ঘেটুপুত্র কমলা

২০১২-এর হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত চলচ্চিত্র

ঘেটু পুত্র কমলা এটি ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশী চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি পরিকল্পনা ও নির্মাণ করেছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক-চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদইমপ্রেস টেলিফিল্ম এই চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেছে। ছবির কাহিনি ও চিত্রনাট্য করেছেন হুমায়ূন আহমেদ। এটি ২০১০-২০১১ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত হয় এবং কোনোরূপ কর্তন ছাড়াই ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তির জন্য সরকারি অনুমোদন লাভ করে।[১] এই চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় প্রসঙ্গ ব্রিটিশ আমলে ময়মনসিংহ অঞ্চলে ঘেটুশিল্পীদের প্রতি তৎকালীন স্থানীয় জমিদারদের অসামাজিক বালকপ্রীতি । চলচ্চিত্রের ঘেটুপুত্র কমলা চরিত্রে অভিনয় করেছেন শিশুশিল্পী মামুন

ঘেটু পুত্র কমলা
ঘেটু পুত্র কমলা চলচ্চিত্রের পোস্টার.jpg
বাণিজ্যিক পোস্টার
পরিচালকহুমায়ূন আহমেদ
প্রযোজক
রচয়িতাহুমায়ূন আহমেদ
চিত্রনাট্যকারহুমায়ূন আহমেদ
শ্রেষ্ঠাংশে
বর্ণনাকারীআসাদুজ্জামান নূর
সুরকার
চিত্রগ্রাহকমাহফুজুর রহমান খান
সম্পাদকছলিম উল্লাহ ছলি
পরিবেশকইমপ্রেস টেলিফিল্ম
মুক্তি
  • ৭ সেপ্টেম্বর ২০১২ (2012-09-07) (ঢাকা)
দৈর্ঘ্য৯৫ মিনিট
দেশ বাংলাদেশ
ভাষাবাংলা

এটি হুমায়ূন আহমেদ নির্মিত সর্বশেষ চলচ্চিত্র।[২] চলচ্চিত্রটি আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তির আগেই ১৯শে জুলাই, ২০১২ যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তবে একমাসের জন্যে দেশে ফিরে পুনরায় নিউ ইয়র্ক যাওয়ার আগে ৩০ মে ২০১২ তারিখে তিনি ছবিটি দেখে যেতে পেরেছিলেন। এ সময় তিনি এ চলচ্চিত্রটি টেলিভিশনে মুক্তি না দিয়ে প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনের কড়া নির্দেশ দিয়ে যান।

৮৫তম অস্কার প্রতিযোগিতায় ‘সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র ’ বিভাগের জন্য বাংলাদেশ থেকে মনোনয়ন পেয়েছে ‘ঘেটুপুত্র কমলা’। ৮৫তম অস্কার বাংলাদেশ কমিটি চলচ্চিত্রটিকে মনোনয়ন দিয়েছে। [৩] এছাড়া চলচ্চিত্রটি ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন, কানাডাসিঙ্গাপুরের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজক কমিটির কাছ থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছে।[১]

কাহিনিসংক্ষেপসম্পাদনা

চলচ্চিত্রটির সময়কাল ব্রিটিশ আমল। প্রায় দেড়শ বছর আগের এক গ্রামীণ পরিবেশের কথা খুঁজে পাওয়া যায় চলচ্চিত্রটিতে। ব্রিটিশ শাসনাধীন (বর্তমান বাংলাদেশের) হবিগঞ্জ জেলার জলসুখা গ্রামের পটভূমিতে চলচ্চিত্রটির কাহিনি চিত্রিত। সে সময় জলসুখা গ্রামের এক বৈষ্ণব আখড়ায় ঘেটুগান নামে নতুন গ্রামীণ সঙ্গীতধারা সৃষ্টি হয়েছিল। নতুন সেই সঙ্গীত ধারাতে মেয়েদের পোশাক পরে কিছু সুদর্শন সুন্দর মুখের কিশোরদের নাচগান করার রীতি চালু হয়। এই কিশোরদের আঞ্চলিক ভাষাতে ঘেটু নামে ডাকা হতো। ঘাটু নামের নব এই সঙ্গীত ধারাতে গান প্রচলিত সুরে কীর্তন করা হলেও উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের প্রভাব বেশ লক্ষণীয় ছিল। গ্রাম্য অঞ্চলের অতি জনপ্রিয় নতুন সঙ্গীতরীতিতে নারী বেশধারী কিশোরদের উপস্থিতির কারণেই এর মধ্যে অশ্লীলতা ঢুকে পড়ে। শিশুদের প্রতি যৌনসংসর্গে আগ্রহী বিত্তবানরা বিশেষ করে জোতদার প্রমুখ এইসব কিশোরকে যৌনসঙ্গী হিসেবে পাবার জন্যে লালায়িত হতে শুরু করে। একসময় সামাজিকভাবে বিষয়টা স্বীকৃতি পেয়ে যায়। হাওর অঞ্চলের জমিদার ও বিত্তবান শৌখিন মানুষরা বর্ষাকালে জলবন্দি সময়টায় কিছুদিনের জন্যে হলেও ঘেটুপুত্রদের নিজের কাছে রাখবেন এই বিষয়টা স্বাভাবিকভাবে বিবেচিত হতে থাকে। শিশুদের প্রতি যৌনসংসর্গে আগ্রহী বিত্তবানদের স্ত্রীরা ঘেটুপুত্রদের দেখতেন সতীন হিসেবে।

শ্রেষ্ঠাংশেসম্পাদনা

নির্মাণসম্পাদনা

হুমায়ূন আহমেদেরই গল্প একজন সৌখিনদার মানুষ থেকে ঘেটুপুত্র কমলা চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য রচনা করা হয়েছে। গাজীপুরের নুহাশ পল্লী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের হরিপুরের হাওর এলাকার এক পুরনো জমিদার বাড়িতে চলচ্চিত্রটির দৃশ্যধারণ করা হয়। চলচ্চিত্রটিতে নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন মেহের আফরোজ শাওন, প্রধান সহকারী পরিচালক জুয়েল রানা ও প্রযোজনায় ইমপ্রেস টেলিফিল্ম

কলাকুশলীবৃন্দসম্পাদনা

  • শিল্প নির্দেশক ও টাইটেল: মাসুম রহমান
  • প্রধান সহকারী পরিচালক: জুয়েল রানা
  • সহকারী পরিচালক: মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও চন্দন খান
  • রূপসজ্জা: খলিলুর রহমান
  • পোশাক সরবরাহ: অঞ্জনস
  • পরিস্ফুটন: সিয়াম ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কো. ডল. ব্যাংকক, থাইল্যান্ড
  • মুদ্রণ: সিয়াম ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কো. ডল. ব্যাংকক, থাইল্যান্ড
  • কালার এনালিস্ট: সিয়াম ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কো. ডল. ব্যাংকক, থাইল্যান্ড
  • শব্দগ্রহণ: ধ্বনিচিত্র লিমিটেড
  • পুন:শব্দ ধ্বনিচিত্র লিমিটেড
  • সম্পাদনা: লীলাচিত্র
  • কৃতজ্ঞতা স্বীকার: ফারুক আহমেদ ও প্রজ্ঞা ঐশ্বরিয়া
  • কোরিওগ্রাফি: মেহের আফরোজ শাওন
  • নৃত্য প্রশিক্ষক: আব্দুর রহিম রয়

সঙ্গীতসম্পাদনা

ঘেটু পুত্র কমলা
চলচ্চিত্র স্কোর
মুক্তির তারিখ২০১২
সঙ্গীত প্রকাশনীলেজার ভিশন

ঘেটু পুত্র কমলা চলচ্চিত্রের মূল সঙ্গীত পরিচালক মকসুদ জামিল মিন্টু, এবং "শুয়া উড়িল" গানটির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন এস আই টুটুল। আবহসঙ্গীত পরিচালনা করেছেন ইমন সাহা। "শুয়া উড়িল" গানটি রচনা করেছেন শিতালং শাহ এবং "সাবান আইনা" ও "যমুনার জল" দুটি গানের কথা সংগৃহীত। এছাড়া ছবির পরিচালক হুমায়ূন আহমেদ "বাজে বংশী" গানটি রচনা করেছিলেন। কণ্ঠশিল্পীরা হলেন অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু, শফি মণ্ডল ও প্রান্তি।

ঘেটু পুত্র কমলা
নং.শিরোনামলেখকগায়কদৈর্ঘ্য
১."বাজে বংশী"হুমায়ূন আহমেদফজলুর রহমান বাবু, শফি মন্ডল 
২."শুয়া উড়িল"শিতালং শাহএস. আই. টুটুল 
৩."সাবান আইনা" ফজলুর রহমান বাবু 
৪."আমার যমুনার জল" ফজলুর রহমান বাবু 
৫."শুয়া উড়িল"শিতালং শাহফজলুর রহমান বাবু, শফি মন্ডল 
৬."জলের ঘাটে বাজে বাশী" ফজলুর রহমান বাবু 
৭."বাজে বংশী" ফজলুর রহমান বাবু, শফি মন্ডল 
৮."শুয়া উড়িল" প্রান্তি 

পুরস্কার এবং সম্মাননাসম্পাদনা

পুরস্কারের তালিকা নিম্নরূপ;[৪]

আরও দেখুনসম্পাদনা

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. "ছাড়পত্র পেল 'ঘেটুপুত্র কমলা'"। ৭ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ আগস্ট ২০১২ 
  2. মুক্তি পাচ্ছে হুমায়ুন আহমেদের "ঘেটুপুত্র কমলা"[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. "অস্কারে যাচ্ছে 'ঘেটুপুত্র কমলা'"। ২০১৭-০৯-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-১২ 
  4. Correspondent, Staff (২০১৪-০৫-১০)। "Handover of nat'l film award today"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-১৪ 

বহিঃসংযোগসম্পাদনা