মাষকলাই

উদ্ভিদের প্রজাতি

মাষকলাই(বৈজ্ঞানিক নাম: Vigna mungo)এরা Leguminosee পরিবারের সদস্য। একধরনের ডাল জাতীয় শস্য। প্রধানত লিগুমিনসি গোত্রের গুল্ম প্রজাতি vigna mungo থেকেই এই শস্য পাওয়া যায়। ভারতীয় উপমহাদেশে এই ডাল জাতীয় শস্যটি সবথেকে বেশি প্রচলিত এবং এই অঞ্চলেই এর ব্যবহারের আধিক্য দেখা যায়। এটি সবুজ সার, আচ্ছাদক শস্য এবং পশুখাদ্য হিসেবেও ব্যবহার্য। এর রোগবালাইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ডাউনি মিলডিউ, রাস্ট, পাতার দাগপড়া রোগ এবং শুঁয়োপোকার প্রকোপ।

মাষকলাই
মাষকলাই শস্যদানা
Vigna mungo
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Plantae
শ্রেণীবিহীন: সপুষ্পক উদ্ভিদ
শ্রেণীবিহীন: Eudicots
শ্রেণীবিহীন: Rosids
বর্গ: Fabales
পরিবার: Fabaceae
উপপরিবার: Faboideae
গোত্র: Phaseoleae
গণ: Vigna
প্রজাতি: Vigna mungo
দ্বিপদী নাম
Vigna mungo
(L.) Hepper
প্রতিশব্দ[১]
  • Azukia mungo (L.) Masam.
  • Phaseolus hernandezii Savi
  • Phaseolus mungo L.
  • Phaseolus roxburghii Wight & Arn.

এই ডালের রান্না সম্পাদনা

মাষকলাই ডাল বিভিন্ন ভাবে রান্না হয়। মাছ-মাংস-সবজি—এসবের সঙ্গে এ ডালযোগে রান্না হয়। দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এর চাষ বেশি হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মাষকলাইয়ের ডালে শতকরা ২০ থেকে ২৩ ভাগ আমিষ থাকে। প্রোটিন ও ভিটামিন বি-এর সমৃদ্ধ উৎস হলো এই ডাল। এ ডাল পেট কেচে বর্জ্য নামিয়ে দেয়। সঙ্গে পুরুষের শুক্রাণুও বাড়ায়। রুচিকর ও বলবর্ধক বলে শরীরে প্রয়োজনীয় প্রোটিনের জোগানদাতা এই ডাল

পুষ্টিগুণ সম্পাদনা

মাষকলাই ডাল প্রচুর পুষ্টি গুণ সম্পন্ন ডাল।

এর প্রতি ১০০ গ্রামে আছেঃ

  • ক্যালরিঃ ৩৪১
  • পটাসিয়ামঃ ৯৮৩ মি. গ্রা.
  • প্রোটিনঃ ২৫ গ্রাম
  • সোডিয়ামঃ ৩৮ মি.গ্রা.
  • কেলসিয়ামঃ ১৩৮ মি. গ্রা.
  • আয়রনঃ ৭.৫৭ মি. গ্রা.

চাষাবাদ সম্পাদনা

ডালশস্যটির চাষ ভারতীয় উপমহাদেশে প্রাচীনকাল থেকেই চলছে। এটি বনেও জন্মে, তবে এঁটেল মাটিতে ভাল ফলে। খরাসহিষ্ণু এই ডাল বর্ষা ও শীত মৌসুমের ফসল। ধানের সঙ্গে প্রায়শ পর্যায়িক চাষে এবং কখনও কখনও মিশ্রচাষেও ফলানো হয়। অগভীর চষা জমিতেই ভাল ফলন দেয়, গভীর চষা জমিতে ফলের বদলে ডালপালাই বেশি বাড়ে। ফসল পাকে ৮০-১২০ দিনের মধ্যে। ফলন হেক্টর প্রতি প্রায় ৭১৪ কেজি শুকনো ডাল। বাংলাদেশে মাষকলাই চাষের জমির পরিমাণ প্রায় ১,৪৮,৩৮০ হেক্টর ও বার্ষিক মোট উৎপাদন প্রায় ১,৩৬,০৮৫ মে টন।

প্রায় ৪০ সেমি লম্বা মাষকলাই গাছ খাড়া, আংশিক খাড়া বা গড়ানো হয়। ফুলের রং ফ্যাকাসে হলুদ। শুঁটিগুলো খাড়া বা আংশিক খাড়া; পাকলে হালকা বা গাঢ় বাদামি। বীজ সাধারণত কালো, তবে সবুজও হয়ে থাকে।এটি সবুজ সার, আচ্ছাদক শস্য এবং পশুখাদ্য হিসেবেও ব্যবহার্য। এর রোগবালাইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ডাউনি মিলডিউ, রাস্ট, পাতার দাগপড়া রোগ এবং শুঁয়োপোকার প্রকোপ।

মাষকলাই ডাল এর বিভিন্ন নাম সম্পাদনা

ভারতের বিভিন্ন ভাষায় এই ডালের নামের ভিন্নতা পাওয়া যায়। যেমনঃ-

  • তামিলঃ உளுந்து uḷuntu
  • গুজরাটিঃ અળદ aḷad, અડદ aḍad
  • হিন্দিঃ उड़द दाल uṛad dāl, उरद दाल urad dāl
  • কানাড়াঃ ಉದ್ದು uddu, ಉದ್ದಿನ ಬೇಳೆ uddina bēḷe
  • মারাঠিঃ उडीद uḍid
  • মালায়ামঃ ഉഴുന്ന് uẓunu
  • তেলেগুঃ మినుములు minumulu
  • বাঙালিঃ মাসকালাই ডাল mashkalai ḍal
  • পাঞ্জাবিঃ دال ماش dāl māsh
  • উড়িয়াঃ ବିରି ଡାଲି biri ḍāli
  • নেপালিঃ मास mās
  • সিনহালাঃ උඳු undu
  • উর্দুঃ اورد دال urad dāl
  • ভিয়েতনামঃ đậu muồng ăn

মাষকলাই ডালের উপকারিতা সম্পাদনা

প্রোটিন ও ভিটামিন বি-এর সমৃদ্ধ উৎস হলো এই ডাল। এ ডাল পেট কেচে বর্জ্য নামিয়ে দেয়। সঙ্গে পুরুষের শুক্রাণুও বাড়ায়। রুচিকর ও বলবর্ধক বলে শরীরে প্রয়োজনীয় প্রোটিনের জোগানদাতা এই ডাল। [২]

  • বলবর্ধকঃ এতে প্রচুর লৌহ বা আয়রন আছে বলে এটি স্বাস্থ্যকর ডাল। এটি শরীরে বল বৃদ্ধি করে, শরীরকে সক্রিয় রাখে।
  • হজমশক্তি বাড়ায়ঃ এতে প্রচুর ফাইবার আছে বলে হজম ভালো হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এই ডাল উপকারী।
  • হৃদ্‌যন্ত্র সুস্থ রাখেঃ হৃদ্‌যন্ত্র ভালো রাখতে মাষকলাই ডাল উপকারী। এর পটাশিয়াম রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। শরীরে কোলস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে এ ডাল উপকারী। এতে ম্যাগনেশিয়াম থাকায় রক্তপ্রবাহ বাড়ায় এবং হৃদ্‌যন্ত্র ভালো রাখতে সাহায্য করে।
  • শুক্রবর্ধকঃ মাষকলাই ডাল শুক্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে। ‘প্রাকৃতিক উদ্দীপক’ হিসেবে এই ডাল শুক্রসংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করতে পারে। পানিতে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে ঘি দিয়ে ভেজে খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
  • পেশি গঠনেঃ পেশির কোষের বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে মাষকলাই ডাল। শরীরের বৃদ্ধিতে ডালে থাকা প্রোটিন খুবই দরকারি।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখতে পারে মাষকলাই ডাল।
  • স্নায়বিক রোগ সারাতেঃ স্নায়বিক দুর্বলতা, স্মৃতি দুর্বলতা, সিজোফ্রেনিয়ার, হিস্টিরিয়ার মতো সমস্যা দূর করতে পারে মাষকলাই।
  • ব্যথানাশকঃ আয়ুর্বেদশাস্ত্রে মাষকলাই ডালের দারুণ ব্যথানাশক গুণের কথা বলা হয়। অস্থিসন্ধির ব্যথা সারাতে এ ডাল উপকারী।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ আয়ুর্বেদশাস্ত্রের পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ের গবেষণাতেও মাষকলাই ডালের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়টি দেখা গেছে।
  • ত্বকের সুরক্ষায়ঃ দারুণ স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করা যায় মাষকলাই। ত্বক থেকে ময়লা, মৃত কোষ সরিয়ে ত্বকের সতেজতা ও ঔজ্জ্বল্য বাড়ায় মাষকলাই। রোদে পোড়া ত্বকের ক্ষেত্রেও এই ডাল উপকারী। এতে আছে প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক ক্ষমতা। তাই মুখের ব্রণ দূর করতে পারে এটি। মুখের দাগ দূর করতেও মাষকলাইয়ের ডালের ব্যবহার দেখা যায়।
  • খুশকি দূর করেঃ মাষকলাইয়ের ডাল মাথায় মাখলে চুল নরম হয়, খুশকি দূর হয়।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "The Plant List: A Working List of All Plant Species"। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪ 
  2. Health Benefit Times। "মাষকলাই ডালের অবিশ্বাস্য গুণ"। Daily Prothom ALo।