রাবণ
রাবণ (সংস্কৃত: रावण) হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণের অন্যতম প্রধান চরিত্র ও প্রধান খলনায়ক।[১][২][৩] তিনি মহাকাব্য ও পুরাণে বর্ণিত লঙ্কা দ্বীপের রাজা। কিন্তু বর্তমানে শ্রীলঙ্কা যে সেই লঙ্কা সেটি এখনো নিশ্চিত নন। শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে রামায়ণের এই তথ্যটি পাওয়া যায় না। রামচন্দ্রের পত্নী সীতাকে হরণ করে তিনি লঙ্কায় নিয়ে যান। সীতার উদ্ধারকল্পে কিষ্কিন্ধ্যার বানরসেনার সাহায্যে রামচন্দ্র লঙ্কা আক্রমণ করলে রাবণের সঙ্গে তার যুদ্ধ হয়। এই ঘটনা রামায়ণ মহাকাব্যের মূল উপজীব্য বিষয়। রামায়ণের উত্তরকাণ্ডে তার পূর্বজীবনের কথা বলা হয়েছে।
রাবণের প্রকৃত নাম দশানন/দশগ্রীব। তার রাবণ নামটি শিবের দেওয়া। জনপ্রিয় শিল্পে তার দশটি মাথা, দশটি হাত ও দশটি পা দর্শিত হয়। মহাকাব্যে কামুক ও ধর্ষকামী বলে নিন্দিত হলেও রাবণকে মহাজ্ঞানী ও তাপসও বলা হয়েছে। উত্তর ভারতে দশেরা উৎসবে রাবণের কুশপুত্তলিকা দাহ আজও এক জনপ্রিয় প্রথা। রাবণ আদি যুগে সর্বপ্রথম মর্তে উড়ন্ত যান পুষ্পক রথ ব্যবহার করেন।
রাবণের জন্ম অন্তত ২৩ হাজার ৯৮৭ বছর আগে।
রাবণের জীবনীসম্পাদনা
রাবণের পিতা ব্রহ্ম ঋষি বিশ্রবা এবং মাতা নিকষা । বিশ্রবা মহর্ষি পুলস্ত্যর (সপ্তর্ষি /সপ্ত ঋষির একজন) পুত্র আর কৈকসী হলেন অসুর রাজা সুমালীর কন্যা ।
কৈকসীকে বিবাহের জন্য অসুর রাজা সুমালীর কাছে অনেক প্রস্তাব আসে কিন্তু সুমালীর ইচ্ছা যে, সে তার কন্যাকে মৃত্যু লোকের সবচেয়ে শক্তিশালী সত্তার সাথে বিবাহ দিবে, যাতে তার মেয়ের সন্তানরা ব্যতিক্রমী, তেজস্বী এবং পরাক্রমী হয়। তাই সকল বরকে তিনি ফিরিয়ে দেন কারণ তারা কেউই তার চেয়ে শক্তিশালী ছিল না ।
কৈকসী অনেক ঋষি ও মুনির মধ্যে খুঁজে বিশ্রবাকে বিবাহ যোগ্য মনে করেন এবং তার সেবা করেন। তার সেবায় সন্তুষ্ট হয়ে ঋষি বিশ্বাশ্রবা তাকে বিবাহ করেন । ব্রহ্ম ঋষি বিশ্বশ্রবার ঔরসে কৈকসীর গর্ভে তিন পুত্র যথাক্রমে দশানন (দশ মাথা বিশিষ্ট), কুম্ভকর্ণ, বিভীষণ এবং এক কন্যা শূর্পণখার জন্ম হয় । রাবন ও তার সহোদরদের শিক্ষা তার পিতার কাছে সম্পন্ন হয়।রাবণ বেদ শাস্ত্রের অন্যতম একজন পণ্ডিত ছিলেন ।
রাবণ সংগীত রচনায় অতি নিপুণ ছিলেন। তিনি শিবের পরম ভক্ত ছিলেন। সার্বক্ষণিক শিবের সান্নিধ্য পাওয়ার লক্ষ্যে তিনি যখন কৈলাশ পর্বতকে লংকায় প্রতিস্থাপনের জন্যে নিজ তপোবল দ্বারা দুই হস্তে তুলে নেন তখন মহাদেব তার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি কৈলাশে স্পর্শ করলে রাবণের দুই হাত কৈলাশের নিচে চাপা পরে যায়। রাবণ তখন প্রচন্ড চিৎকার করতে থাকে এবং শিবকে শান্ত করার নিমিত্তে তিনি একটি সংগীত রচনা করেন, যা পরে "শিব তাণ্ডব স্তোত্র" নামে পরিচিত হয় । শিবের ক্রোধ শান্ত হয় এবং মহাদেব রাবণকে তার চন্দ্রহাস নামক খড়গ তাকে উপহার দেন এবং অতি উচ্চ মাত্রায় তার রোদন করার কারণে তার নাম রাবণ বলে পরিচিত হয়।
রাবণ বাস্তু শাস্ত্রে এবং জ্যোতিষ শাস্ত্রে অতীব জ্ঞান রাখতেন। জ্যোতিষ শাস্ত্রে তার জ্ঞানের দ্বারা সে তার পুত্রের জন্মলগ্নে সকল গ্রহকে তার বসে এনে সেই তিথিকে মঙ্গল তিথি বানিয়ে নেন। রাবণ ব্রহ্মার কঠোর তপস্যা করেন এবং বর প্রাপ্ত হন যে, মানুষ (নর) ও বানর ছাড়া তাকে কেউ বধ করতে পারবে না। রাবণ তার বৈমাত্রেয় বড় ভাই কুবেরকে পরাজিত করে তার কাছ থেকে পুষ্পক বিমান ছিনিয়ে নেন যা তাকে অতি অল্প সময়ে লঙ্কা থেকে যেকোনো জায়গায় নিয়ে যেতে পারত ।
প্রথম জীবনে রাবণ শিবের সাথে যুদ্ধ করে পরাজিত হয়ে পরে শিবের ভক্ত হন। রাবণ পূর্বজন্মে ছিলেন অভিশাপগ্রস্ত বিষ্ণুভক্ত বিজয়। রাবণ তার নিজশক্তিতে ত্রিলোকের অধিপতি হন। শ্রীরাম অবতীর্ণ হন এবং রাবণকে বধ করেন । কথিত আছে, রাম রাবণকে হত্যা করে ১ বৎসর ব্রহ্ম হত্যার অনুশোচনায় হিমালয়ের তপস্যা করেন। কারণ রাম ছিলেন পুরুষোত্তম।
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ Wheeler, James Talboys (১৮৬৯)। The History of India from the Earliest Ages: The Rámáyana and the Brahmanic period (ইংরেজি ভাষায়)। N. Trübner।
- ↑ Brown, Nathan Robert (২০১১-০৮-০২)। The Mythology of Supernatural: The Signs and Symbols Behind the Popular TV Show (ইংরেজি ভাষায়)। Penguin। আইএসবিএন 978-1-101-51752-9।
- ↑ "Ravana"। Encyclopedia Britannica (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-১১।
বহিঃসংযোগসম্পাদনা
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |