হৈসল সাহিত্য হল অধুনা দক্ষিণ ভারত অঞ্চলে গড়ে ওঠা হৈসল সাম্রাজ্যে (১০২৫-১৩৪৩ খ্রিস্টাব্দ) কন্নড়সংস্কৃত ভাষায় রচিত সাহিত্যের বিশাল সম্ভার।[১] দ্বিতীয় নৃপ কাম প্রতিষ্ঠিত এই সাম্রাজ্য রাজনৈতিক প্রাধান্য অর্জন করে রাজা বিষ্ণুবর্ধনের (১১০৮-১১৫২ খ্রিস্টাব্দ) রাজত্বকালে।[২] ১৩১১ খ্রিস্টাব্দে খিলজি রাজবংশের আক্রমণকারীদের হাতে পরাস্ত হওয়ার পর ধীরে ধীরে এই সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।[৩]

পশ্চিম ভারতে হৈসল ও তাদের প্রতিবেশী সেউণ যাদব ও শিলাহারদের রাজ্য, আনুমানিক ১২০০ খ্রিস্টাব্দ
বাঘের সঙ্গে যুদ্ধরত সল, হৈসল সাম্রাজ্যের প্রতীক, বেলুর, কর্ণাটক ১১১৬ খ্রিস্টাব্দ

এই যুগের কন্নড় সাহিত্য ছিল জৈনবীরশৈব ধর্মবিশ্বাসের সামাজিক-ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সাহিত্যের সমষ্টি, এছাড়া স্বল্প পরিমাণে বৈষ্ণব ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সাহিত্যও এই ধারার অন্তর্গত ছিল। কন্নড় ভাষায় প্রথম সুপরিচিত ব্রাহ্মণ লেখকেরা ছিলেন হৈসল রাজসভার সদস্য।[৪] রাজসভার সাহিত্যের অধিকাংশ কন্নড় ভাষায় রচিত হলেও[৫] বিশিষ্ট দার্শনিক মধ্ব রচিত দ্বৈত দর্শন-বিষয়ক বৈষ্ণব সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ রচিত হয় সংস্কৃত ভাষায়।[৬]

স্থানীয় ছন্দে কন্নড় সাহিত্য রচনা প্রথম জনপ্রিয় করে তোলেন সভাকবিরা। এই ছন্দগুলি ছিল ‘সাঙ্গত্য’ (বাদ্যযন্ত্র সহকারে গেয় রচনা), ‘ষট্পদী’ (ছয় চরণের কবিতা), ‘রাগালে’ (অমিত্রাক্ষর ছন্দে গীতিকবিতা) ও ‘ত্রিপদী’ (তিন চরণের কবিতা)।[৭] যদিও জৈন লেখকেরা গদ্য-পদ্য মিশ্রিত প্রথাগত ‘চম্পু’ ছন্দের ব্যবহার অব্যাহত রাখেন।[৮] শুধুমাত্র সভাকবিরাই নন, অভিজাত পুরুষ, সেনাধ্যক্ষ, মন্ত্রী, বিভিন্ন মঠের সঙ্গে যুক্ত সন্ন্যাসী ও সন্তেরাও এই যুগে কন্নড় সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন।[৯]

কন্নড় সাহিত্য সম্পাদনা

সাধারণ বিবরণ সম্পাদনা

হৈসল সাম্রাজ্যের বিশিষ্ট কন্নড় কবি ও লেখকগণ
(১১০০-১৩৪৩ খ্রিস্টাব্দ)
নাগচন্দ্র ১১০৫
কান্তি ১১০৮
রাজাদিত্য আনুমানিক দ্বাদশ শতাব্দী
হরিহর ১১৬০–১২০০
উদয়াদিত্য ১১৫০
বৃত্ত বিলাস ১১৬০
কেরেয় পদ্মরস ১১৬৫
নেমিচন্দ্র ১১৭০
সুমনোবন ১১৭৫
রুদ্রভট্ট ১১৮০
অগ্গল ১১৮৯
পলকুরিকি সোমনাথ ১১৯৫
সুজনোত্তমস (বোপ্পন্ন) ১১৮০
কবি কাম আনুমানিক দ্বাদশ শতাব্দী
দেবকবি ১২০০
রাঘবাঙ্ক ১২০০–১২২৫
ভন্দুবর্মা ১২০০
বালচন্দ্র কবি ১২০৪
পার্শ্ব পণ্ডিত ১২০৫
মাঘানন্দ্যচর্য ১২০৯
জন্ন ১২০৯–১২৩০
পুলিগেরে সোমনাথ আনুমানিক ত্রয়োদশ শতাব্দী
হস্তীমল্ল আনুমানিক ত্রয়োদশ শতাব্দী
চন্দ্রম আনুমানিক ত্রয়োদশ শতাব্দী
সোমরাজ ১২২২
দ্বিতীয় গুণবর্মা ১২৩৫
পোললবদনদনত ১২২৪
অন্দয়্য ১২১৭–১২৩৫
সিসুময়ন ১২৩২
মল্লিকার্জুন ১২৪৫
নরহরিতীর্থ ১২৮১
কুমার পদ্মরস আনুমানিক ত্রয়োদশ শতাব্দী
মহাবল কবি ১২৫৪
কেশিরাজ ১২৬০
কুমুদেন্দু ১২৭৫
নচিরাজ ১৩০০
রত্ত কবি ১৩০০
নাগরাজ ১৩৩১
সেউণ যাদব রাজ্যের বিশিষ্ট কন্নড় কবি ও লেখক
কমলভব ১১৮০
অচন্ন ১১৯৮
অমুগিদেব ১২২০
চৌন্দরস ১৩০০

খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দী থেকে কৃষ্ণা নদীর দক্ষিণে দাক্ষিণাত্য অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবর্তনের সূচনা ঘটে। এই যুগেই মালেনাড়ু অঞ্চলের (অধুনা কর্ণাটক রাজ্যের পার্বত্য অঞ্চল) স্থানীয় কন্নড়িগ হৈসল রাজবংশ রাজনৈতিক ক্ষমতায় আরোহণ করেছিল।[১০][১১][১২][১৩] জানা যায় যে, খ্রিস্টীয় দশম শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকেই গোষ্ঠীপতি হিসেবে হৈসলদের অস্তিত্ব ছিল। সেই সময় এরা ছিল কল্যাণীর পশ্চিম চালুক্য রাজবংশের অধস্তন সামন্ত শাসক।[১৪] ১১১৬ খ্রিস্টাব্দে হৈসল রাজা বিষ্ণুবর্ধন তঞ্জাবুরের চোলদের পরাজিত করে গঙ্গবাদি (অধুনা দক্ষিণ কর্ণাটকের অংশবিশেষ) অধিকার করেন।[১৫] এইভাবেই এই অঞ্চল পুনরায় স্থানীয় রাজবংশের শাসনাধীনে আসে। পরবর্তী দশকগুলিতে চালুক্য ক্ষমতা হ্রাসপ্রাপ্ত হলে হৈসলরা স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং দক্ষিণ ভারতের সর্বাপেক্ষা শক্তিধর শাসক পরিবারগুলির অন্যতম হয়ে ওঠে।[২][১৬] এর ফলে হৈসল সাম্রাজ্যে স্থানীয় ভাষা কন্নড়ে সাহিত্য রচনা গতি পায়।[১৭] এই সাহিত্যকে সাধারণ ভাবে নিম্নোক্ত ক্রমে বিন্যস্ত করা যায়: জৈন সাহিত্যের বিষয়বস্তু-প্রধান রচনা,[৮] বিপরীতে বচন কাব্যসাহিত্যের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না এমন বীরশৈব লেখকদের রচনা,[১৮] শৈব সাহিত্যে উত্থাপিত অভিযোগ খণ্ডনকারী জৈন লেখকদের রচনা,[১৯] আদি ব্রাহ্মণ্যবাদী সাহিত্য (বৈষ্ণব),[২০][২১] কন্নড়-ভাষী অঞ্চলে ভক্তি আন্দোলনের জন্মকালীন সাহিত্য, ধর্মনিরপেক্ষ সাহিত্য,[২২] এবং স্থানীয় ছন্দে (‘রাগালে’, ‘সাঙ্গত্য’ ও ‘শতপদী’) প্রথম কাব্য।[২৩][২৪][২৫]

পূর্ববর্তী শতাব্দীগুলিতে জৈন লেখকেরা তীর্থংকর, রাজপুত্র ও জৈনধর্মের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পর্কে গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণভাগবতের জৈন পাঠান্তরও রচিত হয়েছিল।[২৬][২৭] কন্নড় সাহিত্য বিশারদ আর. নরসিংহাচার্যের মতে, কন্নড় সাহিত্যের ‘অগস্টান যুগে’ অন্যান্য সকল দ্রাবিড় ভাষার তুলনায় কন্নড়েই জৈন লেখকেরা অধিক সংখ্যায় গ্রন্থ রচনা করেছিলেন, যে সকল গ্রন্থের মধ্যে প্রাচীনতম জ্ঞাত গ্রন্থগুলি রচিত হয়েছিল খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীতে।[২৮] হিন্দু দেবতা শিবের ভক্ত বীরশৈব লেখকেরা শৈবধর্ম-সংক্রান্ত ব্যাখ্যায় আরাধ্য দেবতার ২৫টি রূপের কথা লেখেন। বৈষ্ণব লেখকেরা হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবত অবলম্বনে গ্রন্থ রচনা করেন।[২৯] কন্নড় সাহিত্যে ‘চম্পু’ শৈলীতে কাব্য রচনার জৈন প্রথাটিকে ভেঙে হরিহর ‘রাগালে’ ছন্দে রচনা করেন শিব-গণদ-রাগালেগালু (১১৬০ খ্রিস্টাব্দ) কাব্যটি। হরিহরের ভ্রাতুষ্পুত্র রাঘবাঙ্ক পৌরাণিক রাজা হরিশ্চন্দ্রের কাহিনির একটি স্বতন্ত্র পাঠ হরিশ্চন্দ্র কাব্য (১২০০ খ্রিস্টাব্দ) গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেন। এই কাব্যেই ‘শতপদী’ প্রথা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সিসুময়ন স্বরচিত অঞ্জনাচরিতত্রিপুরদহন (১২৩৫ খ্রিস্টাব্দ) কাব্যে প্রচলন ঘটান ‘সাঙ্গত্য’ ছন্দটির।[৩০][৩১] যদিও কোনও কোনও লেখক তখনও ‘চম্পু’ (রামচন্দ্র চরিতপুরাণ),[৩২] ‘শতক’ (১০০ শ্লোকের রচনা, পম্প শতক),[১৮] ‘অষ্টক’ (আট চরণের শ্লোক-বিশিষ্ট রচনা, মুডিগে অষ্টক)[৩৩] প্রভৃতি সংস্কৃতানুগ ধারাগুলিতে সাহিত্য রচনা অব্যাহত রেখেছিলেন।

কন্নড়-ভাষী অঞ্চলে হরিদাস আন্দোলনের সূচনার সঠিক সময়টি বিতর্কিত। বিশিষ্ট হরিকথা গবেষক বেলুর কেশবদাস কর্ণাটক ভক্তিবিজয় গ্রন্থে দাবি করেছেন যে, এই আন্দোলন খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে তুরবেকেরের (অধুনা তুমকুর জেলায় অবস্থিত) সন্ত অচলানন্দ দাসের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল।[৩৪] যদিও অচলানন্দ দাসের রচনায় ব্যবহৃত ভাষা অথবা ‘অচলানন্দ বিট্ঠল’ ভণিতায় রচিত কোনও রচনায় ত্রয়োদশ শতাব্দীর দার্শনিক মধ্বের নামোল্লেখের আবিষ্কার এই নবম শতাব্দীর তত্ত্বটি সমর্থন করে না। মধ্বের প্রথম শিষ্যদের অন্যতম নরহরিতীর্থকেই (১২৮১ খ্রিস্টাব্দ) তাই প্রথম কন্নড় ভাষায় বৈষ্ণব সাহিত্যরচনাকারী হরিদাস মনে করা হয়।[৩৫] সাহিত্যে ধর্মনিরপেক্ষ বিষয়বস্তুও জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। এগুলির মধ্যে ছিল কবিতা-সংক্রান্ত সন্দর্ভ (শৃঙ্গাররত্নাকর), প্রাকৃতিক বিজ্ঞান-সংক্রান্ত রচনা (রত্তসূত্র), গণিত (ব্যবহারগণিত), কথাসাহিত্য (লীলাবতী), ব্যাকরণ (শব্দমণিদর্পণ), ছন্দবিজ্ঞান (উদয়াদিত্যালংকার) ও অন্যান্য রচনা।[৮][২২][২৬][৩৬]

কয়েকটি বিশিষ্ট সাহিত্যিক পরিবার কন্নড় সাহিত্যে বিশেষ অবদান রেখেছিল। একটি জৈন পরিবারে বেশ কয়েকজন লেখকের জন্ম হয়েছিল: বিশিষ্ট সাহিত্য-সংকলক মল্লিকার্জুন (১২৪৫ খ্রিস্টাব্দ), মল্লিকার্জুনের শ্যালক তথা রাজা দ্বিতীয় বীর বল্লালের সভাকবি জন্ন (১২০৯ খ্রিস্টাব্দ), মল্লিকার্জুনের পুত্র কেশিরাজ (১২৬০ খ্রিস্টাব্দ, ঐতিহাসিক সাহিত্যিক সংস্কৃতির বিশেষজ্ঞ ডি. আর. নাগরাজের মতে ইনি ছিলেন কন্নড় ব্যাকরণের শেষ্ঠ তাত্ত্বিক) এবং কেশিরাজের মাতামহ তথা রাজা প্রথম নরসিংহের সভাসদ সুমনোবন।[৩৭][৩৮] একই শৈব পরিবারের দুই সদস্য হরিহর (১১৬০ খ্রিস্টাব্দ) ও হরিহরের ভ্রাতুষ্পুত্র রাঘবাঙ্ক (১২০০ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন স্থানীয় ছন্দের নতুন ধারা সৃষ্টিকারী দুই কবি।[৩৭]

হৈসল শাসকেরা খুব দৃঢ়ভাবে কন্নড় ভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। হৈসলদের অভিলেখগুলিতেও এই পৃষ্ঠপোষকতার প্রমাণ পাওয়া যায়। এই সব অভিলেখের অনেকগুলিই সাদামাটা গদ্যের বদলে অলংকারবহুল কাব্যিক ভাষায় লেখা এবং মার্জিনে ফুলের অলংকরণ দ্বারা শোভিত।[৩৯] হৈসল পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াও পশ্চিম দাক্ষিণাত্যের প্রতিবেশী রাজ্যগুলির রাজসভাতেও কন্নড় কবি ও লেখকেরা রাজানুকূল্য লাভ করতেন। পশ্চিম চালুক্য, দক্ষিণ কলচুরি, দেবগিরির সেউণ যাদব এবং কোলহাপুরের শিলাহার রাজবংশগুলি অভিলেখগুলিতে সাগ্রহে কন্নড় ভাষা ব্যবহার করত এবং কন্নড় সাহিত্যের উন্নতিতেও সহায়তা করতেন।[৩৯][৪০][৪১][৪২]

কন্নড় ও তেলুগু দ্বিভাষিক লেখকেরাও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এর ফলে দুই ভাষার মধ্যে আদানপ্রদান শুরু হয়। এই ধারা এখনও অব্যাহত আছে। কন্নড় ভাষায় রচিত বীরশৈব শাস্ত্র এই যুগেই তেলুগু ভাষায় অনূদিত বা অভিযোজিত হয়।[৪৩] সমাজ সংস্কারক বসবের ভক্ত পলকুরিকি সোমনাথ (১১৯৫ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন এই দ্বিভাষিক কবিদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সুপরিচিত। চোল গোষ্ঠীপতি নন্নেচোড (আনুমানিক ১১৫০ খ্রিস্টাব্দ) নিজের তেলুগু রচনায় অনেক কন্নড় শব্দ ব্যবহার করেছিলেন।[৪৪] হৈসল সাম্রাজ্যের পতনের পর বিজয়নগর সাম্রাজ্যের শাসকগোষ্ঠীও উভয় ভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করেন। ১৩৬৯ খ্রিস্টাব্দে পলকুরিকি সোমনাথের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ভীম কবি তেলুগু বসবপুরাণ কন্নড় ভাষায় অনুবাদ করেন।[৪৫] রাজা দ্বিতীয় দেব রায় (আনুমানিক ১৪২৫ খ্রিস্টাব্দ) চামরসের বিখ্যাত রচনা প্রভুলিঙ্গলীলে তেলুগু ও তামিল ভাষায় অনুবাদ করান।[৪৬] সপ্তদশ শতাব্দীর মহীশূর রাজসভার অনেক বীরশৈব লেখক ছিলেন কন্নড়, তেলুগু ও সংস্কৃত ভাষায় সাহিত্য রচনাকারী বহুভাষিক লেখক। অন্যদিকে রাজসভার শ্রী বৈষ্ণব সম্প্রদায়-ভুক্ত লেখকেরা তেলুগু ও সংস্কৃত লেখকদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতেন।[৪৭]

সমসাময়িক নথিপত্র থেকে এই যুগের বেশ কয়েকজন লেখকের কথা জানা যায়, যে লেখকদের রচনা বর্তমানে হারিয়ে গিয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়: মাঘনন্দী (সম্ভবত রাম কথে গ্রন্থের রচয়িতা ও ১২৩৫ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্য রচনাকারী কমলভবের গুরু), শ্রুতকীর্তি (অগ্গলের গুরু এবং রাঘব পাণ্ডবীয় ও সম্ববত একটি জিন-স্তুতির রচয়িতা, ১১৭০ খ্রিস্টাব্দ), সম্ভ বর্মা (১১৪৫ খ্রিস্টাব্দে নাগরাজ কর্তৃক উল্লিখিত),[৪৮] বীর নন্দী (চন্দ্রপ্রভা কাব্যমালা, ১১৭৫ খ্রিস্টাব্দ),[৪৯] ধরণী পণ্ডিত (বিজ্জল রায় চরিতবরাঙ্গনা চরিত),[৫০] অমৃত নন্দী (ধন্বন্তরী নিঘণ্টু), বিদ্যানাথ (প্রতাপরুদ্রীয়), গণেশ্বর (সাহিত্য সঞ্জীবন),[৫১] বীরশৈব ভিক্ষুক হরভক্ত (বেদভাষ্য, ১৩০০ খ্রিস্টাব্দ) ও শিব কবি (বসব পুরাণ গ্রন্থের রচয়িতা, ১৩৩০ খ্রিস্টাব্দ)।[৫২]

জৈন মহাকাব্য সম্পাদনা

 
প্রাচীন কন্নড় অভিলেখ, ডোড্ডাগড্ডবল্লি, ১১১৪ খ্রিস্টাব্দ

দ্বাদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে হৈসলদের ক্ষমতায় আরোহণকালে এই রাজবংশের রাজারা সাম্রাজ্যবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করতেন।[১৬] রাজা বিষ্ণুবর্ধন সম্রাটের মর্যাদার সঙ্গে উপযুক্ত বৈদিক যজ্ঞ অনুষ্ঠান করতে এবং সামরিক ও স্থাপত্য কীর্তির মাধ্যমে নিজেদের অধিরাজ পশ্চিম চালুক্যদের ছাপিয়ে যেতে চাইতেন। এই কারণেই তিনি জৈনধর্ম ত্যাগ করে বৈষ্ণবধর্ম গ্রহণ করেন। প্রায় একই সময়ে বিশিষ্ট দার্শনিক রামানুজ চোলদের হাত থেকে রক্ষা পেতে হৈসল-শাসিত অঞ্চলে আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং বৈষ্ণবধর্মের শাখাসম্প্রদায় শ্রী বৈষ্ণব মতবাদকে জনপ্রিয় করে তোলেন। অধুনা দক্ষিণ কর্ণাটক অঞ্চলে জৈনরা নিজেদের সাংস্কৃতিক আধিপত্য কিছুকাল বজায় রাখতে সক্ষম হলেও এই ধরনের সামাজিক পরিবর্তন পরবর্তীকালে জৈন সাহিত্য ধারার অবনতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।[১][৫৩] হৈসলদের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক প্রভাবের প্রতি অনেক চারণকবি ও পণ্ডিত তাদের রাজসভায় উপস্থিত হয়েছিলেন। এই সব কবি ও পণ্ডিতেরাও পৃষ্ঠপোষক রাজাদের সম্পর্কে প্রশস্তিগাথা রচনা করেন।[৫৪]

জৈন পণ্ডিত ও মল্লিনাথ জিনালয়ের (অধুনা কর্ণাটকের বিজয়পুরে অবস্থিত ঊনবিংশ জৈন তীর্থংকর মল্লিনাথের সম্মানে নির্মিত মন্দির) প্রতিষ্ঠাতা নাগচন্দ্র জৈন সন্তের আত্মার বিবর্তনের বিবরণ মল্লিনাথপুরাণ (১১০৫ খ্রিস্টাব্দ) গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেন। কোনও কোনও ইতিহাসবিদের মতে, রাজা প্রথম বীর বল্লাল নাগচন্দ্রের পৃষ্ঠপোষকতা করেন।[৫৫] পরে তিনি হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণের একটি জৈন পাঠান্তর রামচন্দ্র চরিতপুরাণ (বা পম্প রামায়ণ) রচনা করেন। প্রথাগত ‘চম্পু’ ছন্দে এবং বিমলসুরির পুরাণ চরিত ধারায় রচিত এই গ্রন্থটি শুধুমাত্র নাগচন্দ্রের শ্রেষ্ঠ কীর্তিই নয়, বরং কন্নড় ভাষায় প্রাপ্ত প্রথম মহাকাব্যও বটে।[৩২] গ্রন্থটি ১৬টি অংশে বিভক্ত এবং এটির আখ্যানভাগ বাল্মীকি রচিত মূল মহাকাব্যের থেকে অনেকাংশে পৃথক। নাগচন্দ্র হিন্দু মহাকাব্যটির খলনায়ক রাজা রাবণকে এক ট্র্যাজিক নায়ক হিসেবে উপস্থাপিত করেছেন, যিনি মুহুর্তের দুর্বলতায় হিন্দু দেবতা রামের পত্নী সীতাকে অপহরণ করার পাপ করে ফেলেছিলেন। কিন্তু পরে তিনি রামের প্রতি সীতার ভক্তির দ্বারা শুদ্ধ হন। অপর একটি উল্লেখযোগ্য পার্থক্য হল নাগচন্দ্রের গ্রন্থে দেখা যায়, রামের বিশ্বস্ত ভ্রাতা লক্ষণ সর্বশেষ যুদ্ধে রাবণকে বধ করেছেন।[৩২] এরপর ঘটনাচক্রে রাম ‘জৈন-দীক্ষা’ গ্রহণ করে দিগম্বর সন্ন্যাসী হন এবং নির্বাণ (পরম জ্ঞান) অর্জন করেন। গ্রন্থটিকে আদিকবি পম্প রচিত পম্প ভারত (হিন্দু মহাকাব্য মহাভারতের জৈন পাঠান্তর, ৯৪১ খ্রিস্টাব্দ) গ্রন্থের একটি পরিপূরক গ্রন্থ গণ্য করে বলে নাগচন্দ্রকে ‘অভিনব পম্প’ (‘নতুন পম্প’) অভিধা প্রদান করা হয়েছিল।[৫৬] একমাত্র কন্নড় ভাষাতেই রামায়ণ ও মহাভারতের ব্রাহ্মণ্যবাদী পাঠের পাশাপাশি জৈন পাঠান্তরের অস্তিত্ব আছে।[৫৭]

কন্নড় ভাষার প্রথম যুগের মহিলা কবিদের অন্যতম তথা নাগচন্দ্রের সমসাময়িক কান্তি (১১০৮ খ্রিস্টাব্দ) পরিচিত ছিলেন বুদ্ধিদীপ্ত ও হাস্যরসাত্মক সাহিত্য রচনার জন্য। তিনি নাগচন্দ্রের সঙ্গে বিতর্ক ও মুখে মুখে সমুচিত জবাব প্রদানের সভায় অবতীর্ণ হতেন।[৫৮] রাজা প্রথম বীর বল্লাল ও রাজা বিষ্ণুবর্ধনের রাজত্বকালে হৈসল সভাসদ রাজাদিত্য ছিলেন হয় পুবিনবগে বা রাইভাগের (অধুনা বেলগাঁও জেলা) আদি নিবাসী।[৫৫][৫৯] তিনি সরল শ্লোকে পাটিগণিত ও গণিতের অন্যান্য বিষয় নিয়ে গ্রন্থ রচনা করেন। কন্নড় ভাষায় রচিত প্রাচীনতম তিনটি গণিত-সংক্রান্ত তিনি রচনা করেছিলেন: ব্যবহারগণিত, ক্ষেত্রগণিতলীলাবতী[৮] চোল রাজকুমার উদয়াদিত্য ছন্দশাস্ত্র-সংক্রান্ত উদয়াদিত্যালংকার (১১৫০ খ্রিস্টাব্দ) গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন। গ্রন্থটি দণ্ডীর সংস্কৃত কাব্যাদর্শ গ্রন্থ অবলম্বনে রচিত।[৮]

হরিহরের যুগ সম্পাদনা

কবি হরিহর (বা হরীশ্বর, ১১৬০ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন হাম্পির এক ‘করণিক’ (হিসাবরক্ষক) পরিবারের সন্তান। বচন কাব্যসাহিত্যের অংশ নন এমন প্রথম যুগের কবিদের অন্যতম ছিলেন তিনি। হরিহরকে হৈসল যুগের সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী কন্নড় কবিদের অন্যতমও মনে করা হয়। প্রথাবিরোধী কবি হরিহরকে বলা হয় ‘কবিদের কবি’ ও ‘জনগণের কবি’। হরিহরের প্রভাবে কন্নড় সাহিত্যের দিক পরিবর্তিত হয় এবং তিনিও পরবর্তী প্রজন্মের কবিদের অনুপ্রেরণা জোগাতে থাকেন।[৬০][৬১] রাজা প্রথম নরসিংহের সভাকবি কেরেয় পদ্মরস হরিহরের প্রথম জীবনের সাহিত্য পাঠ করে মুগ্ধ হয়ে হরিহরের সঙ্গে রাজার আলাপ করিয়ে দেন এবং রাজাও হরিহরের পৃষ্ঠপোষকতা করেন।[৬২] বিভিন্ন ছন্দে কাব্যরচনায় দক্ষ হরিহর কালিদাসের শৈলীতে গিরিজাকল্যাণ কাব্যটি রচনা করেন। ‘চম্পু’ ছন্দে রচিত এই কাব্যে ১০টি পর্বে শিবপার্বতীর বিবাহের ইতিবৃত্ত কথিত হয়েছে।[৬৩][৬৪] একটি জনশ্রুতি অনুযায়ী, হরিহর সাধারণ নশ্বর ব্যক্তিবর্গের প্রশস্তিগাথা রচনার এতটাই বিরোধী ছিলেন যে তিনি আশ্রিত রাঘবাঙ্ককে রাজা হরিশ্চন্দ্রের জীবনী অবলম্বনে হরিশ্চন্দ্র কাব্য (আনুমানিক ১২০০ খ্রিস্টাব্দ) রচনার অপরাধে মারধর করেছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই কাব্যটি রাঘবাঙ্কের শ্রেষ্ঠ কীর্তি বলে পরিগণিত হয়।[৬৫] হরিহরকে স্থানীয় ‘রাগালে’ ছন্দের বিকাশের কারণ মনে করা হয়।[৬৬] হরিহরই হলেন কাব্যিক কন্নড় ভাষায় প্রথম জীবনী রচয়িতা। তিনি বসবরাজদেবর রাগালে নামে বসবের একটি জীবনী রচনা করেন। এই গ্রন্থে বসবের জীবনের যে কৌতুহলোদ্দীপক বিবরণগুলি পাওয়া যায় তা সব ক্ষেত্রে সেযুগের প্রচলিত ধারণার অনুসারী ছিল না।[৬৭][৬৮] সন্ত নাম্বিয়নের নামাঙ্কিত নাম্বিয়নন রাগালে (অপর নাম শিবগণদ রাগালে বা শরণচরিতমানস) নামে ১০০টি কবিতার একটি গুচ্ছও হরিহরের রচনা বলে মনে করা হয়।[৩১][৬৩][৬৯] ‘শতক’ ছন্দে তিনি পম্প শতক ও ‘অষ্টক’ ছন্দে মুডিগে অষ্টক (আনুমানিক ১২০০ খ্রিস্টাব্দ) রচনা করেন।[৩৩]

 
জৈন কবি বোপ্পণ রচিত প্রাচীন-কন্নড় কাব্যিক অভিলেখ, শ্রবণবেলগোলা, ১১৮০ খ্রিস্টাব্দ

রুদ্রভট্ট ছিলেন বৈষ্ণব লেখকদের মধ্যে বিখ্যাত তথা প্রথম বিশিষ্ট ব্রাহ্মণ লেখক (স্মার্ত সম্প্রদায়-ভুক্ত)। তিনি জগন্নাথ বিজয় (১১৮০ খ্রিস্টাব্দ) গ্রন্থটি রচনা করেন। এই গ্রন্থের রচনাশৈলীটিকে প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় কন্নড় ভাষার এক সন্ধিক্ষণ হিসেবে গণ্য করা হয়।[৭০] রুদ্রভট্টের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন রাজা দ্বিতীয় বীর বল্লালের মন্ত্রী চন্দ্রমৌলী। ‘চম্পু’ ছন্দে রচিত জগন্নাথ বিজয় গ্রন্থের বিষয়বস্তু বাণাসুর বধ পর্যন্ত হিন্দু দেবতা কৃষ্ণের জীবন। গ্রন্থের আখ্যানভাগের মূল ভিত্তি পূর্ববর্তী রচনা বিষ্ণুপুরাণ[৭১]

রাজা দ্বিতীয় বীর বল্লাল ও খোলাপুরের শিলাহার রাজা লক্ষ্মণের সভাকবি নেমিচন্দ্র রচনা করেন লীলাবতী প্রবন্ধম (১১৭০ খ্রিস্টাব্দ)। এই গ্রন্থটি কন্নড় সাহিত্যে প্রথম কথাসাহিত্যের নিদর্শন (সেই সূত্রে প্রথম উপন্যাসও)। গ্রন্থটি আদিরসাত্মক।[৭০][৭২] ‘চম্পু’ ছন্দে রচিত এই গ্রন্থের প্রেক্ষাপট প্রাচীন বনবাসী নগরী; আখ্যানভাগের কেন্দ্রে রয়েছেন এক কদম্ব রাজকুমার ও এক রাজকুমারী যারা বহু বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়।[৮] লীলাবতী প্রবন্ধম গ্রন্থটি রচিত হয়েছিল আনুমানিক ৬১০ খ্রিস্টাব্দে শুভন্দু কর্তৃক সংস্কৃত ভাষায় রচিত মূল গ্রন্থ বাসবদত্তা গ্রন্থ অবলম্বনে।[৭২] নেমিচন্দ্রের অপর রচনা নেমিনাথপুরাণ হল দ্বাবিংশ জৈন তীর্থংকর নেমিনাথের জীবন বৃত্তান্ত; এই গ্রন্থে হিন্দু দেবতা কৃষ্ণের জীবনকথা জৈন দৃষ্টিভঙ্গিতে আখ্যাত হয়েছে। নেমিচন্দ্রের মৃত্যুর কারণে গ্রন্থটি অসম্পূর্ণ থেকে যায়, তাই এটির অপর নাম অর্ধনেমি[৭৩]

পলকুরিকি সোমনাথ ছিলেন দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতাব্দীতে অগ্রণী বহুভাষিক শৈব কবিদের অন্যতম। তিনি অধুনা কর্ণাটক বা অন্ধ্রপ্রদেশ ভূখণ্ডের আদি বাসিন্দা ছিলেন। সোমনাথের সময়কাল, জন্ম ও মৃত্যুর স্থান এবং আদি ধর্মবিশ্বাস কী ছিল তা নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তিনি সংস্কৃত, তেলুগু ও কন্নড় ভাষায় সুপণ্ডিত ছিলেন। বীরশৈব আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা বসবের ভক্ত সোমনাথের রচনায় বীরশৈব মতবাদই প্রকট হয়ে ওঠে।[৭৪] সাধারণভাবে মনে করা হয় যে, তিনি জন্মসূত্রে ছিলেন ব্রাহ্মণ এবং পরবর্তীকালে শৈবধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। যদিও গবেষক বন্দরু তম্ময়্যের মতে, সোমনাথ জন্মসূত্রেই ছিলেন একজন ‘জঙ্গম’ বা শৈব মতাবলম্বী।[৭৪] গবেষকদের মতে, সোমনাথের জন্ম হয় দ্বাদশ শতাব্দীতে[৭৫] অথবা ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষভাগে[৭৬] ঘটেছিল। কন্নড় ভাষায় যে গ্রন্থগুলি তিনি রচনা করেছিলেন তার মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ শীলসম্পদনে, সহস্রগণানামপঞ্চরত্ন এবং ‘রাগালে’ ছন্দে যে কবিতাগুলি তিনি রচনা করেন সেগুলির মধ্যে কয়েকটি সুপরিচিত কবিতা হল বসব রাগালে, বসবধ্য রাগালেসদ্গুরু রাগালে। কথিত আছে তিনি বিতর্কে অনেক বৈষ্ণব কবিকে পরাজিত করেছিলেন।[৭৪][৭৭]

দ্বাদশ শতাব্দীর অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন জৈন লেখকও ছিলেন। এই লেখকদের মধ্যে অগ্গল (যিনি অষ্টম জৈন তীর্থংকর চন্দ্রপ্রভর জীবনী অবলম্বনে ১১৮৯ খ্রিস্টাব্দে চন্দ্রপ্রভপুরাণ রচনা করেন[৭২]), সুজনোত্তমস (যিনি শ্রবণবেলগোলার গোমতেশ্বরকে নিয়ে একটি প্রশস্তিগাথা রচনা করেন) এবং বৃত্ত বিলাসের (যিনি ১১৬০ খ্রিস্টাব্দে শাস্ত্র সারধর্মপরীক্ষে রচনা করেন) নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ধর্মপরীক্ষে গ্রন্থটি আনুমানিক ১০১৪ খ্রিস্টাব্দে সংস্কৃত ভাষায় অমিতগতি কর্তৃক রচিত একই নামের একটি গ্রন্থের বিলাস কৃত কন্নড় পাঠান্তর। ‘চম্পু’ শৈলীতে রচিত এই গ্রন্থে দুই ক্ষত্রিয় রাজকুমারীর কাহিনি বর্ণিত হয়েছে, যারা বারাণসী গিয়ে সেখানকার ব্রাহ্মণদের সঙ্গে কথোপকথনের পর দেবতাদের দোষগুলি প্রকাশ করে দেন। লেখক রামায়ণের হনুমানবানরদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বিতর্কিত হলেও এই গ্রন্থটি থেকে সমসাময়িক ধর্মবিশ্বাসগুলি সম্পর্কে অনেক প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যায়।[৭৮][৭৯] রাজা প্রথম নরসিংহের পৃষ্ঠপোষকতায় বীরশৈব কবি কেরেয় পদ্মরস ১১৬৫ খ্রিস্টাব্দে ‘রাগালে’ ছন্দে দীক্ষাবোধে রচনা করেন। পদ্মরসের বংশধর পদ্মাঙ্ক আনুমানিক ১৪০০ খ্রিস্টাব্দে পদ্মরসের জীবন অবলম্বনে পদ্মরাজপুরাণ রচনা করেন।[৮০] দেব কবি নামে এক ব্রাহ্মণ কবি কুসুমাবলী (১২০০ খ্রিস্টাব্দ) নামে একটি প্রণয়কাহিনি এবং কবি কাম (দ্বাদশ শতাব্দী) নামে অপর এক ব্রাহ্মণ কবি কাব্যরস সংক্রান্ত সন্দর্ভ শৃঙ্গার-রত্নাকর রচনা করেন।[৩৬] সুমনোবন (১১৭০ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন রাজা প্রথম নরসিংহের রাজসভার কবি-বৈয়াকরণ ও ‘কটকাচার্য’ (সামরিক শিক্ষক)। তিনি সেউণ যাদব রাজধানী দেবগিরিতে পৌরোহিত্যও করতেন।[২৬][৩৮]

জৈন–বীরশৈব সংঘাত সম্পাদনা

 
প্রাচীন কন্নড় হৈসল অভিলেখ, ঈশ্বর মন্দির, অরসিকেরে, কর্ণাটক, ১২২০ খ্রিস্টাব্দ

হরিহরের ভ্রাতুষ্পুত্র তথা আশ্রিত নাট্যকার-কবি হাম্পির রাঘবাঙ্ক হরিশ্চন্দ্র কাব্য-এ (১২০০ খ্রিস্টাব্দ) প্রথম কন্নড় সাহিত্যে ‘শটপদী’ ছন্দটি প্রতিষ্ঠা করেন। রাঘবাঙ্কের রচনাশৈলীটিকে তুলনা করা হত দশম শতাব্দীর কবি রন্নের রচনাশৈলীর সঙ্গে।[৭৫][৭৭] এল. এস. শেষগিরি রাও বলেছেন, মনে করা হয় যে অন্য কোনও ভাষায় পৌরাণিক রাজা হরিশ্চন্দ্রের কাহিনিটিকে এই ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়নি। প্রথা ও অনুপ্রেরণা দুই দিক দিয়েই গ্রন্থটি মৌলিক, যা পূর্ণ বিকশিত করেছে ‘শতপদী’ ছন্দের সম্ভাবনাগুলিকে।[২৫][৮১] এই গ্রন্থে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য শোকগাথা রয়েছে, যেমন সর্পদংশনে পুত্র লোহিতাশ্বের মৃত্যুতে চন্দ্রমতীর বিলাপ।[৮২] কিন্তু এই গ্রন্থ রাঘবাঙ্ককে খ্যাতি এনে দিলেও, এই গ্রন্থের জন্যই তিনি গুরু হরিহর কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হন। রাঘবাঙ্কের অপর একটি সুবিদিত গ্রন্থ হল শৈব ধ্যানধারণা-সংক্রান্ত সিদ্ধরাম চরিত্র (বা সিদ্ধরাম পুরাণ)। দ্বাদশ শতাব্দীর বীরশৈব সন্ত সোন্নলিগের সিদ্ধরামের এই বিশেষ প্রশস্তিগাথাটি তিনি রচনা করেছিলেন গুরুকে সন্তুষ্ট করতে।[২৫] রাঘবাঙ্কের আরেকটি সুপরিচিত গ্রন্থ হল সোমনাথ চরিত্র। পুলিগেরের সন্ত সোময়্যের (বা অদইয়হ্) জীবন, এক জৈন বালিকার হস্তের সন্তের অপমান এবং তারপর প্রতিশোধ গ্রহণের উপাখ্যানকে কেন্দ্র করে রচিত এই গ্রন্থটি একটি প্রচারণামূলক গ্রন্থ। আবার বীরেশ্বর চরিত গ্রন্থে তিনি শৈব যোদ্ধা বীরভদ্রের অন্ধ ক্রোধের নাটকীয় কাহিনি বর্ণনা করেছিলেন। রাঘবাঙ্কের অপর দুই ধ্রুপদি গ্রন্থ হরিহরমহত্ব (হাম্পির হরীশ্বরের জীবনবৃত্তান্ত) ও শরভ চরিত্র অধুনা বিলুপ্ত বলে ধরে নেওয়া হয়।[৭৭][৮১]

১২০৯ খ্রিস্টাব্দে জৈন পণ্ডিত, মন্ত্রী, মন্দির-নির্মাতা ও সেনাধ্যক্ষ জন্ন রচনা করেন যশোধর চরিতে। এটি জন্নের লেখা ধ্রুপদি গ্রন্থগুলির অন্যতম। যশোধর চরিতে গ্রন্থে তিনি ৩১০টি শ্লোকে মর্ষকাম, আত্মার রূপান্তর, কামনাবাসনার তির্যক গতি ও মানুষের আচরণীয় সাবধানমূলক নীতিকথা লিপিবদ্ধ করেন। গ্রন্থটি বদীরাজের একই নামের ধ্রুপদি সংস্কৃত গ্রন্থ কর্তৃক অনুপ্রাণিত হলেও মৌলিক ব্যাখ্যা, চিত্রকল্প ও শৈলীর জন্য প্রসিদ্ধি অর্জন করে।[৮৩] একটি কাহিনিতে কবি এক ব্যক্তির তার বন্ধুপত্নীর প্রতি মোহের কথা লিপিবদ্ধ করেন। বন্ধুকে হত্যা করে তার স্ত্রীকে অপহরণ করলে শোকে দুঃখে সেই রমণীর মৃত্যু ঘটে। তখন অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে বন্ধুহন্তা ব্যক্তিটি সেই নারীর চিতায় আত্মবিসর্জন দেন।[২৫][৮৪] আসক্তির কাহিনি চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে যখন জন্ন রানি অমৃতমতীর অষ্টাবক্র নামে এক কুদর্শন মাহুতের প্রতি আকর্ষণের বিবরণ দেন। এই মাহুত রানিকে লাথি ও চাবুক মেরে যৌনসুখ প্রদান করত। আধুনিক গবেষকদের কাছে এই কাহিনিটি অত্যন্ত কৌতুহলোদ্দীপক।[৮৫] এই গ্রন্থের জন্যই পৃষ্ঠপোষক রাজা দ্বিতীয় বীর বল্লালের থেকে জন্ন ‘কবিচক্রবর্তী’ (‘কবিদের সম্রাট’) উপাধি অর্জন করেন।[৭৫] জন্নের অপর এক ধ্রুপদি সাহিত্যকীর্তি অনন্তনাথ পুরাণ (১২৩০ খ্রিস্টাব্দ) হল চতুর্থ তীর্থংকর অনন্তনাথের জীবনবৃত্তান্ত।[৮৬][৮৭]

অণ্ডয়্য কন্নড় সাহিত্যে এক অ-গতানুগতিক পন্থা গ্রহণ করেন, পরবর্তীকালে যেটির আর পুনরাবৃত্তি করা হয়নি। এই পন্থায় তিনি রচনা করেন মদন বিজয় (১২১৭-১২৩৫ খ্রিস্টাব্দ), যে গ্রন্থে তিনি সংস্কৃত তৎসম শব্দের পরিবর্তে শুধুমাত্র শুদ্ধ কন্নড় শব্দ (‘দেশ্য’) ও সংস্কৃতজ তদ্ভব শব্দই ব্যবহার করেন।[৮৮] ঋণকৃত সংস্কৃত শব্দ ছাড়া কন্নড় সাহিত্য রচনা সম্ভব নয় বলে যে অভিযোগ উত্থাপিত হত, এই প্রচেষ্টাটিকে সেই অভিযোগ খণ্ডনের প্রমাণ হিসেবেই দেখা হয়।[৮৯] এই কাব্যের আখ্যানভাগে দেখা যায়, চন্দ্র হিমালয়ে শিব কর্তৃক বন্দী হয়েছেন। এতে ক্রুদ্ধ হয় প্রেমের দেবতা কাম (অপর নামে মদন বা মন্মথ) নিজের বাণ দ্বারা শিবকে জর্জরিত করছেন। কিন্তু সেই কারণে শিব কর্তৃক অভিশপ্ত হয়ে কামের প্রিয়াবিচ্ছেদ ঘটছে। এরপর কাম কীভাবে শিবের শাপ হতে নিজেকে মুক্ত করেন তা-ই এই কাব্যের মূল উপজীব্য। বইটি সোবগিন সুগ্গি (‘সৌন্দর্যের আবাদ’), কবনে গেল্ল (‘কামের বিজয়’) ও কব্বিগর-কব (‘কবিগণের রক্ষাকর্তা’) নামেও পরিচিত।[৯০] অণ্ডয়্যের পূর্বে জৈন সাহিত্যে কামের একটি বিশিষ্ট স্থান ছিল। তাই ইতিহাসবিদেরা এও অনুমান করেন যে, [৯১] এই রচনাটি ছিল তৎকালীন কন্নড় সমাজে কর্তৃত্বকারী জৈন[৯২] ও ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকা বীরশৈবদের মধ্যে সংঘাত ঘনীভূত করার অপর একটি সূক্ষ্ম অস্ত্র।

ব্যাকরণ সংহতকরণ সম্পাদনা

 
প্রাচীন কন্নড় অভিলেখ, মল্লিকার্জুন মন্দির, বসরল, কর্ণাটক, খ্রিস্টীয় মধ্য ত্রয়োদশ শতাব্দী

সংস্কৃত সাহিত্য সম্পাদনা

 
চেলুবরায় স্বামী মন্দির, মেলকোটে। দার্শনিক রামানুজ এখানে সাময়িক আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন।

হৈসল-পরবর্তী সাহিত্য সম্পাদনা


আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. কামাথ (২০০১), পৃ. ১৩২
  2. থাপার (২০০৩), পৃ. ৩৬৮
  3. কামাথ (২০০১), পৃ. ১২৯
  4. কামাথ (২০০১), পৃ. ১৩৩–১৩৪
  5. পোলক (২০০৬), পৃ. ২৮৮–২৮৯
  6. কামাথ (২০০১), পৃ. ১৫৫
  7. শিব প্রকাশ, আয়্যাপ্পাপানিকরের গ্রন্থে (১৯৯৭), পৃ. ১৬৪, ২০৩; রাইস ই. পি. (১৯২১), পৃ. ৫৯
  8. শাস্ত্রী (১৯৫৫), পৃ. ৩৫৮
  9. নরসিংহাচার্য (১৯৮৮), পৃ. ২০–২১; ই. পি. রাইস (১৯২১), পৃ. ৪৩–৪৫; শাস্ত্রী (১৯৫৫) পৃ. ৩৬৪
  10. ঊদ্ধৃতি:"একটি শুদ্ধ কর্ণাটক রাজবংশ" (মোরিস, ১৯৩১, পৃ. ১০)
  11. রাইস, বি. এল. (১৮৯৭), পৃ. ৩৩৫
  12. দক্ষিণ কর্ণাটকের স্থানীয় অধিবাসী (চোপড়া, ২০০৩, পৃ. ১৫০ খণ্ড–১)
  13. কি (২০০০), পৃ. ২৫১
  14. মারলে অভিলেখ থেকে (চোপড়া, ২০০৩, পৃ. ১৪৯, খণ্ড–১)
  15. কামাথ (২০০১), পৃ. ১২৪
  16. কি (২০০০), পৃ. ২৫২
  17. নরসিংহাচার্য (১৯৮৮), পৃ. ১৯
  18. শাস্ত্রী (১৯৫৫), পৃ. ৩৬১
  19. নাগরাজ, পোলকের গ্রন্থে (২০০৩), পৃ. ৩৬৬
  20. রুদ্রভট্ট ও নরহরিতীর্থ (শাস্ত্রী, ১৯৫৫, পৃ. ৩৬৪)
  21. কবি কাম ও দেব (নরসিংহাচার্য, ১৯৮৮, পৃ. ২০)
  22. উদাহরণস্বরূপ, রাজাদিত্যের গণিত (১১৯০ খ্রিস্টাব্দ) ও রত্ত কবির প্রাকৃতিক ঘটনাবলি সংক্রান্ত গ্রন্থ রত্তসূত্র (শাস্ত্রী, ১৯৫৫, পৃ. ৩৫৮–৩৫৯)
  23. শিব প্রকাশ (১৯৯৭), পৃ. ১৬৪, ২০৩
  24. রাইস ই. পি. (১৯২১), পৃ. ৫৯
  25. সাহিত্য অকাদেমি (১৯৮৮), পৃ. ১১৮১
  26. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; kesiraja নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  27. শাস্ত্রী (১৯৫৫), পৃ. ৩৫৭
  28. নরসিংহাচার্য (১৯৮৮), পৃ. ৬১, ৬৫
  29. নরসিংহাচার্য (১৯৮৮), পৃ. ৬১
  30. শাস্ত্রী (১৯৫৫), পৃ. ৩৫৯, ৩৬২
  31. শিব প্রকাশ (১৯৯৭), পৃ. ২০৫
  32. সাহিত্য অকাদেমি (১৯৮৮), পৃ. ১১৮০
  33. সাহিত্য অকাদেমি (১৯৮৭), পৃ. ২৪৮
  34. কর্ণাটক ভক্তিবিজয় গ্রন্থে বেলুর কেশবদাস (সাহিত্য অকাদেমি, ১৯৮৭, পৃ. ৮৮১)
  35. সাহিত্য অকাদেমি, ১৯৮৭, পৃ. ৮৮১
  36. নরসিংহাচার্য (১৯৮৮), পৃ. ২০, ৬২
  37. নাগরাজ (২০০৩), পৃ. ৩৬৪
  38. সাহিত্য অকাদেমি (১৯৮৮), পৃ. ১৪৭৫–১৪৭৬
  39. আয়ার (২০০৬), পৃ. ৬০০
  40. নরসিংহাচার্য (১৯৮৮), পৃ. ৬৮
  41. কামাথ (২০০১) পৃ. ১৪৩, পৃ. ১১৪–১১৫
  42. মাসিকা (১৯৯১), পৃ. ৪৫–৪৬
  43. বেলচুরু নারায়ণ রাও, পোলকের গ্রন্থে (২০০৩), পৃ. ৩৮৩–৩৮৪
  44. নরসিংহাচার্য (১৯৮৮), পৃ. ২৭–২৮
  45. সাহিত্য অকাদেমি (১৯৮৮), পৃ. ১১৮২
  46. সাহিত্য অকাদেমি (১৯৮৭), পৃ. ৬১২
  47. নাগরাজ (২০০৩), পৃ. ৩৭৭–৩৭৯
  48. রাইস লুইস (১৯৮৫), পৃ. কুড়ি
  49. রাইস লুইস (১৯৮৫), পৃ. একুশ
  50. রাইস লুইস (১৯৮৫), পৃ. তেইশ
  51. রাইস লুইস (১৯৮৫), পৃ. চব্বিশ
  52. রাইস লুইস (১৯৮৫), পৃ. ছাব্বিশ
  53. রাইস লুইস (১৯৮৫), পৃ. চব্বিশ–পঁচিশ
  54. কি ২০০০, পৃ. ২৫১
  55. কামাথ (২০০১), পৃ. ১৩৩
  56. শাস্ত্রী (১৯৫৫), পৃ. ৩৫৭–৩৫৮
  57. নরসিংহাচার্য (১৯৮৮), পৃ. ৬৬
  58. সাহিত্য অকাদেমি (১৯৮৮), পৃ. ১৬০৩
  59. রাইস ই. পি. (১৯২১), পৃ. ৩৬
  60. সাহিত্য অকাদেমি (১৯৮৭), পৃ. ১৯১
  61. সাহিত্য অকাদেমি (১৯৮৮), পৃ. ১৪১১–১৪১২, পৃ. ১৫৫০
  62. সাহিত্য অকাদেমি (১৯৮৮), পৃ. ১৫৪৮
  63. শাস্ত্রী (১৯৫৫), পৃ. ৩৬১–৩৬২
  64. নরসিংহাচার্য, (১৯৮৮), পৃ. ২০
  65. নাগর (২০০৩), পৃ. ৩৬৪
  66. সাহিত্য অকাদেমি (১৯৮৭), পৃ. ৫৫১–৫৫২
  67. শিব প্রকাশ (১৯৯৭), পৃ. ১৭৯
  68. সাহিত্য অকাদেমি (১৯৮৭), পৃ. ৪০৩–৪০৪
  69. রাইস ই. পি. (১৯২১), পৃ. ৬০
  70. শিব প্রকাশ (১৯৯৭), পৃ. ২০৩
  71. শাস্ত্রী (১৯৫৫) পৃ. ৩৬৪
  72. রাইস ই. পি. (১৯২১), পৃ. ৪৩
  73. সাহিত্য অকাদেমি (১৯৮৭), পৃ. ৬২০; (১৯৮৮), পৃ. ১১৮০
  74. সাহিত্য অকাদেমি (১৯৯২), পৃ. ৪১৩৩
  75. নরসিংহাচার্য (১৯৮৮), পৃ. ২০
  76. শেষয়্য, সাহিত্য অকাদেমির গ্রন্থে (১৯৯২), পৃ. ৪১৩৩
  77. শাস্ত্রী (১৯৫৫), পৃ. ৩৬২
  78. রাইস বি. এল. (১৮৯৭), পৃ. ৪৯৯
  79. রাইস ই. পি. (১৯২১), পৃ. ৩৭
  80. সাহিত্য অকাদেমি (১৯৯২), পৃ. ৪০০৩
  81. শিব প্রকাশ (১৯৯৭), পৃ. ২০৭
  82. সাহিত্য অকাদেমি (১৯৮৮), পৃ. ১১৪৯
  83. সাহিত্য অকাদেমি (১৯৯২), পৃ. ৪৬২৯
  84. রাইস ই. পি. (১৯২১), পৃ. ৪৩–৪৪
  85. শিব প্রকাশ (১৯৯৭), পৃ. ২০৪
  86. সাহিত্য অকাদেমি (১৯৮৭), পৃ. ৬২০
  87. নাগরাজ (২০০৩), পৃ. ৩৭৭
  88. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; guna নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  89. সাহিত্য অকাদেমি (১৯৮৭), পৃ. ১৭০
  90. শাস্ত্রী (১৯৫৫), পৃ. ৩৫৯
  91. নাগরাজ (২০০৩), পৃ. ৩৬৬
  92. নরসিংহাচার্য (১৯৮৮), পৃ. ৬৫

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

  • আয়ার, পি. ভি. জগদীশ (১৯৯৩) [১৯৯৩]। সাউথ ইন্ডিয়ান শ্রাইনস [দক্ষিণ ভারতীয় পুণ্যস্থান]। এশিয়ান এডুকেশনাল সার্ভিসেস। আইএসবিএন 81-206-0151-3 
  • কামাথ, সূর্যনাথ ইউ. (২০০১) [১৯৮০]। আ কনসাইস হিস্ট্রি অফ কর্ণাটক: ফ্রম প্রি-হিস্টোরিক টাইমস টু দ্য প্রেজেন্ট [কর্ণাটকের একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে বর্তমান কাল]। বেঙ্গালুরু: জুপিটার বুকস। এলসিসিএন 80905179ওসিএলসি 7796041 
  • কি, জন (২০০০) [২০০০]। ইন্ডিয়া: আ হিস্ট্রি [ভারত: একটি ইতিহাস]। নিউ ইয়র্ক: গ্রোভ পাবলিকেশনস। আইএসবিএন 0-8021-3797-0 
  • লুইস, রাইস (১৯৮৫)। নাগবর্মা’জ কর্ণাটকভাষাভূষণ [নাগবর্মার কর্ণাটকভাষাভূষণ]। এশিয়ান এডুকেশনাল সার্ভিসেস। আইএসবিএন 81-206-0062-2 
  • মাসিকা, কলিন পি. (১৯৯১) [১৯৯১]। দ্য ইন্দো-এরিয়ান ল্যাংগুয়েজেস [ইন্দো-আর্য ভাষাসমূহ]। কেমব্রিজ: কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। আইএসবিএন 0-521-29944-6 
  • মোরিস, জর্জ এম. (১৯৯০) [১৯৩১]। দ্য কদম্ব কুল, আ হিস্ট্রি অফ এনশিয়েন্ট অ্যান্ড মিডিয়াভাল কর্ণাটক [কদম্ব কুল, প্রাচীণ ও মধ্যযুগীয় কর্ণাটকের ইতিহাস]। নতুন দিল্লি, মাদ্রাজ: এশিয়ান এডুকেশনাল সার্ভিসেস। আইএসবিএন 81-206-0595-0 
  • নাগরাজ, ডি. আর. (২০০৩) [২০০৩]। "ক্রিটিক্যাল টেনশনস ইন দ্য হিস্ট্রি অফ কন্নড় লিটারারি কালচার"। শেলডন আই. পোলক। লিটারারি কালচার্স ইন হিস্ট্রি: রিকনস্ট্রাকশনস ফ্রম সাউথ এশিয়া [ইতিহাসে সাহিত্যের সংস্কৃতি: দক্ষিণ এশিয়া থেকে পুনর্নির্মাণ]। বার্কলে অ্যান্ড লন্ডন: ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া প্রেস. পি. ১০৬৬। পৃষ্ঠা ৩২৩–৩৮৩। আইএসবিএন 0-520-22821-9 
  • রাও, বেলচুরু নারায়ণ (২০০৩) [২০০৩]। "ক্রিটিক্যাল টেনশনস ইন দ্য হিস্ট্রি অফ কন্নড় লিটারারি কালচার"। শেলডন আই. পোলক। লিটারারি কালচার্স ইন হিস্ট্রি: রিকনস্ট্রাকশনস ফ্রম সাউথ এশিয়া [ইতিহাসে সাহিত্যের সংস্কৃতি: দক্ষিণ এশিয়া থেকে পুনর্নির্মাণ]। বার্কলে অ্যান্ড লন্ডন: ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া প্রেস. পি. ১০৬৬। পৃষ্ঠা ৩৮৩। আইএসবিএন 0-520-22821-9 
  • নরসিংহাচার্য, আর (১৯৮৮) [১৯৮৮]। হিস্ট্রি অফ কন্নড় লিটারেচার [কন্নড় সাহিত্যের ইতিহাস]। নতুন দিল্লি: এশিয়ান এডুকেশনাল সার্ভিসেস। আইএসবিএন 81-206-0303-6 
  • পোলক, শেলডন (২০০৬)। দ্য ল্যাংগুয়েজ অফ গডস ইন দ্য ওয়ার্ল্ড অফ মেন: সংস্কৃত, কালচার অ্যান্ড পাওয়ার ইন প্রি-মডার্ন ইন্ডিয়া [মানুষের জগতে দেবতার ভাষা: সংস্কৃত, প্রাক্-আধুনিক ভারতে সংস্কৃতি ও ক্ষমতা]। বার্কলে অ্যান্ড লন্ডন: ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া প্রেস. পি. ৭০৩। আইএসবিএন 0-520-24500-8 
  • রাইস, ই. পি. (১৯৮২) [১৯২১]। কন্নড় লিটারেচার [কন্নড় সাহিত্য]। নতুন দিল্লি: এশিয়ান এডুকেশনাল সার্ভিসেস। আইএসবিএন 81-206-0063-0 
  • রাইস, বি. এল. (২০০১) [১৮৯৭]। মাইসোর গেজেটিয়ার কমপাইলড ফর গভর্নমেন্ট –ভলিউম ১ [সরকারের জন্য সংকলিত মহীশূর গেজেটিয়ার, ১ম খণ্ড]। নতুন দিল্লি, মাদ্রাজ: এশিয়ান এডুকেশনাল সার্ভিসেস। আইএসবিএন 81-206-0977-8 
  • শাস্ত্রী, নীলকণ্ঠ কে. এ. (২০০২) [১৯৫৫]। আ হিস্ট্রি অফ সাউথ ইন্ডিয়া ফ্রম প্রিহিস্টোরিক টাইমস টু দ্য ফল অফ বিজয়নগর [প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে বিজয়নগরের পতন পর্যন্ত দক্ষিণ ভারতের ইতিহাস]। নতুন দিল্লি: ভারতীয় শাখা, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। আইএসবিএন 0-19-560686-8 
  • শর্মা, বি. এন. কে. (২০০০) [১৯৬১]। হিস্ট্রি অফ দ্বৈত স্কুল অফ বেদান্ত অ্যান্ড ইটস লিটারেচার [দ্বৈত বেদান্ত ও সাহিত্যের ইতিহাস] (৩য় সংস্করণ)। বোম্বাই: মোতিলাল বনারসিদাস। আইএসবিএন 81-208-1575-0 
  • শিব প্রকাশ, এইচ. এস. (১৯৯৭)। "কন্নড়"। আয়াপ্পাপানিকর। মিডিয়াভাল ইন্ডিয়ান লিটারেচার: অ্যান অ্যানথোলজি [মধ্যযুগীয় ভারতীয় সাহিত্য: একটি সংকলন]। সাহিত্য অকাদেমি। আইএসবিএন 81-260-0365-0 
  • সিং, নরেন্দ্র (২০০১)। "ক্ল্যাসিকাল কন্নড় লিটারেচার অ্যান্ড দিগম্বর জৈন আইকনোগ্রাফি"। এনসাইক্লোপিডিয়া অফ জৈনিজম [জৈনধর্ম কোষ]। আনমোল পাবলিকেশনস প্রা. লি.। আইএসবিএন 81-261-0691-3 
  • থাপার, রোমিলা (২০০৩) [২০০৩]। দ্য পেঙ্গুইন হিস্ট্রি অফ আর্লি ইন্ডিয়া [পেঙ্গুইন প্রাচীন ভারতের ইতিহাস]। নতুন দিল্লি: পেঙ্গুইন বুকস। আইএসবিএন 0-14-302989-4 
  • বিভিন্ন (১৯৮৭)। অমরেশ দত্ত, সম্পাদক। এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ইন্ডিয়ান লিটারেচার – ভলিউম ১ [ভারতীয় সাহিত্য কোষ – ১ম খণ্ড]। সাহিত্য অকাদেমি। আইএসবিএন 81-260-1803-8 
  • বিভিন্ন (১৯৮৮)। অমরেশ দত্ত, সম্পাদক। এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ইন্ডিয়ান লিটারেচার – ভলিউম ২ [ভারতীয় সাহিত্য কোষ – ২য় খণ্ড]। সাহিত্য অকাদেমি। আইএসবিএন 81-260-1194-7 
  • বিভিন্ন (১৯৯২)। মোহন লাল, সম্পাদক। এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ইন্ডিয়ান লিটারেচার – ভলিউম ৫ [ভারতীয় সাহিত্য কোষ – ৫ম খণ্ড]। সাহিত্য অকাদেমি। আইএসবিএন 81-260-1221-8 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা