তাজিকিস্তান
তাজিকিস্তান (/tɑːˈdʒiːkɪstɑːn/ ( ), /tə-,
প্রজাতন্ত্রী তাজিকিস্তান | |
---|---|
নীতিবাক্য: নাই | |
রাজধানী ও বৃহত্তম নগরী বা বসতি | দুশান্বে |
সরকারি ভাষা | ফার্সি (তাজিক) |
ধর্ম |
|
সরকার | Unitary state |
ইমোমালি রহমান | |
কোখির রাসুলজোদা | |
স্বাধীনতা | |
• পানি (%) | ০.৩ |
জনসংখ্যা | |
• ২০১৮ আনুমানিক | ৮,৬১০,০০০[১] (৯৭ তম) |
• ২০১০ আদমশুমারি | ৭,৫৪৬,৫০০ |
• ঘনত্ব | ৪৮.৬/কিমি২ (১২৫.৯/বর্গমাইল) (১৫৫ তম) |
জিডিপি (পিপিপি) | ২০১৭ আনুমানিক |
• মোট | $২৭.৮০২ billion[২] (১২৮ তম) |
• মাথাপিছু | $৩,১৪৬[২] |
জিডিপি (মনোনীত) | ২০১৭ আনুমানিক |
• মোট | $৭.২৪২ বিলিয়ন[২] (১৩৬ তম) |
• মাথাপিছু | $৮১৯[২] |
জিনি (2009) | 30.8 মাধ্যম |
মানব উন্নয়ন সূচক (2015) | ০.৬২৭[৩] মধ্যম · 129th |
মুদ্রা | সমোনি (TJS) |
সময় অঞ্চল | ইউটিসি+৫ (TJT) |
গাড়ী চালনার দিক | right |
কলিং কোড | +৯৯২ |
ইন্টারনেট টিএলডি | .tj |
দেশের অধিকাংশ জনগণ তাজিক জাতির লোক। এরা তাজিক নামের একটি ফার্সি জাতীয় ভাষায় কথা বলে। ১৯২৯ সালে তাজিকিস্তান সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি অংশে পরিণত হয়। ১৯৯১ সালে এটি স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতার ঠিক পর পরই দেশটিতে সাম্যবাদী সরকার ও বিরোধী দলগুলির মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের জুন মাসে দুই পক্ষ একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে। যুদ্ধ অবসানের পর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বৈদেশিক সাহায্য দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখতে শুরু করে। তবে অন্যান্য মধ্য এশীয় দেশগুলোর মতনই বিভিন্ন এনজিও দেশটিতে স্বেচ্ছাচারী শাসন ব্যবস্থা (প্রেসিডেন্ট ইমোমালি রাহমন ১৯৯৪ সাল হতে দেশটির একচ্ছত্র অধিপতি হিসেবে শাসন করে আসছেন), ধর্মীয় স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা, দুর্নীতি এবং ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়ে আসছে।
তাজিকিস্তান জাতিসংঘ, সিআইএস, ওএসসিই, ওআইসি, ইসিও, এসসিও এবং সিএসটিও এর সদস্য।
নামকরণ
সম্পাদনাতাজিকিস্তানের শাব্দিক অর্থ তাজিকদের আবাসস্থল। যেখানে ফার্সি স্থান অনুসর্গ ব্যবহৃত যার অর্থ জায়গা বা "দেশ"[৫] ।বিংশ শতাব্দীর শেষ কয়েকটি দশকে সোভিয়েত প্রশাসনের অধীনে চলে যাওয়ার পরই এ নামটি তাজিকদের জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। এর আগে কখনো ইরানের কোনো অংশের জন্য অথবা ইরানি ভাষাভাষী লোকদের জন্য এ শব্দটি ব্যবহৃত হতো। সোভিয়েত প্রশাসনই মধ্য এশিয়ার তাজিক জনগণের জন্য এ শব্দটি নির্বাচন করে।
ইতিহাস
সম্পাদনাতাজিকিস্তান নামে যে স্থানটি বর্তমানে পরিচিত তার পত্তন হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০০ বছর আগে। তখন থেকে এ ভূখণ্ডটি বিভিন্ন সম্রাটের শাসনাধীনে ছিল। বিশেষ করে পারস্যের সম্রাটদের অধীনে এ ভূখণ্ডটি থাকে দীর্ঘ সময় ধরে। বুদ্ধ-পূর্ব যুগে আধুনিক তাজিকিস্তান জারাভশান ভ্যালির অন্তর্ভুক্ত হয়ে কামবোজার অংশ ছিল। আর তখন কামবোজা সাম্রাজ্যটি শাসন করত পারস্যের আচেহমানিদ সম্রাটরা। আলেকজান্ডারের হাতে পারস্য সম্রাটদের পরাজিত হওয়ার পর এ অঞ্চলটি গ্রিকো-ব্যাকট্রিয়ান সাম্রাজ্যের উত্তরাংশ হিসেবে পরিগণিত হয়।[৪]
খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীর শেষাংশ থেকে শুরু করে দ্বিতীয় শতাব্দীর প্রথমাংশ পর্যন্ত এটি ব্যাকট্রিয়ান সাম্রাজ্যের অংশ হিসেবেই থাকে। এরপর এটা হয়ে যায় তুর্কিস্তানের অংশ। তারপর কিছু দিন এটি চীন সাম্রাজ্যের অংশ হিসেবে গণ্য হয়।[৪]
সপ্তম খ্রিষ্টাব্দে আরবরা এ অঞ্চলে ইসলাম নিয়ে আসেন। সম্রাট সামানিড তখন আরবদের উচ্ছেদ করেন। সে সময় তিনি সমরকন্দ ও বোখারাকে আরো বড় ও সমৃদ্ধ করে তোলেন। এর পর থেকে উভয় শহর তাজিকদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গণ্য হতে থাকে (উভয় শহরই এখন উজবেকিস্তানের অন্তর্গত)। এরপর মঙ্গোলরাও কিছু সময়ের জন্য এর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। এমনিভাবে বিভিন্ন সাম্রাজ্যের অধীনে কখনো এই অংশের সাথে কখনো ওই অংশের সাথে যুক্ত হয়ে এগিয়ে গেছে তাজিকিস্তানের ইতিহাস।[৪]
রাশিয়ার উপস্থিতি
সম্পাদনাঊনবিংশ শতাব্দীতে রাশিয়ার সম্রাটরা মধ্য এশিয়ায় তাদের সাম্রাজ্য বিস্তার করতে থাকেন। ১৮৬৪ এবং ১৮৮৫ সালের মধ্যে রাশিয়া উত্তরে বর্তমান কাজাখস্তান, পশ্চিমে কাস্পিয়ান সাগর পর্যন্ত এবং দক্ষিণে আফগানিস্তান সীমান্ত পর্যন্ত নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। ১৯১৭ সালে এ অঞ্চলে যখন রাশিয়ার ক্ষমতা কমিউনিস্টদের হাতে চলে যায়, তখন এ অঞ্চলের তুর্কিস্তানের অংশের ক্ষমতা দখল করে নেয় বলশেভিকরা। এ ক্ষোভ থেকেই বাসমাচি গোষ্ঠী গেরিলা কার্যক্রম শুরু করে। পরে তারা বলশেভিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং সোভিয়েত শাসনাধীন খিবা ও বোখারা জয় করে নেয়। কিন্তু এরপর বিভিন্ন কারণে তাদের এই স্বাধীনতা আন্দোলন ব্যর্থ হয়ে পড়ে। চার বছরব্যাপী এ যুদ্ধের পর বলশেভিক সৈন্যরা তাজিকিস্তানের গ্রাম ও মসজিদগুলো পুড়িয়ে দেয় এবং লোকজনকে ব্যাপক হারে গ্রেফতার করে। এর পর থেকে সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের প্রচারণা শুরু করে। এ সময় তারা ধর্মপ্রাণ মুসলমান, ইহুদি ও খ্রিস্টানদের নির্যাতন করতে থাকে। একই সময় মসজিদ, চার্চ ও সিনাগগগুলোও বন্ধ করে দেয়া হয়।[৪]
সোভিয়েত তাজিকিস্তান
সম্পাদনা১৯২২ সালেই বাসমাচি আন্দোলন স্তব্ধ হয়ে গেলেও সোভিয়েত সরকার প্রতিবিপ্লব দমন করার জন্য মধ্য এশিয়াকে জাতিভিত্তিক পুনর্গঠন করার লক্ষ্যে উজবেকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তান নামে দু’টি ইউনিয়ন প্রজাতন্ত্র স্থাপন করে। এ সময় তাজিক ও কিরগিজ নামের দুইটি স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্র স্থাপিত হলেও এগুলো ছিল উজবেক সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের অংশ। ১৯২৯ সালে তাজিকিস্তানকে পূর্ণাঙ্গ ইউনিয়ন সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে পরিণত করা হয়। এ সময়ে জীবনযাত্রার মান, শিক্ষা এবং শিল্প সব দিক দিয়েই তাজিকিস্তান সোভিয়েতের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোর পেছনে পড়ে যায়। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এ অবস্থাই চলতে থাকে। ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন তাজিকিস্তান থেকে তার নিয়ন্ত্রণ গুটিয়ে নেয় এবং তাজিকিস্তান নিজেদের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ১৯৯১ সালে ইরান সর্বপ্রথম তাজিকিস্তানকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তারাই প্রথম তাজিক রাজধানী দুশানবেতে তাদের দূতাবাস স্থাপন করে।[৪]
স্বাধীনতা-পরবর্তী অবস্থা
সম্পাদনাস্বাধীনতা পাওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই তাজিকিস্তানের গোত্রগত দলাদলির কারণে দেশটি গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় অমুসলিম নাগরিক বিশেষ করে ইহুদি এবং রুশরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। নির্যাতন ও দারিদ্র্যের আশঙ্কা এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির আশায় তারা পাশের অন্যান্য প্রাক্তন সোভিয়েত দেশে পালিয়ে যায়। ১৯৯৪ সালের নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এমোমালি রেহমান তার পূর্বসূরি আব্দুল মালিক আব্দুল্লাহ জানবকে পরাজিত করে ক্ষমতায় আসেন। ১৯৯৯ সালের নির্বাচনে রেহমান ৯৮ শতাংশ ভোটে এবং ২০০৬ সালের নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো ৭৯ শতাংশ ভোট নিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন।[৪]
রাজনীতি
সম্পাদনাতাজিকিস্তানের রাজনীতি একটি রাষ্ট্রপতিশাসিত প্রজাতন্ত্র কাঠামোয় সংঘটিত হয়। রাষ্ট্রপতি হলেন একাধারে রাষ্ট্রের প্রধান ও সরকারপ্রধান। আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সরকার এবং ৬৩ সদস্যবিশিষ্ট দ্বিকাক্ষিক আইনসভা উভয়ের উপর ন্যস্ত। ২০০৩ সালের নতুন সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ৭ বছর মেয়াদের জন্য জনগনের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন। ২০০৬ সালে এমোমালি রাহমন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তবে তিনি ১৯৯৪ সাল থেকেই দেশটির শাসক। প্রধানমন্ত্রীর পদের তেমন কোন ক্ষমতা নেই। সংবিধান অনুসারে বিচার বিভাগ সরকার থেকে স্বাধীন।
প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ
সম্পাদনাভূগোল
সম্পাদনাতাজিকিস্তান স্থলবেষ্টিত এবং আয়তনে মধ্য এশিয়ার সবচেয়ে ক্ষুদ্রত্তম রাষ্ট্র। এটি মূলত ৩৬° উত্তর অক্ষাংশ থেকে ৪১° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৬৭° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে ৭৫° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। পামির পর্বতাঞ্চল দ্বারা বেষ্টিত দেশটির পঞ্চাশ শতাংশেরও বেশি জায়গা সমুদ্র থেকে ৩০০০ মিটারেরও বেশি উচ্চতায় অবস্থিত। দেশটির গুরুত্বপূর্ণ নিম্নভূমির মধ্যে রয়েছে উত্তরাঞ্চলের ফের্গানা উপত্যকা এবং দক্ষিণাঞ্চলের কোফারনিহন ও ভাক্শ নদীর উপত্যকা সমূহ যেটি থেকে আমু দরিয়ার উৎপত্তি হয়েছে। কোফারনিহন উপত্যকার দক্ষিণের ঢালে রাজধানী দুশানবে অবস্থিত।
তাজিকিস্তানের ৯০%-এরও বেশি এলাকা পর্বতময়। পামির পর্বতমালা এবং আলায় পর্বতমালা দুইটি প্রধান পর্বতমালা, এবং এগুলির হিমবাহ থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন পার্বত্য জলধারা ও নদী প্রাচীনকাল থেকে ঐ অঞ্চলের খামারভূমিতে সেচ কাজে ব্যবহার করা হয়ে এসেছে। তাজিকিস্তানের উত্তর প্রান্তে মধ্য এশিয়ার আরেক প্রধান পর্বতমালা তিয়ান শান পর্বতমালার একাংশ চলে গেছে। পর্বতগুলির উত্তরে ও দক্ষিণে রয়েছে দুইটি নিম্নভূমি অঞ্চল এবং এখানেই তাজিকিরা ব্যাপক পরিমাণে বাস করে।
মধ্য এশিয়ার সবচেয়ে জনবহুল এলাকা সির দরিয়া নদীবিধৌত ফের্গানা উপত্যকার একাংশ উত্তর তাজিকিস্তানে পড়েছে। এই দীর্ঘ উপত্যকাটি উত্তরে কুরামিন পর্বতমালা ও দক্ষিণে তুর্কেস্তান পর্বতমালার মধ্যে অবস্থিত।
দক্ষিণের নিম্নভূমি এলাকাটিতে আমু দরিয়া ও পাঞ্জ নদী প্রধান দুইটি নদী। নদী দুইটি আফগানিস্তানের সাথে সীমান্ত চিহ্নিত করে আছে। এছাড়া দেশটিতে ১০ কিলোমিটার এর চেয়ে দীর্ঘ এরকম প্রায় ৯০০ এর বেশি নদ-নদী রয়েছে।
অর্থনীতি
সম্পাদনামধ্য এশিয়ার দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোর অন্যতম হচ্ছে তাজিকিস্তান। দেশটির বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থানও তেমন একটা সুবিধাজনক স্থানে নেই। অর্থনৈতিক খাতে ব্যাপক দুর্নীতি, সংস্কারের ক্ষেত্রে অপূর্ণতা এবং অব্যবস্থাপনাকেই এর জন্য মূল দায়ী হিসেবে ধারণা করা হয়। ২০০১ সালে দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা এতটাই খারাপের দিকে চলে যায় যে, সে বছরের ২১ আগস্ট রেড ক্রস দেশটিকে দুর্ভিক্ষ আক্রান্ত দেশ বলে ঘোষণা করে দেশটির জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য প্রার্থনা করে। পরবর্তী বছরগুলোতে তাজিকিস্তান কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে এবং পার্শ্ববর্তী তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তানের চেয়ে ভালো অবস্থানে পৌঁছে যায়।[৪]
সম্প্রতি দেশটিতে আনজাব টানেল নির্মাণ শেষ হয়েছে, যা পর্বতময় দেশটির উত্তরাঞ্চলের সাথে রাজধানীর যোগাযোগকে সহজ করবে। এ টানেলটি ইরান ও আফগানিস্তানের সাথে দেশটির যোগাযোগের জন্য রাস্তার অংশ হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। আর এ বিষয়টি দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থাকে আরো সমৃদ্ধ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় তাজিকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে একটি ব্রিজ নির্মিত হয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার সাথে তাজিকিস্তানের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে মজবুত করতে সাহায্য করবে। দেশটির অর্থ খাতের প্রধান ভূমিকা পালনকারী বিষয়গুলো হচ্ছে অ্যালুমিনিয়াম ও তুলা এবং প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স। রাষ্ট্র পরিচালিত অ্যালুমিনিয়াম ফ্যাক্টরি ট্যালকো মধ্য এশিয়ার বৃহত্তম অ্যালুমিনিয়াম কোম্পানি। এ ছাড়া দেশটি হাইড্রোইলেকট্রিক শক্তি উৎপাদনে বিশ্বে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। এ খাতে দেশটিতে রাশিয়া, চীন ও ইরান অর্থ বিনিয়োগ করছে।[৪]
তাজিকিস্তানের অর্থনীতিতে প্রবাসী বিশেষ করে রাশিয়াতে বসবাসকারী তাজিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স বড় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। গত কয়েক বছরের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে এর অবদান অসামান্য। বৈধ আয়ের পাশাপাশি তাজিকিস্তানে অবৈধ অর্থের আমদানিও রয়েছে বেশ। মাদক উৎপাদন ও পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে তাজিকিস্তান এ খাতে প্রচুর অর্থ আয় করে থাকে। এ অর্থ তাজিকিস্তানের সরকার প্রশাসনকেও প্রভাবিত করে থাকে। সরকারের প্রভাবশালী কয়েকজন সদস্য এর সাথে জড়িত থাকায় দেশটি মাদকচক্র থেকে মুক্ত হতে পারছে না। তার পরও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রচেষ্টায় সাম্প্রতিক সময়ে এ প্রবণতা কিছুটা কমেছে বলে দাবি করা হচ্ছে।[৪]
জনসংখ্যা
সম্পাদনা৮,৭৩৪,৯৫১[৬] জনসংখ্যার দেশ তাজিকিস্তানে তাজিক ভাষাভাষী লোকরাই মূলত দেশটির মূল অধিবাসী। দেশের জনসংখ্যার বেশির ভাগটাই তাদের দখলে। এ ছাড়া দেশটিতে রাশান ও উজবেকও রয়েছে যৎসামান্য। বাদাখশানের পামিরি, কিছুসংখ্যক যাঘনোবি এবং নগণ্য সংখ্যক ইসমায়িলিরাও বৃহৎ তাজিক জনগোষ্ঠির অন্তর্গত বলে ধরা হয়। তবে তাজিকিস্তানে বসবাসকারী সবাইকেই তাজিক বলেই পরিচয় দেয়া হয়। দেশটির দশ লাখ লোক বর্তমানে অন্য দেশে কর্মরত রয়েছে।[৪]
ভাষা
সম্পাদনাতাজিক ভাষা ও রুশ ভাষা তাজিকিস্তানের সরকারি ভাষা। এদের মধ্যে তাজিক ভাষাতে প্রায় ৬২% লোক এবং রুশ ভাষাতে প্রায় ৫% লোক কথা বলেন। তাজিকিস্তানে প্রচলিত অন্যান্য ভাষাগুলির মধ্যে আছে উজবেক ভাষা (১৬% বক্তা), ফার্সি ভাষা এবং পশতু ভাষা।
ধর্ম
সম্পাদনাতাজিকিস্তানে ২০০৯ সালে ইসলামকে সরকারি ধর্ম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এ বিষয়টি সাবেক সোভিয়েত দেশগুলোর মধ্যে তাজিকিস্তানকে আলাদা করে তুলেছে। তবে তাজিকিস্তানে অন্য যেকোনো ধর্ম পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। ২০০৯ সালের তথ্যানুসারে দেশটির ৯৮ শতাংশ লোক মুসলমান। এদের মধ্যে ৯৫ শতাংশ সুন্নি এবং ৩ শতাংশ শিয়া মুসলমান। আর বাকি দুই শতাংশের মধ্যে অর্থোডক্স, প্রোটেস্ট্যান্ট ও ক্যাথলিক খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও ইহুদি রয়েছে। তাজিকিস্তানের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও অধিকার ভোগ করতে ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোকে নিবন্ধন করতে হয়। এই নিবন্ধন ছাড়া কোনো দল উপসনার জন্য একত্রিত হতে পারবে না। এর ব্যতিক্রম করলে বড় অঙ্কের জরিমানার পাশাপাশি তাদের উপাসনাস্থল বন্ধ করে দেয়া হয়।[৪]
স্বাস্থ্য
সম্পাদনাতাজিকিস্তানের সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দেশটি স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতে বেশ দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। ২০০০ সালের হিসাব অনুযায়ী দেশটিতে প্রতি এক লাখ লোকের জন্য চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ২০৩ জন। দেশটিতে মৃত্যুহার হাজারে ৫৯ জন। পুরো বিশ্ব থেকে পোলিও প্রায় নির্মূল হলেও তাজিকিস্তানে এ রোগটি বাড়ছেই। ২০০৮-০৯ সালে শূন্যের কোঠায় থাকলেও ২০১০ সালে দেশটিতে পোলিও রোগীর পরিমাণ ছিল ১৪১ জন, যখন পুরো বিশ্বে এ রোগীর পরিমাণ ছিল ২৩৭ জন।[৪]
শিক্ষা
সম্পাদনাদেশটি ২০০২ সাল থেকে তার জিডিপি’র ৩.৫ শতাংশ শিক্ষা খাতে খরচ করে আসছে। তবে এর পরও সার্বিকভাবে দেশটির শিক্ষা খাতকে তেমন উন্নত বলা যায় না। ইউনিসেফের দেয়া এক তথ্যমতে দারিদ্র্য এবং লিঙ্গবৈষম্যের কারণে প্রতি বছর ২৫ শতাংশ মেয়েশিশু প্রাইমারি শিক্ষা সমাপ্ত করতে পারে না। তার আগেই তারা ঝরে যায়। তবে সব কিছু ছাপিয়েও তাজিকদের যে বিষয়টি গর্ব করার মতো তা হলো দেশটির ৯৯.৫ শতাংশ লোক লিখতে ও পড়তে পারে।[৪]
সংস্কৃতি
সম্পাদনাঐতিহাসিকভাবেই তাজিক এবং পার্সিয়ানরা একই ভাবধারার। তাদের ভাষাও কাছাকাছি পর্যায়ের। দেশটির ৮০ শতাংশ লোকেরই মাতৃভাষা তাজিক। বর্তমানে দেশটির রাজধানী দুশানবে, খুজান্দ, দুলব, পাঞ্জাকেন্ট এবং ইস্তারভশান প্রধান এলাকা হিসেবে পরিচিত। উত্তর তাজিকিস্তানে ২৫ হাজার লোক রয়েছে ইয়াগনোবি সম্প্রদায়ের। তারা ইয়াগনোবি ভাষাতেই কথা বলে থাকে।[৪]
খেলাধুলা
সম্পাদনাপর্বতময় তাজিকিস্তানের খেলাধুলাও পাহাড়পর্বতকেন্দ্রিক। পাহাড়ে হাঁটা, উঁচু পাহাড়ে আরোহণ করা ইত্যাদিই এখানকার প্রধান খেলা হিসেবে পরিচিত। প্রতি মৌসুমে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্বত এজেন্সিগুলো বিভিন্ন খেলার আয়োজন করে থাকে। এর পাশাপাশি দেশটিতে ফুটবলও একটি জনপ্রিয় খেলা। তারা ফিফা ও এএফসি আয়োজিত বিভিন্ন খেলায় অংশ নিয়ে থাকে।[৪]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ De Wulf, Martin। "Population Pyramids of the World: Tajikistan 2015"। populationpyramid.net। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।
- ↑ ক খ গ ঘ "Tajikistan profile at"। International Monetary Fund website।
- ↑ "2016 Human Development Report" (পিডিএফ)। United Nations Development Programme। ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০১৭।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড ঢ ণ ত Qposter। "তাজিকিস্তান – Country Information"। www.qposter.com। সংগ্রহের তারিখ ৪ মে ২০১৫।
- ↑ "-স্থান"। Online Etymology Dictionary। ১ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০১৪।
- ↑ "World Population Prospects - Population Division - United Nations"। ২০১৬-০৯-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-১৫।