মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী
মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী, যিনি জেনারেল এম. এ. জি. ওসমানী নামে অধিক পরিচিত (১ সেপ্টেম্বর ১৯১৮-১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪), বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি ও সর্বাধিনায়ক ছিলেন।[১][২] তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রথম সেনাপ্রধান ছিলেন।[৩]
জেনারেল বঙ্গবীর মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী | |
---|---|
জন্ম | সুনামগঞ্জ, সিলেট, বাংলাদেশ | ১ সেপ্টেম্বর ১৯১৮
মৃত্যু | ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪ লন্ডন, ইংল্যান্ড | (বয়স ৬৫)
সমাধি | শাহজালাল মাজার গোরস্তান সিলেট, বাংলাদেশ |
আনুগত্য | ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত) পাকিস্তান (১৯৪৭ সাল পরবর্তী) বাংলাদেশ |
সেবা/ | বাংলাদেশ সেনাবাহিনী |
কার্যকাল | ১৯৩৯-১৯৪৭ ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী ১৯৪৭–১৯৬৭ পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১৯৭১-১৯৭২ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী |
পদমর্যাদা | জেনারেল |
নেতৃত্বসমূহ | প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ৯/১৪ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট ইপিআর প্রধান সেনাপতি মুক্তিবাহিনী এপ্রিল ১৯৭১-এপ্রিল ১৯৭২ |
যুদ্ধ/সংগ্রাম | দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৪৭ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৬৫ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ১৯৭১ |
পুরস্কার | বীর উত্তম স্বাধীনতা পুরস্কার |
জন্ম
সম্পাদনাওসমানীর জন্ম ১৯১৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জে। তার পৈত্রিক বাড়ি সিলেট জেলার বালাগঞ্জ থানার (বর্তমান ওসমানী নগর উপজেলা) দয়ামীরে। তার পিতা খান বাহাদুর মফিজুর রহমান এবং মাতা জোবেদা খাতুন। খান বাহাদুর মফিজুর রহমানের দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সবার ছোট ছেলে ওসমানী। ওসমানীর জন্মের প্রাক্কালে ১৯১৮ সালে খান বাহাদুর মফিজুর রহমান তৎকালীন আসামের সুনামগঞ্জ সদর মহকুমায় সাব ডিভিশনাল অফিসার হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন৷ তাদের বসবাস ছিল সুনামগঞ্জ সদরেই। এখানেই জন্ম হয় ওসমানীর।[৪]
শিক্ষা
সম্পাদনাপিতার চাকরির সূত্রে তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে বিভিন্ন জায়গায়। তাই কিছুদিন পর বদলির আদেশ নিয়ে সুনামগঞ্জ থেকে চলে যেতে হয় গোহাটিতে৷ আর সেখানেই ওসমানীর প্রাথমিক শিক্ষার শুরু হয়৷ ১৯২৩ সালে 'কটনস্ স্কুল অব আসাম'-এ ভর্তি হন তিনি ৷ লেখাপড়ায় যে তিনি খুবই মনোযোগী ছিলেন, তার প্রমাণ হলো স্কুলের প্রত্যেক পরীক্ষায় তিনি প্রথম হতেন৷ ১৯৩২ সালে ওসমানী সিলেট গভর্নমেন্ট পাইলট হাই স্কুল এ ভর্তি হন ৷ তৎকালীন সময়ে সিলেটের এই স্কুলটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল৷ ১৯৩৪ সালে সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন অসাধারণ কৃতিত্বের সাথে৷ সমগ্র ব্রিটিশ ভারতে তিনি প্রথম স্থান লাভ করেন৷ এই অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য ব্রিটিশ সরকার এম. এ. জি. ওসমানীকে প্রাইওটোরিয়া পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে সম্মানিত করে। আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৩৮ সালে।[৫]
সেনাবাহিনীর জীবন
সম্পাদনাবিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে ওসমানী তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন৷১৯৩৯ সালে তিনি ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমীতে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। দেরাদুনে ব্রিটিশ- ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণ শেষে তিনি ১৯৪০ সালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে কমিশন প্রাপ্ত হন। সেসময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছিলো। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সার্ভিস কোরের একটি ব্যাটেলিয়ানে তিনি বার্মা (মিয়ানমার) সেক্টরে কাজ করেন। ১৯৪২ সালে মেজর পদে উন্নীত হন। ১৯৪২ সালে ওসমানী ছিলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ মেজর।[৬] ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে ওসমানী ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে বিশেষ পরীক্ষা দিয়ে নিয়মিত কমিশন লাভ করেন৷ সে বছর তিনি ইন্ডিয়ান পলিটিক্যাল সার্ভিসের জন্যও মনোনীত হন৷ কিন্তু তিনি সামরিক বাহিনীতেই থেকে যান৷[৬] দেশবিভাগের পর ১৯৪৭ সালের ৭ই অক্টোবর ওসমানী পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। এসময় তার পদমর্যাদা ছিল লেফটেন্যান্ট কর্নেল। ১৯৪৯ সালে তিনি চিফ অফ জেনারেল স্টাফের ডেপুটি হন। ১৯৫১ সনে তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর ১ম ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক নিযুক্ত হন৷ এর পর তিনি চট্টগ্রাম সেনানিবাস প্রতিষ্ঠা করেন৷ ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ববাংলার আরও কয়েকটি আঞ্চলিক স্টেশনের দায়িত্বও তিনি সফলতার সাথে পালন করেন৷[৬] পরবর্তীকালে তিনি ১৪তম পাঞ্জাব রেজিমেন্ট এর ৯ম ব্যাটেলিয়ানের অধিনায়ক, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর)-এর অতিরিক্ত কমান্ড্যান্ট, সেনাবাহিনীর জেনারেল স্টাফ অফিসার প্রভৃতি দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি কর্নেল পদমর্যাদা লাভ করেন এবং সেনাবাহিনীর হেডকোয়ার্টারের জেনারেল স্টাফ অ্যান্ড মিলিটারি অপারেশনের ডেপুটি ডিরেক্টরের দায়িত্ব পান। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে তিনি পাকিস্তানের হয়ে যুদ্ধ করেন৷ 'ডেপুটি ডাইরেক্টর অব মিলিটারি অপারেশন' হিসেবে যুদ্ধরত বিভিন্ন সামরিক হেডকোয়ার্টারে যোগাযোগ করতেন তিনি ৷ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ যখন শেষ হয় তখন তার বয়স চল্লিশের উপরে৷ ১৯৬৬ সালের মে মাসে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে অবসরকালীন ছুটি নেন এবং পরের বছর (১৯৬৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি) কর্নেল পদবীতে অবসর গ্রহণ করেন।[৫][৬]
রাজনৈতিক জীবন
সম্পাদনা১৯৭০ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে '৭০-এর নির্বাচনে ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ-বিশ্বনাথ এলাকা থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।[৫] ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন সিলেট-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[৭] ভোটে বিজয়ী হয়ে ডাক, তার, টেলিযোগাযোগ, অভ্যন্তরীণ নৌ যোগাযোগ, জাহাজ ও বিমান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একদলীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের বিরোধিতা করে ১ মে ১৯৭৪ সালে তিনি সংসদ সদস্য, মন্ত্রিত্ব এবং আওয়ামী লীগ সদস্য পদ ত্যাগ করেন।[৮]
২৯ আগস্ট ১৯৭৫ সালে মোশতাক আহমেদের মন্ত্রিসভায় তিনি অবৈতনিক প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ৩ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চার জাতীয় নেতার হত্যাকান্ডে পর তিনি পদত্যাগ করেন।
সেপ্টেম্বর ১৯৭৬ সালে ওসমানী “জাতীয় জনতা পার্টি” নামে রাজনৈতিক দল গঠন করে সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৮ ও ১৯৮১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৮২ সালে এরশাদ সামরিক আইন জারি করলে ওসমানী প্রতিবাদ করেন। এরপরে তিনি রাজনীতি থেকে পুরোপুরি সরে দাঁড়ান।
মুক্তিযুদ্ধ
সম্পাদনামুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ওসমানী সীমান্ত পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। ১১ এপ্রিল, ১৯৭১ প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ভাষণ দেন৷ ঐ ভাষণে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবকাঠামো গঠনের কথা উল্লেখ করে এমএজি ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে ঘোষণা দেন৷[৬][৯] উল্লেখ্য যে ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি ও সরকার গঠন করা হয় এবং পরবর্তীকালে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার শপথ গ্রহণ করে।[৫] ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল গঠিত হয় মুজিবনগর সরকার, ওসমানীকে করা হয় মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি।[১০]
ওসমানীর নির্দেশনা অনুযায়ী সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। প্রতিটি সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে এক একজন সেনাবাহিনীর অফিসারকে নিয়োগ দেয়া হয়। বিভিন্ন সেক্টর ও বাহিনীর মাঝে সমন্বয়সাধন করা, রাজনৈতিক নেতৃত্বের সাথে যোগাযোগ রাখা, অস্ত্রের যোগান নিশ্চিত করা, গেরিলা বাহিনীর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা-প্রভৃতি কাজ সাফল্যের সাথে পালন করেন ওসমানী। ১২ এপ্রিল থেকে এমএজি ওসমানী মন্ত্রীর সমমর্যাদায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন৷ রণনীতির কৌশল হিসেবে প্রথমেই তিনি সমগ্র বাংলাদেশকে ভৌগোলিক অবস্থা বিবেচনা করে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে নেন এবং বিচক্ষণতার সাথে সেক্টরগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন৷ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ছিল দক্ষ এবং সংখ্যায় অনেক বেশি৷ এই বিবেচনায় ওসমানীর রণকৌশল ছিল প্রথমে শত্রুকে নিজেদের ছাউনিতে আটকে রাখা এবং তাদেরকে যোগাযোগের সবগুলো মাধ্যম হতে বিছিন্ন করে রাখা৷ এজন্য এম. এ. জি. ওসমানী মে মাস পর্যন্ত নিয়মিত পদ্ধতিতে যুদ্ধ পরিচালনা করেন৷ মে মাসের পর তার মনে হয় প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কমসংখ্যক সৈন্য নিয়ে শত্রুকে ছাউনিতে আটকে রাখা গেলেও ধ্বংস করা সম্ভব নয়৷ এ বিষয়টি তিনি সরকারকে জানিয়ে যুদ্ধে কৌশলগত পরিবর্তন আনেন৷ প্রাক্তন ইপিআর এর বাঙালি সদস্য, আনসার, মোজাহেদ, পুলিশ বাহিনী ও যুবকদের নিয়ে একটি গণবাহিনী বা গেরিলাবাহিনী গঠন করেন।[৫]
মুক্তির সংগ্রামে এমএজি ওসমানীর হাতে কোনো নৌবাহিনী ছিল না। তবে নিয়মিত নৌবাহিনীর কিছু অফিসার এমএজি ওসমানীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতেন৷ তাছাড়া ফ্রান্সের জলাভূমিতে থাকা পাকিস্তানের ডুবোজাহাজের কিছু সংখ্যক কর্মীও মুক্তিবাহিনীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন৷ কিছুদিন পর এমএজি ওসমানী তাদের এবং কিছু সংখ্যক গেরিলা যুবক নিয়ে একটি নৌ-কমান্ডো বাহিনী গঠন করেন। আগস্টের মাঝামাঝিতে তারা নদীপথে শত্রুর চলাচল প্রায় রুদ্ধ করে দেন। নৌবাহিনী গঠনের ফলে একটা বড় ধরনের সংকটের অবসান হলেও দেশ স্বাধীন হবার আগে আগে আরও একটা সঙ্কট এমএজি ওসমানী অনুভব করেন। সেটা হচ্ছে তার হাতে কোনো বিমানবাহিনী ছিল না। শেষের দিকে দুটি হেলিকপ্টার, ও একটি অটার আর তার নিজের চলাচলের জন্য একটি ডাকোটা নিয়ে ছোট্ট একটি বিমানবাহিনী গঠন করেছিলেন তিনি৷
পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ
সম্পাদনাপাকিস্তানি বাহিনী ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সামরিক বাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানী উপস্থিত ছিলেন না। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে ভারতের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্ব ফ্রন্টের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। অন্যদিকে পাকিস্তানের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় সৈন্যবাহিনী প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজী। এরা দুজনেই ছিলেন আঞ্চলিক প্রধান।[১১]
যুদ্ধ-পরবর্তী জীবন
সম্পাদনা১৯৭১ সালের ২৬শে ডিসেম্বর তাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চার তারকা জেনারেল পদমর্যাদা প্রদান করা হয় এবং তিনি নব দেশের প্রথম সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে নিযুক্তি পান। ১৯৭২ সালের ১২ এপ্রিল তিনি তার এ দায়িত্ব থেকে অবসর নেন এবং মন্ত্রিসভায় যোগ দেন অভ্যন্তরীণ নৌ যোগাযোগ, জাহাজ ও বিমান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে। ১৯৭৩ সালের মার্চে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷ ঐ নির্বাচনে ওসমানী তার নিজের এলাকা থেকে অংশ নেন এবং নির্বাচনে অভাবনীয় সাফল্য লাভ করেন৷ ১৯৭৩ এর নির্বাচনে ওসমানী ৯৪ শতাংশ ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন৷ ডাক, তার, টেলিযোগাযোগ, অভ্যন্তরীণ নৌ যোগাযোগ, জাহাজ ও বিমান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন। ১৯৭৪ সালের মে মাসে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হলে তিনি সংসদ সদস্যপদ এবং আওয়ামী লীগের সদস্যপদ ত্যাগ করেন। সেবছর ২৯শে আগস্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদের প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পান, তবে ৩রা নভেম্বর জেলহত্যার ঘটনার পর পদত্যাগ করেন। ১৯৭৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ওসমানী 'জাতীয় জনতা পার্টি' নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। ১৯৭৮ ও ১৯৮১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৮ সালের ৩রা জুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জিয়াউর রহমান জয়লাভ করেন। এই নির্বাচনে মোট ১০জন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেনঃ
১। জনাব আজিজুল ইসলাম ২। জনাব আবুল বাশার ৩। প্রিন্সিপাল এ, হামিদ (এম.এস.সি) ৪। হাকিম মাওলানা খবিরুদ্দিন আহমেদ ৫। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান (বি,ইউ, পি,এস,সি) ৬। জেনারেল (অবঃ) মুহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানি ৭। জনাব মোঃ আব্দুস সামাদ ৮। জনাব মোঃ গোলাম মোর্শেদ ৯। শেখ মোঃ আবু বকর সিদ্দিক ১০। সৈয়দ সিরাজুল হুদা
১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জেনারেল (অবঃ) এমএজি ওসমানী অংশ নেন। তিনি জাতীয় জনতা পার্টির চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি মনোনীত হয়েছিলেন,গণ ঐক্য জোট এবং ৫টি রাজনৈতিক জোটের যথাঃ জাতীয় জনতা পার্টি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় আওয়ামী পার্টি (মোজাফ্ফর), বাংলাদেশ পিপলস লীগ, গণ আজাদী লীগ। ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ৩৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। ঐ নির্বাচনে জয়লাভ করেন বিচারপতি আব্দুস সাত্তার।
মৃত্যু
সম্পাদনাক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার্থে লন্ডন থাকাকালীন ১৯৮৪ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি এমএজি ওসমানী মৃত্যুবরণ করেন। তাকে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় সিলেটের হযরত শাহজালাল মাজারে সমাহিত করা হয়।
স্বীকৃতি
সম্পাদনাতার স্মরণে ঢাকায় ‘ওসমানী উদ্যান’ গড়ে উঠেছে ও বাংলাদেশ সচিবালয়ের বিপরীতে ‘ওসমানী মেমোরিয়াল হল’ স্থাপিত হয়েছে৷ এছাড়া তার সিলেটস্থ বাসভবনকে জাদুঘরে পরিণত করা হয়েছে। সরকারি উদ্যোগে সিলেট শহরে তার নামে একটি মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে৷ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এমআইএসটি এবং বুটেক্স এর আবাসিক হল "ওসমানী হল" কে তার নামে নামকরণ করা হয়েছে।[১২]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ বঙ্গবন্ধু হ্ত্যাকাণ্ড ফ্যাক্টস্ এণ্ড ডকুমেন্টস্, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, প্রকাশক সেলিম হাসান তরফদার, ৪র্থ সংস্করণ ৯৪ খ্রিঃ
- ↑ সিলেটের দুইশত বছরের আন্দোলন, তাজুল মোহাম্মদ; প্রকাশক: ওসমান গণি, আগামী প্রকাশনী, ৩৬ বাংলাবাজার, ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রকাশকাল: ১৯৯৫।
- ↑ "List of Chief of Army Staff - Bangladesh Army"। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী (ইংরেজি ভাষায়)।
- ↑ সিলেট বিভাগের ইতিবৃত্ত
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ সিলেট বিভাগের ইতিবৃত্ত, মোহাম্মদ মুমিনুল হক, প্রকাশক; সেন্টার ফর বাংলাদেশ রিচার্স ইউ, কে, গ্রন্থ প্রকাশকাল: সেপ্টেম্বর ২০০১; পৃষ্ঠা ১৫।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ গুণীজন.অর্গ[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] ওয়েবসাইটে মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী এর জীবনী
- ↑ "১ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)। জাতীয় সংসদ। বাংলাদেশ সরকার। ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ জিবলু রহমান। ভাসানী-মুজিব-জিয়া। বাংলাদেশ: শ্রীহট্ট প্রকাশ। পৃষ্ঠা ৪৩৬। আইএসবিএন 9789849302728।
- ↑ বাংলাদেশের ডায়েরী, "স্বাধীনতা যুদ্ধ ও বাংলাদেশের অভ্যূদয়, ৩১১ সংস্করণ: ৭১৮ পৃষ্ঠা, প্রকাশক, গ্লোব লাইব্রেরী (প্রাঃ) লিমিটেড ঢাকা, আগস্ট ২০০২।
- ↑ "মুক্তিযুদ্ধের মহা-সমরনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল ওসমানী"। দৈনিক নয়া দিগন্ত।
- ↑ একাত্তরের রণাঙ্গনের অকথিত কিছু কথা - নজরুল ইসলাম,মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তরে জনসংযোগ কর্মকর্তা
- ↑ "জেনারেল ওসমানীকে কি আমরা ভুলে গেছি?"। যুগান্তর।