মিয়ানমারে মুসলিম নির্যাতন
মিয়ানমার একটি বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র। মিয়ানমারের মুসলিম সংখ্যালঘুরা ভারত থেকে আগত (যা এখন বাংলাদেশ হয়েছে) মুসলমানদের বংশধর এবং চীন (মিয়ানমারে চীনের মুসলমানদের পূর্বপুরুষ ইউন্নান প্রদেশ থেকে এসেছে) এবং পূর্ববর্তী আরব বাসিন্দাদের উত্তরপুরুষ এবং স্বীকৃত কমেইন সংখ্যালঘুদের বংশধর এবং রোহিঙ্গা জাতি, পাশাপাশি মিয়ানমারের স্থানীয় জাতিসমূহের সাথে আন্তঃবিবাহিতরা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, বার্মার সরকার রোহিঙ্গা নাগরিকদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করেছে যারা ১৮২৩ সালের আগে, ব্রিটিশ দখলদারিত্বের শুরুতে এখনকার রাখাইন রাজ্যে (যা আরাকান নামেও পরিচিত) দেশটিতে তাদের পূর্বপুরুষদের বসতি স্থাপনের প্রমাণ করতে পারে না।[২]
ইতিহাস
সম্পাদনা১১শতাব্দী থেকে মিয়ানমারে (বার্মা নামেও পরিচিত) মুসলমানরা বসবাস করে আসছে। বার্মার ইতিহাসে (হমানান ইয়াজাউইন বা গ্লাস প্যালেস ক্রনিকলের মধ্যে লিখিত) সর্বপ্রথম লিপিবদ্ধ মুসলিম, বায়াত উয়ি, মোনের শাসনামলে প্রায় ১০৫০ খ্রিষ্টাব্দের একজন থাতন রাজা।[৩] বায়াত উয়ির ভাই বায়াত তা’য়ের দুই পুত্র, শ্বে বাইন ভ্রাতৃদ্বয় নামে পরিচিত, তাদের ইসলামি বিশ্বাসের কারণে অথবা তাদের বাধ্যতামূলক শ্রম বন্ধ করার জন্য শিশু হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।[৪] এটি বার্মার রাজাদের গ্লাস প্রাসাদ ক্রনিকলের মধ্যে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল যে তারা আর বিশ্বস্ত ছিল না।[৫] যুদ্ধের কোন এক সময়ে রাজা কিংসিট্থা তাকে গুপ্তহত্যা করার জন্য একজন শিকারীকে স্নাইপার হিসেবে পাঠিয়েছিলেন।[৬][৭]
প্রাক আধুনিক নিপীড়ন
সম্পাদনাবার্মিজ রাজা বায়িংনৌং (১৫৫০-১৫৮১ খ্রিষ্টাব্দে) তার মুসলিম প্রজাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন, কিন্তু প্রকৃত নিপীড়ন নয়।[৮] ১৫৫৯ খ্রিষ্টাব্দে, পেগু (আজকের বাগু) জয় করার পর, বায়িংনৌং ইসলামিক পদ্ধতির জবাই নিষিদ্ধ করেন, যার ফলে মুসলমানদের ছাগল ও মুরগির হালাল খাবার খাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়। তিনি ঈদুল আযহা এবং কুরবানী উভয়কে একটি নিষ্ঠুর রীতি বলে, ধর্মের নামে পশু হত্যা করা নিষিদ্ধ করেন।[৯][১০]
১৭শতকে, ক্ষতিকারক ও বাস্তব নিপীড়ন প্রদান করে, আরাকানে বসবাসরত ভারতীয় মুসলমানদের উপর গণহত্যা চালানো হয়। এই মুসলমানগণ শাহ সুজার সাথে বসতি স্থাপন করেছিল, যারা মুগল যুদ্ধে উত্তরাধিকারী হারানোর পর ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল। প্রাথমিকভাবে, আরাকান জলদস্যু সান্ডাথাডাম (১৬২৫-১৬৬৮ খ্রিষ্টাব্দ) চট্টগ্রাম ও আরাকানের স্থানীয় জলদস্যু ছিল, সুজা ও তার অনুসারীদের সেখানে বসতি স্থাপন করতে দেয়। কিন্তু সান্ডাথাডাম ও সুজার মধ্যে একটি বিতর্ক বাধে, এবং সুজা বিদ্রোহীদের কাছে ব্যর্থ হন। সান্ডাথাডাম সুজার অধিকাংশই শিষ্যদের হত্যা করে, যদিও সুজা নিজেকে গণহত্যা থেকে রক্ষা করতে পারেন।[১১][১২][১৩][১৪][১৫][১৬][১৭]
রাজা আলাউংপায়া (১৭৫২-১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দ) মুসলমানদেরকে গবাদি পশু হত্যা করার ইসলামী পদ্ধতি অনুশীলন থেকে নিষিদ্ধ।[১৮]
রাজা বোদাপায়া (১৭৮২- ১৮১৮) ময়দুরের চারজন বিখ্যাত বর্মি মুসলিম ইমামকে গ্রেফতার করে এবং শুকরের মাংস খাওয়াতে অস্বীকার করায় রাজধানী আভাতে তাদের হত্যা করে।[১৯] মৈতু মুসলিম ও বার্মা মুসলিম সংস্করণের মতে, বোদাপায়া পরে হত্যাকাণ্ডের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং ইমামগণকে সাধু হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।[১৯][২০]
ব্রিটিশ শাসন
সম্পাদনা১৯২১ সালে বার্মায় মুসলমানদের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৫,০০,০০০।[২১] ব্রিটিশ শাসনের সময়, বার্মিজ মুসলমানদের "ভারতীয়" হিসেবে দেখা হত, কারণ বার্মায় বসবাসকারী অধিকাংশ ভারতীয়রা মুসলমান ছিলেন, যদিও বার্মিজ মুসলমানরা ভারতীয় মুসলমানদের থেকে আলাদা ছিল। এভাবে বার্মিজ মুসলমান, ভারতীয় মুসলমান ও ভারতীয় হিন্দুদের সম্মিলিতভাবে "কাল" নামেও পরিচিত করা হয়। "কাল" শব্দটি সাধারণ অর্থে কালোবর্ণ হিসেবে অনূদিত এবং তাদের জাতিগতভাবে নিন্দার্থে ব্যবহার করা হয়।[২২]
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর, ভারতবিরোধী অনুভূতিতে উত্থান ঘটেছিল।[২৩] বার্মায় ভারতীয়-বিরোধী ও মুসলিম-বিরোধী মনোভাবের বেশ কিছু কারণ ছিল। ভারতে অনেক বৌদ্ধ মুগল সাম্রাজ্যের দ্বারা নির্যাতিত হয়। ভারতীয় অভিবাসী, যারা অল্প মজুরীতে অপ্রীতিকর কাজ করতে ইচ্ছুক ছিল, এবং স্থানীয় বার্মিজদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কাজের প্রতিযোগিতা ছিল। ভারত-বিরোধী মনোভাবে জর্জরিত হয়ে, মহামন্দা এই প্রতিযোগিতাকে তীব্রতর করেছিল।[২২][২৪] ১৯৩০ সালে ইয়াঙ্গুন বন্দরে শ্রম ইস্যুতে একটি ভারত-বিরোধী দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। ভারতীয় শ্রমিকরা বন্দরে হরতাল ডাকার পর, বার্মিজ শ্রমিকদের নিয়োগের মাধ্যমে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ স্টিভডোর ধর্মঘট ভাঙার চেষ্টা করে। তারা বুঝতে পেরেছিল যে তারা তাদের চাকরি হারাবে, তাই ভারতীয় শ্রমিকরা কর্মক্ষেত্রে ফিরে আসে, এবং স্টিভডোর তখন সম্প্রতি ভাড়া করা বার্মিজ শ্রমিকদের ছাঁটাই করে। বার্মিজ শ্রমিকরা কর্মক্ষেত্রে তাদের ক্ষতির জন্য ভারতীয় শ্রমিকদেরকে দোষারোপ করে এবং দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। বন্দরে, কমপক্ষে ২০০ ভারতীয় শ্রমিককে গণহত্যা করে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। আরো ২০০০ জন আহত হয়। কর্তৃপক্ষ ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারার অধীনে সশস্ত্র দাঙ্গাবাজদের উপর গুলি চালায়, যারা তাদের অস্ত্র ফেলে দিতে প্রত্যাখ্যান করেছিল। ভারতীয় এবং মুসলমানদের লক্ষ্য করে, দাঙ্গা দ্রুত বার্মায় ছড়িয়ে পড়ে।[২২][২৫]
১৯৩৮ সালে, বার্মায় মুসলিম-বিরোধী দাঙ্গা আবারো ছড়িয়ে পড়ে। মোশে ইয়াগার লিখেছেন যে ব্রিটিশ বিরোধী ও জাতীয়তাভিত্তিক অনুভূতির দ্বারা দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছিল, কিন্তু ব্রিটিশ বিরোধী প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে দেবার জন্য নয় বরং মুসলিম-বিরোধী ছিলো। তবুও ব্রিটিশ সরকার দাঙ্গা ও বিক্ষোভের প্রতি সাড়া দিয়েছিল। মিয়ানমারের পত্রিকাগুলোতে মুসলিম ও ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল।[২৫][২৬][২৭]
ভারতীয় ও বার্মিজদের মধ্যে একটি বাজারে মারামারির পর আরেকটি দাঙ্গা শুরু হয়। "বার্মা বার্মিজদের জন্য" প্রচারাভিযানের সময়, সুরতি বাজার, একটি মুসলিম এলাকায়, একটি হিংসাত্মক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।[২৮] যখন পুলিশ, যারা জাতিগতভাবে ভারতীয় ছিল, বিক্ষোভ ভাঙার চেষ্টা করে, তখন তিনজন সন্ন্যাসী আহত হন। দাঙ্গা উস্কে দিতে, ভারতীয় পুলিশের দ্বারা আহত সন্ন্যাসীদের ছবি বার্মিজ সংবাদপত্র প্রচার করতে থাকে।[২৯] দোকানপাট এবং ঘরবাড়ি সহ, মুসলিমদের সম্পত্তি লুটপাট করা হয়।[৩০] সরকারি সূত্রসমূহ অনুযায়ী, ২০৪ জন মুসলমানকে হত্যা করা হয় এবং ১,০০০ জনেরও অধিক আহত হয়।[২৫] ১১৩টি মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।[৩০]
২৯শে সেপ্টেম্বর, ১৯৩৮ সালে ব্রিটিশ গভর্নর দাঙ্গাগুলির তদন্তের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।[৩১] এটি বর্ণীত হয়েছিল যে বিদ্রোহের ফলে বার্মিজের সমাজ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি ঘটে।[৩২] এই রিপোর্ট নিজেই বর্মী পত্রিকাগুলোর দ্বারা সাম্প্রদায়িক উস্কানিতে ব্যবহৃত হয়।[৩৩]
জাপানি শাসন
সম্পাদনাদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, জাপানিরা রোহিঙ্গাদের অধীনস্থ এলাকার মধ্য দিয়ে সহজেই অগ্রসর হয়।[৩৪][৩৫][৩৬] পরাজিত, ৪০,০০০ রোহিঙ্গা অবশেষে বার্মা ও জাপানী বাহিনীর দ্বারা গণহত্যার স্বীকার হয়ে চট্টগ্রামে পালিয়ে যায়।[৩৭]
জেনারেল নে উইনের অধীনে মুসলিম
সম্পাদনা১৯৬২ সালে জেনারেল নে উইন ক্ষমতায় আসার পর মুসলমানদের অবস্থার পরিবর্তন হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, মুসলমানরা সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত হয়।[৩৮] অতি ধার্মিক মুসলিম সম্প্রদায় যারা বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠদের থেকে নিজেদেরকে আলাদা করে রেখেছিল, যারা সমন্বিত ও বাজেয়াপ্ত হয়ে ইসলামি আইনগুলি পালন করে তাদের তুলনায় অধিকতর সমস্যার সম্মুখীন হয়।[৩৮]
তালেবানদের দ্বারা আফগানিস্তানে (বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তি ধ্বংস) বৌদ্ধ-বিরোধী কর্মসমূহ, বৌদ্ধদের বার্মায় মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতার একটি অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ প্রতিবেদনে পেশ করে যে, ২০০১ সালের মাঝামাঝি সময়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার কয়েক সপ্তাহ আগমুহূর্ত পর্যন্ত, বৌদ্ধ ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা দাবি করেছিল যে বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তির "প্রতিশোধ" হিসেবে টানগো-তে হান্থা মসজিদ ধ্বংস করা হয়।[৩৯]
মুসলমানদের জন্য ধর্মীয় স্বাধীনতা হ্রাস করা হয়েছে। ইসলামের উপর নজরদারি এবং নিয়ন্ত্রণ ধর্মীয় কার্যক্রমের সাথে সম্পর্কিত মুক্তচিন্তা বিনিময় ও চিন্তাধারার পতন ঘটিয়েছে।[৪০] অল বার্মা মুসলিম ইউনিয়নের মতো মুসলিম সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে "সন্ত্রাসবাদ"-এর অভিযোগ আনা হয়েছে।[৩৮]
এটি ব্যাপকভাবে ভয় করা হচ্ছে যে বার্মায় মুসলমানদের উপর অত্যাচারের ফলে দেশে ইসলামি চরমপন্থার সৃষ্টি হতে পারে।[৩৮] অনেক মুসলিম সশস্ত্র প্রতিরোধ দলে যোগদান করেছে, যারা বার্মার স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে।[৪১]
১৯৯৭ মান্ডালে দাঙ্গা
সম্পাদনাবৌদ্ধ মূর্তি সংস্কারের সময় বৌদ্ধ ও মুসলমানদের মধ্যে বর্ণবাদী উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। মহা ম্যাতমুনি প্যাগোডার ব্রোঞ্জ বুদ্ধ মূর্তি, মূলত আরাকান থেকে মান্দালয়ে, রাজা বোদাপায়া দ্বারা ১৭৮৪ সালে, কর্তৃপক্ষ সংস্কার করা জন্য নিয়ে আসে। মূর্তিতে একটি গর্তস্থান করে, মহাম্যাত মুনি মূর্তি প্রকাশ্যে ভেঙ্গে যায়, এবং এটি সাধারণত অনুমান করা হয়েছিল যে পাদাম্যা মায়েতশিন-এর জন্য প্রচলিতব্যবস্থা খুঁজা হচ্ছে, একটি কাল্পনিক রুবি যেটা যুদ্ধে জয় নিশ্চিত করে যারা এটা ভোগদখল করে থাকে।[৪২]
১৯৯৭ সালের ১৬ মার্চ, মান্ডালেতে, ১০০০-১৫০০ উচ্ছৃঙ্খল বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের একটি দল এবং অন্যান্যরা মুসলিম-বিরোধী স্লোগানে গর্জে উঠে। এসময় তারা মসজিদ, দোকানপাট-ঘরবাড়ি, ও যানবাহন যা মসজিদের সান্নিধ্যে ছিল তা ধ্বংস করার জন্য লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। লুটপাট, ধর্মীয় বই প্রজ্বলন, অপবিত্রকরণ, এবং মুসলমানদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ভাংচুরের ঘটনাগুলিও সাধারণ ছিল। কমপক্ষে তিনজন মানুষ নিহত হয় এবং প্রায় ১০০ জন সন্ন্যাসীকে গ্রেফতার করা হয়। মান্ডালায়ের অস্থিরতা মুসলমান পুরুষের দ্বারা একটি মেয়ে ধর্ষণের চেষ্টার পর শুরু হয়।[৪৩] মিয়ানমারের “বৌদ্ধ উইং ইয়ুথ” বলেছে যে পুলিশ হেফাজতে ১৬ জন বৌদ্ধ ভিক্ষুর মৃত্যুর ঘটনাকে চাপা দেয়ার জন্য কর্মকর্তারা ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটিয়েছে। সামরিক বাহিনী “ইয়ুথ”-এর দাবি অস্বীকার করে জানায় যে অস্থিরতাটি একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত, যা আসিয়ানে মিয়ানমারের প্রবেশ থামানোর একটি প্রচেষ্টামাত্র ছিল।[৪৪]
বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের দ্বারা হামলা তৎকালীন মিয়ানমারের রাজধানী ইয়াঙ্গুন এবং একই সাথে মধ্যাঞ্চলীয় শহর পেগু, প্রমে এবং টাউনগোতেও ছড়িয়ে পড়ে। মান্ডালেতে আজ পর্যন্ত একটি কারফিউ চলছে এবং সেনাবাহিনী বেশ কয়েকটি শহরের রাস্তায় টহল দিচ্ছে। শুধু মান্ডালেতে, ১৮টি মসজিদ ধ্বংস করা হয় এবং মুসলিম-মালিকানাধীন ব্যবসায়-বাণিজ্য এবং সম্পত্তি ভাংচুর করা হয়। কোরআন-এর কপি পুড়িয়ে ফেলা হয়। শত শত সন্ন্যাসীকে মসজিদে লুটপাট করা থেকে না থামানোর মাধ্যমে মিয়ানমার শাসিত সামরিক জান্তার এই বিক্ষোভে এক-চোখা ভূমিকা পালন করে।[৪৪]
২০০১ টাউনগো মুসলিম-বিরোধী দাঙ্গা
সম্পাদনা২০০১ সালে, “মায়ো পাইক হমর সো কউক সাই ইয়ার” (বা) “সম্প্রদায় হারানোর ভয়” এবং অন্যান্য অনেক মুসলিম-বিরোধী পুস্তিকা সন্ন্যাসীদের দ্বারা ব্যাপকভাবে বিতরণ করা হয়েছিল। অনেক মুসলমান মনে করেন যে এই মুসলিম-বিরোধী প্রতিক্রিয়া যা আফগানিস্তানে বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তি ধ্বংসের মাধ্যমে উস্কে দিয়েছে।[৪৫] ২০০১ সালের ১৫ মে, পেংগু প্রদেশের টাউনগোতে মুসলিম-বিরোধী দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে এবং এর ফলে প্রায় ২০০ জন মুসলমানের মৃত্যু ঘটে। কারণ এসময় ১১টি মসজিদ ধ্বংস করে দেয়া হয় এবং ৪০০ টি বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ১৫ মে, মুসলিম বিরোধী বিদ্রোহের প্রথম দিনে, “হান থা” মসজিদে প্রার্থনারত অবস্থায় প্রায় ২০ জন মুসলমান মারা যায় এবং সামরিক জান্তার সমর্থনে কিছু লোককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ১৭ মে, লেফটেন্যান্ট জেনারেল উইন মাইন্ট, এসপিডিসির সেক্রেটারি নম্বর ৩ এবং ডেপুটি স্বরাষ্ট্র ও ধর্মীয় মন্ত্রী টাউনগোতে পৌঁছেন এবং ১২ জুলাই ২০০১ সাল পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়।[৪৬] বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা বামিয়ানের ধ্বংসের জন্য প্রতিশোধ নিতে টাউনগোয়ের প্রাচীন হান থা মসজিদটি ধ্বংস করার দাবি জানায়।[৪৭] ১৮ মে, হান থা মসজিদ এবং টাউনগো রেলওয়ে স্টেশন মসজিদটি এসপিডিসি জান্তার মালিকানাধীন বুলডোজার দিয়ে মাটির সাথে ধূলিসাৎ করে দেয়া হয়।[৪৭] টাউনগোতে মসজিদ, মে ২০০২ সাল পর্যন্ত বন্ধ ছিল। মুসলিমদেরকে বাড়িতে প্রার্থনা করতে বাধ্য করা হয়েছে। স্থানীয় মুসলিম নেতারা অভিযোগ করেন যে তারা এখনও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সহিংসতার পর, অনেক স্থানীয় মুসলমানরা টাউনগো থেকে আশেপাশের শহরে চলে যায় এবং যতদূর সম্ভব ইয়াঙ্গুনথেকেও। দুই দিনের সহিংসতার পর সেনাবাহিনী পদার্পণ করলে সহিংসতা অবিলম্বে শেষ হয়।[৪৭]
২০১২ রাখাইন রাজ্য দাঙ্গা
সম্পাদনা২০১২ সালের জুন থেকে রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সময়ে কমপক্ষে ১৬৬ জন মুসলমান ও রাখাইনকে হত্যা করা হয়েছে।[৪৮][৪৯][৫০]
২০১৩ মিয়ানমারের মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা
সম্পাদনামার্চ ২০১৩ থেকে মধ্য ও পূর্ব মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। এই সহিংসতাকে ৯৬৯ আন্দোলনের উত্থানের সাথে বিবেচনা করা হয়, যা ঐতিহ্যগতভাবে বৌদ্ধধর্মাবলম্বী মিয়ানমারে ইসলামের আগমনের বিরুদ্ধে একটি বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ছিল। সাইয়াদাও উ উইরাথু-এর নেতৃত্বে "৯৬৯" দাবি করেছে যে, সে/তারা মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আক্রমণের জন্য প্ররোচিত করে না, যদিও কিছু লোক তাকে বৌদ্ধ বিন লাদেন " বলে ডাকে। [৫১] একটি খোলা চিঠিতে, উ উইরাথু দাবি করে যে সে উভয়কে বীচ[স্পষ্টকরণ প্রয়োজন] বলে এবং ফটোগ্রাফারকে আতিথেয়তার সাথে আচরণ করেছে, এবং যাতে সে "প্রতারণা দেখতে এবং সব মানুষের জন্য তার মিষ্টি স্বর চিনতে পারে"। চিঠিতে সে দাবি করেন যে পশ্চিমা মিডিয়ার প্রতি তার সম্মান রয়েছে, কিন্তু টাইম (TIME)-এর প্রতিবেদক তার শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যের ভুল ব্যাখ্যা করেছে। "আমার ধর্মপ্রচার ঘৃণায় দগ্ধ করছে না যেরূপ তোমরা বলেছ যে, উইরাথু তার খোলা চিঠিতে বীচ বলেছে। সে বলেছে যে সে “ভুল বোঝাবুঝি ক্ষমা করবে” যদি তিনি প্রবন্ধটি সম্পর্কে একটি মুখোমুখি হতে ইচ্ছুক হন। তবে, জনসাধারণের জন্য তার বেশিরভাগ ভাষ্য দেশে আক্রমণের জন্য মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের উপর আলোকপাত করে। [৫২]
মাইকেল জেরিসন[৫৩], অনেকগুলো বইয়ের বিশেষত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যগত শান্তিপূর্ণ অনুভূতির সমালোচনামূলক, বর্ণনা করে যে, "বার্মার বৌদ্ধ ভিক্ষুরা সহিংসতা শুরু করতে পারতেন না কিন্তু তারা জনতাকে আন্দোলিত করে এবং আরো উত্তেজিত করতে শুরু করে। যখন বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থের আদর্শগুলি শান্তি ও শান্তিবাদ প্রচার, বাস্তবতা ও নিয়ম-কানুনের মধ্যে বৈষম্য সহজেই সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিরাপত্তার সময়ে বেড়ে ওঠে, যেমন মিয়ানমারের গণতন্ত্রের বর্তমান রূপান্তর।"[৫৪]
২০১৪ মান্ডালে দাঙ্গা
সম্পাদনাজুলাইয়ে একটি ফেসবুক পোস্ট একজন বৌদ্ধ মহিলা, অনুমান করা হচ্ছে একজন মুসলিম পুরুষের দ্বারা ধর্ষিত হচ্ছে, বলে প্রকাশিত হয়। প্রতিশোধে ৩০০ জনের একটি ক্রুদ্ধ, প্রতিহিংসাপরায়ণ জনতা একটি চায়ের দোকানে পাথর এবং ইট নিক্ষেপ শুরু করে। উচ্ছৃঙ্খল জনতা মুসলিমদের দোকানপাট এবং যানবাহনে আক্রমণ চালায় এবং মুসলমান আবাসিক এলাকায় স্লোগান দিতে থাকে।[৫৫] দুই ব্যক্তি- একজন বৌদ্ধ ও একজন মুসলিম নিহত হয়।[৫৬][৫৭] প্রায় এক ডজন মানুষ আহত হয়।[৫৮] ৩ জুলাই একটি কারফিউ জারি করা হয়।[৫৬][৫৭]
২০১৬ মসজিদ পোড়ানো
সম্পাদনাজুন মাসে, উচ্ছৃঙ্খল জনগোষ্ঠী রাজধানী ইয়াঙ্গুনের ৬০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বাগো অঞ্চলের একটি মসজিদ ভেঙে দেয়।[৫৯]
জুলাই মাসে, বৌদ্ধ গ্রামবাসীদের দ্বারা মসজিদ প্রজ্বলিত করা বন্ধ করতে ব্যর্থ হওয়ার পর, কাছিন রাজ্যের হপকান গ্রামে পুলিশের পাহারাদারির বিষয়ে অভিযোগ আনা হয়।[৬০] এর অল্প কিছুদিন পর, পুরুষদের একটি দল মধ্য মিয়ানমারের একটি মসজিদ নির্মাণে বিরোধের জের ধরে ধ্বংস করে দেয়।[৫৯]
২০১৬ রোহিঙ্গা নির্যাতন
সম্পাদনা২০১৬ সালের শেষের দিকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও চরমপন্থী বৌদ্ধরা দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর বড় ধরনের অভিযান শুরু করে। অজ্ঞাত বিদ্রোহীদের দ্বারা সীমান্ত পুলিশ ক্যাম্পে হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই অভিযানটি ছিল,[৬১] এবং এর ফলে নিরাপত্তা বাহিনীর হস্তক্ষেপের কারণে ব্যাপকহারে তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে, যেগুলোর মধ্যে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গণধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও অন্যান্য নৃশংসতা অন্তর্ভুক্ত ছিল।[৬২][৬৩][৬৪] জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এবং মালয়েশিয়ার সরকারসহ বিভিন্ন মহল থেকে রোহিঙ্গাদের উপর সামরিক অভিযান সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।[৬৫][৬৬][৬৭][৬৮][৬৯] মিয়ানমার সরকার প্রধান, অং সান সু চি বিশেষ করে তার নিষ্ক্রিয়তা ও নীরবতার জন্য এবং এই সামরিক অপব্যবহার ঠেকাতে বলতে গেলে নীরব ভূমিকা পালন করার জন্য সমালোচিত হয়েছেন।[৬২][৬৩][৭০]
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ
সম্পাদনাপটভূমি
সম্পাদনারোহিঙ্গা মুসলমানরা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম।[৭১] অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, ১৯৭৮ সাল থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানরা বার্মিজ জান্তার অধীনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়ে আসছে এবং ফলশ্রুতিতে অনেকেই প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে।[৭২][৭৩] যাইহোক, বাস্তবতা হচ্ছে যে ১৯৭৮ সালের আগেও রোহিঙ্গাদের অনেকেই অত্যাচারিত হয়েছে, যদিও তর্কসাপেক্ষে ততটা উল্লেখযোগ্য নয়। তারা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মিয়ানমারে বসবাস করে আসলেও মিয়ানমারের বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠের সাথে উদ্বিগ্নের কারণে তাদের বৈষম্য ও হয়রানিতে পরিণত করেছে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, নির্যাতন, অবাধ গ্রেফতার এবং সহিংসতা অতি সাধারণ ঘটনা, এমনকি সহিংসতার অনেক ঘটনাই আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের একচোখা দৃষ্টির কারণে রিপোর্ট করা হয়নি। এসব অপরাধীরা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সীমিত নয়, বরং কর্তৃপক্ষ ও আইন প্রয়োগকারীরাও তাদের অন্তর্ভুক্ত। ২০১২ সালে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়, যখন তিনজন রোহিঙ্গা মুসলমানকে একজন স্থানীয় রাখাইন বৌদ্ধ মহিলাকে ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল, যা ২০১২ সালে রাখাইন রাজ্যের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার দিকে পরিচালিত করেছিল।[৭৪] বর্তমানে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের এক মিলিয়নের বেশি লোক বসবাস করছে, তবে পর্যায়ক্রমিক নিপীড়নের জন্য তাদের দেশান্তরিত হওয়া বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধুমাত্র ২০১৫ সালের প্রথম দিকে, রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিদের প্রায় ২৫ হাজার আশ্রয়প্রার্থী প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিতে রাখাইন রাজ্য থেকে সমুদ্রপথে যাত্রা করে।[৭৫] বাংলাদেশের পাশাপাশি আশ্রয়প্রার্থীদের অধিকাংশই থাইল্যান্ডের মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশের সাথেসাথে মালয়েশিয়ায় এবং ইন্দোনেশিয়ায়ও দেখা যায়, যা মূলত মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। ২০১২ সালের মতো অত্যাচার ও ব্যাপক সহিংসতার কারণে, যা ১৯৭৮ এবং ১৯৯২ এর আগে ঘটেছে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীরা গণহারে দলবদ্ধ হয়ে দেশান্তরিত হতে থাকে, পালিয়ে আসা অনেক রোহিঙ্গাদের সাথে প্রান্তিক পর্যায়ে নেমে এসেছে এবং স্বাগতিক রাষ্ট্রগুলিতে তাদের বহিষ্কৃত করা হয়েছে। তারা প্রায়শই স্বীকৃত নয় এবং শরণার্থী হিসেবে সুরক্ষিত নয়, এবং ফলস্বরূপ, তারা চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করে, বেআইনি কর্মসংস্থান অবলম্বন করে এবং শোষণের মাধ্যমে ঝুঁকিতে রয়েছে।[৭৬]
আইনি কাঠামো
সম্পাদনারোহিঙ্গাদের বার্মার নাগরিকত্ব প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে যখন থেকে বার্মিজ জাতীয়তা আইন (১৯৮২ নাগরিকত্ব আইন) প্রণয়ন করা হয়।[৭৭] মিয়ানমার সরকার দাবি করে যে রোহিঙ্গারা অবৈধ অভিবাসী, যারা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগে আগত এবং মূলত বাঙালি।[৭৮] রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে থাকার অনুমতি দেওয়া হয় 'বিদেশী নাগরিক' হিসেবে তবে নাগরিকের মতো নয়। তারা কোনও সরকারী অনুমতি ছাড়া ভ্রমণ করতে পারবে না এবং পূর্বে তাদের দুই সন্তানের বেশি শিশু না থাকার প্রতিশ্রুতিতে স্বাক্ষর করতে হত, যদিও এই আইনটি কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয়নি। অনেক রোহিঙ্গা শিশুরা তাদের জন্ম নিবন্ধন করতে পারে না, এইভাবে তাদের জন্মগ্রহণের মুহূর্ত থেকে রাষ্ট্রহীন করে রাখা হয়। ১৯৯৫ সালে, মিয়ানমার সরকার ইউএনএইচসিআর-এর চাপের প্রতি সাড়া দিয়ে মৌলিক শনাক্তকরণ কার্ড প্রদান করে, যা রোহিঙ্গাদের জন্মস্থান উল্লেখ করে না।[৭৯] সঠিক সনাক্তকরণ ও নথিপত্র ছাড়াই রোহিঙ্গা জনগণ আনুষ্ঠানিকভাবে রাজ্যহীন এবং তাদের প্রতি রাষ্ট্রীয় কোন সুরক্ষাও নেই এবং তাদের চলাফেরা কঠোরভাবে সীমাবদ্ধ। ফলস্বরূপ, তারা স্কোয়াটার বা পরিত্যক্ত ক্যাম্প এবং বস্তির মধ্যে বাস করতে বাধ্য হয়।
আন্তর্জাতিক সম্মেলন
সম্পাদনামিয়ানমার, একসময়ে বার্মা নামে পরিচিত ছিল, যে ৪৮টি দেশের মধ্যে একটি, যা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ১৯৪৮ সালে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র (ইউডিএইচআর) গ্রহণের পক্ষে ভোট দেয়।[৮০] ইউডিএইচআর-এর অনুচ্ছেদ ২-এর মতে, "প্রত্যেকেই জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ, ভাষা, ধর্ম, রাজনৈতিক বা অন্য মতামত, জাতীয় বা সামাজিক উৎস, সম্পত্তি, জন্ম বা অন্যান্য অবস্থা কোন প্রকারের পার্থক্য ছাড়াই এই ঘোষণাপত্রে বর্ণিত সমস্ত অধিকার এবং স্বাধীনতার অধিকারী।"[৮১] এছাড়াও ইউডিএইচআর-র ৫নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, "কাউকে নির্যাতন বা নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অপমানজনক আচরণ বা শাস্তি দেওয়া যাবে না।"[৮২] তবে, নির্যাতনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের কনভেনশন যার লক্ষ্য হচ্ছে নির্যাতন এবং নিষ্ঠুর, অমানবিক, বা অপমানজনক আচরণ বা শাস্তি বিশ্বজুড়ে রোধ করা, যাতে ২০১৬ সালেও মিয়ানমার কর্তৃক স্বাক্ষর বা অনুমোদন করেনি।[৮৩] উপরন্তু, মিয়ানমার এছাড়াও রাষ্ট্রহীন ব্যক্তিদের মর্যাদা সংক্রান্ত সংবিধানের কোন অংশ নয়, যা রাষ্ট্রহীন নাগরিকদের রক্ষা করার লক্ষ্যে কাজ করে [৮৪] বা নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তিতে (ICCPR) যা রাষ্ট্রের নাগরিকদের সম্মান এবং নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করে, যার মধ্যে জীবনের অধিকার এবং ধর্মের স্বাধীনতা রয়েছে কিন্তু সীমাবদ্ধ নয়।[৮৫][৮৬]
বলা হচ্ছে যে, ২ জুলাই ১৯৯৭ এবং ১৫ জুলাই ১৯৯১ যথাক্রমে মিয়ানমার কর্তৃক বহু আন্তর্জাতিক সংখ্যার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বা সেগুলি সংকলন করা হয়েছে, যেমন- নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ (সিডএউডব্লিউ) এবং শিশু অধিকার কনভেনশন (ইউএনসিআরসি)।[৮৭][৮৮] সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ধীরে হলেও ইতিবাচক উন্নতি হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ১৬ জুলাই ২০১৫, মিয়ানমারের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার (আইসিইএসসিআর) আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে (কিন্তু সেটি অনুমোদন করেনি) যা শিক্ষার অধিকার, স্বাস্থ্যের অধিকার এবং পর্যাপ্ত জীবনযাত্রার অধিকার সুরক্ষা করে।[৮৯]
বিশ্বজনীন পর্যায়ক্রমিক পর্যালোচনা
সম্পাদনাবিশ্বজনীন পর্যায়ক্রমিক পর্যালোচনা (ইউপিআর) জাতিসংঘের একটি পদ্ধতি যা জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রের মানবাধিকারের রেকর্ড পর্যালোচনা করে। এটি একটি অনন্য প্রক্রিয়া যা মানবাধিকার কাউন্সিল দ্বারা পরিচালিত হয়, যার ফলে প্রতিটি রাষ্ট্র মানবাধিকারের মূল বিষয়গুলি যা সে দেশের অগ্রগতির মূল ক্ষেত্রকে অনুমোদন করে, এবং তাদের আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা গ্রহণের জন্য আরও পদক্ষেপগুলি ও প্রচেষ্টাকে চিহ্নিত করতে সহায়তা করে। জাতিসংঘের একটি সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে মিয়ানমার ইউপিআর পদ্ধতিতে জড়িত হতে বাধ্য। ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫ সালে, মিয়ানমারে ইউপিআর-এর একটি কার্যনির্বাহী দল মিয়ানমারের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি দেখে এবং প্রতিবেদন করে যে মিয়ানমার সরকার রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, সামাজিক ও বিচারবিভাগীয় সংস্কারে ইতিবাচক অগ্রগতি অর্জন করেছে।[৯০] তথাপি, অনেক দেশ, যেমন- সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে, কারণ এই এলাকায় উন্নতির জন্য আরও অনেক ক্ষেত্র রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বাহরাইন রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে জাতিগত শুদ্ধি ও বৈষম্য সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ২০১৫ সালের জাতিগত অধিকার সুরক্ষা আইনে মিয়ানমারের সকল সংখ্যালঘুদের অধিকারকে সম্প্রসারিত করবে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, মিয়ানমার সরকার তাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে যে মিয়ানমারের "রোহিঙ্গা" নামে কোন সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নেই। তবুও, ২০১২ সালের রাখাইন রাজ্যের সহিংসতার ফলে তদন্ত কমিশন গঠনে নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছিল, যা স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করতে সুপারিশ করে। তারপর থেকে, রাখাইন রাজ্যের চারপাশে বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য সরকার মানবিক প্রবেশাধিকার যেমন খাদ্য, পানি ও শিক্ষা পরিষেবা সরবরাহ করার সুযোগ দেয়। উপরন্তু, নাগরিকত্ব যাচাইয়ের জন্য একটি প্রকল্প চালু করা হয়েছিল, যার ফলে ৯০০ জন বাস্তুচ্যুত নাগরিককে নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়। রিপোর্টটি সদস্য রাষ্ট্রসমূহের বিভিন্ন সুপারিশের দ্বারা পরিগণিত হয়, যাতে অনেক দেশ পরামর্শ দেয় যে, এটি কোন দল নয় এবং রোহিঙ্গাদের প্রতি তাদের আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতা আরও বাড়ানোর জন্য মিয়ানমার যেন অন্যান্য প্রধান মানবাধিকার চুক্তিসমূহ অনুমোদন করে।
মানবাধিকার লঙ্ঘন
সম্পাদনাকতিপয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মিয়ানমারের প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও, অভ্যন্তরীণ আইনের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের উপর অত্যাচার করে। মিয়ানমার সরকার কর্তৃক ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনের নীতিমালা পর্যায়ক্রমিক বৈষম্যের প্রতিনিধিত্ব করে, যা রোহিঙ্গাদের মৌলিক মানবাধিকার যেমন- শিক্ষা, চাকরি, বিবাহ, প্রজনন ও চলাফেরার স্বাধীনতা পাওয়া উন্মুক্তভাবে অস্বীকার করে।[৯১] রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে নিয়মিত বাধ্যতামূলক কামলা খাটতে হয়। সাধারণত, একজন রোহিঙ্গা পুরুষকে সামরিক ও সরকারি প্রকল্পে কাজ করার জন্য সপ্তাহে এক দিন ত্যাগ করতে হবে, এবং এক রাত পরিচারিকা দায়িত্বের জন্য। রোহিঙ্গারা প্রচুর পরিমাণে আবাদি জমির মালিকানা হারিয়েছে, যা মিয়ানমারের অন্যত্র থেকে বৌদ্ধ বাসিন্দাদের এনে বসতির জন্য সামরিক বাহিনী হস্তান্তর করেছে।[৯২][৭৭] রোহিঙ্গাদের চলাফেরা পার্শ্ববর্তী কিছু এলাকায় কঠোরভাবে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে এবং এমনকি, তাদের ভ্রমণ ছাড়পত্র প্রয়োজন হয়।[৯৩] যদি তারা অনুমতি ছাড়াই ভ্রমণ করে বা তাদের ভ্রমণ ছাড়পত্রের অনুমতিপ্রাপ্ত সময় অতিক্রম করে, তাহলে তাদের বিচারের সম্মুখীন করা হয়, এমনকি তারা কারাগারেও যেতে পারে। এছাড়াও, তাদের নিজ গ্রামে প্রবেশ প্রত্যাখ্যান করা হয় এবং তাদের পরিবার থেকে দূরে থাকতে বাধ্য করা হয়। এমনকি জরুরি অবস্থার সময়েও তাদেরকে ভ্রমণের জন্য আবেদন করতে হয়, যা চলাফেরার স্বাধীনতা অধিকার বিষয়ে গুরুতর লঙ্ঘনের প্রতিনিধিত্ব করে।[৯৩]
মিয়ানমারের অন্যান্য অংশের তুলনায় রাখাইন রাজ্যের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মান অনুন্নত এবং অপর্যাপ্ত। তা সত্ত্বেও, রোহিঙ্গাদের গুরুতরভাবে এই পরিষেবাগুলিতে মৌলিক প্রবেশাধিকারে বঞ্চিত রাখা হয়েছে এবং সাথেসাথে আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলিকে মুসলিম স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কোন অনুমতি নেই। ফলে, স্বাস্থ্যের মান সূচনীয় পর্যায়ে রয়েছে এবং রোহিঙ্গাদের মধ্যে নিরক্ষরতার হার ৮০% এর মতো।[৯৪]
মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ঘটছে এমন উদ্বেগের বিষয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইয়েল ল স্কুলের পণ্ডিতদের দ্বারা গবেষণায় প্রায়োগিক প্রমাণ পাওয়া যায় যে রোহিঙ্গারা ঐতিহাসিকভাবে চরমভাবে ভুক্তভোগী এবং ক্রমাগত মানবাধিকার লঙ্ঘন সহ্য করে আসছে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এই ক্রিয়াকলাপ বেড়েই চলেছে।[৯৫] ২০১২ সাল থেকে, শিরশ্ছেদ, ছুরিকাঘাত, হত্যাকাণ্ড, প্রহার, গণ গ্রেফতার এবং গ্রাম ও আশেপাশের এলাকা পুড়িয়ে ধূলিসাৎ করে দেয়ার অভিযোগের সাথে জীবন ধারণের অবস্থা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন গুরুতর খারাপ হয়েছে। যাইহোক, মিয়ানমার সরকার কর্তৃক ন্যায়বিচার ও জবাবদিহির অভাব রয়েছে সেখানে। এভাবে রাষ্ট্র-সুরক্ষা ব্যর্থতার প্রতিনিধিত্ব করে।[৯১]
২০০৫ সাল থেকে, ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনে সহযোগিতা করছে, কিন্তু শরণার্থী শিবিরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলি এই প্রচেষ্টাকে হুমকিতে ফেলেছে।[৯৬] জাতিসংঘের প্রচলিত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা অধিকাংশই বাংলাদেশে রয়ে গেছে, কারণ মিয়ানমার শাসনাব্যবস্থায় তারা ফিরে আসতে পারছে না। সরকারের কাছ থেকে সমর্থন না পেয়ে বর্তমানে তারা বাংলাদেশে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।[৯৭] বাংলাদেশের শরণার্থী ক্যাম্পে বাংলাদেশ সরকার এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনে সমর্থনের অভাবে অনেক উদ্বাস্তুদের জীবনধারণ ঝুঁকির মুখে পড়েছে এবং তারা আরও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলিতে আরও দক্ষিণে পাড়ি দিচ্ছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আশ্রয়দাতা দেশসমূহের বিপুলসংখ্যক শরণার্থীদের স্থান করে দিতে ইচ্ছাকৃত অস্বীকৃতি এবং তথাকথিত অযোগ্যতার কারণে ২০১৫ সালের দলবদ্ধ প্রস্থান একটি আন্তর্জাতিক মানবিক সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।[৯৮] থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার পরিচালনায় সংগঠিত অপরাধ গোষ্ঠীর দ্বারা তাদের অধিকাংশই মানব পাচারের আওতাধীন। এসব পাচারকারীরা আশ্রয়-প্রত্যাশীদের হতাশাকে কাজে লাগিয়ে শোষণের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎ করে, যদি তারা বা তাদের পরিবার ওদের চাহিদাগুলি মেনে না নেয় তবে তাদের বেশিরভাগকে মারধর, বিক্রি বা মেরে ফেলে।[৯৯] ২০১৫ সালের রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মানবিক সংকটের প্রতিক্রিয়ায় আসিয়ান সম্প্রদায়ের ত্রুটি তুলে ধরে, যেহেতু ঐসব দেশগুলি থেকে প্রতিক্রিয়া অপর্যাপ্ত ও বিলম্বিত ছিল।[১০০]
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন শুধুমাত্র মিয়ানমার ও বাংলাদেশেই সীমিত নয়। বেশিরভাগ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে রোহিঙ্গাদের অবস্থা অস্বীকৃত। যদিও মিয়ানমারের তুলনায় তারা মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের মত দেশে একই রকম নিপীড়িত হয় না, তবে তারা বর্জন ও দারিদ্র্যের শিকার হয়। থাইল্যান্ড-মিয়ানমার সীমান্তে নয়টি শিবিরে প্রায় ১,১১,০০০ শরণার্থী রয়েছে। থাইল্যান্ড থেকে সমুদ্র পথে তাদের দলবদ্ধভাবে প্রেরণ করা হয়েছে এবং সেখানে ফেলে আসার অভিযোগ রয়েছে। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে, একটি প্রমাণ পাওয়া যায়, থাইল্যান্ডের সেনারা ১৯০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে সমুদ্রে ভাসিয়ে দেয়। ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষও ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে থাইল্যান্ডের সামরিক বাহিনী কর্তৃক আটক করা এবং পেটানো, অতঃপর উন্মুক্ত সমুদ্রে শরণার্থীদের পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে দেয়ার হাহাকারপূর্ণ ঘটনাগুলি বলে। ফেব্রুয়ারি শেষে, অভিযোগ উঠে যে পাঁচটি নৌযানের একটি দল মুক্ত সাগরে ছেড়ে দেয়া হয়, যার মধ্যে চারটি নৌকা ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায় এবং একটি তীরে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আভিসিত ভেজাজিভা বলেন যে এমন "কিছু ঘটনা" আছে যার জন্য রোহিঙ্গাদেরকে সমুদ্রের দিকে ধাবিত করা হয়েছে
"আমি মনে করি, এই লোকদের অন্য তীরে প্রস্থান করানোর, প্রচেষ্টা চলছে [...] যখন এটা ঘটবে, এটা বোঝা যায় যে যথেষ্ট খাদ্য এবং পানি সরবরাহ করা হয়। [...] এটা কার কাজ তা পরিষ্কার নয় [...] কিন্তু আমার কাছে যদি প্রমাণ থাকে যে এটি ঠিক কে করেছে তবে আমি তাদের বিচারে নিয়ে আসব।"[১০১]
অক্টোবর ২০১৫-তে, আল জাজিরার তদন্তকারী ইউনিট মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সরকার কর্তৃক পরিচালিত কি পরিমাণ গণহত্যা চলছে তার দৃঢ় প্রমাণ প্রকাশ করে। অনেক প্রমাণের ভিত্তিতে, তদন্তটিতে বলা হয় যে মিয়ানমার সরকারের প্রতিনিধিরা মুসলিম-বিরোধী দাঙ্গা সৃষ্টি করছে। একটি সরকারি সামরিক নথিতে ঘৃণা জাগিয়ে তোলার জন্য ঘৃণাত্মক-কথাবার্তা এবং ভাড়াটে গুন্ডা সহ বিভিন্ন উপায়ের ব্যবহার দেখানো হয়। তদন্তে জোর দেওয়া হয়েছে যে রোহিঙ্গা ও রাখাইন রাজ্যের ক্ষেত্রে গণহত্যা অপরাধের পরিণাম যা হতে পারে, দেশের সবথেকে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কিছু রাখাইন রাজ্যের এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক তদন্তে যুক্তিসঙ্গতভাবে দায়ী হতে পারেন।[১০২]
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
সম্পাদনারোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে সহযোগিতার অভাব রয়েছে। ২০১৫ সালের মে মাসে ৮০০০ রোহিঙ্গা "নৌকা যাত্রী" ছোট নৌকায়, খুব কম খাদ্য এবং অস্বাস্থ্যকর অবস্থার মধ্যে সমুদ্রে অসহায় হয়ে পড়েছিল বলে মনে করা হয় এবং দেশগুলো যখন তাদের নৌকা কিনারায় ভিড়তে দেয় নি, তখন নরকে ফেলে রাখার মতো তাদের অবস্থা হয়েছিল।[১০৩] সমালোচকরা এই শরণার্থী নৌকাগুলি ডাঙায় অবতরন করার অনুমতির পরিবর্তে অন্যান্য দেশের দিকে তাদের সমুদ্রে ফিরিয়ে দিয়ে "মানব পিংপং" খেলার জন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সরকারদেরকে অভিযুক্ত করেছে।[১০৪] যদিও অতীতে বিভিন্ন সময়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা এইসব দেশে গৃহীত হয়েছে, তাদের বেশিরভাগই না স্বাক্ষরিত হয়েছে আর না “রোহিঙ্গাদের অবস্থা সংক্রান্ত সম্মেলনে” (১৯৫১ শরণার্থী সম্মেলন) এবং “রাষ্ট্রহীন ব্যক্তিদের অবস্থা সংক্রান্ত সম্মেলনে” অনুমোদিত হয়েছে। এইভাবে শরণার্থী হিসেবে রোহিঙ্গাদের অধিকার নিশ্চিত করা যায় নি।[১০৫]
মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে মানবাধিকার লঙ্ঘন চলতে থাকে, তবে সরকারের কাছ থেকে কোন সুরক্ষা নেই। রোহিঙ্গাদের শরণার্থীদের সুরক্ষার জন্য এসব দেশে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেই। পরিবর্তে, অভিবাসন অভিযান সেখানে সাধারণ ব্যাপার এবং রোহিঙ্গা নৌকা যাত্রীদের প্রায়ই এসব দেশ থেকে বহিষ্কৃত করা হয়, পরিবর্তে তাদের দাসত্বের শিকারে পরিণত হতে হয়।[১০৬] সঠিক কাগজপত্রের অভাবের কারণে অনেক রোহিঙ্গা মিয়ানমারের নিপীড়ন থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পালিয়ে যাওয়ার জন্য চোরাকারবারি ও মানব পাচারকারীদের উপর নির্ভর করে। অভিযোগ রয়েছে যে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষের সংগঠিত মানব-পাচারকারী দলের সাথে সংযোগ এবং সম্পর্ক রয়েছে এবং এর ফলে অধিকাংশ রোহিঙ্গা দাসত্ব-শ্রমে বিক্রি হয় এবং উদ্বাস্তু হিসেবে সুরক্ষা পায় না।[১০৭]
ফেব্রুয়ারি ২০০৯-এ, অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থী সমুদ্রে ২১ দিন পর মালাক্কা প্রণালীতে আচেহ নাবিকদের দ্বারা সাহায্য পেয়েছিল।[১০৮] দুর্ভাগ্যবশত, ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষের এই প্রতিক্রিয়া সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, যে অনেক রোহিঙ্গা এখনও সীমান্তে গ্রহণ করা হচ্ছে না। এসব দেশের সরকার, বিশেষ করে মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া, নৌকোতে আসা শরণার্থীদের ব্যাপারে বিশেষভাবে কঠোর পদ্ধতি গ্রহণ করে, তবে ইউএনএইচসিআর-এর মাধ্যমে নিবন্ধিত হলে এবং যথোপযুক্ত উপায়ে এসে পৌঁছালে তারা আরও বেশি বিনয়ী মনোভাব পোষণ করে। এটা অনুমান করা হয় যে বর্তমানে মালয়েশিয়া ভূখণ্ডের মধ্যে ১,৫০,০০০ রোহিঙ্গা বাস করে।[১০৯]
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক রাশেদুজ্জামান বলেন, মিয়ানমারের সংস্কারবাদী প্রশাসনকে গণতান্ত্রিক হতে বলা হয়েছে; যাইহোক, সেখানে কোন লক্ষণ নেই যে রোহিঙ্গা বিষয়ে এদের কৌশল শীঘ্রই উন্নতির মুখ দেখতে পাবে। প্রকৃতপক্ষে, ১৯৮৯ থেকে ২০১০ সালে, ২১ বছরের মধ্যে প্রায় ১৫ বছর ধরে গৃহবন্দী অবস্থায় থাকা বিরোধীদলীয় গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল নেত্রী অং সান সু চিকেও এ ব্যাপারে চুপ করে থাকতে দেখা যায়। এটি পরোক্ষভাবে রোহিঙ্গাদের সমস্যা সম্পর্কে মানবিক সংকটের ইঙ্গিত দেয়, যা আজ বিশ্ব দেখছে তা দৃষ্টিসীমার বাইরে।[১১০]
২০১৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি, জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন অভিযোগ করে যে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে পাশবিক ধর্ষণ ও জাতিগত নির্মূল অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।[১১১] ৬ই ফেব্রুয়ারি ২০১৭-তে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র বিভাগের একজন মুখপাত্র বলে যে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের অভিযোগের বিষয়ে "গভীরভাবে উদ্বিগ্ন" ছিল এবং মিয়ানমার সরকারের কাছে অনুসন্ধানটিকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়ার আহ্বান জানায়, কিন্তু তারা এখনও গবেষণাটি কতটা নির্ভুল তা অধ্যয়ন করছে এবং কোন উপসংহারে পৌঁছাচ্ছে না।[১১২] ৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সালে, পোপ ফ্রান্সিস রোহিঙ্গা মুসলমানদের মিয়ানমারের সরকার কর্তৃক আচরণের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে নিন্দা জানান এবং দেশটির মুসলিমদেরকে "তাদের বিশ্বাসের সাথে" বসবাসের আহ্বান জানান। [১১৩]
আরও দেখুন
সম্পাদনাআরো পড়ুন
সম্পাদনা- মাইমুল আহসান খান (২০১৭)। রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার: আন্তর্জাতিক আইন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা। কামরুল বুক হাউস। আইএসবিএন 9789843319609।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Pew Research Center's Religion & Public Life Project: Burma ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১০ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে. Pew Research Center. 2010.
- ↑ Human Rights Watch, "The government could have stopped this", August 2012, pg. 5, http://www.hrw.org/sites/default/files/reports/burma0812webwcover_0.pdf
- ↑ Pe Maung Tin and G. H. Luce, The Glass Palace Chronicle of the Kings of Burma, Rangoon University Press, Rangoon, Burma, January 1960
- ↑ Yegar, Moshe The Muslims of Burma: a Study of a Minority Group, Otto Harrassowitz, Wiesbaden, 1972; p. 2, paragraph 3
- ↑ Pe Maung Tin and G. H. Luce, The Glass Palace Chronicle of the Kings of Burma p. 83 paragraph 3, lines 2&3
- ↑ Yegar Muslims; p. 2, lines 1&2
- ↑ Pe Maung Tin and G. H. Luce, The Glass Palace Chronicle of the Kings of Burma, p. 103, paragraph 3
- ↑ Yegar Muslims; p. 10, lines 11&12
- ↑ Yegar Muslims; p. 10, lines 10-16
- ↑ Hmanan Yazawin (The Glass Palace Chronicle) Vol II p.312
- ↑ Yegar Muslims; p. 21, paragraph 2; pp. 22-24.
- ↑ Colonel Ba Shin, Coming of Islam to Burma down to 1700 CE, Lecture at the Asia History Congress. New Delhi: Azad Bhavan 1961 Mimo.
- ↑ H. R. Spearman, British Burma Gazetteer (Rangoon, 1880); I, pp. 293-294.
- ↑ Hall, History of South East Asia, pp. 33-341.
- ↑ Desai, A Pageant of Burmese History, pp. 61-63.
- ↑ Harvey, G. E. “The fate of Shah Shuja”, 1661, JBRS, XII (Aug 1922) pp. 107-112.
- ↑ The Peacock Throne: The Drama of Mogul India – Waldemar Hansen – Google Books। Books.google.co.in। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১৪।
- ↑ Yegar Muslims; p. 10, line 21
- ↑ ক খ Yegar Muslims; p. 12, paragraph 3
- ↑ Siddiq Khan, M., “Captain George Sorrel’s Mission to the court of Amarapura, 1793-4", Journal of the Asiatic Society of Pakistan (Dacca); II (1957), pp. 132-140
- ↑ Yegar Muslims; p. 29 paragraph 1 and footnote 1; p. 31 lines 1, 2, 11
- ↑ ক খ গ Collis, Maurice, Trials in Burma
- ↑ Yegar Muslims; p. 32
- ↑ Yegar Muslims; p.111, paragraph 4, lines 8-15; p. 27, paragraph 4, lines 5-7; p. 31, paragraph 2; p. 32, paragraph 4
- ↑ ক খ গ Renaud, Egreteau (১৯ অক্টোবর ২০০৯)। "Burma (Myanmar) 1930-2007"। SciencePo। Mass Violence and Resistance - Research Network। ২৪ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মার্চ ২০১৭।
- ↑ Democratic Voice of Burma, Media conference ( 19–20 July, Oslo) Burmese Media: Past, present and future by U Thaung (Mirror/Kyae Mon news paper Retired Chief Editor)
- ↑ Yegar Muslims; p. 32, paragraph 4; p. 36, paragraph 1, lines 6, 7, 8, 9, 11, 12, 14, 15
- ↑ Yegar Muslims; p. 36, paragraph 3.
- ↑ Yegar Muslims; p. 36, paragraph 4; p. 37 lines 1, 2
- ↑ ক খ Yegar Muslims; p. 37, paragraph 2.
- ↑ Yegar Muslims; p. 38, line 1
- ↑ Yegar Muslims; p. 38, paragraph 2
- ↑ Yegar Muslims; p. 38, paragraph 2, lines 12-14
- ↑ Kurt Jonassohn (১৯৯৯)। Genocide and gross human rights violations: in comparative perspective। Transaction Publishers। পৃষ্ঠা 263। আইএসবিএন 0-7658-0417-4। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০১১।
- ↑ Howard Adelman (২০০৮)। Protracted displacement in Asia: no place to call home। Ashgate Publishing, Ltd.। পৃষ্ঠা 86। আইএসবিএন 0-7546-7238-7। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০১১।
- ↑ Human Rights Watch (Organization) (২০০০)। Burma/Bangladesh: Burmese refugees in Bangladesh: still no durable solution। Human Rights Watch। পৃষ্ঠা 6। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০১১।
- ↑ Asian profile, Volume 21। Asian Research Service। ১৯৯৩। পৃষ্ঠা 312। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০১১।
- ↑ ক খ গ ঘ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৭ নভেম্বর ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০১৭।
- ↑ "Taungoo Violence (May 2001): Crackdown on Burmese Muslims (Human Rights Watch Briefing Paper, July 2002)"। Hrw.org। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১৪।
- ↑ "Burma"। State.gov। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১৪।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১২ মার্চ ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০১৭।
- ↑ Houtman, Gustaaf. Mental Culture in Burmese Crisis Politics: Chapter 5 Study of Languages and Cultures of Asia and Africa Monograph Series No. 33. Tokyo University of Foreign Studies, Institute for the Study of Languages and Cultures of Asia and Africa, 1999, 400 pp. আইএসবিএন ৪-৮৭২৯৭-৭৪৮-৩
- ↑ "Riots In Burmese History"। CNN। ২০ জুন ২০১২। ২০ মার্চ ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০১৭।
On 16 March 1997 beginning at about 3:30 p.m. a mob of 1,000-1,500 Buddhist monks and others shouted anti-Muslim slogans. They targeted the mosques first for attack, followed by Muslim shop-houses and transportation vehicles in the vicinity of mosques, damaging, destroying, looting, and trampling, burning religious books, committing acts of sacrilege. The area where the acts of damage, destruction, and lootings were committed was Kaingdan, Mandalay. The unrest in Mandalay allegedly began after reports of an attempted rape of a girl by Muslim men. At least three people were killed and around 100 monks arrested.
- ↑ ক খ "Chronology for Rohingya (Arakanese) in Burma"। The University of Maryland। ১০ জানুয়ারি ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০১৭।
- ↑ Crackdown on Burmese Muslims, July 2002 http://hrw.org/backgrounder/asia/burmese_muslims.pdf
- ↑ Burma Net News:16 July 2001 http://www.burmalibrary.org/reg.burma/archives/200107/msg00034.html
- ↑ ক খ গ Crackdown on Burmese Muslims, Human Rights Watch Briefing Paper http://hrw.org/backgrounder/asia/burma-bck4.htm
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৪ আগস্ট ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১৭।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ২০১২-১০-১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-২৭।
- ↑ "Myanmar gov't refutes accusations of religious persecution, discrimination in Rakhine incident – Xinhua | English.news.cn"। News.xinhuanet.com। ২২ আগস্ট ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১৪।
- ↑ "Burma's 'bin Laden of Buddhism'"। The Telegraph। ১৩ জুলাই ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০১৫।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৯ জুন ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১৭।
- ↑ Michael Jerryson Retrieved 4 July 2017.
- ↑ "Analysis: How to reverse Buddhism's radical turn in Southeast Asia?"। IRINnews। ১২ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৪।
- ↑ "Wirathu's 'Buddhist Woman Raped' Facebook Post Stokes Anti-Muslim Violence in Mandalay"। International Business Times UK। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৪।
- ↑ ক খ "Curfew imposed in Myanmar's second-largest city after riots – Channel NewsAsia"। ২০১৪-০৭-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৪।
- ↑ ক খ "Curfew imposed in Myanmar as gang violence escalates"। Myanmar News. Net। ১৪ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুলাই ২০১৪।
- ↑ "Anti-Muslim Riots Turn Deadly in Myanmar's Mandalay City"। Radio Free Asia। ২ জুলাই ২০১৪। ২২ মার্চ ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০১৭।
Anti-Muslim riots in Myanmar’s second largest city Mandalay have left two people dead and about a dozen wounded, and motor vehicles and shops ablaze, according to eyewitnesses Wednesday, in the latest communal violence to hit the predominantly Buddhist country.
- ↑ ক খ "Mob burns down mosque in Myanmar"। Al Jazeera। ২ জুলাই ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৭।
- ↑ "Mob Burns Down Mosque in Myanmar; U.N Urges Action on Attacks"। The New York Times। ৩ জুলাই ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৭।
- ↑ "Myanmar says nine police killed by insurgents on Bangladesh border"। The Guardian। ১০ অক্টোবর ২০১৬।
- ↑ ক খ James Griffiths (২৫ নভেম্বর ২০১৬)। "Is The Lady listening? Aung San Suu Kyi accused of ignoring Myanmar's Muslims"। CNN। Cable News Network।
- ↑ ক খ "Myanmar seeking ethnic cleansing, says UN official as Rohingya flee persecution"। The Guardian। ২৪ নভেম্বর ২০১৬।
- ↑ "New wave of destruction sees 1,250 houses destroyed in Myanmar's Rohingya villages"। International Business Times। ২১ নভেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০১৬।
- ↑ "Rohingya abuse may be crimes against humanity: Amnesty"। Al Jazeera। ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬।
- ↑ Oliver Holmes (১৯ ডিসেম্বর ২০১৬)। "Myanmar's Rohingya campaign 'may be crime against humanity'"। The Guardian।
- ↑ Nick Cumming-Bruce (১৬ ডিসেম্বর ২০১৬)। "Myanmar 'Callous' Toward Anti-Rohingya Violence, U.N. Says"। The New York Times।
- ↑ "UN condemns Myanmar over plight of Rohingya"। BBC। ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬।
- ↑ Associated Press (৪ ডিসেম্বর ২০১৬)। "'Enough is enough': Malaysian PM Najib Razak asks Aung San Suu Kyi to prevent Rohingya violence"। Firstpost। সংগ্রহের তারিখ ১২ ডিসেম্বর ২০১৬।
- ↑ Kevin Ponniah (৫ ডিসেম্বর ২০১৬)। "Who will help Myanmar's Rohingya?"। BBC।
- ↑ "The most persecuted people on Earth?"। The Economist। ১৩ জুন ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০১৭।
Rohingyas have often been called the most persecuted minority in the world.
- ↑ [১], Muslims in Burma's Rakhine state 'abused' – Amnesty, 20 July 2012
- ↑ [২], Desperate Plight of Burma's Rohingya people, 4 June 2010
- ↑ [৩], Myanmar: Three Muslims Sentenced to Death for Rape and Murder of Buddhist Woman, 19 June 2012
- ↑ "The Rohingyas: The most persecuted people on Earth?"। The Economist। ১৩ জুন ২০১৫।
- ↑ [৪], The Equal Rights Trust & Mahidol University Equal Only in Name: The Human Rights of Stateless Rohingya in Malaysia at [13].
- ↑ ক খ Jonathan Head (৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯)। "What drive the Rohingya to sea?"। BBC। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুলাই ২০১২।
- ↑ [৫], Human Rights Watch Report on Malaysia (2000).
- ↑ [৬] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে, Chris Lewa North Arakan: An Open Prison for the Rohingya in Burma FMR 32 at [11].
- ↑ https://web.archive.org/web/20130927221000/http://unyearbook.un.org/1948-49YUN/1948-49_P1_CH5.pdf [Yearbook of the United Nations 1948–1949 at [535] Archived from the original (PDF) on September 27, 2013.
- ↑ [৭] Universal Declaration of Human Rights, art. 2.
- ↑ [৮], Universal Declaration of Human Rights, art. 5.
- ↑ [৯], United Nations Convention against Torture.
- ↑ [১০], Convention relating to the Status of Stateless Persons.
- ↑ [১১] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে, Signatories of International Covenant on Civil and Political Rights.
- ↑ [১২], International Covenant on Civil and Political Rights.
- ↑ [১৩] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে, Signatories of Convention on the Elimination of All Forms of Discrimination against Women.
- ↑ [১৪] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে, Signatories of Convention on the Rights of the Child.
- ↑ [১৫] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে, Signatories of the International Covenant on Economic, Social and Cultural Rights.
- ↑ [১৬] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ জুন ২০১৭ তারিখে, Report of the Working Group on the Universal Periodic Review (Myanmar), 23 December 2015
- ↑ ক খ [১৭], A Briefing by Burmese Rohingya Organisation UK (January 2015).
- ↑ Crisis Group 2014, পৃ. 19।
- ↑ ক খ [১৮] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে Chris Lewa North Arakan: An Open Prison for the Rohingya in Burma FMR 32 at [12].
- ↑ [১৯] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে Chris Lewa North Arakan: An Open Prison for the Rohingya in Burma FMR 32 at [13].
- ↑ [২০], Yale Law School Report Persecution of the Rohingya Muslims: Is Genocide Occurring in Myanmar's Rakhine State?
- ↑ "UNHCR threatens to wind up Bangladesh operations"। New Age BDNEWS, Dhaka। ২১ মে ২০০৫। ২৫ এপ্রিল ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ এপ্রিল ২০০৭।
- ↑ "Burmese exiles in desperate conditions"। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৪।
- ↑ [২১], The Guardian South-east Asia faces its own migrant crisis as states play 'human ping-pong (14 May 2015).
- ↑ [২২], CNN Report Myanmar's shame: Living inside Rohingya ghettos (1 April 2016).
- ↑ [২৩], The Diplomat ASEAN's Response to Rohingya Crisis Falls Short (2 June 2015).
- ↑ Dan Rivers CNN। "Thai PM admits boat people pushed out to sea – CNN.com"। Edition.cnn.com। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১৪।
- ↑ "Exclusive: 'Strong evidence' of genocide in Myanmar"। www.aljazeera.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৮-২২।
- ↑ [২৪], Human Rights News Southeast Asia: End Rohingya Boat Pushbacks (14 May 2015).
- ↑ [২৫], The Telegraph Malaysia detains more than a thousand Bangladeshi and Rohingya refugees after rescue (11 May 2015).
- ↑ [২৬] The Equal Rights Trust & Mahidol University Equal Only in Name: The Human Rights of Stateless Rohingya in Malaysia at [18].
- ↑ North arakan article at 13
- ↑ [২৭] The Equal Rights Trust & Mahidol University Equal Only in Name: The Human Rights of Stateless Rohingya in Malaysia at [20]
- ↑ "Kompas – VirtualNEWSPAPER"। Epaper.kompas.com। ২০ জুন ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১৪।
- ↑ [২৮] Refugees International Malaysia: Rohingya Refugees Hope For Little and Receive Less (17 November 2015)
- ↑ Habib, Walid Bin; Palma, Porimol। "Rohingyas are the easy prey of human trafficking"। thedailystar.net। The Daily Star। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০১৫।
- ↑ "Myanmar army killed and raped in Rohingya ethnic cleansing - U.N."। ৬ জুলাই ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুন ২০১৭।
- ↑ "U.S. 'deeply troubled' by U.N. report of Myanmar atrocities against Muslims"। ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুন ২০১৭ – Reuters-এর মাধ্যমে।
- ↑ "Pope Francis just stood up for 'the most oppressed people on earth'"। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুন ২০১৭।
উৎস
সম্পাদনা- Myanmar Muslim Information Centre (MMIC) [২৯]
- Burmese Muslims Network [৩০]
- Islamic Unity Brotherhood [৩১] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ এপ্রিল ২০০৬ তারিখে
- Myanmar Muslim political Awareness Organization [৩২]
- Panthay on line community [৩৩]
- Office of UN High Commissioner for Human Rights [৩৪]
- US Department of State, International Religious Freedom Report 2005 on Burma [৩৫]
- US Department of State, Burma, Country Reports on Human Rights Practices – 2005.Released by the Bureau of Democracy, Human Rights, and Labor [৩৬]
- Amnesty International’s report on Burma [৩৭]
- UK Conservatives’ Human Rights [৩৮]
- Priestly, Harry (জানুয়ারি ২০০৬)। "The Outsiders"। The Irrawaddy। ২৭ নভেম্বর ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুলাই ২০০৬।
- Butkaew, Samart (ফেব্রুয়ারি ২০০৫)। "Burmese Indians: The Forgotten Lives" (পিডিএফ)। Burma Issues। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুলাই ২০০৬।
- The Persecution of Muslims in Burma by Karen Human Rights Group