মেদু বড়া

দক্ষিন ভারতীয় জলখাবার

মেদু বড়া (উচ্চারণ [meːd̪ʊ vəɽaː] ; আক্ষরিক অর্থে "নরম বড়া") এক প্রকার দক্ষিণ ভারতীয় বড়া, যা মাষকলাই দিয়ে তৈরি করা হয়। এটি সাধারণত একটি ডোনাটের আকারে তৈরি করা হয়, এর বহিরাংশ মুচমুচে এবং ভেতরে খুবই নরম।[১] দক্ষিণ ভারতীয়[২] এবং শ্রীলঙ্কার তামিল রন্ধনশৈলীর একটি জনপ্রিয় খাবার, সাধারণত এটি প্রাতঃরাশ অথাবা জলখাবার হিসাবে খাওয়া হয়।

মেদু বড়া
সদ্য তেলে ভাজা মেদু বড়া
অন্যান্য নামউদ্দিনা বড়া, মেধু বড়া, উদ্দি বড়া, মিনাপা গারেলু, উঝুন্নু বড়া, উদিদ বড়া, উলুন্দু বড়া, উরাদ বড়া, উর্দি বড়া
ধরনবড়া
প্রকারপ্রাতঃরাশ
উৎপত্তিস্থলভারত
অঞ্চল বা রাজ্যকর্ণাটক
পরিবেশনগরম (সাম্বার, নারিকেলের চাটনি অথবা দইয়ের সাথে)
প্রধান উপকরণমাষকলাই, চাল
অনুরূপ খাদ্যঅন্যান্য (বড়া, মাত পে কায়া)

ব্যাকরণ সম্পাদনা

"মেদু" একটি কন্নড় শব্দ, যার অর্থ "নরম" ; "মেদু বড়া" এর আক্ষরিক অর্থ হলো "নরম বড়া"।[১][৩] খাবারটি প্রায়শই খাদ্য তালিকায় "বড়া" হিসাবে উল্লেখ করা হয়।[৪]

খাবারটির অন্যান্য নামগুলির মধ্যে রয়েছে - উদ্দিনা বড়া (কন্নড়), উরাদ বড়া, মেধু বড়া, উলুন্দু বড়া (তামিল), মিনাপা গারেলু (তেলুগু), এবং উঝুন্নু বড়া (মালয়ালম)।[৫][৬]

ইতিহাস সম্পাদনা

বীর সংঘভীর মতে, মেদু বড়া'র উৎপত্তি বর্তমান কর্ণাটকের মাদ্দুর শহরে "কিছুটা নিশ্চিতভাবেই" পাওয়া যায়। খাবারটি দক্ষিণ ভারতের বাইরে মুম্বইয়ের উদুপি রেস্তোরাঁর মালিকদের দ্বারা জনপ্রিয় হয়েছিল।[৪]

প্রস্তুতি সম্পাদনা

 
ডুবো তেলে ভাজা হচ্ছে মেদু বড়া

মেদু বড়া মূলত মাষকলাই ডালের গুঁড়োর এর লেই দিয়ে তৈরি করা হয়।[১] মাষকলাই ডালগুলি কয়েক ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয় এবং তারপরে গুঁড়া করে খামির বানানো হয়। অন্যান্য উপাদান, যেমন - হিং, মেথি বীজ, আদা, জিরা, কাঁচামরিচ, তরকারি পাতা, মরিচ এবং নারিকেল টুকরো দিয়ে স্বাদযুক্ত করা যেতে পারে। এরপরে খামির থেকে ডোনাট আকারে বড়া বানানো হয় এবং গরম ডুবো তেল সোনালী-বাদামী হওয়া পর্যন্ত ভাজা হয়।[২]

এক প্রকারের মেদু বড়া ভাজার পরিবর্তে বেকিং (পোড়ানো) করা হয়।[১] খাবারটির অন্যান্য ভিন্নতার মধ্যে মাষকলাইয়ের বদলে ডালের ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, আম-বড়া (বা আমা বড়া) ছোলার ডাল দিয়ে তৈরি করা হয়; মাঝে মাঝে অড়হর এবং মসুর ডাল-ও ব্যবহার করা হয়।[৭]

প্রস্তুতপ্রণালী সম্পাদনা

উপকরণ :- সম্পাদনা

  • ২ কাপ বিউলির ডালের পেস্ট
  • লবণ - প্রয়োজন অনুযায়ী
  • ১/২ টেবিল চামচ গোটা জিরা
  • ১/২ টেবিল চামচ গুলমরিচের গুঁড়ো
  • ১ চিমটি হিং
  • ২ টি কাঁচা মরিচ কুঁচি
  • ১টি পেঁয়াজ কুঁচি (বড়)
  • সামান্য আদা কুঁচি[৮]

প্রণালী :- সম্পাদনা

  • প্রথমে ডাল টা কে ভিজিয়ে রাখতে হবে ৪ ঘণ্টা। তারপর পেস্ট বানাতে হবে। তারপর তাতে লবণ, পেঁয়াজ কুঁচি, কাঁচামরিচ কুঁচি, আদা কুঁচি, হিং, গোটা জিরা, গুলমরিচে গুঁড়ো সব মশলা দিয়ে ভালো করে মিশাতে হবে। তারপর কিছুক্ষন ঢেকে রাখতে হবে।
  • এবার কড়াইতে তেল দিয়ে দিয়ে তেল গরম হয়ে গেলে তাতে গোল গোল আকারে করে বল বানিয়ে মাঝের আঙ্গুল দিয়ে ফুটো করে কড়াইয়ের তেল দিয়ে দিতে হবে। তারপর কম আঁচে কিছু সময় ভাজতে হবে, এবার হাল্কা বাদামী রঙের হয়ে গেলে তুলে নিতে হবে। এরপর সাম্বার আর নারিকেলের চাটনির সাথে গরম গরম পরিবেশন করা যাবে মেদু বড়া।[৮]

পরিবেশনা সম্পাদনা

 
মাত পে কায়া নামে পরিচিত অনুরূপ একটি খাবার, এটি একটি বার্মিজ বড়া, যা সাধারণত তেঁতুলের চাটনির সাথে পরিবেশন করা হয়

খাবারটি সাধারণত সাম্বার (মসুর ও সবজি মিশ্রিত ডাল) এবং নারিকেল চাটনি দিয়ে পরিবেশন করা হয়। ইডলির সাথে এটি প্রায়শই প্রাতঃরাশ হিসাবে খাওয়া হয়। এটি মধ্যাহ্নভোজের শুরুতে বা জলখাবার হিসাবেও খাওয়া হয়।[২][৯]

আরো দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Richa Hingle (২০১৫)। Vegan Richa's Indian Kitchen: Traditional and Creative Recipes for the Home Cook। Andrews McMeel। পৃষ্ঠা pt122। আইএসবিএন 9781941252109 
  2. Meher Mirza (১৫ ডিসেম্বর ২০১৫)। "The Star of South India: Medu Vada in its Many Avatars"NDTV 
  3. Alevur Sriramana Acharya (১৯৭১)। Barkur Kannada। Deccan College। পৃষ্ঠা 4। 
  4. Vir Sanghvi (২০০৪)। Rude Food: The Collected Food Writings of Vir Sanghvi। Penguin India। পৃষ্ঠা 110–111। আইএসবিএন 9780143031390 
  5. Siva Sadasivan (২০১৫)। Riding God's Axe। Leadstart। পৃষ্ঠা 21। আইএসবিএন 9789352013609 
  6. Alamelu Vairavan (২০১০)। Chettinad kitchen। Westland। পৃষ্ঠা 30। আইএসবিএন 9789380283883 
  7. K. T. Achaya (১৯৯৪)। Indian Food: A Historical Companion। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 127। আইএসবিএন 978-0-19-563448-8 
  8. "মেদু বড়া রেসিপি"। cookpad.com। সংগ্রহের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০২০ 
  9. "Recipe: Medu vada"The Times of India। ২২ মে ২০১৫। 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা