স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র
স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র একধরনের দেশ বা রাষ্ট্র যার ভূখণ্ড কোনো সমুদ্রের সাথে সংযুক্ত নয় কিংবা তার উপকূলরেখার পুরোটাই অন্তর্বাহী হ্রদের উপর অবস্থিত। বর্তমানে বিশ্বে ৪৪টি বহুল স্বীকৃত স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র রয়েছে, যার মধ্যে দুটি রাষ্ট্র দ্বি-স্থলবেষ্টিত (উজবেকিস্তান ও লিশটেনস্টাইন)। এছাড়াও তিনটি সীমিত স্বীকৃতিপ্রাপ্ত স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র রয়েছে। কাজাখস্তান বিশ্বের বৃহত্তম স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র, অন্যদিকে ইথিওপিয়া বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র।[১][২]
সাধারণত কোনো রাষ্ট্র স্থলবেষ্টিত হলে সে এক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয় এবং আন্তর্জাতিক পানির সাথে সংযোগ থাকলে এটি এড়ানো যায়। এই জন্যই ইতিহাসজুড়ে ছোটবড় নির্বিশেষে বিভিন্ন রাষ্ট্র উন্মুক্ত জলরাশি লাভের জন্য লড়াই করেছিল। স্থলবেষ্টিত হওয়ার জন্য অর্থনৈতিক প্রতিকূলতাকে আরও লাঘব হয় যায় বা তীব্রতর হয়ে যায়, যা উন্নয়নের মাত্রা, পার্শ্ববর্তী বাণিজ্যপথ, বাণিজ্যের স্বাধীনতা, ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। ইউরোপের কিছু স্থলবেষ্টিত দেশ যথেষ্ট সমৃদ্ধ, যেমন অস্ট্রিয়া, অ্যান্ডোরা, ভ্যাটিকান সিটি, লিশটেনস্টাইন, লুক্সেমবার্গ, সান মারিনো ও সুইজারল্যান্ড। এর মধ্যে লুক্সেমবার্গ ব্যতীত সমস্ত দেশ বৈশ্বিক রাজনৈতিক সমস্যায় অনেকসময় নিরপেক্ষতা পালন করে।
জাতিসংঘ এই ৪৪টি স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্রের মধ্যে ৩২টি রাষ্ট্রকে স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ (এলএলডিসি) বলে চিহ্নিত করেছে, যার মধ্যে অনেক দেশই আফ্রিকা, এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার অন্তর্গত।[৩] নিম্ন মানব উন্নয়ন সূচকবিশিষ্ট (এইচডিআই) ১২টি দেশের মধ্যে ৯টি দেশ স্থলবেষ্টিত।[৪] বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উদ্যোগ এইধরনের সমস্যা থেকে সৃষ্ট বৈষম্যকে কমানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে, যেমন জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ১০, যা ২০৩০ সালের মধ্যে বৈষম্য অনেকটা কমানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে।[৫]
ইতিহাস
সম্পাদনা১৯৯০ সালে বিশ্বে কেবল ৩০টি স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র ছিল। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন, চেকোস্লোভাকিয়া ও যুগোস্লাভিয়া রাষ্ট্রের পতন এবং আর্তসাখ প্রজাতন্ত্র (সীমিত স্বীকৃত), দক্ষিণ ওসেটিয়া (সীমিত স্বীকৃতিপ্রাপ্ত), ইরিত্রিয়া, মন্টিনেগ্রো, কসোভো (সীমিত স্বীকৃতিপ্রাপ্ত), দক্ষিণ সুদান, লুহানস্ক (সীমিত স্বীকৃতিপ্রাপ্ত) ও দোনেৎস্ক (সীমিত স্বীকৃতিপ্রাপ্ত) রাষ্ট্রের স্বাধীনতার ফলে ১৬টি আরও স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র গড়ে উঠেছিল।
২০২২-এ ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের অংশ হিসাবে রাশিয়া লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক দখল করেছিল, যার ফলে এই দুই স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্রের আর অস্তিত্ব রইল না। ২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বরে আজারবাইজান সীমিত স্বীকৃতিপ্রাপ্ত আর্তসাখ প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়েছিল এবং এর ফলস্বরূপ আজারবাইজান এই রাষ্ট্র জয় করেছিল।[৬] ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারিতে আর্তসাখ সরকার সরকারিভাবে বিলুপ্ত হয়েছিল এবং তার অধীনস্থ নাগোরনো-কারাবাখ আজারবাইজানের অন্তর্গত হয়েছিল।[৭]
তালিকা
সম্পাদনাটীকা:
- i স্থলবেষ্টিত হলেও অন্তর্বাহী হ্রদ কাস্পিয়ান সাগরের সঙ্গে উপকূলরেখা রয়েছে।
- ii সীমিত স্বীকৃতিপ্রাপ্ত রাষ্ট্র।
- iii একক রাষ্ট্র দ্বারা স্থলবেষ্টিত।
- iv দ্বি-স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র।
এশিয়ার দেশ
সম্পাদনানেপাল, ভুটান, আফগানিস্তান, লাওস, মঙ্গোলিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তান।
আফ্রিকার দেশ
সম্পাদনামালি, নাইজার, উগান্ডা, বতসোয়ানা, জিম্বাবুয়ে, রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি, মালাউই, জাম্বিয়া, ইথিওপিয়া, চাদ, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, লেসোথো, বুর্কিনা ফাসো, ইসোয়াতিনি, দক্ষিণ সুদান।
ইউরোপের দেশ
সম্পাদনাঅস্ট্রিয়া, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, সুইজারল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র, কসোভো, মলদোভা, বেলারুশ, স্লোভাকিয়া, সার্বিয়া, ভ্যাটিকান সিটি, অ্যান্ডোরা, উত্তর ম্যাসিডোনিয়া, সান মারিনো, লিশটেনস্টাইন, লুক্সেমবার্গ, হাঙ্গেরি (ইউরোপের বৃহত্তম স্থলবেষ্টিত দেশ।)
দক্ষিণ আমেরিকা
সম্পাদনাটীকা
সম্পাদনা- ↑ কোনো দেশ কেবল অন্যান্য স্থলবেষ্টিত দেশ দ্বারা আবদ্ধ হলে তাকে "দ্বি-স্থলবেষ্টিত" রাষ্ট্র বলা হয়।
- ↑ ভারত পুরো কাশ্মীর অঞ্চলকে নিজের অংশ হিসাবে দাবি করে, যার সঙ্গে আফগানিস্তানের সীমান্ত রয়েছে। সেই হিসাবে ভারতকেও আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশ বলা হয়। কিন্তু আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী কাশ্মীর অঞ্চল পাকিস্তানের অধীনস্থ হওয়ার জন্য ভারতের নাম এখানে দেওয়া হয়নি।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Largest LLC"। United Nations Conference on Trade and Development।
- ↑ "Landlocked country | Meaning, Examples, Maps, List, & Navies | Britannica"। ৫ আগস্ট ২০২৩।
- ↑ Paudel, R. C. (২০১২)। "Landlockedness and Economic Growth: New Evidence" (পিডিএফ)। Growth and Export Performance of Developing Countries: Is Landlockedness Destiny?। Canberra, Australia: Australian National University। পৃষ্ঠা 13–72।
- ↑ Faye, M. L.; McArthur, J. W.; Sachs, J. D.; Snow, T. (২০০৪)। "The Challenges Facing Landlocked Developing Countries"। Journal of Human Development। 5 (1): 31–68 [pp. 31–32]। এসটুসিআইডি 10442596। ডিওআই:10.1080/14649880310001660201।
- ↑ "Goal 10 targets"। UNDP (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-১১-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-২৩।
- ↑ How Azerbaijan Found Victory, and Armenia Defeat, in Nagorno-Karabakh
- ↑ Nagorno-Karabakh Republic will cease to exist from Jan 1 2024 – Nagorno-Karabakh authorities