বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

ছাত্র সংগঠন

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির (যা শিবির নামেও পরিচিত) বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন।[১] এটি ইসলামী দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন। এটি বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম সংগঠন। এবং ইসলামি ছাত্র সংগঠন গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম প্রধান। এই দলটির পূর্ব নাম ছিল পাকিস্তান ছাত্র সংঘ[২] মুসলিম ছাত্র ব্যতীত কেউ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সদস্য হতে পারেনা। তবে যে কোনো ধর্ম বা মতবাদের অনুসারী শুধুমাত্র ছাত্ররা এই সংগঠনের সমর্থক হতে পারে।[৩][৪] তাদের শপথ সঙ্গীত হল “পদ্মা মেঘনা যমুনার তীরে আমরা শিবির গড়েছি / শপথের সঙ্গীন হাতে নিয়ে সকলে নবীজীর রাস্তা ধরেছি”।[৩]

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির
সভাপতিমঞ্জরুল ইসলাম
মহাসচিবজাহিদুল ইসলাম
প্রতিষ্ঠা৬ই ফেব্রুয়ারি ১৯৭৭
সদর দপ্তর৪৮/১ পুরানা পল্টন, ঢাকা
ভাবাদর্শইসলামী সমাজ বির্নিমাণ
জাতীয় অন্তর্ভুক্তিবাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী
সংবাদপত্রছাত্রসংবাদ
ওয়েবসাইটshibir.org.bd

ইতিহাস

১৯৭১ এর পূর্বে জামায়াতের তৎকালীন ছাত্রসংস্থার নাম ছিল ইসলামী ছাত্রসংঘ। ১৯৭৭ সালে পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে তারা "বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির" নামে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৭৭ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে শিবির প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন মীর কাশেম আলী এবং প্রতিষ্ঠাকালীন দলটির সদস্য ছিলো মাত্র ছয় জন। সংগঠনের নীতি অনুসারে এদের কার্যক্রম পাঁচটি দফার উপর প্রতিষ্ঠিত।[৫]

কেন্দ্রীয় সভাপতিবৃন্দের তালিকা

ক্রম সভাপতি দায়িত্ব গ্রহণ দায়িত্ব সমাপ্তি
০১ মীর কাশেম আলী ফেব্রুয়ারী ১৯৭৭ অক্টোবর ১৯৭৮
০২ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান অক্টোবর ১৯৭৮ অক্টোবর ১৯৭৯
০৩ মুহাম্মদ আবু তাহের অক্টোবর ১৯৭৯ অক্টোবর ১৯৮১
০৪ মুহাম্মদ এনামুল হক মঞ্জু অক্টোবর ১৯৮১ জানুয়ারী ১৯৮২
০৫ আহমদ আব্দুল কাদের বাচ্চু জানুয়ারী ১৯৮২ মে ১৯৮২
০৬ মুহাম্মদ সাইফুল আলম খান মিলন মে ১৯৮২ অক্টোবর ১৯৮৩
০৭ মুহাম্মদ তাসনিম আলম জানুয়ারী ১৯৮৪ জানুয়ারী ১৯৮৬
০৮ ডা. সৈয়দ আব্দুল্যাহ মোহাম্মদ তাহের জানুয়ারী ১৯৮৬ জানুয়ারী ১৯৮৮
০৯ শামসুল ইসলাম জানুয়ারী ১৯৮৮ জানুয়ারী ১৯৯০
১০ ডা. আমিনুল ইসলাম মুকুল জানুয়ারী ১৯৯০ জানুয়ারী ১৯৯২
১১ আবু জাফর মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ জানুয়ারী ১৯৯২ জানুয়ারী ১৯৯৩
১২ ব্যারিস্টার হামিদ হোসাইন আজাদ জানুয়ারী ১৯৯৩ জানুয়ারী ১৯৯৪
১৩ রফিকুল ইসলাম খাঁন জানুয়ারী ১৯৯৪ জানুয়ারী ১৯৯৬
১৪ মুহাম্মদ শাহজাহান জানুয়ারী ১৯৯৬ জানুয়ারী ১৯৯৮
১৫ মুহাম্মদ মতিউর রহমান আকন্দ জানুয়ারী ১৯৯৮ জানুয়ারী ২০০০
১৬ এহসানুল মাহবুব জুবায়ের জানুয়ারী ২০০০ জানুয়ারী ২০০১
১৭ নুরুল ইসলাম বুলবুল জানুয়ারী ২০০১ জানুয়ারী ২০০৩
১৮ মুজিবুর রহমান মঞ্জু[৬] জানুয়ারী ২০০৩ জানুয়ারী ২০০৪
১৯ মুহাম্মদ সেলিম উদ্দীন জানুয়ারী ২০০৪ জানুয়ারী ২০০৬
২০ ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ[৭] জানুয়ারী ২০০৬ জানুয়ারী ২০০৮
২১ মো. জাহিদুর রহমান জানুয়ারী ২০০৮ জানুয়ারী ২০০৯
২২ ড. মুহাম্মাদ রেজাউল করিম জানুয়ারী ২০০৯ জানুয়ারী ২০১১
২৩ ডা. ফখরুদ্দীন মানিক জানুয়ারী ২০১১ জানুয়ারী ২০১২
২৪ মুহাম্মাদ দেলোয়ার হোসেন জানুয়ারী ২০১২ জানুয়ারী ২০১৪
২৫ মুহাম্মাদ আব্দুল জাব্বার জানুয়ারী ২০১৪ ডিসেম্বর ২০১৫
২৬ আতিকুর রহমান ডিসেম্বর ২০১৫ ডিসেম্বর ২০১৬
২৭ ইয়াসিন আরাফাত ডিসেম্বর ২০১৬ জানুয়ারী ২০১৯
২৮ ড. মোবারক হোসাইন জানুয়ারী ২০১৯ ডিসেম্বর ২০১৯
২৯ সিরাজুল ইসলাম ডিসেম্বর ২০১৯ ডিসেম্বর ২০২০
৩০ সালাহউদ্দিন আইউবী ডিসেম্বর ২০২০ ডিসেম্বর ২০২১
৩১ হাফেজ রাশেদুল ইসলাম ডিসেম্বর ২০২১ ডিসেম্বর ২০২২
৩২ রাজিবুর রহমান ডিসেম্বর ২০২২ ডিসেম্বর ২০২৩
৩৩ মঞ্জরুল ইসলাম ডিসেম্বর ২০২৩ বর্তমান

তহবিল

শিবির সদস্যরা তাদের সংগঠন পরিচালনার অর্থ তাদের কর্মী, সাথী, সদস্য ও শুভাকাঙ্খীদের নিকট থেকে মাসিকভাবে আদায় করে থাকে। তাদের সাংগঠনিক প্রকাশনীর মুনাফা ও যাকাত বায়তুলমালের অন্যতম আয়ের উৎস।[৮][৯][১০] তবে যাকাতের অর্থের হিসাব আলাদা রেখে শরিয়ত নির্ধারিত পন্থায় ব্যয় করা হয়।[১১]

সমালোচনা

ছাত্র সংগঠনটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক যুদ্ধাপরাদের দায়ে দণ্ডিত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের কারণে ব্যাপক নিন্দিত হয়।[১২][১৩][১৪] ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অধিভুক্ত ন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম ফর স্টাডি অব টেরোরিজম অ্যান্ড রেসপন্স টু টেরোরিজমের তৈরি ফাইলে ছাত্র শিবিরকে একটি ভয়ংকর জঙ্গি সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আরও বলা হয় যে এটির সাথে পৃথিবীর বৃহৎ জঙ্গী সংগঠনসমূহের সম্পর্ক রয়েছে।[১৫] এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামি ছাত্র শিবির নিষিদ্ধের প্রস্তাব করা হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

গুমের স্বীকার

৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ আনুমানিক ১:০০ টার দিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের আল ফিকহ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আল মুকাদ্দাস (২২) এবং দাওয়াহ ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ওয়ালিউল্লাহ (২৩) সাভার থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিল বলে অভিযোগ গুম হওয়ার খবর পাওয়া গেছে এবং গ্রেপ্তারকারীরা নিজেকে র‍্যাব-৪ এবং ডিবি পুলিশ সদস্য হিসাবে পরিচয় দেয়।[১৬][১৭][১৮]

দু'জনই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্র শিবিরের সদস্য[১৯] এবং র‍্যাব ও গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) এর সদস্যরা ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পুলিশ আটক করে বলে অভিযোগ। তাদের কাছ থেকে আর কিছু শোনা যায় নি এবং তাদের অবস্থান অজানা। র‍্যাব একটি বাংলাদেশি সংবাদপত্রে বিবৃতিতে ওই দু'জনকে আটক করার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলিতে বেশ কয়েকটি উৎস থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন এবং নিখোঁজ হওয়ার একটি নিদর্শন র‍্যাবকে অস্বীকার করার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে।[২০][২১][২২] অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সহ অন্যান্য অধিকার সংস্থাগুলি এই বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।[২৩]

দমন-পীড়ন

২০১০ সাল থেকে শিবিরকে বারবার ক্র্যাকডাউন করে টার্গেট করা হয়েছে।[২৪] আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার জোর দিয়ে বলেছে যে, জনশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং পুলিশে হামলা বন্ধ করা জরুরি; কিন্তু অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদেরকে রাজনৈতিক ক্র্যাকডাউন হিসাবে দেখছে।[২৫]

তথ্যসূত্র

  1. Osella, Filippo; Osella, Caroline (২০১৩-০৫-১৬)। Islamic Reform in South Asia (ইংরেজি ভাষায়)। Cambridge University Press। আইএসবিএন 9781107031753 
  2. Bangladesh Genocide Archive | Collaborators and War Criminals
  3. BIC। "বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের গৌরবোজ্জল ইতিহাস'"www.shibiriu.org। ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ 
  4. BICS। "The Glorious History'"www.english.shibir.org.bd। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ 
  5. "About"Shibir.org.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৪-১৪ 
  6. http://www.abparty.org/ জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ গঠনে নবগঠিত দল আমার বাংলাদেশ পার্টির প্রধান আহ্বায়ক
  7. "শিবিরের সাবেক সভাপতি ড.শফিকুল ইসলাম মাসুদ আবারও আটক"www.campustimes.press। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-০৬ 
  8. Mahmud, Tarek (১৩ সেপ্টেম্বর ২০১১)। "Shibir collects tolls from the hostel residents in 2 Ctg colleges"New Age। Dhaka। ২০১৩-১০-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১২-১৭ 
  9. Ali, Anwar (৩ মার্চ ২০১০)। "Shibir rented out RU hall seats"The Daily Star। ১৪ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১২-১৭ 
  10. ধারা ৩৬। "সংবিধান"বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। 
  11. "About | Bangladesh Islami Chhatrashibir"bangla.shibir.org.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-১৫ 
  12. Osella, Filippo; Osella, Caroline (২০১৩-০৫-১৬)। Islamic Reform in South Asia (ইংরেজি ভাষায়)। Cambridge University Press। আইএসবিএন 9781107031753 
  13. "সংঘর্ষ আর বোমাবাজিতে চলছে শিবিরের হরতাল: খুলনায় একজন নিহত - BBC Bangla - খবর"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৫-০৭ 
  14. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৮ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ আগস্ট ২০১৩ 
  15. "Terrorist Organization Profile - START - National Consortium for the Study of Terrorism and Responses to Terrorism"। ২৩ জুন ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০১২ 
  16. "Odhikar - Two persons were disappeared after being arrested at Savar allegedly by RAB and DB Police" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৭-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-১৯ 
  17. "Bangladesh: Enforced disappearance of Messrs. Al Mukaddas and Mohammad Waliullah"www.omct.org। ২০১৯-০৫-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-১৯ 
  18. "Two 'missing' IU students still untraced"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১২-০২-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-১৯ 
  19. "Students still missing after one and a half years since arrest"web.archive.org। Archived from the original on ২০১৮-০৯-০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-১৯ 
  20. "PM's intervention sought to find out two missing IU students"The Daily Observer। ২০২২-০৪-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-১৯ 
  21. "PM's intervention sought as two IU students remain missing for 5 years"m.thedailynewnation.com। ২০১৯-০৫-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-১৯ 
  22. "2 missing after being 'picked up' by Rab"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১২-০২-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-১৯ 
  23. Amnesty। "URGENT ACTION AUTHORITIES TOLD TO RESPOND ABOUT DETAINEES" (পিডিএফ)। ১ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০২০ 
  24. Islam, MD Saidul (২০১১-০৩-০১)। ""Minority Islam" in Muslim Majority Bangladesh: The Violent Road to a New Brand of Secularism"Journal of Muslim Minority Affairs31 (1): 125–141। আইএসএসএন 1360-2004ডিওআই:10.1080/13602004.2011.556893 
  25. "Bangladesh: politically motivated arbitrary arrests hamper impartial investigation of campus violence" (পিডিএফ)Amnesty International। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুন ২০১৭ 

বহিঃসংযোগ