লাইলাতুল মেরাজ

কুরআনে বর্ণিত নবি মুহাম্মদ কর্তৃক এক রাত্রে মক্কা থেকে জেরুজালেম, এবং সেখান থেকে আসমানে ভ্রমণের
(মেরাজ থেকে পুনর্নির্দেশিত)

ইসলাম ধর্মমতে লাইলাতুল মেরাজ বা মেরাজের রাত (যা সচরাচর শবেমেরাজ নামে অধিকতর পরিচিত) হচ্ছে যে রাতে ইসলামের নবি মুহাম্মদ (সা:) ঐশ্বরিক উপায়ে ঊর্ধ্বাকাশে আরোহণ করেছিলেন এবং স্রষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। অনেক মুসলমান এবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে এই রাতটি উদ্‌যাপন করেন। আবার অনেক মুসলমান এই রাত উদ্‌যাপন করেন না বরং এই রাত উদ্‌যাপন করাকে বিদআত বলেন।[১] ইসলামে মেরাজের বিশেষ গুরুত্ব আছে, কেননা এই মেরাজের মাধ্যমেই ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের দ্বিতীয় স্তম্ভ অর্থাৎ নামাজ, মুসলমানদের জন্য অত্যাবশ্যক (ফরজ) করা হয় এবং এই রাতেই দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কায়েম করার বিধি মুসলমানদের জন্য নিয়ে আসেন নবি মুহাম্মদ (সা:)।

ইসলামের ইতিহাস-অনুযায়ী মুহাম্মাদের (সা:) নবুওয়াতের দশম বৎসরে (৬২১ খ্রিষ্টাব্দ) রজব মাসের ২৬ তারিখের দিবাগত রাতে ইসলামের নবি মুহাম্মাদ (সা:) প্রথমে কাবা শরিফ থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত বায়তুল মুকাদ্দাস বা মসজিদুল আকসায় গমন করেন এবং সেখানে তিনি নবিদের জামায়াতে ইমামতি করেন। অতঃপর তিনি বোরাক নামক বিশেষ বাহনে আসীন হয়ে ঊর্ধ্বলোকে গমন করেন। ঊর্ধ্বাকাশে সিদরাতুল মুনতাহায় তিনি আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করেন। নবি মুহাম্মদ (সা:)-এর আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করার আগ পর্যন্ত এই সফরে ফেরেশতা জিবরাইল তার সফরসঙ্গী ছিলেন।[২] কুরআন শরিফের সুরা বনি ইসরাঈল এর প্রথম আয়াতে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে:[৩]

"পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তার বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।"[কুরআন ১৭:১]

শব্দগত ব্যুৎপত্তি সম্পাদনা

যদিও ইসলাম ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ কুরআন-এ "মেরাজ" শব্দটির সরাসরি উল্লেখ দেখা যায় না, কিন্তু যখন অবিশ্বাসীগণ মুহাম্মাদ (সা:)-এর নবুয়্যতের বা ঐশ্বিক বাণীর প্রমাণস্বরূপ স্বর্গে আরোহণ করার প্রমাণ আনতে বলে, তখন সেখানে উল্লিখিত শব্দ ছিল তারকা ফিস সামা-য়ী: স্বর্গে আরোহণ করো। কেউ কেউ বলে, তারকা মানে আরোহণ করো, আর শব্দটি রাকিয়া থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ "সে আরোহণ করেছিল"। আরবি মেরাজ শব্দটি আরাজা থেকে গৃহীত, যার অর্থ সে আরোহণ করেছিল। তারা আরও বলে শব্দ দুটির মধ্যে পার্থক্য হলো রাকিয়া দ্বারা দৈহিক আরোহণ বোঝায়, আর আরাজা দ্বারা আত্মিক আরোহণ বোঝায়। তাই তাদের মতে, মেরাজ হল "আত্মিক আরোহণ"[৪]। কিন্তু আহলুস সুন্নাহর আলেমগণের মতে মেরাজ সশরীরে ও জাগ্রত অবস্থায় হয়েছিল। কারণ সকল সাহাবা, তাবেয়িন ও তাবে-তাবেয়িগণ এটিই বিশ্বাস করতেন।[৫]

বিবরণ সম্পাদনা

মেরাজ ঘটেছিল মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নবুয়্যত বা ঐশ্বিক বাণী প্রাপ্তির দশম বছরে। মেরাজের ঘটনায় দুটো অংশ ছিল:

  1. আল-ইসরা বা জেরুজালেমে নৈশ-ভ্রমণ
  2. মেরাজ বা ঊর্ধ্বারোহণ বা স্বর্গারোহণ।[৪]
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ঐ রাতে মুহাম্মদ কাবাতে ঘুমান, এবং তিনি কাবা'র ঐ অংশে ঘুমান, যেখানে কোনো ছাদ ছিল না (হাতিম)।উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; নাম অবৈধ, যেমন- সংখ্যাতিরিক্ত

মেরাজের ঘটনা প্রকাশ সম্পাদনা

ফলাফল সম্পাদনা

মেরাজের ফলে মুসলমানদের জন্য দৈনিক পাঁচবার পাঁচটি নির্দিষ্ট সময়ে নামায আদায় করা ফরজ হয়।[৪]

ইব্রাহিমীয় মেরাজ সম্পাদনা

ইসলাম ধর্মমতে, ঐশ্বিক সান্নিধ্যের ঘটনা ঘটেছিল ইব্রাহিম(আ:) এবং মুসার(আ:) ক্ষেত্রেও[৬][৪]

ভিন্ন মত সম্পাদনা

কোনো কোনো ইসলামী চিন্তাবিদের মতে, এটা দৈহিক নয়, বরং ছিল আত্মিক আরোহণ— মুহাম্মদের স্ত্রী আয়েশা (রা:)এবং আবু সুফিয়ান (রা:)এই মতে বিশ্বাসী ছিলেন বলা হয়।[৪] অনেক আলেমগণের মতে, হযরত আয়েশা রা.-এর থেকে যে কথা বর্ণনা করা হয় তা সত্য নয়। বর্ণনাটির সনদ অনির্ভরযোগ্য।[৫]

মেরাজের ঘটনা ইসলামে যথেষ্ট অর্থবহ তবুও মেরাজ উপলক্ষে বিশেষ রাত উৎযাপনের নিয়মকে ইসলামী চিন্তাবিদগণ গ্রহণ করেন না; অধিকাংশ ইসলামিক স্কলার মিরাজ রজনী উপলক্ষে শরীয়ত সম্মত যেকোন ইবাদাত করার ব্যাপারে মত দিয়েছেন এবং উত্তম বলেছেন।[৭]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "ইসরা ও মেরাজের রাত্রি উদ্‌যাপন"ইসলামকিউএ.ইনফো। ১৫ এপ্রিল ২০১৭। 
  2. পবিত্র শবে মেরাজ আজ
  3. পবিত্র শবে মেরাজ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে - ittefaq.com
  4. ইসলামের ধারাবাহিক ইতিহাস: প্রথম খন্ড: মহানবী (স:), ডক্টর ওসমান গনী, মল্লিক ব্রাদার্স, কলকাতা থেকে ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত। সংগ্রহের তারিখ: ১৭ জুন ২০১২ খ্রিস্টাব্দ।
  5. "মেরাজ স্বপ্নে হয়েছিল এমন আকীদা রাখা কেমন? হযরত আয়েশা রা. নাকি স্বশরীরে মেরাজ স্বীকার করতেন না?"। মাসিক আলকাউসার। 
  6. কুরআন ৭:১৪৩
  7. [www.gonews24.com/islam/news "শবে মেরাজের ইবাদত ও ফজিলত"] |ইউআরএল= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)Www.gonews.com 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা