কৃষ্ণা নদী

ভারতের নদী

কৃষ্ণা নদী (সংস্কৃত: कृष्णा नदी, কন্নড়: ಕೃಷ್ಣಾ ನದಿ , তেলুগু: కృష్ణా నది, ইংরেজি: Krishna River), ভারতের দীর্ঘতম নদীগুলির মধ্যে অন্যতম। প্রায় ১৩০০ কিমি দীর্ঘ এই নদী মহারাষ্ট্র রাজ্যের মহাবালেশ্বর থেকে উদ্ভূত হয়ে পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে বইতে থাকে এবং অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের হংসলাঢিবি গ্রামের কাছে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মেশে। এই দুটি রাজ্য ছাড়া কর্ণাটক রাজ্যের উপর দিয়েও এই নদী প্রবাহিত হয়। এই নদীর বদ্বীপ অঞ্চল ভারতের সবচেয়ে উর্বর অঞ্চল্গুলির মধ্যে পড়ে। প্রাচীন ইতিহাসের সাতবাহন বংশ আর ইক্ষ্বাকু সূর্যবংশের রাজারা এই অঞ্চলে রাজত্ব করে গেছেন। বিজয়ওয়াদা এই নদীর তীরে অবস্থিত শহরগুলির মধ্যে অন্যতম।

কৃষ্ণা নদী
প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য
মোহনাবঙ্গোপসাগর, অন্ধ্রপ্রদেশ, ভারত
দৈর্ঘ্য১৩০০ কিমি
বিজয়ওয়াদার কাছে কৃষ্ণা নদী (২০০৭ সালে তোলা ছবি

মারাঠী ভাষায় একটি প্রবাদ আছে "সুন্ত বহতে কৃষ্ণামাই" যার অর্থ হল "কৃষ্ণা শান্তভাবে বহে"। কিন্তু বাস্তবে কৃষ্ণা নদীকে দুনিয়ার অন্যতম ভয়াবহী ও ক্ষরস্রোতা নদীগুলির ফেলা হয়। বর্ষাকালে, জুন থেকে অগাস্ট মাসের মধ্যে এই নদীর তীরভূমিতে প্রবল ভূমিক্ষয় দেখা যায়। এই সময় এ নদী প্রবলবেগে বইতে থাকে, অনেক জায়গায় প্রায় টেমপ্লেট:M to ft গভীর খাতে। এসময় কৃষ্ণা নদী মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক আর পশ্চিম অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে উর্বর জমি নিয়ে গিয়ে বদ্বীপ এলাকায় গিয়ে ফেলে।

গতিপথ সম্পাদনা

কৃষ্ণা নদীর উৎস পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় মহাবালেশ্বরের উত্তরদিকে প্রায় টেমপ্লেট:M to ft উচ্চতায়। এই স্থান আরব সাগর থেকে প্রায় ৬৪ কিমি দূরে অবস্থিত। এরপর প্রায় ১৪০০ কিমি পথ অতিক্রম করে কৃষ্ণা নদী গিয়ে মেশে বঙ্গোপসাগরে।[১] এই যাত্রাপথের ৩০৫ কিমি মহারাষ্ট্রের অন্তর্গত, ৪৮৩ কিমি আছে কর্ণাটক রাজ্যের সীমানার মধ্যে, আর বাকি ৬১২ কিমি অন্ধ্রপ্রদেশে।[২] এই যাত্রাপথে ঘটপ্রভা, মালাপ্রভা, ভীমা, তুঙ্গভদ্রা আর মুসী নদীর জল এসে কৃষ্ণায় মেশে।[২]

উপনদী সম্পাদনা

কৃষ্ণা নদীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপনদী হল তুঙ্গভদ্রা নদী, পশ্চিমঘাট পর্বতমালা থেকে উদ্ভূত তুঙ্গ নদী আর ভদ্রা নদী মিলে এই নদীর সৃষ্টি হয়েছে। অন্য উপনদীগুলির মধ্যে রয়েছে কোয়না নদী, ভীমা, মলপ্রভা, ঘটপ্রভা, ইয়েরলা, ওয়ার্না, ডিন্ডি, মুসী এবং দুধগঙ্গা । কয়না, বসনা, পঞ্চগঙ্গা, দুধগঙ্গা, ঘটপ্রভা, মালাপ্রভা আর তুঙ্গভদ্রা নদী কৃষ্ণায় এসে মিশেছে ডানদিক থেকে; ইয়েরলা, মুসী, মানেরু আর ভীমা এসে মিশেছে বামদিক থেকে।

বাঁধ সম্পাদনা

  • বাসব সাগর বাঁধ
  • ধোম বাঁধ
  • দিন্দি বাঁধ
  • কোইল সাগর
  • নাগার্জুন সাগর বাঁধ
  • শ্রীশৈলম বাঁধ
  • তুঙ্গভদ্রা বাঁধ
  • উজ্জানি বাঁধ

কৃষ্ণা অববাহিকা সম্পাদনা

কৃষ্ণা অববাহিকার ব্যাপ্তি ২৫৮,৯৪৮ বর্গকিমি, যা সারা ভারতের প্রায় ৮% স্থান দখল করে। এই অববাহিকার ১১৩,২৭২ বর্গকিমি আছে কর্ণাটকে, ৭৬,২৫১ বর্গকিমি আছে অন্ধ্রপ্রদেশে, বাকি ৬৯,৪২৫ বর্গকিমি আছে মহারাষ্ট্রে।[২]

কৃষ্ণা অববাহিকার বেশীর ভাগ অংশ মালভূমি আর সমতলভূমি, কেবল পশ্চিমপ্রান্তে আছে অবিচ্ছিন্ন পশ্চিমঘাট পর্বতমালা। এই অববাহিকায় কৃষ্ণমৃত্তিকা, লোহিতমৃত্তিকা, ল্যাটেরাইট, পাললিক মৃত্তিকা, মিশ্রমৃত্তিকা, লোহিতকৃষ্ণমৃত্তিকা, লবণাক্ত মৃত্তিকা আর ক্ষারমৃত্তিকা দেখতে পাওয়া যায়।

এই অববাহিকার জলধারণের ক্ষমতা বছরে গড়ে প্রায় ৭৮.১ ঘনমিটার। এর মধ্যে ৫৮ ঘনমিটার জল ব্যবহারযোগ্য। এই অববাহিকার প্রায় ২০৩,০০০ বর্গকিমি জায়গা কৃষিযোগ্য, যা সারা ভারতের কৃষিযোগ্য জমির ১০.৪%।

উপকূলবর্তী অঞ্চল সম্পাদনা

তীর্থক্ষেত্র সম্পাদনা

কৃষ্ণা নদীর তীরে অবস্থিত উল্লেখযোগ্য ধর্মস্থান আছে মহারাষ্ট্রের নরসোবা ওয়াদিতে দত্তাদেব মন্দির, হরিপুরের সঙ্গমেশ্বর শিবমন্দির এবং সাংলির রামলিঙ্গ মন্দির। কর্ণাটকের বাগলকোটের কাছে অবস্থিত কুদালাসঙ্গমে আছে বাসবেশ্বরের মূর্তি। বিজয়ওয়াদার ইন্দ্রলক্ষী পাহাড়ে আছে কনকদুর্গার মন্দির। কৃষ্ণানদীর তিনটি শাখানদী হরিপুরের কাছে এসে মেশে, এই জায়গার নাম সঙ্গমেশ্বর।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Havale, Professor Baliram। Lakshyawedha Samany dnyan/ G.K part – 1 (মারাঠি ভাষায়)। Aurangabad, India: Sahyadri Publication। পৃষ্ঠা 72। 
  2. "Physical features (of Godavari basin and Krishna Basin)" (PDF)। National Water Development Agency, জল সরবরাহ মন্ত্রক, ভারত সরকার। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০১-২৭ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

টেমপ্লেট:পশ্চিমঘাট