আহমদীয়া মুসলিম জামাত, বাংলাদেশ
এই নিবন্ধটি বিজ্ঞাপনের মত করে লেখা হয়েছে। |
আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত, বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী আহমদীয়া মুসলিম জামাতের বাংলাদেশ শাখা। আহমদীয়া মুসলিম জামাত প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮৯ সনে ভারতে মির্যা গোলাম আহমদ(১৮৩৫-১৯০৮) কাদিয়ান নিবাসীর হাতে। বাংলাদেশে আহমদীয়া মুসলিম জামাতের ১০০টির উপরে শাখা রয়েছে সেই সাথে ১০,০০০ উপরে উপস্থিতি হয় তাদের বার্ষিক জলসা অনুষ্ঠানে।[১]
সংক্ষিপ্ত বিবরণ
সম্পাদনাহযরত মির্যা গোলাম আহমদ আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত প্রতিষ্ঠা করেন এবং নিজেকে প্রতিশ্রুত মসীহ্ ও ইমাম মাহদী দাবী করেন যার আসার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন মুহাম্মাদ (ইসলামের ধর্মপ্রবর্তক)। আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত এখন বিশ্বের ২১৩টি দেশে প্রতিষ্ঠিত এবং মির্যা গোলাম আহমদ এর অনুসারী সংখ্যা ১০ মিলিয়ন বিশ্বব্যাপী।[২]
আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের ইতিহাস
সম্পাদনাআহমদীয়া আন্দোলন বাংলাদেশে (বাঙালী ভূখণ্ডে) পৌঁছে ১৯০৫ সনে যখন চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা নিবাসী আহমদ কবির নূর মোহাম্মদ মির্যা গোলাম আহমদ এর হাতে বয়াত নেয়। দ্বিতীয় ব্যক্তিটি হল বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ এর রইস উদ্দিন খাঁ। ১৯০৯ সনে বগুড়া নিবাসী শিক্ষার্থী মোবারক আলী কাদিয়ান গিয়ে এই জামাতের সদস্য হয়। আহমদীয়া আন্দোলন বাংলাদেশ পুরো-দমে শুরু হয় যখন একজন জ্ঞানী ব্যক্তি ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিবাসী, মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ আহমদী হন। আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত কার্যকরী ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙ্গালী ভূখণ্ডে “আঞ্জুমানে আহমদীয়া” নামে।
বাংলাদেশের পঞ্চগড় ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে ক্ষুদ্র পরিসরে আহমদীয়া জামাতের কার্যক্রম শুরু হয়। হওয়া বর্তমানে সারা দেশে ১০৩টি শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৪২৫টি স্থানে আহমদীদের বসবাস বা কার্যক্রম রয়েছে। পঞ্চগড়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সুন্দরবন, আহমদনগর-শালসিঁড়ি, রাজশাহী, কুমিল্লা এবং জামালপুর-ময়মনসিংহ অঞ্চলে আহ্মদীদের সংখ্যা উল্ল্যেখযোগ্য। জামাতের সাংগঠিক কার্যক্রম স্বেচ্ছাসেবকদের দ্বারা পরিচালিত হয়। জামাতের ৬৫জন মোবাল্লেগ রয়েছে যারা জামাতের সাংগঠিনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। এই জামা’ত ১৯২০ সন থেকে বাংলাদেশের প্রাচীনতম পাক্ষিক পাত্রিকা ‘আহ্মদী’ নিয়মিতভাবে বের করে আসছে। অঙ্গসংগঠনসমূহের নিজস্ব ম্যাগাজিন/বুলেটিন রয়েছে।[৩]
নির্যাতন
সম্পাদনাআহমদীয়া মুসলিম জামা’ত বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এর সদস্যরা নির্যাতনের শিকার হয় অন্যান্য মুসলিম দলের দ্বারা। ১৯৬৩ সনে, দুই জন আহমদী নিহত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। ১৯৯২ সনে, আহমদীয়া মুসলিম জামাতের প্রধান কার্যালয়ে হামলা হয় জন-মিছিল দ্বারা এতে তাদের কুরআন এবং অন্যান্য প্রকাশনা পুড়ে যায়। ১৯৯৯ সনে, আহমদীয়া মসজিদে বোমা হামলায় সাত জন নিহত হয়। ২৯ শে অক্টোবর ২০০৩ সালে যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার রঘুনাথপুরবাগ গ্রামে শাহ আলম নামের একজন আহমদী ইমাম নিহত হয়।[৪] ২০০৪ সালে আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত আন্দোলন (আই কে এন এম) সারা দেশ ব্যাপী কিছু সংখ্যক আহমদীয়া মসজিদ অবরোধ করে।[৫] ১৭ জুন ২০১০ সাল, বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইল এর ঘাঁটাইল উপজেলায় ক্রুদ্ধ জনতা একটি আহমদীয়া মসজিদ ও একজন আহমদীর বাড়ি উপর ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, একটি জনতার মিছিল আহমদীয়া মুসলিম জামাতের অনুষ্ঠানের জায়গায় আগুন ধরিয়ে দেয়, যেটি আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত তাদের শতবার্ষিকী উদযাপনের জন্য তৈরি করেছিল, এতে স্থানীয় অঙ্কে ১০ মিলিয়ন টাকার ক্ষতি হয়।[৬] ২০১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে পঞ্চগড়ে আহমদীয়া অধ্যুষিত গ্রাম আহমদনগরে আহমদীয়াদের বার্ষিক ইজতেমাকে কেন্দ্র করে বহিরাগত ও স্থানীয় খতমে নবুওত আন্দোলনের সমর্থক জনতা কর্তৃক আহমদীয়া সম্প্রদায়ের মসজিদ, বাড়িঘর, দোকান লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নীসংযোগ করা হয়। এতে হামলাকারীরা ধারালো অস্ত্র, পেট্রোল বোমা ব্যবহার করে। আহমদীয়া সম্প্রদায়ের ২২ জন আহত হয় এবং আনুমানিক ১ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।[৬] ৩, ৪ ও ৫ মার্চ, ২০২৩ পঞ্চগড়ের আহমদনগরে আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের ৯৮তম সালানা জলসাকে (বার্ষিক সম্মেলন) কেন্দ্র করে ‘খতমে নবুয়ত’ সংগঠনের উষ্কানি ও নেতৃত্বে একদল উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী গত ২ থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত আহমদীয়া সদস্য অধ্যুষিত আহমদনগর, শালশিড়ি এবং সোনাচান্দি গ্রামের আহমদী মুসলমানদের ১৮৬ টি বাড়িঘরে আক্রমণ, লুটতরাজ, ভাংচুর এবং অগ্নি সংযোগ করে। জলসা প্রাঙ্গণে আক্রমণ করে, একজন সদস্যকে হত্যা এবং ৮৫ জনকে গুরুতর আহত করা সহ আরো অনেককে আহত করে। তাছাড়া আহমদীদের ৩০টি দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুট, ভাংচুর এবং অনেক জায়গায় অগিড়বসংযোগ করে। সার্বিক আর্থিক ক্ষতি কয়েক কোটি টাকা।[৭] [৮]
অধীনস্থ অঙ্গসংগঠন সমূহ
সম্পাদনাআহমদীয়া মুসলিম জামা'তের অধীনস্থ অঙ্গসংগঠনগুলো হল-
- মজলিশ আনসারুল্লাহ, বাংলাদেশ
- মজলিস খোদ্দামুল আহমদীয়া, বাংলাদেশ
- মজলিস আতফালুল আহমদীয়া, বাংলাদেশ
- লাজনা ইমা'ইল্লাহ, বাংলাদেশ
- নাসেরাতুল আহমদীয়া, বাংলাদেশ
বাংলাদেশে শাখাসমূহ
সম্পাদনা- আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত বাংলাদেশ এর এখন স্থানীয় ১০৩টি শাখা রয়েছে এবং শহরে ও গ্রামে ৪২৫ টি শাখা।[৯]
- সেখানে ৬৫ জন মোবাল্লেগ, একটি এম,টি,এ (মুসলিম টেলিভিশন আহমদীয়া) স্টুডিও এবং একটি জামেয়া আহমদীয়া (মোবাল্লেগ প্রশিক্ষণ কলেজ) রয়েছে ঢাকায়।
[৯] - মহারাজপুর মসজিদ নাটোর জেলায়[১০]
- খুলনায় আহমদীয়া মসজিদ[১০]
- গালিম গাজী মসজিদ খুলনায়[১০]
- মসজিদ বাইতুল বাসেত, চট্টগ্রাম।
আহমদীয়া মুসলিম জামা'ত এর ইতিহাস
সম্পাদনাআহমদীয়া মুসলিম জামাত (আরবী: الجماعة الإسلامية الأحمدية) একটি ধর্মীয় আন্দোলন ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে যেটির উদ্ভব হয়েছিল পাঞ্জাবে মির্যা গোলাম আহমদের জীবন ও শিক্ষার ভিত্তিতে। মির্যা গোলাম আহমদ (১৮৩৫-১৯০৮) জন্মসূত্রে মুসলমান ছিলেন কিন্তু ইসলামের প্রতিশ্রুত শেষযুগের বিশ্বের মানুষের জন্য সংস্কারক হিসেবে প্রেরিত হবার দাবী করেছিলেন। তিনি দাবী করেছিলেন যে আল্লাহ তাকে ইসলামের মুজাদ্দিদ (সংস্কারক), সেই প্রতিশ্রুত মসীহ ও মাহদী হিসেবে প্রেরণ করেছেন যাঁর অপেক্ষা মুসলিম বিশ্ব করছিল। আহমদীয়া আন্দোলনের সদস্যগণকে আহমদী মুসলিম বা সংক্ষেপে আহমদী বলা হয়।
আহমদীয়া মুসলিম জামাত বিশ্বাস করে যে (ক) মির্যা গোলাম আহমদ একজন মুজাদ্দিদ (সংস্কারক), (খ) তিনি ইসলাম ধর্মে বর্ণিত ও প্রতিশ্রুত মসীহ্, ইমাম মাহদী এবং প্রত্যাবর্তনকারী যীশু খ্রিস্টর, (গ) মুহাম্মদ আল্লাহ’র শেষ নবী নন, এবং (ঘ) পাশাপাশি (গ) মির্যা গোলাম আহমদ ইসলামের নবী মুহাম্মদ-এর প্রদর্শিত পথে পাঠানো একজন “উম্মতী নবী” তাদের মতে নবুয়াতের সমাপ্তি মানে আর কোন নতুন নবী আসতে পারবেন না তা নয়; নতুন নবী আসতে পারবেন তবে তিনি হবেন ‘উম্মতী নবী’ এবং তাকে অবশ্যই আল্লাহ’র রাসুল মুহাম্মদ সা: যে পথ-প্রদর্শন করে গেছেন তা অনুসরণ করতে হবে। তিনি কোনো নতুন শরীয়ত আনবেন না।[১১] অন্যান্য মুসলিমরা মনে করে মির্যা গোলাম আহ্মেদ কর্তৃক উদ্ভাবিত ‘উম্মতী নবীর’ ধারণা কুরআন ও হাদীস দ্বারা সমর্থিত নয়। এ কারণে অন্যান্য মুসলিম দলগুলো তাদের মুসলমান বলতে রাজি নয়। পাকিস্তান সরকার সেখানকার উলামা কর্তৃক প্রভাবিত হয়ে আহমদীয়াদের অমুসলিম ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে। আহমদীরা মনে করে তাদের ‘অমুসলিম’ ঘোষণা করার অধিকার কারো নেই।[১২]
বিশ্বব্যাপী আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত
সম্পাদনাআহমদীয়া মুসলিম জামাতের কার্যক্রম ক্রমবর্ধমান। পৃথিবীর ২০০ শত দেশে আহমদীয়াদের কার্যক্রম চলমার রয়েছে। এই সংগঠনের সদরদপ্তর লন্ডনে অবস্থিত। গোলাম আহমদের মৃত্যুর পর তার অনুসারীরা খিলাফত প্রবর্তন করে এবং তাদের নির্বাচিত ৫ম খলিফা মির্যা মাসরুর আহমেদ লন্ডন থেকে এই সংগঠনের কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন।[১৩] আহমদী বিশ্বাস ও কর্মকাণ্ডকে ‘আহ্মদীয়াত’ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়।[৩]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৫ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ অক্টোবর ২০১৫।
- ↑ Babul, Jahangir (২০১০)। Ahmadiyyater Itihashe Banglar Shoronio Bektitto। Ahmadiyya Muslim Jamaat Bangladesh। পৃষ্ঠা 5, 7, 36, 65, 66। আইএসবিএন 978-984-99102-0-6।
- ↑ ক খ "বাংলাদেশে আহ্মদীয়াত"। ২০ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
- ↑ "Bangladesh: Continued attacks on the Ahmadiyya community | Women Reclaiming and Redefining Cultures"। Wluml.org। ২০১২-১২-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১২-০৫।
- ↑ "Religious Persecution of Ahmadiyya Muslim Community - Updates April-June, 2004"। Thepersecution.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১২-০৫।
- ↑ ক খ www
.newreligion .eu উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "s" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে - ↑ "আহমদিয়া: পঞ্চগড়ে তাদের বড় সমাবেশ কেন এবং হামলাই বা কেন?"। বিবিসি বাংলা। ২০২৩-০৩-০৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-১৫।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব। "আহমদিয়া মুসলিম জামাতের জলসায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-১৫।
- ↑ ক খ Ahmadiyya Muslim Mosques Around the World, pg. 118
- ↑ ক খ গ Ahmadiyya Muslim Mosques Around the World, pg. 119
- ↑ Finality of Prophethood
- ↑ Ahmadis are True Muslims
- ↑ Official Website of Ahmadiyya Muslim Community
আরও পড়ুন
সম্পাদনা- Official website of Bangla Ahmadiyya Muslim Jammat ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২২ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে