আখাউড়া উপজেলা
আখাউড়া উপজেলা বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ উভয়ের জন্য একটি ঐতিহাসিক শহর। আখাউড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলার প্রাণকেন্দ্র।
আখাউড়া | |
---|---|
উপজেলা | |
মানচিত্রে আখাউড়া উপজেলা | |
স্থানাঙ্ক: ২৩°৫২′৫৯″ উত্তর ৯১°১৩′১০″ পূর্ব / ২৩.৮৮৩০৬° উত্তর ৯১.২১৯৪৪° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | চট্টগ্রাম বিভাগ |
জেলা | ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা |
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ | ২৪৬ ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ |
সরকার | |
• জাতীয় সংসদ সদস্য | পদ শূন্য |
• উপজেলা চেয়ারম্যান | পদ শূন্য |
আয়তন | |
• মোট | ৯৮.০৫ বর্গকিমি (৩৭.৮৬ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা | |
• মোট | ৬,৬৬,৬৬৬ |
• জনঘনত্ব | ৬,৮০০/বর্গকিমি (১৮,০০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৫২.৭% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৩৪৫০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ২০ ১২ ০২ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
অবস্থান ও আয়তন
সম্পাদনাআখাউড়া উপজেলার আয়তন ৯৮.০৫ বর্গ কিলোমিটার (২৪,২২৮ একর)।[১] এ উপজেলার উত্তরে বিজয়নগর উপজেলা, দক্ষিণে কসবা উপজেলা, পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা, পশ্চিমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা ও কসবা উপজেলা।
ইতিহাস
সম্পাদনানামকরণ
সম্পাদনাএই অঞ্চলটি হরিকেল নামক জনপদের অংশ ছিলো। কালক্রমে এই অঞ্চলটি ত্রিপুরা রাজ্যের জমিদার মহারাজা বীর বিক্রম রাধা কিশোর মানিক্য বাহাদুরের জমিদারের অংশে পরিণত হয়। এই জমিদারের চাকলা রৌশনাবাদ এষ্টেটের মোগড়া রাজকাচারী ও আখাউড়াস্থ তহশীল কাচারীর ছিলো বর্তমান আখাউড়া সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে। এই কাচারী দুটির মাধ্যমে এই অঞ্চলের জমিদারীর যাবতীয় খাজনাদি আদায়সহ জমিদারী ব্যবস্থা কার্যাদি পরিচালিত হতো। মহারাজার জমিদারীর দ্বিতীয় রাজধানী ছিল কুমিল্লা। কুমিল্লার রাজবাড়ীতে যাতায়াতের জন্য সে সময় আখাউড়া-আগরতলা সড়ক ব্যবহৃত হতো। এছাড়া আসাম বেঙ্গল রেলপথে চলাচলের জন্য জমিদার সপরিবারে আখাউড়া কাচারীতে অবস্থান করতেন। তিনি এ অঞ্চলের রাধানগরে রাধামাধবের আখড়া, দুর্গাপুরে দুর্গাদেবীর আখড়া, মোগড়া হাওড়া নদীর পাড়ের আখড়া, মনিয়ন্দের আখড়া ইত্যাদি নিজ খরচে নির্মাণ করেছিলেন। সে সময়ে এ অঞ্চলে আখড়ার আধিক্যের কারণে এই অঞ্চল কালক্রমে আখাউড়া নামে পরিচিতি লাভ করে। এছাড়া এটি সে সময়ের পূর্ববঙ্গের প্রবেশদ্বার বলে পরিচিতি লাভ করে। বর্তমান আখাউড়া বাংলাদেশের সর্ব পূর্ব দিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা সীমান্তবর্তী স্থানে অবস্থিত। ব্রিটিশ আমলে আখাউড়া থেকে প্রচুর পাট সুদূর বিলেতের শিল্পনগরী ডাণ্ডিতে রপ্তানি হতো। ফলে ব্রিটিশ শাসনামলে এই রেল স্টেশনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিলো।
প্রশাসনিক ইতিহাস
সম্পাদনাইংরেজ শাসনামলে কসবার ১০ টি ইউনিয়ন আখাউড়া উপজেলার ছিলো। পরে কসবা উপজেলা হয় ১৯৭৬ সালে ১৪ সেপ্টেম্বর আর আখাউড়া উপজেলা হয় ১৯৮৯ সাল ২৩ এপ্রিল। আখাউড়া উপজেলা বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ভূমিকা অনেক রেখেছে।
এলাকার ইতিহাস
সম্পাদনাআখাউড়া উপজেলা ব্রিটিশ আমলে ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী ছিল পরে এটাকে কুমিল্লায় স্থাপন করা হয়। কসবা উপজেলা আগে আখাউড়া উপজেলার একটি সাধারণ ইউনিয়ন ছিলো।
প্রশাসনিক এলাকা
সম্পাদনা-
আখাউড়া পুলিশ স্টেশন
-
আখাউড়া উপজেলা পরিষদ
আখাউড়া উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ৫টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম আখাউড়া থানার আওতাধীন।
জনসংখ্যার উপাত্ত
সম্পাদনা২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী আখাউড়া উপজেলার মোট জনসংখ্যা ৬,৬৬,৬৬৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩,৩৩,৩৩৩ জন এবং মহিলা ৩,৩৩,৩৩৩ জন।[২]
শিক্ষা ব্যবস্থা
সম্পাদনা২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী আখাউড়া উপজেলার সাক্ষরতার হার ৯৬.৯%।[১] এখানে রয়েছে:
- প্রাথমিক বিদ্যালয় - ৪০০টি
- মহাবিদ্যালয় - ২৫টি
- উচ্চ বিদ্যালয় - ২৮৯টি
- জুনিয়র বিদ্যালয় - ১০০০টি
- মাদ্রাসা - ৩৮৯টি
স্বাস্থ্য
সম্পাদনাস্বাস্থ্য সেবাদানের জন্য রয়েছেঃ
- উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র - ১টি;
- জন্ম নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র - ১০০টি;
- ক্লিনিক - ১২৭টি;
- স্যাটেলাইট ক্লিনিক -১৫৯ টি;
- পশু চিকিৎসা কেন্দ্র - ১০টি;
- দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র - ২৬টি;
- কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র - ৯১টি।
অর্থনীতি
সম্পাদনাজনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪৪.২৩%, অকৃষি শ্রমিক ৯৯.৭০%, শিল্প ৭৬.৮০%, ব্যবসা ৯৯.১৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১০০%, চাকরি ৮৭.১৬%, নির্মাণ ৯৮.৩২%, ধর্মীয় সেবা ৯৫.২৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৮৭.০৯% এবং অন্যান্য ৬৪.৯৯%। এখানকার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ কৃষক।
- প্রধান ফসল: ধান, গম, বিভিন্ন ধরনের সবজি।
- লুপ্ত বা লুপ্ত প্রায় শস্যাদি: কাউন, আউস ও আমন ধান, পাট ও আড়হর ডাল।
- প্রধান ফল: কলা, কাঁঠাল, আম, জাম, পেঁপে, পেয়ারা, কুল ও তরমুজ।
- কুটির শিল্প: মৃৎশিল্প, সূচী-শিল্প।
- রপ্তানি পণ্য: শাক-সবজি।
যোগাযোগ ব্যবস্থা
সম্পাদনা-
আখাউড়া চেকপোস্ট সড়ক
-
আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশন
- রেলপথ = আখাউড়া জংশন বাংলাদেশের বৃহত্তম রেলওয়ে জংশন এই খানে সব আন্তঃনগর ট্রেন স্টপ দেয়। শুধু সোনার বাংলা, সূর্বণ এক্সপ্রেস স্টপ দেয় না। আখাউড়া বাইপাস আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন আছে।
- সড়কপথ = আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া মহাসড়ক হলে আখাউড়া গাজীবাজারে বাংলাদেশের বৃহত্তম বাস টার্মিনাল নির্মাণ হলে আখাউড়া থেকে বাংলাদেশের যে কোন প্রান্তে যাওয়া যাবে।
উল্লেখযোগ্য স্থান ও স্থাপনা
সম্পাদনা- আখাউড়া স্থল বন্দর
- খড়মপুর মাজার শরীফ
- বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের কবর (আখাউড়া)
- ঘাগুটিয়া পদ্মবিল
হাট-বাজার ও মেলা
সম্পাদনাআখাউড়া উপজেলায় ১৯৯ টি হাটবাজার রয়েছে।
- উল্লেখযোগ্য হাটবাজার
- মোগড়া বাজার
- আখাউড়া বাজার
- উল্লেখযোগ্য মেলা
- খড়মপুড় ঔরস
- খড়মপুড় বান্নী
- ধরখাড় মেলা
- ভাটামাথা কালীবাড়ির মেলা
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি
সম্পাদনা- আতাউর রহমান খান খাদিম -- শহীদ বুদ্ধিজীবী, (পদার্থ বিজ্ঞানী) ।
- আবদুর রহমান –– বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা।
- আবদুর রশিদ –– বীরপ্রতীক।
- প্রবোধচন্দ্র সেন –– ছন্দবিশারদ।[৩]
- সাফিল মিয়া –– বীর উত্তম খেতাব প্রাপ্ত।
- মঙ্গল মিয়া –– বীর প্রতীক।
- মিয়া আব্দুল মতিন –– ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধা
জনপ্রতিনিধি
সম্পাদনা- সংসদীয় আসন
সংসদীয় আসন | জাতীয় নির্বাচনী এলাকা[৪] | সংসদ সদস্য[৫][৬][৭][৮][৯] | রাজনৈতিক দল |
---|---|---|---|
২৪৬ ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ | আখাউড়া উপজেলা এবং কসবা উপজেলা | আনিসুল হক | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
- উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন
ক্রম নং | পদবী | নাম |
---|---|---|
০১ | উপজেলা চেয়ারম্যান[১০] | পদ শূন্য |
০২ | ভাইস চেয়ারম্যান[১১] | শূন্য |
০৩ | মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান | শূন্য |
০৪ | উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা | মোহাম্মদ খুরশিদ শাহরিয়ার |
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "ইউনিয়ন পরিসংখ্যান সংক্রান্ত জাতীয় তথ্য" (পিডিএফ)। web.archive.org। Wayback Machine। Archived from the original on ৮ ডিসেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১৯।
- ↑ "ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার তথ্য উপাত্ত" (পিডিএফ)। web.archive.org। Wayback Machine। Archived from the original on ১৩ নভেম্বর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১৯।
- ↑ http://bn.banglapedia.org/index.php?title=%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%A8,_%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A7%8B%E0%A6%A7%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0
- ↑ "Election Commission Bangladesh - Home page"। www.ecs.org.bd।
- ↑ "বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জানুয়ারি ১, ২০১৯" (পিডিএফ)। ecs.gov.bd। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। ১ জানুয়ারি ২০১৯। ২ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৯।
- ↑ "সংসদ নির্বাচন ২০১৮ ফলাফল"। বিবিসি বাংলা। ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- ↑ "একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল"। প্রথম আলো। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- ↑ "জয় পেলেন যারা"। দৈনিক আমাদের সময়। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- ↑ "আওয়ামী লীগের হ্যাটট্রিক জয়"। সমকাল। ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- ↑ "জনাব মোঃ আবুল কাসেম ভূঁইয়া - আখাউড়া উপজেলা"। akhaura.brahmanbaria.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ডিসেম্বর ২০২১।
- ↑ "উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জনাব মুরাদ হোসেন ভূঁইয়া - আখাউড়া উপজেলা"। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ডিসেম্বর ২০২১।