বুর্কিনা ফাসো
বুর্কিনা ফাসো (বাংলা উচ্চারণ: [burˌkina ˈfaso]; ফরাসি : [buʁkina faso]) আফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিমভাগে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। এটি পূর্বে আপার ভোল্টা (ইংরেজি: Upper Volta) নামে পরিচিত ছিল। ১৯৬০ সালে স্বাধীনতা অর্জনের আগ পর্যন্ত এটি একটি ফরাসি উপনিবেশ ছিল। ১৯৮৫ সালে দেশটির নাম বদলে রাখা হয় বুর্কিনা ফাসো, যার অর্থ "নৈতিক জাতির দেশ"। এর উত্তরে ও পশ্চিমে মালি, পূর্বে নাইজার, এবং দক্ষিণে বেনিন, টোগো, ঘানা ও কোত দিভোয়ার। ওয়াগাদুগু (ফরাসি Ouagadougou উয়াগাদুগু, মোরে ভাষায় উয়াগ্যড্যগ্য) দেশের বৃহত্তম শহর ও রাজধানী।
বুর্কিনা ফাসো Burkina Faso | |
---|---|
নীতিবাক্য: "Unité, Progrès, Justice" (ফরাসি) "Unity, Progress, Justice" (ইংরেজি) "একতা, অগ্রগতি, সুবিচার" (বাংলা) | |
![]() | |
রাজধানী ও বৃহত্তম নগরী বা বসতি | ওয়াগাদুগু |
সরকারি ভাষা | ফরাসি |
স্বীকৃত জাতীয় ভাষা | মুরে ফুলা দাইয়ুলা[১] |
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ | বুর্কিনাবে |
সরকার | সামরিক জান্তা শাসিত প্রজাতন্ত্র |
পল-অঁরি সাঁদাওগো দামিবা | |
জিলবের দিয়েন্দেরে | |
স্বাধীনতা ফ্রান্স থেকে | |
• তারিখ | ৫ই আগস্ট ১৯৬০ |
আয়তন | |
• মোট | ২,৭৪,২০০ কিমি২ (১,০৫,৯০০ মা২) (74th) |
• পানি/জল (%) | 0.146% |
জনসংখ্যা | |
• 2017 আনুমানিক | 20,107,509[২] (61st) |
• 2006 আদমশুমারি | 14,017,262 |
• ঘনত্ব | ৬৪ /কিমি২ (১৬৫.৮ /বর্গমাইল) (137th) |
জিডিপি (পিপিপি) | 2018 আনুমানিক |
• মোট | $38.758 billion[৩] |
• মাথাপিছু | $1,992[৩] |
জিডিপি (মনোনীত) | 2018 আনুমানিক |
• মোট | $14.192 billion[৩] |
• মাথাপিছু | $729[৩] |
জিনি (2007) | 39.5[৪] মাধ্যম |
মানব উন্নয়ন সূচক (2015) | ![]() নিম্ন · 185th |
মুদ্রা | West African CFA franc[৬] (XOF) |
সময় অঞ্চল | GMT |
• গ্রীষ্মকালীন (ডিএসটি) | not observed |
কলিং কোড | ২২৬ |
ইন্টারনেট টিএলডি | .বিএফ |
|
বুর্কিনা ফাসো আফ্রিকার সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলির একটি। প্রতি বছর এই দেশের হাজার হাজার লোক পার্শ্ববর্তী দেশগুলিতে, যেমন ঘানা বা আইভরি কোস্টে কাজ খুঁজতে বিশেষ করে মৌসুমী কৃষিকাজের জন্য পাড়ি জমায়।
বুর্কিনা ফাসো পশ্চিম আফ্রিকার মধ্যস্থলে অবস্থিত খরাপ্রবণ তৃণভূমি নিয়ে গঠিত। এই স্থলবেষ্টিত দেশটির উত্তরাংশে সাহারা মরুভূমি এবং দক্ষিণে ক্রান্তীয় অতিবৃষ্টি অরণ্য। বুর্কিনাবে জাতির লোকেরা দেশের প্রধান জনগোষ্ঠী এবং এরা মূলত দেশের ঘনবসতিপূর্ণ দক্ষিণ ভাগে বাস করে। মাটির মান খারাপ এবং প্রচুর খরা হলেও এরা মূলত কৃষিকাজেই নিজেদের নিয়োজিত রাখে।
বুরকিনা ফাসোর মোসসি জাতির লোকেরা বহু শতাব্দী আগে এখানে যে রাজ্য স্থাপন করেছিল, তা ছিল আফ্রিকার সবচেয়ে প্রাচীন রাজ্যগুলির একটি। ১৯৬০ সালে স্বাধীনতা লাভের পর দেশটিতে বারংবার সামরিক অভ্যুথান বা কু (coup) ঘটে এবং সামরিক শাসন চলে। ১৯৯১ সালে নতুন সংবিধান পাস হবার পর দেশটিতে বর্তমানে গণতন্ত্র বিদ্যমান।
ইতিহাসসম্পাদনা
প্রাচীন ইতিহাসসম্পাদনা
ইউরোপীয়দের অভিযান ও ঔপনিবেশীকরণসম্পাদনা
স্বাধীনতা ও তার পরবর্তী যুগসম্পাদনা
রাজনীতিসম্পাদনা
প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহসম্পাদনা
বুর্কিনা ফাসো প্রশাসনিকভাবে বেশ কিছু রেজিওঁ (ফরাসি Région) বা অঞ্চলে বিভক্ত। প্রতিটি রেজিওঁ আবার কিছু প্রোভঁস (Provence) বা প্রদেশে বিভক্ত। প্রদেশগুলি একইভাবে কিছু দেপার্তমঁ (Département) বা জেলায় বিভক্ত। প্রতিটি রেজিওঁ একজন গভর্নর এবং প্রতিটি প্রোভঁস একজন উচ্চ-কমিশনার দ্বারা শাসিত হয়।
ভূগোলসম্পাদনা
সীমানাসম্পাদনা
বুর্কিনা ফাসো উত্তরে ও পশ্চিমে মালি, উত্তর-পূর্বে নাইজার, দক্ষিণ-পূর্বে বেনিন এবং দক্ষিণে কোত দিভোয়ার, ঘানা এবং টোগো দ্বারা সীমাবদ্ধ। এটি একটি ভূমিবেষ্টিত রাষ্ট্র।
ভূমিরূপ ও মৃত্তিকাসম্পাদনা
দেশটি একটি বিস্তৃত মালভূমির উপর অবস্থিত, যা দক্ষিণ দিকে হালকা ঢালু হয়ে গিয়েছে। মালভূমিটির গভীরে রয়েছে কেলাসিত শিলার স্তর, যাকে উপরে আবৃত করে রেখেছে লাল ও লৌহসমৃদ্ধ ল্যাটেরাইটিক (lateritic) শিলাস্তর। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে কিছু বেলেপাথরের শিলা দিয়ে গঠিত মালভূমি রয়েছে। বানফোরা প্রবণভূমি (Banfora Escarpment) যাদের সীমানা নির্ধারণ করেছে। এটি দক্ষিণমুখী এবং প্রায় ৫০০ ফুট বা ১৫০ মিটার উঁচু। বুর্কিনা ফাসোর বেশির ভাগ মাটি অনুর্বর।
নদনদী ও জলাশয়সম্পাদনা
মালভূমিটিকে গভীরে চিরে দেশটির তিনটি প্রধান নদী প্রবাহিত হচ্ছে - মুওঁ বা কালো ভল্টা, নাজিনোঁ বা লাল ভোল্টা এবং নাকাম্বে বা শ্বেত ভোল্টা। এই তিনটি নদীই দক্ষিণে ঘানাতে গিয়ে মিলিত হয়ে ভোল্টা নদী গঠন করেছে। ভোল্টা নদীর আরেকটি উপনদী ওতি নদী বুর্কিনা ফাসোর দক্ষিণ-পূর্বে উৎপত্তি লাভ করেছে। ঋতুভেদে নদীগুলির জলপ্রবাহে ব্যাপক তারতম্য ঘটে। শুস্ক মৌসুমে অনেক নদীই পুরোপুরি শুকিয়ে যায়।
জলবায়ুসম্পাদনা
বুর্কিনা ফাসোর জলবায়ু মূলত রৌদ্রোজ্জ্বল, উষ্ণ এবং শুষ্ক। দেশটিকে দুইটি প্রধান জলবায়ু অঞ্চলে ভাগ করা যায়। উত্তরের সহিলীয় অঞ্চল এবং দক্ষিণের সুদানীয় অঞ্চল। সহিলীয় অঞ্চলটি মূলত একটি অর্ধ-অনুর্বর স্টেপ জাতীয় তৃণভূমি। এখানে তিন থেকে পাঁচ মাস অনিয়মিত বৃষ্টিপাত হয়। সুদানীয় অঞ্চলের জলবায়ু দক্ষিণের দিকে ক্রমান্বয়ে ক্রান্তীয় আর্দ্র-শুষ্ক জাতীয় হয়ে থাকে। এখানে তাপমাত্রার বৈচিত্র্য এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণের তারতম্য বেশি। উত্তরের চেয়ে এখানে সব মিলিয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়।
বুর্কিনা ফাসোতে চারটি ঋতু দেখা যায়। মধ্য-নভেম্বর থেকে মধ্য-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শুষ্ক শীতকাল, যখন রাত্রীকালীন তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে আসে। মধ্য-ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত গ্রীষ্মকাল, যখন ছায়াতেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কাছাকাছি চলে যায়। এসময় সাহারা মরুভূমি থেকে হারমাতান নামের উত্তপ্ত, শুষ্ক, ধূলিময় বায়ুপ্রবাহ ধেয়ে আসে। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস হচ্ছে বর্ষাকাল। এর পরে আসে একটি অন্তর্বর্তীকালীন ঋতু, যা সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য-ডিসেম্বর পর্যন্ত বিরাজ করে। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দক্ষিণে ১০০০ মিমি বা ৪০ ইঞ্চি থেকে উত্তরে ২৫০ মিমি বা ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে।
উদ্ভিদ ও প্রাণীসম্পাদনা
বুর্কিনা ফাসোর উত্তর অংশে সাভানা তৃণভূমি অবস্থিত, যেখানে কাঁটাময় ঝোপঝাড় এবং বামনবৃক্ষ দেখতে পাওয়া যায়; এগুলি মূলত বর্ষা মৌসুমে জন্মায় ও বৃদ্ধি পায়। দক্ষিণের দিকে এগোলে ঝোপঝাড়ের বদলে ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন বনভূমির আবির্ভাব ঘটে এবং এই বনভূমিগুলি চিরপ্রবহমান নদীগুলির তীরে আরও ঘন আকার ধারণ করে। ক্যারাইট বা শেয়া বৃক্ষ এবং বাওবাব বা হিবিস্কাস বৃক্ষ এই অঞ্চলের স্বজাত উদ্ভিদ।
প্রাণীর মধ্যে মহিষ, কৃষ্ণশার হরিণ, সিংহ, জলহস্তী, হাতি, কুমির ও বানরের দেখা মেলে। পাখী ও কীটপতঙ্গগুলি সমৃদ্ধ ও বিচিত্র। নদীগুলিতে বহু প্রজাতির মাছ রয়েছে। দেশেটিতে অনেক জাতীয় উদ্যান আছে যার মধ্যে দক্ষিণ-মধ্য অংশে অবস্থিত "পো", দক্ষিণ-পূর্বে "আর্লি" এবং পূর্বে বেনিন-নাইজার সীমান্তে অবস্থিত "উয়" উদ্যান উল্লেখযোগ্য।
অর্থনীতিসম্পাদনা
বুর্কিনা ফাসোর নয়-দশমাংশ মানুষ খাদ্যসংস্থানমূলক কৃষিকাজ এবং গবাদিপশুপালনের কাজে জড়িত। অর্থনৈতিক মন্দা, কিছুদিন পর পর অতিখরা, ইত্যাদি কারণে এখানকার বহু মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে কিংবা অন্যান্য দেশে, বিশেষত কোত দিভোয়ার ও ঘানাতে পাড়ি জমিয়েছে। দেশের কর্মশক্তি প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বা প্রায় ১৫ লক্ষ লোক কোনও না কোন সময় বিদেশে গিয়ে কাজ করেছে। ২১শ শতকের শুরুর দিকে পার্শ্ববর্তী দেশগুলিতে, বিশেষ করে কোত দিভোয়ারে গণ্ডগোল শুরু হলে, বুর্কিনাবেদের চাকরি পেতে সমস্যা হয়। বাজার অর্থনীতির আকার ছোট বলে এবং সমুদ্রের সাথে সরাসরি সংযুক্ত পথ না থাকায় এখানকার শিল্পক্ষেত্রের উন্নয়ন ব্যাহত হয়েছে। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে সরকার কিছু সরকার-নিয়ন্ত্রিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান বেসরকারীকরণ করেন যার লক্ষ্য ছিল বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা।
কৃষিসম্পাদনা
কৃষিকাজ মূলত খাদ্যশস্য উৎপাদনে নিয়োজিত। উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য অর্থকরী শস্য হিসেবে বিক্রি করা হয়। উওৃত্ত তুলা, শেয়া বাদাম, তিসি এবং আখ রপ্তানি করা হয়। অন্যদিকে সোরগোম, জোয়ার, ভুট্টা, চিনাবাদাম এবং ধান স্থানীয় ভোগের জন্য উৎপাদন করা হয়। এছাড়াও ফোনিও নামের এক ধরনের ঘাস, যার বিজদানাগুলি খাদ্যশস্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়, কাসাভা, মিষ্টি আলু এবং শীম জাতীয় বীচিও চাষ করা হয়। পশুপালন জীবিকার অন্যতম উৎস। গবাদি পশু, ভেড়া, শূকর, গাধা, ঘোড়া, উট, মুরগী, হাঁস ও গিনি মুরগী পালন করা হয়।
প্রাকৃতিক সম্পদসম্পাদনা
বুর্কিনা ফাসোতে বেশ কিছু খনিজের সন্ধান মেলে, যাদের মধ্যে ম্যাঙ্গানিজ এবং স্বর্ণ অন্যতম। এগুলি দেশটির সম্পদের অন্যতম সম্ভাব্য উৎস। কুদুগু শহরের দক্ষিণ-পুর্বে পুরা শহরে স্বর্ণখনি আছে। এছাড়া দেশের উত্তরে সেব্বা এবং দোরি-ইয়লোগোতে তুলনামূলকভাবে ক্ষুদ্র আয়তনের স্বর্ণমজুদ আছে। এছাড়াও দেশটিতে নিকেল, বক্সাইট, দস্তা, সীসা এবং রূপার মজুদের সন্ধান পাওয়া গেছে। উত্তর-পূর্বে তামবাও শহরের কাছে অবস্থিত ম্যাঙ্গানিজের যে বিশাল মজুদ আছে, সেটি সম্ভবত দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। এটি সারা বিশ্বেই ম্যাঙ্গানিজের সবচেয়ে সমৃদ্ধ ভাণ্ডারগুলির একটি। তবে বিদ্যমান পরিবহন ব্যবস্থার অকার্যকারিতার কারণে এটি উত্তোলন-নিষ্কাশন এখনও সীমিত।
উৎপাদন শিল্পখাতসম্পাদনা
উৎপাদন শিল্পকারখানাগুলি সংখ্যায় সীমিত। এগুলি মূলত নগরী ও অপেক্ষাকৃত বড় শহরগুলিতে অবস্থিত। প্রধানত খাদ্যদ্রব্য, পানীয়, বস্ত্র, জুতা এবং বাইসাইকেলের যন্ত্রাংশ নির্মাণের কারখানা আছে।
অর্থসংস্থানসম্পাদনা
বুর্কিনা ফাসোর মুদ্রার নাম সিএফএ ফ্রঁ (Communauté Financière Africaine franc) অর্থাৎ আফ্রিকান আর্থিক সম্প্রদায়ের ফ্রঁ। মুদ্রাটি সরকারীভাবে ইউরোর সাথে সংযুক্ত (peg) করা হয়েছে। পশ্চিম আফ্রিকান রাষ্ট্রসমূহের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই মুদ্রাটি ছাপায়। ব্যাংকটি পশ্চিম আফ্রিকান অর্থনৈতিক ও মুদ্রা ইউনিয়নের একটি সংস্থা। এই ইউনিয়নে বুর্কিনা ফাসোসহ মোট আটটি দেশ আছে, যারা হল বেনিন, কোত দিভোয়ার, গিনি-বিসাউ, মালি, নাইজার, সেনেগাল এবং টোগো। এই সবগুলি দেশই অতীতে ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল। এই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শাখাগুলি বুর্কিনা ফাসোর উয়াগাদুগু এবং বোবো দিউলাসো শহর দুইটিতে অবস্থিত। এছাড়াও আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে সরকার-নিয়ন্ত্রিত ব্যাংক আছে, যাদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বুর্কিনা আন্তর্জাতিক ব্যাংক (Banque Internationale du Burkina); এটি উয়াগাদুগুতে অবস্থিত।
এছাড়া বুর্কিনা ফাসো পশ্চিম আফ্রিকান রাষ্ট্রসমূহের অর্থনৈতিক সম্প্রদায়ের একটি সদস্যরাষ্ট্র। পশ্চিম আফ্রিকার অধিকাংশ রাষ্ট্র এই সম্প্রদায়ের সদস্য; অঞ্চলটির অর্থনৈতিক ব্যাপারগুলির সমন্বয় সাধন এবং সুষমীকরণ এই সম্প্রদায়ের লক্ষ্য।
বুর্কিনা ফাসো বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলির একটি। তাই এটি ব্যাপকভাবে বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীল। এছাড়া বিদেশে অবস্থিত অভিবাসী শ্রমিকদের পাঠানো অর্থও দেশটির হিসাবের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে।
বাণিজ্যসম্পাদনা
২১শ শতকে এসে বুর্কিনা ফাসো মূলত তুলা, স্বর্ণ, গবাদি পশু, চিনি এবং ফল রপ্তানি করছে। বেশিরভাগ দ্রব্যই পার্শ্ববর্তী আফ্রিকান দেশগুলিতে রপ্তানি করা হয়। তবে কিছু কিছু পণ্য, যেমন তুলা এবং খনিজ পদার্থসমূহ চীন, সিংগাপুর এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিতে রপ্তানি হয়। আমদানিকৃত প্রধান পণ্যগুলি হল পেট্রোলিয়াম, রাসায়নিক দ্রব্য, যন্ত্রপাতি এবং খাদ্যদ্রব্য। এগুলি মূলত পার্শ্ববর্তী দেশসমূহ এবং ফ্রান্স থেকে আমদানি করা হয়।
আমদানির তুলনায় রপ্তানি কম বলে দেশটির পরিশোধন-বিবরণীতে (balance of payments) ঘাটতি আছে। রপ্তানিকৃত দ্রব্যের অর্থমূল্য ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় আমদানি করা দ্রব্যের অর্থমূল্যের জন্য যথেষ্ট নয় বলে এমনটি ঘটেছে।
পরিবহনসম্পাদনা
উয়াগাদুগু শহর রেলপথের মাধ্যমে কোত দিভোয়ারের আবিজান বন্দরের সাথে যুক্ত। রেলপথটি প্রায় ১১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ, যার প্রায় ৫-- কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বুর্কিনা ফাসোর ভেতর দিয়ে চলে গেছে। ২০০০-এর দশকের শুরুর দিকে কোত দিভোয়ারের গৃহযুদ্ধের কারণে রেলপথটি একাধিক বছর বন্ধ ছিল। রেলপথটি বুর্কিনা ফাসোর ভেতরে দিয়ে পূর্ব-পশ্চিম বরাবর প্রসারিত এবং কুদুগু, বোবো দিউলাসো এবং বানফোরা শহরগুলির সাথে এটি সংযুক্ত।
এছাড়াও রাজধানী শহর উয়াগাদুগু সড়কপথের মাধ্যমে দেশের প্রধান প্রশাসনিক কেন্দ্রগুলির সাথে এবং পার্শ্ববর্তী দেশগুলির রাজধানীগুলির সাথে সংযুক্ত। বুর্কিনা ফাসোর সড়ক ব্যবস্থাটি অনুন্নত; এর খুব ছোট একটি অংশ সারা বছর ধরে ব্যবহারোপযোগী থাকে। অবশিষ্টাংশ মূলত কাঁচা গ্রামীণ রাস্তা।
উয়াগাদুগু ও বোবো দিউলাসো শহরে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আছে। এছাড়ে দেশের বিভিন্ন অংশে বিমান অবতরণ ও উড্ডয়নক্ষেত্র আছে।
জনসংখ্যাসম্পাদনা
জাতি ও ভাষাসম্পাদনা
বুর্কিনা ফাসোতে দশটিরও বেশি ভিন্ন জাতিগোষ্ঠী আছে। দেশটির প্রধান ভাষাভিত্তিক গোষ্ঠীটি হল মোসি, যারা জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। তারা মোরে নামের একটি ভাষাতে কথা বলে। মোসি জাতির লোকেরা বহু শতাব্দী ধরে এই অঞ্চলে বাস করে। গুর্মা ও ইয়ার্সে নামের দুইটি জাতির মোসি জাতির সাথে মিলিত হয়ে গিয়েছে। ইয়ার্সে জাতির লোকেরা মূল মান্দে জাতি থেকে আসলেও এখন মোসি ভাষাতে কথা বলে। মোসি বা মোরে ভাষাটি নাইজার-কঙ্গো ভাষা পরিবারের গুর শাখার একটি ভাষা। এছাড়াও গুরুনসি, সেনুফো, বোয়া এবং লোবি নামের জাতিগুলি বিভিন্ন গুর ভাষাতে কথা বলে।
নাইজার-কঙ্গো ভাষাপরিবারের আরেকটি শাখা মান্দে ভাষাগুলিতে একাধিক জাতিগোষ্ঠী কথা বলে; এরা হল সামো, মারকা, বুসানসি এবং দিউলা।
এছাড়াও দেশটিকে আফ্রো-এশীয় ভাষা হাউসা ও তুয়ারেগভাষী জাতি, এবং ফুলা ভাষাতে (নাইজার-কঙ্গো পরিবারের আটলান্টিক শাখার ভাষা) কথা বলা ফুলানি জাতির লোকেরা বাস করে।
বুর্কিনা ফাসোর নাগরিকেরা জাতি নির্বিশেষে "বুর্কিনাবে" নামে পরিচিত। ফরাসি ভাষা সরকারি ভাষা হলেও মুখের ভাষা হিসেবে ব্যাপক প্রচলিত নয়। বেশির ভাগ লোক মোরে ভাষাতে কথা বলেন। ব্যবসা বাণিজ্যে দিউলা ভাষাটি অনেক ব্যবহৃত হয়।
ধর্মসম্পাদনা
দেশটির জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মুসলমান। প্রায় এক-পঞ্চমাংশ রোমান ক্যাথলিক খিস্টান এবং প্রায় এক-ষষ্ঠাংশ প্রথাগত ধর্মগুলি পালন করে। বাকীরা মূলত প্রোটেস্টান্ট খ্রিস্টান বা অধার্মিক। উয়াগাদুগু শহরে রোমান ক্যাথলিক আর্চবিশপের গির্জা অবস্থিত। এছাড়া সারা দেশজুড়ে অনেক বিশপশাসিত ধর্মীয় অঞ্চল রয়েছে।
জনবসতির বিন্যাসসম্পাদনা
বুর্কিনা ফাসোর জনসংখ্যা দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে অসমভাবে বণ্টিত। পূর্বের ও কেন্দ্রের অঞ্চলগুলি ঘনবসতিপূর্ণ এবং এখানে দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের বাস। দেশের বাকী অঞ্চলগুলিতে জনসংখ্যা বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে আছে। জনসংখ্যার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ গ্রামে বাস করে। গ্রামগুলি ভোল্টা নদীগুলির উপত্যকা থেকে দূরে উঁচু ভূমিতে অবস্থিত। ভোল্টা নদীগুলির দুই তীরের প্রায় বেশ কিছু মাইল ভেতর পর্যন্ত এলাকাতে কোন জনবসতি নেই, কেননা এই এলাকাতে ঘুমন্ত রোগের জীবাণু বহনকারী ৎসেৎসে মাছি এবং নদী অন্ধত্ব রোগের জীবাণু বহনকারী সিমুলিয়াম মাছির ব্যাপক প্রাদুর্ভাব রয়েছে।
উয়াগাদুগু দেশটির প্রশাসনিক রাজধানী এবং সরকারের মূল কার্যালয় এখানেই অবস্থিত। এটি একটি আধুনিক শহর। এখানে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তর অবস্থিত। এখানেই মোসি জাতির লোকদের মহান গুরু "মোরহো নাবা" বাস করেন। আফ্রিকাতে আন্তর্জাতিক সাহায্য প্রকল্পগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবেও শহরটি পরিচিত।
উয়াগাদুগু শহর ছাড়া অন্যান্য প্রধান শহরগুলি হল বোবো দিউলাসো, কুদুগু, বানফোরা, উয়াইগুইয়া, পুইতেংগা এবং কায়া। বোবো দিউলাসো শহরটি দেশের পশ্চিমে অবস্থিত। এটি অতীতে দেশের অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক কেন্দ্র ছিল; কোত দিভোয়ারের আবিজান শহর থেকে আসা রেলপথ এই শহরেই শেষ হয়েছিল। তবে ১৯৫৫ সালের পরে রেলপথটি সম্প্রসারিত করে উয়াগাদুগু পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। তখন থেকে বোবো দিউলাসোর গুরুত্ব কিছু গুরুত্ব কমে গেলেও এখনও এটি দেশের অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র।
জনসাঙ্খ্যিক ভাবধারাসম্পাদনা
২১শ শতকের শুরুর দিকে বাৎসরিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার গড়ে প্রায় ৩ শতাংশ ছিল। দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের বয়স ১৫ বছরের নিচে। গড় প্রত্যাশিত আয়ু ৫০ বছরের সামান্য বেশি, যা বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে কম হলেও পার্শ্ববর্তী দেশগুলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সংস্কৃতিসম্পাদনা
আরও দেখুনসম্পাদনা
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ André, Géraldine (২০০৭-০৫-৩১)। "École, langues, cultures et développement"। Cahiers d'études africaines (ফরাসি ভাষায়)। 47 (186): 221–247। আইএসএসএন 0008-0055। ডিওআই:10.4000/etudesafricaines.6960।
- ↑ "Burkina Faso population projection" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭। ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০১৮।
- ↑ ক খ গ ঘ "Burkina Faso"। International Monetary Fund।
- ↑ "Distribution of family income – Gini index"। The World Factbook। CIA। ১৩ জুন ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০০৯।
- ↑ "2016 Human Development Report" (পিডিএফ)। United Nations Development Programme। ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০১৭।
- ↑ CFA Franc BCEAO. Codes: XOF / 952 ISO 4217 currency names and code elements ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৭ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে. ISO.
বহিঃসংযোগসম্পাদনা
- Premier Ministère সরকারি ওয়েবসাইট। (ফরাসি)
- রাষ্ট্র প্রধান এবং মন্ত্রিপরিষদ সদসবৃন্দ
- সিআইএ প্রণীত দ্য ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক-এ বুর্কিনা ফাসো-এর ভুক্তি
- Burkina Faso from UCB Libraries GovPubs
- কার্লিতে বুর্কিনা ফাসো (ইংরেজি)
- উইকিমিডিয়া অ্যাটলাসে বুর্কিনা ফাসো
- News headline links from AllAfrica.com
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |