হরিপুর জমিদার বাড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলাস্থ  হরিপুর ইউনিয়নে অবস্থিত।[১] ১৮শ শতাব্দীতে প্রাসাদটি জমিদার কৃষ্ণপ্রসাদ রায় চৌধুরী এবং হরিপ্রসাদ রায় চৌধুরী (১৮৭০-১৯৩৬) কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল।[২]

হরিপুর জমিদার বাড়ি
স্থানীয় নাম
হরিপুর বড়বাড়ি
হরিপুর জমিদার বাড়ি
ধরনপ্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন
অবস্থাননাসিরনগর উপজেলা
অঞ্চলব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা
পরিচালকবর্গবাংলাদেশ সরকার
মালিকবাংলাদেশ সরকার

অবস্থান সম্পাদনা

হরিপুর বড়বাড়ি তিতাস নদীর পূর্ব পারে অবস্থিত। বাড়িটি 'হরিপুর জমিদারবাড়ি' বা 'হরিপুর রাজবাড়ি' নামেও পরিচিত। এটি গ্রামের পশ্চিম পার্শে এবং নাসিরনগর সদর হতে ১৫কিমি দক্ষিণপূর্বে তথা নাসিরনগর উপজেলামাধবপুর উপজেলার সংযোগ পথে অবস্থিত। বিশেষত, বর্ষা মউসুমে যখন পানিতে চারদিক ভরে উঠে তখন এর সৌন্দর্য অনেকাংশে বেড়ে যায়। প্রাসাদটির ভৌগোলিক অবস্থান ২৪° ৬'২৯.৪১"উঃ, ৯১°১৫'২৬.৩৪"পূঃ।

নির্মাণশৈলী সম্পাদনা

হরিপুর বড়বাড়ি একটি দুই গম্বুজ এবং ত্রিতল বিশিষ্ট বাড়ি। বারিটির আয়তন এবং আড়ম্বরপূর্ণ স্থাপত্য ঐতিহাসিক যুগের শৈল্পিক নৈপুণ্যের স্বক্ষর বহন করে। প্রাসাদটি প্রায় ৫ একর জমির উপর নির্মিত যাতে ৬০টি কক্ষে নাট্যশালা, দরবার হল, গুদাম, গোশালা, রন্ধনশালা, প্রমোদের কক্ষ, খেলার মাঠ, মঠ, মন্দির, মল পুকুর ইত্যাদি বিদ্যমান। দ্বিতলে আরোহণের জন্য ছয়টি সিঁড়ী এবং ত্রিতলে আরোহণের জন্য দুইটি সিঁড়ী রয়েছে। এর উত্তরপশ্চিম পার্শ্বে ছয়টি শয়ন কক্ষ, চারটি পূর্ব পার্শ্বে এবং চারটি রয়েছে পুকুরের পশ্চিম পার্শ্বে। বাড়িটির পশ্চিম পার্শ্বে সান বাঁধানো ঘাট রয়েছে যা নদীতে গিয়ে নেমেছে এবং এর উভয় পার্শ্বে মঠদ্বয় সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে তার একটি উত্তর পার্শ্ব কৃষ্ণপ্রসাদ রায় চৌধুরী ও অপরটি দক্ষিণ পার্শ্বে গৌরীপ্রসাদ রায় চৌধুরীর।[১] এ অঞ্চলের জনপদ যাতায়তের সুবিধা তথা আরামদায়ক ভ্রমনের জন্য নদীপথ ব্যবহার করতো, হয়তো তাই মূল ফটক হিসাবে আকর্ষণী ঘাটটি নির্মিত হয়েছিল।

গ্যালারী সম্পাদনা

ইতিহাস সম্পাদনা

হরিপুরের জমিদারগণ ত্রিপুরার প্রভাবশালী জমিদারগণের উত্তরসুরি  ছিলেন। প্রবীণদের নিকট থেকে জনশ্রুতি আছে সুনামগঞ্জ, ছাতকদোয়ারাবাজার এবং  আজমিরীগঞ্জের জনপদ কর প্রদান করতো। নাসিরনগর উপজেলাস্থ গুণীয়াউকের[৩] জমিদারগণের সহিত তাদের সুসম্পর্ক ছিল। দেশবিভাজনের পর ১৯৪৭ সালে প্রাসাদ ছেড়ে কলকাতায় চলে যান। ঐতিহাসিক নৌকা বাইচ মুলতঃ এখান থেকেই শুরু হয়।[৪] প্রাসাদের অনেক স্থানে ক্ষয় হয়ে গেলেও দ্বিতলের পাশা খেলার ঘরটি আজও রয়ে গেছে যাতে জমিদার সখ্যগণের সাথে খেলতেন। বাইজীরা প্রতি রাতেই জমিদারগনের আমোদ-প্রমোদের উদ্দেশ্যে নৃত্য পরিবেশন করতো।

উত্তরসূরীদের কিয়দাংশ নীচতলায় বাস করত এবং উপাসনা করত। বর্তমানে এটির সংস্করণ এর কাজ চলছে। হরিপুর বড়বাড়িটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর দ্বারা সংরক্ষিত।

শুটিং স্পট সম্পাদনা

এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চলচ্চিত্র প্রযোজকগনের দৃষ্টি আকর্ষণ করায় হরিপুর বড়বাড়িতে অনেক ছবি নির্মিত হয়েছে।[৪]

নাম শ্রেণী সন প্রযোজক
মধু মালতি পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা চলচ্চিত্র ১৯৯৯ নারায়ণ চন্দ্র ঘোষ, ভারতীয়
নাইওরী বাংলা টেলিফিল্ম ২০০১ শাকুর মাজিদ,বাংলাদেশ
দ্য লাস্ট ঠাকুর পূর্ণদৈর্ঘ্য ব্রিটিশ-বাংলাদেশি চলচ্চিত্র ২০০৮ আতিফ গণি, ব্রিটেন
ঘেটুপুত্র কমলা বাংলা টেলিফিল্ম (হুমায়ূন আহমেদ রচিত) ২০১২ ফরিদুর রেজা সাগর,বাংলাদেশ

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "ধ্বংসের মুখে ১৭৫ বছরের প্রাচীন হরিপুর বড় বাড়ি"ittefaq.com.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১১-০৫ 
  2. "Nasirnagar Upazilla"brahmanbaria.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১১-০৫ 
  3. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১০ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ নভেম্বর ২০১৬ 
  4. "ধ্বংসের মুখে হরিপুর বড়বাড়ি"dainikamadershomoy.com। ২০১৬-১১-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১১-০৫