হাসান ইবনুল হায়সাম

আরব পদার্থবিদ, গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী
(হাসান ইবনে আল-হাইসাম থেকে পুনর্নির্দেশিত)

হাসান ইবনে আল-হায়সাম (ল্যাটিনকৃত: আলহাজেন []; /ælˈhæzən/[]; লাতিন: Alhazen[]; পূর্ণ নামঃ আরবি: أبو علي، الحسن بن الحسن بن الهيثم, প্রতিবর্ণীকৃত: আবু আলি হাসান ইবনুল হাসান ইবনুল হায়সাম, অনুবাদ'Abū ʿAlī al-Ḥasan ibn al-Ḥasan ibn al-Haytham'; আনু. ৯৬৫আনু. ১০৪০), ছিলেন ইসলামী স্বর্ণযুগের একজন মুসলিম আরব গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং পদার্থবিদ[][][][] তিনি "আধুনিক আলোকবিজ্ঞানের জনক"[][] হিসেবে উল্লেখিত হন, আলোকবিদ্যার নীতি এবং বিশেষ করে দর্শনানুভূতির ব্যাখ্যায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। তার সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী কাজ হচ্ছে তার কিতাবুল মানাজির ("আলোকবিদ্যার গ্রন্থ", আরবি: كتاب المناظر), যা ১০১১–১০২১ সালের মধ্যে লেখা এবং লাতিন সংস্করণে বিস্তার লাভ করেছিল অনুমান করা হয়।[১০] তিনি একজন বহুবিদ্যাবিশারদ ছিলেন, যিনি একাধারে দর্শন, ধর্মতত্ত্বচিকিৎসাশাস্ত্রের সম্পর্কেও বিশেষ অবদান রেখেছেন।[১১]

হাসান ইবনুল হায়সাম
ابن الهيثم
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্মআনু. ৯৬৫ (আনু. ৩৫৪ হিজরী)
মৃত্যুআনু. ১০৪০ (আনু. ৪৩০ হিজরী) (প্রায় ৭৫ বয়সে)
ধর্মইসলাম
আখ্যাসুন্নি
ধর্মীয় মতবিশ্বাসআশআরি
প্রধান আগ্রহ
উল্লেখযোগ্য কাজকিতাব আল-মানাজির
মুসলিম নেতা

ইবনে আল-হায়সাম ছিলেন যিনি দর্শনানুভূতির ব্যাখ্যার সর্বপ্রথম প্রমাণ দিতে সক্ষম হয়েছিলেন, যে 'আলো কোন বস্তু হইতে প্রতিফলিত হয়ে চোখে আসে বলেই সেই বস্তুটি দৃশ্যমান হয়'।[১২] এছাড়াও তিনিই প্রথম যিনি এটাও দেখিয়ে ছিলেন, দর্শনানুভূতির কেন্দ্র চোখে নয়, বরং মস্তিষ্কে।[১৩] তিনি তার এই তত্ত্বের অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটলের কাছ থেকে। তিনি আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির একজন প্রাচীনতম প্রবক্তা, যে তত্ত্ব ও অনুমান অবশ্যই পুনরায় পরিচালনাযোগ্য পরীক্ষণের মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হয়, এতে তিনি রেনেসাঁর পণ্ডিতগণের পাঁচ শতাব্দী পূর্বেই বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের পরিপূর্ণ ও স্পষ্ট বর্ণনাদাতার মর্যাদা পান।[১৪][১৫][১৬][১৭] এ কারণের জন্যই, তাকে কখনও কখনও বিশ্বের "প্রথম সত্যিকারের বিজ্ঞানী" হিসাবে বর্ণনা করা হয়।[১৮]

হায়সাম বসরায় জন্মগ্রহণ করলেও তিনি তার কর্মজীবনের বেশিরভাগ সময় কায়রোর রাজধানী ফাতেমীয়তে কাটিয়েছিলেন এবং বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা ও অভিজাত ব্যক্তিবর্গের শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে তিনি তার জীবিকা নির্বাহ করেছিলেন।[১৯] কখনও কখনও হায়সামকে তার জন্মস্থানের নামানুসারে আল-বসরি বা আল-মিসরী উপনামেও ডাকা হয়ে থাকে।[১৯][২০] এছাড়াও আল-হায়সামকে ফরাসি ইতিহাসবিদ আবু'ল-হাসান বায়হাকি "দ্বিতীয় টলেমি"[২১][২২] এবং জন পেকহ্যামের "দ্য ফিজিসিস্ট" নামে অভিহিত করেন।[২৩] ইবনুল হায়সাম অবদান আধুনিক আলোকবিজ্ঞানের পথ প্রশস্ত করার জন্য অনস্বীকার্য।[২৪]

আব্বাসীয় খিলাফতের অধীনে রাজকীয় শক্তি বুইদ রাজবংশের (শা. ৯৩৪–১০৬২) শাসনামলে, হাসান ইবন আল-হাইসাম ৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে বুইদ আমিরাতের রাজধানী বর্তমান ইরাকের বসরায় এক আরব মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[][২৫] ইবনুল হায়সাম কায়রোতে যাওয়ার আগে বসরা এবং বাগদাদে বিজ্ঞান অধ্যয়ন করেছিলেন। কায়রোতে তিনি খলিফা আল-হাকিমের (শা. ৯৯৬–১০২১) সেবায় কাজও করেছিলেন, যিনি গ্রন্থাগার দার আল-ইলম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। কায়রো তখন একটি নতুন শহর ছিল, যা ৯৬৯ সালে ফাতেমীয়দের রাজধানী প্রাচীন আল-ফুস্তাতের কাছে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, একটি শিয়া খিলাফত যা মিশর এবং উত্তর আফ্রিকায় দুই শতাব্দীরও বেশি (৯০৯–১১৭১) স্থায়ী ছিল। আসলে, তখন আরব বিশ্বে তিনটি খিলাফত ছিল; অন্য দুটি ছিল আব্বাসীয় (শা. ৭৫০–১২৫৮), এবং উমাইয়া (শা. ৯২৯–১০৩১)। তিনি তার জন্মস্থান বসরায় উজিরের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন এবং তার পাশাপাশি গনিতে দক্ষতার জন্য তার নামডাক ছিলো। যেহেতু তিনি নীলনদের বন্যা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে বলে দাবি করেছিলেন, আল-হাকিম তাকে ফাতেমীয় খলিফায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন যাতে আসওয়ানে একটি পানিসম্পদ প্রকৌশল উপলব্ধি করা যায়। যাইহোক, পরে ইবনে আল-হায়সাম তার প্রকল্পের অবাস্তবায়ন স্বীকার করতে বাধ্য হন। কায়রোতে ফিরে আসার পর তাকে একটি প্রশাসনিক পদ দেওয়া হয়। তিনি এই কাজটিও পূরণ করতে অক্ষম প্রমাণিত হওয়ার পর, তিনি খলিফা আল-হাকিম দ্বি-আমর আল্লাহর ক্রোধে আক্রান্ত হন এবং বলা হয় যে ১০২১ সালে খলিফার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাকে আত্মগোপন করতে বাধ্য করা হয়েছিল। তখনকার কায়রোর খলিফা তার বিভিন্ন স্বেচ্ছাচারী কার্যকলাপের জন্য উন্মাদ খলিফা হিসেবে পরিচিত ছিলেন, বলা বাহুল্য এতে তিনি খলিফার রোষে পতিত হন। এরপর তিনি বাধ্যতামূলক অন্তর্ধানে যেতে বাধ্য হন, খলিফার মৃত্যুর পর তার হৃত সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়া হয় এবং তিনি পুনরায় জনসম্মুখে আসতে পারেন। আরো বলা হয়ে থাকে, তিনি নাকি খলিফার রোষ হতে রক্ষা পেতে উন্মাদনার ভান করেছিলেন। এ অন্তরীণ অবস্থায় তিনি তার বিখ্যাত কর্ম, "কিতাব আল মানাযির" লেখা সম্পন্ন করেন। তিনি কায়রো তে জীবনের বাকি অংশ অতিবাহিত করেন, বিখ্যাত আল-আযহার মসজিদ প্রাঙ্গণে তিনি তার গবেষণার কাজ করতেন। মৃত্যু পর্যন্ত তার এ লেখনী ও পান্ডলিপি কপি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।(তার স্বহস্তে লিখিত অ্যাপোলোনিয়াসের কনিক এর লিপি হাজিয়া সোফিয়াতে সংরক্ষিত আছে) তিনি ১০৪০ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

কিতাব আল-মানাযির

সম্পাদনা

ইবন আল-হাইসাম এর সবচেয়ে বিখ্যাত কর্ম হচ্ছে তার সাত খণ্ডে রচিত আলোকবিজ্ঞানের উপর গবেষণা গ্রন্থ কিতাব আল-মানাযির ("আলোকবিজ্ঞান গ্রন্থ") যা ১০১১ খ্রিষ্টাব্দ হতে ১০২১ খ্রিষ্টাব্দ এর মাঝামাঝি সময় রচিত।[২৬][২৭]

কিতাব আল মানাযির দ্বাদশ শতাব্দীর শেষে অথবা ত্রয়োদশ শতাব্দীর শুরুতে এক অজ্ঞাত পরিচয় পণ্ডিত কর্তৃক ল্যাটিনে অনুবাদকৃত হয়েছিলো। ফ্রেড্রিখ রিজনার ১৫৭২ সালে এটি মুদ্রণ করেন। বইটির ল্যাটিনে নাম দিয়েছিলেন অপটিকা থেজারাসঃ আলহাজেনি অ্যারাবিস লিব্রি সেপ্টাম নানপ্রাইমাম এডিটি; ইউসডেম লাইবার ডি ক্রেপাসকুলিস এট নুবিয়াম এসকেনশনিবাস (Latin: Opticae thesaurus: Alhazeni Arabis libri septem, nuncprimum editi; Eiusdem liber De Crepusculis et nubium ascensionibus ,বাংলাঃ গোধুলি এবং মেঘের উচ্চতার বিষয়ে এর রচয়িতার লেখা, আলোকবিদ্যার রত্নভান্ডারঃ আরব আলহাজেন কর্তৃক রচিত সাতটি গ্রন্থ, , প্রথম সংস্করণ)। [২৮] রিজনার এর এ গ্রন্থের মাধ্যমেই জনপ্রিয় তার নামের ল্যাটিনকৃত রূপ আল-হাজেন(Al-hazen) জনপ্রিয় হয়, তার পূর্বে আল-আলহাসিন(Al-hacen) নামটি অধিক প্রচলিত ছিলো ইউরোপে। তার এ গ্রন্থ মধ্যযুগের ইউরোপে ব্যপক খ্যাতি লাভ করে। জ্যামিতির উপর তার কিছু কাজ ফ্রান্সের প্যারিসে বিবলিওথেকো ন্যাশনালে ১৮৩৪ সালে আবিষ্কৃত হয়।

দৃষ্টিতত্ত্ব

সম্পাদনা
 
ল্যাটিনে অনূদিত ইবন আল-হাইসামের কিতাব আল-মানাযির, অপটিকা থেজারাস এর সম্মুখ চিত্র। প্রচ্ছদটি বিভিন্ন আলোকীয় প্রতিভাসের দ্রষ্টান্ত নিয়ে আঁকা হয়েছেঃ রংধনু, আলর প্রতিফলন, প্রতিসরণ, আয়না

প্রাচীনকাল হতে দৃষ্টিশক্তি সম্পর্কে দুটো মতবাদ বেশ জনপ্রিয় ছিলো। প্রথম টি হচ্ছে আলোক নিঃসরণ তত্ত্ব( emission theory) , যেটা ইউক্লিড , টলেমি প্রমুখ চিন্তানায়কেরা সমর্থন করতেন, তারা বিশ্বাস করতেন চোখ হতে আলো বস্তুতে পড়াতে আমরা দেখি। দ্বিতীয় তত্ত্ব আলোক অন্তপ্রেরণ তত্ত্ব ( Intromission theory) , অ্যারিস্টটল এবং তার অনুসারীগণ সমর্থন করতেন। পূর্ববর্তী ইসলামিক দার্শনিক ও বিজ্ঞানীরা( যেমনঃ আল-কিন্দি ) অ্যারিস্টটল, ইউক্লিড এবং গ্যালেন প্রমুখের ধারায় এ বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন। কিতাব আল মানাযিরের উপর সর্বাপেক্ষা অধিক প্রভাব দেখা যায় টলেমির আলোকবিদ্যার গ্রন্থের, অন্যদিকে চোখের অঙ্গসংস্থানিক বিবরণ তিনি নিয়েছিলেন গ্রিক চিকিৎসাবিজ্ঞানী গ্যালেনের গবেষণা হতে। ইবন আল হাইসাম এর মূল সাফল্য হলো তিনি তার তত্ত্বে ইউক্লিডের আলোকরশ্নির গাণিতিক প্রকাশকে গ্যালেনের অঙ্গসংস্থানিক বিবরণ এবং অ্যারিস্টটলের অন্তপ্রেরণ তত্ত্বের সাথে সফলভাবে একীভূত করতে পেরেছিলেন। তিনি আল-কিন্দিকে এ ক্ষেত্রে অনুসরণ করে বলেন "যে রঙিন বস্তুর প্রতিটি বিন্দু হতে যতো সরলরেখা আঁকা যায় ততোদিকে আলো এবং রং এর তথ্য পরিবাহিত করে।"[২৯] যদিও এটা তাকে সমস্যায় ফেলে দেয় যে কীভাবে একটি দর্শনযোগ্য চিত্র এতে গঠিত হবে যখন অনেক আলোক উৎস হতে আলো বস্তুতে প্রতিফলিত হচ্ছে, বিশেষত যখন বস্তুর প্রতিটি বিন্দু চোখের প্রতিটু বিন্দুতে আলোকরশ্নি প্রেরণ করছে। তার এটা প্রমাণ করতে হতো যে বস্তুর একটি নির্দিষ্ট বিন্দু চোখের একটি এবং কেবল একটি বিন্ধুর সাথে এক এক মিল স্থাপন করে। [২৯] তিনি এর সমাধানের চেষ্টায় বললেন যে শুধু চোখে লম্বভাবে প্রবেশকৃত রশ্নিই দর্শনানুভূতিতে গুরুত্বপূর্ণ, যে রশ্নি চোখের অন্য অংশ দ্বারা প্রতিসরিত হয় না। তিনি এর একটা ভৌত ব্যাখ্যা দিলেন, যে লম্বভাবে প্রবেশকৃত রশ্নি অধিক শক্তিশালী, যেমন লম্বভাবে একটি বোর্ডে একটি বল আঘাত করলে তা হয়তো বোর্ডকে ভেঙে ফেলবে। তবে তির্যকভাবে আসলে স্পর্শ করে চলে যাবে, তেমনে যেসবক্ষেত্রে আলোর প্রতিসরণ ঘটবে তা অপ্রতিসরিত লম্ব রশ্নির তুলনায় দুর্বল। যেনো আলোকরশ্নির লম্ন অংশ চোখের অভ্যন্তরে পতিত হচ্ছে, আর বাকি অংশ প্রতিসরিত হয়ে ওই বিন্দুতে কোণক আকৃতিতে অভিসৃত হচ্ছে। এর মাধ্যমে তিনি প্রত্যেক বিন্দু থেকে আসা আলোকরশ্নি যে সমস্যা তৈরি করে তার একটা মীমাংসা হলো; যদি শুধু লম্ব রশ্নিই মুখ্য হয় তবে এক-এক মিল পাওয়া যায়। [৩০] তিনি পরবর্তীতে বলেন( তার আলোকবিজ্ঞানের সপ্তম গ্রন্থতে) যে অন্য রশ্নিগুলো এমনভাবে প্রতিসরিত হবে যাতে তা লম্বভাবে পতিত হয়।[৩১]

তার যুক্তি পরিষ্কারভাবে বলেনা যে কেনো লম্বভাবে আপতিত রশ্নিই শুধু চোখ দ্বারা গ্রাহ্য হবে, দুর্বলতর রশ্নিগুলো কেনো দুর্বল্ভাবে চোখে অনুভূত হবে না? এ দূর্বলতা সত্ত্বেও তার সমসাময়িক অন্য কোনো তত্ত্ব এতো বোধগম্য ছিলো না, এবং এ তত্ত্ব ব্যপকভাবে প্রভাবশালী ছিলো, বিশেষ করে পশ্চিম ইউরোপে। তার বইয়ের ল্যাটিন সংস্করণ ডি অ্যাসপেক্টিবাস (De Aspectibus) ত্রয়োদশ হতে স্পতদশ শতক পর্যন্ত অধিকাংশ আলোর সম্বন্ধীয় গবেষণার অনুপ্রেরণা ছিলো। কেপলারের পরবর্তীতে দেয়া রেটিনা প্রতিবিম্বের তত্ত্ব ( যা এক-এক মিল সমস্যার সমাধান দেয়) মূলত ইবন আল হাইসামের অবকাঠামোতেই নির্মিত হয়েছিলো।

হাসান ইবন আল হাইসাম পরীক্ষার মাধ্যমে সফলভাবে দেখিয়েছিলেন যে আলো সরল রেখায় চলে, লেন্স, আয়না, প্রতিফলনপ্রতিসরণ সংক্রান্ত বহু পরীক্ষা নিরীক্ষা সম্পাদন করেছিলেন। তার প্রতিফলন ও প্রতিসরণের বিশ্লেষণ আলোর উল্লম্ব ও আনুভূমিক উপাংশকে আলাদাভাবে বিবেচনা করেছেন।

ক্যামেরা অবস্কিউরা প্রাচীন চীনে পরিচিত ছিলো, এবং হান চীনা বহুবিদ্যাবিশারদ শেন কুও ১০৮৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত তার স্বপ্ন সরোবর রচনাবলী(夢溪筆談; মেংশি বিতান) নামক বৈজ্ঞানিক গ্রন্থে এর আলোচনা করেন। অ্যারিস্টটল তার সমস্যায় ক্যামেরা অবস্কিউরার অন্তর্নিহিত নীতির ব্যাখ্যা করেছিলেন, তবে ইবন আল হাইসাম সর্বপ্রথম এর পরিষ্কার বর্ণনা দেন।[৩২][৩৩]

ইবন আল-হাইসাম গ্রহণের বর্ণনা দিতে ক্যামেরা অবস্কিউরা ব্যবহার করেন। তার প্রবন্ধ " গ্রহণের প্রকৃতি সম্বন্ধে" , তিনি লিখেছেন গ্রহণের সময় তিনি কাস্তে আকৃতির সূর্য পর্যবেক্ষণ করেন।[৩৪]

 
ইবন আল হাইসামের বর্ণিত চোখের গঠন।- তার কিতাব আল মানাযিরের পান্ডুলিপি হতে গৃহীত(এমএস ফাতিহ ৩২১২, ভলিউম ১, সুলেমানিয়া মসজিদ গ্রন্থাগার, ইস্তান্বুল)

আল-হাজেন দৃষ্টিকৌশল নিয়ে আলোচনা করেছেন, চোখের গঠন, চোখের অভ্যন্তরে প্রতিবিম্ব সৃষ্টি এবং দর্শন তন্ত্র ইয়ান পি হাওয়ার্ড পারসেপশন এর একটি নিবন্ধে যুক্তি দেখান যে ইবন আল হাইসামকেই বিভিন্ন উদ্ভাবন এবং তত্ত্বের কৃতিত্ব দেয়া উচিত , যেগুলোকে সাধারণত পশ্চিম ইউরোপীয়দের বলে চালিয়ে দেয়া হয়; যদিও শতাব্দী পরে সেগুলো তারা লিখেছেন। উদাহরণস্বরূপ, তার একটা বর্ণনা ১৯ শতকে হেরিং এর সম উদ্দীপনার সূত্র হিসেবে পরিচিতি পায়। এগুইলোনিয়াসের ৬০০ বছর পূর্বে তিনি উল্লম্ব হরোপ্টারের বর্ণনা দেন, যা প্রকৃতপক্ষে আধুনিক সংজ্ঞার অধিকতর নিকটবর্তী- এবং তার দ্বিনেত্র ত্রটির বর্ণনা পানাম কর্তৃক ১৮৫৮ সালে পুনরাবৃত্তি করা হয়। ক্রেইগ অ্যান স্টকডেল আবার মত প্রকাশ করেছেন যে যদিও নিঃসন্দেহে ইবন আল হাইসাম কে এসবের কৃতিত্ব দিতে হবে তাও এক্ষেত্রে সাবধানতা আবশ্যক। বিশেষ করে তাঁকে যদি টলেমি হতে আলাদা করে চিন্তা করা হয়, যার আলোকসম্বন্ধীয় কাজের সাথে ইবন আল হাইসাম ভালোভাবেই পরিচিত ছিলেন। তিনি টলেমির দ্বিনেত্র দৃষ্টি সংক্রান্ত বর্ণ্নার গুরুত্বপূর্ণ ভুল সংশোধন করলেও তার যে বর্ণনা তা টলেমির সাথে খুবই সাদৃশ্যপূর্ণ। টলেমি বর্তমান হেরিং এর সূত্র নামে পরিচিত বিষয়টিও ব্যাখ্যার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি

সম্পাদনা

সত্যান্বেষী তিনি নন যিনি পূর্ববর্তীদের রচনা পড়েন এবং তার প্রকৃতি সম্পর্কিত বর্ণনাকে অনুসরণ করে তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেন। বরং তিনি যিনি তার বিশ্বাসের প্রতি সন্দেহ জ্ঞাপন করেন ও পঠিত বিষয়কে প্রশ্ন করেন। যিনি যুক্তি এবং যুক্তির প্রদর্শনীর প্রতি আস্থাশীল, এবং কোনো মানবসত্তার প্রতি নয় যে সত্তার প্রকৃতি নানা অসূক্ষতা এবং অদক্ষতার দোষে দুষ্ট। যিনি বিজ্ঞানীদের লেখনী অনুসন্ধান করবেন, যদি সত্যান্বেষণ তার উদ্দেশ্য হয়, তার দায়িত্ব হচ্ছে পঠিত সকল বিষয়ের প্রতি নিজেকে শত্রতে পরিণত করা এবং সে বিষয়ের প্রাথমিক ভিত্তি থেকে সীমাস্থ অনুসিদ্ধান্তগুলোর প্রতি মনোযোগ দেয়া, একে সম্ভাব্য সকল দিক হতে আক্রমণ করা। তার নিজের প্রতিও সন্দেহ পোষণ আবশ্যক যখন তিনি এসবের সমালোচনামূলক পর্যালোচনা সম্পাদন করবেন, যাতে তিনি যেকোনো কুসংস্কার বা পূর্বধারণার বশবর্তী না হয়ে পড়েন। - আবু আলি হাসান ইবন আল হাইসাম[৩৫]

তার সন্দেহ প্রবণতা বর্তমান যেকোনো শিক্ষা, জ্ঞানার্জন এর ক্ষেত্রে মূলমন্ত্র। ইবন আল-হাইসামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো তার আলোক সম্বন্ধীয় গবেষণায় নিয়মতান্ত্রিক ও বিধিবদ্ধ পরীক্ষণশৈলীর উপর তার নির্ভরতা।(ই'তিবার) (আরবিঃ إعتبار) এবং বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষণ পদ্ধতির প্রয়োগ। এতদ্ব্যতীত আরেকটি দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য বিষয় হলো তার পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্যে বিজ্ঞানকে গনিতের নিয়ম দ্বারা প্রকাশ করবার প্রয়াস( বিশেষতঃ জ্যামিতিক পদ্ধতির প্রয়োগ)। তার কিতাব আল-মানাযির এর অধিকাংশ প্রতিজ্ঞার প্রমাণ ও আলোচনায় এ বিষয়টি স্পষ্ট। তার এ আলোচনা ভৌত- গাণিতিক পদ্ধতির পরীক্ষামূলক প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের প্রয়োগের প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত । এ নিয়মতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা পদ্ধতি তার দৃর্শনানুভূতির ব্যাখ্যা, আলো এবং বর্ণের উপলব্ধি এবং ক্যাটোপ্ট্রিকস ও ডাইওপ্ট্রিকস সহ সকল গবেষণার ভিত্তি । (যথাক্রমে আয়না ও লেন্স নিয়ে আলোকীয় গবেষণার নাম) তার কিতাব আল-মানাযিরের মধ্যে আমরা আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির স্পষ্ট সংজ্ঞায়ন এবং প্রয়োগ খুঁজে পাই। যেটা প্রায় রেনেসাস বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের অর্থাৎ স্যার ফ্রান্সিস বেকন, রেনে দেকার্ত, গ্যালিলিও প্রমুখদের প্রায় ছয় শতাব্দী পূর্বে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগের দৃষ্টান্ত। তার কাজের আরো একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো বিজ্ঞানের গাণিতিকীকরণ, যা বর্তমান বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আমরা প্রায় স্বাভাবিক বলেই ধরে নেই।

আমাদের অবশ্যই স্বতন্ত্র কোনো নির্দিষ্ট বস্তুর বিষয়ের বৈশিষ্টাবলি, যা সাধারণ দৃষ্টিতে অপরিবর্তনীয়, সুষম, স্পষ্টত প্রকাশ্য এবং সন্দেহাতীত বলে মনে হয়, তা হতে আরোহ অনুমানের ভিত্তিতে প্রাপ্ত তথ্যকে পৃথক করা উচিত। যার উপর , ধীরেসুস্থে এবং শৃঙ্খলার সাথে আমাদের আলোচনা এবং অনুসন্ধান চালাতে হবে, সমালোচনা হবে প্রাথমিক প্রতিজ্ঞাসমূহ এবং তা হতে গৃহীত সিদ্ধান্ত গুলোর প্রতি— আমাদের এ তদন্ত এবং পর্যালোচনার উদ্দেশ্য হলো সত্যের প্রতি সুবিচার, কুসংস্কারের অনুসরণ হতে মুক্তি, এবং আমরা যা কিছু বিচার এবং সমালোচনা করবো তাতে এ বিষয়টি যত্নসহকারে খেয়াল রাখতে হবে যে তা আমরা সত্যান্বেষণের জন্য করছি, নিজ বা অন্যের মতামতে বিভ্রান্ত হতে নয়।—আল হাসান ইবন আল হাইসাম, তার কিতাব আল-মানাযির এর একটি অনুচ্ছেদে

ম্যাথিয়াস শ্রাম এর মতে, " তিনি ছিলেন প্রথম যিনি পরিবর্তনশীল পরীক্ষামূলক পরিবেশ ব্যবহার এমন নিয়মতান্ত্রিক সুষম উপায়ে করেছেন, তার একটি পরীক্ষায় দেখা যায় যাতে দুটো ছিদ্র দিয়ে চাঁদের আলো একটি স্ক্রিনের উপর ফেলা হলে আলোর তীব্রতা অবিছিন্নভাবে হ্রাস পেতে থাকে যখন একটি ছিদ্র ধীরে ধীরে বন্ধ করা হতে থাকে।" ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী জিম আল-খালিলি তার প্রভাব এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রথম সফল প্রয়োগের গুরুত্ব বোঝাতে তাঁকে " আর্কিমিডিস এবং স্যার আইজাক নিউটন এর মধ্যকার দুই সহস্রাব্দের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী হিসেবে উল্লেখ করেছেন।"

আল হাজেনের সমস্যা

সম্পাদনা

তার দর্পণ সংক্রান্ত আলোচনায়, কিতাব আল-মানাযিরের ৫ম বইতে একটি সমস্যার অবতারণা করেন যা বর্তমানে আল হাজেনের সমস্যা নামে পরিচিত, যা মূলত ১৫০ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম টলেমি কর্তৃক বর্ণিত হয়েছিলো। এ সমস্যাটি তে সমতলের একটি বিন্দু হতে একটি বৃত্তের পরিধির উপর একটি বিন্দুর উপর এর অভিলম্বের সাথে সমান কোণ উতপন্নকারী সরলরেখা দ্বারা গঠিত পথে আরেক বিন্দুতে পৌছানোর পথ জ্যামিতিকভাবে নির্ণয় করার দরকার ছিলো। এটা একটি বৃত্তাকার বিলিয়ার্ড টেবিলে একটি নির্দিষ্ট স্থান হতে টেবিলের অপর কোনো বিন্দুতে পৌছাতে দেয়ালের যে বিন্দু কে আঘাত করে পৌছাতে হবে তা বের করার সমতুল্য। এর মূল প্রয়োগ ছিলো আলো সম্বন্ধীয় এ সমস্যাটি " একটি আলোক উৎস এবং একটি গোলীয় দর্পণ দেয়া আছে এখন একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে অবস্থিত পর্যবেক্ষকের চোখে আলো পৌছাতে আলো আয়নার ঠিক কোন বিন্দুতে প্রতিফলিত হবে?" এর সমাধানের জন্য একটি চতুর্থঘাত সমীকরণ সমাধানের প্রয়োজন পড়ে। যেটা হাসান ইবন আল হাইসামকে ধাবিত করে পূর্ণসংখ্যার চতুর্থঘাতের যোগফল বের করার সূত্র বের করতে, তখন পর্যন্ত শুধু ক্রমিক পূর্ণসংখ্যার বর্গ ও ঘনের যোগফল বের করার সূত্র জানা ছিলো। তার ব্যবহৃত পদ্ধতি সহজেই যেকোনো ঘাতের ক্রমিক পূর্ণসংখ্যার যোগফল বের করতে সাধারণীকৃত করে নেয়া যায়। তবে তিনি তা করেন নি( হতে পারে তিনি শুধু তার এ সমস্যার সমাধানের জন্য চতুর্থ ঘাতের যোগফল বের করতেই আগ্রহী ছিলেন) তিনি তার এ সূত্র ব্যবহার করেন একটি কাজে যাকে আমরা এখন আধুনিককালে বলি যোগজীকরণ বা ইন্টিগ্রেশন, প্যারাবলয়েড এর আয়তন নির্ণয়ে।

 
সতের শতকের জ্যোতির্বিজ্ঞানী হেভেলিয়াস কর্তৃক রচিত সেলিনোগ্রাফিয়া এর প্রচ্ছদে ইবন আল হাইসাম(বামে) যার হাতের গাণিতিক হিসাবের কাগজ যুক্তির উপমা, আর আছেন গ্যালিলিও যার দূরবীক্ষণ যন্ত্র প্রকাশ করে পর্যবেক্ষণকে।

অন্যান্য অবদানঃ

সম্পাদনা

কিতাব আল মানাযির( আলোকবিজ্ঞান গ্রন্থ) বিভিন্ন তার বর্ণিত পরীক্ষালব্ধ পর্যবেক্ষণ বর্ণনা করে এবং কীভাবে তিনি তার আলোকীয় ধটনার বর্ণনায় যান্ত্রিক উপমার প্রয়োগ করেছেন তা এর থেকে বোঝা যায়। তিনি প্রক্ষেপক নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বলেন যে শুধুমাত্র লম্ব উপাংশই যেনো প্রবেশ্যতায় ভূমিকা রাখে, অন্যদিকে সমান্তরাল উপাংশ বিচ্যুতি ঘটাতে ভূমিকা রাখে।

সুদানী মনোবিজ্ঞানী ওমর খালিফা ইবন আল হাইসামকে পরীক্ষামূলক মনোবিজ্ঞানের জনক হিসেবে অভিহিত করেছেন। দর্শনানুভূতি এবং দৃষ্টিভ্রম সংক্রান্ত কাজে তার গবেষণা তাকে এ বিষয়ের অন্যতম পথিকৃত দেবার দাবি রাখে বলে তিনি মত প্রকাশ করেছেন। খালিফা আরো এগিয়ে যেয়ে বলেছেন ইবন আল হাইথাম মনোপদার্থবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা। যা আধুনিক মনোবিজ্ঞানের একটি উপশাখা। যদিও ইবন আল হাইসাম দর্শনানুভূতি ও দৃষ্টিভ্রম সম্পর্কে আলোচনা করেছেন তবুও তিনি মনোবৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটিয়েছেন কিনা তার স্পষ্ট কোনো প্রমাণ নেই।

পদার্থবিজ্ঞানে অন্যান্য অবদান

সম্পাদনা

আলোক সম্বন্ধীয় গবেষণাপত্র

সম্পাদনা

তার কিতাব আল-মানাযিরের পাশাপাশি তিনি আলো সম্পর্কে আরো কিছু গবেষণাপত্র লিখেছেন, তার মধ্যে আছে রিসালা ফি'ল দাও( আলোর উপর নিবন্ধ)। যাতে তিনি ঔজ্জ্বল্য, রংধনু, গ্রহণ, গোধুলি, জ্যোৎস্না নিয়ে আলোচনা করেছেন। ক্যাটোপট্রিক্স এ তার অবদান অনস্বীকার্য।

গতিবিদ্যা

সম্পাদনা

ইবন আল হাইসাম বস্তুর গতি নিয়ে তার কাজে আলোচনা করেছেন। রিসালা ফিল মাকান(স্থানের বিষয়ক গবেষণাপত্র) তিনি 'প্রকৃতি শূণ্যতা ঘৃণা করে' , এরিস্টটলের এ মতের সাথে ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি স্থানের জ্যামিতিক বর্ণনা দেবার চেষ্টা করেছিলেন।

তিনিই প্রথম মধ্যাকর্ষন শক্তি সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন।

মহাকাশবিজ্ঞান

সম্পাদনা

ইবন আল হাইসাম তার জ্যোতির্বিদ্যার সারনির্যাস গ্রন্থে মহাকাশবিজ্ঞানের আলোচনা করেছেন, তার মতে টলেমির মডেল অবশ্যই ভৌত উপায়ে আলোচনা করতে হবে, কোনো বিমূর্ত অনুকল্প হিসেবে নয়—অন্য ভাষায় আরো অনেক মডেল তৈরি করা সম্ভব হতে পারে যা পর্যবেক্ষণের সাথে ভালো মিলে। ইবন আল হাইসাম মকাকাশের বস্তুসমূহের গতিবিধিকে ভৌত নিয়ম দ্বারা ব্যাখ্যা করতে সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটার অর্থ মহাকাশীয় বস্তু সমূহও একই ভৌত নিয়মের অধীন এবং এ নিয়মের অধীনে এদের আলোচনা সম্ভব।

তিনি চাঁদ সম্বন্ধে লিখেছেন মাক্বালা ফি দাও আল-ক্বমার( চাঁদের আলো সম্পর্কে)।

জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত কর্ম

সম্পাদনা

টলেমি সম্পর্কিত সন্দেহ

সম্পাদনা

ইবন আল-হাইসাম তার আল-শুকুক আ'লা বাতলামিউস (টলেমি সম্পর্কে সন্দেহ) তে টলেমির আল-মাজেস্ত এ প্রস্তাবিত সৌরজগত এবং আলোকবিজ্ঞান সংক্রান্ত বিভিন্ন মতের সমালোচনায় অবতীর্ণ হন; এবং এতে বিদ্যমান বিভিন্ন স্ববিরোধী বক্তব্য সমূহের —বিশেষত জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত মতবাদসমূহের— প্রতি নির্দেশ করেন। টলেমির আলমাজেস্ত এ গ্রহসমূহের গতি-প্রকৃতির গাণিতিক প্রকাশ নিয়ে আলোচনা করে। টলেমি নিজেও স্বীকার করেছিলেন যে তার গ্রহের গতি সংক্রান্ত গাণিতিক তত্ত্ব সমূহ সর্বদা একে অপরের সাথে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে ব্যর্থ, তবে তিনি এটাও বলেন যে এ বিশেষ তেমন কোনো ত্রুটি নয়। তবে ইবন আল-হাইসাম এ মডেলগুলোর অন্তর্নিহিত বিরোধগুলোর প্রতি কট্টর সমালোচক রূপে আবির্ভূত হন। উদাহরণস্বরূপ, টলেমির মডেলে কাল্পনিক বিন্দু— বিশেষত ইকুয়ান্ট , উৎকেন্দ্রিক —এবং কাল্পনিক রেখা ও বৃত্তাকার পথের ব্যবহারকে আক্রমণ করেন।

গাণিতিক কর্ম

সম্পাদনা

ইবন আল-হাইসামের গাণিতিক কাজের ভিত্তি ছিলো ইউক্লিড , অ্যাপোলোনিয়াস এর কনিক সেকশনএবং ছাবিত ইবন কুরার কাজের উপর। এবং বীজগনিত এবং জ্যামিতির সম্পর্ক স্থাপনের শুরুর দিকের কাজ করেছিলেন। তার অন্যতম অবদান হচ্ছে গনিতকে ব্যবহার করে ভৌতবিজ্ঞানের আলোচনা। তিনি প্যারাবলয়েডের আয়তন নির্ণয় করতে ক্রমিক স্বাভাবিক সংখ্যার চতুর্থ ঘাতের যোগফল বের করার যে পদ্ধতি বের করেছিলেন তা ইন্টিগ্রাল ক্যাল্কুলাসের অন্যতম একটি ধারণা।

সংখ্যাতত্ত্ব

সম্পাদনা

ইবন আল-হাইসামের সংখ্যাতত্ত্বের অবদানের মধ্যে আছে পারফেক্ট নাম্বার নিয়ে তার কাজ। তার মাক্বালা ফিল তাহলিল ওয়া তারক্বিব (বিশ্লেষণ এবং সংশ্লেষণ এর উপর) এ, তিনিই সম্ভবত এই বিষয়টি সর্বপ্রথম উল্লেখ করেন যে প্রত্যেক জোড় পারফেক্ট সংখ্যা ২ক-১(২-১) যেখানে (২-১) একটি মৌলিক সংখ্যা। এধরণের (২-১) আকৃতির মৌলিক সংখ্যাকে বলে মার্জেন প্রাইম, তবে তিনি এ বিষয়টি প্রমাণ করতে পারেননি। আঠারো শতকে তা অয়লার কর্তৃক প্রমাণিত হয়।

ইবন আল হাইসাম কনগ্রয়েন্স সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করার জন্য একটি উপপাদ্য ব্যবহার করেন যা বর্তমানে উইলসনের উপপাদ্য নামে পরিচিত। তিনি কনগ্রয়েন্স এর সিস্টেম সমাধান করার জন্য দুটি সাধারণ পদ্ধতি দিয়েছেন। তার প্রথম পদ্ধতিতে তিনি উইলসনের উপপাদ্য ব্যবহার করেছিলেন, তার দ্বিতীয় পদ্ধতিতে তিনি চাইনিজ রিমেইন্ডার থিওরেম ব্যবহার করেছেন।

 
লুনস অব আল-হাজেন, দুটি নীল অর্ধচন্দ্রাকৃতি অংশের মোট ক্ষেত্রফল সবুজ সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের সমান।

ক্যালকুলাস

সম্পাদনা

ইবন আল-হাইসাম ক্রমিক পূর্ণসংখ্যার চতুর্থ ঘাতের যোগফল বের করার সাধারণ সূত্র আবিষ্কার করেছিলেন। তবে তিনি তার পদ্ধতিতে যেকোনো ঘাতের যোগফল বের করতে পারতেন। এর মাধ্যমে তিনি প্যারাবলয়েডের আয়তন নির্ণয় করেন। তিনি একটি সাধারণ সূত্র তৈরি না করেই যে কোনো বহুপদীর অবিচ্ছেদ্য সূত্র খুঁজে পেতেন।[৩৬][৩৭]

জ্যামিতি

সম্পাদনা

ইবন আল-হাইসাম ইউক্লিডের পঞ্চম স্বীকার্য, যা সমান্তরাল স্বীকার্য নামে পরিচিত তা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি এর প্রমাণের প্রচেষ্টা করেন একটি বৈপরীত্যের সাহায্যে প্রমাণের মাধ্যমে। তার এ প্রমাণে তিনি ল্যম্বার্ট চতুর্ভূজ নামে পরিচিত একটি ধারণার অবতারণা করেন। যা বরিস আব্রাহামোভিচ রোজেনফিল্ড "ইবন আল হাইসাম- ল্যাম্বার্ট চতুর্ভুজ" হিসেবে বর্ণনা করেন।

প্রাথমিক জ্যামিতিতে তিনি বৃত্তের বর্গকরণের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। যা তিনি পার্শ্ববর্তী চিত্রের অর্ধচন্দ্রাকৃতির অংশের ক্ষেত্রফলের সাহায্যে করার প্রয়াস করেছিলেন, দুটি নীল অর্ধচন্দ্রাকৃতি অংশের মোট ক্ষেত্রফল সবুজ সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের সমান। ।

পরবর্তীতে এ অসম্ভবতা বুঝতে পেরে ছেড়ে দেন।

অন্যান্য কাজ

সম্পাদনা

তার স্থানের উপর আলোচনা গবেষনাপত্রে অ্যারিস্টটলের 'প্রকৃতি শুণ্যতা ঘৃণা করে' এ মতের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি থানের জ্যামিতিক বর্ণনা দিতে চেষ্টা করেছেন। স্থানের বর্ণ্নার প্রয়াসে তিনি বস্তুর তোলের অভ্যন্তরে ত্রিমাত্রিক শুণ্য স্থান কল্পনা করেছেন। পরবর্তীতে তার এ স্থানের জ্যামিতিকীকরণ জনপ্রিয়তা হারায়।

ধর্মতত্ত্ব

সম্পাদনা

ইবন আল-হাইসাম মুসলিম ছিলেন; তবে ঠিক কোন মতের অনুসারী ছিলেন তা ঠিক ভাবে জানা যায় না। তিনি সুন্নি হলে সম্ভবত আশ'আরী, অথবা মু'তাযিলা ধারার অনুসারী হয়ে থাকতে পারেন। তবে আবদুল হামিদ সাবরার মতে তিনি শিয়া হতেও পারেন বলে সম্ভাবনা শোনা যায়।

ইবন আল হাইসাম ইসলামি ধর্মতত্ত্বের উপর একটি কাজে নবুয়তের আলোচনা করেছিলেন। তিনি গাণিতিকভাবে ক্বিবলার দিক নির্ধারণের জন্য একটি গবেষণাপত্র লিখেছিলেন, ক্বিবলার প্রতিই মুসলিমরা তাদের প্রার্থনা( সালাত ) আদায় করে থাকেন।

তার গবেষণা কর্মের নানা অনুষঙ্গেও ধর্মীয় বিশ্বাস ও ধর্মতত্ত্বের প্রতি ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তার টলেমির প্রতি সন্দেহ এর একটি অনুচ্ছেদেঃ

অন্য আরেক গবেষণা পত্রে তিনি বলেনঃ

সম্মানিত শায়খের উক্তি হতে একটি বিষয় স্পষ্ট, তিনি টলেমির বুলিমাত্রকে বিশ্বাস করে নেন, পরীক্ষণ-পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভরতা কিংবা কোনোরূপ প্রমাণ ছাড়াই,শুধুমাত্র নির্ভেজাল অনুসরণ (তাকলিদ) করে থাকেন। নবুয়তী ধারায় বিজ্ঞজনেরা যেভাবে নবিদের কথায় বিশ্বাস করেন ঠিক সেভাবেই, তাঁদের উপর আল্লাহর শান্তি! তবে গনিতজ্ঞরা পূর্ববর্তী বিশেষজ্ঞদের প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের বর্ণনায় এভাবে বিশ্বাস করেন না ।

বস্তুগত সত্য এবং আল্লাহর সম্পর্ক সম্বন্ধে তিনি বলেনঃ

আমি ক্রমাগত সত্য ও জ্ঞানের অনুসন্ধান চালিয়ে গিয়েছি, এটা আমার বিশ্বাসে পরিণত হয়েছিল যে আল্লাহর নৈকট্য ও করুণা পাবার আর কোনো উত্তম পথ নেই, জ্ঞান এবং সত্যের অনুসন্ধান ব্যতীত।

 
কিতাব আল-মানাযিরের ল্যাটিন অনুবাদের প্রচ্ছদ

প্রভাব

সম্পাদনা

ইবন আল-হাইসাম আলোকবিদ্যা, সংখ্যাতত্ত্ব, জ্যামিতি, জ্যোতির্বিদ্যা ও প্রাকৃতিক দর্শনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তার আলোকবিদ্যার কাজে পরীক্ষণ-নির্ভর বিজ্ঞানের পথপ্রদর্শক।

তার প্রধান কাজ কিতাব-আল মানাযির(আলোকবিদ্যা গ্রন্থ) মুসলিম বিশ্বে পরিচিত ছিলো; তবে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে কামাল আল-দীন ফারিসি কর্তৃক বিস্তারিত ব্যাখ্যা লেখার পূর্ব পর্যন্ত সে রকম জনপ্রিয় ছিলো না।সম্ভবত দ্বাদশ শতাব্দী কিংবা ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রথমাংশে কিতাব আল-মানাযিরের সর্বপ্রথম ল্যাটিন অনুবাদ হয়েছিলো। খ্রিষ্টান ইউরোপে এ অনুবাদ ব্যাপক প্রভাব-প্রতিপত্তির বিস্তার করে রেনেসাঁস পণ্ডিতদের মধ্যে, যাদের মধ্যে আছেনঃ লিওনার্দো দা ভিঞ্চি , রজার বেকন , ভিথেলো, ক্রিস্তিয়ান হাইগেনস, রেনে দেকার্ত এবং ইয়োহানেস কেপলার। ক্যাটোপ্ট্রিক্স( দর্পণ সংক্রান্ত আলোকীয় ব্যবস্থার গবেষণা) এ পরাবৃত্তীয় ও গোলীয় দর্পণ, গোলীয় ত্রুটি নিয়ে কাজ করেছেন। ক্যাটোপ্ট্রিক্স এ তার কাজে 'আল-হাজেনের সমস্যা' নামক গাণিতিক সমস্যা বিদ্যমান যার পূর্ণ সমাধান বহুকাল জানা ছিলো না। মুসলিম বিশ্বে তার কাজ পরবর্তীতে ফারসি বিজ্ঞানী কামাল আল-দীন আল-ফারিসির তানকিহ আল-মানাযির (আলোকবিদ্যার[ইবন হাইসাম এর] পুনঃআলোচনা) গ্রন্থের মাধ্যমে অগ্রসর হয়। তিনি প্রায় দুশোতাধিক বই লিখেছিলেন, কিন্তু শুধু ৫৫ টি কাজ বর্তমানে জীবিত আছে। কিছু কিছু কাজের শুধু ল্যাটিন অনুবাদের মধ্যেই সংরক্ষিত হয়েছে।মধ্যযুগে তার বই হিব্রু ল্যাটিন ফার্সি প্রভৃতি ভাষায় অনূদিত হয়েছিলো।

২০১৫ সালে জাতিসংঘ তার শ্রেষ্ঠ কর্ম কিতাব আল-মানাযিরের হাজার বছর পূর্তি উপলক্ষে আন্তর্জাতিক আলো বর্ষ উদ্‌যাপন করে।

স্মৃতি উদ্‌যাপন

সম্পাদনা
 
অ্যাপোলো ১৭ কর্তৃক তোলা লুনার ক্রেটার আলহাজেন এর ছবি

২০১৪ সালে নিল ডিগ্রেস টাইসন এর উপস্থাপনায় কসমসঃ আ স্পেস-টাইম ওডিসি তে ইবন আল-হাইসামের আলোকবিদ্যায় অবদানসমূহের প্রতি নির্দেশ করে একটি পর্ব তৈরি করা হয়। এতে ইবন আল-হাইসামের কণ্ঠ দিয়েছেন আলফ্রেড মলিনা।

তার সম্মানার্থে চাঁদের ইম্প্যাক্ট ক্রেটার আল-হাজেন এর নামকরণ করা হয়েছে; গ্রহাণু ৫৯২৩৯ আলহাজেন এর নামও তার নামেই।তার অবদান স্মরণার্থে আগা খান বিশ্ববিদ্যালয় (পাকিস্তান) তাদের অপথালমালোজির প্রধান আসনের নামকরণ করেছে । ১৯৮২ থেকে ১০ ইরাকি দশ দিনার নোট এবং ২০০৩ সাল হতে ইরাকি ১০,০০০ দিনারের নোটে তার ছবি প্রিন্ট করা হয়েছে।

ব্রিটিশ বিজ্ঞান-ইতিহাসবিদ এইচ.জে.জে উইন্টার ইবন আল-হাইসামের সার্বিক গুরুত্বের পর্যালোচনা করে বলেছেন-

আর্কিমিডিসের মৃত্যুর পর ইবন আল-হাইসাম পর্যন্ত কোনো প্রকৃত মহান পদার্থবিজ্ঞানীর আবির্ভাব ঘটেনি। যদি আমরা আমাদের লক্ষ শুধুমাত্র পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসের প্রতি ; গ্রিক স্বর্ণযুগ হতে ইসলামি পাণ্ডিত্যের জন্ম এর মধ্যকালে বারোশত বছরের দীর্ঘসময় লেগেছে। প্রাচীনত্বের সবচেয়ে মহান বিজ্ঞানীদের পরীক্ষণ প্রবণতার স্পিরিট বসরার এই আরব বিজ্ঞানীর মাঝে আবার তার জীবন ফিরে পেয়েছে।

কাজের তালিকা

সম্পাদনা

মধ্যযুগের জীবনীকারকদের মতে ইবন আল হাইসাম বিভিন্ন বিষয়ের উপর দুইশতাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন, তার মধ্যে অন্তত ৯৬ টি বৈজ্ঞানিক কর্ম জানা আছে। তার বেশিরভাগ কাজ হারিয়ে গেছে কালের গর্ভে, তবে ৫০ টির মতো কাজ এখন আমাদের হাতে এসেছে। এ কাজ গুলোর মধ্যে অধিকাংশ গনিতের উপর, ২৩ টি জ্যোতির্বিজ্ঞানের উপর এবং ১৪ টি আলোকবিজ্ঞানের উপর। সবগুলো কর্মের যথাযথ মূল্যায়ন ও গবেষণা এখনো হয়নি। এদের মধ্যে কিছু প্রধান কাজের তালিকা দেয়া হলো।

  1. আলোকবিদ্যা গ্রন্থ[কিতাব আল-মানাযির](كتاب المناظر)
  2. বিশ্লেষণ ও সংশ্লেষণ(مقالة في التحليل والتركيب)
  3. জ্ঞানের ভারসাম্য(ميزان الحكمة)
  4. আলমাজেস্ত এর সংশোধন(تصويبات على المجسطي)
  5. স্থানের উপর আলোচনা[মাক্বালা ফি'ল মাকান](مقالة في المكان)
  6. দ্রাঘিমাংশের নির্ভুল নির্ণয়(رسالة في الشفق)
  7. অক্ষাংশের নির্ভুল নির্ণয়(لتحديد الدقيق للقطب)
  8. হিসাবের মাধ্যমে ক্বিবলার দিক নির্ণয়(كيفية حساب اتجاه القبلة)
  9. টলেমি সম্বন্ধে সন্দেহ[শুকুক আ'লা বাতালামিউস)(شكوك على بطليموس)
  10. কনিক সেকশনের পরিপূর্ণতার উপর(إكمال المخاريط)
  11. তারকারাজির দর্শনের উপর(رؤية الكواكب)
  12. বৃত্তের বর্গীকরণ সম্বন্ধে(مقالة فی تربیع الدائرة)
  13. দহন গোলকের উপর(لمرايا المحرقة بالدوائر)
  14. মহাবিশ্বের কনফিগারেশন সম্বন্ধে(تكوين العالم)
  15. তারার ঔজ্জ্বলের উপর(مقالة في ضوء النجوم)
  16. জ্যোৎস্নার উপর (مقالة في ضوء القمر)
  17. ছায়াপথ সম্বন্ধে(مقالة في درب التبانة)
  18. ছায়ার প্রকৃতি সম্বন্ধে(كيفيات الإظلال)
  19. আলমাজেস্তের উপর সন্দেহের সমাধান((تحليل شكوك حول الجست))
  20. ক্বিবলার দিক সম্বন্ধে(تجاه القبلة)
  21. প্রাণীর মানসের উপর সুরের প্রভাব সম্বন্ধে গবেষণাপত্র(أثير اللحون الموسيقية في النفوس الحيوانية)
  22. স্থানের উপর গবেষণাপত্র[রিসাল ফি'ল মাকান](رسالة في المكان)
  23. আলোর উপর গবেষণাপত্র(سالة في الضوء )
  24. রংধনু ও বর্ণবলয় সম্বন্ধে(مقالة في قوس قزح)
  25. সাতটি গ্রহের প্রতিটির গতির মডেল(نماذج حركات الكواكب السبعة)
  26. ইউক্লিডের উৎপত্তির ব্যাখ্যা(شرح أصول إقليدس)

হারিয়ে যাওয়া কর্ম

সম্পাদনা
  1. দহন গোলকের উপর গবেষণাপত্র
  2. দৃষ্টিশক্তির প্রকৃতি এবং এর দ্বারা দর্শনানুভূতি উপলব্ধির প্রক্রিয়ার উপর আলোচনা
  3. একটি বই যাতে ইউক্লিড এবং টলেমির আলোকবিদ্যার সারাংশ আলোচনা করেছি আমি, যাতে আমি প্রাথমিক আলোচনার ধারণা যুক্ত করেছি যা টলেমির বইতে অনুপস্থিত

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Ālī, Ema Ākabara (১৯০০)। Bijñāne Musalamānera dāna: Aṅkaśāstra, ekādaśa śatābdī (3. saṃskaraṇa)। Mālika Lāibrerī। পৃষ্ঠা ২০। 
  2. Publishers, HarperCollins। "The American Heritage Dictionary entry: Ibn al-Haytham"www.ahdictionary.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-১৫ 
  3. Vernet ১৯৯৬, পৃ. ৭৮৮।
  4. Vernet, J. (২০১২-০৪-২৪)। "Ibn al-Hayt̲h̲am" Encyclopaedia of Islam, Second Edition (ইংরেজি ভাষায়)। Brill। 
  5. Simon, Gérard (২০০৬-০৪-০১)। "The Gaze in Ibn al-Haytham" The Medieval History Journal (১): ৮৯–৯৮। আইএসএসএন 0971-9458ডিওআই:10.1177/097194580500900105 
  6. Esposito, John L. (২০০০-০৪-০৬)। The Oxford History of Islam (ইংরেজি ভাষায়)। Oxford University Press। পৃষ্ঠা ১৯২আইএসবিএন 978-0-19-988041-6 
  7. "OPTICS: The science of "aspects" or "appearances" (ʿelm al-manāẓer), as optics was called in the Islamic Middle Ages, has a long and impressive history in both Arabic and Persian."www.iranicaonline.org। ২০১১-০৪-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-০১ 
  8. Tbakhi, Abdelghani; Amr, Samir S. (২০০৭)। "Ibn Al-Haytham: Father of Modern Optics"Annals of Saudi Medicine২৭ (৬): ৪৬৪–৪৬৭। আইএসএসএন 0256-4947ডিওআই:10.5144/0256-4947.2007.464পিএমআইডি 18059131পিএমসি 6074172  
  9. "International Year of Light: Ibn al Haytham, pioneer of modern optics celebrated at UNESCO"UNESCO (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৫-০৯-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-০১ 
  10. Selin ২০০৮: Impact of Science on Society (ইংরেজি ভাষায়)। United Nations Educational, Scientific and Cultural Organization। ১৯৭৬। পৃষ্ঠা ২৬–২৭। , Adamson, Peter (২০১৬)। Philosophy in the Islamic World (ইংরেজি ভাষায়)। Oxford University Press। পৃষ্ঠা ৭৭। আইএসবিএন 978-0-19-957749-1 
  11. Rashed, Roshdi (২০১৭-০৭-২০)। Ibn al-Haytham's Geometrical Methods and the Philosophy of Mathematics: A History of Arabic Sciences and Mathematics Volume 5 (ইংরেজি ভাষায়)। Routledge। পৃষ্ঠা ৬৩৫। আইএসবিএন 978-1-351-68600-6 
  12. Adamson, Peter (২০১৬)। Philosophy in the Islamic World (ইংরেজি ভাষায়)। Oxford University Press। পৃষ্ঠা ৭৭আইএসবিএন 978-0-19-957749-1 
  13. Baker, David B. (২০১২-০১-১৩)। The Oxford Handbook of the History of Psychology: Global Perspectives (ইংরেজি ভাষায়)। Oxford University Press, USA। পৃষ্ঠা ৪৪৫আইএসবিএন 978-0-19-536655-6 
  14. Ackerman ১৯৯১, পৃ. [পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন]
  15. Toomer, G. J. (১৯৬৪)। "Review of Ibn al-Haythams Weg zur Physik"Isis৫৫ (৪): ৪৬৩–৪৬৫। আইএসএসএন 0021-1753 
  16. "International Year of Light – Ibn Al-Haytham and the Legacy of Arabic Optics"www.light2015.org। ২০১৪-১০-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-২৬ 
  17. Gorini, Rosanna (২০০৩)। "Journal of the International Society for the History of Islamic Medicine" (পিডিএফ)ishim.net (৪): ৫৩–৫৫। 
  18. "The 'first true scientist'" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০৯-০১-০৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-১৫ 
  19. O'Connor, J. J.; Robertson, E. F. (১৯৯৯)। "Ibn al-Haytham – Biography"Maths History (ইংরেজি ভাষায়)। Scotland: School of Mathematics and Statistics: University of St Andrews। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-১৫ 
  20. Corbin ১৯৯৩, পৃ. ১৪৯।
  21. Sabra, A. I.; Sabra, Abd al-Hamid (১৯৯৪)। Optics, Astronomy, and Logic: Studies in Arabic Science and Philosophy (ইংরেজি ভাষায়)। Variorum। পৃষ্ঠা ১৯৭। আইএসবিএন 978-0-86078-435-7 
  22. Boyer, Carl B. (Carl Benjamin) (১৯৫৯)। The rainbow from myth to mathematics। Internet Archive। New York, T. Yoseloff। পৃষ্ঠা ৮০। 
  23. Lindberg ১৯৬৭, পৃ. ৩৩১:"Peckham continually bows to the authority of Alhazen, whom he cites as "the Author" or "the Physicist"."
  24. Ptolemy; Smith, A. Mark (১৯৯৬)। Ptolemy's Theory of Visual Perception: An English Translation of the Optics (ইংরেজি ভাষায়)। American Philosophical Society। পৃষ্ঠা ৫৭। আইএসবিএন 978-0-87169-862-9 
  25. Vernet ১৯৯৬, পৃ. ৭৮৮; "He is one of the principal Arab mathematicians and, without any doubt, the best physicist." Sabra ২০০৭, Kalin, Ayduz এবং Dagli ২০০৯; "Ibn al-Ḥaytam was an eminent eleventh-century Arab optician, geometer, arithmetician, algebraist, astronomer, and engineer." Dallal ১৯৯৯; "Ibn al-Haytham (d. 1039), known in the West as Alhazan, was a leading Arab mathematician, astronomer, and physicist. His optical compendium, Kitab al-Manazir, is the greatest medieval work on optics."
  26. Al-Khalili, Jim (২০১৫-০২-১১)। "In retrospect: Book of Optics"Nature (ইংরেজি ভাষায়)। ৫১৮ (৭৫৩৮): ১৬৪–১৬৫। আইএসএসএন 1476-4687ডিওআই:10.1038/518164a 
  27. Crombie, A.C. (১৯৭১)। Robert Grosseteste and the Origins of Experimental Science,1100-1700। University of Oxford: Clarendon Press। আইএসবিএন 9780198241898 
  28. "ALhazen : Library of Congress Citations"web.archive.org। ২০০৭-০৯-২৭। Archived from the original on ২০০৭-০৯-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-২৬ 
  29. Lindberg, David C., (১৯৭৬)। Theories of vision from al-Kindi to Kepler। Chicago: University of Chicago Press। পৃষ্ঠা 73। আইএসবিএন 0-226-48234-0ওসিএলসি 1676198 
  30. Lindberg, David C., (১৯৭৬)। Theories of vision from al-Kindi to Kepler। Chicago: University of Chicago Press। পৃষ্ঠা 74। আইএসবিএন 0-226-48234-0ওসিএলসি 1676198 
  31. Lindberg, David C., (১৯৭৬)। Theories of vision from al-Kindi to Kepler। Chicago: University of Chicago Press। পৃষ্ঠা 76। আইএসবিএন 0-226-48234-0ওসিএলসি 1676198 
  32. Kelley, David H. (২০০৫)। Exploring ancient skies : an encyclopedic survey of archaeoastronomy। Milone, E. F., 1939-। New York: Springer। আইএসবিএন 0-387-95310-8ওসিএলসি 62767201 
  33. Wade, Nicholas J; Finger, Stanley (২০০১-১০-০১)। "The Eye as an Optical Instrument: From Camera Obscura to Helmholtz's Perspective"Perception (ইংরেজি ভাষায়)। ৩০ (১০): ১১৫৭–১১৭৭। আইএসএসএন 0301-0066ডিওআই:10.1068/p3210 
  34. Eder, Josef Maria, 1855–1944,। History of photography। New York। আইএসবিএন 0-486-23586-6ওসিএলসি 4005270 
  35. Alhazen, 965-1039. (১৯৮৯)। The Optics of Ibn al-Haytham. Books I-III, On direct vision। Sabra, A. I.। London: Warburg Institute, University of London। আইএসবিএন 0-85481-072-2ওসিএলসি 21530166 
  36. Katz, Victor J. (১৯৯৫-০৬-০১)। "Ideas of Calculus in Islam and India"। Mathematics Magazine৬৮ (৩): ১৬৩–১৭৪। আইএসএসএন 0025-570Xজেস্টোর 2691411ডিওআই:10.1080/0025570X.1995.11996307 
  37. "Integral Calculus – an overview | ScienceDirect Topics"www.sciencedirect.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-১৭ 

গ্রন্থপঞ্জি

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা