নাটোর
নাটোর বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি জেলা শহর। প্রশাসনিকভাবে এটি রাজশাহী বিভাগের নাটোর জেলার নাটোর সদর উপজেলার সদর দপ্তর। নাটোর শহরের আয়তন বর্তমানে ৩৯.৮৪ বর্গকিলোমিটার বা ১৫.৩৮ বর্গমাইল ও জনসংখ্যা ১,৪৭,১৯৮ জন মাত্র। এটি "ক" শ্রেণির পৌরসভা দ্বারা শাসিত হয়। যাতায়াত ব্যবস্থার মাধ্যম শুধু মাত্র রেল ও সড়ক পথ। এ শহরে কোন বিমানবন্দর নেই। নৌ পথে যোগাযোগ এক সময় থাকলেও, কালের বিবর্তনে তা এখন আর নেই। নাটোর কাঁচাগোল্লা, বনলতা আর অর্ধ বঙ্গেশ্বরী রানী ভবানীর জন্য বিখ্যাত। রানী ভবানী একসময় নাটোর বসে অর্ধেক বাংলার রাজত্ব করেছেন। নাটোর বাংলাদেশের প্রাচীন শহরের মধ্য একটি হলেও বর্তমানে অন্যান্যের তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে আছে এই শহরের উন্নয়নযাত্রা।
নাটোর | |
---|---|
শহর | |
![]() | |
দেশ | ![]() |
বিভাগ | রাজশাহী বিভাগ |
জেলা | নাটোর জেলা |
উপজেলা | নাটোর সদর উপজেলা |
সরকার | |
• ধরন | পৌরসভা |
• শাসক | নাটোর পৌরসভা |
• মেয়র | উমা চৌধুরী জলি |
আয়তন | |
• মোট | ৩৯.৮৪ বর্গকিমি (১৫.৩৮ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা | |
• মোট | ১,৪৭,১৯৮ |
• জনঘনত্ব | ৩,৭০০/বর্গকিমি (৯,৬০০/বর্গমাইল) |
সময় অঞ্চল | বাংলাদেশ সময় (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৬৪০০ |
ইতিহাস
সম্পাদনাঅষ্টাদশ শতকের শুরুতে নাটোর রাজবংশের উৎপত্তি হয়। ১৭০৬ সালে পরগণা বানগাছির জমিদার গণেশ রায় ও ভবানী চরণ চৌধুরী রাজস্ব প্রদানে ব্যর্থ হয়ে চাকরিচ্যুত হন। দেওয়ান রঘুনন্দন জমিদারিটি তার ভাই রামজীবনের নামে বন্দোবস্ত নেন। এভাবে নাটোর রাজবংশের পত্তন হয়। রাজা রামজীবন নাটোর রাজবংশের প্রথম রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন ১৭০৬ সালে মতান্তরে ১৭১০ সালে। ১৭৩৪ সালে তিনি মারা যান। ১৭৩০ সালে রাণী ভবানীর সাথে রাজা রাম জীবনের দত্তক পুত্র রামকান্তের বিয়ে হয়। রাজা রাম জীবনের মৃত্যুর পরে রামকান্ত নাটোরের রাজা হন। ১৭৪৮ সালে রাজা রামকান্তের মৃত্যুর পরে নবাব আলীবর্দী খাঁ রাণী ভবানীর ওপর জমিদারি পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেন। রাণী ভবানীর রাজত্বকালে তার জমিদারি বর্তমান রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, যশোর, রংপুর, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, মালদহ জেলা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
ভূগোল
সম্পাদনানাটোর রাজশাহী থেকে পূর্বে এবং বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে পশ্চিমে, ২৪৹২৪'৫১" উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮৹৫৯'৯" দক্ষিণ দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত।[১] সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ২৩ মিটার এবং এর মোট আয়তন ৩৯.৮৪ বর্গকিলোমিটার। ভূসংস্থান অনুসারে এটি সমতলভূমিতে অবস্থিত হলেও উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে কিছুটা ঢালু। বছরের অধিকাংশ সময়ই এখানে ক্রান্তীয় গরম এবং শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে। গড়ে তাপমাত্রা থাকে সর্বোচ্চ ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোনিম্ন ৮.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত এখানেও এপ্রিল থেকে জুন হল সবচেয়ে উষ্ণতম মাস এবং ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি হল সবচেয়ে শীতলতম মাস। নাটোরের গড় বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১৫৫৬ মিলিমিটার।
প্রশাসনিক এলাকা
সম্পাদনাএ শহরের কিছু এলাকার নাম:
- আলাইপুর (জেলা কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ অফিস)
- হরিশপুর ( জেলা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল)
- কান্দিভিটুয়া
- কানাইখালী
- মল্লিকহাটি
- বড়গাছা (রেলওয়ে স্টেশন,নাটোর)
- হাজীপাড়া
- পটুয়াপাড়া (জেলা স্টেডিয়াম)
- হুগোলবাড়ীয়া (ডিস্টিলারি শিল্প)
- গাড়ীখানা (কেন্দ্রীয় কবরস্থান)
- তেবাড়িয়া (হাট)
- মীরপাড়া (জেলা পশু হাসপাতাল)
- ধোপাপাড়া
- পালপাড়া
- ঘোষপাড়া
- বঙ্গজল (রাণীভবানি রাজ প্রাসাদ)
- ঝাউতলা
- চৌকিড়পাড়
- নীচাবাজার (কেন্দ্রীয় বাজার)
- উপড়বাজার (ব্যবসায়ী এলাকা)
- শুকলপট্টি
- জেলেপাড়া
- পিলখানা
- সায়েদবাড়ি
- লালবাজার
- রথবাড়ী
- কাপুড়িয়াপট্টি
- মাদ্রাসামোড় (জিরো পয়েন্ট)
- বনবেলঘড়িয়া (পশ্চিম বাইপাস)
- সুগারমিল এলাকা (নাটোর সুগারমিল নিমিটেড)
- চৌধুরী বড়গাছা
- উপশহর (আবাসিক এলাকা)
- বলাড়ীপাড়া (আবাসিক এলাকা)
- চকরামপুর
- রামাইগাছি (টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট)
- পিটি আই মোড় (জেলা টিচার্স ট্রেনিং কেন্দ্র,রাজলংকা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র )
- পুলিশ লাইন (জেলা কেন্দ্রীয় জেলখানা)
- ডোমপাড়া
- সাঁওতালপাড়া(তেবাড়িয়া)
- চ্যাঁইপাড়া
- ফুলবাগান (টেলিভিশন ভবন ,উপজেলা পরিষদ)
- গুড়পট্টি
- চামড়াপট্টি (জেলা পরিষদ)
- দীঘাপতিয়া (উত্তরা গণভবন)
- দত্তপাড়া (বিসিক এলাকা)
- দিয়ার ভিটূয়া
- নবীননগর
- হাজরা
- মোহনপুর
- ভবানীগঞ্জ
- বিহারীপাড়া
- শিমুলতলা,হুগোলবাড়িয়া
- নিমতলা
যোগাযোগ ব্যবস্থা
সম্পাদনানাটোর জেলার সাথে বাংলাদেশের সকল জেলার উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে। নাটোর উত্তরবঙ্গের মাঝখানে অবস্থানের কারণে সড়কপথে অন্য জেলার সাথে সহজে যোগাযোগ করা যায়। নাটোরের উপর দিয়ে যাওয়া মহাসড়ক যথা:
- নাটোর- রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক
- নাটোর- পাবনা-কুষ্টিয়া-যশোর মহাসড়ক
- নাটোর-বগুড়া মহাসড়ক
- নাটোর-সিরাজগঞ্জ-ঢাকা মহাসড়ক
- নাটোর-নওগাঁ মহাসড়ক
রেলপথ
সম্পাদনানাটোর রেলওয়ে স্টেশন বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের নাটোর জেলার একটি রেলস্টেশন। এটি নাটোর পৌর এলাকার ৮ নং ওয়ার্ডে দক্ষিণ বড়গাছা নামক এলাকায় অবস্থিত। এর উত্তরে (সামনে) সান্তাহার জংশন এবং দক্ষিণে (পিছনে) আব্দুলপুর জংশন অবস্থিত। এই রেলস্টেশনটি নাটোর জেলার প্রধান রেলওয়ে স্টেশন। এই স্টেশনে প্রতিদিন ১৫টি ট্রেন (১৩টি আন্তঃনগর এবং ২টি মেইল) ট্রেন মোট ৩০ বার যাত্রাবিরতি দেয়। নাটোর রেলওয়ে স্টেশন বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের অর্ন্তভুক্ত।
বিমানপথ
সম্পাদনাএ শহরে কোন বিমানবন্দর নেই। নিকটবর্তী বিমানবন্দর শাহ মখদুম বিমানবন্দর। ইহা একটি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর। নাটোর হতে দূরত্ব ৪৬ কিলোমিটার।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান
সম্পাদনাশিক্ষা
সম্পাদনাশিক্ষা প্রতিষ্ঠান
সম্পাদনা- কলেজ
- নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা সরকারি কলেজ
- রাণী ভবানী সরকারি মহিলা কলেজ
- দিঘাপতিয়া এম. কে. কলেজ
- নাটোর সিটি কলেজ
- নাটোর মহিলা কলেজ
- নাটোর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়
- মাধ্যমিক বিদ্যালয়
- নাটোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
- নাটোর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
- বিশ্ববিদ্যালয়
খেলাধুলা
সম্পাদনা- শংকর গোবিন্দ চৌধুরী স্টেডিয়াম
- নাটোর ইনডোর স্টেডিয়াম
শিল্প ও কারখানা
সম্পাদনা- ঔষধি গ্রাম
- নাটোর চিনিকল লিমিটেড
- প্রাণ এগ্রো কোম্পানি লিমিটেড
- যমুনা ডিস্টিলারি লিমিটেড
- এস এস ফিড কোম্পানি লিমিটেড
- আরিফ এগ্রো কোম্পানি লিমিটেড
- বিসিক শিল্প পার্ক
- নাটোর অর্থনৈতিক অঞ্চল-২ (প্রস্তাবিত)
- আটো রাইস মিল
- রাজলঙ্কা পাওয়ার প্লান্ট লিমিটেড
ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠান
সম্পাদনানাটোরে অধিকাংশ ব্যাংকের এক এবং একাধিক শাখা রয়েছে। আর্থিক সুবিধা প্রদানের জন্য বেশ কয়েকটি বীমা কর্পোরেশনের শাখা রয়েছে।
সরকারি কের ব্যাংকের শাখা সংখ্যা
নাম | শাখা |
---|---|
সোনালী |
|
রুপালি |
|
জনতা |
|
অগ্রণী |
|
বেসিক |
|
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি
সম্পাদনা- শঙ্কর গোবিন্দ চৌধুরী
- কুবীর চান শাহ্
- দেওয়ান সাগর
- হযরত ঘাসী দেওয়ান
- মহারাজা জগদিন্দ্রনাথ রায়
- মহারানী ভবানী
- মরমী কবি আহসান আলী
- স্যার যদুনাথ সরকার
- শরৎ রায়
- হাসার উদ্দীন কবিরত্ন
- মাদার বখশ
- মোঃ মকসুদুর রহমান
- রাধাচরণ চক্রবর্তী
- এয়ার ভাইস মার্শাল খাদেমুল বাসার
- জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় তাইজুল ইসলাম
দর্শনীয় স্থান
সম্পাদনা- নাটোর রাজবাড়ী
- উত্তরা গণভবন
- গ্রীন ভেলি পার্ক
সংবাদ মাধ্যম
সম্পাদনা- দৈনিক উত্তরবঙ্গ বার্তা
- নারদ বার্তা
- দৈনিক চলনবিল বার্তা
সরকারি দপ্তরসমূহ
সম্পাদনাপ্রশাসন ও রাজনীতি
সম্পাদনা১৮৫৯ সালে নাটোর পৌরসভা গঠিত হয়। পাকিস্তান শাসনামলে বেসিক ডেমোক্রেটিক অর্ড্যার, ১৯৫৯ অনুযায়ী ১৯৬০ সালে নাটোর টাউন কমিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ লোকাল কাউন্সিল অ্যান্ড মিউনিসিপাল কমিটি (অ্যামেমেন্ট) অর্ডার, ১৯৭২ অনুযায়ী নাটোর টাউন কমিটিকে নাটোর শহর কমিটিতে রুপান্তর করা হয়। ১৮৫৯ সালে একে পৌরসভায় পরিনত করা হয়। নাটোর অবিভক্ত বাংলার দ্বিতীয় পৌরসভা (প্রথম:ক্যালকাটা পৌরসভা বর্তমানে কলকাতা)। প্রতিষ্ঠার সময় এর আয়তন ছিলো মাত্র ৪.৪৫ বর্গ কিলোমিটার। ১৯৮৪ সালে নাটোরকে জেলা শহরের মর্যাদা দেওয়া হয়।
নাটোর পৌরসভা ৯টি ওয়ার্ড ও ৩৩টি মহল্লা নিয়ে গঠিত। প্রতি ওয়ার্ডের জন্য সরাসরি ভোটে নির্বাচিত একজন কাউন্সিলর থাকেন। পৌরসভার প্রধান হলেন মেয়র।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "24.414291, 88.986085 Latitude longitude Map"। www.latlong.net। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-০৩।