মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব

মহাবিশ্বের উৎপত্তি সম্পর্কে প্রদত্ত একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব
(বৃহৎ বিস্ফোরণ তত্ত্ব থেকে পুনর্নির্দেশিত)

ভৌত বিশ্বতত্ত্বে বিগ ব্যাং তত্ত্ব মহাবিশ্বের উৎপত্তি সম্পর্কে প্রদত্ত একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব। এটি মহাগর্জনতত্ত্ব নামেও পরিচিত।[] এই তত্ত্বটি ১৯২৯ সালে বেলজিয়ামের ধর্মপ্রচারক জর্জ এদুয়ার ল্যমেত্র্‌ সর্বপ্রথম প্রস্তাব করেন। [] বর্তমানে এই তত্ত্বটি মহাবিশ্বের উদ্ভব সম্পর্কিত তত্ত্ব হিসাবে সর্বজন গৃহীত ।[]

A model of the expanding universe opening up from the viewer's left, facing the viewer in a 3/4 pose.
মহাকাশের মেট্রিক সম্প্রসারণের টাইমলাইন, যেখানে মহাবিশ্বের অনুমানহীন অ-পর্যবেক্ষণযোগ্য অংশ সহ স্থান প্রতিবার বৃত্তাকার বিভাগ দ্বারা প্রতিনিধিত্ব করা হয়। বামদিকে, মহাজাগতিক স্ফীতিশীলতা কালে নাটকীয় বিস্তার ঘটে; এবং কেন্দ্রে, সম্প্রসারণ ত্বরান্বিত হয় (শিল্পীর ধারণা; স্কেলে নয়)।
মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব অনুসারে মহাবিশ্ব একটি অতি ঘন বিন্দুবৎ অবস্থা থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে।[]


এই তত্ত্বের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো কোনও ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার পরিবর্তে একটি বিশেষ মুহূর্তে মহাবিশ্বের উদ্ভব। এই তত্ত্ব অনুযায়ী আজ থেকে প্রায় ১ হাজার ৩৭৫ কোটি বছর পূর্বে এই মহাবিশ্ব একটি অতি ঘন এবং উত্তপ্ত অবস্থা থেকে সৃষ্টি হয়েছিল। বিজ্ঞানী এডুইন হাবল প্রথম বলেন যে দূরবর্তী ছায়াপথসমূহের বেগ সামগ্রিকভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এরা পরষ্পর দূরে সরে যাচ্ছে অর্থাৎ মহাবিশ্ব ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে। আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বের ফ্রিদমান-ল্যমেত্র্‌-রবার্টসন-ওয়াকার মেট্রিক অনুসারে এটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই তত্ত্বসমূহের সাহায্যে অতীত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সমগ্র মহাবিশ্ব একটি সুপ্রাচীন বিন্দুবৎ অবস্থা থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। এই অবস্থায় সকল পদার্থ এবং শক্তি অতি উত্তপ্ত এবং ঘন অবস্থায় ছিল। কিন্তু এ অবস্থার আগে কী ছিল, তা নিয়ে পদার্থবিজ্ঞানীদের মধ্যে কোন ঐকমত্য নেই। অবশ্য সাধারণ আপেক্ষিকতা এর আগের সময়ের ব্যাখ্যার জন্য মহাকর্ষীয় অদ্বৈত অবস্থান (সিংগুলারিটি) নামক একটি শব্দের প্রস্তাব করেছে।

মহাবিস্ফোরণ শব্দটি স্থূল অর্থে প্রাচীনতম একটি বিন্দুর অতি শক্তিশালী বিস্ফোরণকে বোঝায় যার মাধ্যমে মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছিল, আবার অন্যদিকে এই বিস্ফোরণকে কেন্দ্র করে মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও গঠন নিয়ে বিশ্বতত্ত্বে যে মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে তাকেও বোঝায়। এর মাধ্যমেই মহাবিশ্বের প্রাচীনতম বস্তুসমূহের গঠন সম্পর্কে ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, যার জন্য মহাবিস্ফোরণ মতবাদের পরই আলফার-বেটে-গ্যামফ তত্ত্ব প্রণীত হয়েছে। মহাবিস্ফোরণের একটি উল্লেখযোগ্য ফলাফল হল, বর্তমানে মহাবিশ্বের অবস্থা অতীত এবং ভবিষ্যতের অবস্থা থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। এই তত্ত্বের মাধ্যমেই ১৯৪৮ সালে জর্জ গ্যামফ অনুমান করতে পেরেছিলেন যে, মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণের অস্তিত্ব রয়েছে। ১৯৬০-এর দশকে এটি আবিষ্কৃত হয় এবং স্থির অবস্থা তত্ত্বকে অনেকটাই বাতিল করে মহাবিস্ফোরণ তত্ত্বকে প্রমাণ করতে সমর্থ হয়।

॥ ইতিহাস॥ মহাবিশ্বের গঠন এবং এর সাথে তত্ত্বের সমন্বয় সাধনের চেষ্টা থেকেই মহাবিস্ফোরণ তত্ত্বের উৎপত্তি হয়েছে। মহাকাশ পর্যবেক্ষকরা দেখতে পান যে অধিকাংশ সর্পিল নীহারিকা পৃথিবী থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে। অবশ্য বিশ্বতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে এর ব্যাখ্যা আরও পরে হয়েছে, বর্তমানে আমরা জানি, যে নীহারিকাগুলো পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে, সেগুলো আসলে নীহারিকা নয়, বরং আমাদের "আকাশগঙ্গা/আকাশগঙ্গার" বাইরের ছায়াপথ ছিল[]। বেলজিয়ামের একজন রোমান ক্যাথলিক ধর্মপ্রচারক "জর্জ ল্যমেত্র্‌" ১৯২৭ সালে প্রথম স্বাধীনভাবে আইনস্টাইনের ক্ষেত্র সমীকরণ থেকে ফ্রিদমান সমীকরণ/ফ্রিদমান সমীকরণসমূহ উপপাদন করেন। আইনস্টাইন সাধারণ আপেক্ষিকতার জন্য এই ক্ষেত্র সমীকরণগুলোর গোড়াপত্তন করেছিলেন। ফ্রিদমান সমীকরণ উপপাদনের পর সর্পিল নীহারিকার ক্রম পশ্চাদপসারণের উপর ভিত্তি করে "ল্যমেত্র" প্রস্তাব করেন, মহাবিশ্ব একটি সুপ্রাচীন পরমাণু থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে, যে প্রস্তাব বর্তমানে মহাবিস্ফোরণ নামে পরিচিত।[]

এর দুই বছর পর "এডুইন হাবল" ল্যমেত্রর তত্ত্বের সপক্ষে একটি পর্যবেক্ষণমূলক প্রমাণ উপস্থাপন করেন। তিনি আবিষ্কার করেন যে, পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান ছায়াপথসমূহ থেকে নিঃসৃত আলোর 'লোহিত অপসারণ' হচ্ছে এবং এই অপসারণ পৃথিবী থেকে তাদের দূরত্বের সমানুপাতিক। অর্থাৎ একটি ছায়াপথ পৃথিবী থেকে যত দূরে তা থেকে নিঃসৃত আলোর বর্ণালি ততোই লাল তথা দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের দিকে সরে যাচ্ছে। এই ঘটনাটি বর্তমানে হাবলের নীতি নামে পরিচিত।[][] বিশ্বতাত্ত্বিক নীতি অনুসারে মহাবিশ্বকে যখন যথেষ্ট বৃহৎ মাপের দূরত্বের সাপেক্ষে দেখা হয় তখন এর কোন নির্দিষ্ট বা বিশিষ্ট দিক ও স্থান পাওয়া যায় না। এই নীতিকে সত্য মেনেই হাবল প্রমাণ করেছিলেন যে মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে। কিন্তু এই তত্ত্ব স্বয়ং আইনস্টাইন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত অসীম এবং অপরিবর্তনীয় বিশ্বের তত্ত্বের সম্পূর্ণ বিরোধী। []

ডব্লিউএমএপি নামক কৃত্রিম উপগ্রহ মহাবিস্ফোরণ বোঝার জন্য তথ্য সংগ্রহ করছে - শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবি

দুইটি স্বতন্ত্র সম্ভাবনা রয়েছে। একটি ফ্রেড হয়েলের স্থির অবস্থা নকশা, যা অনুসারে মহাবিশ্ব যখন সম্প্রসারিত হতে শুরু করে তখন এখানে নতুন পদার্থ সৃষ্টি হতে পারে। এই নকশা অনুসারে সময়ের যে কোন বিন্দুতে মহাবিশ্ব একইরকম থাকে।[] অন্যটি হল ল্যমেত্র্‌র মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব যা মূলত জর্জ গ্যামফ কর্তৃক পূর্ণতা লাভ করেছে। ল্যমেত্র্‌র এই তত্ত্বটির নাম কিন্তু হয়েলই দিয়েছিলেন। হয়েল ১৯৪৯ সালের ২৮শে মার্চ /বিবিসিতে প্রচারিত থার্ড প্রোগ্রাম নামক অনুষ্ঠানে অনেকটাই শ্লেষের বশে ল্যমেত্র্‌র এই তত্ত্বটিকে "বিগ ব্যাং" বলে আখ্যায়িত করেন যার দ্বারা একটি বিশাল গণ্ডগোলই বুঝায়।[] এর পরেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে এই নামটি ব্যবহার করতে দেখা যায়। বিশেষত ১৯৫০ সালে "বস্তুর ধর্মের" উপর প্রদত্ত পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতায় ল্যমেত্র্‌র তত্ত্বকে বোঝানোর জন্য তিনি এই নাম ব্যবহার করেন। বক্তৃতা প্রচারিত হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই এর প্রতিটি দ্য লিসেনার পত্রিকায় প্রকাশিত হতো। এই পত্রিকাতেই "বিগ ব্যাং" নামটি প্রথম ছাপার অক্ষরে ব্যবহৃত হয়।[] হয়েল এবং ল্যমেত্র্‌ কর্তৃক প্রস্তাবিত এই দুটি নকশা ছাড়াও মহাবিশ্বের উৎপত্তি নিয়ে বেশ কিছু নকশা প্রস্তাব করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মাইন নকশা (Milne model)[], রিচার্ড টলম্যান কর্তৃক প্রস্তাবিত কম্পনশীল মহাবিশ্ব[১০] এবং ফ্রিৎস জুইকি প্রস্তাবিত দুর্বল আলো প্রকল্প।[১১]

কিছু সময়ের জন্য স্থির অবস্থা এবং মহাবিস্ফোরণ দুইটি তত্ত্বেরই যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা ছিল বিধায় বিতর্কেরও অবকাশ ছিল প্রচুর। কিন্তু সময়ের আবর্তে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ সাধিত হয় যার অধিকাংশই প্রথমটির বদলে দ্বিতীয় তত্ত্বের গ্রহণযোগ্যতার সাক্ষ্য দেয়। ১৯৬৪ সালে মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ আবিষ্কৃত হওয়ার পর মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও বিবর্তন ব্যাখ্যার জন্য সবচেয়ে উপযোগী তত্ত্ব হিসেবে গৃহীত হয়। আধুনিককালে বিশ্বতাত্ত্বিক গবেষণার অন্যতম একটি বিষয়ই হচ্ছে মহাবিস্ফোরণ তত্ত্বের আলোকে ছায়াপথসমূহের সৃষ্টি ও বিবর্তন প্রক্রিয়া উদ্‌ঘাটন করা। এছাড়াও ঠিক কি কারণে এবং কীভাবে মহাবিস্ফোরণ সংঘটিত হয়েছিলো তা বিশ্বতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করা হয়। মহাবিস্ফোরণের মূল তত্ত্বের সাথে বাস্তব পর্যবেক্ষণের সমন্বয় সাধনের উপরই বর্তমান বিশ্বতত্ত্বের অগ্রগতি অনেকাংশে নির্ভর করছে। ১৯৯০-এর দশক থেকে মহাবিস্ফোরণ সংশ্লিষ্ট গবেষণা অনেক সহজ হয়ে দাড়িয়েছে। অতি উচ্চ ক্ষমতাবিশিষ্ট দূরবীক্ষণ যন্ত্র এবং এর সঠিক কার্যকারিতা একে সম্ভব করে তুলেছে। বর্তমানে মানুষের রয়েছে কোবে, হাবল স্পেস টেলিস্কোপ এবং ডব্লিউএমএপি 'র মত উচ্চ ক্ষমতার দুরবীন। ফলে বর্তমান বিশ্বতত্ত্ববিদরা অনেক সহজে মহাবিস্ফোরণের বিভিন্ন রাশি পরিমাপ করতে পারে। এর ফলে একটি অপ্রত্যাশিত আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে; আর তা হলো সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বের ত্বরমান হওয়া।

সাধারণ আলোচনা

সম্পাদনা
আরও দেখুন: মহাবিস্ফোরণের কালপঞ্জি
এই বিষয়ের একটি চিত্রলৈখিক কালপঞ্জি এখানে ক্লিক করলে পাওয়া যাবে:

তিনটি পরিমাপের উপর ভিত্তি করে মহাবিশ্বের যে বয়স পাওয়া গেছে তা হল প্রায় ১৩.৭ ± ০.২ বিলিয়ন বছর। এই পরিমাপ তিনটি হচ্ছে: প্রথম ধরনের অতি নব তারা ব্যবহার করে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের পরিমাপ, মহাজাগতিক ক্ষুদ্র তরঙ্গ পটভূমিতে তাপমাত্রার উঠানামার পরিমাপ এবং ছায়াপথসমূহের কোরিলেশন ফাংশন পরিমাপ। এই তিনটি পরিমাপ স্বাধীনভাবে করা হয়েছে এবং তিনটি পরিমাপই তথাকথিত ল্যাম্ব্‌ডা-সিডিএম নকশাকে গভীরভাবে সমর্থন করেছে। এই নকশা মহাবিশ্বের অভ্যন্তরস্থ সবকিছুর সুন্দর বর্ণনা দিতে সক্ষম।

সৃষ্টির প্রাথমিককালে মহাবিশ্ব সুষম এবং সমতাপীয় রূপে একটিই অতি উচ্চ শক্তি ঘনত্ব এবং উচ্চ তাপমাত্রা ও চাপবিশিষ্ট পদার্থ দ্বারা পূর্ণ ছিল। মহাবিশ্ব সৃষ্টির ১০−৪৩ সেকেন্ড পর পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলো কার্যকারিতা লাভ করে। তাই এই সময়কে প্ল্যাংকের সময় বলা হয়। প্ল্যাংকের সময়ের প্রায় ১০−৩৫ সেকেন্ড পর একটি দশা পরিবর্তন তথা অবস্থান্তর অবস্থার সূচনা ঘটে যার ফলে মহাজাগতিক স্ফীতি শুরু হয়। এই সময় মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হতে শুরু করে। এ সময় থেকে মূলত মহাবিশ্বের exponential সম্প্রসারণ শুরু হয়।

মহাজাগতিক স্ফীতি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর মহাবিশ্বে কোয়ার্ক-গ্লুওন প্লাসমা নামক পদার্থ ছিল। বর্তমানে সম্ভবত এই ধরনেরই একটি পদার্থ বিজ্ঞানী প্রস্তুত করেছেন যা কোয়ার্ক গ্লুওন তরল হিসেবে পরিচিত। এই তরলের মধ্যস্থিত সকল উপাদান একে অপরের সাপেক্ষে চলমান -- এ তরলের মধ্যকার সকল মৌলিক কণিকাও এভাবে তরলের মধ্যে চলমান থাকে।[১২] স্থান-কালের কোন একটি বিন্দুতে এই পদার্থের মধ্যে একটি বিক্রিয়া ঘটে যার স্বরূপ এখন পর্যন্ত মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব হয়নি। এই বিক্রিয়ার ফলে বেরিয়ন সংখ্যার সংরক্ষণ নীতি লংঘিত হয় এবং কোয়ার্কলেপ্টন কণিকার পরিমাণ এদের প্রতিকণিকার চেয়ে সামান্য বেড়ে যায়। অর্থাৎ প্রতি-কোয়ার্ক এবং প্রতি-লেপ্টনের চেয়ে কোয়ার্ক এবং লেপ্টনের পরিমাণ সামান্য বৃদ্ধি পায়। এর হার ছিল প্রতি ১০১০ ভাগের এক ভাগ। এই প্রক্রিয়াকে বেরিওজেনেসিস বলা হয়।

মহাবিশ্বের আয়তন যত বৃদ্ধি পেতে থাকে ততই এর তাপমাত্রা কমতে থাকে। তাপমাত্রা হ্রাসের সময়ই কোন এক পর্যায়ে দশার অবস্থান্তর অবস্থা সৃষ্টি হয় যার ফলে শুরু হয় প্রতিসাম্য ভাঙন। এই ভাঙনের কারণে পদার্থবিজ্ঞানের আলোচ্য মৌলিক বলসমূহ পৃথক পৃথক স্বাধীন অস্তিত্ব লাভ করে। এ সময়ই মৌলিক কণিকাসমূহ সৃষ্টি হয় যা এখনও সেই আদি অবস্থাতেই রয়েছে। কোয়ার্ক এবং গ্লুওন একত্রিত হয়ে বেরিয়ন, যেমন প্রোটন এবং নিউট্রন তৈরি করে। কোয়ার্কের পরিমাণ প্রতি-কোয়ার্কের চেয়ে সামান্য বেড়ে যাওয়ার কারণে বেরিয়নের পরিমাণও প্রতি-বেরিয়নের চেয়ে সামান্য বেড়ে যায়। একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রার নিচে কোন নতুন প্রোটন-প্রতিপ্রোটন জোড়া তৈরি হতে পারেনা। এরই সাথে অবশিষ্ট প্রোটন এবং প্রতিপ্রোটনের মধ্যে শুরু হয় ভরের পূর্ণবিলয় (annihilation)। ফলে প্রতিপ্রোটন সম্পূর্ণ নিঃশেষ হয়ে যায়; আর প্রোটন প্রায় নিঃশেষ হয়ে যায়। তবে কিছু প্রোটন থেকে যায়। নিউট্রন-প্রতিনিউট্রন জোড়ের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। ইলেকট্রন ও প্রতিইলেকট্রন বা পজিট্রনের ক্ষেত্র এই ঘটনা আরও নিম্ন তাপমাত্রায় সংঘটিত হয়।

এর কিছুকাল পরে প্রোটন ও নিউট্রন একত্রিত হয়ে মহাবিশ্বের একেবারে প্রথমদিককার উপাদান ডিউটেরিয়ামহিলিয়াম কেন্দ্রীন তৈরি করে। সৃষ্টির এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় মহাবিস্ফোরণ কেন্দ্রীন সংশ্লেষ। মহাবিশ্বের শীতলায়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে; এক সময় এই প্রক্রিয়ার ফলস্বরূপ পদার্থের কণাসমূহের মধ্যে যে আপেক্ষিক গতিবেগ ছিল তার পরিমাণ হ্রাস পায়। এই কণাসমূহের মাঝে দুই ধরনের শক্তি ঘনত্ব ছিল: নিশ্চল ভর শক্তি ঘনত্ব এবং বিকিরণ শক্তি ঘনত্ব। আপেক্ষিক বেগ কমে যাওয়ার ফলে নিশ্চল ভরজনিত শক্তি ঘনত্ব মহাকর্ষীয়ভাবে বিকিরণজনিত শক্তি ঘনত্বের উপর আধিপত্য বিস্তার করে। মহাবিস্ফোরণের প্রায় ৩৮০,০০০ বছর পর ইলেকট্রন এবং নিউক্লিয়াস একত্রিত হয়ে পরমাণু তৈরি করে; এর মধ্যে মূলত হাইড্রোজেন পরমাণু সৃষ্টি হয়। এর সূত্র ধরে পদার্থ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া শক্তি বিকিরণ আকারে সমগ্র মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে; কারণ একে তেমন কোন বাঁধার সম্মুখীন হতে হয় না। এই সুপ্রাচীন বিকিরণের নাম মহাজাগতিক ক্ষুদ্রতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ

সম্প্রসারণের সাথে সাথে মহাবিশ্বের বণ্টন প্রায় সুষম হয়েছিলো। কিন্তু এর মাঝেও কিছু অসামঞ্জস্যতা ছিল। এর কারণে যে অঞ্চলগুলো অন্যান্য অঞ্চল থেকে খানিকটা ঘন সেখানের পদার্থগুলো আশেপাশের অন্যান্য বস্তুকে মহাকর্ষ বলের মাধ্যমে আকর্ষণ করে। এর মাধ্যমে সৃষ্টি হয় তারা, ছায়াপথ এবং অন্যান্য জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুর যা আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি। তবে এই প্রক্রিয়াটি অত সহজ নয়। এর মূল বিষয়গুলো নির্ভর করে মহাবিশ্বের ওই অঞ্চলের পদার্থের ধরন এবং পরিমাণের উপর। তখন মহাবিশ্বে সম্ভাব্য তিন ধরনের পদার্থ বিরাজমান ছিল: শীতল অদৃশ্য বস্তু, উত্তপ্ত অদৃশ্য বস্তু এবং বেরিয়নীয় বস্তুডব্লিউএমএপি নামক কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে পাওয়া সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে যে মহাবিশ্বে শীতল অদৃশ্য বস্তুর পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ। অন্যান্য দুই ধরনের বস্তুর পরিমাণ মাত্র ২০%।

বর্তমান মহাবিশ্বের অধিকাংশ স্থান জুড়ে একটি রহস্যময় ধরনের শক্তি বিরাজ করছে। মহাবিশ্বের বিপুল ভর ও শক্তির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী এই শক্তিকে অদৃশ্য শক্তি বা dark energy বলা হয়। বর্তমান মহাবিশ্বের মোট শক্তি ঘনত্বের শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ জুড়েই রয়েছে এই অদৃশ্য শক্তি। মহাবিশ্বের সম্প্রসারণকে একটি বেগ-দূরত্ব সম্পর্কিত লেখের মাধ্যমে প্রকাশ করলে লেখচিত্রের রেখাটি সরলরৈখিক হয়না। অদৃশ্য শক্তির কারণেই এমনটি হয়ে থাকে। অর্থাৎ এই শক্তির কারণে দূরত্ব যখন অনেক বেশি হয় তখন উক্ত বস্তুর বেগ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়। অর্থাৎ দূরত্ব যত বাড়ে বেগ বৃদ্ধির পরিমাণও ততই বেড়ে যায়। একেবারে সাধারণ বিষয় ধর্তব্যের মধ্যে আনলে অদৃশ্য শক্তির এই পরিমাণটি আইনস্টাইনের ক্ষেত্র সমীকরণে একটি মহাজাগতিক ধ্রুবকের রূপ নেয়, যদিও এই শক্তির প্রকৃত রূপ এখনও উদ্‌ঘাটন করা সম্ভব হয়নি। বলতে গেলে এই শক্তির অবস্থার সমীকরণ এবং কণা পদার্থবিজ্ঞানের আদর্শ নকশার সাথে এর সম্পর্ক বিষয়ে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক উভয়ক্ষেত্রে অনেক পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা এখনও বাকি রয়ে গেছে।

এই সবগুলো পর্যবেক্ষণ বিশ্বতত্ত্বের ল্যাম্ব্‌ডা-সিডিএম নকশায় সংযুক্ত করা হয়েছে। সবগুলো নকশার নির্যাস নিয়ে গঠিত এই নকশাটি মূলত গাণিতিক যাতে ছয়টি মুক্ত স্থিতিমাপ (parameter) রয়েছে। তবে রহস্যজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যখন আমরা মহাবিশ্বের সৃষ্টির গোড়ার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করি। সেই সময় পদার্থ কণিকার শক্তি এতো বেশি ছিল যে বর্তমানকালের পরীক্ষণেও তা নিয়ে বাস্তবমুখী গবেষণা করা যায় না। মহাবিস্ফোরণের পর ১০−৩৩ সেকেন্ড পর্যন্ত পরিস্থিতি ব্যাখ্যার জন্য উপযোগী কোন সূত্র পদার্থবিজ্ঞানে আজ অবধি আবিষ্কৃত হয়নি। দশা পার্থক্যের এই সময়ের পূর্বের অবস্থা ব্যাখ্যা করার জন্য মহা একীভূত তত্ত্বের কোন বিকল্প নেই। বিস্ফোরণের একেবারে প্রথম বিন্দুতে আইনস্টাইনের মহাকর্ষ তত্ত্বমতে একটি মহাকর্ষীয় ব্যতিক্রমী বিন্দুর কল্পনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে এই বিন্দুতে ঘনত্ব অসীম ছিল।[১৩] এই ভৌত হেঁয়ালি সমাধান করার জন্য একটি কোয়ান্টাম মহাকর্ষ তত্ত্ব প্রয়োজন। এই বিষয়টি বোঝার জন্য যুগোপযোগী তত্ত্ব প্রণয়নই বর্তমানে পদার্থবিজ্ঞানের বৃহত্তম সমাধানহীন সমস্যা।

তত্ত্বের মৌলিক ভিত্তি

সম্পাদনা

মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব নিম্নলিখিত অনুমিতিগুলোর উপর নির্ভর করে:

প্রথমদিকে এই আদর্শ নীতিগুলোকে স্বীকার্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিলো। কিন্তু বর্তমানকালে এগুলো প্রমাণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভৌত নীতিসমূহের সর্বজনীনতা পরীক্ষা করে দেখা গেছে, মহাবিশ্বের বয়সের উপর সূক্ষ্ম কাঠামো ধ্রুবকের সবচেয়ে বেশি যে ব্যাত্যয়টি দেখা যায় তার পরিমাণ ১০−৫ -এর মত।[১৪] মহাবিশ্বের আইসোট্রপি যা মহাজাগতিক মূলনীতিকে সংজ্ঞায়িত করে তার পরিমাপ করা হয়েছে ১০−৫ মাত্রার বিশুদ্ধরূপে; বৃহৎ পরিসর গঠনে মহাবিশ্বকে শতকরা ১০ ভাগ মাত্রার বিশুদ্ধতায় সমসত্ব হিসেবে পাওয়া গেছে।[১৫] বর্তমানে কোপারনিকান মূলনীতি পরিমাপের চেষ্টা চলছে। ছায়াপথ শ্রেণী ও স্তবকগুলোর সাথে মহাজাগতিক ক্ষুদ্রতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণের মিথস্ক্রিয়ার দিকে লক্ষ করার মাধ্যমে এই পরিমাপ করা হচ্ছে। মিথস্ক্রিয়াটি লক্ষ করার জন্য Sunyaev-Zel'dovich ক্রিয়া বিবেচনা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে শতকরা ১ ভাগ বিশুদ্ধতার আশা করা যায়।[১৬]

এই অনুমিতিগুলোকে আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের সাথে একীভূত করলে বোঝা যায় যে, স্থান-কালকে একটি সমসত্বআইসোপট্রপীয় মেট্রিক হিসেবে বর্ণনা করতে হবে। এ থেকে সহজেই বোঝা যায় যে এই মেট্রিকটি হবে এফআরডব্লিউ মেট্রিক। এই মেট্রিকগুলো একটি স্থানাংক ছকের উপর নির্ভর করে যা স্থান-কালের সকল স্থানে ছড়িয়ে আছে এবং যার মাধ্যমে আমরা মহাশূন্যে যেকোন একটি বিন্দু চিহ্নিত করতে পারি। এক্ষেত্র নির্দিষ্টভাবে ব্যবহৃত ছকটির হচ্ছে কমোভিং স্থানাংক ব্যবস্থা। এই ছকের রেখাগুলো মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের সাথে সাথে একটি হারে এবং একই নির্দেশনায় সম্প্রসারিত হয়। ফলে কোন একটি জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুর স্থানাংক সকল সময়ে একই থাকে। যেকোন দুটি বিন্দুর কমোভিং দূরত্ব তথা স্থানাংক দূরত্ব একই থাকলেও এই কমোভিং বিন্দুসমূহের ভৌত দূরত্ব মহাবিশ্বের স্কেল উৎপাদকের সাথে সমানুপাতিক হারে বৃদ্ধি পায়।

মহাবিশ্বকে এই স্থানাঙ্কসমূহ দ্বারা ব্যাখ্যা করলে দেখা যায়, মহাবিস্ফোরণ একি শূন্য মহাবিশ্ব পূর্ণ করার জন্য কিছু পদার্থের নিছক একটি বিস্ফোরণ নয়, বরং মহাশূন্য নিজেই সম্প্রসারিত হয়েছে নির্দিষ্ট নিয়মে এবং এর ফলে কমোভিং বিন্দুসমূহের ভৌত দূরত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। যে বস্তুসমূহ একীভূত থাকে (যেমন: পরমাণু, মানুষ, তারা, সৌর জগত, ছায়াপথ) তারা স্থান-কালের প্রসারণের সাথে প্রসারিত হয়ে একে অন্যের থেকে দূরে সরে যায় না; কারণ যে বল তাদেরকে একীভূত করে রেখেছে তা হাবল সম্প্রসারণের জন্য দায়ী বলের চেয়ে শক্তিশালী।

আমরা এখানে কনফরমাল সময় ( ) নামক শব্দটির অবতারণা করতে পারি, এহেন ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্থান-কাল মেট্রিক একটি স্থিতিশীল মেট্রিকের রূপ নেয় এবং এটি এই মেট্রিককে সামগ্রিক স্কেল উৎপাদক দ্বারা গুণ করে মূল মেট্রক পাওয়া যায়। কনফরমাল সময় স্থানাঙ্ক বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একটি নির্দিষ্ট ভ্রমণে আলোক রশ্মি যে পরিমাণ কমোভিং দূরত্ব অতিক্রম করে তা উক্ত ভ্রমণের মধ্যবর্তী কনফরমাল সময়ের সমান। এই থেকেই স্থান-কালের কসাল গঠন বোধগম্য হয়। উদাহরণস্বরূপ; মহাবিস্ফোরণ অতীতের একটি নির্দিষ্ট কনফরমাল সময়ে সংঘটিত হয়েছিল। ধরি এই কনফরমাল সময়টি  । এখন যে সকল বস্তুর কমোভিং দূরত্ব   -এর চেয়ে বেশি তাদের আমাদের থেকে এতো বেশি যে সেখান থেকে আলো কখনই আমাদের কাছে পৌঁছুতে পারবেনা। অর্থাৎ আমরা অতীত মহাবিশ্বের সমগ্র অংশ কখনই দেখতে পারবোনা। এথেকে উদ্ভূত হয়েছে অতীত দিগন্তের ধারণা। মহাবিশ্ব যদি ত্বরণ সহকারে সম্প্রসারিত হতে থাকে তাহলে কেবল একটি সুনির্দিষ্টসংখ্যক কনফরমাল সময় ভবিষ্যতের জন্য রয়েছে। একে   দ্বারা প্রকাশ করা হয়ে থাকে। অবশ্য এই কনফরমাল সময়টি আমাদের ঘড়ির তুলনায় প্রায় অসীম যাকে সঠিক সময় (proper time) বলা হয়। যে বস্তুর কমোভিং দূরত্ব এই   -এর চেয়ে বেশি সেখান থেকে আলোক রশ্মি কখনই আমাদের কাছে আসতে পারবেনা। অর্থাৎ আমরা সমগ্র মহাবিশ্বকে প্রভাবান্বিত করতে পারবো না। অর্থাৎ এর একটি ভবিষ্যৎ দিগন্ত -ও রয়েছে।

পর্যবেক্ষণিক প্রমাণ

সম্পাদনা

বিশ্বতত্ত্ব মহাবিস্ফোরণের প্রমাণ হিসেবে তিনটি পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণকে উল্লেখ করা হয়। এগুলো হল: ছায়াপথসমূহের লাল অপসারণ দেখে গৃহীত হাবল-ধরনের সম্প্রসারণ, মহাজাগতিক ক্ষুদ্রতরঙ্গ পটভূমির বিস্তৃত পরিমাপ এবং আলোক উপাদানসমূহের প্রাচুর্য। উপরন্তু মহাবিশ্বের বৃহৎ-পরিসর গঠনে পর্যবেক্ষণযোগ্য কোরিলেশন ফাংশন আদর্শ মহাবিস্ফোরণ তত্ত্বের সাথে বেশ ভাল রকম খাঁপ খায়।

হাবলের নীতি

সম্পাদনা
 
হাবলকৃত ১৯২৯ সালের একটি গবেষণাপত্র থেকে প্রাপ্ত হাবলের মূল গবেষণা।[১৭]

দূরবর্তী ছায়াপথকেয়াসার পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে যে এরা লাল অপসারণ প্রদর্শন করে -- তাদের থেকে নিঃসরিত আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য তুলনামূলক বর্ধিত তরঙ্গদৈর্ঘ্যে রূপ নেয়। বস্তুসমূহের কম্পাংক বর্ণালী গ্রহণ করার মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হয়েছে। আলোর সাথে মিথস্ক্রিয়ারত রাসায়নিক মৌলসমূহের পরমাণুর বিশোষণ রেখা এবং নিঃসরণ রেখার বর্ণালীবীক্ষণগত গড়নের সাথে পর্যবেক্ষণযোগ্য এই বর্ণালীর সম্মিলন ঘটানো হয়েছে। এর ফলেই মূলত লাল অপসারণের প্রমাণ মিলেছে। এই বিশ্লেষণ থেকে বোঝা গেল, একটি লাল অপসারণ যা কোন ধরনের বিকিরণের জন্য একটি ডপলার অপসারণকে নির্দেশ করে তাকে পরিমাপ করা সম্ভব। প্রাস্থানিক বেগ দ্বারা বিষয়টির ব্যাখ্যা করা যায়। যখন বস্তুসমূহের দূরত্বের সাথে এদের প্রাস্থানিক বেগের একটি লেখ অঙ্কন করা হয় তখন একটি সরলরেখা পাওয়া যায়, যা হাবলের নীতি নামে পরিচিত।

 

যেখানে

  হল ছায়াপথ বা অন্যান্য জ্যোতিষ্কের প্রাস্থানিক বেগ (recessional velocity)
  হল বস্তুটির দূরত্ব এবং
  হল হাবলের ধ্রুবক, ডব্লিউএমএপির মাধ্যমে পরিমাপকৃত এর আপাত মান হচ্ছে (৭০ +২.৪/-৩.২) কিমি//Mpc[১৮]

হাবলের নীতি পর্যবেক্ষণের দুটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা রয়েছে -- একটি হল: আমরা ছায়াপথের একটি বিস্ফোরণের ঠিক কেন্দ্রে আছি । কোপারনিকান মূলনীতি মেনে নিলে এই পর্যবেক্ষণটিকে সমর্থন করা যায়না। অন্য ব্যাখ্যাটি হল: মহাবিশ্ব স্থান-কালের একটি সুষম ধর্ম হিসেবে সকল স্থানে একটি হারে সম্প্রসারিত হচ্ছে। এই পর্যবেক্ষণটি হাবলে তার নীতি উপস্থাপনের অনেক আগেই করা হয়েছিলো। তখন আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বকে একটি কাঠামো হিসেবে ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিলো। এই পর্যবেক্ষণটিই এখন পর্যন্ত মহাবিস্ফোরণ তত্ত্বের মৌলিক ভিত্তিভূমি হিসেবে স্বীকৃত। এটি প্রস্তাব করেছিলেন ফ্রিদমান-লেমাইট্‌র-রবার্টসন-ওয়াকার

মহাজাগতিক ক্ষুদ্রতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ

সম্পাদনা
 
ডব্লিউএমএপি থেকে প্রাপ্ত মহাজাগতিক ক্ষুদ্রতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণের চিত্র

মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব মহাজাগতিক ক্ষুদ্রতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণের অস্তিত্বের কথা বলেছিল। এর অপর নাম সিএমবি যা প্রথম বেরিওজেনেসিসের সময় নিঃসরিত ফোটন দ্বারা গঠিত। আদি মহাবিশ্বে যেহেতু তাপীয় সাম্যাবস্থা বিরাজ করছিল সেহেতু প্লাসমাগুলো পুনরায় একত্রিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বিকিরণের তাপমাত্রা ও প্লাসমার পরিমাণ সমান ছিল। পরমাণু গঠিত হওয়ার আগে বিকিরণ স্থিতিশী়লভাবে পালাক্রমে নিঃসরিত এবং পুনরায় শোষিত হচ্ছিলো যাকে কম্পটন বিক্ষেপণ বলা হয়। অর্থাৎ আদি মহাবিশ্ব আলোর প্রতি অস্বচ্ছ ছিল। যাহোক, মহাবিশ্ব প্রসারিত হওয়ার পাশাপাশি ধীরে ধীরে শীতল হতে থাকে এবং এক পর্যায়ে তাপমাত্রা ৩,০০০ কেলভিনের নিচে নেমে আসে। এই বিন্দুতে কেন্দ্রীন ও ইলেকট্রন একত্রিত হয়ে পরমাণু তৈরি করে। একই সাথে প্রাথমিক যুগের প্লাসমাগুলো একটি নিষ্ক্রিয় গ্যাসে রুপান্তরিক হয়। এই প্রক্রিয়ার নাম ফোটন ডিকাপলিং। তখন মহাবিশ্বে কেবল নিরপেক্ষ পরমাণু এবং বিভিন্ন গ্যাসীয় বস্তুর সমন্বয়ে একটি নিষ্ক্রিয় পরিবেশ বিরাজ করছিল। ফলে পদার্থ থেকে নিঃসরিত বিকিরণ কোন বাঁধা ছাড়াই সমগ্র মহাবিশ্ব পরিভ্রমণের সুযোগ পায়। আদি মহাবিশ্বে যেহেতু তাপীয় সাম্যাবস্থা বিরাজ করছিল সেহেতু তখনকার বিকিরণের বর্ণালি ছিল কৃষ্ণবস্তুর বিকিরণ বর্ণালি ধরনের। পরবর্তীতে হাবলের নীতিতে লোহিত অপসারণের কারণে এদের তাপমাত্রা কমতে থাকে এবং কৃষ্ণবস্তুর আচরণ থেকে বিচ্যুতি দেখা দেয়।

১৯৬৪ সালে আরনো পেনজিয়াস এবং রবার্ট উড্রো উইলসন অনেকটা আকস্মিকভাবেই পটভূমি বিকিরণ আবিষ্কার করেন। তারা এ সময় বেল ল্যাবরেটরিসের মালিকানাধীন একটি ক্ষুদ্রতরঙ্গ গ্রাহক যন্ত্র দিয়ে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণের মান নিরূপণ করছিলেন। তারা যে বিকিরণ আবিষ্কার করেন তা আইসোট্রপীয় ছিল এবং এর মধ্যে কৃষ্ণবস্তুর বিকিরণের ধর্ম বাদ্যমান ছিল; এর তাপমাত্রা ছিল প্রায় ৩ কেলভিন। এই আবিষ্কার মহাবিস্ফোরণ মতবাদের পক্ষে একটি যুক্তেই হয়ে দাঁড়ায় এবং পেনজিয়াস ও উইলসনকে এনে দেয় নোবেল পুরস্কার

১৯৮৯ সালে নাসা পটভূমি বিকিরণ অনুসন্ধানের জন্য একটি মহাকাশযান প্রেরণ করে যার নাম কসমিক ব্যাকগ্রাউন্ড এক্সপ্লোরার উপগ্রহ বা কোবে (COBE)। এই কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে ১৯৯০ সালে প্রাপ্ত তথ্য পটভূমি বিকিরণ সম্বন্ধে মহাবিস্ফোরণ তত্ত্বের ধারণাকে সমর্থন করে। কোবে কর্তৃক প্রাপ্ত অবশেষ তাপমাত্রার (residual temperature) পরিমাণ ছিল ২.৭৩৬ কেলভিন। আরও জানা যায়, সিএমবি প্রতি ১০ ভাগে এক ভাগ মাত্রায় আইসোট্রপীয়।[১৯] ২০০৩ সালে ডব্লিউএমএপি নামক কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে আরও নিখুঁত তথ্য পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে মহাজাগতিক স্ফীতিশীলতা সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি নকশা ভুল প্রমাণিত হয়। তবে এর তথ্যগুলো মূল মহাজাগতিক স্ফীতিশীলতা তত্ত্বের পক্ষেই থাকে।

প্রাথমিক মৌলসমূহের প্রাচুর্য

সম্পাদনা

মহাবিস্ফোরণ নকশা ব্যবহার করে মহাবিশ্বে উপস্থিত সাধারণ হাউড্রোজেনের সাথে হিলিয়াম-৪, হিলিয়াম-৩, ডিউটেরিয়াম এবং হিলিয়াম-৭ এর অনুপাত পরিমাপ করা সম্ভব।[২০] এই মৌলগুলোর প্রাচুর্য মূলত ফোটন এবং বেরিয়নের অনুপাতের উপর নির্ভর করে। এই নকশায় যে অনুপাতের (ভর অনুসারে) আশা করা হয়েছে তা অনেকটা এরকম:

  • He/H -এর জন্য প্রায় ০.২৫
  • H/H -এর জন্য প্রায় ১০−৩
  • He/H -এর জন্য প্রায় ১০−৪
  • Li/H -এর জন্য প্রায় ১০−৯

এই সকল অনুপাত একটিমাত্র সংখ্যার মাধ্যমে আগেই বলে দেয়া যায়। সেই সংখ্যাটি হল বেরিয়ন এবং ফোটনের অনুপাত। এই অনুসিদ্ধান্তটি Li এবং He -এর জন্য অনেকটা শিথিল; কারণ এই দুটি মৌলের পদ্ধতিগত অনিশ্চয়তা সম্বন্ধে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যায়না। যাহোক, এই প্রাচুর্য মহাবিস্ফোরণ তত্ত্বের পক্ষে একটি সুষ্পষ্ট প্রমাণ; কারণ মহাবিস্ফোরণ ছাড়া অন্য কোন তত্ত্ব দ্বারা এই প্রাচুর্যের পরিমাণ ব্যাখ্যা করা যায় না।[২১] আশ্চর্যজনকভাবে দেখা যায় নবীন মহাবিশ্বে ডিউটেরিয়াম অপেক্ষা হিলিয়ামের পরিমাণ বেশি অথবা হিলিয়মের (He) চেয়ে ডিউটেরিয়াম বেশি; এবং এরা সর্বদা ধ্রুব অনুপাত বজায় রাখে।

ছায়াপথীয় বিবর্তন ও বণ্টন

সম্পাদনা

সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ছায়াপথ এবং কোয়াসারসমূহের অন্তর্গঠন এবং বৃহৎ পরিসর গঠনের বণ্টন ব্যবস্থা মহাবিস্ফোরণ তত্ত্বকে সমর্থন করে। এ ধরনের সকল পর্যবেক্ষণ পর্যালোচনা করে জানা যায় যে মহাবিস্ফোরণ সংঘটিত হওয়ার প্রায় এক বিলিয়ন বছর পর প্রথম ছায়াপথ এবং কোয়াসার সৃষ্টি হয়; আর তখন থেকেই তৈরি হতে থাকে আরও বৃহৎ পরিসরের গঠন যেমন ছায়াপথ স্তবক এবং মহা স্তবক। ছায়াপথগুলোর বয়স ধীরে ধীরে বাড়ছে আর সেই সাথে তাদের মধ্যে ঘটছে নানা বিবর্তন। এ কারণেই দূরবর্তী ছায়াপথগুলোকে (যারা অনেকটাই প্রাচীন) অপেক্ষাকৃত নিকটবর্তী ছায়াপথ (বর্তমান সময়ে পর্যবেক্ষণকৃত) অপেক্ষা অন্য রকম মনে হয়। উপরন্তু যেসব ছায়াপথ দেরীতে গঠিত হয়েছে তারা প্রাচীন ছায়াপথ থেকে এমনিতেই আলাদা হয়, যদিওবা বর্তমানগুলো দূরবর্তী হয়। অর্থাৎ সৃষ্টির সময়টিই মুখ্য হয়ে দাড়াচ্ছে, বিবর্তন যার চাবিকাঠি। এই পর্যবেক্ষণগুলো স্থির অবস্থা তত্ত্বের সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে।[২২]

সমস্যা ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

সম্পাদনা

বর্তমানে প্রায় সকল গবেষক মহাবিস্ফোরণ তত্ত্বকে মেনে নিলেও এক সময় এমনটি ছিল না। তখন অনেকেই কিছু বিকল্প মহাজাগতিক নকশা বিশ্বাস করতো। এগুলো নিয়েই গড়ে উঠেছে অ-প্রমিত বিশ্বতত্ত্ব (Non-standard Cosmology)। সময়ের সাথে সাথে অনেক বিতর্কেরও সৃষ্টি হয়েছে যার মূল উদ্দেশ্য ছিল ঠিক কোন নকশাটি জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের সাথে সবচেয়ে ভাল খাঁপ খায় তা বের করা। বর্তমানে মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব জনপ্রিয়তা লাভ করায় এই বিতর্কগুলোকে ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়; এগুলোর সমাধান করার জন্য এই তত্ত্বে অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে আবার মাঝেমাঝে উন্নততর পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। সমাধান হয়ে গেছে এমন সমস্যাগুলো ছাড়াও আরও কিছু সমস্যা রয়েছে, যেমন: কাস্পি হ্যালো সমস্যা এবং শীতল অদৃশ্য বস্তুর বামন ছায়াপথ সমস্যা। তবে এই সমস্যাগুলো মহাবিস্ফোরণ তত্ত্বের সাথে খুব একটা সাংঘর্ষিক নয়।

মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব এমন অনেকগুলো প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে যার কোন সঠিক উত্তর দেয়ার মতো পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা আমাদের পৃথিবীতে নেই। এর মধ্যে রয়েছে অদৃশ্য শক্তি, অদৃশ্য বস্তু, মহাজাগতীক স্ফীতিশীলতা ইত্যাদি থেকে উদ্ভূত সমস্যাগুলো। এগুলোকে পদার্থবিজ্ঞানের সমাধানহীন সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। এগুলো সমাধানের জন্য প্রয়োজন মহাবিস্ফোরণ কেন্দ্রীন সংশ্লেষ বিষয়ে স্বাধীন গবেষণা, মহাজাগতিক ক্ষুদ্র তরঙ্গ পটভূমি বিকিরণের মূল বিষয় নিয়ে অধ্যয়ন এবং মহাবিশ্বের বৃহৎ পরিসর গঠনে বিদ্যমান অতি নব তারা নিয়ে অধ্যয়ন। সমস্যাগুলোর মহাকর্ষীয় প্রভাব পর্যবেক্ষণ এবং তত্ত্বের মাধ্যসে বর্তমানে অনেকটাই বোধগম্য হয়েছে। কিন্তু এই তত্ত্বগুলোকে কণা পদার্থবিজ্ঞানের আদর্শ নকশার মধ্যে সঠিকভাবে বিন্যস্ত করা হয়নি। মৌলিক পদার্থবিজ্ঞান দ্বারা অনেকগুলোর উত্তর বের করার চেষ্টা করা হয়েছে, আর এ থেকেই বিভিন্ন তত্ত্বের সৃষ্টি হয়েছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা এবং তৎসংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় এখানে ব্যাখ্যা করা হল:

দিগন্ত সমস্যা

সম্পাদনা

তথ্য আলোর চেয়ে দ্রুতগতিতে চলতে পারে না, এই ধারণা থেকেই দিগন্ত সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, অনেক দূরত্বে অবস্থিত মহাবিশ্বের দুটি স্থান যাদের মধ্যবর্তী দূরত্ব আলোর দ্রুতির এবং মহাবিশ্বের বয়সের গুণফলের চেয়েও বেশি, তাদের মধ্যে কারণিক (causal) সংযোগ ঘটা কখনই সম্ভব নয়।[২০] মহাজাগতিক ক্ষুদ্র তরঙ্গ পটভূমি বিকিরণের যে আইসোপট্রপি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে তা এক্ষেত্রে আরও সমস্যার সৃষ্টি করেছে, কারণ এই সময়ের যে দিগন্ত তার আকার মহাকাশের প্রায় ২ ডিগ্রী অংশের সমমানের। মহাবিশ্ব যদি প্লাংক যুগের পর থেকে একইভাবে সম্প্রসারিত হতে থাকত তবে এই অঞ্চলগুলোতে তাপমাত্রা সমান থাকতে পারতো না।

সমতা সমস্যা

সম্পাদনা
 
মহাবিশ্বের পূর্ণ জ্যামিতি নির্ধারিত হয়, ওমেগা মহাজাগতিক মানদণ্ড ১-এর চেয়ে বেশি না কম তার দ্বারা। উপর থেকে নিচে: একটি বদ্ধ মহাবিশ্বে জ্যামিতি, উন্মুক্ত মহাবিশ্বে এবং সমতল মহাবিশ্বে।

সমতা সমস্যা একটি পর্যবেক্ষণিক সমস্যা যার ফ্রিদমান-লেমাইট্‌র-রবার্টসন ওয়াকার মেট্রিকের সাথে সম্পর্কিত।[২০] সাধারণভাবে মহাবিশ্বের তিন ধরনের জ্যামিতি থাকতে পারে: অধিবৃত্তীয় জ্যামিতি, ইউক্লিডীয় জ্যামিতি অথবা উপবৃত্তীয় জ্যামিতিপীড়ন-শক্তি টেন্সরের সাহায্যে পরিমাপকৃত মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরিমাণের উপর নির্ভর করে কোন ধরনের জ্যামিতি কাজ করবে। মহাবিশ্বের ঘনত্ব যদি ক্রান্তি ঘনত্ব থেকে কম হয় তবে তা অধিবৃত্তীয় জ্যামিতি মেনে চলবে, বেশি হলে উপবৃত্তীয় এবং সমান হলে ইউক্লিডীয়। মহাবিশ্বকে অবশ্যই তার আদি অবস্থার ক্রান্তি ঘনত্বের ১০১৫ ভাগের এক ভাগের মধ্যে থাকতে হত। আর তা নাহলে হয় এর তাপীয় মৃত্যু ঘটত অথবা মহা সংকোচন হত, এ সকল ক্ষেত্র বর্তমানে মহাবিশ্ব আর টিকে থাকত না। এই সমস্যার একটি সমাধান হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে মহাবিশ্বের স্ফীতিশীলতা তত্ত্ব। স্ফীতিশীলতার পর্যায়ে, স্থান-কাল এতোটা অধিক হারে সম্প্রসারিত হয়েছিলো যে এর সাথে সংশ্লিষ্ট যেকোন অবশেষ বক্রতা (residual curvature) বেশ ভালোভাবেই নিঃশেষিত হয়ে সমতলের সৃষ্টি হয়। এজন্যই বলা হয় স্ফীতিশীলতা তত্ত্ব স্বীকার করে নিলে মহাবিশ্বকে প্রায় সম্পূর্ণ সমতল ধরতে হয়।

চৌম্বক একমেরুসমূহ

সম্পাদনা

১৯৭০-এর দশকের শেষ ভাগে প্রথম চৌম্বক একমেরু ধারণাটি উত্থাপিত হয়। মহা একীভূত তত্ত্ব অনুসারে ভবিষ্যদ্বাণী করা গিয়েছিল যে, মহাকাশে বেশ কিছু বিন্দু ত্রুটি রয়েছে যারা স্বাভাবিক পর্যবেক্ষণের চেয়ে অনেক বেশি ঘনত্ববিশিষ্ট চৌম্বক একমেরু হিসেবে প্রকাশিত হতে পারে। মহাজাগতিক স্ফীতিশীলতা তত্ত্ব দ্বারা এই সমস্যার একটি সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব। স্ফীতিশীলতা তত্ত্ব পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের সকল বিন্দু ত্রুটি দূর করে তেমনিভাবে, যেমন করে তা মহাবিশ্বের গঠনকে সমতলীয় হিসেবে আখ্যায়িত করার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে।[২০]

বেরিয়ন অপ্রতিসাম্য

সম্পাদনা

এই বিষয়টি এখনও বোধগম্য নয় কেন মহাবিশ্বে পদার্থের থেকে প্রতিপদার্থের পরিমাণ বেশি। ধারণা করা হয়, মহাবিশ্ব যখন নবীন এবং প্রচণ্ড উত্তপ্ত ছিল তখন, এটি পরিসাংখ্যিক সাম্যাবস্থা বজায় রাখছিল অর্থাৎ এতে বেরিয়ন এবং প্রতিবেরিয়নের পরিমাণ সমান ছিল। কিন্তু বর্তমান পর্যবেক্ষণ প্রমাণ করেছে যে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব প্রায় পুরোটাই পদার্থ দ্বারা গঠিত। এর সমাধানে বলা হয়েছে, বেরিওজেনেসিস নামক একটি অজ্ঞাত পদ্ধতি এই অপ্রতিসাম্যের সৃষ্টি করেছে। বেরিওজেনেসিস ঘটার জন্য শাখারভ শর্তগুলো অবশ্যই পূর্ণ হতে হবে। বিজ্ঞানী আন্দ্রেই শাখারভ এই শর্তগুলো উত্থাপন করেন। এই শর্তগুলোতে বলা হয়েছে, মহাবিশ্বে সেই বেরিয়ন সংখ্যা থাকতে হবে যা সংরক্ষিত নয়, সি-প্রতিসাম্য এবং সিপি-প্রতিসাম্য লঙ্ঘন করতে হবে এবং মহাবিশ্বকে তাপগতীয় সাম্যাবস্থা থেকে দূরে থাকতে হবে।[২৩] আদর্শ নকশায় এই সবগুলো শর্ত পালিত হয়, কিন্তু এর প্রভাব বিদ্যমান বেরিয়ন অপ্রতিসাম্য ব্যাখ্যা করার মত যথেষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারে নি।[২৪] বর্তমানে জেনেভায় অবস্থিত সার্নে যথেষ্ট প্রতি-হাইড্রোজেন সঞ্চয়ের জন্য গবেষণা চলছে যাতে তাদের সাথে হাইড্রোজেনের বর্ণালীর তুলনা করা যেতে পারে। এ থেকে যদি তাদের বর্ণালীর মধ্যে কোন পার্থক্য পাওয়া যায় তবে তা সিপিটি প্রতিসাম্য লঙ্ঘন করবে এবং তথাপি লোরেন্‌ৎস লঙ্ঘন ঘটবে।

বর্তুলাকার স্তবক যুগ

সম্পাদনা

১৯৯০-এর দশকে বর্তুলাকার স্তবকের যে পর্যবেক্ষণ করা হয় তা মহাবিস্ফোরণ তত্ত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়নি। মহাবিশ্বে তারার মোট সংখ্যার মধ্যে যে পরিমাণ বর্তুলাকার স্তবক রয়েছে সেগুলোর কম্পিউটার সিমুলেশনের মাধ্যমে জানা যায় তারা প্রায় ১৫ বিলিয়ন বছর পূর্বে গঠিত হয়েছে। কিন্তু মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব অনুসারে মহাবিশ্বের বয়স মাত্র ১৩.৭ বিলিয়ন বছর। অবশ্য এই সমস্যাটি কয়েক বছর পরই সমাধান হয়ে যায়, যখন কম্পিউটার সিমুলেশনে আরও উন্নত প্রযুক্তির আবির্ভাব ঘটে। এ সময় নাক্ষত্রিক বায়ুর প্রভাব ধরা হয় এবং স্তবকগুলোর বয়স আরও কম পাওয়া যায়।[২৫] অবশ্য বর্তমানেও সন্দেহ রয়েছে যে স্তবকগুলোর বয়স আসলেই সঠিকভাবে নির্ণয় করা হয়েছে কি-না। কিন্তু এতে কোন সন্দেহ নেই যে এরা মহাবিশ্বের প্রাচীনতম সৃষ্টিগুলোর একটি।

অদৃশ্য বস্তু

সম্পাদনা
 
মহাবিশ্বের বিভিন্ন উপাদানের পরিমাণের আনুপাতিক শক্তি-ঘনত্বের একটি পাই ছক; ল্যাম্ব্‌ডা-সিডিএম নকশা অনুসারে।

১৯৭০ ও ৮০'র দশকে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ দ্বারা এটি প্রমাণিত হয়, মহাবিশ্বের ছায়াপথসমূহ এবং এদের অন্তবর্তী স্থানে বিদ্যমান মহাকর্ষীয় বলের আপাত শক্তির পরিমাণ এত বেশি যে দৃশ্যমান পদার্থগুলোর পক্ষে এ শক্তি সরবরাহ করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ নির্দিষ্ট পদার্থের তুলনায় শক্তি অনেক বেশি। এর পর বিজ্ঞানীরা এই ধারণা গ্রহণ করতে বাধ্য হন যে, মহাবিশ্বের শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ পদার্থই সাধারণ বেরিয়ন পদার্থ নয় বরং এরা হচ্ছে অদৃশ্য বস্তু (dark matter)। এর পূর্বে ধারণা করা হত মহাবিশ্বের সকল পদার্থই সাধারণ যা আমরা দেখতে বা অনুধাবন করতে পারি। কিন্তু এই ধারণা পর্যবেক্ষণের সাথে সামাঞ্জস্যহীন ছিল। অদৃশ্য বস্তুর ধারণা বাদ দিলে মহাবিশ্বে যে পরিমাণ ডিউটেরিয়াম থাকা উচিত ছিল বর্তমানে তার চেয়ে অনেক কম রয়েছে। এই সমস্যা নিরসনের জন্য অদৃশ্য বস্তুর কল্পনা করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। প্রথম আবিষ্কারের পরপর এই বস্তুটি ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করলেও বর্তমানে অধিকাংশ বিশ্বতত্ত্ববিদ এটি মেনে নিয়েছেন। কারণ বর্তমানে সিএমবি'র মাধ্যমে যে এনিসোট্রপি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে তা বিজ্ঞানসম্মতভাবে ব্যাখ্যা করতে হলে এর কোন বিকল্প নেই। এছাড়াও ছায়াপথ স্তবক সমূহের বেগের উঠানাম, বৃহৎ-পরিসরে মহাবিশ্বের বণ্টন, মহাকর্ষীয় লেন্সিং অধ্যয়ন এবং ছায়াপথ স্তবক থেকে প্রাপ্ত রঞ্জন-রশ্মি নিয়ে গবেষণা করতে যেয়ে এই বস্তুর উপস্থিতি স্বীকার করে নিতে হয়েছে। ২০০৬ সালে আগস্ট মাসে বুলেট স্তবকের ছায়াপথসমূহের মধ্যে সংঘর্ষ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বর্তমানে বিজ্ঞানীরা অদৃশ্য বস্তুর ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন।[২৬][২৭] অদৃশ্য বস্তু চিহ্নিত করা প্রায় দুঃসাধ্য। কারণ এর মহাকর্ষীয় প্রভাব সঠিকভাবে বোঝা যায় না। এখন পর্যন্ত কোন গবেষণাগারে সরাসরি অদৃশ্য বস্তু পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয় নি। কণা পদার্থবিজ্ঞানের অনেক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার বিষয় বর্তমানে অদৃশ্য বস্তু।

অদৃশ্য শক্তি

সম্পাদনা

১৯৯০-এর দশকে মহাবিশ্বের মোট ভর ঘনত্বের একটি বিস্তৃত পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়। এই পরিসংখ্যান অনুসারে মহাবিশ্বের ভর ঘনত্ব ক্রান্তি ঘনত্বের মাত্র শতকরা ৩০ ভাগ।[] মহাজাগতিক ক্ষুদ্র তরঙ্গ পটভূমির পরিমাপ করার মাধ্যমে জানা গেছে যে মহাবিশ্ব স্প্যাশিয়ালভাবে প্রায় সমতলীয়। এ কারণে এর শতকরা প্রায় ৭০ভাগ শক্তি ঘনত্বের কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। এই রহস্যটি বর্তমানে অন্য একটি বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করে: লা ধরনের অতি নবতারার স্বাধীন পরিমাপের মাধ্যমে এটি প্রমাণ করা হয়েছে যে, মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ একটি অরৈখিক ত্বরণে হচ্ছে। এই ত্বরণ ব্যাখ্যার জন্য সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বে এমন একটি মহাবিশ্বের ধারণা গ্রহণ করা প্রয়োজন যাতে ঋণাত্মক চাপবিশিষ্ট বিপুল সংখ্যক শক্তি উপাদান থাকা প্রয়োজন। এ থেকেই এসেছে অদৃশ্য শক্তির ধারণা। ধারণা করা হয় এই শক্তি অবশিষ্ট ৭০% গঠন করেছে। এর প্রকৃতি বর্তমান মহাবিস্ফোরণ তত্ত্বের অন্যতম রহস্যময় বিষয়। এর সম্ভাব্য সমাধান পাওয়া যায় মহাজাগতিক ধ্রুবকের স্কেলার মান গ্রহণ এবং ভৌত শুন্য স্থান গঠনকারী কুইনটেসেন্সের পরিমাণ ধরে নেয়া। তবে এ বিষয়টি বোঝার জন্য বর্তমানেও গবেষণা এগিয়ে চলছে। ২০০৬ সালে ডব্লিউএমএপি থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে মহাবিশ্বে ৭৪% অদৃশ্য শক্তি, ২২% অদৃশ্য বস্তু এবং মাত্র ৪% সাধারণ বস্তু রয়েছে।

মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব অনুসারে ভবিষ্যৎ

সম্পাদনা

অদৃশ্য শক্তি আবিষ্কারের পূর্বে বিশ্বতত্ত্ববিদগণ মহাবিশ্বের পরিণতি সম্পর্কে দুইটি ধারণা পোষণ করতেন। মহাবিশ্বের ভর ঘনত্ব যদি ক্রান্তি ঘনত্বের চেয়ে বেশি হয় তবে মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হয়ে একটি নির্দিষ্ট আকারে পৌঁছানোর পর আবার সংকুচিত হতে শুরু করবে। তখন এটি আবার ঘন ও উত্তপ্ত হতে থাকবে এবং একসময় সেই আদি অবস্থায় পৌঁছুবে যে অবস্থায় মহা সংকোচন শুরু হয়েছিলো। অন্যদিকে এই ঘনত্ব যদি ক্রান্তি ঘনত্বের সমান বা কম হয় তবে একসময় সম্প্রসারণ ধীর হয়ে যাবে, কিন্তু কখনই শেষ হবে না। মহাবিশ্ব যতই প্রসারিত হবে তত তার ঘনত্ব কমবে এবং এর ফলে আর নতুন তারা গঠিত হবে না। মহাবিশ্বের গড় তাপমাত্রা এসিম্পটোটিকভাবে পরম শূন্যের দিকে অগ্রসর হবে এবং মহা হিমায়ন (big freeze) অবস্থার সৃষ্টি হবে। এ সময় কৃষ্ণ গহ্বরসমূহ স্বতঃ বাষ্পীভূত হবে। মহাবিশ্বের এনট্রপি বাড়তে বাড়তে এমন একটি বিন্দুতে পৌঁছাবে যখন এ থেকে কোন সুসংগঠিত শক্তি পাওয়া যাবে না। এই অবস্থার নাম মহাবিশ্বের তাপীয় মৃত্যু। উপরন্তু, প্রোটন যদি অস্থিতিশীল হয় তাহলে হাউড্রোজেন (বর্তমান মহাবিশ্বের অন্যতম প্রাথমিক বেরিয়নিক নম্বর) অদৃশ্য হয়ে যাবে, রয়ে যাবে কেবল বিকিরণ।

মহাবিশ্বের ত্বরণ সহকারে সম্প্রসারণের উপর আধুনিক পর্যবেক্ষণের ফলে আমরা জানতে পারছি যে বর্তমান দৃশ্যমান মহাবিশ্ব আমাদের ঘটনা দিগন্তের বাইরে চলে যাবে এবং আমরা আর বর্তমান দৃশ্যমান স্থানগুলোকেও দেখতে পারবো না। এর ফলে কি হতে পারে তা সঠিক জানা যায় নি। মহাবিশ্বের ল্যাম্ব্‌ডা-সিডিএম নকশায় অদৃশ্য শক্তিকে একটি মহাজাগতিক ধ্রুবক হিসেবে দেখানো হয়েছে। এই তত্ত্বে বলা হয়েছে, মহাবিশ্বের কেবল মহাকর্ষীয়ভাবে সীমাবদ্ধ বস্তুগুলোই একসাথে থাকবে, যেমন ছায়াপথ; অবশ্য মহাবিশ্বের প্রসারণ ও শীতলায়নের ফলে এদেরও তাপীয় মৃত্যু ঘটবে। অন্য একটি মতবাদ হচ্ছে ফ্যান্টম শক্তি মতবাদ। এটি অনুসারে ছায়াপথ স্তবক, তারা, গ্রহ, পরমাণু বা কেন্দ্রীন সবগুলোই এক সময় ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে এবং চির প্রসারণশীল মহাবিশ্বে এ কারণে এক সময় বিগ রিপ সৃষ্টি হবে।

মহাবিস্ফোরণের সীমানা পেরিয়ে অনুমানমূলক পদার্থবিজ্ঞান

সম্পাদনা
 
মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের একটি চিত্রলৈখিক উপস্থাপন। এখানে স্ফীতিশীলতামূলক ইপককে বামদিকে নির্দেশিত মেট্রিক প্রসারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। চিত্র: ডব্লিউএমএপি বিজ্ঞপ্তি, ২০০৬

বিশ্বতত্ত্বে মহাবিস্ফোরণ তত্ত্বকে অবশ্যম্ভাবী ধরলেও ভবিষ্যতে এর সংস্কারের প্রয়োজন হতে পারে। অতীতে যে সময়টিতে স্ফীতি শুরু হয়েছে বলে আমরা ধরে নিয়েছি তা সম্বন্ধে আমাদের প্রকৃত জ্ঞান খুব সীমিত। তত্ত্বের সাহায্য উপস্থাপিত মহাবিশ্বের চিত্রের বাইরে আরও কিছু থাকতে পারে। স্ফীতির ক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই ধরে নেই যে, সূচকীয় সম্প্রসারণ মহাকাশের বৃহৎ অঞ্চলকে আমাদের পর্যবেক্ষণযোগ্য দিগন্তের বাইরে ঠেলে দিয়েছে। তখন প্রকৃতপক্ষে কি ঘটেছিল তা সম্বন্ধে বিস্তারিত জ্ঞান পাওয়া যাবে যখন উচ্চ শক্তি স্কেলে পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রসমূহ বোধগম্য হবে। এ সম্বন্ধে সকল অনুমান কোয়ান্টাম মহাকর্ষ হিসেবে আলোচিত হয়।

কয়েকটি প্রস্তাবনা হচ্ছে:

এগুলোর মধ্যে অনেকগুলো মাঝেমধ্যে একটির সাথে অন্যটি মিলে যায়। তবে এর মূল নীতিগুলো এখন পর্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত নয়।

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "মহাবিশ্ব" - লেখক : ড.হুমায়ূন আজাদ, ISBN: 984 401 568 3 ,প্রকাশকাল: ২০০০ সাল।
  2. ভি. স্লিফার, "আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি" কর্তৃক প্রস্তুতকৃত একটি পেপার, (১৯১৫).
  3. "জর্জ ল্যমেত্র" (১৯২৭)। "Un Univers homogène de masse constante et de rayon croissant rendant compte de la vitesse radiale des nébuleuses extragalactiques"। Annals of the Scientific Society of Brussels৪৭এ: ৪১।  ইংরেজি অনুবাদ: "A homogeneous universe of constant mass and growing radius accounting for the radial velocity of extragalactic nebulae"। Monthly Notices of the Royal Astronomical Society৯১: ৪৮৩–৪৯০। ১৯৩১। . "সুপ্রাচীন পরমাণু" শব্দটি এখানে উল্লেখিত আছে: G. Lemaître, Nature ১২৮ (১৯৩১) suppl.: ৭০৪।
  4. এডুইন হাবল (১৯২৯)। "A relation between distance and radial velocity among extra-galactic nebulae"। Proc. Nat. Acad. Sci.১৫: ১৬৮–১৭৩। 
  5. ই. ক্রিশ্চিয়ানসন। এডুইন হাবল: Mariner of the Nebulae 
  6. পি.জে.ই. পিব্‌লস এবং ভারত রাত্র (২০০৩)। "The cosmological constant and dark energy"Reviews of Modern Physics75: 559–606। 
  7. এফ. হয়েল, '"A New Model for the Expanding universe", রয়েল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির মাসিক বিজ্ঞপ্তি, 108 (1948), 372.
  8. "The book in question can be downloaded here"। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মার্চ ২০০৭ 
  9. E. A. Milne (১৯৩৫)। Relativity, Gravitation and World Structure। Oxford University Press। 
  10. R. C. Tolman (১৯৩৪)। Relativity, Thermodynamics, and Cosmology। Oxford: Clarendon Press। LCCN 340-32023।  Reissued (1987) New York: Dover আইএসবিএন ০-৪৮৬-৬৫৩৮৩-৮.
  11. "Zwicky, Fritz"SpringerReference। Berlin/Heidelberg: Springer-Verlag। 
  12. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৩ এপ্রিল ২০০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মার্চ ২০০৭ 
  13. S. W. Hawking and G. F. R. Ellis, The large-scale structure of space-time (Cambridge, 1973).
  14. A. V. Ivanchik, et al. "The fine-structure constant: a new observational limit on its cosmological variation and some theoretical consequences", Astronomy and Astrophysics 343 (1999) 439.
  15. J. Goodman Physics Review D, 52 (1995) 1821.
  16. Laher, Ross; Masci, Frank; Groom, Steve; Rusholme, Benjamin; Shupe, David; Jackson, Ed; Flynn, Dave; Landry, Walter; Terek, Scott (২০১৮-১০-১৮)। "Processing Images from the Zwicky Transient Facility"Robotic Telescopes, Student Research and Education Proceedings, Vol 1, No 1। Our Solar Siblings। ডিওআই:10.32374/rtsre.2017.031 
  17. Dag., Heward-Mills,। আদর্শ সংসারআইএসবিএন 978-1-64135-581-0ওসিএলসি 1157209309 
  18. D. N. Spergel, et al. "First-year Wilkinson Microwave Anisotropy Probe (WMAP) observations: Determination of cosmological parameters", Astrophysical Journal Supplement Series, 148 (2003) 175.
  19. N.W. Boggess, et al. "The COBE Mission: Its Design and Performance Two Years after the launch," Astrophysical Journal, 397 (1992), 420.
  20. Kolb, Edward (১৯৮৮)। The Early Universe। Addison-Wesley। আইএসবিএন ০-২০১-১১৬০৪-৯  অজানা প্যারামিটার |coauthors= উপেক্ষা করা হয়েছে (|author= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); line feed character in |coauthors= at position 8 (সাহায্য)
  21. Steigman, Andrew L (২০১৯-০৭-১১)। "The Foreign Service Of The United States"ডিওআই:10.4324/9780429310997 
  22. E. Bertschinger (২০০১)। "Cosmological perturbation theory and structure formation"  Edmund Bertschinger (১৯৯৮)। "Simulations of structure formation in the universe"Annual Review of Astronomy and Astrophysics36: 599–654। [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  23. A. D. Sakharov, "Violation of CP invariance, C asymmetry and baryon asymmetry of the universe", Pisma Zh. Eksp. Teor. Fiz. 5, 32 (1967), translated in JETP Lett. 5, 24 (1967).
  24. 1950-, Resnick, Marcia (১৯৭৫)। See। M. Resnick। আইএসবিএন 0-915896-03-6ওসিএলসি 836583259 
  25. A. A. Navabi and N. Riazi, "Is the Age Problem Resolved?" Journal of Astrophysics and Astronomy 24 (2003), 3.
  26. "A direct empirical proof of the existence of dark matter"Arxiv 
  27. "Dark Matter Observed"SLAC Today। ৯ সেপ্টেম্বর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ এপ্রিল ২০০৭ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা

মহাবিস্ফোরণের সাধারণ আলোচনা

সম্পাদনা
এ বিষয়ের পাঠ্য পুস্তকের একটি তালিকা দেখার জন্য, দেখুন: ভৌত বিশ্বতত্ত্ব.

ধর্ম এবং দর্শন

সম্পাদনা

গবেষণা সহযোগী নিবন্ধসমূহ

সম্পাদনা