লাগে রাহো মুন্না ভাই
লাগে রাহো মুন্না ভাই (বাংলা: লেগে থাকো মুন্না ভাই, হিন্দি: लगे रहो मुन्ना भाई) একটি ভারতীয় কমেডি ছায়াছবি যার পরিচালক রাজকুমার হিরানি এবং প্রযোজক বিধু বিনোদ চোপড়া। এটি বলিউডের জনপ্রিয় মুন্না ভাই সিরিজের দ্বিতীয় চলচ্চিত্র। সঞ্জয় দত্ত চলচ্চিত্রে মুন্না ভাই চরিত্রে রুপদান করেন। মুন্না ভাই হল মুম্বাইয়ের একজন আণ্ডারগ্রাউণ্ড ডন যে মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ অনুসরণ করতে শুরু করে। গান্ধীর প্রতিকৃতির অনুকরণে মুন্না ভাই তার ভাষ্যমতে গান্ধীগিরির (সত্যাগ্রহ, অহিংস নীতি এবং সত্য) চর্চা আরম্ভ করার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা করে। তার সহচর, সার্কিট চরিত্রে অভিনয় করেন আরশাদ ওয়ার্সী।
লাগে রাহো মুন্না ভাই | |
---|---|
পরিচালক | রাজকুমার হিরানী |
প্রযোজক | বিধু ভিনোদ চোপড়া |
রচয়িতা | রাজকুমার হিরানী (চিত্রনাট্য) অভিজাত জোসি (চিত্রনাট্য) বিধু ভিনোদ চোপড়া (সহকারী চিত্রনাট্যকার) |
শ্রেষ্ঠাংশে | সঞ্জয় দত্ত আরশাদ ওয়ার্সী বিদ্যা বালান বোমান ঈরানী দিলিপ প্রভালকার দিয়া মির্জা জিমি সারগিল কুলভুসান খারবান্দা সৌরভ শুক্লা |
সুরকার | সান্তনু মৈত্র |
চিত্রগ্রাহক | সি.কে. মুরালিধরন |
সম্পাদক | রাজকুমার হিরানী |
পরিবেশক | বিধু ভিনোদ চোপড়া |
মুক্তি | ১ সেপ্টেম্বর ২০০৬[১] |
স্থিতিকাল | ১৪৪ মিনিট |
দেশ | ভারত |
ভাষা | হিন্দি |
নির্মাণব্যয় | ১২ কোটি রুপি[২] |
আয় | ৬৯.৯৭ কোটি রুপি[৩] |
ভারতের সংস্কৃতিতে লাগে রাহো মুন্না ভাই ব্যাপক প্রভাব ফেলে এবং মুন্না ভাইয়ের উল্লেখিত গান্ধীগিরির মাধ্যমে গান্ধীবাদের জনপ্রিয় করে।[৪][৫] সমালোচকদের মতে,[৫][৬] ছবিটি মানুষের মনকে প্রভাবিত করেছে এবং এর ফলশ্রুতিতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কিছু প্রতিবাদ সংঘটিত হয়েছে। “সে সকল প্রজন্মের জন্য যারা গান্ধী হত্যার পরে জন্মগ্রহণ করেছে, মুন্না ভাই পুরোনো গান্ধীবাদ এবং ‘গান্ধীয়ান’ রহস্য ফিরিয়ে এনেছে। জনপ্রিয় শব্দ “গান্ধীগিরি” শব্দভাণ্ডারে যুক্ত হয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং চলচ্চিত্রটির প্রশংসা করে বলেন, (গান্ধীর ডাকনাম "বাপু" ব্যবহার করে) ‘ ছবিটি সত্য ও মানবতাবাদের শক্তির ক্ষেত্রে বাপুর বার্তাকে ধারণ করেছে।‘ ছবিটি বোদ্ধা মহলে ভালভাবে গ্রহণীয় হয় ২০০৭ কান চলচ্চিত্র উৎসবে। চলচ্চিত্রটি "ব্লকবাস্টার" হিসেবে ঘোষিত হয়। এটি জাতিসংঘে প্রদর্শিত প্রথম হিন্দি ছবি।
প্লট
সম্পাদনাপ্রধান অভিনেতা মুন্না ভাই (সঞ্জয় দত্ত), যে হ্যালুসিনেশনের দরুন গান্ধীর দেখা পায় ও তার গান্ধীর আদর্শের মূলনীতিগুলো শেখে। তার সতীর্থ সার্কিট (আরশাদ ওয়ার্সী) তাকে সাহায্য করে। তারা দু’জনেই বোম্বাইয়া হিন্দিতে কথা বলে, যা মুম্বাই শহরের মৌখিক ভাষা। মুন্না রেডিও জকি জাহ্নবীর কণ্ঠের প্রেমে পড়ে যায়। মুন্না তার সাথে সাক্ষাৎ করতে একটি পরিকল্পনা আঁটে যখন জাহ্নবী মহাত্মা গান্ধীর জীবন ও আদর্শ নিয়ে ২ অক্টোবর গান্ধী জয়ন্তীতে একটি প্রতিযোগিতার ঘোষণা করে। সার্কিট মুন্নাকে প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করতে সাহায্য করার জন্য একদল অধ্যাপককে অপহরণ করে এবং তারপর উৎকোচ প্রদান করে। জয়ী হিসেবে মুন্না জাহ্নবীর সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারের সুযোগ পায় এবং সেখানে সে নিজেকে একজন ইতিহাসের অধ্যাপক এবং গান্ধী বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচয় দেয়। এর ধারাবাহিকতায় জাহ্নবী মুন্নাকে তার বাড়িতে প্রবীণ নাগরিকদের সামনে গান্ধীকে নিয়ে একটি বক্তৃতা দিতে বলে। ভাষণের জন্য প্রস্তুতি নিতে মুন্না গান্ধীর জীবন ও কর্মের উপর ব্যাপকভাবে অধ্যয়ন করে।
রাজারাম (একটি গান যা গান্ধীর স্মরণে গাওয়া হয়) গায় তখনি গান্ধীর প্রতিকৃতি হাজির হয়। গান্ধীর সাহায্য নিয়ে মুন্না জাহ্নবীকে সন্তুষ্ট করতে সমর্থ হয় এবং গান্ধীবাদের (বিশেষত অহিংস নীত এবং সত্যাগ্রহ) ভিত্তিতে নতুন জীবন শুরু করে যা তার সংস্পর্শে আশা সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। মুন্না জাহ্নবীর সাথে সহ উপস্থাপনায় একটি রেডিও অনুষ্ঠান শুরু করে যার মাধ্যমে সে গান্ধীর অনুপ্রেরণা দর্শকদের মাঝে ছড়িয়ে দেয় এবং দর্শকদের গান্ধীগিরি চর্চায় সাহায্য করার মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে। বেশ কিছু সাবপ্লট গান্ধীগিরির শক্তিকে চিত্রায়িত করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল লাকি সিং (বোমান ইরানি) এবং তার কন্যা সিমরান (দিয়া মির্জা)র কাহিনী। লাকি একজন নীতিহীন ব্যবসায়ী যিনি সার্কিট এবং মুন্না ভাইকে নিয়োগ করেন তার জন্য আন্ডারওয়ার্ল্ড কাজ করার জন্য। তার কন্যা সিমরান শক্তিশালী ব্যবসায়ী খুরানা (কুলভুশান খারবান্দা) পুত্র সানির (অভিষেক বচ্চন) বাগদত্তা। খুরানা কুসংস্কারে বিশ্বাসী এবং কার্যাবলী একজন জ্যোতির্বিদ বাটুক মহারাজ (সৌরভ শুক্লা) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। মহারাজের নিউমারোলজি ভিত্তিতে খুরানার নামের সাথে একটি অতিরিক্ত কে যুক্ত হয়। সিমরান ও লাকি সেকেন্ড ইনিংস হোম অসৎ উদ্দেশ্যে দখল করার পর, মুন্না ভাই একটি ‘'অহিংস” আন্দোলন শুরু করে যার নাম "Get Well Soon, Lucky" (লাকি, দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠো)। মুন্না ভাই তার রেডিও অনুষ্ঠানের শ্রোতাদের লাকিকে ফুল পাঠাতে বলে যেন সে অসুস্থতার অসুখথেকে দ্রুত সেরে উঠতে পারে। মুন্না, সার্কিট, জাহ্নবী এবং “সেকেন্ড ইনিংস হোম” এর প্রবীণ নাগরিকরা লাকির বাড়ির সামনে শান্তিপূর্ণ সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করে। এর মাঝেই মুন্না জাহ্নবীকে তার সত্যিকারের পরিচয় দেবার সিদ্ধান্ত নেয়। দুঃখ পেয়ে জাহ্নবী মুন্নার সাথে বিচ্ছেদ ঘটায়। মুন্না আরেকটি বিপদের মুখে পড়ে যখন লাকি কুটবুদ্ধি করে জনগণের সামনে গান্ধীর সাথে মুন্নার আলোচনা প্রকাশ করে দেয় (যা শ্রোতাদের মধ্যে থাকা একজন মনোবিদের কাছে মুন্নার মানসিক অসুস্থতার প্রমাণ হিসেবে কাজ করে)। মুন্না এই ঘটনাগুলোতে হতাশ হয়ে পড়লেও গান্ধীগিরি চালিয়ে যায়, এবং শেষপর্যন্ত এই পন্থা লাকিকে বদলে দেয়, জাহ্নবীকে ফিরিয়ে দেয় এবং সিমরানের বিয়ের সমস্যা সমাধান করে। এছাড়াও অন্যান্য সাবপ্লটের মধ্যে আছে ভিক্টর ডি’সুজা (জিমি সেরগিল) এর গল্প, যে তার বাবার (পরিক্সাট সাহনি) টাকা স্টক মার্কেটে খোয়া দিয়ে, ট্যাক্সি চালিয়ে তা ফিরিয়ে দেবার প্রতিজ্ঞা করে। আরেকটি গল্পে দেখা যায় একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক যিনি তার পেনশন ভাতা থেকে বঞ্চিত হন, তার সকল সম্পত্তি পেনশন অফিসের দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসারকে দান করেন। এই ভাবে গান্ধীর আদর্শ সত্যাগ্রহ এবং অহিংস নীতির নিত্তনৈমিত্তিক জীবনে প্রয়োগ (এবং এর মাধ্যমে গান্ধীর “অনুপ্রেরণা” ফিরিয়ে আনা) চলচ্চিত্রটির প্রধান থিমে পরিণত হয়। এছাড়াও জ্যোতিষশাস্ত্র এবং নিউমারোলজির প্রভাবের বিরুদ্ধে সামাজিক বিচার[কে মুখোমুখি দাঁড় করায়।
ডিভিডি
সম্পাদনা‘লাগে রাহো মুন্না ভাই’ এর ডিভিডি (পরিবেশন করে ইরোস এণ্টারটেইনমেণ্ট) মুক্তি পায় ১৩ নভেম্বর ২০০৬ তারিখে। বোনাস ডিভিডিতে আছে ৫-খণ্ডে ৯৮ মিনিটের একটি ডকুমেণ্টারি, যা চলচ্চিত্র তৈরির ঘটনা, অভিনেতা এবং কর্মীদের সাক্ষাৎকার এবং গান ও নাচের মুদ্রার তৈরির ঘটনা বর্ণনা করেছে। এটিতে আরও রয়েছে একটি বিশেষ ফিচার মুন্না মিটস বাপু (মুন্নার মুখোমুখি বাপু)। ডিভিডি টাইমসের মতে, কেউ কেউ ডিভিডিটির শব্দগত ও দৃশ্যগত দুর্বলতার সমালোচনা করেছে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Moviefone। "Moviefone: Lage Raho Munna Bhai"। movies.aol.com। AOL LLC। ২০০৬-০৯-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-০৩।
- ↑ "Lage Raho Munnabhai"। The Numbers। Nash Information Services, LLC। ২০০৭-০৬-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-০৩।
- ↑ "Lage Raho Munnabhai"। BoxOffice India। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৬-২২।
- ↑ Chunduri, Mridula (2006-09-29)। "Gandhigiri, a cool way to live"। timesofindia.com। Times Internet Limited। সংগ্রহের তারিখ 2006-09-29। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ ক খ Sharma, Swati Gauri (13 October 2006)। "How Gandhi got his mojo back"। boston.com। The New York Times Company। সংগ্রহের তারিখ 2006-10-13। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ Ramachandaran, Shastri (23 September 2006)। "Jollygood Bollywood:Munnabhai rescues Mahatma"। tribuneindia.com। The Tribune Trust। সংগ্রহের তারিখ 2007-04-28। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য)