অন্তর্দহন ইঞ্জিন

যে ইঞ্জিনে জারক ইন্ধনে জ্বালানির দহন ঘটে একটি দহন প্রকোষ্ঠে

অন্তর্দহন ইঞ্জিন (ইংরেজি: Internal Combustion engines) হল এমন এক ধরনের ইঞ্জিন যাতে কোন দহন প্রকোষ্ঠে কোন দহনকারকের (সাধারণত বাতাস) উপস্থিতিতে জ্বালানির (সাধারণত জীবাশ্ম জ্বালানি) দহন সংঘটিত হয় । অন্তর্দহন ইঞ্জিনে দহনের মাধ্যমে সৃষ্ট উচ্চ তাপমাত্রাচাপে গ্যাসের প্রসারণের মাধ্যমে ইঞ্জিনের ঘূর্ণনশীল অংশগুলোতে শক্তি সরবরাহ করা হয়, যেমন পিস্টন অথবা টার্বাইনের পাখায় এবং এদের সরণ ঘটিয়ে যান্ত্রিক কাজ উৎপন্ন করা হয়।[১][২][৩]

একটি ৪-স্ট্রোক ইঞ্জিনের চক্র

অন্তর্দহন ইঞ্জিন বলতে সাধারণত এমন সব ইঞ্জিনকেই বোঝানো হয় যাদের দহন বিক্রিয়া ঘটে ইঞ্জিনের মধ্যে অবস্থিত একটি আবদ্ধ প্রকোষ্ঠে, যেমন সুপরিচিত চতুর্ঘাত এবং দ্বিঘাত ইঞ্জিনে এবং তাদের বিভিন্ন প্রকারভেদে, ওয়াংকেল ঘূর্ণন ইঞ্জিনে। অন্তর্দহন ইঞ্জিনের দ্বিতীয় একটি শ্রেণীতে নিয়মিত দহন ঘটে: গ্যাস টার্বাইন, জেট ইঞ্জিন এবং বেশিরভাগ রকেট ইঞ্জিন এই ধরনের অন্তর্দহন ইঞ্জিন।[১][২][৪]

অন্তর্দহন ইঞ্জিন (অথবা আইসি ইঞ্জিন বা আইসিই) বহির্দহন ইঞ্জিন হতে বেশ ভিন্ন, যেমন বাষ্প ইঞ্জিন বা স্টার্লিং ইঞ্জিন, যেখানে কার্যকারী ফ্লুইডে শক্তি সরবরাহ করা হয় যাতে দহনজাত পদার্থসমূহ উপস্থিত বা মিশ্রিত থাকতে পারে বা নাও পারে। কার্যকারী পদার্থ হতে পারে বাতাস, উত্তপ্ত পানি, চাপযুক্ত পানি অথবা তরল সোডিয়াম, যা কোন বয়লারে উত্তপ্ত করা হয়েছে।

এ পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের অন্তর্দহন ইঞ্জিনের পরিকল্পনা করা হয়েছে এবং তৈরিও করা হয়েছে, যাদের প্রত্যেকটিরই কোন সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা আছে। শক্তি সরবরাহকারী জ্বালানির সাহায্যে (সাধারণত পেট্রোল বা ডিজেল, জীবাশ্ম জ্বালানি হতে প্রাপ্ত) অন্তর্দহন ইঞ্জিন চালানো হয় এবং এর ওজন ও সরবরাহকৃত শক্তির অণুপাত চমৎকার। অন্তর্দহন ইঞ্জিনের মৌলিক ব্যবহার হয় বিভিন্ন যানবাহনে এবং গাড়ি, উড়োজাহাজ, যান্ত্রিক নৌকো থেকে শুরু করে জাহাজ - সর্বত্রই অন্তর্দহন ইঞ্জিনের ব্যবহার হয়ে থাকে।

একটি অন্তর্দহন ইঞ্জিনের ব্যবচ্ছেদ।

প্রয়োগসম্পাদনা

অন্তর্দহন ইঞ্জিনের সর্বাধিক ব্যবহার হয় যানবাহনের এবং বহনযোগ্য যন্ত্রপাতির ভ্রাম্যমাণ শক্তি সূত্র হিসেবে। ভ্রাম্যমাণ যন্ত্রপাতিতে অন্তর্দহন ইঞ্জিন ব্যবহৃত করার কারণ হল এর উচ্চ শক্তি-বনাম-ওজন অণুপাতের কারণে। জীবাশ্ম জ্বালানি (মূলত পেট্রোলিয়াম) অন্তর্দহন ইঞ্জিনে শক্তির যোগানদার এবং প্রায় সব ধরনের যানবাহন; যেমন বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল, নৌকো এবং হরেক রকমের এয়ারক্রাফট ও রেলওয়ে ইঞ্জিনে ব্যবহৃত হয়।

যখন নিম্ন শক্তি-বনাম-ওজন অণুপাতের দরকার পরে, অন্তর্দহন ইঞ্জিনের গ্যাস টার্বাইন রূপে ব্যবহৃত হয়। এর ব্যবহারের মধ্যে রয়েছে জেট এয়ারক্রাফট, হেলিকপ্টার, বৃহদাকৃতির জাহাজ এবং ইলেকট্রিক জেনারেটরে।

প্রকারভেদসম্পাদনা

এক সময় ইঞ্জিন শব্দটি (ল্যাটিন থেকে, প্রাচীন ফরাসির মধ্য দিয়ে আগত, "সক্ষমতা") বোঝাত যে কোন ধরনের যন্ত্রপাতিকে—যা আজও বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, যেমন সিজ ইঞ্জিনমোটর হল (ল্যাটিন শব্দ মোটর থেকে, "সরিয়ে দেয় এমন") এমন যন্ত্র যা যান্ত্রিক শক্তি তৈরি করে। প্রথাগতভাবে ইলেকট্রিক মোটরকে ইঞ্জিন বলা হয় না, তবে দহনকারক ইঞ্জিনকে প্রায়ই মোটর অভিহিত করা হয়ে থাকে। (ইলেকট্রিক ইঞ্জিন বোঝায় এমন ধরনের ইঞ্জিনকে যা ইলেকট্রিসিটিতে চলে।)

ইঞ্জিনকে বিভিন্ন উপায়ে শ্রেণীবিভক্ত করা সম্ভব: ইঞ্জিনে ব্যবহৃত চক্রের মাধ্যমে, ইঞ্জিনের গঠনের মাধ্যমে, শক্তির উৎসের মাধ্যমে, অথবা ব্যবহৃত শীতলকারক পদ্ধতির ভিত্তিতে।

কার্যপ্রণালীর নীতিসম্পাদনা

রিসিপ্রোকেটিং বা সরলরেখায় চলমান:

রোটারি বা ঘূর্ণায়মান:

নিরবচ্ছিন্ন দহন:
ব্রেটন চক্র:

ইতিহাসসম্পাদনা

ইঞ্জিনের বৈশিষ্ট্যসম্পাদনা

ইঞ্জিনকে তাদের বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে ভাগ করা চলে।

চতুর্ঘাত ইঞ্জিনের বৈশিষ্ট্যসম্পাদনা

কার্যপ্রণালীসম্পাদনা

 
চতুর্ঘাত চক্র (বা অটো চক্র)
1. গ্রহণ
2. সংকোচন
3. শক্তি
4. নিঃসরণ

নামগুলো দেখেই বুঝতে পারা যাচ্ছে যে চতুর্ঘাত অন্তর্দহন ইঞ্জিনের চারটি মৌলিক ধাপ রয়েছে যা ইঞ্জিনের প্রতি দু'টি ঘূর্ণন পর পর পুনরাবৃত্ত হয়:

  1. গ্রহণ
    • দহনযোগ্য মিশ্রণ দহন প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করে
  2. সংকোচন
    • মিশ্রণটিকে চাপ প্রয়োগে সংকুচিত করা হয়
  3. শক্তি
    • মিশ্রণটিকে পোড়ানো হয়, যার মাধ্যমে উত্তপ্ত মিশ্রণটি প্রসারিত হয়, যা ইঞ্জিনের নড়াচড়া করা অংশগুলোর সরণের মাধ্যমে ইঞ্জিনের কাজ সম্পন্ন হয়।
  4. নিঃসরণ
    • শীতল দহন উৎপাদসমূহ পরিবেশে নিঃসরণ করা হয়

কিছু কিছু ইঞ্জিনে কোন কোন ধাপ একই সাথে সম্পন্ন হয়; জেট ইঞ্জিনে সবগুলো ধাপই একত্রে ইঞ্জিনের বিভিন্ন অংশে সম্পন্ন হয়।

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. Encyclopedia Britannica: Internal Combustion engines
  2. Answers.com Internal combustion engine
  3. http://www.infoplease.com/ce6/sci/A0825332.html
  4. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; r3 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি

উচ্চতর পঠনসম্পাদনা

বহিঃসংযোগসম্পাদনা