চণ্ডী (ইন্দোনেশিয়ার মন্দির)
ইন্দোনেশিয়ায় চণ্ডী (উচ্চারণ [tʃandi] () বলতে কোনো )হিন্দু বা বৌদ্ধ মন্দিরকে বোঝায়। এগুলির অধিকাংশই নির্মিত হয়েছিল আনুমানিক খ্রিস্টীয় চতুর্থ থেকে পঞ্চদশ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে অর্থাৎ সে-দেশের জামান হিন্দু-বুদ্ধ বা "হিন্দু-বৌদ্ধ যুগ" নামে পরিচিত সময়কালে।[১]
ইন্দোনেশীয় ভাষার অভিধান কামুস বেসার বাহাসা ইন্দোনেশিয়া গ্রন্থে প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী, চণ্ডী হল পূজার্চনা অথবা হিন্দু বা বৌদ্ধ রাজা ও পুরোহিতবর্গের চিতাভস্ম সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত প্রাচীন প্রস্তরনির্মিত ভবন।[২] ইন্দোনেশীয় প্রত্নতত্ত্ববিদেরা চণ্ডীগুলিকে ইন্দোনেশিয়ায় ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের পালনের ব্যবহৃত হিন্দু ও বৌদ্ধ পরম্পরার পবিত্র স্থাপনা হিসেবে বর্ণনা করেন।[৩] অবশ্য তোরণ, শহরের ধ্বংসাবশেষ, পুষ্করিণী ও স্নানাগারের মতো প্রাচীন ধর্মনিরপেক্ষ স্থাপনাগুলিকেও প্রায়শই চণ্ডী বলা হয়; অপরদিকে যে ধর্মস্থানগুলি নির্দিষ্টভাবে সমাধিমন্দির হিসেবে ব্যবহৃত হয় সেগুলিকে বলা হয় কুংকুপ।[১]
হিন্দু বালিদ্বীপীয় স্থাপত্যশিল্পে চণ্ডী শব্দটির দ্বারা বোঝানো হয় একটি পুরা-র মধ্যে অবস্থিত দ্বারমণ্ডপ, প্রবেশপথ, সিঁড়ি ও পিরামিড-আকৃতির ছাদ সহ পাথর বা ইটের তৈরি এক-কক্ষীয় ধর্মস্থান বিশেষ। বেশিরভাগ চণ্ডীই পূর্ব জাভাদ্বীপীয় মন্দিরের আদলে নির্মিত এবং কোনো না কোনো নির্দিষ্ট দেবতার প্রতি উৎসর্গিত। বালিদ্বীপীয়দের কাছে চণ্ডীকে যে প্রাচীন স্থাপনা হতে হবে এমন নয়। কারণ চণ্ডীগুলি সংশ্লিষ্ট পুরার মধ্যে বারবার পুনর্নির্মিত হয়। বানিউওয়াংগির আলাস পুরও-তে এই ধরনের পুনর্নির্মিত মন্দিরের উদাহরণ পাওয়া যায়।[৪]
সমসাময়িক ইন্দোনেশীয় বৌদ্ধ দৃষ্টিকোণ থেকে চণ্ডী বলতে প্রাচীন বা নতুন দুই ধরনের ধর্মস্থানকেই বোঝায়। উদাহরণস্বরূপ, ইন্দোনেশিয়ায় বেশ কয়েকটি সমসাময়িক বৌদ্ধ বিহারে বিখ্যাত বৌদ্ধ মন্দিরের প্রামাণ্য আকারের অনুকৃতি বা পুনর্নির্মিত রূপ বিদ্যমান। এর মধ্যে রয়েছে পাওয়ন[৫] ও প্লাওসনের পেরওয়ারা (অন্তর্ভুক্ত) মন্দিরগুলির অনুকৃতি। বৌদ্ধধর্মে ধর্মস্থান হিসেবে একটি চণ্ডীর ভূমিকা কখনও কখনও একটি স্তুপের সঙ্গে বিনিময়ার্হ হয়। স্তুপের মতোই এখানেও দাহকৃত বৌদ্ধ ভিক্ষু, পৃষ্ঠপোষক বা দাতাদের দেহাবশেষ বা চিতাভস্ম রক্ষিত থাকে। বরোবুদুর, মুয়ারা তাকুস ও বাতুজায়া হল প্রকৃত প্রস্তাবে বৃহদায়তন স্তুপের উদাহরণ।
আধুনিক ইন্দোনেশীয় ভাষায় চণ্ডী শব্দটি "মন্দির" অথবা অনুরূপ স্থাপনার (বিশেষত হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মের) অর্থে অনূদিত হতে থাকে। এই কারণে কম্বোডিয়া (যেমন আংকর বাট), চম্পা (মধ্য ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম), থাইল্যান্ড, লাওস, মিয়ানমার ও ভারতের মন্দিরগুলিকেও ইন্দোনেশীয় ভাষায় চণ্ডী বলা যায়।
পরিভাষা
সম্পাদনাচণ্ডী বলতে এমন এক ধরনের স্থাপনা বোঝায়, যেটি পিরামিড-আকৃতির স্তম্ভ এবং দ্বারমণ্ডপ-বিশিষ্ট ভারতীয় শৈলীর এক-কক্ষীয় ধর্মস্থান।[৭] ইন্দোনেশিয়ায় অনেক মন্দির-পর্বতের নামের উপসর্গ হিসেবে চণ্ডী শব্দটি ব্যবহৃত হয়। এই মন্দিরগুলি ব্রহ্মাণ্ডের গুণাবলির প্রতীক পৌরাণিক মেরু পর্বতের প্রতীক হিসেবে নির্মিত হত। অবশ্য চণ্ডী শব্দটি সমকালে নির্মিত গপুরা (দ্বার), পেতিরতান (পুষ্করিণী) ও কয়েকটি বসতি চত্বরের মতো ধর্মনিরপেক্ষ স্থাপনার নামের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হয়েছিল। মন্দির নয় এমন চণ্ডীর উদাহরণ হল মজপহিতের বাজাং রাতু ও রিঙ্গিন লাওয়াং দ্বার। ত্রোওউলানের চণ্ডী তিকাস স্নানের পুকুর এবং পেনাংগুনগান পর্বতের ঢালে জলতুণ্ড এবং সেই সঙ্গে রাতু বোকো এবং ত্রোওউলান শহরের ধ্বংসাবশেষের মতো কিছু ধর্মনিরপেক্ষ বসতি অঞ্চল ও নগরাঞ্চলকেও চণ্ডী বলে মনে করা হয়।
প্রাচীন জাভায় কোনো মন্দিরকে সম্ভত প্রাচীনকালে বলা হত প্রাসাদ (সংস্কৃত: प्रासाद)। মঞ্জুশ্রীগৃহ শিলালিপিতে (৭৯২ খ্রিস্টাব্দ) প্রাপ্ত প্রমাণে দেখা যায় সেউ মন্দিরকে বলা হয়েছে "প্রাসাদ বজ্রাসন মঞ্জুশ্রীগৃহ"।[৮]:৮৯ চণ্ডী নামটি কম্বোডীয় ও থাই শব্দ "প্রাসাত" শব্দটির সমতুল্য, যার অর্থ একটি মন্দিরের মিনার-আকৃতির স্থাপনা।
নাম-ব্যুৎপত্তি
সম্পাদনা"আনুমানিক সপ্তম থেকে পঞ্চদশ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে জাভা, সুমাত্রা ও বালিতে ইট ও পাথর দিয়ে শতাধিক ধর্মীয় স্থাপনা নির্মিত হয়েছিল। এগুলিকে বলা হয় চণ্ডী। এই শব্দটির দ্বারা প্রবেশদ্বারা, এমনকি স্নানাগারের মতো অন্যান্য প্রাক্-ইসলামি স্থাপনাকেও বোঝানো হয়, কিন্তু এর প্রধান স্বরূপটি ছিল ধর্মস্থানের।"
— সোয়েকমোনো, আর. "চণ্ডী: সিম্বল অফ দ্য ইউনিভার্স"[৯]
হিন্দু দৃষ্টিকোণ থেকে চণ্ডী শব্দটি মৃত্যুদেবী দুর্গার অন্যতম রূপ চণ্ডিকার নাম থেকে উৎসারিত হয়েছে বলে মনে করা হয়।[১০] এই ধারণা থেকে অনুমিত হয় যে প্রাচীন ইন্দোনেশিয়ায় চণ্ডীর সঙ্গে শবাগারের একটি সম্পর্ক তথা পরলোকের সঙ্গে সম্পর্কও ছিল বলে বিশ্বাস করা হত। হিন্দু-বৌদ্ধ মন্দিরের সঙ্গে চণ্ডী, চণ্ডিকা বা দুর্গা নামের সংযোগ ভারতে অথবা ইন্দোনেশিয়া ব্যতীত দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড বা মিয়ানমারের মতো দেশে দেখা যায় না।
বৌদ্ধ দৃষ্টিকোণ থেকে অন্য এক তত্ত্ব অনুযায়ী, চণ্ডী শব্দটি সম্ভবত পালি শব্দ চেদি (সংস্কৃত: চৈত্য) শব্দের স্থানীয় রূপ—যেটি থাই শব্দ ছেদি-র সঙ্গে সম্পর্ক। উক্ত থাই শব্দটি দ্বারা স্তূপ বোঝাতে পারে, আবার এটি বোধিসত্ত্ব চণ্ডীর (যিনি চুণ্ডী বা চণ্ডা নামেও পরিচিত) সঙ্গেও সম্পর্কিত হতে পারে।[১১]
ইতিহাসবিদেরা মনে করেন যে, প্রাচীন জাভার মন্দিরগুলিতে মৃত রাজা বা রাজপরিবারের সদস্যদের চিতাভস্ম সংরক্ষণও করা হত। বৌদ্ধদের স্তূপ নির্মাণের ধারণার মধ্যেও অনুরূপ বিষয় দেখা যায়। সেখানে বৌদ্ধ ভিক্ষু, বৌদ্ধ রাজা বা বৌদ্ধধর্মের পৃষ্ঠপোষকদের চিতাভস্ম ও দেহাবশেষ সংরক্ষিত হত। দেবতার মূর্তি মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রধান কক্ষে রাখা হত। মূর্তিটি নির্মিত হত মৃত ব্যক্তির চেহারার আদলে। দেবরাজের ধারণা অনুসারে মৃত রাজাকে বিষ্ণু বা শিবের ন্যায় এক দেবত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি মনে করা হত। এই ধরনের মূর্তির উদাহরণ পাসুরুয়ানে বেলাহান মন্দিরে রাজা ঐরলাংগার মূর্তিটি গরুড়ের পিঠে বসা বিষ্ণুর আদলে নির্মিত।
স্থাপত্য
সম্পাদনাচণ্ডী স্থাপত্য বাস্তুশাস্ত্র-ভিত্তিক হিন্দু স্থাপত্য অনুসারে নির্মিত। মন্দিরের নকশা, বিশেষত মধ্য জাভা যুগে, মণ্ডল মন্দির পরিকল্পনার এবং হিন্দু মন্দিরের বৈশিষ্ট্যসূচক সুউচ্চ শিখররীতির অনুরূপ ছিল। চণ্ডীগুলি নকশা করা হত দেবতাদের বাসস্থান পবিত্র মেরু পর্বতের অনুকরণে। সমগ্র মন্দির হিন্দু সৃষ্টিতত্ত্ব ও বিভিন্ন লোকের স্তর অনুসারে হিন্দু ব্রহ্মাণ্ডের একটি অনুকৃতি।[১২]
গঠন উপাদান
সম্পাদনাচণ্ডীর গঠন ও নকশা বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রাধান্যপরম্পরাকে সূচিত করে, যা অল্প পবিত্র থেকে পবিত্রতম লোকের প্রতীক। হিন্দু-বৌদ্ধ স্থাপত্যের ভারতীয় ধারায় তিনটি ভাগে বা তিনটি উপাদানে উপাদানগুলি সাজানোর ধারণাটি প্রচলিত। ক্রমে মন্দিরের অলংকরণ, পরিকল্পনা ও নকশা তিনটি উপাদানের মধ্যে স্থান বিন্যাসের নীতি গ্রহণ করে; এগুলি সাধারণভাবে চিহ্নিত করা হয় পাদ (ভিত্তি), শরীর (কেন্দ্র) ও মস্তক (ছাদ) হিসেবে। তিনটি ক্ষেত্র বিন্যস্ত হয় পবিত্র প্রাধান্যপরম্পরা অনুযায়ী। হিন্দু ও বৌদ্ধ মন্দিরের ধারণাগুলির নিজস্ব পরিভাষা আছে, কিন্তু ধারণা মূল কথাগুলি একই। মন্দিরক্ষেত্রের নকশা (অনুভূমিকভাবে) বা মন্দিরের গঠন (উল্লম্বভাবে) তিনটি ক্ষেত্রে বিভক্ত:[১৩]
- ভূর্লোক (বৌদ্ধধর্মে: কামধাতু), সাধারণ নশ্বরদের নিম্নতম লোক; এটি মানব, পশু ও দানবদের লোক। এখানে মানুষ এখনও তাদের কামলালসা, কামনাবাসনা ও জীবনযাপনের অপবিত্র পথের দ্বারা আবদ্ধ। প্রত্যেকটি মন্দিরের বাহ্য অঙ্গন ও পাদদেশ ভূর্লোকের প্রতীক।
- ভূবর্লোক (বৌদ্ধধর্মে: রূপধাতু), পুণ্যশ্লোক, ঋষি, সাধু ও নিম্নস্তরের দেবতাদের মধ্যবর্তী লোক। এখানে মানুষ সত্যের আলোর সন্ধান পায়। প্রত্যেক মন্দিরের মধ্যবর্তী অঙ্গন ও মূল ভবন ভূবর্লোকের প্রতীক।
- স্বর্লোক (বৌদ্ধধর্মে: অরূপধাতু), দেবতাদের সর্বোচ্চ ও পবিত্রতম লোক, যাকে স্বর্গলোকও বলা হয়। প্রত্যেক মন্দিরের অন্তর্বর্তী অঙ্গন ও ছাদ স্বর্লোকের প্রতীক। হিন্দু স্থাপত্যের চূড়া সাধারণত রত্ন বা বজ্র দ্বারা শোভিত হয়। পূর্ব জাভা পর্যায়ে সেগুলি ছিল ঘনক্ষেত্রাকার। অন্যদিকে বৌদ্ধ স্তূপ বা দাগোবায় সিলিন্ডার-আকৃতির শিখর দেখা যায়।
শৈলী
সম্পাদনাইন্দোনেশীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ সোয়েকমোনো চণ্ডীর শৈলীকে দু’টি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করেছেন: একটি মধ্য জাভা শৈলী, যেটি ১০০০ খ্রিস্টাব্দের আগে প্রধান ছিল এবং একটি পূর্ব জাভা শৈলী, যা ১০০০ খ্রিস্টাব্দের পরে প্রচলিত হয়। সুমাত্রা ও বালির মন্দিরগুলিকে তিনি পূর্ব জাভা শৈলীর অন্তর্ভুক্ত করেছেন।[১৪]
মন্দিরের অংশ | মধ্য জাভা শৈলী | পূর্ব জাভা শৈলী |
---|---|---|
নির্মাণের গড়ন | প্রধানত স্থূলাকার | প্রধানত শীর্ণাকার ও উচ্চ |
ছাদ | ছাদের ধাপযুক্ত অংশগুলি স্পষ্ট দেখা যায়, সাধারণত তিনটি ভাগে গঠিত | ধাপযুক্ত অংশগুলির বিভিন্ন অংশ মিলে একটি সমন্বয়িত ছাদ মসৃণভাগে গড়ে তোলে |
চূড়া | স্তূপ (বৌদ্ধ মন্দির), রত্ন বা বজ্র (হিন্দু মন্দির) | ঘনক্ষেত্রাকার (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হিন্দু মন্দিরে), ক্ষেত্রবিশেষে দাগোবা সিলিন্ডার-আকৃতির অংশ (বৌদ্ধ মন্দিরে) |
তোরণ ও কুলুঙ্গির অলংকরণ | কাল-মকর শৈলী; তোরণের উপরে কালের মস্তকের নিচের জোয়াল থাকে না, মুখ খোলা অবস্থায় থাকে এবং তোরণের দুই পাশে দু’টি মকর দ্বারা সংযুক্ত অবস্থায় থাকে | তোরণের শুধু কালের মস্তক থাকে, তার মুখে থাকে বিদ্রূপের হাসি এবং নিচের জোয়ালটি সম্পূর্ণ আকারে থাকে, মকর থাকে না |
খোদাইচিত্র | পটভূমি থেকে খানিকটা উচ্চে স্থাপিত, ছবিগুলি নৈসর্গিক শৈলীতে অঙ্কিত | পটভূমির সঙ্গে একই সমতলে অঙ্কিত, ছবিগুলি আঁকা হয়েছে বালিদ্বীপীয় ওয়াং চিত্রকলার অনুরূপ শৈলীতে |
ভূমির নকশা ও প্রধান মন্দিরের অবস্থান | এককেন্দ্রিক মণ্ডল, প্রতিসম, নকশার দিক থেকে নিয়মিত; প্রধান মন্দির চত্বরের কেন্দ্রস্থলে নিয়মিত সারিতে অবস্থিত ছোটো ছোটো পেরওয়ারা মন্দির দ্বারা পরিবেষ্টিত অবস্থায় থাকে | রৈখিক, অপ্রতিসম, চত্বরের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে নির্মিত হয়; মূল মন্দিরটি প্রধান প্রবেশপথের একেবারে উল্টোদিকে বা সবচেয়ে দূরে অবস্থান করে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রধান মন্দির চত্বরের সর্বোচ্চ অংশে অবস্থিত হয়, পেরওয়ারা মন্দিরগুলি প্রধান মন্দিরের সামনে নির্মিত |
দিকনির্দেশ | অধিকাংশই পূর্বমুখী | অধিকাংশই পশ্চিমমুখী |
উপাদান | অধিকাংশই অ্যান্ডেসাইট পাথরে নির্মিত | অধিকাংশই লাল ইটে নির্মিত |
নকশার সাধারণ বৈশিষ্ট্যের মধ্যে উপাদান, গড়ন ও অবস্থানগত কিছু ব্যতিক্রমও দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ পেনাতারান, জাওয়ি, জাগো, কিদাই ও সিংহসারি পূর্ব জাভা শ্রেণির মন্দির হলেও এগুলিতে মধ্য জাভা শৈলীর ন্যায় অ্যান্ডেসাইট পাথর ব্যবহৃত হয়েছে। ব্রাহু, জাবুং ও পারি মন্দিরের ন্যায় ত্রোউলানের মন্দির-ধ্বংসাবশেষগুলিতে লাল ইটের ব্যবহার দেখা যায়। আবার প্রামবানান মন্দির পূর্ব জাভা শৈলীর মতো সুউচ্চ ও শীর্ণাকার হলেও এটির ছাদের নকশা মধ্য জাভা শৈলীর অনুরূপ। মন্দিরের অবস্থানও সব সময় মন্দিরের শৈলীর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না। যেমন পূর্ব জাভার মালাং-এর চণ্ডী বাদুতের সময়কাল ও শৈলী প্রাচীনতর অষ্টম শতকের মধ্য জাভা শৈলীর অনুরূপ।
দিয়েং মন্দিরের মতো পূর্ববর্তী উত্তর মধ্য জাভা মন্দির চত্বরগুলি ক্ষুদ্রতর এবং এখানকার বেশ কিছু মন্দিরে সাদামাটা খোদাইচিত্র দেখা যায়। অন্যদিকে পরবর্তীকালে নির্মিত সেউ মন্দিরের মতো দক্ষিণ জাভার মন্দির চত্বরগুলি অনেক বেশি জাঁকজমকপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ অলংকরণ শোভিত। এই মন্দিরগুলিতে চত্বরের নকশাও এককেন্দ্রিক।
মজপহিৎ যুগে অস্ট্রালোনেশীয় প্রকাণ্ড প্রস্তরখণ্ড মন্দিরের উপাদান হিসেবে আবার ব্যবহার হতে শুরু করে। এই সময়ই ধাপযুক্ত পিরামিডাকার মন্দির বা পুনদেন বেরুনদাক নির্মিত হয়। পূর্ব মধ্য জাভার লাউ পর্বতে সুকুহ্ ও চেথো মন্দিরে এবং পেনাংগুনগান পর্বতের ঢালে নির্মিত ধাপযুক্ত উপাসনালয়গুলি এই শৈলীর। এগুলির সঙ্গে মেসো-আমেরিকান ধাপযুক্ত পিরামিডের সাদৃশ্য লক্ষিত হয়।
গ্যালারি
সম্পাদনা-
বরোবুদুর বিশ্বের সবচেয়ে বৌদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ
-
মেন্ডুট বরোবুদুরের কাছে মন্দির
-
প্রাম্বানান মন্দিরে, ইন্দোনেশিয়ার বৃহত্তম হিন্দু মন্দির
-
লুবুং
-
সারি মন্দির
-
প্লাওসান কিদুল
-
সাম্বিসারি
-
বান্যুনিব
-
চন্ডি বিমা, দেইং প্লেটো
-
চন্ডি পুন্টাদেয়া, ডাইং প্লেটো
-
চন্ডি অর্জুন, ডাইং প্লেটু
-
চন্ডি শ্রীকান্দি, দেইং প্লেটু
-
চন্ডি গাতোটকাচা, ডাইং প্লেটো
-
চন্ডি সেমার, ডায়ং প্লেট
-
চন্ডি গেদং সঙ্গ উঙ্গারান
-
চন্ডি গেবাং,ইয়গ্যাকারতা
-
কিদাল
-
জাগ
-
ব্লেডাঙ্গন, বাটুজায়, পশ্চিম জাভা
-
চন্ডি ত্রারওুলান
-
চন্ডি ওরিঙ্গিন লাওাং ,ত্রারওুলান
-
চন্ডি পরী,পরং ,সিদয়ারজ
-
গাম্পং, মুরো জাম্বি, জাম্বি
-
মুরা তাকুস, রিয়া
-
চন্ডি প্লুম্বাঙ্গান,ব্লিতার,ইস্ত জাভা
আরও দেখুন
সম্পাদনা- ইন্দোনেশিয়ার স্থাপত্য
- জাভার প্রাচীন স্মারকসমূহ
- বালিদ্বীপীয় মন্দির
- ইন্দোনেশিয়ায় বৌদ্ধধর্ম
- বৌদ্ধ স্থাপত্য
- ব্রহ্মদেশীয় প্যাগোডা
- চণ্ডী বেনতার
- চেতিয়া
- চৈত্য
- ইন্দোনেশিয়ায় হিন্দুধর্ম
- জাভা দ্বীপে হিন্দুধর্ম
- হিন্দু মন্দির স্থাপত্য
- দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় ভারতীয় প্রভাবের ইতিহাস
- ইন্দোনেশীয় গুহ্য বৌদ্ধধর্ম
- কুয়াং, মিয়ানমারের মন্দির
- প্যাগোডা
- বালুকা প্যাগোডা
- স্তূপ
- বৌদ্ধ বিহার
- বাট, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড ও লাওসের মন্দির
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ সোয়েকমোনো (১৯৯৫), পৃ. ১
- ↑ "চণ্ডী"। কামুস বেসার বাহাসা ইন্দোনেশিয়া (ইন্দোনেশীয় ভাষায়)।
- ↑ সেদিয়াওয়াতি (২০১৩), পৃ. ১
- ↑ তোমি সুজাতমিকো (৯ জুন ২০১৩)। "পেনিংগালান মজপহিৎ ইয়াংন তেরসেমবুন্যি দি আলাস পুরও"। কেদাউলাতান রাকিয়াত (ইন্দোনেশীয় ভাষায়)। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০১৫।
- ↑ "রেপ্লিকা চণ্ডী পাওয়ন"। বিহার জাকার্তা ধম্মচক্ক জয়।
- ↑ "Prasada"। Sanskrit dictionary।
- ↑ ফিলিপ রসন: দি আর্ট অফ সাউথইস্ট এশিয়া
- ↑ কোয়েডেস, জর্জ (১৯৬৮)। ওয়াল্টার এফ. ভেলা, সম্পাদক। দি ইন্ডিয়ানাইজড স্টেটস অফ সাউথইস্ট এশিয়া। অনু. সুজান ব্রাউন কাউইং। ইউনিভার্সিটি অফ হাওয়াই প্রেস। আইএসবিএন 978-0-8248-0368-1।
- ↑ সোয়েকমোনো, আর. "চণ্ডী: সিম্বল অফ দ্য ইউনিভার্স", পৃ. ৫৮-৫৯; মূল গ্রন্থ: মিকসিক, জন এন., সম্পা. এনশিয়েন্ট হিস্ট্রি, ১ম খণ্ড - ইন্দোনেশিয়ান হেরিটেজ সিরিজ, আর্কিপেলাগো প্রেস, সিঙ্গাপুর (১৯৯৬) আইএসবিএন ৯৭৮-৯৮১-৩০১৮-২৬-৬
- ↑ সোয়েকমোনো, ড. আর. (১৯৭৩)। পেঙ্গান্তার সেজারাহ কেবুদয়ান ইন্দোনেশিয়া ২। যোগজাকার্তা, ইন্দোনেশিয়া: পেনেরবিৎ কানিসিয়াস। পৃষ্ঠা ৮১। আইএসবিএন 979-413-290-X।
- ↑ "হিস্ট্রি অফ উইমেন ইন বুদ্ধিজম - ইন্দোনেশিয়া: পর্ব ১০"। শাক্যাদিত: অ্যাওয়েকেনিং বুদ্ধিস্ট উইমেন।
- ↑ সেদিয়াওয়াতি (২০১৩), পৃ. ৪
- ↑ কোনসেরভাসি বরোবুদুর ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১১-০৭-২৬ তারিখে (ইন্দোনেশীয় ভাষায়)
- ↑ সোয়েকমোনো, ড. আর. (১৯৭৩)। পেঙ্গানতার সেজারাহ্ কেবুদয়ান ইন্দোনেশিয়া ২। যোগজাকার্তা, ইন্দোনেশিয়া: পেনেরবিৎ কানিসিয়াস। পৃষ্ঠা ৮৬। আইএসবিএন 979-413-290-X।
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- সোয়েকমোনো, আর. (১৯৯৫)। জান ফন্টেইন, সম্পাদক। দ্য জাভানিজ চণ্ডী: ফাংশন অ্যান্ড মিনিং, ভলিউম ১৭ ফ্রম স্টাডিজ ইন এশিয়ান আর্ট অ্যান্ড আর্কিওলজি, খণ্ড ১৭। লেইডেন: ই. জে. ব্রিল। আইএসবিএন 9789004102156।
- ডেগরুট, ভেরোনিক (২০০৯)। চণ্ডী, স্পেস অ্যানফ ল্যান্ডস্কেপ: আ স্টাডি অন দ্য ডিস্ট্রিবিউশন, ওরিয়েন্টেশন অ্যান্ড স্পেটিয়াল অরগ্যানাইজেশন অফ সেন্ট্রাল জাভানিজ টেম্পল রিমেইনস। লেইডেন: সাইডস্টোন প্রেস, ইস্যু ৩৮ অফ মেদেদেলিঙ্গেন ভ্যান হেত রিজক্স্মুসেউম ভুর ভলকেনকুন্ডে। আইএসবিএন 9789088900396।
- সেদিয়াওয়াতি, এদি; সান্তিকো, হরিয়ানি; জাফার, হাসান; মউলানা, রত্নয়েসিহ; রামেলান, উইউইন জুউইতা সুদজানা; আশারি, চাইরদির (২০১৩)। চণ্ডী ইন্দোনেশিয়া: সেরি জাওয়া (ইন্দোনেশীয় and ইংরেজি ভাষায়)। জাকার্তা: দিরেকতোরাত জেন্দেরাল কেবুদয়ান। আইএসবিএন 9786021766934।
আরও পড়ুন
সম্পাদনা- ডুমারকি, জে. ১৯৮৬, টেম্পলস অফ জাভা, কুয়ালালামপুর: অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস
- হল্ট, সি. ১৯৬৭, আর্ট ইন ইন্দোনেশিয়া, ইথাকা: কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়
- প্যাট, জে. এ. ১৯৭৯, দ্য ইউজেস অ্যান্ড সিম্বলিজম অফ ওয়াতার ইন এনশিয়েন্ট ইন্দোনেশিয়ান টেম্পল আর্কিটেকচার, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলে
- প্রিজোতোমো, জে. ১৯৮৪, আইডিয়াজ অ্যান্ড ফর্মস অফ জাভানিজ আর্কিটেকচার, যোগজাকার্তা: গাদজা মাদা ইউনিভার্সিটি প্রেস