বড়া (vaḍā) ভারতীয় উপমহাদেশের তেলে ভাজা জলখাবারের একটি পদ। বিভিন্ন ধরনের বড়া রয়েছে, যেমন কাটলেট, ডোনাট, ডাম্পলিং ইত্যাদি।[৭] এই খাবারের বিকল্প নামগুলির মধ্যে রয়েছে ওয়াড়া, বাড়ে, বাড়াই, ওয়াড়েহ।[৮]

বড়া
নারিকেলের চাটনির সাথে পরিবেশিত মেদু বড়া
অন্যান্য নামওয়াড়া, বাড়ে, বাড়াই
প্রকারপ্রাতঃরাশ, জলখাবার
উৎপত্তিস্থলভারত
অঞ্চল বা রাজ্যভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো[১], গায়ানা[২], সুরিনাম[৩], দক্ষিণ আফ্রিকা[৪], মরিশাস[৫], ফিজি[৬]

বিভিন্ন ধরনের বড়া কলাই থেকে শুরু করে (যেমন: দক্ষিণ ভারতের মেদু বড়া) আলু পর্যন্ত (যেমন: পশ্চিম ভারতের বাটাটা বড়া) নানারকম উপকরণ থেকে তৈরি করা হয়। এগুলি প্রায়শই একটি প্রাতঃরাশের পদ বা একটি জলখাবার হিসাবে পরিবেশন করা হয়, এবং অন্যান্য খাবারের সাথেও এটি ব্যবহৃত হয় (যেমন: দই বড়া এবং বড়া পাও)।

ইতিহাস সম্পাদনা

 
মেদু বড়া বা উদ্দিনা বড়া

কে.টি. আচ্য'র মতে, ১০০ খ্রিস্টপূর্ব - ৩০০ খ্রিস্টাব্দে প্রাচীন তামিলদের মধ্যে বড়া জনপ্রিয় ছিল।[৯] বড়াকে এর ধরন "ভাটাকা" হিসেবে উল্লেখ রয়েছে ১২তম শতাব্দীর সংষ্কৃত বিশ্বকোষ মানাসোলাসা-তে, যেটি তৃতীয় সোমেশ্বর কর্তৃক প্রণীত, যিনি বর্তমান কর্ণাটক থেকে শাসন করেছিলেন। বিহারউত্তরপ্রদেশের বর্তমান রাজ্যগুলির প্রাচীন সাহিত্যে বড়া এবং মুনগৌড়ার (মুগ থেকে তৈরি একটি বড়া) উল্লেখ রয়েছে।[১০]

উত্তর প্রদেশ এবং বিহার থেকে প্রচুর অভিবাসী ত্রিনিদাদ ও টোবাগো[১১], গায়ানা[১২], সুরিনাম[১৩], দক্ষিণ আফ্রিকা[১৪], মরিশাস[১৫], এবং ফিজিতে[১৬] উনবিংশ শতকের মধ্যভাগে এবং বিংশ শতকের শুরুর দিকে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক হিসাবে স্থানান্তরিত হয়েছিল। এই দেশগুলিতে বড়া ভারতীয় খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়েছিল। ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে বড়া তাদের অন্যতম বিখ্যাত স্ট্রিটফুড (পথখাবার) ডাবলস এর অংশীভূত হয়ে ওঠেছে। ডাবলস-এ চানা দিয়ে পরিপূর্ণ দুইটি বড়া দিয়ে পরিবেশন করা হয় এবং উপরে চাটনি বা আচার দেওয়া হয়।[১৭][১৮]

প্রস্তুতি সম্পাদনা

 
ডুবো তেলে কড়া ভাজা হচ্ছে মেদু বড়া

বড়া কলাই, সাগু বা আলু দিয়ে তৈরি হতে পারে। সাধারণত কলাইয়ের সাথে অড়হর, ছোলা, মাষকলাই এবং মুগ অন্তর্ভুক্ত থাকে। স্বাদ এবং পুষ্টির মান বাড়াতে শাকসবজি ও অন্যান্য উপাদানও সাথে যুক্ত করা হয়।[১৯]

কলাই-ভিত্তিক বড়ার জন্য, কলাইগুলো (ডাল) পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখা হয় এবং তারপরে একটি পিটালি দিয়ে সুগুলো চূর্ণ করা হয়। তবে ভালো হয় সাথে অন্য উপকরণ যেমন জিরা, পেঁয়াজ, বারসুঙ্গা, লবণ, মরিচ বা লবঙ্গ দানা দিয়ে তৈরি করা হলে। দোকানগুলিতে বড়াগুলোকে আকারে বড় এবং ফুলকো করার জন্য প্রায়শই মশলায় আদা এবং বেকিং সোডা যুক্ত করা হয়। এর পরে মিশ্রণটিকে বিভিন্ন আকার দেওয়া হয় এবং কড়া ভাজা হয়, ফলস্বরূপ মুচমুচে এবং তুলতুলে বড়া তৈরি হয়।

পরিবেশনা সম্পাদনা

 
মাসালা বড়া অথবা পারিপ্পু বড়া

বড়া প্রায়শই জলখাবার হিসাবে বা অন্য খাবারের অংশ হিসাবে খাওয়া হয়। রেস্তোঁরাগুলিতে এটি আলাদা পদ হিসাবে নেওয়া যেতে পারে, তবে এটি মূল খাবার নয়। এগুলি ভাজার পর গরম এবং মুচমুচে অবস্থায় খাওয়া হয়। বড়া'র সাথে পরিবেশন করা হয় সাম্বার, চাটনি এবং দই

মেদু বড়া সাধারণত মূল খাবার ধোসা, ইডলি, অথবা পোঙ্গালের সাথে পরিবেশিত হয়। সাম্বার এবং নারকেল চাটনিগুলি মেদু বড়ার প্রধান সহকারী উপাদান।

খাদ্যপুষ্টি সম্পাদনা

 
ভারতের নয়া দিল্লীতে মেদু বড়া
মেদু বড়া
প্রতি ২টি (৫৮ গ্রাম)-এ পুষ্টিমান
শক্তি৭৯৫ কিজু (১৯০ kcal)
১৮
খাদ্য আঁশ৫ গ্রাম
১১ গ্রাম
সুসিক্ত স্নেহ পদার্থ
৪ গ্রাম

Source:[২০]
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য মার্কিন সুপারিশ ব্যবহার করে শতাংশ অনুমান করা হয়েছে।

চিত্রশালা সম্পাদনা

আরো দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. https://www.simplytrinicooking.com/doubles/
  2. "Guyanese Style Bara Recipe – Vegan Indian Fritter"Caribbean Style Recipes। ২০ এপ্রিল ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০১৯ 
  3. "Bara"। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০১৯ 
  4. Mesthrie, Rajend (১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮)। "Language in Indenture: A Sociolinguistic History of Bhojpuri-Hindi in South Africa"। Routledge। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০১৯ – Google Books-এর মাধ্যমে। 
  5. "Mauritius: Bhajas"196 flavors। ৬ জানুয়ারি ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০১৯ 
  6. "Fiji Indian Hot & Spicy Bara Recipe"। ৯ ডিসেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০১৯ 
  7. Andrea Nguyen (২০১১)। Asian Dumplings। Ten Speed Press। পৃষ্ঠা 3। আইএসবিএন 9781607740926 
  8. Indigenous Fermented Foods of South Asia। CRC Press। ২০১৬। পৃষ্ঠা 401। আইএসবিএন 9781439887905 
  9. "The Hindu : Sci Tech / Speaking Of Science : Changes in the Indian menu over the ages"hinduonnet.com। ২৬ আগস্ট ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০১৫ 
  10. K.T. Achaya (২০০৩)। The Story of Our Food। Universities Press। পৃষ্ঠা 84–85। আইএসবিএন 978-81-7371-293-7 
  11. https://www.simplytrinicooking.com/doubles/
  12. "Guyanese Style Bara Recipe – Vegan Indian Fritter"Caribbean Style Recipes। ২০ এপ্রিল ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০১৯ 
  13. "Bara"। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০১৯ 
  14. Mesthrie, Rajend (১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮)। "Language in Indenture: A Sociolinguistic History of Bhojpuri-Hindi in South Africa"। Routledge। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০১৯ – Google Books-এর মাধ্যমে। 
  15. "Mauritius: Bhajas"196 flavors। ৬ জানুয়ারি ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০১৯ 
  16. "Fiji Indian Hot & Spicy Bara Recipe"। ৯ ডিসেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০১৯ 
  17. post। "History of doubles"। M.facebook.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৫-১৭ 
  18. Mohan, Neki (জুন ২৮, ২০১৫)। "Street food of Trinidad, Tobago gains popularity worldwide"WPLG। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৮ 
  19. Basic Food Preparation (3rd সংস্করণ)। Orient Blackswan। ২০০১। পৃষ্ঠা 294–295। আইএসবিএন 9788125023005 
  20. "Calories in Saravana Bhavan Vada and Nutrition Facts"fatsecret.co.in। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০১৫ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা