মহাত্মা গান্ধী
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী (গুজরাটি: મોહનદાસ કરમચંદ ગાંધી ; মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধী বা মহাত্মা গান্ধী; ২ অক্টোবর ১৮৬৯ – ৩০ জানুয়ারি ১৯৪৮) ছিলেন অন্যতম ভারতীয় রাজনীতিবিদ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রগামী ব্যক্তিবর্গের মধ্যে একজন এবং প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক নেতা। এছাড়াও তিনি ছিলেন সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। যার মাধ্যমে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে জনসাধারণ তাদের অভিমত প্রকাশ করে। এ আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অহিংস মতবাদ বা দর্শনের উপর ভিত্তি করে এবং এটি ছিল ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম চালিকা শক্তি, সারা বিশ্বে মানুষের স্বাধীনতা এবং অধিকার পাওয়ার আন্দোলনের অন্যতম অনুপ্রেরণা।
মহাত্মা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী | |
---|---|
મોહનદાસ કરમચંદ ગાંધી | |
জন্ম | |
মৃত্যু | ৩০ জানুয়ারি ১৯৪৮ নয়াদিল্লী, ভারত | (বয়স ৭৮)
মৃত্যুর কারণ | হত্যা |
স্মৃতিস্তম্ভ | |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
অন্যান্য নাম | মহাত্মা গান্ধী, বাপুজি, গান্ধীজি |
শিক্ষা | ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন[১] |
পেশা |
|
কর্মজীবন | ১৮৯৩ – ১৯৪৮ |
যুগ | ব্রিটিশ ভারত |
পরিচিতির কারণ | |
অফিস | ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি |
মেয়াদ | ১৯২৪ – ১৯২৫ |
রাজনৈতিক দল | ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস |
আন্দোলন | ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন |
দাম্পত্য সঙ্গী | কস্তুরবা গান্ধী (বি. ১৮৮৩; মৃ. ১৯৪৪) |
সন্তান | |
পিতা-মাতা |
|
স্বাক্ষর | |
গান্ধী ভারতে এবং বিশ্ব জুড়ে মহাত্মা [টীকা ১][৩] (মহান আত্মা) এবং বাপু (বাবা) নামে পরিচিত। ভারত সরকার সম্মানার্থে তাকে ভারতের জাতির জনক হিসেবে ঘোষণা করেছে।[৪][৫][৬][৭] ২ অক্টোবর তার জন্মদিন ভারতে গান্ধী জয়ন্তী হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়। ২০০৭ সালের ১৫ জুন জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ২ অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। জাতিসংঘের সকল সদস্য দেশ এ দিবস পালনে সম্মতি জ্ঞাপন করে।[৮]
একজন শিক্ষিত ব্রিটিশ আইনজীবী হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকায় নিপীড়িত ভারতীয় সম্প্রদায়ের নাগরিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে গান্ধী প্রথম তাঁর অহিংস শান্তিপূর্ণ নাগরিক আন্দোলনের মতাদর্শ প্রয়োগ করেন। ভারতে ফিরে আসার পরে তিনি কয়েকজন দুঃস্থ কৃষক-দিনমজুরকে সাথে নিয়ে বৈষম্যমূলক কর আদায় ব্যবস্থা, বহুবিস্তৃত বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন এবং দেওবন্দিদের অধীনে খিলাফত আন্দোলন শুরু করেন।[৯]ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে আসার পর গান্ধী সমগ্র ভারতব্যাপী দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারী স্বাধীনতা, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা, বর্ণবৈষম্য দূরীকরণ, জাতির অর্থনৈতিক সচ্ছলতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রচার শুরু করেন। কিন্তু এর সবগুলোই ছিল স্বরাজ অর্থাৎ ভারতকে বিদেশি শাসন থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে। ১৯৩০ সালে গান্ধী ভারতীয়দের লবণ করের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ৪০০ কিলোমিটার (২৪৮ মাইল) দীর্ঘ ডান্ডি লবণ কুচকাওয়াজে নেতৃত্ব দেন, যা ১৯৪২ সালে ইংরেজ শাসকদের প্রতি সরাসরি ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে বেশ কয়েকবার দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ভারতে কারাবরণ করেন।
মহাত্মা গান্ধী সমস্ত পরিস্থিতিতেই অহিংস মতবাদ এবং সত্যের ব্যাপারে অটল থেকেছেন। তিনি সাধারণ জীবনযাপন করতেন এবং একটি স্বায়ত্তশাসিত আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। তার নিজের পরিধেয় কাপড় ছিল ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় ধুতি এবং শাল, যা তিনি নিজেই চরকায় বুনতেন। তিনি সাধারণ নিরামিষ খাবার খেতেন। শেষ জীবনে ফলমূলই বেশি খেতেন। আত্মশুদ্ধি এবং প্রতিবাদের জন্য তিনি দীর্ঘ সময় উপবাস থাকতেন।
প্রাথমিক জীবন
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী [১০] ১৮৬৯ সালের ২ রা অক্টোবর [১১] পোরবন্দরের হিন্দু মোধ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[১২] তার পিতা করমচাঁদ গান্ধী ছিলেন পোরবন্দরের দেওয়ান (প্রধান মন্ত্রী)। মা পুতলিবা করমচাঁদের চতুর্থ স্ত্রী ছিলেন। পুতলিবা প্রণামী বৈষ্ণব গোষ্ঠীর ছিলেন।[১৩][১৪][১৫][১৬] করমচাঁদের প্রথম দুই স্ত্রীর প্রত্যেকেই একটি করে কন্যাসন্তান জন্ম দিয়েছিলেন। অজানা কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছিল [টীকা ২]। গান্ধীর ব্যাপারে তার বোন মন্তব্য করেন, তিনি খেলাধুলা কিংবাা ঘুরাঘুরির ব্যাপারে পারদের মত নিশ্চল ছিলেন । তার শৈশব কালে প্রিয় খেলা ছিল কুকুরের কান মোচড়ানো[১৭] ধার্মিক মায়ের সাথে এবং গুজরাতের জৈন প্রভাবিত পরিবেশে থেকে গান্ধী ছোটবেলা থেকেই জীবের প্রতি অহিংসা, নিরামিষ ভোজন, আত্মশুদ্ধির জন্য উপবাসে থাকা, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও সম্প্রদায়ের পারস্পরিক সহিষ্ণুতা ইত্যাদি বিষয় শিখতে শুরু করেন।[১৮] তিনি জন্মেছিলেন হিন্দু বৈশ্য গোত্রে, যা ছিল ব্যবসায়ী গোত্র।
১৮৮৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে মহাত্মা গান্ধী তার বাবা মায়ের পছন্দে কস্তুরবা মাখাঞ্জীকে (কাস্তুবাই নামেও পরিচিত ছিলেন) বিয়ে করেন। তাদের চার পুত্র সন্তান জন্মায় যাদের নাম হরিলাল গান্ধী, (জন্ম ১৮৮৮) মনিলাল গান্ধী, (জন্ম ১৮৯২) রামদাস গান্ধী (জন্ম ১৮৯৭) এবং দেবদাস গান্ধী (জন্ম ১৯০০) সালে। মহাত্মা গান্ধী ছোটবেলায় পোরবন্দর ও রাজকোটের ছাত্রজীবনে মাঝারি মানের ছাত্র ছিলেন। কোন রকমে গুজরাতের ভবনগরের সামালদাস কলেজ থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি কলেজেও সুখী ছিলেন না, কারণ তার পরিবারের ইচ্ছা ছিল তাকে আইনজীবী করা।
১৮ বছর বয়সে ১৮৮৮ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে যান। রাজকীয় রাজধানী লন্ডনে তার জীবন যাপন ভারতে থাকতে তার মায়ের কাছে করা শপথ দ্বারা প্রভাবিত ছিল। জৈন সন্ন্যাসী বেচার্জীর সামনে তিনি তার মায়ের কাছে শপথ করেছিলেন যে তিনি মাংস, মদ এবং উচ্ছৃঙ্খলতা ত্যাগ করার হিন্দু নৈতিক উপদেশ পালন করবেন। যদিও তিনি ইংরেজ আদব কায়দা পরীক্ষামূলকভাবে গ্রহণ করেছিলেন (যেমন নাচের শিক্ষা), কিন্তু তিনি তার বাড়িওয়ালির দেওয়া ভেড়ার মাংস এবং বাঁধাকপি খেতেন না। তিনি লন্ডনের গুটি কয়েক নিরামিষভোজী খাবারের দোকানের একটিতে নিয়মিত যেতেন। শুধু তার মায়ের কথায় সাধারণ নিরামিষভোজী জীবনযাপন না করে তিনি এ বিষয়ে পড়াশোনা করে একান্ত আগ্রহী হয়ে নিরামিষভোজন গ্রহণ করেন। "নিরামিষভোজী সংঘে" যোগ দেন এবং কার্যকরী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন, এ সংস্থার একটি স্থানীয় শাখাও প্রচলন করেন। তার এই অভিজ্ঞতা পরবর্তী জীবনে সাংগঠনিক কার্যক্রমে অনেক ভাবে কাজে লাগে। নিরামিষভোজী অনেক সদস্যই আবার থিওসোফিক্যাল সোসাইটি(Theosophical Society)-এর সদস্য ছিলেন, যা ১৮৭৫ সালে সার্বজনীন ভাতৃত্বের উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছিল এবং এতে ধর্ম শিক্ষায় বৌদ্ধ এবং হিন্দু ব্রাহ্মণ্য সাহিত্য পড়ানো হত। তারা গান্ধীকে ভগবত গীতা পড়তে উৎসাহিত করেছিলেন। আগে ধর্ম বিষয়ে তেমন কোন আগ্রহ না থাকলেও, গান্ধী হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, ইসলামসহ অন্যান্য ধর্ম এবং বিভিন্ন রীতি সম্পর্কে পড়াশোনা করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন][১৯]
দক্ষিণ আফ্রিকার গণঅধিকার আন্দোলন (১৮৯৩-১৯১৪)
গান্ধীজি দাদা আব্দুল্লা এন্ড সন্সের আইনজীবী হিসাবে দক্ষিণ আফ্রিকায় যান। দক্ষিণ আফ্রিকা গান্ধীর জীবনকে নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন করে দেয়। এখানে তিনি ভারতীয় ও কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি সাধারণভাবে প্রচলিত বৈষম্যের শিকার হন। একদিন ডারবানের আদালতে ম্যাজিস্ট্রেট তার পাগড়ি সরিয়ে ফেলতে বলেন। গান্ধী তা অগ্রাহ্য করেন এবং আদালত কক্ষ থেকে ক্ষোভে বেরিয়ে পড়েন। তাকে প্রথম শ্রেণির বৈধ টিকিট থাকা সত্ত্বেও পিটার ম্যারিজবার্গের একটি ট্রেনের প্রথম শ্রেণির কামরা থেকে তৃতীয় শ্রেণির কামরায় যেতে বাধ্য করা হয়। স্টেজকোচে ভ্রমণের সময় একজন চালক তাকে প্রহার করে, কারণ তিনি এক ইউরোপীয় যাত্রীকে জায়গা করে দেয়ার জন্য ফুটবোর্ডে চড়তে রাজি হননি। যাত্রাপথে তাকে আরও কষ্ট করতে হয় এবং অনেক হোটেল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। এই ঘটনাগুলো তার পরবর্তী সামাজিক কার্যকলাপের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার পেছনে মুখ্য ভূমিকা রাখে। ভারতীয়দের বিরুদ্ধে বর্ণবাদ, কুসংস্কার এবং অবিচার লক্ষ করে গান্ধী তার জনগণের মর্যাদা এবং অবস্থান নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠেন।
দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয়দের ভোটাধিকার ছিল না। এই অধিকার আদায়ের বিল উত্থাপনের জন্য তিনি আরও কিছুদিন দেশটিতে থেকে যান। বিলের উদ্দেশ্য সিদ্ধ না হলেও এই আন্দোলন সেদেশের ভারতীয়দেরকে অধিকারসচেতন করে তুলেছিল। ১৮৯৪ সালে গান্ধী নাটাল ইন্ডিয়ান কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনের মাধ্যমে সেখানকার ভারতীয়দেরকে রাজনৈতিকভাবে সংঘবদ্ধ করেন। ১৮৯৭ সালের জানুয়ারিতে ভারতে এক সংক্ষিপ্ত সফর শেষে ফিরে আসার পর একদল শ্বেতাঙ্গ মব তাকে প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। গান্ধী এই মব সদস্যদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেননি। কারণ তার মতে, কারও ব্যক্তিগত ভুলের জন্য পুরো দলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়াকে তিনি সমর্থন করেন না।
১৯০৬ সালে ট্রান্সভাল সরকার উপনিবেশের ভারতীয়দের নিবন্ধনে বাধ্য করানোর জন্য একটি আইন পাশ করে। ১১ই সেপ্টেম্বর জোহানেসবার্গে সংঘটিত এক গণ প্রতিরোধে গান্ধী সবাইকে এই আইন বর্জন করতে বলেন। তিনি বলেন, আইন না মানার কারণে তাদের উপর যে অত্যাচার করা হবে দরকার হলে তা মেনে নেবেন, কিন্তু আইন মানবেন না। এই পরিকল্পনা কাজে দেয়, এবং ৭ বছর ব্যাপী এক আন্দোলনের সূচনা ঘটে। এ সময় আইন অম্যান্য করা, নিজেদের নিবন্ধন কার্ড পুড়িয়ে ফেলা সহ বিভিন্ন কারণে অনেক ভারতীয়কে বন্দি করা হয়। অনেকে আহত বা নিহত হয়। সরকার তার কাজে অনেকটাই সফল হয়। কিন্তু শান্তিকামী ভারতীয়দের উপর এহেন নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার সাধারণ মানুষের মধ্য থেকেই প্রতিবাদ শুরু হয়। অগত্যা দক্ষিণ আফ্রিকার জেনারেল ইয়ান ক্রিশ্চিয়ান স্মুট গান্ধীর সাথে সমঝোতা করতে বাধ্য হন। এর মাধ্যমেই গান্ধীর আদর্শ প্রতিষ্ঠা পায় এবং সত্যাগ্রহ তার আসল রূপ পেতে শুরু করে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
ভারতের রাজনীতি
১৯১৫ সালের ৯ই জানুয়ারী গান্ধী ভারতে ফিরে আসেন। এইজন্য ওই দিনটিকে প্রবাসী ভারতীয় দিবস হিসাবে পালন করা হয়। গান্ধীর ভারতীয় রাজনীতি এবং ভারতীয় জনগণের সাথে পরিচয় হয় গোপালকৃষ্ণ গোখলের মাধ্যমে, যিনি তৎকালীন একজন সম্মানিত কংগ্রেস নেতা ছিলেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
চম্পারণ এবং খেদা
গান্ধীর প্রথম অর্জন আসে ১৯১৮ সালের চম্পারণ বিক্ষোভ এবং খেদা সত্যাগ্রহের মাধ্যমে।
জমিদারের লাঠিয়ালদের মাধ্যমে অত্যাচারিত হয়েও তারা নামেমাত্র ক্ষতিপূরণ পায় যা তাদের তীব্র দারিদ্রের দিকে ঠেলে দেয়। গ্রামগুলোকে অতিরিক্ত নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর করে রাখা হয় এবং মদ্যপান ও অস্পৃশ্যতা ছিল ব্যাপক। মারাত্মক দুর্ভিক্ষের মাঝে ব্রিটিশ একটি শোষণমূলক কর চালু এবং তা বাড়াবার চেষ্টা করে। এতে পরিস্থিতি প্রচণ্ড অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। খেদা এবং গুজরাতেও একইরকম অবস্থা ছিল। গান্ধী সেখানে একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার বহুদিনের সমর্থক ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের একত্রিত করেন। তিনি একটি পূর্ণাঙ্গ জরিপ চালিয়ে গ্রামের মৃত্যুর হার এবং গ্রামবাসীদের ভয়াবহ দুর্ভোগের উপাত্ত সংগ্রহ করেন। গ্রামবাসীদের কাছে বিশ্বস্ত হবার পর তিনি গ্রামকে পরিষ্কার করার পাশাপাশি স্কুল ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন এবং গ্রামের নেতৃস্থানীয় লোকদের সামাজিক নির্যাতন এবং কুসংস্কারমুক্ত হবার আহ্বান জানান।
কিন্তু তার মূল প্রভাব পরিলক্ষিত হয়, যখন অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং প্রদেশ ছেড়ে যেতে নির্দেশ দেয়া হয়। জেলের বাইরে হাজার হাজার লোক জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এছাড়াও পুলিশ স্টেশন ও আদালতে এসে তারা গান্ধীর মুক্তি দাবি করতে থাকে যা আদালতকে নীরবে মেনে নিতে হয়। গান্ধী জমিদারদের বিরুদ্ধে সুসংগঠিত বিক্ষোভ ও আন্দোলনের নেতৃত্ব দান করেন এবং জমিদাররা ব্রিটিশ সরকারের নির্দেশে কৃষকদের আরও বেশি ক্ষতিপূরণ এবং চাষাবাদের বিষয়ে তাদের আরো নিয়ন্ত্রণ প্রদানে রাজি হয়। তারা খাজনার হার বৃদ্ধি বর্জন এবং দূর্ভিক্ষ শেষ হবার পূর্ব পর্যন্ত তা সংগ্রহ করা স্থগিত করে। এই বিক্ষোভ চলাকালেই জনগণ গান্ধীকে বাপু (পিতা) এবং মহাত্মা (মহৎ হৃদয়)[২০] উপাধি দান করে। খেদায় ব্রিটিশদের সাথে সমঝোতার সময় কৃষকদের প্রতিনিধিত্ব করেন সর্দার প্যাটেল। তিনি খাজনা আদায় বন্ধ এবং সকল বন্দীদের মুক্তি দান করেন। এর ফলে গান্ধীর সুনাম সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।
অসহযোগ
অন্যায়ের বিরুদ্ধে গান্ধীর অস্ত্র ছিল অসহযোগ এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ। পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগে সাধারণ মানুষের উপরে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক সংগঠিত হত্যাকাণ্ডের ফলে জনসাধারণ ক্ষুব্ধ হয়ে যায় এবং সহিংসতার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। গান্ধী ব্রিটিশ সরকারের কৃতকর্ম এরং ভারতীয়দের প্রতিশোধপরায়ণ আচরণ উভয়েরই নিন্দা করেন। তিনি একটি লিখিত বিবৃতিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিটিশ নাগরিকদের সমবেদনা জ্ঞাপন করেন এবং বিশৃঙ্খলার সমালোচনা করেন। তার এই পদক্ষেপ প্রাথমিক পর্যায়ে দলের ভিতরে অসন্তোষের জন্ম দিলেও গান্ধীর একটি আবেগীয় বক্তৃতার পর তা গৃহীত হয়। বক্তৃতায় তিনি মূলনীতিগুলোর বর্ণনা দিয়ে বলেন সবরকম বিশৃঙ্খলাই অমঙ্গলজনক এবং সমর্থনযোগ্য নয়। [২১] এই হত্যাকাণ্ড এবং গণবিক্ষোভের পর গান্ধী পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন এবং সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ লাভের দিকে মনোনিবেশ করেন, যা শেষ পর্যন্ত স্বরাজ বা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত, আদর্শগত, রাজনৈতিক স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নেয়।
১৯২১ সালের ডিসেম্বরে মহাত্মা গান্ধী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নির্বাহী হন। তার নেতৃত্বে কংগ্রেস স্বরাজের লক্ষ্যকে সামনে রেখে নতুন সংবিধান গ্রহণ করেন। সদস্য চাঁদা দিতে রাজি হওয়া যে কোন ব্যক্তির জন্য দলের সদস্যপদ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। নিয়মানুবর্তিতা উন্নতির জন্য বিভিন্ন শ্রেণির কমিটি গঠন করা হয় । দলকে একটি অভিজাত প্রতিষ্ঠান থেকে জাতীয় জনগণের আকর্ষণে রূপান্তর করা হয়। গান্ধী তার অহিংস নীতির পরিবর্ধন করেন স্বদেশি নীতি যোগ করে। স্বদেশি নীতি মতে সকল বিদেশি পণ্য বিশেষত ব্রিটিশ পণ্য বর্জন করা হবে। এর পথ ধরে তিনি সকল ভারতীয়কে ব্রিটিশ পোশাকের বদলে খাদি পরার আহ্বান জানান।[২২] তিনি সকল ভারতীয় পুরুষ ও মহিলা, ধনী ও গরিব মানুষকে দৈনিক খাদির চাকা ঘুরানোর মাধ্যমে স্বাধীনতার আন্দোলনকে সমর্থন করতে বলেন। এটি এমন একটি কৌশল ছিল যা নিয়মানুবর্তিতা ও আত্মত্যাগের অনুশীলনের মাধ্যমে অনিচ্ছা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা দূরীকরণের পাশাপাশি আন্দোলনে মহিলাদের যুক্ত করে। এ সময়ে মহিলাদের করা এ সকল কাজকে অসম্মানজনক বলে মনে করা হত। এছাড়াও ব্রিটিশ পণ্য বর্জনের পাশাপাশি গান্ধী জনগণকে ব্রিটিশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অফিস আদালত বর্জনের সরকারি চাকরি থেকে পদত্যাগ এবং ব্রিটিশ উপাধি বর্জনের ডাক দেন।
“অসহযোগ” ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও সাফল্য লাভ করে। উত্তেজনা বৃদ্ধিকারী এ আন্দোলনে সমাজের সকল স্তরের লোক অংশগ্রহণ করে। আন্দোলনটি চরমে আরোহণ করামাত্র অপ্রত্যাশিত ভাবে উত্তর প্রদেশের চৌরি চৌরায় তীব্র সংঘর্ষের ফলে এ আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটে। আন্দোলন সহিংসতার দিকে মোড় নিতে দেখে এবং এর ফলে সকল কর্মকাণ্ডের ব্যর্থতার আশঙ্কায় গান্ধী গণ অসহযোগ আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।[২৩] গান্ধী গ্রেপ্তার হলে ১৯২২ সালের ১০ মার্চ রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে তাকে ছয় বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। ১৯২২ সালের ২৮ মার্চ শুরু হওয়া শাস্তির কেবল দুই বছরের মত ভোগ করতে হয়। ১৯২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এপেনডিসাইটিসের অপারেশনের পর তাকে মুক্তি দেয়া হয়। গান্ধী ঐক্যবদ্ধ ব্যক্তিত্বের অভাবে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ভিতরে ফাটল ধরে যা দলটিকে দুটি ভাগে ভাগ করে দেয়। একটি অংশের নেতৃত্ব দেন চিত্তরঞ্জন দাস এবং মতিলাল নেহরু - আইনসভার পার্টির অংশগ্রহণ সমর্থন করেন। চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী এবং সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের নেতৃত্বে অপর অংশ এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করে। এছাড়াও হিন্দু ও মুসলিমদের অহিংস আন্দোলন চলাকালীন সৌহার্দ্যে ভাঙন ধরে। গান্ধী এসব বিরোধ মিটিয়ে তুলতে সেতুবন্ধের কাজ করার চেষ্টা করেন এবং এজন্য ১৯২৪ সালের শরৎকালে তিন সপ্তাহের অনশন করেন। তার এই প্রচেষ্টায় খুব বেশি সফলতা আসেনি।[২৪]
স্বরাজ ও লবণ সত্যাগ্রহ
গান্ধী ১৯২০ এর দশকের বেশির ভাগ সময় নীরব থাকেন। এ সময় তিনি স্বরাজ পার্টি এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের মাঝে বাধা দূর করার চেষ্টা করেন। অস্পৃশ্যতা, মদ্যপান, অবজ্ঞা এবং দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে তিনি সংগ্রাম অব্যাহত রাখেন। ১৯২৮ সালে তিনি আবার সামনে এগিয়ে আসেন। এর আগের বছর ব্রিটিশ সরকার স্যার জন সাইমনের নেতৃত্বে একটি নতুন সংবিধান সংশোধনী কমিশন গঠন করে যাতে একজনও ভারতীয় ছিল না। ফলে ভারতীয় রাজনৈতিক দলগুলো এই কমিশনকে বর্জন করে।
গান্ধী কলকাতা কংগ্রেসে ১৯২৮ সালের ডিসেম্বরে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি ভারতকে ডোমিনিয়নের মর্যাদা দেবার দাবি জানান, অন্যথায় নতুন অহিংস নীতির পাশাপাশি পূর্ণ স্বাধীনতার লক্ষ্যের হুমকি দেন। গান্ধী এর মাধ্যমে তরুণ নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু এবং জওহরলাল নেহরুর দর্শন সঞ্চালন করেন যারা অবিলম্বে স্বাধীনতার পক্ষপাতী ছিলেন। এই সিদ্ধান্তে তিনি দু'বছরের বদলে একবছর অপেক্ষা করার নীতিরও প্রতিফলন ঘটান।[২৫] ব্রিটিশ সরকার এর প্রত্যুত্তর দেয়নি। ১৯২৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বর লাহোরে ভারতীয় পতাকার উন্মোচন হয়। ১৯৩০ সালের ২৬শে জানুয়ারি লাহোরে মিলিত হয়ে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দিনটিকে ভারতীয় স্বাধীনতা দিবস হিসেবে উৎযাপন করে। অন্যান্য প্রায় সকল প্রতিষ্ঠান ও এই দিনটিকে উদ্যাপন করে। ঘোষণামতো গান্ধী লবণের উপর কর আরোপের বিরুদ্ধে নতুন সত্যাগ্রহ অভিযান শুরু করেন। ১৯৩০ সালের মার্চে এই উদ্দেশ্যে তিনি ডাণ্ডির উদ্দেশ্যে লবণ কুচকাওয়াজ আয়োজন করেন ও নিজের হাতে লবণ তৈরির জন্য ১২ই মার্চ থেকে ৬ই এপ্রিল পর্যন্ত ৪০০ কিলোমিটার হেঁটে এলাহাবাদ থেকে ডাণ্ডিতে পৌঁছান।
হাজার হাজার ভারতীয় তার সাথে হেঁটে সাগরের তীরে পৌঁছান। এটি ছিল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তার অন্যতম সফল প্রয়াস। ব্রিটিশরা এর প্রতিশোধ নিতে ৬০,০০০ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। সরকার গান্ধীর সাথে সমঝোতা করতে লর্ড এডওয়ার্ড আরউইনকে প্রতিনিধি নিয়োগ করে। গান্ধী-আর উইন প্যাক্টস হয় ১৯৪১ সালের মার্চ মাসে সরকার সকল গণ অসহযোগ আন্দোলন বন্ধের বিনিময় সকল রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে রাজি হয়। এছাড়াও গান্ধীকে গোল টেবিল বৈঠকের জন্য লন্ডনে আমন্ত্রণ জাননো হয। সেখানে তিনি একাই কংগ্রেসের প্রতিনিধিত্ব করেন। আলোচনা ভারতীয় যুবরাজ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর অনুষ্ঠিত হয় - যা গান্ধী ও অন্যান্য জাতীয়তাবাদীদের নিরাশ করে। লর্ড আরউইনের স্থলাভিষিক্ত লর্ড উইলিংডন জাতীয়তাবাদীদের বিরুদ্ধে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। গান্ধী পুনরায় গ্রেপ্তার হন এবং সরকার তার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে তাকে সম্পূর্ণরূপে তার অনুসারীদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। পদ্ধতিটি অবশ্য সফল হয়নি। ১৯৩২ সালে দলিত নেতা বি আর আম্বেদকারের প্রচেষ্টার ভিত্তিতে সরকারি নতুন সংবিধানের আওতায় অস্পৃম্শ্যদের জন্য আলাদা ইলেকটোরেট আয়োজন করে। এর প্রতিবাদে গান্ধী ১৯৩২ সালের সেপ্টেম্বরে ৬ দিনের অনশন পালন করেন এবং এতে সরকার বাধ্য হয়ে দলিত ক্রিকেটার ও পরবর্তীকালে রাজনৈতিক নেতা পালওয়াঙ্কার বালুর মধ্যস্থতায় আরও গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা প্রদান করে। এরপরই গান্ধী হরিজন ("ঈশ্বরের সন্তান") নাম দিয়ে দলিত, অস্পৃশ্যদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে এক নতুন অগ্রযাত্রার সূচনা করেন। ১৯৩৩ সালের ৮ মে তিনি হরিজন আন্দোলনকে এগিয়ে নেবার লক্ষ্যে ২১ দিনের জন্য আত্মশুদ্ধি অনশন করেন।[২৬]
১৯৩৪ সালের গ্রীষ্মে তাকে হত্যার জন্য তিনটি ব্যর্থ চেষ্টা চালানো হয়।
কংগ্রেস পার্টি ফেডারেশন স্কিমের ক্ষমতা মেনে নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে রাজি হলে গান্ধী দল থেকে নিজের সদস্যপদ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন। গান্ধী এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা না করলেও সরকারের সাথে রাজনৈতিক সমঝোতা করা কোন দলের নেতা হয়ে থাকবেন এমন গুজব এড়ানোর চেষ্টা করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
হত্যাকাণ্ড
১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি গান্ধীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সে সময় তিনি নতুন দিল্লীর বিরলা ভবন (বিরলা হাউস) মাঝে রাত্রিকালীন পথসভা করছিলেন। তার হত্যাকারী নাথুরাম গডসে ছিলেন একজন হিন্দু মৌলবাদী যার সাথে চরমপন্থী "হিন্দু মহাসভার" যোগাযোগ ছিল। "হিন্দু মহাসভা" পাকিস্তানীদের অর্থ সাহায্য দেবার প্রস্তাব করে ভারতকে দুর্বল করার জন্য গান্ধীকে দোষারোপ করে।[২৭] গোডসে এবং সহায়তাকারী নারায়ণ আপতেকে পরবর্তীতে আইনের আওতায় এনে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ১৯৪৯ সালের ১৪ নভেম্বর তাদের ফাঁসি দেয়া হয়। নতুন দিল্লির রাজঘাটের স্মৃতিসৌধে আছে - "হে রাম" - শব্দ দুটিকে গান্ধীর শেষ কথা বলে বিশ্বাস করা হয়, অবশ্য এই উক্তির সত্যতা নিয়ে সন্দেহ আছে।[২৮] জওহরলাল নেহরু রেডিওতে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে বলেন:
“ |
"বন্ধু ও সহযোদ্ধারা, আমাদের জীবন থেকে আলো হারিয়ে গেছে এবং সেখানে শুধুই অন্ধকার এবং আমি ঠিক জানি না আপনাদের কী বলব, কেমন করে বলব। আমাদের প্রেমময় নেতা যাকে আমরা বাপু বলে থাকি, আমাদের জাতির পিতা আর নেই। হয়ত এভাবে বলায় আমার ভুল হচ্ছে তবে আমরা আর তাকে দেখতে পাব না যাকে আমরা বহুদিন ধরে দেখেছি, আমরা আর উপদেশ কিংবা সান্ত্বনার জন্য তার কাছে ছুটে যাব না, এবং এটি এক ভয়াবহ আঘাত, শুধু আমার জন্যই নয়, এই দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য।"[২৯] |
” |
গান্ধীর ইচ্ছানুযায়ী, তার দেহভস্ম বিশ্বের বেশ কয়েকটি প্রধান নদী যেমন: নীলনদ, ভোলগা, টেমস প্রভৃতিতে ডুবানো হয়। সামান্য অংশ ডঃ ভি এম নোলের (পুনের একজন সাংবাদিক ও প্রকাশক) পক্ষ থেকে পরমহংস যোগানন্দকে পৌঁছে দেয়া হয়। এরপর তার দেহভস্ম সেলফ রিয়ালাইজেশন ফেলোশিপ লেক স্রাইনের মহাত্মা গান্ধী বিশ্ব শান্তি সৌধে একটি হাজার বছরের পুরনো চৈনিক পাথরের পাত্রে সংরক্ষণ করা হয়।
গান্ধীর মূলনীতি
সত্য
গান্ধী তার জীবনকে সত্য অনুসন্ধানের বৃহৎ উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে, এবং নিজের উপর নিরীক্ষা চালিয়ে তা অর্জন করেছিলেন। তিনি তার আত্মজীবনীর নাম দিয়েছিলেন দি স্টোরি অফ মাই এক্সপেরিমেণ্টস উইথ ট্রুথ যার অর্থ সত্যকে নিয়ে আমার নিরীক্ষার গল্প। গান্ধী বলেন তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ ছিল নিজের অন্ধকার, ভয় ও নিরাপত্তাহীনতাকে কাটিয়ে ওঠা। গান্ধী তার বিশ্বাসকে প্রথম সংক্ষিপ্ত করে বলেন, ঈশ্বর হল সত্য। পরবর্তীতে তিনি তার মত বদলে বলেন, সত্য হল ঈশ্বর। এর অর্থ সত্যই হল ঈশ্বরের ক্ষেত্রে গান্ধীর দর্শন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
অহিংসা
গান্ধী তার জীবনীতে অহিংসা সম্পর্কে বলেন: “যখন আমি হতাশ হই, আমি স্মরণ করি সমগ্র ইতিহাসেই সত্য ও ভালবাসার জয় হয়েছে। দুঃশাসক-হত্যাকারীদের কখনো অপরাজেয় মনে হলেও শেষ সবসময়ই তাদের পতন ঘটে মনে রাখবেন সর্বদাই।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
নিরামিষভোজন
ছোট থাকতে গান্ধী পরীক্ষামূলকভাবে মাংস খান। এটি হয়ত তার জন্মগত কৌতূহল ও তার বন্ধু শেখ মেহতাবের কারণে হয়েছে। নিরামিষভোজন এর ধারণা হিন্দু ও জৈন ধর্মে গভীরভাবে বিদ্যমান এবং তার স্থানীয় রাজ্য গুজরাতে বেশির ভাগ হিন্দুই ছিলেন নিরামিষভোজী। গান্ধী পরিবারও এর ব্যতিক্রম ছিল না। লন্ডনে পড়তে যাবার আগে গান্ধী তার মা পুতলিবাই এবং চাচা বেচারজির কাছে প্রতিজ্ঞা করেন যে, তিনি মাংস খাওয়া, মদ্যপান এবং নারীসঙ্গ থেকে বিরত থাকবেন। তিনি এই প্রতিজ্ঞা পালন করেছিলেন এবং এর মাধ্যমে খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি একটি দর্শন লাভ করেছিলেন। গান্ধী পরবর্তী জীবনে একজন পূর্ণ নিরামিষভোজী হয়ে ওঠেন। তিনি নিরামিষভোজনের উপর "দি মোরাল বেসিস অফ ভেজিটেরিয়ানিজম" বইটির পাশাপাশি এ বিষয়ের উপর বেশ কিছু নিবন্ধ লেখেন। এই লেখাগুলো কিছু কিছু ছাপা হয় লন্ডনের নিরামিষভোজী সংগঠন লন্ডন ভেজিটেরিয়ান সোসাইটির প্রকাশনা দি ভেজিটেরিয়ান এ। গান্ধী এ সময় অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের সঙ্গলাভ করেন এবং লন্ডন ভেজিটেরিয়ান সোসাইটির চেয়ারম্যান ড. জোসেফ ওল্ডফিল্ড এর বন্ধু হয়ে ওঠেন।
হেনরি স্টিফেনস সল্টের লেখা ও কাজের পাঠক ও সমঝদার হয়ে ওঠা গান্ধী নিরামিষ খাওয়ার পক্ষে আন্দোলনকারীদের সাথেও মাঝে মাঝে যোগ দেন। লন্ডন থেকে ফেরার পর গান্ধী নিরামিষ খাবার ব্যাপারে মানুষকে উৎসাহিত করেন। গান্ধীর মতে, নিরামিষ শুধু শরীরের চাহিদাই মেটাবে না, এটি মাংসের প্রয়োজন মিটানোর মাধ্যমে অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যও পূরণ করবে, যা সবজি ও ফলের চেয়ে মূল্যবান। এছাড়াও সে সময় অনেক ভারতীয়ই নিম্ন আয়ের হওয়ার নিরামিষভোজন আন্দোলন কেবল আদর্শগত আন্দোলন না থেকে বাস্তব রূপও নিয়েছে। তিনি অনেক সময় ধরে খাওয়ার বিরোধিতা করেছেন, অনশন করাকে রাজনৈতিক প্রতিবাদ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তিনি তার দাবি আদায়ে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত না খাওয়ার প্রতিজ্ঞা করতেন। তার জীবনীতে লেখা আছে, নিরামিষভোজনই ছিল ব্রহ্মচর্চায় তার গভীর মনোযোগের সূচনা। মুখের উপর নিয়ন্ত্রণ না আনতে পারলে তার ব্রহ্মচর্য ব্যর্থ হতে পারত।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
ব্রহ্মচর্য
গান্ধীর ষোল বছর বয়সে তার বাবা ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। গান্ধী তার বাবার অসুস্থতার পুরো সময় তার সাথে থাকেন। একরাতে গান্ধীর চাচা এসে তাকে বিশ্রাম নেবার সুযোগ করে দেন। তিনি তার শোবার ঘরে ফিরে যান এবং কামনার বশবর্তী হয়ে তার স্ত্রীর সাথে প্রণয়ে লিপ্ত হন। এর সামান্য পরেই একজন কর্মচারী এসে তার পিতার মৃত্যুসংবাদ জানায়। তিনি এ ঘটনাটিকে দ্বিগুণ লজ্জা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এই ঘটনাটি গান্ধীকে ৩৬ বছর বয়সে বিবাহিত থাকা অবস্থায় একজন ব্রহ্মচারী হতে বাধ্য করে।[৩০] এই সিদ্ধান্তের পেছনে ব্রহ্মচর্যের দর্শন তাকে ব্যাপকভাবে প্ররোচিত করে, যা আদর্শগত ও বাস্তবগত পবিত্রতার চর্চা করে। গান্ধী ব্রহ্মচর্যকে ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ এবং আত্মোপলব্ধির পন্থা হিসেবে দেখতেন। গান্ধী তার আত্মজীবনীতে তার শৈশবের স্ত্রী কস্তুরবার সঙ্গে তার কামলালসা এবং হিংসার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার কথা বলেন। গান্ধী আত্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আদর্শ হবার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন যেন তিনি ভোগ করার বদলে ভালোবাসতে শেখেন। গান্ধীর কাছে ব্রহ্মচর্যের অর্থ, "চিন্তা, বাক্য ও কর্মের নিয়ন্ত্রণ"।[৩১]
বিশ্বাস
গান্ধী হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং তার সারা জীবন ধরে হিন্দুধর্মের চর্চা করেন। হিন্দুধর্ম থেকেই তিনি তার অধিকাংশ আদর্শ গ্রহণ করেন। তিনি সকল ধর্মকে সমানভাবে বিবেচনা করতেন এবং তাকে এই ধারণা থেকে বিচ্যুত করার সব প্রচেষ্টা প্রতিহত করেন। তিনি ব্রহ্মবাদে আগ্রহী ছিলেন এবং সব বড় ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। হিন্দুবাদ সম্পর্কে তিনি নিচের উক্তিটি করেন:
হিন্দুবাদ আমাকে পরিপূর্ণভাবে তৃপ্ত করে, আমার সম্পূর্ণ সত্ত্বাকে পরিপূর্ণ করে...। যখন সংশয় আমাকে আঘাত করে, যখন হতাশা আমার মুখের দিকে কড়া চোখে তাকায় এবং যখন দিগন্তে আমি একবিন্দু আলোও দেখতে না পাই, তখন আমি ভগবত গীতার দিকে ফিরে তাকাই এবং নিজেকে শান্ত করার একটি পঙ্ক্তি খুঁজে নিই; আমি অনতিবিলম্বে অত্যধিক কষ্টের মাঝেও হেসে উঠি। আমি ভগবত গীতার শিক্ষার কাছে কৃতজ্ঞ।
গান্ধী গুজরাতি ভাষায় "ভগবত গীতা"র উপর ধারাভাষ্য লেখেন। গুজরাতি পাণ্ডুলিপিটি ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করেন মহাদেব দাসী। তিনি একটি অতিরিক্ত সূচনা এবং ধারাভাষ্য যোগ করেন। এটি গান্ধীর লিখিত একটি ভূমিকাসহ প্রকাশিত হয় ১৯৪৬ সালে।[৩২][৩৩] গান্ধী বিশ্বাস করতেন, প্রতিটি ধর্মের মূলে আছে সত্য ও প্রেম (করুণা, অহিংসা এবং সোনালী শাসন)। তিনি একজন ক্লান্তিহীন সমাজ সংস্কারক ছিলেন এবং সব ধর্মের ভণ্ডামি, অপকর্ম ও অন্ধবিশ্বাসের বিপক্ষে ছিলেন। ধর্ম সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন:
যদি আমি খ্রিস্টান ধর্মকে নিখুঁত এবং শ্রেষ্ঠতম ধর্ম হিসেবে মেনে নিতে না পারি, তবে হিন্দু ধর্মকেও সেভাবে মেনে নিতে পারি না। হিন্দুধর্মের ত্রুটিগুলি আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। যদি অস্পৃশ্যতা হিন্দু ধর্মের অংশ হয় তবে, এটি একটি পচা অংশ বা আঁচিল। বেদবাক্যগুলোকে ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত উক্তি বলার কারণ কি? যদি এগুলো অনুপ্রাণিত হয় তবে বাইবেল বা কোরান কেন নয়? খ্রিস্টান বন্ধুরা যেভাবে আমাকে ধর্মান্তরিত করতে প্রবল চেষ্টা করেছেন তেমনি মুসলিম বন্ধুরাও করেছেন। আবদুল্লাহ শেঠ ইসলাম চর্চা করার জন্য আমাকে উৎসাহিত করে চলেছেন এবং এর সৌন্দর্য সম্পর্কে সবসময়ই তিনি বলেছেন। যখনি আমরা নৈতিক ভিত্তি হারিয়ে ফেলি, আমরা ধার্মিক হওয়া থেকে ক্ষান্ত হই। নৈতিকতা হারিয়ে ধার্মিক হওয়া বলতে কিছু নেই। উদাহরণস্বরূপ, মানুষ মিথ্যাবাদী, নির্মম এবং আত্মসংযমহীন হয়ে দাবি করতে পারে না যে ঈশ্বর তার সাথে আছেন।
পরবর্তী জীবনে তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় তিনি হিন্দু কিনা- তিনি বলেন,
হ্যাঁ, আমি তাই। এ ছাড়াও আমি একজন খ্রিস্টান, একজন মুসলিম, একজন বৌদ্ধ এবং একজন ইহুদি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও গান্ধীর ভিতরে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকা স্বত্ত্বেও তাঁরা একাধিকবার নিজেদের মধ্যে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। এই বিতর্কগুলি সে সময়কার জনপ্রিয়তম দুই ভারতীয়ের ভিতরে দার্শনিক মতভেদকে প্রমাণ করে। ১৫ জানুয়ারি, ১৯৩৪ সালে বিহারে একটি ভূমিকম্প আঘাত করে এবং এটি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের কারণ হয়। গান্ধী বলেন, এটি হবার কারণ হল উঁচুশ্রেণির হিন্দুদের অস্পৃশ্যদের তাদের প্রাসাদে ঢুকতে না দেবার পাপের ফল। রবীন্দ্রনাথ গান্ধীর এই মন্তব্যের ব্যাপক বিরোধিতা করে বলেন, ভূমিকম্প কেবল প্রাকৃতিক কারণেই সংঘটিত হতে পারে, অস্পৃশ্যতার চর্চা যতই বেমানান হোক না কেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
সরলতা
গান্ধী প্রবলভাবে বিশ্বাস করতেন যে, সামাজিক কাজে নিয়োজিত একজন ব্যক্তি অবশ্যই সাধারণ জীবন যাপন করবে যেটা তার মতে তাকে ব্রহ্মচর্যের পথে নিয়ে যাবে । তাঁর সরলতার সূচনা ঘটে দক্ষিণ আফ্রিকায় যাপিত পশ্চিমা জীবনাচরণ ত্যাগ করার মাধ্যমে। তিনি এটিকে "শূন্যে নেমে যাওয়া" হিসেবে আখ্যায়িত করেন যার মধ্যে ছিল অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে ফেলা, সাদামাটা জীবনযাপন গ্রহণ করা এবং নিজের কাপড় নিজে ধোয়া।[৩৪] একবার তিনি নাটালদের দেয়া উপহার ফিরিয়ে দেন।[৩৫]
পোশাক
১৯৩১ সালে গান্ধী লন্ডনে ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিতে গেলে তাকে দেখে চার্চিল আশঙ্কাগ্রস্ত হয়ে বলেছিলেন তার বমি আসছে, গান্ধীর অর্ধনগ্ন ফকিরের পোশাক দেখে নয়, বরঞ্চ এটা দেখে যে ওই রকমের পোশাকধারী একজন আইন-অমান্য আন্দোলন চালাচ্ছেন, আবার সেই সঙ্গে সমান মর্যাদায় ভারত সম্রাটের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলছেন।[৩৬] গান্ধীর জামাকাপড়ের কমতি দেখে ওই সময়েই গান্ধীকে দেখতে যাওয়া তার অনুরাগী অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিন বলেন, শীতের দেশে গান্ধী ওই পোশাকে এসে নিজেকে এমনভাবে আলোচিত করে না-তুললেও পারতেন৷[৩৭] পরিধেয় নিয়ে গান্ধী নিজে অবশ্য মোটেই বিব্রতবোধ করেন নি, উষ্ণ আবহাওয়া ও দারিদ্র্যের কারণে ভারতীয়দের পোশাক ওই রকমেরই মামুলি হওয়া দরকার বলে তিনি ভাবতেন৷[৩৮] ঐ বেশেই তিনি গোলটেবিল বৈঠকের সদস্যদের জন্য বাকিংহাম প্যালেসে সম্রাট পঞ্চম জর্জের দেওয়া রাজকীয় অভ্যর্থনায় যোগ দিয়েছেন এবং নিজের রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে সম্রাটের সঙ্গে কৌতুকপূর্ণ বাক্য বিনিময় করেছেন৷ পরবর্তীকালে গান্ধীর বেশভূষার স্বল্পতার কথা উল্লেখ করায়, গান্ধী জবাব দিয়েছিলেন, 'তাতে কোনো অসুবিধা হয় নি, কেননা সম্রাটের নিজের গায়ে যে পোশাক ছিল তা আমাদের দু'জনের জন্য পর্যাপ্ত৷'
লেখালেখি
গান্ধী ছিলেন বহুমুখী লেখক, সম্পাদক। কয়েক দশক ধরে তিনি সম্পাদনা করেছেন গুজরাতি, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত পত্রিকা হরিজন। কেবল ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত তার সম্পাদিত পত্রিকার মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকাকালীন ইন্ডিয়ান অপিনিয়ন ও দেশে ফেরার পর ইয়ং ইন্ডিয়া। তাছাড়া তার হাতেই সম্পাদিত হতো গুজরাতও ভাষার মাসিকপত্র নবজীবন, যা পরে হিন্দি ভাষায়ও প্রকাশিত হতো।[৩৯] গান্ধী পত্র-পত্রিকায় প্রচুর চিঠি লিখতেন। প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন পত্রিকায় তার চিঠি প্রকাশিত হতো।
গান্ধীর বেশ কিছু বই প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তার আত্মজীবনী, সত্যের সঙ্গে আমার পরিক্ষার কাহিনী (The Story of My Experiments with Truth), দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রাম নিয়ে “দক্ষিণ আফ্রিকায় সত্যাগ্রহ (Satyagraha in South Africa), স্বাধিকার বিষয়ে ম্যানিফেস্টো “হিন্দি স্বরাজ” (Hind Swaraj or Indian Home Rule) ও গুজরাতি ভাষায় জন রাসকিন-এর Unto This Last । [৪০] শেষোক্তটি গান্ধীর অর্থনৈতিক কর্মসূচি হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। এছাড়া নিরামিষভোজন, আহার ও স্বাস্থ্য, ধর্ম, সমাজ সংসার ইত্যাদি বিষয়েও তিনি প্রচুর লেখালেখি করেছেন। গান্ধী মূলত লিখতেন গুজরাতি ভাষায়। তবে, তার বই-এর হিন্দি ও ইংরেজি অনুবাদ তিনি দেখে দিতেন।
১৯৬০ এর-এর দশকে ভারত সরকার গান্ধীর রচনাবলী (The Collected Works of Mahatma Gandhi) প্রকাশ করে। প্রায় শতাধিক খণ্ডে প্রকাশিত এই রচনাবলীতে প্রায় ৫০,০০০ পাতা আছে। ২০০০ সালে এর একটি পুনর্মার্জিত সংস্করণ প্রকাশিত হলে বিতর্কের সূত্রপাত হয়। গান্ধীর অনুসারীরা অভিযোগ করে যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সেখানে পরিবর্তন করা হয়েছে। [৪১]
গান্ধী বিষয়ক বই
বেশ কয়েকজন জীবনীকার গান্ধীর জীবনী রচনার কাজ করেছেন। এর মধ্যে দুইটি রচনা প্রণিধানযোগ্য। ডি. জি. তেন্ডুলকরের আট খণ্ডের Mahatma. Life of Mohandas Karamchand Gandhi ও পিয়ারীলাল ও সুশীলা নায়ারের দশখণ্ডের Mahatma Gandhi। বলা হয়ে থাকে আমেরিকান সেনাবাহিনীর জি বি সিংহ ২০ বছর [৪২] ধরে গান্ধীর মূল বক্তৃতা ও রচনা সংগ্রহ করেছেন তার গবেষণা গ্রন্থ Gandhi Behind the Mask of Divinity এর জন্য।
অনুসারী ও প্রভাব
অনেক রাজনৈতিক নেতা ও আন্দোলনকে গান্ধী প্রভাবিত করেছেন। আমেরিকার নাগরিক অধিকার আন্দোলন-এর অন্যতম নেতা মার্টিন লুথার কিং ও জেসম লওসন গান্ধীর অহিংস নীতির আলোকে নিজেদের কর্মপন্থা ঠিক করতেন। [৪৩] দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা নেলসন মেন্ডেলাও গান্ধীর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছন।[৪৪] এই তালিকায় আরো আছেন খান আবদুল গাফফার খান [৪৫] , স্টিভ বিকো ও অং সান সু চী [৪৬] গান্ধীর জীবন ও শিক্ষা অনেককে অনুপ্রাণিত করেছে। এদের অনেকে পরবর্তী সময়ে গান্ধীকে তাদের শিক্ষাগুরু হিসাবে বর্ণনা করেছেন। আবার অনেকে সারাজীবন গান্ধীর আদর্শ প্রচার করেছেন। ইউরোপে রোমাঁ রোলাঁ ১৯২৪ সালে প্রথম তার “মহাত্মা গান্ধী” গ্রন্থে তাকে ইউরোপে তুলে ধরেন। ১৯৩১ সালে পদার্থবিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন গান্ধীর সঙ্গে পত্রালাপ করেন। গান্ধীর কাছে লেখা এক চিঠিতে আইনস্টাইন গান্ধীকে “আগামী প্রজন্মের জন্য আদর্শ” (a role model for the generations to come) হিসাবে বর্ণনা করেন। [৪৭]
এছাড়া ব্রিটিশ গায়ক জন লেনন অহিংসা নিয়ে তার অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে গান্ধীকে উল্লেখ করতেন। [৪৮] ২০০৭ সালে এক সম্মেলনে আমেরিকার সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট তার ওপর গান্ধীর প্রভাবের কথা উল্লেখ করেন। [৪৯]
মহাত্মা গান্ধী এবং লিও তলস্তয়
পুরাণে পোরবন্দরকে বলা হয় সুদামা পুরী। ছিল একটি দেশিয় রাজ্য। বর্তমান গুজরাট রাজ্যের অধীন এখানেই জন্ম মহাত্মা গান্ধীর। বাবার নাম করমচাঁদ গান্ধী মা-পুতলিবাই। গান্ধীজির পুরো নাম মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। ছোটবেলায় তাঁকে ডাকা হত 'মোহন'। পড়াশোনা করে ব্যারিস্টারি পাশ করে দক্ষিণ আফ্রিকা যান গান্ধীজি। আইন ব্যবসা এবং রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ একসাথে চলতে থাকে। পরাধীন ভারতে ফিরে খিলাফৎ আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন, লবণ সত্যাগ্রহ, আইন অমান্য, ভারত ছাড়ো আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। বেশ কয়েকবার কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। ইংরেজ সরকার তাঁকে অনেকবার কারারুদ্ধ ও অন্তরীণ করে। গান্ধীজির কর্মপ্রেরণা ছিল অহিংস- অসহযোগ সত্যাগ্রহ ও অনশন। জীবন ও রাষ্ট্রদর্শন নিয়ে অনেক বই লিখেছেন। বিশ্বশান্তির প্রতীক জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী (জন্ম: ২ অক্টোবর ১৮৬৯ শহিদ হন: ৩০ জানুয়ারি ১৯৪৮)।
প্রখ্যাত রুশ লেখক লিও তলস্তয়। তাঁর জন্ম রুশ সাম্রাজ্যের তুলা প্রদেশে। গ্রামের নাম ইয়ামায়া পলিয়ানা। তাঁর লেখা উপন্যাস 'যুদ্ধ ও শান্তি' এবং আম্মা কারেনিনা বিশ্ব ইতিহাসে অনবদ্য সৃষ্টি। লিও তলস্তয়ের জন্ম: ৯ সেপ্টেম্বর ১৮২৮, মৃত্যু ২০ নভেম্বর ১৯১০। দুইদেশ, দুইজাতি দুই মনীষী। মহাত্মা গান্ধী এবং লিও তলস্তয়। এঁদের চরিত্র এবং ভবিতব্য ভিন্ন হওয়ার কথা। কিন্তু এই দুই মহান ব্যক্তির মধ্যে বিরাজ করেছে আধ্যাত্মিক জ্ঞাতিত্ব যা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। এস এন চুবাকভ লিখেছেন- "গান্ধী এবং তলস্তয় জন্মেছিলেন দুই ভিন্ন দেশে। তাঁদের পরিবেশও ছিল আলাদা। বাধা, বিপত্তিকে অতিক্রম করে এই মহান ব্যক্তিত্বের মধ্যে ঘনিষ্ঠ আধ্যাত্মিক জ্ঞাতিত্ব ছিল, ছিল এক অনন্য অভিন্নতা। মানবতাবাদী বিশ্ব সংস্কৃতির ইতিহাসে যার কোনো অনুরূপ উদাহরণ নেই।"
ভারতের কয়েক কোটি মানুষের রক্ষাকর্তা তথা জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী এবং রাশিয়ার সাধারণ মেহনতী মানুষের প্রবক্তা লিও তলস্তয়ের আধ্যাত্মিক ঘনিষ্ঠতা সত্যিই উজ্জ্বল।
তলস্তয়-এর লেখা উপন্যাস 'যুদ্ধ ও শান্তি' এবং 'আম্মা কারোনিনা' বিশ্ব ইতিহাসে অনবদ্য সৃষ্টি। এই বইগুলি লেখেন যথাক্রমে ১৮৬৭ এবং ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে। এছাড়া তাঁর লেখা 'চাইল্ড হুড' (১৮৫২) মানুষের মনে দাগ কাটে। সাহিত্যের মাধ্যমে, লেখনির মাধ্যমে তলস্তয় সংগ্রাম করেছেন অশিক্ষা, কুসংস্কার এবং যুদ্ধের বিরুদ্ধে।
মহাত্মা গান্ধী এবং লিও তলস্তয় ছিলেন সত্যনিষ্ট। ব্যক্তিগত স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে তাঁরা করে গেছেন সত্যের সাধনা। গান্ধীজি এবং তলস্তয়ের কাছে জীবনের প্রধান লক্ষ্য ছিল-জনগণ তথা সমগ্র মানব জাতির নিঃস্বার্থ সেবা। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সক্রিয় প্রেম এবং সব জীবের প্রতি শ্রদ্ধার আদর্শ উভয়কেই অনুপ্রেরণা দিত। তলস্তয় লিখেছেন- "সেকেলে ও জীর্ণ যা কিছু, সে গুলিকে সরিয়ে দিয়ে সেই জায়গায় নতুন কিছুকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে, অন্য সবাইকে একটি উচ্চতর অভিন্ন জনসাধারণের পক্ষে অধিগম্য একটা আদর্শ তুলে ধরা চাই। সেই আদর্শই হল মানবিক ঐক্যের, বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের আদর্শ। আমাদের চেষ্টা করা দরকার- ভেদ সৃষ্টিকারী বাধাকে ভেঙ্গে ফেলার"।
গান্ধীজিও চাইতেন সমস্ত রকম বাধা ও বেড়া-সামাজিক জাত পাত, ধর্মীয়, বর্ণগত সবকে ভেঙ্গে ফেলে বিশ্ব সর্বজনীন ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে তুলতে। সেই পথ হবে সত্যের পথ, শান্তির পথ, অহিংসার পথ যা তলস্তয়ও স্বীকার করতেন। উনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীতে প্রকটিত হয়েছিল সমরবাদের মতো দানবিক ও কুৎসিত জনবিরোধী শক্তিগুলি। যুদ্ধকে পরিহার করে শান্তির বাণী দিয়ে নতুন সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যই ছিল এঁদের।
অমানুষিক পরিশ্রম করে অহিংসার শিক্ষাকে বিকশিত করেছিলেন তলস্তয়, গান্ধীজিও তাঁর জীবনব্যাপী প্রয়াসের দ্বারা অহিংসার ভাবধারাকে পূর্ণরূপে প্রকাশ করেছিলেন।
তলস্তয় ছিলেন গান্ধীজির থেকে ৪১ বছরের বড়। অমানবিকতার দূর্ভেদ্য বেড়া ভাঙ্গার কাজ প্রথম শুরু করেন তলস্তয়। পরে তা সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস করেন গান্ধীজি মানবতাবাদী তলস্তয় এবং গান্ধীজি উভয়ই একই পথের পথিক।
মানবিক সহৃদয়তা এবং সামাজিক ন্যায় বিচারের সর্বোচ্চ লক্ষ্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে তলস্তয় এবং গান্ধীজির অবদান বিশ্ব ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। গান্ধীজি বিশ্বাস করতেন গীতার সেই বাণী "কর্মণ্যেব্যাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন।"
আর তলস্তয়ও তাঁর মৃত্যুর চারদিন আগেও রোজনামচায় ফরাসি ভাষা লিখেছেন- "মানব কল্যাণে যা করা উচিত তা করা, পরে কি ঘটবে তা ভেবো না।"
চলচ্চিত্র
বর্তমানে ভারতে প্রভাব
ভারত, তার দ্রুত অর্থনৈতিক আধুনিকীকরণ এবং নগরায়ণের সাথে, গান্ধীর অর্থনীতি প্রত্যাখ্যান করেছে[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] তবে তার রাজনীতির বেশিরভাগ অংশ গ্রহণ করেছে এবং তার স্মৃতি শ্রদ্ধা অব্যাহত রেখেছে।
অবদান
মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন ২ অক্টোবর ভারতের জাতীয় ছুটি, গান্ধী জয়ন্তী হিসাবে পালিত হয়। ২০০৭ সালের ১৫ জুন জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে গান্ধীর জন্মদিনকে আন্তর্জাতিক অহিংসা দিবস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।[৫৩] মহাত্মা গান্ধী বহুত্ববাদী ভারতীয় সমাজে সৌভ্রাতৃত্বপূর্ন সহাবস্থান আদর্শের বিশিষ্ট প্রবক্তা।
সমালোচনা
দক্ষিণ আফ্রিকায় লেখা গান্ধীর কিছু নিবন্ধ বিতর্কিত। পুনর্মুদ্রিত “দি কালেকটেড ওয়ার্কস অফ মহাত্মা গান্ধী” (ভলিউম ৮, পৃষ্ঠা.১২০) এ গান্ধী “ইণ্ডিয়ান ওপিনিয়ন” প্রবন্ধে ১৯০৮ সালের দক্ষিণ আফ্রিকার সময় সম্পর্কে বলেন, অনেক স্থানীয় কয়েদী পশুত্ব থেকে কেবল একধাপ উপরে অবস্থান করছিল এবং প্রায়ই নিজেদের ভিতরে বিবাদ ও হানাহানি করত”। একই সংকলনের (ভলিউম ২, পৃষ্ঠা.৭৪)তে, গান্ধীর ২৬ সেপ্টেম্বর ১৮৯৬ সালে দেয়া একটি ভাষণের উল্লেখ করা হয় যেখানে তিনি কাফির নামে একশ্রেণির মানুষের কথা বলেন, যাদের পেশা শিকার করা এবং একমাত্র লক্ষ্য একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক গবাদি পশু জমিয়ে বউ ক্রয় করা। কাফির শব্দটিকে বর্তমানে আক্রমণাত্মক শব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এমন সব উক্তির জন্য গান্ধীর বিরুদ্ধে বর্ণবাদের কিছু অভিযোগ উঠেছে।[৫৪]
টীকা
- ↑ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে এই উপাধিটি দিয়েছেন।[২]
- ↑ শোনা যায় যে সন্তান জন্ম দেবার সময়ে তারা মারা যান
আরও দেখুন
- শান্তিকর্মীদের তালিকা
- বেসামরিক মানবাধিকার কর্মীদের তালিকা
- সাতটি সামাজিক পাপ (বা বিশ্বের সাতটি সাঙ্ঘাতিক ভুল)
- গান্ধী টুপি
- গান্ধী টির্থ – গান্ধী আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং গান্ধী ও তার বক্তব্য বিষয়ক অধ্যয়ন ও গবেষণা যাদুঘর।
- ত্রিকরণশুদ্ধি
তথ্যসূত্র
- ↑ Jeffrey M. Shaw; Timothy J. Demy (২০১৭)। War and Religion: An Encyclopedia of Faith and Conflict। ABC-CLIO। পৃষ্ঠা 309। আইএসবিএন 978-1-61069-517-6।
- ↑ Tagore, Rabindranath (১৯৯৮-১২-১৫)। Dutta, Krishna; Robinson, W. Andrew, সম্পাদকগণ। Rabindranath Tagore: An Anthology: An Anthology (ইংরেজি ভাষায়)। St. Martin's Publishing Group। পৃষ্ঠা ২। আইএসবিএন 978-0-312-20079-4।
- ↑ McGregor, R. S. (Ronald Stuart) (১৯৯৭)। The Oxford Hindi-English Dictionary। Oxford [England]: Oxford University Press। আইএসবিএন 0-19-864339-X। ওসিএলসি 37448787।
- ↑ "Gandhi not formally conferred 'Father of the Nation' title: Govt - Indian Express"। archive.indianexpress.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-১৯।
- ↑ Oct 26, PTI | Updated:; 2012; Ist, 9:25। "Constitution doesn't permit 'Father of the Nation' title: Government | India News - Times of India"। The Times of India (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-১৯।
- ↑ "Crusade with arms"। The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০০-০২-০১। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-১৯।
- ↑ "10-year-old's RTI on 'Father of the Nation' title for Gandhi"। NDTV.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-১৯।
- ↑ "General Assembly adopts texts on day of non-violence,..."। un.org। জাতিসংঘ। ১৫ জুন ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৭-০১।
- ↑ "Maulana Abul Kalam Azad : Educationist & Scholar Extraordinary"। মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক, ভারত। ৭ নভেম্বর ২০০৮।
- ↑ Todd, Anne M. (২০০৪)। Mohandas Gandhi। Marty, Martin E., 1928-। Philadelphia: Chelsea House। আইএসবিএন 978-0-7910-7864-8। ওসিএলসি 613205934।
- ↑ Gandhi, Rajmohan (২০০৮-০৩-১০)। Gandhi: The Man, His People, and the Empire (ইংরেজি ভাষায়)। University of California Press। আইএসবিএন 978-0-520-25570-8।
- ↑ Renard, John, 1944- (১৯৯৯)। Responses to 101 questions on Hinduism। New York: Paulist Press। আইএসবিএন 0-8091-3845-X। ওসিএলসি 40199852।
- ↑ Misra, Amalendu (২০০৪)। Identity and Religion: Foundations of Anti-Islamism in India (ইংরেজি ভাষায়)। Sage Publications। আইএসবিএন 978-0-7619-3227-7।
- ↑ Gandhi, Rajmohan. (২০০৬)। Mohandas : a true story of a man, his people, and an empire। New Delhi: Penguin Books। আইএসবিএন 978-81-8475-317-2। ওসিএলসি 643855431।
- ↑ Tendulkar, D. G. (১৯৫১)। Mahatma; Life of Mohandas Karamchand Gandhi: Illus. Collected and Arranged by Vithalbhai K. Jhaveri; Foreword by Jawaharlal Nehru (ইংরেজি ভাষায়)।
- ↑ Malhotra, S. L. (২০০১)। Lawyer to mahatma : life, work and transformation of M.K. Ganddhi। New Delhi: Deep & Deep। আইএসবিএন 81-7629-293-1। ওসিএলসি 49339429।
- ↑ গুহ। ২০১৫। পৃষ্ঠা ২২।
- ↑ Sharma, Arvind,। Gandhi : a spiritual biography। New Haven। আইএসবিএন 978-0-300-18738-0। ওসিএলসি 889943239।
- ↑ "মহাত্মা গান্ধীর জীবনী Mahatma Gandhi Biography in Bengali » Adi Sikha"। Adi Sikha - আদি শিখা (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৯-২২। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-২৩।
- ↑ Reweaving the web of life : feminism and nonviolence। McAllister, Pam.। Philadelphia, PA। আইএসবিএন 0-86571-016-3। ওসিএলসি 8914563।
- ↑ R. Gandhi, Patel: A Life, p. 82.
- ↑ R. Gandhi, Patel: A Life, p. 89.
- ↑ R. Gandhi, Patel: A Life, p. 105.
- ↑ R. Gandhi, Patel: A Life, p. 131.
- ↑ R. Gandhi, Patel: A Life, p. 172.
- ↑ R. Gandhi, Patel: A Life, pp. 230–32.
- ↑ R. Gandhi, Patel: A Life, p. 472.
- ↑ Vinay Lal. ‘Hey Ram’: The Politics of Gandhi’s Last Words. Humanscape 8, no. 1 (January 2001): pp. 34–38.
- ↑ Nehru's address on Gandhi's death
- ↑ "Time magazine people of the century"। ২১ জুন ২০০০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৭।
- ↑ The Story of My Experiments with Truth — An Autobiography[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], p. 176.
- ↑ Desai, Mahadev. The Gospel of Selfless Action, or, The Gita According To Gandhi. (Navajivan Publishing House: Ahmedabad: First Edition 1946). Other editions: 1948, 1951, 1956.
- ↑ A shorter edition, omitting the bulk of Desai's additional commentary, has been published as: Anasaktiyoga: The Gospel of Selfless Action. Jim Rankin, editor. The author is listed as M.K. Gandhi; Mahadev Desai, translator. (Dry Bones Press, San Francisco, 1998) আইএসবিএন ১-৮৮৩৯৩৮-৪৭-৩.
- ↑ The Story of My Experiments with Truth — An Autobiography[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], p. 177.
- ↑ The Story of My Experiments with Truth — An Autobiography[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], p. 183.
- ↑ D. G. Tendulkar, Mahatma, vol. iii, Bombay, 1952, p 68
- ↑ Charles Chaplin, My Autobiography, New York, 1964, pp 343-44
- ↑ http://www.natun-diganta.com/archieves/5th%20year/1st%20edition/jatiotabad%20shampro.html ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০ তারিখে জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও জনগণের মুক্তি- সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
- ↑ Peerless Communicator ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ আগস্ট ২০০৭ তারিখে by V.N. Narayanan. Life Positive Plus, Oct–Dec 2002
- ↑ Gandhi, M. K.। Unto this Last: A paraphrase (পিডিএফ) (English; trans. from Gujarati ভাষায়)। Ahmedabad: Navajivan Publishing House। আইএসবিএন 81-7229-076-4। ২৭ মে ২০০৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মার্চ ২০০৮।
- ↑ Collected Works of Mahatma Gandhi (CWMG) Controversy (gandhiserve)
- ↑ "Gandhi Behind the Mask of Divinity"। ২০০৭-১২-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১২-১৭।
- ↑ "COMMEMORATING MARTIN LUTHER KING JR.: Gandhi's influence on King"। ৯ আগস্ট ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মার্চ ২০০৮।
- ↑ Nelson Mandela, The Sacred Warrior: The liberator of South Africa looks at the seminal work of the liberator of India ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে, Time Magazine, Jan. 3, 2000.
- ↑ "A pacifist uncovered — Abdul Ghaffar Khan, Pakistani pacifist"। ২৪ মে ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মে ২০১২।
- ↑ An alternative Gandhi
- ↑ "Einstein on Gandhi"। ১৭ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ এপ্রিল ২০০৮।
- ↑ Lennon Lives Forever ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৮ মে ২০০৭ তারিখে. Taken from rollingstone.com. Retrieved on May 20, 2007.
- ↑ Of Gandhigiri and Green Lion, Al Gore wins hearts at Cannes ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে. Taken from exchange4media.com. Retrieved on 23 June 2007.
- ↑ তথ্যসূত্র: সোভিয়েত দেশ (সোভিয়েত ভারত মৈত্রীর মাসিক পত্রিকা), সংখ্যা ১১, নভেম্বর ১৯৯০ পৃঃ ৫৬
- ↑ গান্ধিজির গল্প: উমাশঙ্কর যোশি ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট, ভারত, ১৯৯৫
- ↑ কৃষ্টি কিরণ, সম্পাদক: তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী, দ্বাদশ সংখ্যা,২০২০, পৃঃ ১৮,১৯,২০
- ↑ Chaudhury, Nilova (15 June 2007)। "October 2 is global non-violence day"। hindustantimes.com। Hindustan Times। ২০০৭-০৯-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 2007-06-15। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ Gandhi branded racist as Johannesburg honours freedom fighter
বহিঃসংযোগ
- মহাত্মা গান্ধীর জীবনী
- ইংরেজি উইকি-উৎসে মহাত্মা গান্ধীর আত্মজীবনী
- গুটেনবের্গ প্রকল্পে Mahatma Gandhi-এর সাহিত্যকর্ম ও রচনাবলী (ইংরেজি)
- গান্ধী ফাউন্ডেশন
- গান্ধী স্মৃতি; ভারত সরকারের ওয়েবসাইট[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- এম কে গান্ধী ইনস্টিটিউট ফর নন-ভায়োলেন্স
- মহাত্মা গান্ধী নিউজ রিসার্চ অ্যান্ড মিডিয়া সার্ভিস
- মহাত্মা গান্ধী আর্কাইভ অ্যান্ড রেফারেন্স লাইব্রেরির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট
- মনি ভবন গান্ধী সংগ্রহালয় গান্ধী মিউজিয়াম অ্যান্ড লাইব্রেরি
- গান্ধী বুক সেন্টার
- গান্ধী ইনফরমেশন সেন্টার
- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে মহাত্মা গান্ধী (ইংরেজি)