চট্টগ্রাম কলেজ

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম শহরে অবস্থিত কলেজ

চট্টগ্রাম কলেজ বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় এবং ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এটি চট্টগ্রাম শহরের চকবাজার এলাকার কলেজ রোডে অবস্থিত। কলেজটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর অধিভুক্ত। এটি ঢাকা কলেজের পর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় কলেজ।[১][২][৩][৪][৫][৬]

চট্টগ্রাম কলেজ
চট্টগ্রাম কলেজের লোগো.jpg
নীতিবাক্যশিক্ষাই শক্তি
ধরনসরকারি কলেজ
স্থাপিত১৮৬৯
অধ্যক্ষপ্রফেসর মোজাহেদুল ইসলাম চৌধুরী
শিক্ষায়তনিক ব্যক্তিবর্গ
১৬৯
প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ
৪০০
শিক্ষার্থীআনু. ১৮০০০
অবস্থান,
শিক্ষাঙ্গন৬ একর, কলেজ রোড, চকবাজার, চট্টগ্রাম
ওয়েবসাইটctgcollege.gov.bd
মানচিত্র
Chittagong College Gate Rohan.jpg

ইতিহাসসম্পাদনা

১৮৩৬ সালে চট্টগ্রাম জেলা স্কুল হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানের জন্ম। প্রতিষ্ঠালগ্নের তেত্রিশ বছর পরে ১৮৬৯ সালে একে উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উন্নীত করা হয়। তখন থেকেই এটি চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ বা চট্টগ্রাম কলেজ নামে পরিচিত হয়। বর্তমান চট্টগ্রাম এর চকবাজারের কলেজ রোডের পাশের প্যারেড গ্রাউন্ডের এক কোনের একটি পর্তুগিজ আমলের স্থাপনায় এই কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়। কলেজে উন্নীত হবার পরে জনাব জে সি বোস এর প্রথম অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ১৯০৯ সাল থেকে এই কলেজে কলা বিভাগের পাশাপাশি উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগ চালু করা হয়। ১৯১০ সালে এই কলেজটি তৎকালীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণীর ডিগ্রী কলেজের স্বীকৃতি লাভ করে। সেই অনুযায়ী এই কলেজ থেকে গণিত, রসায়ন বিজ্ঞান ও পদার্থ বিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ের বিষয় সমূহ সম্পর্কে পাঠদান আরম্ভ হয়। ১৯১৯ সাল থেকে স্নাতক শ্রেণীর বিষয় সমূহে ইংরেজি এবং সম্পূরক শ্রেণীতে দর্শন এবং অর্থনীতি যোগ করা হয়। ১৯২৪ সালে এই কলেজে প্রথম মুসলিম প্রিন্সিপাল হলেন শামসুল ওলামা কামালুদ্দিন আহমদ। তার আমলে কলেজ দ্রুত উন্নতি লাভ করে। শেরে বাংলা এ, কে, ফজলুল হক এই সময় মুসলিম হোস্টেল এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। শামসুল ওলামার সময়ে ই কলেজ ম্যাগাজিন প্রকাশ করার রেওয়াজ শুরু হয়। তার সময়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে সহশিক্ষার প্রবর্তন। ১৯২৬ সালে এই কলেজের প্রথম ছাত্রাবাস প্রতিষ্ঠিত হয়।[৩]

১৯৫৫ সালে স্নাতক শ্রেণীর যাবতীয় বিষয় সমূহ প্রত্যাহার করা হলেও ১৯৬০ সাল থেকে পুনরায় ইংরেজি, বাংলা, অর্থনীতি ছিত্তাগন, পদার্থ, রসায়ন এবং গণিতে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীর বিষয়সমূহ চালু করা হয়। ১৯৬২ সাল থেকে প্রাণিবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা এবং পরিসংখ্যান এ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণী চালু করা হয়। ১৯৫৫ থেকে ১৯৬৫ এর মাঝে ব্যাপক হারে অবকাঠামোগত পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সাধন করা হয়। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অধীনে এর বিজ্ঞান গবেষণাগার এর উন্নয়ন সাধন, নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, নতুন ছাত্রাবাস নির্মাণ এবং পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান অনুষদের জন্য আলাদা ভবন নির্মাণ করা হয়। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর চট্টগ্রাম কলেজ এর আওতাভুক্ত হয়।[২]

অনুষদ এবং বিভাগসমূহসম্পাদনা

বর্তমানে এটি চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে উচ্চ মাধ্যমিক সনদের পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান, উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা, গণিত, পরিসংখ্যান, ভূগোল, ইতিহাস, রাজনীতি বিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, দর্শন, ইসলাম শিক্ষা, সমাজবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পাঠদান ও সনদ প্রদান করে থাকে।

শিল্প ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদসম্পাদনা

চট্টগ্রাম কলেজের ইংরেজি বিভাগকে রাজকীয় বিভাগ বলা হয়। বিখ্যাত পণ্ডিত সুবোধ চন্দ্র সেন গুপ্ত ১৯৩৩ সালে এই বিভাগে যোগদান করেছিলেন। এটি ১৯১০ সালে খোলা হয়েছিল।[২]

এই অনুষদে নিম্নলিখিত বিভাগগুলি নিয়ে গঠিত:

  • বাংলা বিভাগ
  • ইংরেজি বিভাগ
  • অর্থনীতি বিভাগ
  • রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
  • ইতিহাস বিভাগ
  • ইসলামী ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
  • দর্শন বিভাগ
  • সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
  • ইসলামী শিক্ষা বিভাগ

বিজ্ঞান অনুষদসম্পাদনা

এই অনুষদে নিম্নলিখিত বিভাগগুলি নিয়ে গঠিত:

  • ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ
  • পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ
  • রসায়ন বিভাগ
  • উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ
  • প্রাণিবিদ্যা বিভাগ
  • পরিসংখ্যান বিভাগ
  • গণিত বিভাগ
  • মনোবিজ্ঞান বিভাগ[৭]

অবকাঠামোসম্পাদনা

 
প্যারেড গ্রাউন্ডের পাশের রোড

কলেজের অভ্যন্তরেই বিশাল আকৃতির ঐতিহাসিক প্যারেড গ্রাউন্ড অবস্থিত।

 
কলেজের মানচিত্র
 
রাতের চট্টগ্রাম কলেজ

বিভাগ সমুহসম্পাদনা

চট্টগ্রাম কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে মানবিক এবং বিজ্ঞান বিষয় চালু আছে। বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে ১৭টি বিষয়ে পাঠ দেওয়া হয়।[৮]

অন্তর্ভুক্তিকরণ
কোর্স সাল
এস এস সি ১৮৩৬
ডিগ্রী (পাস) ১৯১০
স্নাতক ১৯১৯
মাস্টার্স প্রিলিমিনারি ১৯৯২
মাস্টার্স ফাইনাল ১৯৯২

কলেজ ভবনসম্পাদনা

১৬ টি প্রাতিষ্ঠানিক এবং ৫ টি আবাসিক ভবন নিয়ে চট্টগ্রাম কলেজের অবস্থান। প্রাতিষ্ঠানিক ভবনগুলো নিম্নরূপ

  1. প্রশাসনিক ভবন
  2. রেড বিল্ডিং
  3. ভূগোল ভবন
  4. উদ্ভিদবিজ্ঞান ভবন
  5. রসায়ন ও প্রাণিবিজ্ঞান ভবন
  6. পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত ভবন
  7. অডিটরিয়াম ভবন
  8. ছাত্রী মিলনায়তন ভবন
  9. টিএসসি ভবন
  10. কেন্দ্রীয় মসজিদ ভবন
  11. মেডিক্যাল সেন্টার
  12. কলেজ ক্রীড়া ভবন
  13. লাইব্রেরী ভবন
  14. একাডেমিক ভবন ১
  15. একাডেমিক ভবন ২
  16. একাডেমিক ভবন ৩

ছাত্রাবাসসম্পাদনা

আবাসিক ভবনগুলোর মাঝে তিনটি ছাত্রাবাস এবং দুইটি ছাত্রী নিবাস অবস্থিত। এগুলো নিম্নরূপ :

  1. শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছাত্রাবাস (এর দুটি ব্লক অবস্থিত। এ ব্লকটি মুসলিম এবং বি ব্লকটি অমুসলিম ছাত্রদের জন্য বরাদ্দকৃত)
  2. শের-এ-বাংলা ছাত্রাবাস
  3. ড: আব্দুস সবুর ছাত্রাবাস
  4. হযরত খাদিজাতুল কোবরা (র:) ছাত্রী নিবাস
  5. জননেত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রী নিবাস

বর্তমানে আবাসিক ভবন গুলো বন্ধ অবস্থায় রাখা হয়েছে।

পাঠাগারসম্পাদনা

 
চট্টগ্রাম কলেজের গ্রন্থাগার

ঠিক যেমন চট্টগ্রাম কলেজ চট্টগ্রাম এর অন্যতম ঐতিহ্যবাহী এবং স্বনামধন্য কলেজ, তেমনি এর গ্রন্থাগারটিও ঐতিহ্য বহন করে।এই গ্রন্থাগারে সংগৃহীত বানিয়ান এর পিলগ্রম প্রগ্রেস এর এক কপি বই থেকেই পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠার সময়েই জানা যায়।বর্তমানে এর সুপ্রশস্ত পাঠগৃহ এবং রেফারেন্স বিভাগ রয়েছে যা টিচার এবং ছাত্রদের নিরিবিলিতে পড়াশোনা করার জন্য খুবই উপযোগী।পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরবর্তী বছরে এর বই এর সংখ্যা ছিল প্রায় বিশ হাজার। ১৯৬৪ সালের ৩০শে জানুয়ারীর এক হিসেব অনুযায়ী এর বই সংখ্যা ছিল ৩০,৫৪৭। কিন্তু এখন এর বই এর সংখ্যা অর্ধ লাখের ও বেশি।

অন্যান্য অবকাঠামোগতসম্পাদনা

  • দ্বিতল মসজিদ
  • ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য আলাদা মিলনায়তন
  • জিমনেশিয়াম
  • ক্যান্টিন (বর্তমানে বন্ধ)
  • ডাকঘর
  • ব্যাংক
  • বিশাল মাঠ (প্যারেড মাঠ)

অন্যান্যসম্পাদনা

  • বিএনসিসি, আর্মি এবং নেভি
  • রোভার স্কাউট
  • রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি
  • তথ্য প্রযুক্তি ক্লাব
  • চট্টগ্রাম কলেজ ক্রিয়েটিভ ক্লাব
  • ল্যাঙ্গুয়েজ শিক্ষা

উল্লেখযোগ্য শিক্ষার্থীগণসম্পাদনা

 
সলিমুল্লাহ খান

সংগঠনসম্পাদনা

রাজনৈতিকসম্পাদনা

সাংস্কৃতিকসম্পাদনা

  • নাটক ক্লাব
  • পাঠক ক্লাব

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. Academic Calendar (HSC 2012-2013), Chittagong College
  2. "চট্টগ্রাম কলেজ – চট্টগ্রাম"। ২০১৯-০৬-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-৩০ 
  3. "চট্টগ্রাম কলেজ - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। ২০২০-০৫-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-৩০ 
  4. "চট্টগ্রাম কলেজ প্রা. ছাত্রলীগ পরিষদ আজ মহিউদ্দিন চৌধুরীর শোকসভা"দৈনিক আজাদী। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-৩০ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. "বন্ধু কী খবর- চট্টগ্রাম কলেজ সহপাঠীদের বর্ণিল মিলনমেলা"দৈনিক ইনকিলাব। ২০১৯-০৭-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-৩০ 
  6. "চট্টগ্রাম কলেজ '৯৭ ব্যাচের প্রস্তুতি সভা"banglanews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-৩০ 
  7. "Chittagong College"nu.bd 
  8. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৩ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১৭ 
  9. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৫ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ 

বহিঃসংযোগসম্পাদনা