মসুর ডাল

উদ্ভিদের প্রজাতি

মসুর ডাল বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান খাদ্যশস্য। এর ইংরেজি নাম Red lentil। এ ডালকে পানিতে সেদ্ধ করে তেল-মশলা সহযোগে রান্না করা হয় এবং রান্না করা ডাল মিশিয়ে ভাত খাওয়া হয়। মানব দেহে আমিষের প্রয়োজনীয়তার নিরিখে বলা হয়ে থাকে মসুর ডাল গরিবের জন্য মাংস। মসুর ডাল দেখতে হালকা লাল বর্ণের। দানাগুলো খেসাড়ী, কলাই বা বুটের ডাল থেকে ছোট। মসুর ডাল উচ্চ আমিষসমৃদ্ধ ; ফলে মানব দেহে আমিষের অভাব পূরণ করার জন্য যথেষ্ট।

Lentil
Masoor dal.JPG
মসুর ডাল
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Plantae
শ্রেণীবিহীন: Angiosperms
শ্রেণীবিহীন: Eudicots
শ্রেণীবিহীন: Rosids
বর্গ: Fabales
পরিবার: Fabaceae
উপপরিবার: Faboideae
গোত্র: Vicieae
গণ: Lens
প্রজাতি: L. culinaris
দ্বিপদী নাম
Lens culinaris
Medikus

ব্যবহারসম্পাদনা

লবণ, মশলা ও তেল সহযোগে রান্না করা হলে এটি খেতে সুস্বাদু। ছোলা, মাষকলাই, মটর, খেসারি ইত্যাদির তুলনায় এটি অভিজাত ; পশু খাদ্য হিসাবে মসুর ডাল কদাচিৎ ব্যবহৃত হয়। কেবল ভাতের সঙ্গে খাওয়ার জন্য পানি মিশিয়ে রান্না নয় ;- পিয়াঁজু, বড়া, চানাচুর ইত্যাদিতেও এর সমধিক ব্যবহার। মসুর ডাল সিদ্ধ করে ভর্তা করে খাওয়া হয়। আর চালের সঙ্গে মিশিয়ে ভূনা খিচুড়ি তৈরি করা হয়। এছাড়াও রান্না করা হয় মসুর ডালের চচ্চড়ি, দালমা, ডাল চচ্চড়ি, ডালের স্যুপ ইত্যাদি। মসুর ডাল দিয়ে তৈরি হয় পুরান ঢাকার বিখ্যাত খাদ্য হালিম যা মসুর ডাল সহ আরো অনেক ডালের মিশ্রণে ও নানা মসলার মিশ্রণে তৈরি হয় । এটি ঘন তরল আমিষ খাদ্য। মসুর ডাল ডায়াবেটিস রোগীদের ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে বিশেষত যাদের ব্লাড সুগার, খাবার গ্রহণ করার পরেই বেড়ে যায় তাদের ক্ষেত্রে মুসুর ডাল খুবই উপকারী। এছাড়া নিয়মিত ব্যবহার করলে উচ্চচাপ কমাতেও সাহায্য করে।

চাষসম্পাদনা

মাটি ও জলবায়ুসম্পাদনা

সব ধরনের মাটিতেই মসুর চাষ করা যায়। তবে সুনিষ্কাশিত বেলে দোঁয়াশ মাটিতে এটি ভালো জন্মে। মসুর সাধারণত উষ্ণ তাপমাত্রায় ভালো জন্মে। কিন্তু অঙ্কুরোদগমের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা হলো ১৫-২০° সেন্টিগ্রেড। তাপমাত্রা এর চেয়ে নামলে অঙ্কুরোদগম এবং ফলন কম হয়। অন্য দিকে বীজের আকার ও এর অঙ্কুরোদগমের ওপর প্রভাব ফেলে। যেমন বড় আকারের বীজের চেয়ে ছোট আকারের বীজ অপেক্ষাকৃত দ্রুত অঙ্কুরিত হয়।

জমি তৈরি ও সার প্রয়োগসম্পাদনা

সাধারণত ২-৩টি চাষ ও ৪-৫টি মই দিয়ে জমি তৈরি করলে বীজের অঙ্কুরোদগম ও ফসলের বৃদ্ধি ভালো হয়। মসুর একটি লেগুমিনাস বা শুঁটি ফসল হওয়ায় বাতাসের নাইট্রোজেনকে খাবার হিসেবে ব্যবহার করে। ফলে বাজারের নাইট্রোজেনঘটিত ইউরিয়া সার জমিতে কম পরিমাণে দিলেও চলে। মসুর চাষে হেক্টর প্রতি (প্রায় সাড়ে সাত বিঘা) ৩০ কেজি ইউরিয়া, ৮৫ কেজি ডিএপি এবং ৩৫ কেজি এমপি সার জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।

বপনের সময় ও পদ্ধতিসম্পাদনা

কার্তিক মাস মসুর বপনের জন্য উৎকৃষ্ট সময়। তবে জমির অবস্খা বুঝে এ সময়ের আগে ও পরে মসুর বীজ বপন করা যেতে পারে। মসুর সারিতে ও ছিটিয়ে বপন করা যায়। তবে সারিতে বপন করলে পরিচর্যা করতে সুবিধা হয় এবং ফলন বেশি পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৩০ সেন্টিমিটার। মসুর বপনের সময় খেয়াল রাখতে হবে বীজগুলো যাতে মাটির কিছুটা নিচে পৌঁছে। এতে বীজের অঙ্কুরোদগম ভালো হয়, পাখি দ্বারা বীজ নষ্ট হয় না এবং বীজের অপচয় কম হয়।

বীজের পরিমাণসম্পাদনা

সারিতে বপনের ক্ষেত্রে হেক্টরপ্রতি ৩০-৩৫ কেজি এবং ছিটানো পদ্ধতিতে ৩৫-৪০ কেজি বীজ ব্যবহার করতে হবে। মসুর ফসল বেশি ঘন হলে শুধু গাছ হবে কিন্তু বেশি ফল ধরবে না। ফলে মসুরের ফলন কমে যাবে।

পরিচর্যাসম্পাদনা

মসুরের ভালো ফলন পেতে হলে অঙ্কুরোদগমের ২০-৩০ দিন পর অবশ্যই আগাছা দমন করতে হবে। বীজ বপনের সময় মাটিতে খুব কম রস থাকলে বিশেষত বড় দানার মসুর বপনের আগেই হালকা সেচ দিতে হবে। কেননা, ছোট দানার মসুর অল্প আর্দ্রতায় অঙ্কুরিত হলেও বড় দানার মসুরের অঙ্কুরোদগমের জন্য বেশি আর্দ্রতার প্রয়োজন পড়ে। অন্য দিকে মসুর মোটেই জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। তাই কখনো অতি বৃষ্টির কারণে জমিতে পানি জমলে দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

রন্ধন প্রণালীসম্পাদনা

মসুর ডালের চচ্চড়িঃ

উপকরণ : মসুর ডাল ১ কাপ, বেরেস্তার জন্য পেঁয়াজ কুচি সিকি কাপ, বেরেস্তার জন্য রসুন কুচি ১ টেবিল চামচ, আস্ত রসুন কুচি ৮/১০টি, জিরা বাটা ১ চা চামচ, কাঁচামরিচ ফালি ৫/৬টি, আস্ত জিরা আধা চা চামচ, হলুদ গুঁড়া আধা চা চামচ, তেল সিকি কাপ, লবণ পরিমাণমতো।

প্রণালী : কড়াইতে অল্প তেল দিয়ে পেঁয়াজ ও রসুন কুচির বেরেস্তা তৈরি করে তুলে রেখে ওই তেলে জিরা ফোঁড়ন দিয়ে ওপরের সব মসলাসহ ডাল দিতে হবে। ডাল দিয়ে কিছুক্ষণ বসিয়ে অল্প পানি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। ডাল মাখা মাখা হবে। ডাল নামানোর আগে বেরেস্তা ওপরে ছড়িয়ে দিতে হবে।

পুষ্টিগুণসম্পাদনা

পুষ্টিমাণ খাবারযোগ্য অনুযায়ী প্রতি ১০০ গ্রাম মসুর ডালের পুষ্টিমাণ নিম্নে দেওয়া হলো(জাত বাংলাদেশ)-
১। জলীয় অংশঃ ১২.৪ গ্রাম
২।খনিজ পদার্থঃ ২.১ গ্রাম
৩। আঁশঃ ০.৭ গ্রাম
৪।খাদ্য শক্তি ৩৪৩ কিলো ক্যালরি
৫।আমিষঃ ২৫.১ গ্রাম
৬।চর্বিঃ ০.৭ গ্রাম
৭।ক্যালসিয়াম ৬৯ মিলিগ্রাম
৮। লোহঃ ৪.৮ মিলিগ্রাম
৯।ক্যারোটিন ২৭০ মাইক্রোগ্রাম
১০।ভিটামিন বি-২ঃ ০ ৪৯ মিলিগ্রাম
১১।শর্করাঃ ৫৯.০ গ্রাম

চিত্রশালাসম্পাদনা

তথ্যসূত্রসম্পাদনা