বালি, ইন্দোনেশিয়া
বালি ইন্দোনেশিয়ার একটি দ্বীপ এলাকা ও প্রদেশ। বালি ও তার আশেপাশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপমালা নুসা পেনিদা, নুসা লেমবনগান ও নুসা সেনিনগান নিয়ে প্রদেশ গঠিত হয়েছে। এর রাজধানী দেনপাসার দ্বীপের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত।
বালি ᬩᬮᬶ | |||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
প্রদেশ | |||||||||||||||||||||||||||
ডাকনাম: শান্তির দ্বীপ, বিশ্বের সকাল, ঈশ্বরের দ্বীপ, হিন্দুদের দ্বীপ, ভালোবাসার দ্বীপ[১] | |||||||||||||||||||||||||||
নীতিবাক্য: বালিদ্বীপ জয় (বালীয়) (সমৃদ্ধময় বালি দ্বীপ) | |||||||||||||||||||||||||||
বালি দ্বীপের অবস্থান (সবুজ রঙে) | |||||||||||||||||||||||||||
স্থানাঙ্ক: ৮°৩৯′ দক্ষিণ ১১৫°১৩′ পূর্ব / ৮.৬৫০° দক্ষিণ ১১৫.২১৭° পূর্ব | |||||||||||||||||||||||||||
দেশ | ইন্দোনেশিয়া | ||||||||||||||||||||||||||
রাজধানী | দেনপাসার | ||||||||||||||||||||||||||
সরকার | |||||||||||||||||||||||||||
• গভর্নর | আই মেড মাঙ্কু পাস্তিকা (পিডি) | ||||||||||||||||||||||||||
আয়তন | |||||||||||||||||||||||||||
• মোট | ৫,৭৮০.০৬ বর্গকিমি (২,২৩১.৬৯ বর্গমাইল) | ||||||||||||||||||||||||||
জনসংখ্যা (২০১৪) | |||||||||||||||||||||||||||
• মোট | ৪২,২৫,৩৮৪ | ||||||||||||||||||||||||||
• জনঘনত্ব | ৭৩০/বর্গকিমি (১,৯০০/বর্গমাইল) | ||||||||||||||||||||||||||
জনপরিসংখ্যান | |||||||||||||||||||||||||||
• জাতিগোষ্ঠী | বালীয় (৯০%), জাভানীয় (৭%), বালিয়াগা (১%), মাদুরীয় (১%)[২] | ||||||||||||||||||||||||||
• ধর্ম | হিন্দু (৮৭%), মুসলিম (১০.৫%), খ্রিস্টান (১.৫%), বৌদ্ধ ধর্ম (০.৫%)অন্যান্য (০.৫%)(২০১৮ জনগনণা অনুসারে)[৩] | ||||||||||||||||||||||||||
• ভাষা | ইন্দোনেশীয় (রাষ্ট্রীয়), বালীয়, ইংরেজি | ||||||||||||||||||||||||||
সময় অঞ্চল | ডব্লিউআইটিএ (ইউটিসি+০৮) | ||||||||||||||||||||||||||
ওয়েবসাইট | www.baliprov.go.id | ||||||||||||||||||||||||||
|
পূর্ব জাভার ৩.২ কিলোমিটার দূরে বালি দ্বীপের অবস্থান। বালি প্রণালী দ্বারা বালি ও জাভা পৃথক হয়েছে। পূর্ব থেকে পশ্চিমে দ্বীপটি ১৫৩ কিলোমিটার ও উত্তর থেকে দক্ষিণে ১১২ কিলোমিটার। নুসা পেনিদা জেলা বাদে প্রশাসনিকভাবে এর আয়তন ৫,৭৮০ বর্গকিলোমিটার।[৫] জনসংখ্যার ঘণত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৭৫০জন।
২০১০ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী এর জনসংখ্যা ছিল ৩,৮৯০,৭৫৭[৬] এবং জানুয়ারি, ২০১০ সালে ৪,২২৫,০০০জন।[৭] দ্বীপের অধিকাংশ লোকই সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের। ২০১০ সালের হিসেব মোতাবেক বালি’র জনসংখ্যার ৮৩.৫% শতাংশই বালীয় হিন্দু।[৩] এরপরই রয়েছে মুসলিম ১৩.৪%, খ্রিস্টান ২.৫% ও বৌদ্ধ ০.৫%।[৮]
প্রাচীন বালিতে পসুপ্ত, ভৈরব, শিব সিদান্ত, বৈষ্ণব, বৌদ্ধ, ব্রহ্মা, ঋষি, সরা ও গণপতি - এ নয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের আবাস ছিল। প্রত্যেক সম্প্রদায়ের লোকজন তাঁদের নির্দিষ্ট দেবতার পুজো দিতেন।[৯] বালীয় সংস্কৃতির পুরোটাই ভারতীয়, চীনাদের দ্বারা প্রভাবান্বিত এবং প্রথম শতক থেকে হিন্দু সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছে।
ইতিহাস
সম্পাদনাখ্রিস্ট-পূর্ব প্রায় দুই হাজার বছর পূর্বে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জলপথ দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে অস্ট্রোনেশিয়ান ব্যক্তিগণ অভিবাসিত হয়ে এখানে বসবাস করছেন।[১০][১১] সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত দিক দিয়ে বালীয়বাসী ইন্দোনেশীয় দ্বীপপুঞ্জ, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার ব্যক্তিদের সাথে সম্পৃক্ত।[১১]
জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বালি’র সুনাম রয়েছে।[১২] প্রাচীন ও আধুনিক নৃত্যকলা, ভাস্কর্য, চিত্রকলা, চামড়া, ধাতবশিল্প ও সঙ্গীতের ন্যায় উচ্চ পর্যায়ের শিল্পকলা এ শহরে বিশেষ গুরুত্বতা পেয়েছে। সাংবার্ষিক ইন্দোনেশীয় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব এখানে অনুষ্ঠিত হয়। বিংশ শতকের গোড়ার দিকে পর্যটন শিল্পের দিকে ঝুঁকে পড়ে এ শহরটি। সাম্প্রতিককালে বালিতে ২০১১ সালের আসিয়ান সম্মেলন, ২০১৩ সালে এপেক সম্মেলনসহ মিস ওয়ার্ল্ড সুন্দরী প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কোরাল ট্রায়াঙ্গেলের অংশ হিসেবে এলাকাটিতে সর্বোচ্চসংখ্যক সামুদ্রিক প্রজাতিতে ভরপুর। কেবলমাত্র এখানেই পাঁচ শতাধিক প্রজাতির প্রাণীদের গড়া প্রবাল প্রাচীর রয়েছে। এ সংখ্যার তুলনান্তে পুরো ক্যারিবীয় অঞ্চলের চেয়ে সাত গুণ বেশি।[১৩]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
সম্পাদনাদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন জাপান সাম্রাজ্য বালি দখল করে। ১৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪২ তারিখে জাপানী বাহিনী শহরের কাছাকাছি সেনারে অবতরণ করে ও দ্রুত দ্বীপকে করায়ত্ত্ব করে।[১৪] ওলন্দাজদের শাসনের তুলনায় জাপানী শাসন অধিক সহনীয় ছিল।[১৫] আগস্ট, ১৯৪৫ সালে জাপানের আত্মসমর্পণের পর ওলন্দাজরা ইন্দোনেশিয়ায় প্রত্যাবর্তন করে ও ঔপনিবেশিক প্রশাসন পরিচালনা করতে থাকে। ২০ নভেম্বর, ১৯৪৬ তারিখে মার্গা’র যুদ্ধে কর্নেল গুস্টি গুরা রায় নামক ২৯ বছর বয়স্ক বালীয় সামরিক কর্মকর্তার নেতৃত্বে ফ্রিডম আর্মি ওলন্দাজদের উপর আত্মঘাতি আঘাত চালায়।এই যুদ্ধে গুরা রায় সহ তার সহকারীরা সকলেই মারা গেলেও এই আক্রমণ ওলন্দাজদের কর্তৃত্ত্ব বালির ওপর দুর্বল করে দেয়। গুস্তি গুরা রায়কে পরবর্তী কালে ইন্দোনেশিয়ান সরকার জাতীয় বীরের আখ্যা প্রদান করেন। বর্তমানে গুরা রায়ের ছবি ৫০০০০ ইন্দোনেশীয় রুপিআহর নোটে দেখা যায়। বালির দেনপাসার অঞ্চলে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তাঁর নামেই নামাঙ্কিত।
জীববৈচিত্র্য
সম্পাদনাপ্রায় ২৮০ প্রজাতির পাখি রয়েছে এখানে। তন্মধ্যে, বালি ময়না অত্যন্ত ঝুঁকিতে রয়েছে। বিংশ শতকের শুরুর দিকে বালিতে বেশ কিছু বৃহৎ আকারের প্রাণী ছিল। ১৯৩৭ সালে সর্বশেষ বালি বাঘকে দেখতে পাওয়া যায়। ১৯৪০-এর দশক থেকে ১৯৫০-এর দশক পর্যন্ত বালি বাঘের উপ-প্রজাতি দেখা গিয়েছিল।[১৬]
পর্যটন
সম্পাদনাতিন দশক পূর্বে বালীয় অর্থনীতির অধিকাংশই কৃষিভিত্তিক ছিল। বর্তমানে পর্যটনশিল্প আয়ের প্রধান ক্ষেত্র ও ইন্দোনেশিয়ার অন্যতম সম্পদশালী অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ২০০৩ সালে ৮০% পর্যটন খাত সম্পর্কীয় ছিল।[১৭] ২০০২ ও ২০০৫ সালের সন্ত্রাসবাদীদের বোমা আক্রমণে এর অর্থনীতির ব্যাপকভাবে প্রভাবান্বিত হয়। পরবর্তীতে অবশ্য পর্যটনশিল্পের উন্নতি ঘটেছে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Bali to Host 2013 Miss World Pageant"। Jakarta Globe। ২৬ এপ্রিল ২০১২। ১২ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ ডিসেম্বর ২০১২।
- ↑ Suryadinata, Leo; Arifin, Evi Nurvidya and Ananta, Aris (২০০৩)। Indonesia's Population: Ethnicity and Religion in a Changing Political Landscape। Institute of Southeast Asian Studies। আইএসবিএন 9812302123।
- ↑ ক খ Penduduk Menurut Wilayah dan Agama yang Dianut (2010 Census). bps.go.id
- ↑ "Luas Wilayah dan Letak Geografis Pulau Bali dan Kabupaten/Kota Tahun 2013"। BPS Provinsi Bali। ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ আগস্ট ২০১৪।
- ↑ http://sp2010.bps.go.id/files/ebook/5105.pdf
- ↑ "Indonesia (Urban City Population): Provinces & Cities – Statistics & Maps on City Population"। Citypopulation.de। ১ মে ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ৩০ ডিসেম্বর ২০১২।
- ↑ Ni Komang Erviani (১৭ ডিসেম্বর ২০১২)। "Bali faces population boom, now home to 4.2 million residents"। Bali Daily via The Jakarta Post। সংগ্রহের তারিখ ৩০ ডিসেম্বর ২০১২।
- ↑ http://sp2010.bps.go.id/index.php/site/tabel?tid=321&wid=5100000000।
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য) - ↑ "The birthplace of Balinese Hinduism"। The Jakarta Post। ২৮ এপ্রিল ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ৩০ ডিসেম্বর ২০১২।
- ↑ Taylor, pp. 5, 7
- ↑ ক খ Hinzler, Heidi (1995) Artifacts and Early Foreign Influences. From Oey, Eric (Editor) (১৯৯৫)। Bali। Singapore: Periplus Editions। পৃষ্ঠা 24–25। আইএসবিএন 9625930280।
- ↑ Discover Indonesia
- ↑ "Species diversity by ocean basin"। NOAA Coral Reef Conservation Program। ৯ মে ২০১৪। ১২ মে ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০১৫।
- ↑ Klemen, L (১৯৯৯–২০০০)। "The Capture of Bali Island, February 1942"। Forgotten Campaign: The Dutch East Indies Campaign 1941–1942। ২৫ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০১৫।
- ↑ Haer, pp. 39–40.
- ↑ IUCN Red List of Threatened Species. Retrieved 24 June 2010
- ↑ Desperately Seeking Survival ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ আগস্ট ২০১৩ তারিখে Time. 25 November 2002.
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- Haer, Debbie Guthrie; Morillot, Juliette and Toh, Irene (২০০১)। Bali, a traveller's companion। Editions Didier Millet। আইএসবিএন 978-981-4217-35-4।
- Gold, Lisa (২০০৫)। Music in Bali: Experiencing Music, Expressing Culture। New York: Oxford University Press। আইএসবিএন 0-19-514149-0।
- Taylor, Jean Gelman (২০০৩)। Indonesia: Peoples and Histories। New Haven and London: Yale University Press। আইএসবিএন 0-300-10518-5।
আরও পড়ুন
সম্পাদনা- Black, Robert (২০১২)। Bali Fungus। Snake Scorpion Press। আইএসবিএন 978-1-477-508-244।
- Copeland, Jonathan (২০১০)। Secrets of Bali: Fresh Light on the Morning of the World। Orchid Press। আইএসবিএন 978-974-524-118-3।
- Cotterell, Arthur (2015) Bali: A cultural history, Signal Books আইএসবিএন ৯৭৮১৯০৯৯৩০১৭৯
- Miguel Covarrubias, Island of Bali, 1946. আইএসবিএন ৯৬২৫৯৩০৬০৪
- Klemen, L (১৯৯৯–২০০০)। "Forgotten Campaign: The Dutch East Indies Campaign 1941–1942"। ২৬ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০১৫।
- McPhee, Colin (২০০৩)। A House in Bali। Tuttle Publishing; New edition, 2000 (first published in 1946 by J. Day Co)। আইএসবিএন 978-962-593-629-1।
- Pringle, Robert (২০০৪)। Bali: Indonesia's Hindu Realm; A short history of। Short History of Asia Series। Allen & Unwin। আইএসবিএন 1-86508-863-3।
- Shavit, David (২০০৬)। Bali and the Tourist Industry: A History, 1906–1942। McFarland & Co Inc। আইএসবিএন 978-0-7864-1572-4।
- Vickers, Adrian (১৯৯৪)। Travelling to Bali: Four Hundred Years of Journeys। Oxford University Press। আইএসবিএন 978-967-65-3081-3।
- Whitten, Anthony J.; Roehayat Emon Soeriaatmadja; Suraya A. Afiff (১৯৯৭)। The Ecology of Java and Bali। Hong Kong: Periplus Editions Ltd। আইএসবিএন 978-962-593-072-5।
- Wijaya, Made (২০০৩)। Architecture of Bali: A Source Book of Traditional and Modern Forms। Thames & Hudson Ltd। আইএসবিএন 978-0-500-34192-6।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- দাপ্তরিক ওয়েবসাইট
- ওপেনস্ট্রিটম্যাপে বালি, ইন্দোনেশিয়া সম্পর্কিত ভৌগোলিক উপাত্ত