বৃহত্তর ভারত
বৃহত্তর ভারত পদটি সবচেয়ে বেশি ভারতীয় উপমহাদেশের সব রাজনৈতিক সত্ত্বার ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক ব্যাপ্তি পরিবেষ্টন করতে ব্যবহৃত হয়, যা প্রাক ইসলামী ভারতের সাংস্কৃতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক উপাদানের আনয়ন দ্বারা রুপান্তরিত হয়েছে। প্রায় ৫০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ থেকেই এশিয়ার বিস্তৃত জমি এবং সামুদ্রিক বাণিজ্য় দীর্ঘায়িত আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উদ্দীপনা এবং আঞ্চলিক সৃষ্টিতত্বে হিন্দু ও বৌদ্ধ বিশ্বাসের আশ্লেষ ঘটায়, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং শ্রীলঙ্কায়।[১] মধ্য এশিয়ার ধারণা সংক্রমণ প্রধানত ধর্মীয় প্রকৃতির ছিল।[২]
বৃহত্তর ভারত | |
---|---|
Southeast Asia | |
Indianized kingdoms Hinduism Architecture Epigraphy | Butuan, চম্পা, Dvaravati, Funan, Gangga Negara, Chenla, Kalingga, Kutai, Langkasuka, Pagan, Pan Pan, Tondo devaraja, Harihara Angkor, Borobodur সংস্কৃত, পালি |
South Asia | |
Buddhism | Bangladesh, Bhutan, Nepal, Sri Lanka |
Hinduism | বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা |
East Asia | |
Buddhism | চিন, জাপান, Korea, Mongolia, তিব্বত |
Central Asia | |
Buddhist monasticism | Central Asia (Afghanistan · Uzbekistan) |
Indosphere · Hindu texts · Buddhist texts · Folklore of India · রামায়ণ (Versions of Ramayana) | |
খ্রীষ্টপরবর্তী যুগের গোড়ার দিকে শতাব্দী করে উপকূলীয় এবং মহাদেশীয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জনগণের অধিকাংশ কার্যকরভাবে হিন্দু সংস্কৃতি, ধর্ম এবং প্রশাসনের মূল ধারণা একাত্ম করেছিল। ঐশ্বরিক দেবতা-রাজপদের ধারণা হরিহরের ধারণা দ্বারা প্রবর্তন হয়, সংস্কৃত ও অন্যান্য ভারতীয় শিলালিপি ব্যবস্থা দক্ষিণ ভারতীয় পল্লব রাজবংশ এবং চালুক্য রাজবংশ দ্বারা সরকারি ঘোষণা করা হয়।[৩][৪] এই Indianized সাম্রাজ্য (George Cœdès দ্বারা উদ্ভাবিত) এর বিস্ময়কর স্থিতিস্থাপকতা, রাজনৈতিক অখণ্ডতা এবং প্রশাসনিক স্থায়িত্ব দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছিল.[৫]
উত্তর ভারতীয়দের মধ্যে ধর্মীয় ধারণা হিমালয়বাসীদের সৃষ্টিতত্বে মিশে যেতে লাগল, বিশেষ করে তিব্বত ও ভুটানে। বৌদ্ধ সন্ন্যাসজীবন আফগানিস্তান, উজবেকিস্তান ও মধ্য এশিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে এবং বৌদ্ধ গ্রন্থ ও ধারণা পূর্বে চীন এবং জাপানে পৌঁছে যায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিপরীতে পূর্ব এশিয়ায় সাংস্কৃতিক ও প্রযুক্তিগত উদ্দীপনা উভয় দিকেই অগ্রসর হয়েছিল।[২][৬] পশ্চিমে, ভারতীয় সংস্কৃতি হিন্দুকুশ এবং পামির পর্বতমালার মাধ্যমে বৃহত্তর পারস্যের দিকে এগোয়।[৭]
অন্যান্য ব্যবহার
সম্পাদনাইউরোপীয় প্রশিক্ষণে
সম্পাদনাতিন ভারতের ধারণা প্রাক-শিল্প ইউরোপে বহুপ্রচলিত ছিল। বৃহত্তর ভারত দক্ষিণ এশিয়ার দক্ষিণ অংশকে, ক্ষুদ্রতর ভারত দক্ষিণ এশিয়ার উত্তর অংশকে এবং মধ্য ভারত মধ্যপ্রাচ্যের কাছাকাছি অঞ্চলকে বলা হত।[৮] পর্তুগীজ ফর্ম (পর্তুগিজ: India Maior[৮][৯][১০][১১]) অন্তত মধ্য-১৫দশ শতাব্দী থেকে ব্যবহৃত হয়।[৯] এই পদটি, যা পরিবর্তনশীল স্পষ্টতার সঙ্গে ব্যবহার করা হত বলে মনে হয়,[১২] কখনও কখনও শুধুমাত্র ভারতীয় উপমহাদেশকে বোঝাত।[১৩] ইউরোপীয়রা দক্ষিণ এশিয়ার উপদ্বীপ বোঝাতে দক্ষিণ এশিয়ার সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন পদ ব্যবহার করত, যেমন উচ্চ ভারত, বৃহত্তর ভারত, বহিঃভারত, ভারত aquosa। [১৪]
তবে ইউরোপীয় নৌযাত্রার কিছু বিবরণে, বৃহত্তর ভারত (বা India Major) মালাবার কোস্ট (অধুনাতন কেরল) থেকে India extra Gangem[১৫] পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল (সাহিত্যে "গঙ্গা-পরবর্তী ভারত" কিন্তু সাধারণত পূর্ব ইন্ডিজ, অর্থাৎ অধুনাতন মালয় দ্বীপপুঞ্জ) এবং ক্ষুদ্রতর ভারত, মালাবার থেকে সিন্ধু পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।[১৬] অধিকতর ভারত কখনো আধুনিক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে আবার কখনো শুধুমাত্র মূলভূখন্ডের অংশকে বোঝাতে ব্যবহৃত হত।[১৪] ১৪দশ শতাব্দী পর্যন্ত, ভারত বলতে সোমালিয়া, দক্ষিণ আরব ও ইথিওপিয়া সহ লোহিত সাগর বরাবর এলাকা বোঝাতেও ব্যবহৃত হত (যেমন, খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীর সিসিলিবাসী ডিওডোরাস বলেন যে, "নীল নদের সৃষ্টি ভারতে" এবং চতুর্দশ শতাব্দীর মার্কো পোলো বলছেন যে "ক্ষুদ্রতর ভারতে ... রয়েছে ... আবাষ [আবিসিনিয়া]")।[১৭]
১৯শ শতাব্দীর শেষদিকের ভূগোলে বৃহত্তর ভারত বলতে পাঞ্জাব, হিমালয় সমেত ব্রিটিশ ভারত, হিন্দুস্তান (উত্তর-পশ্চিম উপমহাদেশ) বোঝাত এবং পূর্বদিকে ইন্দোচীন (বার্মা সহ), ইন্দোনেশিয়ার অংশবিশেষে (যথা, সুন্দা দ্বীপপুঞ্জ, বোর্নিও এবং Celebes) এবং ফিলিপাইন অবধি বিস্তৃত ছিল।[১৮] জার্মান atlases Vorder-Indien (পূর্ববর্তী ভারত) দক্ষিণ এশিয়ার উপদ্বীপকে এবং Hinter-Indien দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে বলত।[১৪]
ভূতত্ত্বে
সম্পাদনা- বৃহত্তর ভারত বেসিন তত্ত্ব
বৃহত্তর ভারত, বা বৃহত্তর ভারত বেসিন "ভারতীয় প্লেট এবং একটি বংশগৌরবের উত্তরীয় এক্সটেনশন" বোঝায় যা ভারত-এশিয়া সংঘর্ষের গুণফল।[১৯] যদিও ভূতত্ত্বে এর ব্যবহার প্লেট টেকটনিক তত্ত্বে হয়,[২০] পদটির বর্ধিত ব্যবহার ১৯৭০ সালের আগে হয়নি।
এই তত্ত্বটি যতদিন ভারত-এশিয়া অভিসৃতির অবস্থান ও সময় বিতর্ক বিদ্যমান ছিল ততদিন বৈধ আছে। কীভাবে এবং কোথায় ভারত-এশিয়া (ভারত ও ইউরেশীয় প্লেট) অভিসৃতি হয়, সংঘর্ষের পর, ৫.২ কোটি বছর আগে? যেহেতু প্লেটগুলি ৩,৬০০ কিমি (২,২00 মাইল) ± 35 কিমি (২২ মাইল)পর্যন্ত মিশে আছে, এশিয়ার ভূতাত্ত্বিক রেকর্ড থেকে সংগ্রহ অনুসারে উপরের ভূত্বক প্রায় ২,৩৫০ কিমি (১,৪৬০ মাইল) কম।[২১]
জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে
সম্পাদনা- গ্রেটার ইন্ডিয়া সোসাইটি
বাংলা পণ্ডিতদের একটি সংগঠন, যারা সকলে কলকাতা-ভিত্তিক গ্রেটার ইন্ডিয়া সোসাইটি র সদস্য ছিল, বৃহত্তর ভারত পদের ব্যবহার জনপ্রিয় করেন। এই আন্দোলনের প্রথম দিকে নেতাদের মধ্যে আছেন ইতিহাসবিদ আর সি মজুমদার (১৮৮৮-১৮৯০); ভাষাতত্ত্ববিদ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় (১৮৯০-১৯৭৭) ও পি সি বাগচী (১৮৯৮-১৯৫৬) এবং ঐতিহাসিক ফনীন্দ্রনাথ বসু ও কালিদাস নাগ (১৮৯১-১৯৬৬)।[২২]
বৃহত্তর ভারত পদ ও প্রাচীন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্পষ্ট হিন্দু ঔপনিবেশিকতার ধারণা -- উভয়ই ভারতীয় জাতীয়তাবাদের[২৩] এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদের[২৪] সঙ্গে সম্পর্কিত।
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Kenneth R. Hal (১৯৮৫)। Maritime Trade and State Development in Early Southeast Asia। University of Hawaii Press। পৃষ্ঠা 63। আইএসবিএন 978-0-8248-0843-3।
- ↑ ক খ "History of India and Greater India"। Collège de France। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ২০, ২০১৬।
- ↑ "As in Heaven, So on Earth: The Politics of Visnu Siva and Harihara Images in Preangkorian Khmer Civilisation"। academia edu। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ২৩, ২০১৫।
- ↑ "Results of the 1995–1996 Archaeological Field Investigations at Angkor Borei, Cambodia" (পিডিএফ)। University of Hawai'i-Manoa। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০১৫।
- ↑ Pierre-Yves Manguin, “From Funan to Sriwijaya: Cultural continuities and discontinuities in the Early Historical maritime states of Southeast Asia”, in 25 tahun kerjasama Pusat Penelitian Arkeologi dan École française d'Extrême-Orient, Jakarta, Pusat Penelitian Arkeologi / EFEO, 2002, p. 59-82.
- ↑ Indian Embassy, Beijing. India-China Bilateral Relations - Historical Ties. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২১ আগস্ট ২০১৩ তারিখে
- ↑ "SINO-PLATONIC PAPERS everyone knows well the so-called "Buddhist conquest of China" or "Indianized China"" (পিডিএফ)। sino-platonic। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ২৩, ২০১৬।
- ↑ ক খ Phillips, J. R. S. (১৯৯৮)। The Medieval Expansion of Europe। Clarendon Press। পৃষ্ঠা 192। আইএসবিএন 978-0-19-820740-5।
- ↑ ক খ (Azurara 1446)
- ↑ Lewis, Martin W.; Wigen, Kären (১৯৯৭)। The Myth of Continents: A Critique of Metageography। University of California Press। পৃষ্ঠা 269। আইএসবিএন 978-0-520-20742-4।
- ↑ Pedro Machado, José (১৯৯২)। "Terras de Além: no Relato da Viagem de Vasco da Gama"। Journal of the University of Coimbra। 37: 333–।
- ↑ (Beazley 1910, পৃ. 708) Quote: "Azurara's hyperbole, indeed, which celebrates the Navigator Prince as joining Orient and Occident by continual voyaging, as transporting to the extremities of the East the creations of Western industry, does not scruple to picture the people of the Greater and the Lesser India"
- ↑ (Beazley 1910, পৃ. 708) Quote: "Among all the confusion of the various Indies in Mediaeval nomenclature, "Greater India" can usually be recognized as restricted to the "India proper" of the modern world."
- ↑ ক খ গ Lewis, Martin W.; Wigen, Kären (১৯৯৭)। The Myth of Continents: A Critique of Metageography। University of California Press। পৃষ্ঠা 274। আইএসবিএন 978-0-520-20742-4।
- ↑ (Wheatley 1982, পৃ. 13) Quote: "Subsequently the whole area came to be identified with one of the "Three Indies," though whether India Major or Minor, Greater or Lesser, Superior or Inferior, seems often to have been a personal preference of the author concerned. When Europeans began to penetrate into Southeast Asia in earnest, they continued this tradition, attaching to various of the constituent territories such labels as Further India or Hinterindien, the East Indies, the Indian Archipelago, Insulinde, and, in acknowledgment of the presence of a competing culture, Indochina."
- ↑ (Caverhill 1767)
- ↑ Uhlig, Siegbert (২০০৩)। Encyclopaedia Aethiopica: He-N। Isd। পৃষ্ঠা 145। আইএসবিএন 978-3-447-05607-6।
- ↑ "Review: New Maps," (1912) Bulletin of the American Geographical Society 44(3): 235–240.
- ↑ (Ali ও Aitchison 2005, পৃ. 170)
- ↑ Argand, E., 1924. La tectonique de l' Asie. Proc. 13th Int. Geol. Cong. 7 (1924), 171–372.
- ↑ "The Greater India Basin hypothesis" (পিডিএফ)। University of Oslo। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ২০, ২০১৬।
- ↑ (Bayley 2004, পৃ. 710)
- ↑ (Keenleyside 1982, পৃ. 213–214) Quote: "Starting in the 1920s under the leadership of Kalidas Nag-and continuing even after independence-a number of Indian scholars wrote extensively and rapturously about the ancient Hindu cultural expansion into and colonisation of South and Southeast Asia. They called this vast region "Greater India"–a dubious appellation for a region which to a limited degree, but with little permanence, had been influenced by Indian religion, art, architecture, literature and administrative customs. Indeed, Congress leaders made occasional references to Greater India while the organisation's abiding interest in the problems of overseas Indians lent indirect support to the Indian hope of restoring the alleged cultural and spiritual unity of South and Southeast Asia."
- ↑ (Thapar 1968, পৃ. 326–330) Quote: "At another level, it was believed that the dynamics of many Asian cultures, particularly those of Southeast Asia, arose from Hindu culture, and the theory of Greater India derived sustenance from Pan-Hinduism. A curious pride was taken in the supposed imperialist past of India, as expressed in sentiments such as these: "The art of Java and Kambuja was no doubt derived from India and fostered by the Indian rulers of these colonies." (Majumdar, R. C. et al. (1950), An Advanced History of India, London: Macmillan, p. 221) "
আরোও পড়ুন
সম্পাদনা- Language variation: Papers on variation and change in the Sinosphere and in the Indosphere in honour of James A. Matisoff, David Bradley, Randy J. LaPolla and Boyd Michailovsky eds., pp. 113–144. Canberra: Pacific Linguistics.
- Bijan Raj Chatterjee (১৯৬৪)। Indian Cultural Influence in Cambodia। University of Calcutta।
- Ankerl, Guy (২০০০)। Global communication without universal civilisation। INU societal research। Vol.1: Coexisting contemporary civilisations : Arabo-Muslim, Bharati, Chinese, and Western। Geneva: INU Press। আইএসবিএন 2-88155-004-5।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- Rethinking Tibeto-Burman – Lessons from Indosphere
- THEORIES OF INDIANISATION Exemplified by Selected Case Studies from Indonesia (Insular Southeast Asia), by Dr. Helmut Lukas