নাইজার

পশ্চিম আফ্রিকার রাষ্ট্র

নাইজার (ফরাসি: [niʒɛʁ]: নিঝের) আনুষ্ঠানিকভাবে 'নাইজার প্রজাতন্ত্র' (ফরাসি: République du Niger, হাউসা: Jamhuriyar Nijar ) হলো পশ্চিম আফ্রিকার একটি স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র। এই দেশটির নাম রাখা হয়েছে নাইজার নদীর নামানুসারে। এর দক্ষিণে নাইজেরিয়া এবং বেনিন, পশ্চিমে বুর্কিনা ফাসো এবং মালি, উত্তরে আলজেরিয়ালিবিয়া এবং পূর্বে চাদ অবস্থিত। এর রাজধানীর নাম নিয়ামে। নাইজার আফ্রিকার অন্যতম মুসলিম প্রধান দেশ। দেশটির ৯৯% এর বেশি জনগণ ইসলাম ধর্ম মেনে চলে।[৬] নাইজার আফ্রিকার বৃহত্তম স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র

নাইজার প্রজাতন্ত্র

République du Niger (ফরাসি)
নাইজারের জাতীয় পতাকা
পতাকা
নাইজারের জাতীয় মর্যাদাবাহী নকশা
জাতীয় মর্যাদাবাহী নকশা
নীতিবাক্য: "Fraternité, Travail, Progrès" (ফরাসি)
"Fraternity, Work, Progress" (ইংরেজি)
"ভ্রাতৃত্ব, কর্ম, অগ্রগত" (বাংলা)
জাতীয় সঙ্গীত: La Nigérienne
 নাইজার-এর অবস্থান (dark green)
 নাইজার-এর অবস্থান (dark green)
নাইজারের অবস্থান
রাজধানী
ও বৃহত্তম নগরী বা বসতি
নিয়ামে
সরকারি ভাষাফরাসি
ধর্ম
ইসলাম (৯৯.৩%)
জাতীয়তাসূচক বিশেষণনাইজারীয়[১]
সরকারসামরিক শাসন
আব্দুর রহমান চিয়ানি
আইন-সভাবাসভূমি প্রতিরক্ষার জন্য জাতীয় পরিষদ (সিএনএসপি)
আয়তন
• মোট
১২,৬৭,০০০ কিমি (৪,৮৯,০০০ মা) (21st)
• পানি (%)
0.02
জনসংখ্যা
• ২০১৬ আনুমানিক
১,৮৬,৩৮,৬০০[২] (61st)
• ২০১২ আদমশুমারি
১,৭১,৩৮,৭০৭
• ঘনত্ব
১২.১/কিমি (৩১.৩/বর্গমাইল)
জিডিপি (পিপিপি)২০১৬ আনুমানিক
• মোট
$21.655 billion[৩]
• মাথাপিছু
$1,154[৩]
জিডিপি (মনোনীত)২০১৬ আনুমানিক
• মোট
$7.674 billion[৩]
• মাথাপিছু
$409[৩]
জিনি (২০১১)31.5[৪]
মাধ্যম
মানব উন্নয়ন সূচক (২০১৪)বৃদ্ধি 0.348[৫]
নিম্ন · 188th
মুদ্রাপশ্চিম আফ্রিকান সিএফএ ফ্রাঙ্ক (XOF)
সময় অঞ্চলইউটিসি+০১:০০ (ডাব্লিউএটি)
কলিং কোড২২৭
ইন্টারনেট টিএলডি.ne

রাজনীতি সম্পাদনা

নাইজারের পলীয় যুগের সন্ধান পাওয়া গেছে। উপনিবেশকারীদের আগমনের আগে এখানে অনেক রাজত্বের পত্তন হয়েছিল। ইউরোপীয়রা সর্বপ্রথম আসে ১৮ শতকের শেষদিকে। ১৮৮৩ থেকে ১৮৯৯ সাল পর্যন্ত দেশটি ফ্রান্সের দখলে ছিল। ১৯০১ সালে নাইজার একটি সামরিক এলাকায় পরিণত হয় এবং ১৯০৪ সালে ফরাসি নিয়ন্ত্রিত পশ্চিম আফ্রিকার একটি অংশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। নাইজার ১৯৫৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর ফ্রান্সের একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়; ১৯৬০ সালের আগস্টে পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৭৪ সালের ১৫ এপ্রিল নাইজারের প্রথম প্রেসিডেন্ট হামানি দিওরি এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হন। অভ্যুত্থানের নেতা লে. মিনি কাউচি সংবিধান বাতিল ঘোষণা করেন। তিনি সংসদ ভেঙে দেন এবং রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেন। পরে ১৯৯৩ সালে নাইজারে প্রথম অবাধ নির্বাচন হয়।

প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ সম্পাদনা

ভূগোল সম্পাদনা

 
নাইমী, নাইজারের রাজধানী এবং অর্থনৈতিক কেন্দ্র

অবস্থান ও আয়তন : এটি ১৬০০০ ফুট উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮০০০ ফুট পূর্ব দ্রাঘিমার মধ্যে অবস্থিত। নাইজারের উত্তরে আলজেরিয়া ও লিবিয়া, দক্ষিণে নাইজেরিয়া ও বেনিন, পূর্বে চাঁদ এবং পশ্চিমে বুরকিনা ফাসো ও মালি। দেশটির আয়তন প্রায় ১২ লাখ ৬৭ হাজার বর্গকিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে এটি বিশ্বের ২২তম বৃহত্তম দেশ।

অর্থনীতি সম্পাদনা

নাইজারের অর্থনীতি সাধারণত ফসল, পশুসম্পদ ও কিছু বৃহত্তম ইউরেনিয়ামের খনি মজুদের উপর কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়। ২০২১ সালে নাইজার ইউরোপে ইউরেনিয়ামের প্রধান সরবরাহকারী ছিল এবং এরপর রয়েছে কাজাখস্তানরাশিয়াখরা চক্র, মরুকরণ ও ২.৯% জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এবং ইউরেনিয়ামের বিশ্ব চাহিদা হ্রাস এর অর্থনীতির হার কিছুটা কমিয়ে দেয়। [৭]

নাইজার ইকোয়াসের অন্যান্য সাত সদস্যের মতো মুদ্রা হিসেবে সিএফএ ফ্রাঙ্ক ব্যবহার করে। এছাড়া নাইজার বর্তমান অর্গানাইজেশন ফর দ্য হারমোনাইজেশন অফ বিজনেস ল ইন আফ্রিকা'র (ওহাডা) সদস্য।[৮]

২০০০ সালের ডিসেম্বরে নাইজার ভারী ঋণগ্রস্ত দরিদ্র দেশগুলির জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল প্রোগ্রামের ( HIPC ) অধীনে বর্ধিত ঋণ হিসেবে ত্রাণের যোগ্যতা অর্জন করে এবং PRGF এর সাথে একটি চুক্তি সম্পন্ন করে। ২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাসে ঘোষণা করা হয় যে, নাইজার আইএমএফ থেকে ১০০% বহুপাক্ষিক ঋণ ত্রাণ পেয়েছে। গত কয়েক বছরে ইউরেনিয়ামের দাম কিছুটা পুনরুদ্ধার হওয়ায় এর আর্থিক চাপ কিছু কমে এসেছে। ২০০৫ সালে খরা ও পঙ্গপালের উপদ্রব প্রায় মিলিয়ন নাইজারীয় জনসংখ্যাকে খাদ্য ঘাটতির দিকে পরিচালিত করে।

ধর্ম সম্পাদনা

নাইজার আফ্রিকার একটি বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র। এর ৯৯% এর অধিক জনগণ ইসলাম ধর্মের অনুসারী। [৬]

সংস্কৃতি সম্পাদনা

নাইজেরীয় সংস্কৃতি খুবই বৈচিত্র্যময়। এতে বসবাসরত সম্প্রদায়গুলির প্রত্যেকটিই তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নাইজারে নিয়ে আসে। যদিও স্বাধীনতাপরবর্তী সরকারগুলি একটি ভাগ করা জাতীয় সংস্কৃতি গঠনের চেষ্টা করেছে; তবে তা ধীরে ধীরে গঠিত হচ্ছে। কারণ প্রধান নাইজেরিয় সম্প্রদায়গুলির নিজস্ব সাংস্কৃতিক ইতিহাস রয়েছে, যা তারা এখনো ধরে রেখেছে।

১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত দেশের সরকার ও রাজনীতির মাঠে নিয়ামী এবং এর আশেপাশের অঞ্চলের জারমা জনগণের অসামান্য আধিপত্য ছিল। ১৯৯৬ ও ২০০৩ এর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপস্থিতি ছিল প্রায় ৩০%, যার মধ্যে ৩৬% পুরুষ ও ২৫% মহিলা ছিল এবং এর বাইরে অতিরিক্ত শিক্ষা মাদ্রাসার মাধ্যমে হয়।

সামরিক বাহিনী সম্পাদনা

নাইজার সশস্ত্র বাহিনীর ( ফরাসি : Forces armées nigériennes ) মধ্যে রয়েছে সামরিক সশস্ত্র বাহিনীর পরিষেবা শাখা ( নাইজার আর্মি এবং নাইজার এয়ার ফোর্স ), আধাসামরিক পরিষেবা শাখা ( নাইজারের ন্যাশনাল জেন্ডারমেরি এবং নাইজারের ন্যাশনাল গার্ড ) ও নাইজারের ন্যাশনাল পুলিশ। সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী এবং ন্যাশনাল জেন্ডারমারি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনে সেখানে ন্যাশনাল গার্ড এবং ন্যাশনাল পুলিশ অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের অধীনে পড়ে। জাতীয় পুলিশ বাদে সব সামরিক, আধাসামরিক বাহিনী সামরিক ফ্যাশনে প্রশিক্ষিত । নাইজারের রাষ্ট্রপতি সমগ্র সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ কমান্ডার। নাইজারের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ২০২০ সালের নভেম্বরে নাইজারের সেনাবাহিনীর জন্য একটি আইন পাস করে এবং এতে পরিকল্পনা করে যে সেনাবাহিনীর মোট আকার ২০২০ সালে ২৫,০০০ কর্মী থেকে ২০২৫ সালে ৫০,০০০ এবং অবশেষে ২০৩০–এ ১০০,০০০ হবে। [৯]

২০২৩ সালের জুলাইয়ে নাইজারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে সেনাবাহিনী সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। রাষ্ট্রপতি বাজুমার বিরুদ্ধে ফ্রান্সের হয়ে দেশদ্রোহের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। [১০] নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে সেনাপ্রধান আব্দুর রহমান চিয়ানি শপথ গ্রহণ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ফ্রান্স এবং তার আফ্রিকীয় মিত্র রাষ্ট্রসমূহের জোট ইকোয়াস নাইজারে সামরিক অভিযান চালানোর হুমকি দেয়। এর জবাবে দেশটি সামরিক শক্তি বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেয় এবং দেশের বেসামরিক জনগণ সেচ্ছাসেবক হিসেবে বাহিনীতে যোগদান করা শুরু করে।[১১]

আরো দেখুন সম্পাদনা

নাইজারের ইতিহাস

নাইজারের ভূগোল

নাইজার নদী

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Nigerien – definition of Nigerien in English from the Oxford Dictionaries"। ১ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ মার্চ ২০১৮ 
  2. "The World Factbook"। Central Intelligence Agency। ১২ জানুয়ারি ২০১৭। ২৪ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৭Population: 18,638,600 (July 2016 est.) 
  3. "Niger"। International Monetary Fund। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০১২ 
  4. World Bank GINI index, accessed on January 21, 2016.
  5. "Human Development Report 2015" (পিডিএফ)। United Nations Development Programme। ২০১৫। পৃষ্ঠা 208–211। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 
  6. "Niger riligion" (পিডিএফ) 
  7. "Niger coup sparks concerns about French, EU uranium dependency"POLITICO (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৭-৩১। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-২৩ 
  8. "UNIDA-OHADA.com • Association pour l'Unification du Droit en Afrique."OHADA.com (ফরাসি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-২৩ 
  9. "Ministère de la défense nationale | Forces Armées Nigériennes"www.defense.gouv.ne। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-২৩ 
  10. এএফপি (২০২৩-০৭-৩০)। "নাইজারে অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ঘোষণা"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-২৩ 
  11. Television, Jamuna। "নাইজারের জান্তা সরকারের প্রতি সাধারণ জনতার বিরল সমর্থন"Jamuna Television (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-২৩ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

সরকারী
সাধারণ তথ্য
সংবাদ
আন্তর্জাতিক
পর্যটন