ডোমার উপজেলা

নীলফামারী জেলার একটি উপজেলা

ডোমার বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের নীলফামারী জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। এই উপজেলা ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এটি রংপুর বিভাগের আওতাধীন নীলফামারী জেলার ৬টি উপজেলার একটি এবং জেলার সীমান্তবর্তী দুটি উপজেলার একটি উপজেলা। এর উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার জেলা, দক্ষিণে নীলফামারী সদর উপজেলা, পূর্বে ডিমলাজলঢাকা উপজেলা এবং পশ্চিমে দেবীগঞ্জ উপজেলা

ডোমার
উপজেলা
হৃদয়ে স্বাধীনতা
হৃদয়ে স্বাধীনতা
মানচিত্রে ডোমার উপজেলা
মানচিত্রে ডোমার উপজেলা
স্থানাঙ্ক: ২৬°৫′৫৪″ উত্তর ৮৮°৫০′১৮″ পূর্ব / ২৬.০৯৮৩৩° উত্তর ৮৮.৮৩৮৩৩° পূর্ব / 26.09833; 88.83833 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগরংপুর বিভাগ
জেলানীলফামারী জেলা
সদরদপ্তরডোমার
সংসদীয় আসননীলফামারী-১
আয়তন
 • মোট২৫০.৮৬ বর্গকিমি (৯৬.৮৬ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১ আদমশুমারি)[]
 • মোট২,৪৯,৪২৯
 • জনঘনত্ব১,১৫৩/বর্গকিমি (২,৯৯০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
 • মোট৪৮.৩%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড৫৩৪০ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৫৫ ৭৩ ১৫
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

ডোমার উপজেলার আ়তন ২৫০.৮৪ বর্গ কিলোমিটার। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী উপজেলার জনসংখ্যা ২,৪৯,৪২৯ জন এবং স্বাক্ষরতার হার ৪৮.৩%।

ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৭৫ সালে ডোমার থানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৮৪ সালে ডোমার থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডোমারের সংসদীয় আসন নীলফামারী-১। ডিমলা ও ডোমার উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনটি জাতীয় সংসদে ১২ নং আসন হিসেবে চিহ্নিত।

নামকরণ

সম্পাদনা

ঐতিহাসিকদের মতে ডোমারে ভীমের রাজধানী ছিল বা তিনি এখানে কোন দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন, যা মৃত্‍প্রাচীর দ্বারা সুরক্ষিত করেছিলেন মৃত্‍প্রাচীরকে ডমর বলা হতো৷ ডমর থেকে ডোমার অথবা ডমননগর বা ডোমননগর এবং পরবর্তীতে তা থেকে ডোমার নামের উত্‍পত্তি হয়েছে। আরও জনশ্রুতি আছে এখানে ডোমদের (যারা বাশ,কাঠ ইত্যাদির কাজ করতো) বাস ছিল। তাই ডোম থেকে ডোমার নামের উতপত্তি হতে পারে বলে ধারণা করা হয়।[][]

ইতিহাস

সম্পাদনা

ঐতিহাসিকদের মতে, প্রাচীনকালে ডোমারসহ এ অঞ্চল কামরূপ রাজ্যের অংশ ছিল। এ অঞ্চলটি পাল, খেন, কোচ প্রভৃতি রাজবংশ দীর্ঘ সময় ধরে শাসন করেছে। ডোমার থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে জলঢাকা উপজেলার খেরকাটি নামক গ্রামে পাল বংশের দ্বিতীয় রাজা ধর্মপাল দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন, পরবর্তীতে তার নামে এ এলাকার নাম হয় ধর্মপাল।[]

"আগাডুম বাগাডুম ঘোড়াডুম সাজে
ঢাক মৃদং ঝাঁজর বাজে"[]

ডোমার এর পূর্ব নাম ছিল ডোমন নগর। এই ছড়াটি ডোমারের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা বলে। বিখ্যাত কৈবত্যরাজ দিব্বোকের ভ্রাতুষ্পুত্র মহাপরাক্রমশালী ভীমের ডোম সৈন্যের যুদ্ধ যাত্রার ছবি এই ছড়াটিতে বিধৃত। তৃতীয় মহীপাল একজন অত্যাচরি রাজা ছিলেন। তার অত্যাচারে রাজ্যের প্রজারা অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে এবং তৃতীয় বিগ্রপালের সেনাপতি কৈবত্য দিব্বোকের নেতৃত্বে বিদ্রোহ করে৷ দিব্বোক অত্যাচারিত প্রজাদের নিয়ে তৃতীয় মহীপালকে হত্যা করেন এবং ভ্রাতুষ্পুত্র ভীমকে মহীপালের স্থলাভিষিক্ত করেন। কৈবত্যরা জাতে জেলে ছিল এবং মত্‍স্যদেশে সে সময় কৈবত্যরাই নৌশক্তি বলে বলীয়ান ছিল৷ ফলে অন্যান্য রাজশক্তি তাদের হাতে পরাভূত হয়েছিল৷ আনুমানিক ১০৭৫ খ্রিষ্টাব্দে গৌড় সিংহাসনে অভিষিক্ত করেন। দিব্বোকের মৃত্যুর পর তার অনুজ রম্নদ্রোকের পুত্র ভীম বরেন্দ্রীর অধিপতি হন৷ তিনি রংপুর জেলার 'ডমননগরে' তার রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। এই ডমননগরই ইস্ট বেঙ্গল রেলওয়ে বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ের ডোমার স্টেশন। তৃতীয় মহীপালের অনুজ শূরপাল ও রামপাল কৈবত্যরাজকে পরাজিত করে এবং কনিষ্ঠ ভ্রাতা রামপাল পিতৃসিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। কৈবত্যরাজ পরাজিত হলে ভীম ও সেনাপতি হরি বর্তমান ডোমার থেকে ডোম সৈন্য সংগ্রহ করে যুদ্ধযাত্রা করে। এই যুদ্ধযাত্রার ছবি 'আগাডুম বাগডুম' ছড়া। যুদ্ধে ভীম বন্দি হলে সেনাপতি হরি পুনরায় সৈন্য সংগ্রহ করে যুদ্ধে গমন করেছিলেন। কিন্তু রাজা সেনাপতি উভয়ে বন্দি হয়ে কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। সে রামপালের নামানুসারে রামগঞ্জ, রামনগর, রামকলা, দিনাজপুরের রামসাগর প্রভিতি নামের উত্‍পত্তি হয়েছে। রামপাল বরেন্দ্রী উদ্ধার করে ভীমের রাজধানী ডমননগর বা ডোমননগর বা ডোমার লূন্ঠিত, বিধ্বংস ও অগ্নিসংযোগে ভূমিসাত্‍ করেছিলেন। অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়, স্যার যদুনাথ সরকার প্রমূখ আলোচ্য ডমননগরকেই ভীমের রাজধানী বলেছেন। তবে কোন কোন ঐতিহাসিক ভীমের রাজধানী ঘোড়াঘাটের সন্নিকটে বলে অবস্থিত বলে বর্ণনা করেছেন, আবার কেউ কেউ মনে করেন, ভীম হয়তো ডোমারে বসবাস করেরননি; কিন্তু উত্তর ও পূর্ব দিকের পার্বত্য উপজাতিদের মোকাবেলার্থে ডোমারে কোনো দুর্গ নিমাণ করেছিলেন।[][]

মোঘল আমলে রংপুর অঞ্চলে যে ছয়টি পরগনা ছিল, ডোমার ছিল কাজিরহাট পরগনার অধীন। ১৬৮৭ সালে সুবেদার শায়েস্তা খাঁর পুত্র ইবাদত খাঁ কোচ মহারাজা মহিন্দ্র নারায়নের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং কাজিরহাট, কাকিনা ও ফতেহপুর চাকলা দখল করে নেয়।[] ১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার দেওয়ানি লাভ করলে এ অঞ্চলেও ব্যাপক পরিবর্তন। জমি বন্দোবস্ত ও পাঁচশালা ইজারা ব্যস্থার কারণে বাংলার অন্যান্য অঞ্চলের মত এখানেও অনেক ভূস্বামীর জন্ম হয়েছিল। ১৭৯৩ সালে ১২ নং রেজুলেশন অনুযায়ী তৎকালীন রংপুর জেলায় যে ২১টি থানা গঠিত হয়েছিল, তার মধ্যে বাগদুয়ার (বাগডোকড়া) থানার অধীনে ছিল ডোমার।[] ১৮৭৫ সালে নীলফামারী মহকুমা সৃষ্টি করা হলে বাগডোকড়ায় এর কার্যালয় স্থাপন করা হয়। যা ১৮৮২ সালের ১৮ মে নীলফামারীতে স্থানান্তরের পূর্ব পর্যন্ত সেখানে ছিল।[]

১৭৮৩ সালে কোম্পানি কর্তৃক আরোপিত দুরিভিলা ট্যাক্সের বিরুদ্ধে এ অঞ্চলের মানুষ বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল। ব্রিটিশের বিরুদ্ধে ফকির সন্যাসি বিদ্রোহের সময় মজনু শাহের ভাই মুসা শাহ বর্তমান কিশোরগঞ্জে আস্তানা গেড়েছিলেন। সিপাহীদের হাতে ভবানী পাঠকের মৃত্যু হলে বিদ্রোহ দমে যায়। ১৮৫৯-৬০ সালে এ অঞ্চলে নীল বিদ্রোহ ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পায়। ফকির সন্যাসি বিদ্রোহীরা নীল বিদ্রোহীদের সাথে যোগ দিলে নীলকরদের সঙ্গে বেশ কিছু সংঘর্ষ হয়। ১৮৭২ সালে সরকার নীককরদের দমনে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এ আন্দোলন প্রশমিত হয়।[]

উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর ১৯৫০ সালে জমিদারি উচ্ছেদ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হয়। এ আইন অনুসারে ১৯৫১ সালে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হওয়ার পর ডোমার স্থানীয় সরকারের অধীনস্থ হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ১৯৭১ সালের ৮ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী এলাকাটি দখল করে নেয়। ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর ভোরে মুক্তিযোদ্ধারা বোড়াগাড়ী হাসপাতালের উত্তর দিকে হলদিয়াবন ও বুদলিপাড় গ্রামে অবস্থান নিয়ে পাকসেনাদের প্রতিহত করে। এ যুদ্ধে তিন পাকসেনা মারা যায়। ৬ ডিসেম্বর ডোমার উপজেলা হানাদার মুক্ত হয়।[] বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৮৩ সালে ডোমার থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়।

ডোমার উপজেলা ২৬°০২´ থেকে ২৬°১৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৪৬´ থেকে ৮৮°৫৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। নীলফামারী জেলাধীন উত্তর সীমান্তবর্তী একটি উপজেলা। এর আয়তন ২৫০.৮৪ বর্গ কি.মি.৷ উপজেলাটি পলিময় এটেল মাটি দ্বারা গঠিত। ভৌগোলিকভাবে এটি তিস্তা প্লাবন ভূমিতে অবস্থিত হলেও হিমালয় পাদদেশীয় ভূমির কাছাকাছি হওয়ায় এর মাটিতে পলির পরিমাণ এর পার্শ্ববর্তী উপজেলার চেয়ে বেশি। উপজেলা সদর হতে দক্ষিণে নীলফামারী সদর, উত্তর-পূর্বে ডিমলা সদর, পশ্চিমে দেবীগঞ্জ সদর। এর উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণে নীলফামারী সদর উপজেলা, পূর্বে ডিমলা উপজেলাজলঢাকা উপজেলা, পশ্চিমে দেবীগঞ্জ উপজেলা

ডোমারের প্রধান নদী হল যমুনেশ্বরী তাছাড়া রয়েছে শালকি, বুড়িখরা এবং দেওনাই।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এ অঞ্চলের গড় উচ্চতা ৫৫ মিটারেরও অধিক। ডোমার উপজেলার তাপমাত্র গ্রীষ্মকালে ২৮ °সে থেকে ৩২ °সে-এর মধ্যে এবং শীতকালে ২০ °সে-এর মধ্যে থাকে। তবে, অনেক সময় শীতের প্রকোপ বেশি হলে ৩ °সে হতে পারে। এ অঞ্চলে মৌসুমী জলবায়ুর প্রভাব থাকায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এখানকার গড় বৃষ্টিপাত ১৯০০ মিলিমিটার বা তারও বেশি। তবে শুষ্ক মৌসুমে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। অপর্যাপ্ত মৌসুমি বৃষ্টিপাত, উচ্চ তাপমাত্রা ও এইসাথে ভূগর্ভস্থ পানির অত্যধিক ব্যবহার এবং জলাশয় ভড়াটের ফলে খরার সূত্রপাতও ঘটে।

জনপরিসংখ্যান

সম্পাদনা

১৯৮১ সালে ডোমার উপজেলার জনসংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ৫৭ হাজার।[] ২০১১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২,৪৯,৪২৯ জনে,[] যার মধ্যে পুরুষ ১২৫৩৩৮ জন এবং নারী ১২৪০৯১ জন। নারী পুরুষের লিঙ্গ অনুপাত ১০১। ডোমার উপজেলায় মোট ৫৮০২০টি পরিবার বসবাস করে। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১১৫৩ জন। উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯৪০ জন।[১০]

প্রশাসনিক এলাকা

সম্পাদনা

ডোমার উপজেলা ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত।[১১] ইউনিয়নগুলো হল ১।ডোমার সদর ইউনিয়ন, ২।বোড়াগাড়ী ইউনিয়ন, ৩।জোড়াবাড়ী ইউনিয়ন, ৪। বামুনিয়া ইউনিয়ন, ৫। পাংগা মটকপুর ইউনিয়ন, ৬। সোনারায় ইউনিয়ন, ৭। হরিণচড়া ইউনিয়ন, ৮ভোগডাবুড়ী ইউনিয়ন, ৯ কেতকীবাড়ী ইউনিয়ন ও ১০।গোমনাতি ইউনিয়ন। ১৮৭৫ সালে ডোমার থানা স্থাপনের পর ১৯৮৪ সালে এটিকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়। সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অধীনে উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তিনিই উপজেলার প্রশাসনিক প্রধান। এছাড়া, জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত একজন উপজেলা চেয়ারম্যান জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে সরকার ফারহানা আখতার সুমি ডোমার উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ডোমার উপজেলায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় একটি থানা বা পুলিশ স্টেশন এবং থানার অধীনে চিলাহাটিতে একটি পুলিশ ফাড়ি রয়েছে। এছাড়া একটি আনসার ও ভিডিপি এবং দুইটি ফায়ার সার্ভিসের কার্যালয় রয়েছে।

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডিমলার সংসদীয় আসন নীলফামারী-১। ডিমলা ও ডোমার উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনটি জাতীয় সংসদে ১২ নং আসন হিসেবে চিহ্নিত।[১২] নীলফামারী-১ আসনটি ১৯৮৪ সালে রংপুর-১ আসন থেকে সৃষ্টি করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-১ আসনটি তৈরি করা হয়েছিল।

শিক্ষা

সম্পাদনা

২০১১ সালের তথ্য অনুযায়ী ডোমার উপজেলার স্বাক্ষরতার হার ৪৮.৩%, যার মধ্যে পুরুষ ৫১.৪% এবং নারী ৪৫.২%।[] যেখানে জাতীয় স্বাক্ষরতার হার ৪৩.৭% ও জেলার স্বাক্ষতার হার ৪৪.৪%। ২০০১ সালে এ স্বাক্ষরতার হার ছিল ৪৪.৭%, পুরুষ ৫০.৮%, মহিলা ৩৮.৩%।[১৩] উপজেলার ইউনিয়নগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার ডোমার পৌরসভা এলাকায় ৬৪% এবং সবচেয়ে কম পাঙ্গা মটুকপুর ইউনিয়নে ৪২%। ডোমার উপজেলায় ৫ মহাবিদ্যালয়, ৪টি কারিগরি কলেজ, ১টি কৃষি কলেজ, ৪৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩টি ভোকেশনাল স্কুল, ১৪টি মাদ্রাসা রয়েছে। প্রাচীনতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডোমার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, যা ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।[১৩][১৪] উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে ডোমার সরকারি কলেজ, চিলাহাটি সরকারি কলেজ, ডোমার বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়, উপজেলা পরিষদ আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডোমার সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সোনারায় উচ্চ বিদ্যালয়, সোনারায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্কুল, চিলাহাটি মার্চেন্ট উচ্চ বিদ্যালয়, শহীদ স্মৃতি আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য কিন্ডারগার্টেন স্কুল হলো ডোমার আইডিয়াল একাডেমী, প্রতিভা কিন্ডারগার্ডেন, ফুলকুঁড়ি একাডেমী ইত্যাদি।

ভাষা ও সংস্কৃতি

সম্পাদনা

ডোমার উপজেলার মানুষের প্রধান ভাষা বাংলা। এখানকার অধিকাংশ মানুষ বাংলা ভাষার উপভাষা রংপুরী ভাষায় কথা বলে, তবে উপজেলায় বসবাস করা কিছুসংখ্যক বিহারি উর্দু ভাষায় এবং সাঁওতালরা সাঁওতালি ভাষায় কথা বলে।[১৫]

পল্লীগীতি গান ডোমারের লোকসংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে বেশ কিছু মেলা ও উরশ পালিত হয়। শাহ কলন্দর এর মেলা ও উরশ উপজেলার সর্ববৃহৎ উৎসব। সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ডোমারে ক্লাব ১৭টি, লাইব্রেরি ২টি, সিনেমা হল ৪টি, নাট্যমঞ্চ ১টি, মহিলা সংগঠন ১টি, নাট্যদল ১টি, সাংস্কৃতিক সংগঠন ২টি।[১৩]

হাডুডু, ডাংগুলি ও মার্বেল খেলা ডোমারের সাধারণ মানুষের মধ্যে এক সময় খুব জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে ক্রিকেট এই দুই খেলার জনপ্রিয়তা অনেক কমিয়ে দিয়েছে। এছাড়া ফুটবল, কাবাডি ও ভলিবলও এই উপজেলায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

অর্থনীতি

সম্পাদনা

ডোমার উপজেলা মূলত কৃষি প্রধান উপজেলা। এ উপজেলার ৬৮.০৪% জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি। প্রধান কৃষি ফসলের মধ্যে রয়েছে ধান, পাট, তামাক, আলু, পিঁয়াজ, আদা, হলুদ। পূর্বে এ অঞ্চলে কাউন, তিল, তিসি, ভাদই ধান ও গমের আবাদ করা হত। এছাড়াও এখানে কলা, লিচু, কাঁঠাল, আম, তরমুজ, পেঁপে ও খিরা বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়। ২০০১ সালের ভূমিজরিপ অনুসারে উপজেলার ৫১.১৯% পরিবার কৃষিজমির মালিক।[১৩]

কৃষি নির্ভর অর্থনীতির বাইরে মৎস্য, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগির খামার, আসবাবপত্রের কারখানা, কুটিরশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প প্রভৃতি এ উপজেলার অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি। গোমনাতি ইউনিয়নের আমবাড়ীর হাট গরু ও সাইকেল ক্রয় বিক্রয়ের জন্য বিখ্যাত।

ডোমার উপজেলায় কোন প্রাকৃতিক সম্পদ নেই।[১৬]

যোগাযোগ

সম্পাদনা
 
ডোমার বাস স্ট্যান্ডের নিকট ডিবি রোডের একটি দৃশ্য

ডোমার উপজেলার যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম সড়কপথ। জেড ৫৭০৭ ডোমারকে নীলফামারী জেলা সদরের সাথে যুক্ত করেছে। এন৫১৭ (বাংলাদেশ)এন৫ (বাংলাদেশ) দ্বারা ডোমার ঢাকার সাথে যুক্ত। সড়ক পথে ডোমার থেকে ঢাকার দুরত্ব প্রায় ৪০০ কিলোমিটার, রংপুরের দুরত্ব ৬৫ কিলোমিটার, নীলফামারীর দুরত্ব ২০ কিলোমিটার। সমগ্র উপজেলায় ২২০ কিলোমিটার পাকা সড়ক আছে। সড়ক পথ ছাড়াও ডোমার রেলপথে ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানের সাথে যুক্ত। উপজেলায় ৩টি রেলওয়ে স্টেশন (ডোমার রেলওয়ে স্টেশন, চিলাহাটি রেলওয়ে স্টেশনমীর্জাগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন) ও ২৫ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকা হতে ডোমারের চিলাহাটি পর্যন্ত চলাচল করে। এছাড়া খুলনারাজশাহীর সাথে রেলপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে। এ উপজেলায় কোন নৌপথ বা আকাশ পথ নেই।

স্বাস্থ্য

সম্পাদনা

সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য হার তুলনামূলক কম হলেও এটি মূলত দারিদ্র্যতার সাথে সম্পর্কিত হওয়ায়, এর উন্নতির সাথে সাথে বর্তমানে স্বাস্থ্য সেবাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডোমার উপজেলায় অপুষ্টি, পরিবেশগত স্যানিটেশন সমস্যা, ডায়াবেটিস, সংক্রামক রোগ প্রভৃতি বেশি দেখা যায়। উপজেলায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি সরকারি হাসপাতালের সাথে সাথে ২টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ৩৮টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও ১০টি পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে।

উল্লেখযোগ্য স্থান ও খাবার

সম্পাদনা

ডোমার উপজেলার উল্লেখযোগ্য স্থানের মধ্যে রয়েছে, হযরত শাহ কলন্দর (রা:) এর মাজার,[১৭] ময়নামতির গড়, চিলাহাটি স্থলবন্দর, আঞ্চলিক বাঁশ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, হৃদয়ে স্বাধীনতা ডোমার, ডোমার বন ও তার পাশে অবস্থিত গণকবর।

ডোমারের সন্দেশ: দুধের ছানা, চিনি আর খেজুর গুড়ের মিশ্রণে বিশেষভাবে তৈরি হয় এ সন্দেশ। পাওয়া যায় নীলফামারীর ডোমার উপজেলায়। নীলফামারী ছাড়িয়ে এর খ্যাতি এখন সারা দেশে। আমেরিকা, সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে ডোমারের সন্দেশ। বিখ্যাত এই সন্দেশের সুবাদে ডোমার এখন সন্দেশের শহর নামের খ্যাতি লাভ করেছে।

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি

সম্পাদনা
  • হযরত শাহ কলন্দর (রা:) পীর ও কামেল এর আধ্যাত্মিক শক্তি ও ইসলামের মহান আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এ অঞ্চলের বহু লোক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। উত্তরাঞ্চলের প্রথম পর্যায়ের ইসলাম প্রচারকদের মধ্যে তিনি উল্লেখযোগ্য। ডোমার উপজেলার সোনারায় ইউনিয়ন এ হযরত শাহ কলন্দর (রা:) এর মাজার অবস্থিত।

এখানে প্রতিবছর ৯ ও ১০ মে (২৬ ও ২৭ বৈশাখ) দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় শাহ কলন্দর মেলা

মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদ

  • শহীদ আনজারুল হক (ধীরাজ)
  • শহীদ মিজানুর রহমান (মিজান)
  • শহীদ আব্দুল বারী
  • শহীদ আহম্মেদুল হক প্রধান
  • শহীদ কহুর
  • শহীদ নহুর

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Population & Housing Census-2011 [আদমশুমারি ও গৃহগণনা-২০১১] (পিডিএফ) (প্রতিবেদন)। জাতীয় প্রতিবেদন (ইংরেজি ভাষায়)। ভলিউম ২: ইউনিয়ন পরিসংখ্যান। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। মার্চ ২০১৪। পৃষ্ঠা ৪৪৯। ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৯ 
  2. "ডোমার এর পটভূমি"জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ডোমার উপজেলা। ৫ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০২০ 
  3. "সংক্ষিপ্ত ইতিহাস"। বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা - নীলফামারী। ঢাকা: বাংলা একাডেমি। ২০১৪। আইএসবিএন 984-07-5356-8 
  4. "নীলফামারীতে পাল আমলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সন্ধান"বাংলাট্রিবিউন। ২০ জানুয়ারি ২০১৬। ৪ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুলাই ২০২০ 
  5. একেএম নাসিরউদ্দিন (১৯৭৫)। নীলফামারীর ইতিহাস 
  6. "বিলাসী মহেন্দ্রের সাক্ষী হাওয়াখানা"বাংলা নিউজ। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০২০ 
  7. "সংক্ষিপ্ত ইতিহাস"। বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা - রংপুর। ঢাকা: বাংলা একাডেমি। ২০১৪। পৃষ্ঠা ২৭,২৮। আইএসবিএন 984-07-5118-2 
  8. "ডোমার মুক্ত দিবস পালিত"BanglaNews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-০৫ 
  9. জেলা পরিসংখ্যান ২০১১ (পিডিএফ) (প্রতিবেদন)। জেলা পরিসংখ্যান (ইংরেজি ভাষায়)। নীলফামারী। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। ডিসেম্বর ২০১৩। পৃষ্ঠা ১৮। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুলাই ২০২০ 
  10. "নীলফামারীতে নতুন ভোটার বেড়েছে ৪৩,৩৪৭ জন"দৈনিক সংগ্রাম। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-১১ 
  11. "এক নজরে ডোমার"জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ৫ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুলাই ২০২০ 
  12. "জাতীয় সংসদীয় আসনপূর্ণবিন্যাস (২০১৮) গেজেট" (পিডিএফ)। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। ৩০ এপ্রিল ২০১৮। ৭ মে ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ মে ২০১৮ 
  13. রিয়াসাত করিম (২০১২)। "ডোমার উপজেলা"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুলাই ২০২০ 
  14. "ডোমার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়"নীলফামারী জেলা। ২০২০-০৭-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-১৩ 
  15. "ডোমার এর ভাষা ও সংষ্কৃতি"ডোমার উপজেলা। উপজেলা প্রশাসন। ৫ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুলাই ২০২০ 
  16. "প্রাকৃতিক সম্পদ"। ডোমার উপজেলা। ৫ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুলাই ২০২০ 
  17. "দর্শনীয় স্থান"। ডোমার উপজেলা। ৫ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুলাই ২০২০ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা