হোমো ইরেক্টাস
হোমো ইরেক্টাস (ইংরেজি ভাষায়: Homo erectus, লাতিন ভাষায় যার অর্থ: "উন্নত মানব") হোমো গণের একটি অধুনাবিলুপ্ত প্রজাতি যা আর্কায়িক হোমো স্যাপিয়েন্স-এর পূর্বপুরুষ যে আর্কায়িকরা আবার আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষ।[১] খুব সম্ভবত আফ্রিকাতেই হোমো ইরেক্টাসদের উৎপত্তি ঘটেছিল, যদিও ইউরেশিয়াকে একেবারে বাতিল করে দেয়া যায় না। যেখানেই উদ্ভূত হোক না কেন আনুমানিক ১৭ লক্ষ বছর পূর্বে এই প্রজাতির সদস্যরা আফ্রিকার ক্রান্তীয় অঞ্চল, ইউরোপ, দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল। এ কারণে পৃথিবীর অনেক অঞ্চলে ইরেক্টদের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। কিছু স্থানে আবার সরাসরি ইরেক্টদের জীবাশ্ম পাওয়া না গেলেও তাদের ব্যবহার্য বিভিন্ন সামগ্রী যেমন, পশুর ভাঙা হাড় এবং পাথরের উপকরণ পাওয়া গেছে। হোমো ইরেক্টাস প্রজাতির সদস্যদেরকেই ইরেক্ট বলা হয়। তারা ছিল মাঝারি উচ্চতার মানুষ এবং দুই পায়ে সোজা হয়ে হাঁটতে পারতো। তাদের মস্তিষ্কের খুলিটি অবনত, কপাল একটু পেছনের দিকে হেলানো এবং নাক, চোয়াল ও তালু প্রশস্ত। আধুনিক মানুষের তুলনায় তাদের মস্তিষ্কের আয়তন কম কিন্তু দাঁতের দৈর্ঘ্য বেশি। ধারণা করা হয়, আনুমানিক ২ লক্ষ বছর পূর্বে বা আরও কিছুকাল পরে তারা বিলুপ্ত হয়ে হোমো স্যাপিয়েন্সদের জায়গা ছেড়ে দিয়েছে।[২]
হোমো ইরেক্টাস সময়গত পরিসীমা: ১.৯–০.১কোটি প্লায়োসিন–প্লাইস্টোসিন | |
---|---|
হোমো ইরেক্টাস, ন্যাচারাল হিস্টরি মিউজিয়াম, অ্যান আর্বার, মিশিগান | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | Mammalia |
বর্গ: | Primates |
পরিবার: | Hominidae |
গণ: | Homo |
প্রজাতি: | H. erectus |
দ্বিপদী নাম | |
†Homo erectus (Eugène Dubois, ১৮৯২) | |
প্রতিশব্দ | |
† পিথেকানথ্রোপাস ইরেক্টাস |
হোমো ইরেক্টাস এবং হোমো এরগ্যাস্টার (যার সদস্যদের এরগ্যাস্ট ডাকা হয়) প্রজাতি দুটোর মধ্যে নাম নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এরগ্যাস্ট এবং ইরেক্টদের বৈশিষ্ট্য অনেকটা একই রকম, পার্থক্য কেবল তাদের বাবস্থানে, এরগ্যাস্টদের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে আফ্রিকাতে যেখানে ইরেক্টদের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে এশিয়ায়। মানুষের প্রকৃত পূর্বপুরুষরা আফ্রিকাতেই বাস করতো এবং ইরেক্টরা তাদের পূর্বপুরুষ হোমো হ্যাবিলিস ও উত্তরপুরুষ হোমো স্যাপিয়েন্সদের তুলনায় কোন অংশেই বেশি ইরেক্ট (সোজা হয়ে দুই পায়ে হাঁটার ক্ষমতা) ছিল না বিধায় অনেকে এরগ্যাস্ট ও ইরেক্ট উভয়কে শুধু এরগ্যাস্ট নামে ডাকেন।[১] কেউ কেউ আবার উভয়কে কেবল ইরেক্ট নামেও ডাকেন।[৩] ইরেক্টাস যদি হ্যাবিলিসের সমসাময়িক হয় তাহলে এরগ্যাস্ট ইরেক্টদের বংশধর হতে পারে, আবার এরগ্যাস্ট ও ইরেক্ট একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকেও আলাদা আলাদা পথে বিবর্তিত হতে পারে।[৪]
জীবাশ্ম আবিষ্কারের ইতিহাস
সম্পাদনাএশিয়া
সম্পাদনাহোমো ইরেক্টাসের প্রথম জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৮৯১ ও ১৮৯২ সালে ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপে ফরাসি বংশোদ্ভূত ওলন্দাজ সামরিক শল্যচিকিৎসক ওজেন দুবোয়া কর্তৃক। দুবোয়া আসলে মানুষের পূর্বপুরুষদের জীবাশ্ম আবিষ্কারের নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়েই ইন্দোনেশিয়া গিয়েছিলেন। তার প্রথম আবিষ্কৃত জীবাশ্ম ছিল একটি খুলির ঊর্ধ্বাংশ (স্কাল-ক্যাপ), যা সোলো নদীর তীরে অবস্থিত ত্রিনিল নামক স্থানে পাওয়া যায়। এ কারণে জীবাশ্মটির নাম Trinil 2। এর কয়েক বছর পর একই জায়গা থেকে একটি ফিমার খুঁজে পান।[৫] খুলি ও ফিমার থেকে প্রমাণিত হয় যে, তারা দুই পায়ে হাঁটত। তবে প্রথমদিকে তিনি নিশ্চিত হতে পারেন নি এরা মানুষ কি-না, তাই নাম দিয়েছিলেন Pithecanthropus erectus অর্থাৎ "সোজা হয়ে হাঁটতে সক্ষম নরবানর"। এ নাম দেয়ার পেছনে মানুষের পূর্বপুরুষ বিষয়ে আর্নস্ট হেকেল'র অনুকল্প অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল। তবে আবিষ্কারের প্রথম বছরগুলোতে এ নিয়ে প্রচুর বিতর্ক ছিল এবং অনেকেই একে মানুষের পূর্বপুরুষ হিসেবে মেনে নেন নি।
কিছুকাল পর চীনের বেইজিং শহরের নিকটবর্তী চোকোদিয়ান (Zhoukoudian) নামক গুহা থেকে পাওয়া জীবাশ্ম পিথেকানথ্রোপাস বিষয়ক আলোচনাকে আবার উস্কে দেয়। ১৯২৭ সালে বেইজিং মেডিক্যাল কলেজের কানাডীয় বংশোদ্ভূত পরিচালক ডেভিডসন ব্ল্যাক উক্ত গুহায় পাওয়া কিছু দাঁতের সাথে মানুষের দাঁতের সাদৃশ্য লক্ষ্য করেন। তিনি এই নতুন প্রজাতির নাম দেন Sinanthropus pekinensis যার অর্থ "বেইজিং-এর চৈনিক মানব"। এরপর আরও জীবাশ্ম উদ্ধারের জন্য একটি বড়সড় অভিযান পরিচালিত হয় যার ফলাফলও অচিরেই পাওয়া যায়। অল্প সময়ের মাঝে সেখান থেকে ১৪টি আংশিক বা খণ্ডিত করোটিকা, ১৪টি ম্যান্ডিব্ল, ১০০-র বেশি দাঁত, এবং আরও অনেক খণ্ডাংশ আবিষ্কৃত হয়। ব্ল্যাক সিদ্ধান্ত টানেন, পিথেকানথ্রোপাস ও সিনানথ্রোপাস একই ধরনের প্রজাতি, উভয়েরই মাথার খুলি লম্বা, নিচু, ও পুরু হাড়বিশিষ্ট; এবং মস্তিষ্কের আকার মানুষ ও প্রাচীন নরবানরদের মাঝামাঝি। ১৯৩৪ সালে বেশ অল্প বয়সে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ব্ল্যাক মারা যাওয়ার পর তার কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন জার্মান শারীরস্থানবিদ ফ্রানৎস ভাইডেন্রাইশ।
দুঃখজনকভাবে চিন-জাপান যুদ্ধের (১৯৩৭-৪৫) সময় এই সবগুলো জীবাশ্মই হারিয়ে যায়। অনেকগুলোর নকল অবশ্য এখনও সংরক্ষিত আছে।[৫] তবে পরবর্তীতে চোকোদিয়ান এবং চীনের আরও চারটি স্থানে ইরেক্টাসদের নতুন জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়েছে। নতুন স্থানগুলো হচ্ছে, লানতিয়েন'র Gongwangling ও Chenjiawo, নানজিং'র নিকটবর্তী Hulu গুহা এবং আন্হুই প্রদেশের Hexian (He County)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যখন শেষ হয় ততদিনে সবাই ধরে নিয়েছিলেন যে, হোমো ইরেক্টাস কেবল এশিয়ার একটি প্রাচীন প্রজাতি। কিন্তু পরবর্তী আবিষ্কার থেকে প্রমাণিত হয় যে, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপেও হোমো ইরেক্টাস ছিল।
এ সময় জাভাতেও আরেক জার্মান শারীরস্থানবিদ গুস্তাফ হাইন্রিশ রাল্ফ ফন কোনিগ্স্ভাল্ড'র নেতৃত্বে খননকাজ চলতে থাকে। এখানে পিথেকানথ্রোপাসদের আরও অনেক জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয় যার মাঝে উল্লেখযোগ্য ছিল ১৯৩৬ সালে Mojokerto সাইট থেকে পাওয়া একটি শিশুর প্রায় পূর্ণাঙ্ক করোটিকা। তবে এর অধিকাংশই স্থানীয় কৃষকরা খুঁজে পান এবং জীবাশ্মগুলো ভূতাত্ত্বিক স্তরের ঠিক কোনটিতে ছিল তা নিশ্চিতভাবে জানা যায় না। এ কারণে এদের সঠিক বয়স নির্ণয় বেশ দুরুহ হয়ে পড়ে। ১৯৫১ সালে চীনের সিনানথ্রোপাস এবং ইন্দোনেশিয়ার পিথেকানথ্রোপাসকে একই প্রজাতির সদস্য বলে আখ্যায়িত করা হয়। নতুন এই প্রজাতিরই নাম হয় হোমো ইরেক্টাস, জীবাশ্ম থেকে প্রমাণিত হয় যে, তারা পৃথিবীর অনেক স্থানেই ছড়িয়ে পড়েছিল।
১৯৫০'র দশকের পর পূর্ব এশিয়ার অভিযান থেমে থাকে নি। ১৯৬৯ সালে জাভা দ্বীপে Sangiran অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ করোটিকা (Sangiran 17) এবং ১৯৭০'র দশকে আরেকটি মুখমণ্ডল ও করোটিকা (Sangiran 27, 31) আবিষ্কৃত হয়।
আফ্রিকা
সম্পাদনা১৯৫০'র দশকের পর নানা স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে হোমো ইরেক্টাসের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। এর মধ্যে প্রথমে আলজেরিয়ার তিগেনিফ (Ternifine) নামক স্থানে তিনটি চোয়াল, একটি করোটিকার হাড়, ও কিছু দাঁত পাওয়া যায়। ১৯৫০'র দশকের মাঝামাঝি সময়ে পাওয়া এই জীবাশ্মগুলোর বয়স ৬ থেকে ৭ লক্ষ বছরের মাঝামাঝি। এরপর উত্তর আফ্রিকাতে আরও জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়। যেমন, আলজেরিয়ার আবিষ্কারের পরপরই মরক্কোর সিদি আব্দুর রহমান নামক স্থানে পাওয়া একটি চোয়াল, এবং পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে একই দেশের সালে-তে পাওয়া কিছু করোটিকার হাড়ের খণ্ডাংশ।
পূর্ব আফ্রিকাও হোমো ইরেক্টাসের বাসস্থান হিসেবে প্রমাণিত হয়। তানজানিয়ার ওলদুভাই গিরিসঙ্কটে ১৯৬০ সালে লুইস লিকি একটি বেশ আকর্ষণীয় জীবাশ্ম পান। OH 9 নামক এই পূর্ণাঙ্গ করোটিকার বয়স প্রথমে ১২ লক্ষ বছর নির্ণয় করা হয়েছিল যদিও তা আরেকটু কম হতে পারে। এই স্থান থেকে পরবর্তীতে আরও অনেক জীবাশ্মের খণ্ডাংশ আবিষ্কৃত হয়েছে। তবে কেনিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে টুরকানা হ্রদের পূর্ব উপকূলে লুই লিকি'র ছেলে রিচার্ড লিকি'র খননকাজ পূর্ব আফ্রিকার হোমো ইরেক্টাসদের সম্পর্কে আমাদের সবচেয়ে বেশি তথ্য দিয়েছে। বর্তমানে টুরকানা হ্রদের তীরবর্তী এই স্থানগুলোকে "কুবি ফোরা" (Koobi Fora) নামে চিহ্নিত করা হয়। এই স্থানের জীবাশ্মগুলোর আনুমানিক বয়স ১৭ লক্ষ বছর যা হোমো ইরেক্টাসদের জন্য অনেক বেশি। এদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জীবাশ্মের মধ্যে আছে KNM-ER 3733 নামাঙ্কিত একটি করোটিকা যার বয়স ১৭.৫ লক্ষ বছর। এই জীবাশ্মগুলোকেই অনেকে হোমো এরগ্যাস্টার নামে আখ্যায়িত করেন যদিও ইরেক্টাসদের সাথে তাদের পার্থক্য নেই বললেই চলে।
কুবি ফোরা'র সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী জীবাশ্ম ছিল একটি প্রায় পূর্ণাঙ্গ কঙ্কাল, যে হাড়গুলো পাওয়া যায় নি সেগুলোও প্রাপ্ত হাড়গুলোর অনুকরণে তৈরি করা হয়েছে। KNM-WT 15000 নামাঙ্কিত এই জীবাশ্মের জনপ্রিয় নাম "টুরকানা বালক"। টুরকানা হ্রদের উত্তর-পশ্চিম উপকূলবর্তী Nariokotome নামক স্থান থেকে এটি পাওয়া গেছে। হোমো ইরেক্টাসদের বৃদ্ধি ও শারীরিক গঠন সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জানা গেছে এই জীবাশ্মের মাধ্যমেই। এছাড়া KNM-ER 1808 এর কঙ্কালও প্রায় পূর্ণাঙ্গ যদিও এই ব্যক্তি জীবিত অবস্থায় খুব অসুস্থ ছিল বলে ধারণা করা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার Swartkrans নামক স্থানে পাওয়া জীবাশ্মগুলোকে প্রথমে Telanthropus capensis প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত করা হলেও বর্তমানে এদেরকে হোমো ইরেক্টাসই বিবেচনা করা হয়।[৬]
ইউরোপ
সম্পাদনাআফ্রিকা ও এশিয়াতে ইরেক্টদের উপস্থিতি নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু ইউরোপের চিত্র একটু ঘোলাটে। ইউরোপে পাওয়া সবচেয়ে প্রাচীন হোমিনিন জীবাশ্মটি হচ্ছে একটি বিচ্ছিন্ন ম্যান্ডিব্ল তথা নিম্ন চোয়াল যাতে দাঁতও ছিল। জার্মানির হাইডেলবার্গের নিকটস্থ মাউয়ার নামক স্থানের এক বালুকূপে (sandpit) ১৯০৭ সালে এটি পাওয়া গিয়েছিল। হাইডেলবার্গ চোয়াল নামে পরিচিত ৫ লক্ষ বয়সী এই জীবাশ্মকে কোন প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত করতে বিজ্ঞানীদের বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়েছে কারণ এর সাথে কোন করোটিকা পাওয়া যায় নি। সমকালীনতার বিচারে এটা চৈনিক চোকোদিয়ান জীবাশ্মের সমকক্ষ হলেও দৈহিক বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে অপেক্ষাকৃত আধুনিক। এজন্য অনেকে একে হোমো ইরেক্টাস প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত করলেও অনেকে আবার এর জন্য হোমো হাইডেলবার্গেনসিস নামে একটি আলাদা প্রজাতি তৈরির কথা বলেন। ইংল্যান্ডের ওয়েস্ট সাসেক্স'র বক্সগ্রোভে পাওয়া একটি টিবিয়া-কেও (পায়ের নিম্নাঞ্চলের হাড়) হাইডেলবার্গেনসিস প্রজাতির বলে ধরে নেন অনেকে।
ইউরোপে ইরেক্টদের উপস্থিতির নিশ্চিত প্রমাণ এসেছে ইতালি'র সেপ্রানো (Ceprano) থেকে। ১৯৯৪ সালে এখান থেকে মুখবিহীন একটি খুলি আবিষ্কৃত হয়। এর আশেপাশে কোন আগ্নেয় পদার্থ না থাকায় বয়স ঠিকভাবে জানা না গেলেও অনুমান করা হয় এটি হাইডেলবার্গ চোয়ালের চেয়ে পুরনো। এর বৈশিষ্ট্যও ইরেক্টদের কাছাকাছি- ভারিক্কি ভুরুদাঁড়া (brow ridge), নিচু খুলির টুপি ও করোটিকার পুরু হাড় ইরেক্ট'রই পরিচায়ক। এছাড়া জর্জিয়ার দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলের Dmanisi তে ১৯৯১ সালে সবগুলো দাঁতসহ একটি চোয়াল আবিষ্কৃত হয়েছে যা বেশ আকর্ষণীয়। একইসাথে পাওয়া পশুর হাড় ও অস্ত্র থেকে অনুমান করা হয় এরা ইরেক্ট, এদের বয়সও (১৭ লক্ষ বছর) মাউয়ার বা সেপ্রানো জীবাশ্মের চেয়ে বেশি। এদের সাথে কেনিয়ার কুবি ফোরায় পাওয়া জীবাশ্মের সাদৃশ্য থেকে অনুমান করা হয় এরা আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে প্রথম ইউরোপে প্রবেশকারী গোষ্ঠীর সদস্য। কারণ জর্জিয়ার অবস্থান ইউরোপের একেবারে প্রবেশমুখে। তবে বয়সের দিক দিয়ে আফ্রিকার জীবাশ্মের এত সমসাময়িক হওয়ায় ঠিক কখন ইরেক্টরা আফ্রিকা থেকে বেরিয়েছিল তা নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম হয়েছে।[৫]
জীবাশ্ম তালিকা
সম্পাদনাহোমো ইরেক্টাস প্রজাতির যে জীবাশ্মগুলো এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ, গুরুত্বপূর্ণ ও কম বিতর্কিত গুলো এখানে উল্লেখ করা হল:[৫][৬][৭]
নাম | বয়স লক্ষ বছর |
বর্ণনা | আবিষ্কার | স্থান | দেশ | আবিষ্কারক | মন্তব্য |
---|---|---|---|---|---|---|---|
Buia UA 31 | ১০ | Buia | ইরিত্রিয়া | ||||
Chenjiawo | ৬.৫-৫ | ম্যান্ডিব্ল | ১৯৬৩ | Yehu, Lantian | চীন | চোকোদিয়ানের পরই সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ ম্যান্ডিব্ল[৮] | |
D2700 | ১৮ | খুলি | ২০০১ | Dmanisi | জর্জিয়া | ||
D2282 | ১৭.৭ | খুলি | ১৯৯৯ | Dmanisi | জর্জিয়া | Leo Gabunia | |
D3444 | ১৭.৭ | খুলি | Dmanisi | জর্জিয়া | বৃদ্ধ, সেবা পেয়েছিল | ||
Daka BOU-VP-2/66 | ১০ | ১৯৯৭ | Middle Awash | ইথিওপিয়া | W. Henry Gilbert | ||
Gongwangling | ১১.৫-৭.৫ | ম্যাক্সিলারি মোলার, করোটিকার খণ্ডাংশ | ১৯৬৪ | Gongwang, Lantian | চীন | Wu, Woo | সূত্র:[৯] |
Hexian | ৪-৩ | খুলি | ১৯৮০ | Longtandau গুহা, Anhui | চীন | ||
KNM-ER 1481 | ১৮.৯ | ফিমার | ১৯৭২ | Koobi Fora | কেনিয়া | John M. Harris | দ্রুতগতিতে দৌঁড়ের প্রমাণ |
KNM-ER 3228 | ১৯.৫ | শ্রোণী অস্থি | ১৯৮৪ | Koobi Fora | কেনিয়া | M. D. Rose | দুই পায়ে হাঁটার প্রমাণ |
KNM-ER 3733 | ১৮ | খুলি | ১৯৭৫ | Koobi Fora | কেনিয়া | Bernard Ngeneo | সবচেয়ে সুসংরক্ষিত মানব ফসিলের একটি |
KNM-ER 3883 | ১৬ | খুলি | ১৯৭৬ | Koobi Fora | কেনিয়া | রিচার্ড লিকি | |
KNM-ER 42700 | ১৫.৫ | করোটিকা | ২০০০ | Koobi Fora | কেনিয়া | মিভ লিকি | মস্তিষ্কের আকার প্রায় হ্যাবিলিসের সমান |
KNM-OG 45500 | ৯ | ভুরুর হাড় | ২০০৩ | Olorgesailie | কেনিয়া | Richard Potts | ৬২ বছর সন্ধানের ফল |
KNM-WT 15000 | ১৬ | ৯০% পূর্ণাঙ্গ কঙ্কাল | ১৯৮৪ | Nariokotome, West Turkana | কেনিয়া | Kamoya Kimeu | টুরকানা বালক, ইরেক্টাস সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জানিয়েছে |
Mojokerto | ১৮-১৬ | মস্তিষ্কের খাপ | ১৯৩৬ | Mojokerto, Java | ইন্দোনেশিয়া | শ্রমিক | ২-৪ বছর বয়সী শিশু |
Nanjing 1 | ৬.২-৫.৮ | করোটিকার খণ্ডাংশ | ১৯৯৩ | Hulu Cave, Tangshan, Nanjing | চীন | কুবি ফোরা, সাংগিরান ও হেজিয়ান ফসিলের মত[১০] | |
Narmada | ৩ | নর্মদা | ভারত | ||||
Ngandong 7 | ২.৫-০.৭০ | মস্তিষ্কের খাপ | Solo River, Java | ইন্দোনেশিয়া | C. ter Haar এবং G. H. R. von Koenigswald | ||
Ngandong 13 | ২.৫-০.৭০ | মস্তিষ্কের খাপ | Solo River, Java | ইন্দোনেশিয়া | C. ter Haar এবং G. H. R. von Koenigswald | ||
Ngandong 13 | ২.৫-০.৭০ | Solo River, Java | ইন্দোনেশিয়া | C. ter Haar এবং G. H. R. von Koenigswald | |||
OH 9 | ১৪ | খুলি | ১৯৬০ | Olduvai Gorge | তানজানিয়া | Louis Leakey | আফ্রিকায় পাওয়া প্রথম ইরেক্টাসের অন্যতম, ১০০০ সিসি |
Salé | ২.৫-২ | ১৯৭১ | Salé | মরক্কো | শ্রমিক | ||
Sangiran 2 | ১০ | খুলি | ১৯৩৭ | Sangiran, Java | ইন্দোনেশিয়া | G. H. R. von Koenigswald | |
Sangiran 17 | ১৩-১০ | খুলি | ১৯৬৯ | Sangiran, Java | ইন্দোনেশিয়া | Towikromo | পূর্ব এশিয়ায় পাওয়া পূর্ণাঙ্গতম খুলি |
Trinil 2 | ১০-৭ | খুলির টুপি | ১৮৯১ | Trinil, Java | ইন্দোনেশিয়া | ওজেন দুবোয়া | প্রথম আবিষ্কার |
Zhoukoudian | ৭.৮-৪ | খুলি | Zhoukoudian | চীন | দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হারিয়ে যায় | ||
Zhoukoudian III | ৭.৮-৪ | Zhoukoudian | চীন |
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ রিচার্ড ডকিন্স, "The Ancestor's Tale", Weidenfeld & Nicolson, পৃ. ৫৯
- ↑ Homo erectus, এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা: "The braincase was low, the forehead was receded, and the nose, jaws, and palate were wide. The brain was smaller and the teeth larger than in modern humans. H. erectus seems to have flourished until some 200,000 years ago (200 kya) or perhaps later before giving way to other humans including Homo sapiens."
- ↑ Homo erectus, Smithsonian National Museum of Natural History
- ↑ F. Spoor, M. G. Leakey, P. N. Gathogo, F. H. Brown, S. C. Antón, I. McDougall, C. Kiarie, F. K. Manthi & L. N. Leakey (৯ আগস্ট ২০০৭)। "Implications of new early Homo fossils from Ileret, east of Lake Turkana, Kenya"। Nature। 448 (7154): 688–691। ডিওআই:10.1038/nature05986। পিএমআইডি 17687323।
- ↑ ক খ গ ঘ Homo erectus, Encyclopedia Britannica, ১৪ আগস্ট, ২০১৩ তারিখে সংগৃহীত
- ↑ ক খ Roger Lewin, The changing position of Homo erectus, Human Evolution- an illustrated introduction, p. 159-161
- ↑ List of homo erectus fossils, Human origins, Smithsonian National Museum of Natural History
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৪ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ আগস্ট ২০১৩।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৪ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ আগস্ট ২০১৩।
- ↑ Wu X, Holloway RL, Schepartz LA, Xing S.; A new brain endocast of Homo erectus from Hulu Cave, Nanjing, China; Am J Phys Anthropol. 2011 Jul;145(3):452-60.