হরিদাস সম্প্রদায়
হরিদাস সম্প্রদায় (কন্নড়: ಹರಿದಾಸ) হল একটি ভক্তিবাদী ধর্মীয় সম্প্রদায়। এই সম্প্রদায়ের উৎস অধুনা ভারতের কর্ণাটক রাজ্য। মধ্বের পরে এই সম্প্রদায়ের উৎপত্তি এবং তা পরে মধ্যযুগীয় ভারতের বাংলা ও অসম প্রভৃতি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।[১] ছয় শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে একাধিক সন্ত ও ধর্মগুরু জনসাধারণ ও দাক্ষিণাত্যের বিভিন্ন রাজ্যের রাজন্যবর্গের উপর আধ্যাত্মিক প্রভাব বিস্তার করে দক্ষিণ ভারত তথা কর্ণাটকের সংস্কৃতি, দর্শন ও শিল্পকলাকে একটি নির্দিষ্ট আকার দেন।[২]
‘হরিদাস’ (আক্ষরিক অর্থে, ‘হরির দাস’) নামে এক শ্রেণির ভক্তিবাদী এই ভক্তি আন্দোলনের জন্মদাতা। খ্রিস্টীয় ১৩শ থেকে ১৪শ শতাব্দীর মধ্যে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের প্রথম যুগে এই আন্দোলনের সূচনা ঘটেছিল। এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল মধ্বের দ্বৈতবাদী দর্শন বা ‘মধ্বসিদ্ধান্ত’ ‘দাসসাহিত্য’ (আক্ষরিক অর্থে, ‘হরিদাসের সাহিত্য’) নামে একটি বিশেষ সাহিত্যবর্গের মাধ্যমে জনসাধারণের মধ্যে প্রচার করা।[৩]
শ্রীপদরায়, ব্যাসতীর্থ, বদীরাজতীর্থ, পুরন্দর দাস ও কনক দাস প্রমুখ বিশিষ্ট হিন্দু দার্শনিক, কবি ও পণ্ডিত এই যুগে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিলেন।[৩] এই আন্দোলনের সূচনা কন্নড় দেশে হয় এবং তা দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। তবে এই আন্দোলন ছিল বাসবন্নার নেতৃত্বাধীন উত্তর কর্ণাটকের বীরশৈব আন্দোলন (কন্নড়ের বচন সাহিত্য) (১২শ শতাব্দী) এবং তামিলনাড়ুর অলবর সন্তদের (১০ম শতাব্দী) আন্দোলনের ফলশ্রুতি।[৪] পরবর্তীকালে বল্লভাচার্য ও চৈতন্য মহাপ্রভু মধ্বের শিক্ষার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন।[৫]
হরিদাসেরা ছিলেন সন্ত। তাদের কেউ কেউ ছিলেন পরিব্রাজক চারণকবি। তারা নিজেদের সর্বোচ্চ ঈশ্বর হরির দাস মনে করতেন। এই আন্দোলন ব্রাহ্মণেরা শুরু করলেও, এটি চিন্তাভাবনার দিক থেকে ছিল একটি ভক্তিবাদী আন্দোলন এবং সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের এতে উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল।[৬] হরিদাস আন্দোলনকে জনসাধারণের উপর এক হাজার বছর ধরে প্রভাব বিস্তারকারী ভক্তি আন্দোলনের একটি অংশ মনে করা হয়। এই আন্দোলন কন্নড় ভক্তিমূলক সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।[৭]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Sharma, B. N. Krishnamurti (২০০০)। A History of the Dvaita School of Vedānta and Its Literature, 3rd Edition। Motilal Banarsidass (2008 Reprint)। পৃষ্ঠা xxxii–xxxiii, 514–516, 539। আইএসবিএন 978-8120815759।
- ↑ Sharma (1961), p514
- ↑ ক খ Kamath (2001), p155
- ↑ Krishna Rao M.V. Dr. in Arthikaje। "Haridasa Movement-Part1"। History of Karnataka। outKarnataka.com। ২০০৭-০৪-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৬-০২।
- ↑ Kamath (2001), p156
- ↑ According to some accounts, Kanaka Dasa came from a family of hunters (beda) and from other accounts, from a family of Shepherds (kuruba) (Sastri 1955, p365)
- ↑ Sastri (1955), p381
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- Sharma, B.N.K (২০০০) [1961]। History of Dvaita school of Vedanta and its Literature (3rd সংস্করণ)। Bombay: Motilal Banarasidass। আইএসবিএন 81-208-1575-0।
- Nilakanta Sastri, K.A. (২০০২) [1955]। A history of South India from prehistoric times to the fall of Vijayanagar। New Delhi: Indian Branch, Oxford University Press। আইএসবিএন 0-19-560686-8।
- Kamath, Suryanath U. (২০০১) [1980]। A concise history of Karnataka : from pre-historic times to the present। Bangalore: Jupiter books। এলসিসিএন 80905179। ওসিএলসি 7796041।
- Iyer, Panchapakesa A.S. (২০০৬) [2006]। Karnataka Sangeeta Sastra। Chennai: Zion Printers।
- Arthikaje। "The Haridasa Movement - Part 1"। History of karnataka। OurKarnataka.Com। ২০০৬-১২-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১২-৩১।
- Arthikaje। "The Haridasa Movement - Part 2"। History of karnataka। OurKarnataka.Com। ২০০৭-০৪-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১২-৩১।
- Rao, Madhusudana C.R.। "History of Haridasas"। Haridasas of Karnataka। Haridasa@dvaita.net। ২০২০-০৩-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-৩০।