্য বেদান্ত দর্শন থেকে পৃথক।[১০৬]

ভগবদ্গীতার উদাহরণ শ্লোকগুলি অন্তর্ভুক্ত করে:

নৈবেদ্য (যজ্ঞ) হল ব্রহ্ম; উৎসর্গ হল ব্রহ্ম;
ব্রহ্মের অগ্নিতে ব্রহ্ম নিবেদিত।
তার দ্বারা ব্রহ্ম লাভ হবে,
যিনি সর্বদা ব্রহ্মকে কর্মে দেখেন।

— ভগবদ্গীতা, স্তোত্র ৪.২৪[১০৭][১০৮]

যে তার মধ্যে তার সুখ খুঁজে পায়,
ভিতরে তার আনন্দ,
এবং ভিতরে তার আলো,
এই যোগিন ব্রহ্মের পরমানন্দ লাভ করে, ব্রহ্ম হয়।

— ভগবদ্গীতা, স্তোত্র ৫.২৪[১০৯]

দ্বৈত বেদান্ত সম্পাদনা

দ্বৈত দর্শন মতে ব্রহ্ম হল বিশ্বের প্রধান ধর্মে ঈশ্বরের অনুরূপ ধারণা।[১৮] দ্বৈত মনে করেন যে স্বতন্ত্র আত্ম ঈশ্বরের উপর নির্ভরশীল, কিন্তু স্বতন্ত্র।[১৮]

দ্বৈত তত্ত্ববাদকে ব্যাখ্যা করে যার অর্থ সর্বজনীন স্তরের মধ্যে সত্তার তত্ত্বগুলির (উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য) মধ্যে পার্থক্য বোঝা এইভাবে:[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

  1. জীব-ঈশ্বর-ভেদ — আত্মাবিষ্ণুর মধ্যে পার্থক্য
  2. যদ-ঈশ্বর-ভেদ — অবোধ ও বিষ্ণুর মধ্যে পার্থক্য
  3. মিঠ-জীব-ভেদ — যে কোনো দুটি আত্মার মধ্যে পার্থক্য
  4. জড়-জীব-ভেদ — অবোধ ও আত্মার মধ্যে পার্থক্য
  5. মিঠ-জাদ-ভেদ — যে কোনো দুটি অন্তর্নিহিতের মধ্যে পার্থক্য

অচিন্ত্য ভেদ অবেদ সম্পাদনা

অচিন্ত্য ভেদ অভেদ দর্শন দ্বৈতদ্বৈত এর অনুরূপ। এই দর্শনে, ব্রহ্ম শুধু নৈর্ব্যক্তিক নয়, ব্যক্তিগতও।[১১০] যে ব্রহ্ম হলেন পরম সত্যের উপলব্ধির প্রথম পর্যায়ে (প্রক্রিয়া দ্বারা যাকে বলা হয় জ্ঞান) যদিও ভগবানের সর্বোচ্চ ব্যক্তিত্ব, তিনি নৈর্ব্যক্তিক ব্রহ্ম হিসাবে উপলব্ধি করা হয়, তারপরে শাশ্বত বৈকুণ্ঠ আবাস (ব্রহ্মলোক সনাতন নামেও পরিচিত) থাকা ব্যক্তিগত ব্রাহ্ম হিসাবে উপলব্ধি করা হয়, তারপরে  পরমাত্মা (যোগ-প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অতিনিয়ত-ধ্যানের মাধ্যমে, হৃদয়ে বিষ্ণু-ভগবান)—বিষ্ণু (নারায়ণ, প্রত্যেকের হৃদয়েও) যার বহু আবাস রয়েছে বিষ্ণুলোক (বৈকুণ্ঠলোক) নামে পরিচিত, এবং পরিশেষে (ভক্তি দ্বারা পরম সত্য উপলব্ধি করা হয়) ভগবান হিসাবে, ভগবানের পরম ব্যক্তিত্ব, যিনি পরমাত্মা ও ব্রহ্ম উভয়ের উৎস (ব্যক্তিগত, নৈর্ব্যক্তিক, বা উভয়)।[১১০]

বৈষ্ণবধর্ম সম্পাদনা

সমস্ত বৈষ্ণব দর্শনগুলি সর্বস্তুতবাদী ও আত্ম-উপলব্ধির মধ্যবর্তী পদক্ষেপ হিসাবে নৈর্ব্যক্তিক ব্রহ্মের সাথে আত্মার সনাক্তকরণের অদ্বৈত ধারণাকে উপলব্ধি করে, কিন্তু মুক্তি নয় বা বা ভক্তি যোগের মাধ্যমে সম্পূর্ণ ঈশ্বর-উপলব্ধির চূড়ান্ত মুক্তি।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]  গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ম, অচিন্ত্য ভেদ অভেদ দর্শনের রূপ, এছাড়াও উপসংহারে পৌঁছেছে যে ব্রহ্ম হলেন ঈশ্বরের সর্বোচ্চ ব্যক্তিত্ব। তাদের মতে, ব্রহ্ম হলেন ভগবান বিষ্ণু; মহাবিশ্ব ও পরমের অন্যান্য সমস্ত প্রকাশ তাঁরই সম্প্রসারণ।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

ভক্তি আন্দোলন সম্পাদনা

হিন্দুধর্মের ভক্তি আন্দোলন ব্রহ্ম-নির্গুণ ও সগুণের দুটি ধারণাকে ঘিরে এর ধর্মতত্ব তৈরি করেছিল।[১১১] নির্গুণ ব্রহ্ম ছিল নিরাকার, গুণ বা গুণ ছাড়াই চূড়ান্ত বাস্তবতার ধারণা।[১১২] সগুণ ব্রহ্ম, বিপরীতে, রূপ, গুণাবলী ও গুণের মতোই কল্পনা ও বিকশিত হয়েছিল।[১১২] দুটির সমান্তরাল ছিল যথাক্রমে প্রাচীন ধর্মবাদী অব্যক্ত এবং আস্তিকবাদী প্রকাশ ঐতিহ্যে, এবং ভগবদ্গীতায় অর্জুন-কৃষ্ণ কথোপকথনের সাথে পাওয়া যায়।[১১১][১১৩] এটি একই ব্রহ্ম, কিন্তু দুটি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়, নির্গুণ জ্ঞান-কেন্দ্র থেকে এবং অন্যটি সগুনী প্রেম-কেন্দ্রবিন্দু থেকে, গীতায় কৃষ্ণ (ভগবান বিষ্ণুর একটি ৮ম অবতার) হিসাবে একত্রিত।[১১৩] নির্গুণ ভক্তের কবিতা ছিল জ্ঞানশ্রয়ী, বা জ্ঞানের শিকড় ছিল।[১১১] সগুণ ভক্তের কবিতা ছিল প্রেমা-শ্রয়ী, বা প্রেমের শিকড়।[১১১] ভক্তিতে, জোর দেওয়া হয় পারস্পরিক প্রেম এবং ভক্তি, যেখানে ভক্ত ঈশ্বরকে ভালবাসেন, এবং ঈশ্বর ভক্তকে ভালবাসেন।[১১৩]

জিনেনে ফাউলার বলেছেন যে নির্গুণ ও সগুণ ব্রহ্মের ধারণা, ভক্তি আন্দোলনের ধর্মতত্ত্বের মূলে, হিন্দুধর্মের বেদান্ত দর্শন ধারণাগুলির সাথে আরও গভীর বিকাশ ঘটেছে, বিশেষ করে আদি শঙ্করের অদ্বৈত বেদান্ত, রামানুজের বিশিষ্টাদ্বৈত বেদান্ত, এবং মধ্বাচার্যের দ্বৈত বেদান্ত।[১১২] ভক্তির উপর দ্বাদশ শতাব্দীর দুটি প্রভাবশালী গ্রন্থ হল শান্দিল্য ভক্তি সূত্র—নির্গুণ-ভক্তির সাথে অনুরণিত গ্রন্থ, এবং নারদ ভক্তিসূত্র—একটি গ্রন্থ যা সগুণ-ভক্তির দিকে ঝুঁকে পড়ে।[১১৪]

ভক্তি আন্দোলনের নির্গুণ ও সগুণ ব্রহ্ম ধারণা পণ্ডিতদের কাছে বিস্ময়কর ছিল, বিশেষ করে নির্গুণী ঐতিহ্য কারণ এটি প্রস্তাব করে, ডেভিড লরেঞ্জেন বলেন, "গুণবিহীন ঈশ্বরের প্রতি আন্তরিক ভক্তি, এমনকি কোনো সংজ্ঞায়িত ব্যক্তিত্ব ছাড়াই"।[১১৫] তবুও "নির্গুণ ভক্তি সাহিত্যের পাহাড়" দেওয়া, লরেঞ্জেন যোগ করেন, সগুণ ব্রহ্মের ভক্তির সাথে সাথে নির্গুণ ব্রহ্মের জন্য ভক্তি হিন্দু ঐতিহ্যের বাস্তবতার অংশ।[১১৫] এগুলি ভক্তি আন্দোলনের সময় ঈশ্বরকে কল্পনা করার দুটি বিকল্প উপায় ছিল।[১১১]

ব্রহ্ম সম্পর্কে বৌদ্ধ ধারণা সম্পাদনা

বৌদ্ধধর্ম ব্রহ্ম ও আত্মার উপনিষদিক মতবাদকে প্রত্যাখ্যান করে (স্থায়ী স্ব, সারাংশ)।[টীকা ৬] ড্যামিয়েন কিউনের মতে, "বুদ্ধ বলেছিলেন যে তিনি ব্যক্তিগত আত্ম (আত্মান) বা এর মহাজাগতিক প্রতিরূপ (ব্রহ্ম) এর অস্তিত্বের জন্য কোন প্রমাণ খুঁজে বুদ্ধ পাননি"।[১১৬] বৌদ্ধধর্মের অধিবিদ্যা তার অনাত্তা মতবাদের মাধ্যমে ব্রহ্ম (চূড়ান্ত সত্তা), ব্রহ্ম-সদৃশ সারমর্ম, স্বয়ং ও আধ্যাত্মিকভাবে সমতুল্য যেকোনো কিছুকে প্রত্যাখ্যান করে।[১১৭][১১৮][১১৯]

মার্ভ ফাউলারের মতে, বৌদ্ধধর্মের কিছু রূপ ব্রহ্মের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ধারণাগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।[টীকা ৭] উদাহরণ হিসেবে, ফাউলার বৌদ্ধধর্মের প্রথম দিকের সর্বস্তিবাদ দর্শনের কথা উল্লেখ করেছেন, যেটি "খুবই সর্বেশ্বরবাদী ধর্মীয় দর্শন গ্রহণ করতে এসেছিল, এবং মহাযান বৌদ্ধধর্মের বিকাশে তারা যে প্রেরণা দিয়েছিল তার কারণে এটি গুরুত্বপূর্ণ"।[১২০] উইলিয়াম থিওডোর ডি বারির মতে, মহাযান বৌদ্ধধর্মের যোগাকার দর্শন মতবাদে, "মর্যাদার দেহ, চূড়ান্ত বুদ্ধ, যিনি সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডকে পরিব্যাপ্ত ও অধীনস্থ করেছেন [...] প্রকৃতপক্ষে বিশ্ব স্বয়ং, উপনিষদের ব্রহ্ম, নতুন রূপে"।[১২১] ফাউলারের মতে, কিছু পণ্ডিত হিন্দু ব্রহ্ম/আত্মনের সাথে বৌদ্ধ নির্বাণকে, চূড়ান্ত বাস্তবতা হিসাবে কল্পনা করেছেন; ফাউলার দাবি করেন যে এই দৃষ্টিভঙ্গি "বৌদ্ধ চেনাশোনাগুলিতে সামান্য সমর্থন পেয়েছে।"[১২২] ফাউলার দাবি করেছেন যে মহাযান গ্রন্থের একটি সংখ্যার লেখকরা তাদের ধারণাগুলি ব্রহ্মের উপনিষদিক মতবাদ থেকে আলাদা করার জন্য কষ্ট করেছেন।[টীকা ৮]

বৌদ্ধ গ্রন্থে ব্রহ্মের সহকর্মী হিসাবে ব্রহ্মা সম্পাদনা

বৈদিক সাহিত্যে ব্রহ্মের আধ্যাত্মিক ধারণা অনেক বেশি প্রাচীন, এবং কিছু পণ্ডিত পরামর্শ দেন যে দেবতা ব্রহ্মা নৈর্ব্যক্তিক, নির্গুণের (ব্যতীত) রূপ এবং গুণাবলী (সগুণ সংস্করণ) সহ একটি ব্যক্তিগত ধারণা এবং মূর্তি হিসাবে আবির্ভূত হতে পারেগুণাবলী, নিরাকার সার্বজনীন নীতিকে ব্রহ্ম বলা হয়।[১২৩] হিন্দু গ্রন্থে, বিষ্ণুশিবের সাথে দেবতা ব্রহ্মার প্রাচীনতম উল্লেখগুলির মধ্যে মৈত্রায়ণীয় উপনিষদের পঞ্চম প্রপথক (পাঠ) এ রয়েছে, সম্ভবত বৌদ্ধধর্মের উত্থানের পর খ্রিস্টপূর্ব ১ম সহস্রাব্দের শেষের দিকে রচিত হয়।[১২৪][১২৫][১২৬]

প্রাথমিক বৌদ্ধরা ব্রহ্মার ধারণাকে আক্রমণ করেছিল, গণনাথ ওবেয়েসেকেরে বলেন, এবং এর ফলে লিঙ্গ নিরপেক্ষ, বিমূর্ত আধিভৌতিক ব্রহ্মের বৈদিক ও উপনিষদিক ধারণাকে বিতর্কিতভাবে আক্রমণ করেছিলেন।[১২৭] প্রাথমিক বৌদ্ধ গ্রন্থে ব্রহ্মার এই সমালোচনার লক্ষ্য হল বেদকে উপহাস করা, কিন্তু একই পাঠ্য একই সাথে মেত্তা (প্রেমময়-দয়া, করুণা) কে ব্রহ্মার সাথে মিলনের অবস্থা বলে। বৈদিক ব্রহ্মবিহারের ধারণায়, বৌদ্ধ মূল্য ব্যবস্থায় মূল্য ব্যবস্থা বজায় রেখে ব্রহ্মার প্রতি প্রাথমিক বৌদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি ছিল কোনো সৃষ্টিকর্তার দিককে প্রত্যাখ্যান করা।[১২৭] মার্টিন উইল্টশায়ারের মতে, "স্বর্গ লোক" এর পরিবর্তে বৌদ্ধ ধর্মশাস্ত্রে "ব্রহ্ম লোক" শব্দটি সম্ভবত উপনিষদে ব্রহ্ম ধারণার "সত্য শক্তি" এবং জ্ঞানের কেন্দ্রবিন্দুকে বেছে নেওয়ার ও জোর দেওয়ার বৌদ্ধ প্রচেষ্টা।[১২৮] একই সাথে, ব্রহ্মকে ব্রহ্মা হিসাবে সংস্কার করে এবং এটিকে তার দেব ও সংসার তত্ত্বের মধ্যে ছেড়ে দিয়ে, প্রারম্ভিক বৌদ্ধধর্ম বেদের আত্ম-ব্রহ্ম ভিত্তিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল তার নিজস্ব ধম্ম মতবাদ (অ্যানিকা, দুক্খ ও অনাত্তা)।[১২৯]

শিখধর্মে ব্রহ্ম সম্পাদনা

আইকে ওঙ্কার (বাম) শিখধর্মের মুল মন্তরের অংশ, যেখানে এর অর্থ হল "ওঙ্কার [ঈশ্বর, বাস্তবতা] এক"।[১৩০] শিখধর্মের ওঙ্কার ওঁ-এর সাথে সম্পর্কিত যাকে ওঙ্কারও[১৩১] বলা হয়—হিন্দুধর্মে।[১৩০][১৩২] হিন্দুধর্মের প্রাচীন গ্রন্থে ওঁকে সর্বোচ্চ বাস্তবতা, ব্রহ্মের প্রতীক হিসেবে বলা হয়েছে।[১৩৩][১৩৪]

ব্রহ্মের আধিভৌতিক ধারণা, বিশেষ করে নির্গুণ ব্রহ্ম হিসেবে—গুণহীন, নিরাকার, চিরন্তন সর্বোচ্চ বাস্তবতা—শিখধর্মের ভিত্তি।[১৩৫] এই বিশ্বাস শিখদের দ্বারা নির্গুণ ভক্তির মাধ্যমে পালন করা হয়।[১৩৬][১৩৭]

গৌরীতে, যা গুরু গ্রন্থ সাহিবের অংশ, ব্রহ্মকে "এক সেকেন্ড ছাড়া একজন" হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে, শ্রী রাগে "সবকিছুই তাঁর থেকে জন্মগ্রহণ করে এবং অবশেষে তাঁর মধ্যে লীন হয়", ভার আসাতে "আমরা যা দেখি বা শুনি ব্রহ্মের প্রকাশ"।[১৩৮] নেসবিট বলেছেন যে শিখ ধর্মগ্রন্থ গুরু গ্রন্থ সাহিবের শুরুতে বারোটি শব্দের মুল মন্তরে প্রথম দুটি শব্দ, ইক ওঙ্কার, পণ্ডিতরা তিনটি ভিন্ন উপায়ে অনুবাদ করেছেন: "একই ঈশ্বর আছে", "এই সত্তা এক", এবং "একই বাস্তবতা"।[১৩০]

ব্রহ্মের আধিভৌতিক ধারণার জন্য "এক সেকেন্ড ছাড়াই" এর উপর অনুরূপ জোর হিন্দুধর্মের প্রাচীন গ্রন্থে পাওয়া যায়, যেমন ছান্দোগ্য উপনিষদের অধ্যায় ৬.২।[১৩৯][১৪০] শিখধর্মের ঈশ্বর ও সর্বোচ্চ বাস্তবতা সম্পর্কে ধারণাগুলি হিন্দুধর্মে ব্রহ্মের সগুণ ও নির্গুণ ধারণাগুলিতে পাওয়া ধারণাগুলি ভাগ করে।[১৩৫][১৪১]

চূড়ান্ত বাস্তবতা (ব্রহ্ম) এর ধারণাকে শিখধর্মে নাম, সত-নাম বা নাম হিসাবেও উল্লেখ করা হয়েছে এবং হিন্দু ওঁ-এর মত ঋক ওঁকার এই বাস্তবতার প্রতীক।[১৪২][১৪৩]

জৈনধর্মে ব্রহ্ম সম্পাদনা

জৈনধর্মে ব্রহ্মের ধারণা প্রত্যাখ্যান বা গৃহীত কিনা তা নিয়ে পণ্ডিতরা বিতর্ক করেন।আস্তিক ঈশ্বরের ধারণা জৈনধর্ম দ্বারা প্রত্যাখ্যান করা হয়, কিন্তু জীব বা "আত্ম (আত্মা) বিদ্যমান" আধিভৌতিক সত্য এবং এর পুনর্জন্ম এবং কেবল জ্ঞানের তত্ত্বের কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে বিবেচিত হয়।[১৪৪]

বিসেট বলেছেন যে জৈনধর্ম "বস্তুজগৎ" ও "আত্মান" গ্রহণ করে, কিন্তু ব্রহ্মকে প্রত্যাখ্যান করে- হিন্দুধর্মের প্রাচীন গ্রন্থে পাওয়া চূড়ান্ত বাস্তবতা এবং মহাজাগতিক নীতির আধিভৌতিক ধারণা।[১৪৫] গোস্বামী, এর বিপরীতে, বলেছেন যে জৈনধর্মের সাহিত্যে অদ্বৈত ধারণার আন্ডারকারেন্ট রয়েছে, যেখানে স্বয়ং যিনি ব্রহ্ম (সর্বোচ্চ বাস্তবতা, সর্বোচ্চ জ্ঞান) জ্ঞান অর্জন করেন তিনি নিজেই ব্রহ্মের অনুরূপ।[১৪৬] জৈনি বলেছেন যে জৈন ধর্ম চূড়ান্ত বাস্তবতার (ব্রহ্ম) ভিত্তিকে গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করে না, পরিবর্তে জৈন তত্ত্ববিদ্যা অনেকান্তবাদ নামক বহুমুখী মতবাদ গ্রহণ করে। এই মতবাদ ধারণ করে যে "বাস্তবতা অপরিবর্তনীয়ভাবে জটিল" এবং কোনো মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বা বর্ণনা পরম সত্যকে উপস্থাপন করতে পারে না।[১৪৭][১৪৮] যারা পরম সত্যকে উপলব্ধি করেছেন এবং উপলব্ধি করেছেন তারাই মুক্তিপ্রাপ্ত ও পরমাত্মা, কেবল জ্ঞানের সাথে।[১৪৭]

টীকা সম্পাদনা

  1. "not sublatable",[১৩] the final element in a dialectical process which cannot be eliminated or annihilated (German: "aufheben").
  2. It is also defined as:
  3. Saguna Brahman, with qualities
  4. Nirguna Brahman, without qualities
  5. Supreme
  6. Merv Fowler, Zen Buddhism: Beliefs and Practices (Brighton: Sussex Academic, 2005), p. 30: "Upanisadic thought is anything but consistent; nevertheless, there is a common focus on the acceptance of a totally transcendent Absolute, a trend which arose in the Vedic period. This indescribable Absolute is called Brahman [...] The true Self and Brahman are one and the same. Known as the Brahman-Atman synthesis, this theory, which is central to Upanisadic thought, is the cornerstone of Indian philosophy. The Brahman-Atman synthesis, which posits the theory of a permanent, unchanging self, was anathema to Buddhists, and it was as a reaction to the synthesis that Buddhism first drew breath. Merv Fowler p. 47: "For the Upanisadic sages, the real is the Self, is Atman, is Brahman. [...] To the Buddhist, however, any talk of an Atman or permanent, unchanging Self, the very kernel of Upanisadic thought, is anathema, a false notion of manifest proportion."
  7. Merv Fowler, Buddhism: Beliefs and Practices (Brighton: Sussex Academic, 1999), p. 34: "It was inevitable that the non-theistic philosophy of orthodox Buddhism should court the older Hindu practices and, in particular, infuse into its philosophy the belief in a totally transcendent Absolute of the nature of Brahman."
  8. Merv Fowler, Buddhism: Beliefs and Practices (Brighton: Sussex Academic, 1999), p. 82: "The original writers of these Mahayana texts were not at all pleased that their writings were seen to contain the Brahman of the Upanisads in a new form. The authors of the Lankavatara strenuously denied that the womb of Tathagatahood, [...] was in any way equatable with the 'eternal self', the Brahmanical atman of Upanisadic thought. Similarly, the claim in the Nirvana Sutra that the Buddha regarded Buddhahood as a 'great atman' caused the Yogacarins considerable distress."

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Lochtefeld, James G. (২০০২)। The Illustrated Encyclopedia of Hinduism1The Rosen Publishing Group। পৃষ্ঠা 122। আইএসবিএন 978-0823931798 
  2. P. T. Raju (2006), Idealistic Thought of India, Routledge, আইএসবিএন ৯৭৮-১৪০৬৭৩২৬২৭, page 426 and Conclusion chapter part XII
  3. Fowler 2002, পৃ. 49–55 (in Upanishads), 318–319 (in Vishistadvaita), 246–248 and 252–255 (in Advaita), 342–343 (in Dvaita), 175–176 (in Samkhya-Yoga)।
  4. Mariasusai Dhavamony (2002), Hindu-Christian Dialogue: Theological Soundings and Perspectives, Rodopi Press, আইএসবিএন ৯৭৮-৯০৪২০১৫১০৪, pages 43–44
  5. For dualism school of Hinduism, see: Francis X. Clooney (2010), Hindu God, Christian God: How Reason Helps Break Down the Boundaries between Religions, Oxford University Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০১৯৯৭৩৮৭২৪, pages 51–58, 111–115;
    For monist school of Hinduism, see: B. Martinez-Bedard (2006), Types of Causes in Aristotle and Sankara, Thesis – Department of Religious Studies (Advisors: Kathryn McClymond and Sandra Dwyer), Georgia State University, pages 18–35
  6. Brodd, Jeffrey (২০০৯)। World Religions: A Voyage of Discovery  (3rd সংস্করণ)। Saint Mary's Press। পৃষ্ঠা 43–47। আইএসবিএন 978-0884899976 
  7. Volume 1, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮১৪৬৮৪, page 91
  8. Stephen Philips (1998), Routledge Encyclopedia of Philosophy: Brahman to Derrida (Editor; Edward Craig), Routledge, আইএসবিএন ৯৭৮-০৪১৫১৮৭০৭৭, pages 1–4
  9. Goodman, Hananya (১৯৯৪)। Between Jerusalem and Benares: Comparative Studies in Judaism and HinduismState University of New York Press। পৃষ্ঠা 121। আইএসবিএন 978-0791417164 
  10. Raju 1992, পৃ. 228।
  11. Eliot Deutsch (1980), Advaita Vedanta : A Philosophical Reconstruction, University of Hawaii Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০৮২৪৮০২৭১৪, Chapter 1
  12. Fowler 2002, পৃ. 53–55।
  13. Potter 2008, পৃ. 6–7।
  14. Brodd, Jeffrey (২০০৩)। World Religions। Winona, Minnesota: Saint Mary's Press। আইএসবিএন 978-0-88489-725-5 
  15. John Bowker (ed.)(2012), The Oxford Dictionary of World Religions, Oxford University Press.[১]
  16. Fowler 2002, পৃ. 49–53।
  17. Klaus K. Klostermaier (2007), A Survey of Hinduism, Third Edition, State University of New York Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০৭৯১৪৭০৮২৪, Chapter 12: Atman and Brahman – Self and All
  18. Michael Myers (2000), Brahman: A Comparative Theology, Routledge, আইএসবিএন ৯৭৮-০৭০০৭১২৫৭১, pages 124–127
  19. Thomas Padiyath (2014), The Metaphysics of Becoming, De Gruyter, আইএসবিএন ৯৭৮-৩১১০৩৪২৫৫০, pages 155–157
  20. Arvind Sharma (2007), Advaita Vedānta: An Introduction, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮২০২৭২, pages 19–40, 53–58, 79–86
  21. John E. Welshons (2009), One Self, One Love, One Heart, New World Library, আইএসবিএন ৯৭৮-১৫৭৭৩১৫৮৮৯, pages 17–18
  22. Puligandla 1997, পৃ. 222।
  23. Sinari 2000, পৃ. 384।
  24. Not Masculine or Feminine (see Grammatical gender).
  25. Jan Gonda (1962), Some Notes on the Study of Ancient-Indian Religious Terminology, History of Religions, Vol. 1, No. 2 (Winter, 1962), pages 268–269
  26. Barbara Holdrege (১৯৯৫), বেদ এবং তোরা: Transcending the Textuality of Scripture, State University of New York Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০৭৯১৪১৬৪০২, page 29
  27. Maurice Bloomfield, A Vedic Concordance, Harvard University Press, pages 656-662
  28. Original: वयमग्ने अर्वता वा सुवीर्यं ब्रह्मणा वा चितयेमा जनाँ अति । अस्माकं द्युम्नमधि पञ्च कृष्टिषूच्चा स्वर्ण शुशुचीत दुष्टरम् ॥१०॥ Source: ऋग्वेद: सूक्तं २.२ Wikisource
  29. Original: स तु श्रुधीन्द्र नूतनस्य ब्रह्मण्यतो वीर कारुधायः । त्वं ह्यापिः प्रदिवि पितॄणां शश्वद्बभूथ सुहव एष्टौ ॥८॥ ऋग्वेद: सूक्तं ६.२१ Wikisource
  30. Original: ब्रह्मणस्पतिरेता सं कर्मार इवाधमत् । देवानां पूर्व्ये युगेऽसतः सदजायत ॥२॥ ऋग्वेद: सूक्तं १०.७२ Wikisource
  31. Jan Gonda (1962), Some Notes on the Study of Ancient-Indian Religious Terminology, History of Religions, Vol. 1, No. 2 (Winter, 1962), pages 269-271
  32. Jan Gonda (1962), Some Notes on the Study of Ancient-Indian Religious Terminology, History of Religions, Vol. 1, No. 2 (Winter, 1962), pages 271-272
  33. See Rigveda Chapter 1.164; Karl Potter and Harold Coward, The Philosophy of the Grammarians, Encyclopedia of Indian Philosophies: Volume 5, Motilal Banarsidass Publishers, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮০৪২৬৫, pages 34-35
  34. Barbara Holdrege (1995), Veda and Torah: Transcending the Textuality of Scripture, State University of New York Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০৭৯১৪১৬৪০২, page 24
  35. Gavin Flood (1996), An Introduction to Hinduism, Cambridge University Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০৫২১৪৩৮৭৮০, pages 84-85
  36. Lindsay Jones (2005), Encyclopedia of religion, Volume 13, Macmillan Reference, আইএসবিএন ৯৭৮-০০২৮৬৫৭৩৩২, page 8894, Quote: "In Hindu iconography the swan personifies Brahman-Atman, the transcendent yet immanent ground of being, the Self."
  37. Denise Cush (2007), Encyclopedia of Hinduism, Routledge, আইএসবিএন ৯৭৮-০৪১৫৫৫৬২৩১, page 697
  38. R Prasad and P.D. Chattopadhyaya (2008), A Conceptual-analytic Study of Classical Indian Philosophy of Morals, Concept, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১৮০৬৯৫৪৪৫, page 56
  39. Paul Deussen, Sixty Upanishads of the Veda, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮১৪৬৭৭, page 243, 325-344, 363, 581
  40. Paul Deussen, Sixty Upanishads of the Veda, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮১৪৬৭৭, page 358, 371
  41. Paul Deussen, Sixty Upanishads of the Veda, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮১৪৬৭৭, page 305, 476
  42. Paul Deussen, Sixty Upanishads of the Veda, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮১৪৬৭৭, pages 110, 315-316, 495, 838-851
  43. Paul Deussen, Sixty Upanishads of the Veda, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮১৪৬৭৭, pages 211, 741-742
  44. Paul Deussen, Sixty Upanishads of the Veda, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮১৪৬৭৭, pages 308-311, 497-499
  45. Paul Deussen, Sixty Upanishads of the Veda, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮১৪৬৭৭, pages 181, 237, 444, 506-544, 570-571, 707, 847-850
  46. Paul Deussen, Sixty Upanishads of the Veda, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮১৪৬৭৭, pages 52, 110, 425, 454, 585-586, 838-851
  47. Paul Deussen, Sixty Upanishads of the Veda, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮১৪৬৭৭, pages 173-174, 188-198, 308-317, 322-324, 367, 447, 496, 629-637, 658, 707-708
  48. Paul Deussen, Sixty Upanishads of the Veda, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮১৪৬৭৭, pages 600, 619-620, 647, 777
  49. pp.77, Radhakrishnan, S, The Principal Upanisads, HarperCollins India, 1994
  50. Jones, Constance (২০০৭)। Encyclopedia of Hinduism। New York: Infobase Publishing। পৃষ্ঠা 270। আইএসবিএন 0816073368 
  51. Sanskrit and English Translation: S Madhavananda, Brihadaranyaka Upanishad 1.4.10, Brihadaranyaka Upanishad - Shankara Bhashya, page 145
  52. Robert Hume, Mundaka Upanishad, Thirteen Principal Upanishads, Oxford University Press, page 370-371
  53. Max Muller, The Upanishads, Part 2, Mundaka Upanishad, Oxford University Press, page 34-35
  54. Sanskrit: छान्दोग्योपनिषद् १.१ ॥तृतीयॊऽध्यायः॥ Wikisource English Translation:Max Muller, Chandogya Upanishad 3.14.1 Oxford University Press, page 48; Max Muller, গুগল বইয়ে The Upanisads, Routledge, pages xviii-xix
  55. Sanskrit: छान्दोग्योपनिषद् १.२ ॥षष्ठोऽध्यायः॥ Wikisource English Translation:Max Muller, Chandogya Upanishad 6.2.1 Oxford University Press, page 93; Max Muller, গুগল বইয়ে The Upanisads, Routledge, pages xviii-xix
  56. Sanskrit: छान्दोग्योपनिषद् १.२ ॥षष्ठोऽध्यायः॥ Wikisource English Translation:Robert Hume, Chandogya Upanishad 6.8, The Thirteen Principal Upanishads, Oxford University Press, pages 246-250
  57. AS Gupta, The Meanings of "That Thou Art", Philosophy East and West, Vol. 12, No. 2, pages 125-134
  58. Sanskrit: ऐतरेयोपनिषद् Wikisource English Translation:Max Muller, Aitareya Upanishad 3.3.7, also known as Aitareya Aranyaka 2.6.1.7 Oxford University Press, page 246
  59. Robert Hume, Chandogya Upanishad 3.14.1-3.14.4, The Thirteen Principal Upanishads, Oxford University Press, pages 209-210
  60. Chandogya Upanishad with Shankara Bhashya Ganganath Jha (Translator), pages 150-157
  61. For modern era cites:
  62. Paul Deussen, Sixty Upanishads of the Veda, Volume 1, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮১৪৬৮৪, pages 110-111 with preface and footnotes
  63. Max Muller, Chandogya Upanishad 3.13.7, The Upanishads, Part I, Oxford University Press, page 48 with footnotes
  64. "PrabhupadaBooks.com Srila Prabhupada's Original Books"prabhupadabooks.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-১২ 
  65. Edward Craig (1998), Metaphysics, Routledge Encyclopedia of Philosophy, আইএসবিএন ৯৭৮-০৪১৫০৭৩১০৩, Accessed (13 June 2015)
  66. Archibald Edward Gough (2001), The Philosophy of the Upanishads and Ancient Indian Metaphysics, Routledge, আইএসবিএন ৯৭৮-০৪১৫২৪৫২২৭, pages 47–48
  67. Roy W. Perrett (Editor, 2000), Indian Philosophy: Metaphysics, Volume 3, Taylor & Francis, আইএসবিএন ৯৭৮-০৮১৫৩৩৬০৮২, page xvii;
    K. K. Chakrabarti (1999), Classical Indian Philosophy of Mind: The Nyaya Dualist Tradition, State University of New York Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০৭৯১৪৪১৭১৮ pages 279–292
  68. John C. Plott et al (2000), Global History of Philosophy: The Axial Age, Volume 1, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮০১৫৮৫, pages 60-62
  69. Julius Lipner (2004), The Hindu World (Editors: S. Mittal and G. Thursby), Routledge, আইএসবিএন ০৪১৫২১৫২৭৭, pages 22–23
  70. Laurie Patton (2004), The Hindu World (Editors: S. Mittal and G. Thursby), Routledge, আইএসবিএন ০৪১৫২১৫২৭৭, pages 45–50
  71. J. D. Fowler (1996), Hinduism: Beliefs and Practices, Sussex University Press, আইএসবিএন ৯৭৮-১৮৯৮৭২৩৬০৮, pages 135–137
  72. AC Das (1952), Brahman and Māyā in Advaita Metaphysics, Philosophy East and West, Vol. 2, No. 2, pages 144–154
  73. William Indich (2000), Consciousness in Advaita Vedanta, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮১২৫১২, page 5
  74. Paul Hacker (1978), Eigentumlichkeiten dr Lehre und Terminologie Sankara: Avidya, Namarupa, Maya, Isvara, in Kleine Schriften (Editor: L. Schmithausen), Franz Steiner Verlag, Weisbaden, pages 101–109 (in German), also pages 69–99;
    Advaita Vedanta - A Bird's Eye View, Topic III: Philosophy of Advaita Vedanta, D. Krishna Ayyar (2011)
  75. Rambachan, Anantanand (২০০১)। "Hierarchies in the Nature of God? Questioning the "Saguna-Nirguna" Distinction in Advaita Vedanta"। Journal of Hindu-Christian Studies14 (7): 1–6। ডিওআই:10.7825/2164-6279.1250  
  76. William Wainwright (2012), Concepts of God ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৩ মার্চ ২০১৫ তারিখে, Stanford Encyclopedia of Philosophy, Stanford University, (Accessed on: 13 June 2015)
  77. that is things, beings or truths that are presumed to exist for its philosophical theory to be true, and what is the nature of that which so exists?; see: Edward Craig (1998), Ontology, Routledge Encyclopedia of Philosophy, আইএসবিএন ৯৭৮-০৪১৫০৭৩১০৩
  78. Edward Craig (1998), Ontology, Routledge Encyclopedia of Philosophy, আইএসবিএন ৯৭৮-০৪১৫০৭৩১০৩, Accessed (13 June 2015)
  79. Stephen H. Phillips (2001), Could There Be Mystical Evidence for a Nondual Brahman? A Causal Objection, Philosophy East and West, Vol. 51, No. 4, pages 492–506
  80. K. N. Jayatilleke (2010), Early Buddhist Theory of Knowledge, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮০৬১৯১, pages 246–249, from note 385 onwards;
    Steven Collins (1994), Religion and Practical Reason (Editors: Frank Reynolds, David Tracy), State Univ of New York Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০৭৯১৪২২১৭৫, page 64; Quote: "Central to Buddhist soteriology is the doctrine of not-self (Pali: anattā, Sanskrit: anātman, the opposed doctrine of ātman is central to Brahmanical thought). Put very briefly, this is the [Buddhist] doctrine that human beings have no Self, no unchanging essence.";
    Edward Roer (Translator), গুগল বইয়ে Shankara's Introduction, পৃ. 2,, pages 2–4
    Katie Javanaud (2013), Is The Buddhist 'No-Self' Doctrine Compatible With Pursuing Nirvana?, Philosophy Now
    John C. Plott et al (2000), Global History of Philosophy: The Axial Age, Volume 1, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮০১৫৮৫, page 63, Quote: "The Buddhist schools reject any Ātman concept. As we have already observed, this is the basic and ineradicable distinction between Hinduism and Buddhism".
  81. M. Prabhakar (2012), Review: An Introduction to Indian Philosophy, Philosophy in Review, 32(3), pages 158–160
  82. Barbara Holdrege (2004), The Hindu World (Editors: S. Mittal and G. Thursby), Routledge, আইএসবিএন ০৪১৫২১৫২৭৭, pages 241–242
  83. Anantanand Rambachan (2014), A Hindu Theology of Liberation: Not-Two Is Not One, State University of New York Press, আইএসবিএন ৯৭৮-১৪৩৮৪৫৪৫৫৯, pages 131–142
  84. Ian Whicher (1999), The Integrity of the Yoga Darsana: A Reconsideration of Classical Yoga, State University of New York Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০৭৯১৪৩৮১৫২, pages 298–300;
    Mike McNamee and William J. Morgan (2015), Routledge Handbook of the Philosophy of Sport, Routledge, আইএসবিএন ৯৭৮-০৪১৫৮২৯৮০৯, pages 135–136, Quote: "As a dualistic philosophy largely congruent with Samkhya's metaphysics, Yoga seeks liberation through the realization that Atman equals Brahman; it involves a cosmogonic dualism: purusha an absolute consciousness, and prakriti original and primeval matter."
  85. Francis Clooney and Tony Stewart (2004), The Hindu World (Editors: S. Mittal and G. Thursby), Routledge, আইএসবিএন ০৪১৫২১৫২৭৭, pages 166–167
  86. Randy Kloetzli and Alf Hiltebeitel (2004), The Hindu World (Editors: S. Mittal and G. Thursby), Routledge, আইএসবিএন ০৪১৫২১৫২৭৭, page 554
  87. Michael Myers (2000), Brahman: A Comparative Theology, Routledge, আইএসবিএন ৯৭৮-০৭০০৭১২৫৭১, pages 30–31
  88. R. Prasad and P. D. Chattopadhyaya (2008), A Conceptual-analytic Study of Classical Indian Philosophy of Morals, Concept, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১৮০৬৯৫৪৪৫, pages 56–59
  89. G. C. Pande (1990), Foundations of Indian Culture, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮০৭১০৫, pages 49–50
  90. Michael W. Myers (1998), Śaṅkarācārya and Ānanda, Philosophy East and West, Vol. 48, No. 4, pages 553–567
  91. Robert S. Hartman (2002), The Knowledge of Good: Critique of Axiological Reason, Rodopi, আইএসবিএন ৯৭৮-৯০৪২০১২২০২, page 225
  92. T. M. P. Mahadevan (1954), The Metaphysics of Śaṁkara, Philosophy East and West, Vol. 3, No. 4, pages 359–363
  93. Arvind Sharma (1999), The Puruṣārthas: An Axiological Exploration of Hinduism, The Journal of Religious Ethics, Vol. 27, No. 2, pages 223–256
  94. J. L. Shaw (2011), Freedom: East and West, SOPHIA, Vol 50, Springer Science, pages 481–497
  95. Katherine L Tietge (1997), Ontology and Genuine Moral Action: Jñaña (Intuitive Perception) Ethics and Karma-Yoga in Sankara's Advaita Vedanta and Schopenhauer's On the Basis of Morality, Ph.D. Thesis, Dept. of Philosophy, Southern Illinois University (US), Archive Link
  96. Nancy Bauer (1987), Advaita Vedānta and Contemporary Western Ethics, Philosophy East and West, Vol. 37, No. 1, pages 36–50
  97. Arvind Sharma (2000), Classical Hindu Thought: An Introduction, Oxford University Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০১৯৫৬৪৪৪১৮, pages 57–61
  98. N. A. Nikam (1952), A Note on the Individual and His Status in Indian Thought, Philosophy East and West, Vol. 2, No. 3, pages 254–258
  99. "English translation of Aitareya Upanishad" (পিডিএফ)Consciouslivingfoundation.org। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০১৯ 
  100. T.N. Sethumadhavan। "Aitareya Upanishad : Transliterated Sanskrit Text Free Translation & Brief Explanation" (পিডিএফ)Esamskriti.com। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০১৯ 
  101. Anantanand Rambachan (1994), The limits of scripture: Vivekananda's reinterpretation of the Vedas, University of Hawaii Press, pages 124–125
  102. Karl Potter (2008), The Encyclopedia of Indian Philosophies: Advaita Vedānta Up to Śaṃkara and His Pupils, Volume 3, Delhi: Motilal Banarsidass, pp. 210–215
  103. Betty Stafford (2010) "Dvaita, Advaita, And Viśiṣṭadvaita: Contrasting Views Of Mokṣa", Asian Philosophy, pages 215–224
  104. Rosen Dalal (2014), Hinduism: An Alphabetical Guide, Penguin, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১৮৪৭৫২৭৭৯, see article on Brahman
  105. Anantanand Rambachan (1994), The limits of scripture: Vivekananda's reinterpretation of the Vedas. University of Hawaii Press, pages 125, 124
  106. [Sangeetha Menon (2007), Advaita Vedānta], Internet Encyclopedia of Philosophy
  107. Christopher Key Chapple (Editor) and Winthrop Sargeant (Translator), The Bhagavad Gita: Twenty-fifth–Anniversary Edition, State University of New York Press, আইএসবিএন ৯৭৮-১৪৩৮৪২৮৪২০, page 224
  108. Jeaneane D. Fowler (2012), The Bhagavad Gita, Sussex Academic Press, আইএসবিএন ৯৭৮-১৮৪৫১৯৩৪৬১, page 83
  109. Christopher Key Chapple (Editor) and Winthrop Sargeant (Translator), The Bhagavad Gita: Twenty-fifth–Anniversary Edition, State University of New York Press, আইএসবিএন ৯৭৮-১৪৩৮৪২৮৪২০, page 266
  110. Prabhupada, His Divine Grace A.C. Bhaktivedanta Swami। "Bhagavad Gita Chapter 14 Verse 27"vedabase.io (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-২৫ 
  111. Karen Pechilis Prentiss (2014), The Embodiment of Bhakti, Oxford University Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০১৯৫৩৫১৯০৩, page 21
  112. Jeaneane D. Fowler (2012), The Bhagavad Gita, Sussex Academic Press, আইএসবিএন ৯৭৮-১৮৪৫১৯৩৪৬১, pages xxvii–xxxiv
  113. Jeaneane D. Fowler (2012), The Bhagavad Gita, Sussex Academic Press, আইএসবিএন ৯৭৮-১৮৪৫১৯৩৪৬১, pages 207–211
  114. Jessica Frazier and Gavin Flood (2011), The Continuum Companion to Hindu Studies, Bloomsbury Academic, আইএসবিএন ৯৭৮-০৮২৬৪৯৯৬৬০, pages 113–115
  115. David Lorenzen (1996), Praises to a Formless God: Nirguni Texts from North India, State University of New York Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০৭৯১৪২৮০৫৪, page 2
  116. Damien Keown, Buddhism (NY: Sterling, 2009), p. 70
  117. David Webster (২০০৪)। The Philosophy of Desire in the Buddhist Pali Canon। Routledge। পৃষ্ঠা 194–195, 93, 147। আইএসবিএন 978-0-203-01057-0 
  118. Richard Francis Gombrich; Cristina Anna Scherrer-Schaub (২০০৮)। Buddhist Studies। Motilal Banarsidass। পৃষ্ঠা 192–193। আইএসবিএন 978-81-208-3248-0 
  119. Mark Juergensmeyer; Wade Clark Roof (২০১১)। Encyclopedia of Global Religion। SAGE Publications। পৃষ্ঠা 272–273। আইএসবিএন 978-1-4522-6656-5 
  120. Merv Fowler, Buddhism: Beliefs and Practices (Brighton: Sussex Academic, 1999), p. 34
  121. William Theodore De Bary, cited in Merv Fowler, Buddhism: Beliefs and Practices (Brighton: Sussex Academic, 1999), p. 98
  122. Merv Fowler, Buddhism: Beliefs and Practices (Brighton: Sussex Academic, 1999), p. 81
  123. Bruce Sullivan (1999), Seer of the Fifth Veda, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮১৬৭৬৩, pages 82–83
  124. Hume, Robert Ernest (১৯২১), The Thirteen Principal Upanishads, Oxford University Press, পৃষ্ঠা 422–424 
  125. K. N. Jayatilleke (১৯৯৮)। Early Buddhist Theory of Knowledge। Motilal Banarsidass। পৃষ্ঠা 68, 374। আইএসবিএন 978-81-208-0619-1 , Quote: "We may conclude from the above that the rise of Buddhism is not far removed in time from, though it is prior to, the Maitri Upanishad".
  126. Jan Gonda (1968), The Hindu Trinity, Anthropos, Vol. 63, pages 215–219
  127. Gananath Obeyesekere (২০০৬)। Karma and Rebirth: A Cross Cultural Study। Motilal Banarsidass। পৃষ্ঠা 177–179। আইএসবিএন 978-81-208-2609-0 
  128. Martin G. Wiltshire (১৯৯০)। Ascetic Figures Before and in Early Buddhism: The Emergence of Gautama as the Buddha। Walter de Gruyter। পৃষ্ঠা 248–249, 253–255। আইএসবিএন 978-3-11-009896-9 
  129. Martin G. Wiltshire (১৯৯০)। Ascetic Figures Before and in Early Buddhism: The Emergence of Gautama as the Buddha। Walter de Gruyter। পৃষ্ঠা 256–265। আইএসবিএন 978-3-11-009896-9 
  130. Eleanor Nesbitt (2005), Sikhism: A Very Short Introduction, Oxford University Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০১৯২৮০৬০১৭, Chapter 4
  131. Jean Holm and John Bowker, Worship, Bloomsbury, ISBN, page 67
  132. Wendy Doniger (2000), Merriam-Webster's Encyclopedia of World Religions, Merriam Webster, আইএসবিএন ৯৭৮-০৮৭৭৭৯০৪৪০, page 500
  133. Rangaswami Sudhakshina (2012), Roots of Vendanta, Penguin, আইএসবিএন ৯৭৮-০১৪৩০৬৪৪৫৯, page 405
  134. David Leeming (2005), The Oxford Companion to World Mythology, Oxford University Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০১৯৫১৫৬৬৯০, page 54
  135. S. S. Kohli (1993), The Sikh and Sikhism, Atlantic, আইএসবিএন ৮১-৭১৫৬৩৩৬৮, page 39
  136. Hardip Syan (2014), in The Oxford Handbook of Sikh Studies (Editors: Pashaura Singh, Louis E. Fenech), Oxford University Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০১৯৯৬৯৯৩০৮, page 178
  137. A. Mandair (2011), Time and religion-making in modern Sikhism, in Time, History and the Religious Imaginary in South Asia (Editor: Anne Murphy), Routledge, আইএসবিএন ৯৭৮-০৪১৫৫৯৫৯৭১, pages 188–190
  138. S. S. Kohli (1993), The Sikh and Sikhism, Atlantic, আইএসবিএন ৮১-৭১৫৬৩৩৬৮, page 38
  139. Max Muller, Chandogya Upanishad 6.2.1 Oxford University Press, pages 93–94
  140. Paul Deussen, Sixty Upanishads of the Veda, Volume 1, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮১৪৬৮৪, pages 156–157, 162–163
  141. N. Mandair (2009), Postcolonial Philosophy of Religion (Editor: Purushottama Bilimoria, Andrew B. Irvine), Springer, আইএসবিএন ৯৭৮-৯৪০০৭৯১৭৭০, pages 145–146
  142. William Owen Cole and Piara Singh Sambhi (1998), The Sikhs: Their Religious Beliefs and Practices, 2nd edition, Sussex Academic Press, আইএসবিএন ৯৭৮-১৮৯৮৭২৩১৩৪, pages 70–71
  143. H. S. Singha (2009), Sikh Studies, Vol. 7, Hemkunt Press, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১৭০১০২৪৫৮, page 47
  144. Ray Billington (1997), Understanding Eastern Philosophy, Routledge, আইএসবিএন ৯৭৮-০৪১৫১২৯৬৫৭, page 46
  145. James Bissett, Cultural and Religious Heritage of India, Volume 2: Jainism (Editors: Sharma and Sharma), Mittal, আইএসবিএন ৮১-৭০৯৯৯৫৫৩, page 81
  146. C. Caillat and N. Balbir (2008), Jaina Studies, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১২০৮৩২৪৭৩, pages ix–x
  147. P. Jaini (1998), The Jaina Path of Purification, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৮১-২০৮-১৫৭৮-৫, pages 90–93
  148. J. Koller (2004), "Why is Anekāntavāda important?", (Editor: Tara Sethia, Ahimsā, Anekānta, and Jainism), Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৮১-২০৮-২০৩৬-৩, pages 400–407

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা