আগুন দ্রুত প্রজ্জ্বলনশীল পদার্থের রাসায়নিক বিক্রিয়াবিশেষ। এটি তাপোৎপাদী, দহন বিক্রিয়ায় পদার্থের দ্রুত জারণ প্রক্রিয়া। এতে উত্তাপ, আলো সহ বহুবিধ রাসায়নিক উৎপাদ সৃষ্টি হয়।[][টীকা ১] আগুন গরম, কারণ আণবিক অক্সিজেন, O2, এর দুর্বল দ্বি-বন্ধন, দহন বিক্রিয়ার উৎপাদ কার্বন ডাই অক্সাইড ও [জল] দৃঢ় বন্ধনে রূপান্তরের সময় শক্তি উৎপাদন করে (প্রতি ৩২ গ্রাম O2 থেকে ৪১৮ kJ শক্তি); জ্বালানির বন্ধন শক্তি এখানে খুব সামান্যই ভূমিকা পালন করে।[] দহন বিক্রিয়ার একটি নির্দিষ্ট বিন্দু বা জ্বলনাঙ্কে পৌছালে অগ্নিশিখা উৎপন্ন হয়। শিখা হলো আগুনের দৃশ্যমান অংশ। অগ্নিশিখা মূলত কার্বন ডাই অক্সাইড, জলীয় বাষ্প, অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেন নিয়ে গঠিত। যথেষ্ট উত্তপ্ত হলে, গ্যাস আয়নিত হয়ে প্লাজমা উৎপাদন করতে পারে।[] প্রজ্জ্বলিত পদার্থের উপাদান এবং অপদ্রব্যের উপস্থিতির ভিত্তিতে শিখার রং এবং আগুনের তীব্রতা ভিন্ন হয়।

কাঠে আগুনের একটি দৃশ্য
কাঠের মিহি গুঁড়োর স্তূপের প্রজ্জ্বলন এবং নির্বাপন
নাসার টেরা স্যাটেলাইটের পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে সারা বিশ্বে মাসিক অগ্নিকাণ্ড। ১,০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে পর্যবেক্ষিত আগুনের সংখ্যার (আকার নয়) উপর ভিত্তি করে রঙ নির্ধারিত। সাদা পিক্সেল ১,০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় প্রতিদিন ১০০ টির বেশি, হলুদ পিক্সেল ১০ টি, কমলা পিক্সেল ৫ টি এবং লাল রঙ কমপক্ষে ১ টি অগ্নিকাণ্ড নির্দেশ করে।

আগুনের একটি সাধারণ রূপ হলো অগ্নিদাহ, যা পোড়ানোর মাধ্যমে শারীরিক ক্ষতিও ঘটাতে পারে। আগুন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া যা সারা বিশ্বের পরিবেশ ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে। আগুনের ইতিবাচক প্রভাবের মধ্যে রয়েছে বৃদ্ধি উদ্দীপক হিসেবে কাজ করা এবং বিভিন্ন বাস্তুতান্ত্রিক ব্যবস্থা বজায় রাখা। এর নেতিবাচক প্রভাবের মধ্যে রয়েছে জীবন এবং সম্পত্তির ঝুঁকি, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ এবং পানি দূষণ[] যদি আগুন প্রতিরক্ষামূলক গাছপালার ক্ষতিসাধন করে, তবে ভারী বৃষ্টিপাতের পানিতে ভূমিক্ষয় বৃদ্ধি পেতে পারে।[] এছাড়াও গাছপালা পুড়লে এতে অবস্থিত পটাশিয়াম এবং ফসফরাস ছাইয়ের মধ্যে থেকে পুনঃব্যবহারের জন্য দ্রুত মাটিতে মিশ্রিত হলেও নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে মুক্ত হয়ে যায়। আগুনের কারণে নাইট্রোজেনের এই ক্ষয় দীর্ঘমেয়াদীভাবে মাটির উর্বরতা হ্রাস করে। তবে এই উর্বরতা সম্ভবত পুনরুদ্ধার করা যেতে পারে নাইট্রোজেন সংবদ্ধকরণ এর মাধ্যমে, যেমনটা বজ্রপাতনাইট্রোজেন সংবদ্ধকারী লিগিউম জাতীয় উদ্ভিদ যেমন মটরশুঁটি, শিম বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত আণবিক নাইট্রোজেনকে অ্যামোনিয়ায় রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে দেখা যায়।

জমি সাফাই, রন্ধন, তাপ ও আলো উৎপাদন, সংকেত প্রদান, যন্ত্রের চালিকাশক্তি, ধাতু বিগলন, বর্জ্য পোড়ানো, অগ্নিসংস্কার এবং ধ্বংসের অস্ত্র বা মাধ্যম হিসেবে মানব জাতি আগুন ব্যবহার করেছে। আগুনের আবিষ্কার ও নিয়ন্ত্রণ, মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত।[] প্রায় ১০ লক্ষ বছর আগে হোমো ইরেক্টাস কর্তৃক আগুন ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়।[][]

ভৌত ধর্ম

সম্পাদনা

রসায়ন

সম্পাদনা
 
অগ্নি ত্রিভুজ।

আগুন প্রজ্জ্বলিত হয় যখন পর্যাপ্ত পরিমাণ জারক যেমন অক্সিজেন গ্যাস বা অন্য বা অক্সিজেন সমৃদ্ধ যৌগ সমন্বিত একটি দাহ্য পদার্থ (যদিও অক্সিজেন বিহীন জারক বিদ্যমান), ঐ জ্বালানি/জারক মিশ্রণের জ্বলনাঙ্কের অধিক তাপমাত্রার কোনো উৎসের সংস্পর্শে আসে এবং দ্রুত জারণের একটি হার বজায় রাখতে পারে, যার ফলশ্রুতিতে একটি শৃঙ্খল বিক্রিয়া বা চেইন রিঅ্যাকশন উৎপাদিত হয়। এটাকে সাধারণভাবে অগ্নি ত্রিভুজ বলা হয়। সঠিক অনুপাতে এই সব উপাদানের উপস্থিতি ছাড়া আগুনের অস্তিত্ব থাকতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ, একটি দাহ্য তরল শুধুমাত্র জ্বালানি এবং অক্সিজেন সঠিক অনুপাতে থাকলেই প্রজ্জ্বলিত হবে। কিছু জ্বালানি-অক্সিজেন মিশ্রণে অনুঘটক প্রয়োজন হতে পারে, যা বিক্রিয়ায় গৃহীত হয় না কিন্তু দহনের সময় কোন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় যোগ করা হলে, বিক্রিয়কসমূহকে অধিক দাহ্য করতে সক্ষম।

একবার প্রজ্বলিত হলে শৃঙ্খল বিক্রিয়া সংঘটনের মাধ্যমে আগুন দহন প্রক্রিয়ায় আরো তাপ শক্তি মুক্ত করার মাধ্যমে নিজের তাপ বজায় রাখতে পারে এবং যদি একটি জারক এবং জ্বালানি ক্রমাগত সরবরাহ করা হয় তবে আরও বিস্তৃতও হতে পারে।

যদি পারিপার্শ্বিক বায়ুর অক্সিজেন জারক হিসেবে কাজ করে, তবে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অথবা ত্বরণ দ্বারা সৃষ্ট অনুরূপ কোনো শক্তির উপস্থিতি, পরিচলনের জন্য অপরিহার্য, যা দহন বিক্রিয়ার উৎপাদ অপসারণ করে আগুনে অক্সিজেনের সরবরাহ নিশ্চিত করে। মাধ্যাকর্ষণ ছাড়া, আগুন দ্রুত তার নিজস্ব দহন উৎপাদ এবং বাতাস থেকে অ-জারক গ্যাসসমূহ দ্বারা নিজেকে ঘিরে ফেলে, যা অক্সিজেনের অভাব তৈরী করে আগুন নিভিয়ে দেয়। এই কারণে, কক্ষপথে ইনারশিয়াল বা জড় উড্ডয়নকালে মহাকাশযানে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি খুব কম।[][১০] তবে পরিচলন ছাড়া অন্য কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আগুনে অক্সিজেন সরবরাহ করা হলে এটা প্রযোজ্য হবে না।

অগ্নি ত্রিভুজের যে কোন একটি উপাদান অপসারণ করেই আগুন নিভিয়ে ফেলা যেতে পারে। একটি স্বাভাবিক গ্যাস শিখা বিবেচনা করা যাক, যেমনটা চুলায় পাওয়া যায়। নিচের যে কোন একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আগুন নিভিয়ে ফেলা যেতে পারে:

  • গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা, যা জ্বালানি উৎস অপসারণ করে;
  • শিখা পুরোপুরি আবৃত করা, যা শিখা নিভিয়ে দেয় কেননা দহন উপস্থিত জারক (বাতাসের অক্সিজেন) একইসাথে ব্যবহার করে এবং শিখার আশেপাশের এলাকা থেকে কার্বন ডাই অক্সাইডের সাথে অপসারণ করে;
  • পানির প্রয়োগ, যা আগুনের তাপ উৎপাদনের চেয়ে দ্রুত তাপ অপসারণ করে (একইভাবে, শিখার উপর জোরে ফুঁ দেওয়া হলে তা জ্বালানি উৎস থেকে জ্বলন্ত গ্যাসের তাপ অপসারিত করবে, এবং একই ফলাফল পাওয়া যাবে), অথবা
  • শিখায় প্রতিবন্ধক রাসায়নিক দ্রব্য যেমন হ্যালোন প্রয়োগ, যা দহনের হার শৃঙ্খল বিক্রিয়া বজায় রাখতে অক্ষম হওয়া অবধি রাসায়নিক বিক্রিয়া প্রতিরোধ করে।

অন্যদিকে, দহনের সামগ্রিক হার বৃদ্ধির মাধ্যমে আগুন আরও তীব্র হয়। এর পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বালানি এবং জারকের সরবরাহের ভারসাম্য বজায় রাখা, এই সুষম মিশ্রণে জ্বালানি এবং জারকের সরবরাহ বৃদ্ধি, পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি যাতে আগুনের নিজস্ব তাপ দহন বজায় রাখতে সক্ষম হয়, অথবা একটি অ-বিক্রিয়ক মাধ্যম যেখানে জ্বালানি এবং জারক আরো সহজে বিক্রিয়া করতে পারে তথা অনুঘটক সরবরাহ।

 
মোমবাতির শিখা।
 
এক সেকেন্ডের ৪০০০ ভাগের ১ ভাগ এক্সপোজারে তোলা আগুনের ছবি

শিখা হলো বিক্রিয়ক গ্যাস এবং পদার্থের মিশ্রণ থেকে নিঃসৃত দৃশ্যমান, অবলোহিত এবং কখনও কখনও অতিবেগুনী আলো, যার কম্পাঙ্ক বর্ণালী প্রজ্জ্বলিত পদার্থের উপাদান এবং এতে সংঘটিত বিক্রিয়ার উৎপাদসমূহের রাসায়নিক গঠনের উপর নির্ভর করে। অনেক ক্ষেত্রে, জৈব পদার্থ যেমন কাঠ অথবা গ্যাসের অসম্পূর্ণ দহনের সময় সুট্‌ নামক কণা "আগুন" এর পরিচিত লাল-কমলা উজ্জ্বলতা উৎপাদন করে। এই আলোর একটি নিরবচ্ছিন্ন বর্ণালী রয়েছে। গ্যাসের পূর্ণ দহনে শিখায় গঠিত উত্তেজিত অণুতে বিভিন্ন ইলেকট্রন স্থানান্তরের কারণে একক তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিকিরণ নির্গমনের কারণে একটি হালকা নীল রঙ দেখা যায়। সাধারণত এ ঘটনায় অক্সিজেন জড়িত থাকে, কিন্তু ক্লোরিনের মধ্যে হাইড্রোজেন পোড়ালেও একটি শিখা উৎপন্ন হয় ও হাইড্রোজেন ক্লোরাইড (HCl) তৈরী হয়। আরও অন্যান্য সম্ভাব্য মিশ্রণের মধ্যে রয়েছে, ফ্লোরিন ও হাইড্রোজেন এবং হাইড্রাজিননাইট্রোজেন টেট্রোক্সাইড। হাইড্রোজেন এবং হাইড্রাজিন/ইউডিএমএইচ অগ্নিশিখা একইভাবে ফ্যাকাশে নীল। কিন্তু বোরন এবং এর যৌগের দহন, যাকে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে জেট এবং রকেট ইঞ্জিনের জন্য একটি উচ্চ শক্তির জ্বালানি হিসাবে মূল্যায়ন করা হয়েছিল, এটি তীব্র সবুজ শিখা নিঃসরণ করে, যার ফলে এর অনানুষ্ঠানিক ডাকনাম হয় "সবুজ ড্রাগন"।

 
নর্থওয়েস্ট ক্রাউন অগ্নি গবেষণা, কানাডা

একটি শিখার উজ্জ্বলতার ঘটনাটি বেশ জটিল। কৃষ্ণবস্তু বিকিরণ সুট্‌, গ্যাস এবং জ্বালানি কণা থেকে নির্গত হয়, যদিও সুট্‌ কণা নিখুঁত কৃষ্ণবস্তুর মত আচরণ করার পক্ষে খুব ছোট। এছাড়াও গ্যাসে উত্তেজিত পরমাণু এবং অণু দ্বারা ফোটন নির্গমন হয়। বিকিরণের অধিকাংশই দৃশ্যমান এবং অবলোহিত আলো হিসেবে নিঃসৃত হয়। বর্ণ নির্ভর করে কৃষ্ণবস্তুর বিকিরণের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা এবং বিকিরণের বর্ণালীর ক্ষেত্রে রাসায়নিক বিন্যাসের উপর। তাপমাত্রার সাথে সাথে শিখার প্রভাবশালী রঙ পরিবর্তিত হয়। কানাডার বনে অগ্নিকাণ্ডের ছবিটি এই বৈচিত্র্যের একটি চমৎকার উদাহরণ। মাটির কাছাকাছি, যেখানে সবচেয়ে বেশি দহন ঘটছে, সেখানে আগুন সাদা, সাধারণভাবে জৈব পদার্থের জন্য সবচেয়ে গরম রঙ হলো হলুদ। হলুদ অঞ্চলের উপরে দেখা যায় কমলা রঙ, যা শীতল, তারপর লাল, যা আরও শীতল। লাল অঞ্চলের উপরে আর দহন ঘটে না এবং অদাহ্য কার্বন কণা কালো ধোঁয়া হিসাবে দৃশ্যমান হয়।

 
আগুন মাধ্যাকর্ষণ দ্বারা প্রভাবিত হয়। বাম: পৃথিবীতে আগুনের শিখা; ডান: আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে আগুনের শিখা

স্বাভাবিক মাধ্যাকর্ষণ শক্তির অধীনে একটি শিখার সাধারণ বণ্টন পরিচলনের উপর নির্ভর করে, কেননা সুট্‌ সাধারণত শিখার শীর্ষে ওঠার একটি প্রবণতা দেখায়, যেমনটা মোমবাতির হলুদ শিখায় দেখা যায়। স্বল্প মাধ্যাকর্ষণ বা শূন্য মাধ্যাকর্ষণে,[১১] যেমন মহাশূন্যে, পরিচলন ঘটে না এবং শিখা আরো নীল এবং আরো কার্যকর হওয়ার প্রবণতা নিয়ে গোলাকার আকার ধারণ করে (যদিও এটি ধীরে সরানো না হলে নিভে যেতে পারে যেহেতু দহন থেকে উৎপন্ন কার্বন ডাই অক্সাইড স্বল্প মাধ্যাকর্ষণে সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারে না বরং তা শিখা নেভানোর প্রবণতা দেখায়। এই পার্থক্যের বেশ কিছু ব্যাখ্যা আছে, যার মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাব্য ব্যাখ্যাটি বলে যে তাপমাত্রা এতটাই সমানভাবে বিতরণ হয় যে সুট্‌ গঠিত হয় না এবং পূর্ণ দহন ঘটে।[১২] নাসার গবেষণায় দেখা গেছে যে স্বল্প মাধ্যাকর্ষণে ডিফিউশন শিখা, সুট্‌ উৎপন্ন হওয়ার পর পৃথিবীর চেয়ে অধিক জারিত হতে দেয়, কারণ স্বাভাবিক মাধ্যাকর্ষণ অবস্থার তুলনায় স্বল্প মাধ্যাকর্ষণে ব্যবস্থাটি ভিন্ন আচরণ প্রদর্শন করে।[১৩] এইসব আবিষ্কার ফলিত বিজ্ঞান এবং শিল্পে প্রয়োগ করা সম্ভব, বিশেষ করে জ্বালানি দক্ষতার ক্ষেত্রে।

দহন ইঞ্জিনে, শিখা নির্মূল করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। পদ্ধতিটি মূলত জ্বালানি হিসেবে তেল, কাঠ, নাকি জেট ফুয়েলের মত উচ্চ শক্তির জ্বালানি ব্যবহৃত হয়েছে তার উপর নির্ভর করে।

সাধারণ রুদ্ধতাপীয় তাপমাত্রা

সম্পাদনা

একটি জ্বালানি এবং জারক জুটির রুদ্ধতাপীয় শিখা তাপমাত্রা হলো, যে তাপমাত্রায় গ্যাসসমূহ দহনে স্থিতিশীলতা অর্জন করে।

অগ্নি বাস্তুবিদ্যা

সম্পাদনা

প্রতিটি প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের নিজস্ব অগ্নি ব্যবস্থা আছে এবং ঐ বাস্তুতন্ত্রের জীবসত্তাগুলো অগ্নি শাসনের সাথে অভিযোজিত বা তার উপর নির্ভরশীল। অগ্নি ব্যবস্থা বলতে বোঝানো হচ্ছে দীর্ঘকালীন কোনো এলাকায় দাবানলের নমুনা ও তীব্রতা। আগুন ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন জীবের আবাসস্থলের বৈচিত্র্য তৈরি করে।[১৫] উদ্ভিদ, প্রাণী এবং জীবাণুর বিভিন্ন প্রজাতি একটি নির্দিষ্ট পর্যায় নিজের কাজে লাগানোর জন্য বিশেষায়িত হয়ে ওঠে এবং এই বিভিন্ন ধরনের বৈচিত্র্য তৈরি করে, আগুন একটি বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে অধিক সংখ্যক প্রজাতির উপস্থিত থাকার সুযোগ তৈরি করে।

জীবাশ্ম প্রমাণ

সম্পাদনা

আগুনের প্রথম জীবাশ্ম প্রমাণ পাওয়া যায়, ৪৭ কোটি বছর আগে মধ্য অর্ডোভিশিয়ান যুগে যখন ভূমি ভিত্তিক উদ্ভিদকুল ব্যাপকভাবে প্রতিষ্ঠার পর তাদের নিঃসৃত অক্সিজেন, পূর্বের তুলনায় একদম নতুন ভাবে বায়ুমণ্ডলে জমা হতে শুরু করে।[১৬] অক্সিজেনের এই ঘনত্ব ১৩% এর অধিক হলে তা দাবানলের সম্ভাবনা তৈরি করে।[১৭] দাবানলের সর্বপ্রথম প্রমাণ, ৪২ কোটি বছর আগে সিলুরিয়ান যুগের শেষের দিকের অঙ্গারকৃত উদ্ভিদের জীবাশ্ম দ্বারা পাওয়া যায়।[১৮][১৯] প্রয়াত ডেভোনিয়ান যুগের একটি বিতর্কিত ব্যবধান ছাড়া এরপরের সকল যুগেই কাঠকয়লার অস্তিত্ব বিদ্যমান। বায়ুমণ্ডলীয় অক্সিজেনের মাত্রা কাঠকয়লার প্রাচুর্যের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত, তাই পরিষ্কারভাবেই অক্সিজেন দাবানলের প্রসারতার প্রধান কারণ।[২০] আগুন আরো প্রতুল হয়ে ওঠে যখন প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লক্ষ বছর আগে ঘাস অনেক বাস্তুতন্ত্রের প্রভাবশালী উপাদান হয়ে ওঠে,[২১] যা আরো দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ার জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে।[২০] এইসব অগ্নিকাণ্ডসমূহ একটি উষ্ণ ও শুষ্ক অগ্নি অনুকূল জলবায়ু তৈরির মাধ্যমে একটি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া প্রক্রিয়া শুরু করে থাকতে পারে।[২০]

মানব নিয়ন্ত্রণ

সম্পাদনা
 
নামিবিয়ার একজন অরণ্যবাসী আগুন জ্বালাচ্ছেন।
 
একটি ম্যাচ জ্বালানোর প্রক্রিয়া।
 
টুর্কুর মহাগ্নিকাণ্ডের পর ক্যাথিড্রাল এবং একাডেমি ভবনের চিত্র, গুস্তাফ উইলহেল্ম ফিনবার্গ

আগুন নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা আদিম মানুষের জীবনযাপনে একটি নাটকীয় পরিবর্তন এনেছিল। তাপ এবং আলো প্রাপ্তির জন্য আগুন ব্যবহার করা থেকেই মানুষের পক্ষে খাদ্য রান্নার পদ্ধতি শেখা সম্ভব হয়েছে, যার মাধ্যমে একই সাথে পুষ্টির বৈচিত্র্য এবং প্রাপ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং খাদ্যে অবস্থিত অণুজীব হত্যার মাধ্যমে রোগ-ব্যাধি হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে।[২২] আগুন থেকে প্রাপ্ত তাপ মানুষকে ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় উষ্ণ থাকতে সাহায্য করে ও শীতল জলবায়ুতে তাদের বসবাস করতে সক্ষম করে তোলে। এছাড়াও আগুন নিশাচর শিকারী প্রাণীদের থেকে রক্ষা করেছে। রান্না করা খাবারের প্রমাণ, ১০ লক্ষ বছর আগে থেকে পাওয়া যায়,[২৩] যদিও সম্ভবত ৪ লক্ষ বছর আগে মানুষ নিয়ন্ত্রিত ভাবে আগুন ব্যবহার করতে শেখে।[২০] প্রায় ১০ লক্ষ বছর আগে একটি নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে আগুন ব্যবহারের কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়।[২৪][২৫] প্রায় ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ বছর আগের সময়কালে আগুন ব্যবহারের ব্যাপক প্রমাণ পাওয়া যায়, এই সময় থেকেই আগুনের নিয়মিত ব্যবহারের ইঙ্গিত পাওয়া যায়; কৌতূহল উদ্দীপক ভাবে, বায়ু দূষণের প্রতি প্রতিরোধশক্তিও একই সময়ে মানবকূলে বিকশিত হতে শুরু করে।[২০] আগুনের ব্যবহার ক্রমশ উন্নত হয়ে, কাঠকয়লা তৈরি করা থেকে এবং হাজার হাজার বছর আগে বন্যপ্রাণী নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত এর ব্যবহার পাওয়া যায়।[২০]

এছাড়াও আগুন শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে নির্যাতন এবং মৃত্যুদণ্ডের একটি উপায় হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, যেমন দগ্ধ করে মৃত্যুদণ্ড এবং সেই সাথে লোহার বুটের মত নির্যাতন যন্ত্র, যা পানি, তেল, এমনকি সীসা দিয়ে ভর্তি করে পরিধানকারীর যন্ত্রণার জন্য উন্মুক্ত আগুনের উপর উত্তপ্ত করা যেতো।

নব্যপ্রস্তর যুগীয় বিপ্লব অবধি,[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] শস্য ভিত্তিক কৃষি প্রবর্তনের সময়, সারা বিশ্বের মানুষ প্রাকৃতিক ব্যবস্থাপনায় আগুন কে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে। এটি অনিয়ন্ত্রিত "উষ্ণ আগুন", যা মাটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, তা নয় বরং এটি নিয়ন্ত্রিত বা "শীতল আগুন"।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] উষ্ণ আগুন উদ্ভিদ এবং প্রাণী ধ্বংস করে এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীকে বিপন্ন করে। এটি বিশেষত বর্তমানকালের বনের একটি সমস্যা যেখানে কাষ্ঠল ফসলের বৃদ্ধি উৎসাহিত করার জন্য প্রচলিত আগুনের নিবারণ করা হয়। শীতল আগুন সাধারণত বসন্ত এবং শরৎকালে তৈরি করা হয়। এর সাহায্যে লতাগুল্ম পরিষ্কার করা হয় ও বায়োমাস পোড়ানো হয়, যা অধিক ঘন হয়ে গেলে উষ্ণ আগুন তৈরি করতে পারে। এগুলো পরিবেশে অধিক বিভিন্নতা প্রদান করে যা উদ্ভিদ বৈচিত্র্য সৃষ্টিতে সহায়তা করে। এগুলো ঘন, অচল বন মানুষের পক্ষে অতিক্রমযোগ্য করে তোলে। প্রাকৃতিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অগ্নিকাণ্ডের আরেকটি ব্যবহার হচ্ছে কৃষিকাজের জন্য জমি পরিষ্কার। এই ধরনের কৃষি এখনও ক্রান্তীয় আফ্রিকা, এশিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকা জুড়ে প্রচলিত। আর্থ ইনস্টিটিউটের সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ এন্ড কনজারভেশন-এর একজন পরিবেশবিদ, মিগুয়েল পিনেদো-ভাস্কুয়েজ এর মতে "বর্ধিত এলাকা পরিষ্কার এবং মাটিতে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত গাছপালা থেকে পুষ্টি পুনরায় মাটিতে মুক্ত করার ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য, এটি একটি উপযুক্ত উপায়"।[২৬] তবে এই উপযুক্ত কৌশলটিও সমস্যাজনক। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, বন উজাড়করণ এবং উষ্ণ জলবায়ু পৃথিবীর পৃষ্ঠকে আরও অধিক দাবানল প্রবণ করে তুলছে। এগুলো বাস্তুতন্ত্র এবং মানব অবকাঠামোর ক্ষতি করে, স্বাস্থ্য-জনিত সমস্যার সৃষ্টি করে, এবং কার্বন এবং স্যুটের সর্পিল পাঠায় যা বায়ুমণ্ডলের আরো উষ্ণতাকে উৎসাহিত করতে পারে - এবং এইভাবে আরো আগুনে খাওয়ানো হয়। এগুলো বাস্তুতন্ত্র এবং মানব অবকাঠামোর ক্ষতি করে, স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করে এবং কার্বন ও সুট্‌ এর নির্গমন ঘটিয়ে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতাকে আরো প্রণোদিত করতে পারে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী, প্রায় ৫০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেকের বেশির এলাকার সমান, একটি নির্দিষ্ট বছরে পুড়ে যায়।[২৬]

আগুনের অসংখ্য আধুনিক প্রয়োগ রয়েছে। বৃহত্তর অর্থে, পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি মানুষই প্রতিদিনি একটি নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় আগুন ব্যবহার করে। অন্তর্দহন ইঞ্জিন বিশিষ্ট যানবাহন ব্যবহারকারীরা প্রতিবার গাড়ি চালানোর সময় আগুন ব্যবহার করে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে মানুষের চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ করা হয়।

 
১৯৪৩ সালের জুলাই মাসে চারটি আগ্নেয় বোমা হামলার পর হামবুর্গ, যা আনুমানিক ৫০,০০০ লোককে হত্যা করে।[২৭]

যুদ্ধে আগুন ব্যবহারের একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। আগুন সব প্রারম্ভিক তাপীয় অস্ত্রের ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে। ট্রোজান যুদ্ধের সময় একটি কাঠের ঘোড়ায় লুকিয়ে, গ্রিক সৈন্যদের ট্রয় পুড়িয়ে ফেলার ঘটনা হোমার বর্ণনা করেছেন। পরবর্তীতে বাইজেন্টাইন নৌবহর জাহাজ ও সৈন্য আক্রমণ করতে গ্রিকদের তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে, পদাতিক বাহিনী সর্বপ্রথম আধুনিক ফ্লেমথ্রোয়ার বা অগ্নি-বর্ষক ব্যবহার করে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সফলভাবে সশস্ত্র যানবাহনে এই অস্ত্র সংযুক্ত করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে, অক্ষ এবং মিত্রশক্তি উভয়েই সমানভাবে আগ্নেয় বোমা ব্যবহার করে, উল্লেখযোগ্যভাবে টোকিও, রটার্ডাম, লন্ডন, হামবুর্গ এবং কুখ্যাতভাবে ড্রেসডেনে[২৮] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিমান বাহিনী যুদ্ধের শেষ মাসগুলোতে জাপানি লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে আগ্নেয় বোমা প্রয়োগ করে ও প্রাথমিকভাবে কাঠ এবং কাগজের বাড়ি নির্মিত সমগ্র শহর ধ্বংস করে। ১৯৪৪ সালের জুলাই মাসে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে তারা নাপ্লাম বোমা ব্যবহার শুরু করে; যদিও ভিয়েতনাম যুদ্ধের আগ পর্যন্ত এর ব্যবহার জনগণের মনোযোগ আকর্ষণ করেনি,[২৯] এ যুদ্ধে মলটভ ককটেইল ও ব্যবহার করা হয়।

জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার

সম্পাদনা
 
গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের একটি কয়লা চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র

জ্বালানি প্রজ্জ্বলিত করা হলে ব্যবহারযোগ্য শক্তি মুক্ত হয়। কাঠ একটি প্রাগৈতিহাসিক জ্বালানি এবং আজও জীবাশ্ম জ্বালানি হিসেবে বেশ কার্যকর। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, এবং কয়লার মত জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে বর্তমানে বিশ্বের অধিকাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়; ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি বা আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ২০০২ সালে বিশ্বের প্রায় ৮০% শক্তি এসব উৎস থেকে এসেছে।[৩০] বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে আগুনের সাহায্যে পানি উত্তপ্ত করে বাষ্প তৈরি করা হয় যা টার্বাইন চালায়। এরপর টার্বাইন, একটি বৈদ্যুতিক জেনারেটরের ঘূর্ণনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এছাড়াও বাহ্যিক এবং অন্তর্দহন উভয় ইঞ্জিনেই আগুনের সাহায্যে সরাসরি যান্ত্রিক কাজ লাভ করা যায়।

আগুন জ্বলার পর দাহ্য পদার্থের অদহনযোগ্য কঠিন অবশেষের গলনাঙ্ক শিখা তাপমাত্রার নিচে থাকলে তাকে ক্লিঙ্কার বলা হয় , যাতে এটি শীতল হয়ে ঘনীভূত হয় এবং এই অবশেষকে ছাই বলা হয় যদি এর গলনাঙ্ক শিখা তাপমাত্রার উপরে থাকে।

সুরক্ষা এবং প্রতিরোধ

সম্পাদনা
 
২০০৪ সালে প্রতি ১০০,০০০ বাসিন্দার অগ্নিকাণ্ডের কারণে ডিসেবিলিটি-এডজাস্টেড লাইফ ইয়ার বা বিকলাঙ্গতা সমন্বিত জীবনকাল।[৩১]
  তথ্য নেই
  ৫০ এর কম
  ৫০–১০০
  ১০০–১৫০
  ১৫০–২০০
  ২০০–২৫০
  ২৫০–৩০০
  ৩০০–৩৫০
  ৩৫০–৪০০
  ৪০০–৪৫০
  ৪৫০–৫০০
  ৫০০–৬০০
  ৬০০ এর অধিক

বিশ্বব্যাপী দাবানল প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করা হয়, যেমন বন্যভূমির আগুন ব্যবহার বা নিয়ন্ত্রিত অগ্নিকাণ্ড।[৩২][৩৩] বন্যভূমির আগুন ব্যবহার অর্থ হলো প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট আগুন পর্যবেক্ষণ করা হয় কিন্তু পুড়তে দেওয়া হয়। নিয়ন্ত্রিত অগ্নিকাণ্ড হলো কম বিপজ্জনক আবহাওয়ায় সরকারী সংস্থা দ্বারা প্রজ্জ্বলিত আগুন।[৩৪]

অনিয়ন্ত্রিত আগুন নেভানোর জন্য অধিকাংশ উন্নত এলাকায় দমকল বাহিনী অগ্নিনির্বাপন সেবা প্রদান করে থাকে। প্রশিক্ষিত দমকল বাহিনীর কর্মীরা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা যেমন ফায়ার হাইড্রান্ট অথবা ফোম ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে।

অগ্নিনির্বাপন মূলত আগুন জ্বলনের উৎস হ্রাস করার উদ্দেশ্যে করা হয়। এছাড়াও কীভাবে আগুন এড়াতে হয় মানুষকে সে শিক্ষা দেওয়াও এর অন্তর্ভুক্ত।[৩৫] বিভিন্ন বিদ্যালয় এবং উঁচু ভবনে প্রায়ই ফায়ার ড্রিল পরিচালনা করে নাগরিকদের অগ্নিকাণ্ডের প্রতিক্রিয়া কেমন হওয়া উচিত সে শিক্ষা দেওয়া হয়। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ধ্বংসাত্মক আগুন জ্বালানো অধিকাংশ স্থানেই অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।[৩৬]

আদর্শ ভবনের নিয়মানুযায়ী আগুনের ক্ষতি কমাতে অগ্নি সুরক্ষা ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন। সক্রিয় অগ্নি সুরক্ষার সবচেয়ে সাধারণ রূপ হলো ফায়ার স্প্রিঙ্কলার। অধিকাংশ উন্নত দেশে ভবন, ভবনের উপাদান এবং আসবাবপত্রের অগ্নি প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং দাহ্যতা পরীক্ষা করা হয়। এছাড়াও যানবাহন এবং জাহাজে ব্যবহৃত প্লাস্টিক ও সজ্জা সামগ্রীও পরীক্ষা করা হয়।

অগ্নি সুরক্ষা ব্যবস্থা অগ্নি প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হলে, অগ্নি বীমা আর্থিক ক্ষতি কমাতে পারে।[৩৭]

২০০২ সালের জুলাই থেকে ২০১১ সালের জুলাই পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সনাক্তকৃত অগ্নিকাণ্ড।

পুনরূদ্ধার

সম্পাদনা
 
অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত রেঁস্তোরা।

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতির ধরনের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন পুনরূদ্ধার পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। আগুন ক্ষতির পর পুনর্বহাল সম্পত্তি ব্যবস্থাপক, ভবন রক্ষণাবেক্ষণ কর্মী অথবা বাড়ির মালিক নিজেই এ কাজ করতে পারেন; তবে, একজন পেশাদার বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ অগ্নি ক্ষতিগ্রস্ত সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের সবচেয়ে নিরাপদ উপায় হিসেবে বিবেচিত।[৩৮] তাদের অধিকাংশই ফায়ার এন্ড ওয়াটার রিস্টোরেশন নামে তালিকাভুক্ত এবং তারা দ্রুত মেরামতে সাহায্য করতে পারে, তা সে বাড়িই হোক বা বড় প্রতিষ্ঠান হোক।[৩৯] এই প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দিষ্ট এলাকার ভোক্তা বিষয়ক অধিদপ্তর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ক্যালিফোর্নিয়ায়, সকল ফায়ার অ্যান্ড ওয়াটার রিস্টোরেশন কোম্পানি ক্যালিফোর্নিয়া কন্ট্রাক্টর স্টেট লাইসেন্স বোর্ডের মাধ্যমে নিবন্ধিত।[৪০]

চিত্রশালা

সম্পাদনা

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. ধীর গতির জারণ প্রক্রিয়া যেমন মরিচা পড়া বা পরিপাক এই সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত নয়

উদ্ধৃতি

সম্পাদনা
  1. "Glossary of Wildland Fire Terminology" (পিডিএফ)। National Wildfire Coordinating Group। নভেম্বর ২০০৯। ২০০৮-০৮-২১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-১৮ 
  2. Schmidt-Rohr, K (২০১৫)। "Why Combustions Are Always Exothermic, Yielding About 418 kJ per Mole of O2"। J. Chem. Educ.92 (12): 2094–99। ডিওআই:10.1021/acs.jchemed.5b00333 বিবকোড:2015JChEd..92.2094S 
  3. Ph. D., Biomedical Sciences; B. A., Physics and Mathematics; Facebook, Facebook; Twitter, Twitter। "What State of Matter Is Fire or Flame?"ThoughtCo (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৬ 
  4. Lentile, et al., 319
  5. Morris, S. E.; Moses, T. A. (১৯৮৭)। "Forest Fire and the Natural Soil Erosion Regime in the Colorado Front Range"। Annals of the Association of American Geographers77 (2): 245–54। ডিওআই:10.1111/j.1467-8306.1987.tb00156.x 
  6. Adler, Jerry। "Why Fire Makes Us Human"Smithsonian Magazine (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২৬ 
  7. "Evidence that human ancestors used fire one million years ago"ScienceDaily (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২৬ 
  8. "Archaeologists Find Earliest Evidence of Humans Cooking With Fire"Discover Magazine (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২৬ 
  9. NASA Johnson (২৯ আগস্ট ২০০৮)। "Ask Astronaut Greg Chamitoff: Light a Match!"। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০২১ – ইউটিউব-এর মাধ্যমে। 
  10. Inglis-Arkell, Esther। "How does fire behave in zero gravity?" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০২-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২০ 
  11. "NASA Scientists Discover Spiral-shaped Flames"web.archive.org। ২০১০-০৩-১৯। ২০১০-০৩-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২১ 
  12. "USML-1 experiment results"web.archive.org। ২০০৭-০৯-১২। ২০০৭-০৯-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২১ 
  13. "LSP-1 results"web.archive.org। ২০০৭-০৩-১২। ২০০৭-০৩-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২১ 
  14. "Flame temperatures"www.derose.net। ২০১৪-০৪-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২২ 
  15. "Ecology: From Individuals to Ecosystems"Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-১২-১২। 
  16. Wellman, C H; Gray, J (২০০০-০৬-২৯)। "The microfossil record of early land plants."Philosophical Transactions of the Royal Society B: Biological Sciences355 (1398): 717–732। আইএসএসএন 0962-8436পিএমআইডি 10905606পিএমসি 1692785  
  17. Jones, Timothy P.; Chaloner, William G. (১৯৯১)। "Fossil charcoal, its recognition and palaeoatmospheric significance"Palaeogeography, Palaeoclimatology, Palaeoecology (ইংরেজি ভাষায়)। 97 (1-2): 39–50। ডিওআই:10.1016/0031-0182(91)90180-Y 
  18. Glasspool, I.J.; Edwards, D.; Axe, L. (২০০৪)। "Charcoal in the Silurian as evidence for the earliest wildfire"Geology (ইংরেজি ভাষায়)। 32 (5): 381। আইএসএসএন 0091-7613ডিওআই:10.1130/G20363.1 
  19. Scott, A. C.; Glasspool, I. J. (২০০৬-০৭-১৮)। "The diversification of Paleozoic fire systems and fluctuations in atmospheric oxygen concentration"Proceedings of the National Academy of Sciences (ইংরেজি ভাষায়)। 103 (29): 10861–10865। আইএসএসএন 0027-8424ডিওআই:10.1073/pnas.0604090103পিএমআইডি 16832054পিএমসি 1544139  [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  20. Bowman, D. M. J. S.; Balch, J. K.; Artaxo, P.; Bond, W. J.; Carlson, J. M.; Cochrane, M. A.; D'Antonio, C. M.; DeFries, R. S.; Doyle, J. C. (২০০৯-০৪-২৪)। "Fire in the Earth System"Science (ইংরেজি ভাষায়)। 324 (5926): 481–484। আইএসএসএন 0036-8075ডিওআই:10.1126/science.1163886 
  21. Retallack, Gregory J. (১৯৯৭)। "Neogene Expansion of the North American Prairie"PALAIOS12 (4): 380। ডিওআই:10.2307/3515337 
  22. Gowlett, John A.J.; Wrangham, Richard W. (২০১৩)। "Earliest fire in Africa: towards the convergence of archaeological evidence and the cooking hypothesis"Azania: Archaeological Research in Africa (ইংরেজি ভাষায়)। 48 (1): 5–30। আইএসএসএন 0067-270Xডিওআই:10.1080/0067270X.2012.756754 
  23. Kaplan, Matt। "Million-year-old ash hints at origins of cooking"Nature News (ইংরেজি ভাষায়)। ডিওআই:10.1038/nature.2012.10372 
  24. News, A. B. C.। "Were Early Humans Cooking Their Food a Million Years Ago?"ABC News (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২৩ 
  25. Berna, F.; Goldberg, P.; Horwitz, L. K.; Brink, J.; Holt, S.; Bamford, M.; Chazan, M. (২০১২-০৫-১৫)। "Microstratigraphic evidence of in situ fire in the Acheulean strata of Wonderwerk Cave, Northern Cape province, South Africa"Proceedings of the National Academy of Sciences (ইংরেজি ভাষায়)। 109 (20): E1215–E1220। আইএসএসএন 0027-8424ডিওআই:10.1073/pnas.1117620109পিএমআইডি 22474385পিএমসি 3356665  [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  26. "Farmers, Flames and Climate: Are We Entering an Age of 'Mega-Fires'?"State of the Planet (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১১-১১-১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২৩ 
  27. "BBC News | In Pictures"news.bbc.co.uk। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২৪ 
  28. "Dresden: The World War Two bombing 75 years on"BBC News (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০২-১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২৯ 
  29. "Napalm"www.globalsecurity.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২৩ 
  30. "IEA - 404 Not Found"web.archive.org। ২০১৫-০১-১৩। Archived from the original on ২০১৫-০১-১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২৪ 
  31. "WHO Disease and injury country estimates"World Health Organization। ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ নভে ১১, ২০০৯ 
  32. Federal Fire and Aviation Operations Action Plan, 4.
  33. GFMCadmin। "UK: The Role of Fire in the Ecology of Heathland in Southern Britain (IFFN No. 18) – GFMC" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২৪ 
  34. "SmokeyBear.com - Prescribed Fires"web.archive.org। ২০০৮-১০-২০। Archived from the original on ২০০৮-১০-২০। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২৪ 
  35. "Office of the Fire Commissioner | Safety Education | Fire & Life Safety Education | Nero & Ashcan"web.archive.org। ২০০৮-১২-০৬। ২০০৮-১২-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২৪ 
  36. Ward, Michael; Chiefs, International Association of Fire (২০০৫)। Fire Officer: Principles and Practice (ইংরেজি ভাষায়)। Jones & Bartlett Learning। আইএসবিএন 978-0-7637-2247-0 
  37. Hintzbergen, Jule (২০১৫)। Foundations of information security : based on ISO27001 and ISO27002। Kees Hintzbergen, Andre Smulders, Hans Baars (3rd ed সংস্করণ)। Amersfoort, Netherland: Van Haren Pub। আইএসবিএন 978-94-018-0541-4ওসিএলসি 1050133106 
  38. "USFA After a Fire: Salvage Hints"web.archive.org। ২০১১-০৮-২৭। Archived from the original on ২০১১-০৮-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২৫ 
  39. "Restoration With a Capital E-P-A: A Case Study"www.randrmagonline.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২৫ 
  40. "CSLB-Home -CSLB"www.cslb.ca.gov। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২৫ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা